সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“রৌপ্য আমারই, স্বর্ণও আমারই”

“রৌপ্য আমারই, স্বর্ণও আমারই”

“রৌপ্য আমারই, স্বর্ণও আমারই”

 সাধারণ কাল পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে, পারস্যরাজ কোরস ঈশ্বরের লোকেদেরকে বাবিলের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে হাজার হাজার ব্যক্তি যিহোবার মন্দির পুনর্নিমাণ করার জন্য যিরূশালেমে ফিরে এসেছিল, যেটা ধ্বংসাবস্থায় ছিল। ফিরে আসা ব্যক্তিদের আর্থিক অবস্থা অনিশ্চিত ছিল এবং শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশীরা পুনর্নিমাণের কাজে বাধা দিয়েছিল। তাই, নির্মাতাদের মধ্যে কেউ কেউ চিন্তা করেছিল যে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প তারা কখনো শেষ করতে পারবে কি না।

তাঁর ভাববাদী হগয়ের মাধ্যমে যিহোবা সেই নির্মাতাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদের সঙ্গে রয়েছেন। “আমি সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত করিব; এবং সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে; আর আমি এই গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব,” ঈশ্বর বলেছিলেন। নির্মাতাদের আর্থিক চিন্তার বিষয়ে হগয় এই বার্তা প্রকাশ করেছিলেন: “রৌপ্য আমারই, স্বর্ণও আমারই, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।” (হগয় ২:৭-৯) হগয় এই উদ্দীপনামূলক কথাগুলো বলার পর পাঁচ বছরের মধ্যেই সেই প্রকল্প শেষ হয়েছিল।—ইষ্রা ৬:১৩-১৫.

হগয়ের কথাগুলো অতি সম্প্রতিকালে, যিহোবার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করার সময়ে ঈশ্বরের দাসদেরও অনুপ্রাণিত করেছে। ১৮৭৯ সালে যখন বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণী এই পত্রিকা, যেটিকে সেইসময়ে জায়ন্স ওয়াচটাওয়ার আ্যন্ড হেরাল্ড অফ ক্রাইস্টস্‌ প্রেজেন্স বলা হতো, তা প্রকাশ করতে শুরু করেছিল, তখন তাতে এই কথাগুলো লেখা ছিল: “আমরা বিশ্বাস করি যে, যিহোবা জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার’ এর পৃষ্ঠপোষক আর যেহেতু তিনিই এর পিছনে রয়েছেন, তাই সমর্থনের জন্য কখনোই মানুষের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ করতে হবে না। যিহোবা যেহেতু বলেন: ‘পর্ব্বতগণের সমস্ত স্বর্ণ ও রৌপ্য আমার,’ তাই যদি তিনি প্রয়োজনীয় তহবিল জোগাতে ব্যর্থ হন, তা হলে আমরা বুঝব যে, প্রকাশনা সাময়িকভাবে বন্ধ করার সময় হয়েছে।”

প্রকাশনা কখনোই সাময়িকভাবে বন্ধ হয়নি। প্রথম সংখ্যা শুধুমাত্র ইংরেজিতেই ৬,০০০ কপি ছাপানো হয়েছিল। আজকে, প্রত্যেকটা সংখ্যার ছাপার গড় হচ্ছে ২,৮৫,৭৮,০০০ কপি আর তা ১৬১টি ভাষায়। * প্রহরীদুর্গ পত্রিকার সহযোগী সচেতন থাক! পত্রিকা ৮১টি ভাষায় গড়ে ৩,৪২,৬৭,০০০ কপি ছাপা হয়।

যিহোবার সাক্ষিরা অনেক প্রকল্প গ্রহণ করে, যেগুলোর উদ্দেশ্য প্রহরীদুর্গ পত্রিকার মতো একই আর তা হল, যিহোবাকে নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম প্রভু হিসেবে উচ্চীকৃত করা এবং তাঁর রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করা। (মথি ২৪:১৪; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) আজকেও যিহোবার সাক্ষিদের সেই একই দৃঢ়প্রত্যয় রয়েছে, যেমনটা ১৮৭৯ সালে এই পত্রিকায় ঘোষণা করা হয়েছিল। তারা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর হচ্ছেন তাদের কাজের পৃষ্ঠপোষক আর যে-প্রকল্পগুলোর ওপর তাঁর আশীর্বাদ রয়েছে, সেগুলোর জন্য তহবিল পাওয়া যাবে। কিন্তু, বাস্তবিকপক্ষে কীভাবে যিহোবার সাক্ষিদের কাজের আর্থিক সংস্থান করা হয়? আর পৃথিবীব্যাপী রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য তারা কোন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করছে?

কীভাবে কাজের আর্থিক সংস্থান করা হয়?

যিহোবার সাক্ষিরা যখন জনসাধারণ্যে প্রচার করে, তখন তাদের জন্য এই প্রশ্ন শোনাটা অস্বাভাবিক নয়, “আপনারা কি এই কাজের জন্য টাকাপয়সা পান?” এর উত্তর হচ্ছে না, তারা কোনো টাকাপয়সা পায় না। তাদের সময়টা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। এই সুসমাচার প্রচারকরা যিহোবা সম্বন্ধে এবং সেইসঙ্গে এক উত্তম ভবিষ্যতের বিষয়ে বাইবেলের প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে অন্যদের কাছে বলার জন্য অনেক ঘন্টা ব্যয় করে, কারণ তারা কৃতজ্ঞতার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। ঈশ্বর তাদের জন্য যা করেছেন এবং সুসমাচারের বার্তা তাদের জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গিকে যে কতখানি উন্নত করেছে, সেই বিষয়গুলো তারা উপলব্ধি করে। তাই, তারা এই উত্তম বিষয়গুলো অন্যদের জানাতে চায়। এটা করার মাধ্যমে তারা যিশুর বলা এই নীতি অনুসরণ করে: “তোমরা বিনামূল্যে পাইয়াছ, বিনামূল্যেই দান করিও।” (মথি ১০:৮) বস্তুতপক্ষে, যিহোবা ও যিশুর সাক্ষি হওয়ার জন্য তাদের আকাঙ্ক্ষা তাদেরকে নিজেদের পকেট থেকে টাকাপয়সা ব্যয় করতে উদ্দীপিত করে, যাতে তারা তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে লোকেদেরকে জানাতে পারে, এমনকি তাদের কাছেও, যারা তাদের কাছ থেকে অনেক দূরে বাস করে।—যিশাইয় ৪৩:১০; প্রেরিত ১:৮.

এই প্রচার কাজের পরিধি এবং এটা সম্পন্ন করার জন্য যে-মাধ্যমগুলো—বিভিন্ন ছাপাখানা, অফিস, সম্মেলন হল, মিশনারি হোম এবং আরও অন্যান্য বিষয়—ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর জন্য যথেষ্ট খরচ রয়েছে। কোথা থেকে এই টাকা আসে? এইসমস্ত বিষয়ের আর্থিক সংস্থান স্বেচ্ছাকৃত দানগুলো থেকে আসে। যিহোবার সাক্ষিরা, সাংগঠনিক কাজগুলো সমর্থন করার জন্য মণ্ডলীর সদস্যদের কাছে টাকাপয়সা চায় না অথবা তারা যে-প্রকাশনাগুলো বিতরণ করে, সেগুলোর জন্যও লোকেদের কাছে কোনো মূল্য চায় না। যদি কেউ সাক্ষিদের শিক্ষামূলক কাজকে সমর্থন করার জন্য কোনো দান দিতে চায়, তা হলে সাক্ষিরা তা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে। পৃথিবীব্যাপী সুসমাচার প্রচার করার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টার মধ্যে কেবল একটা ক্ষেত্রে—অনুবাদের ক্ষেত্রে—কী জড়িত রয়েছে, আসুন আমার তা বিবেচনা করি।

৪৩৭টি ভাষায় প্রকাশনাদি

অনেক বছর ধরে, যিহোবার সাক্ষিদের প্রকাশনাদি পৃথিবীতে সবচেয়ে ব্যাপক অনুবাদিত প্রকাশনাদির মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন ট্র্যাক্ট, ব্রোশার, পত্রিকা এবং বই ৪৩৭টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। অবশ্য, সুসমাচার প্রচার কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য কাজের মতো, অনুবাদের কাজের জন্যও যথেষ্ট সম্পদের প্রয়োজন হয়। অনুবাদ প্রক্রিয়ায় কী জড়িত রয়েছে?

যিহোবার সাক্ষিদের প্রকাশনাদির সম্পাদকরা যখন একটা ইংরেজি প্রবন্ধের বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করে, তখন সেই পাঠ্যাংশ ইলেকট্রনিক উপায়ে পৃথিবীব্যাপী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনুবাদক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। প্রত্যেকটা অনুবাদ দল, বিভিন্ন ভাষায় উৎপাদিত প্রকাশনাদির মধ্যে একটা ভাষার দায়িত্ব নেয়। তারা যে-কয়টা প্রকল্পের ওপর কাজ করছে, তার সংখ্যা এবং তারা যে-ভাষায়—অনুবাদ-ভাষায়—অনুবাদ করে, সেটার জটিলতার ওপর ভিত্তি করে এই দলগুলো প্রায় ৫ থেকে ২৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হতে পারে।

অনুবাদ করা পাঠ্যাংশ চেক এবং প্রুফরিড করা হয়। লক্ষ্য হচ্ছে, মূল ভাষার ধারণাগুলো যতটা সম্ভব নির্ভুলভাবে এবং স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা। এটা বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে। যখন এমন একটা পাঠ্যাংশের ওপর কাজ করা হয়, যেটাতে বিশেষ শব্দাবলি ব্যবহার করা হয়েছে, তখন অনুবাদক ও প্রুফরিডারদেরকে হয়তো নির্ভুলতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইংরেজি এবং স্থানীয় উভয় ভাষাতেই ব্যাপক গবেষণা করতে হয়। (কিছু ভাষায় ফ্রেঞ্চ, রুশ বা স্প্যানিশ থেকে অনুবাদ করা হয়।) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন সচেতন থাক! পত্রিকার কোনো প্রবন্ধ প্রযুক্তিগত অথবা ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, তখন প্রচুর গবেষণা করার প্রয়োজন হয়।

যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসগুলোতে অনেক অনুবাদক কাজ করে, হয় পূর্ণসময়ের জন্য নতুবা খণ্ডকালীন। অন্যেরা সেই এলাকায় কাজ করে, যেখানে অনুবাদ-ভাষায় কথা বলা হয়। অনুবাদকরা তাদের কাজের জন্য কোনো বেতন পায় না। পূর্ণসময়ের অনুবাদকদের জন্য কেবল থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং ব্যক্তিগত মৌলিক খরচের জন্য সামান্য হাতখরচ দেওয়া হয়। পৃথিবীব্যাপী প্রায় ২,৮০০ সাক্ষি রয়েছে, যারা অনুবাদক হিসেবে সেবা করছে। বর্তমানে, যিহোবার সাক্ষিদের ৯৮টা শাখা অফিস অনুবাদকের দলগুলোর জন্য থাকার ব্যবস্থা করেছে অথবা অন্যান্য জায়গার দলগুলোর তত্ত্বাবধান করছে। কেবলমাত্র একটা উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া শাখা অফিস ২৩০ জনেরও বেশি পূর্ণসময়ের অথবা খণ্ডকালীন অনুবাদকের তত্ত্বাবধান করে, যারা ৩০টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করে থাকে, যে-ভাষাগুলোর মধ্যে এমন ভাষাও রয়েছে, যেগুলো এলাকার বাইরে সুপরিচিত নয়, যেমন চুভাশ, ওসিশা এবং উয়িগুর ভাষা।

অনুবাদের গুণগত মানকে উন্নত করা

কখনো অন্য ভাষা শেখার চেষ্টা করেছেন এমন একজন ব্যক্তি জানেন যে, জটিল ধারণাগুলো নির্ভুলভাবে অনুবাদ করা খুব সহজ কাজ নয়। লক্ষ্য হল, উৎস পাঠ্যাংশের তথ্য এবং ধারণাগুলো নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করা এবং একই সময়ে এমনভাবে অনুবাদ করা যা স্বাভাবিকভাবে পড়া যায়, যেন মনে হয় এটি প্রথম থেকেই অনুবাদ-ভাষাতে লেখা হয়েছিল। এই লক্ষ্য অর্জন করা হল এক দক্ষতা। নতুন অনুবাদকদের দক্ষতাসম্পন্ন অনুবাদক হয়ে ওঠার জন্য অনেক বছর সময় লাগে আর যিহোবার সাক্ষিরা তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার এক ক্রমাগত কার্যক্রমের ব্যবস্থা করে থাকে। অনুবাদের দক্ষতায় উন্নতি এবং কম্পিউটার সফ্ট্‌ওয়্যার ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করার জন্য দক্ষ নির্দেশকরা মাঝেমধ্যে দলগুলোকে পরিদর্শন করে থাকে।

এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চমৎকার ফলাফল উৎপন্ন করে। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার সাক্ষিদের নিকারাগুয়া শাখা অফিস রিপোর্ট করে: “এই প্রথম, আমাদের মিসকিটো অনুবাদকরা মেক্সিকো শাখা থেকে একজন নির্দেশকের মাধ্যমে বিভিন্ন পদ্ধতি এবং কৌশল সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ লাভ করেছে। এটা আমাদের অনুবাদকরা যেভাবে তাদের কার্যভার সম্পন্ন করে, তাতে এক বিস্ময়কর উন্নতি সাধন করেছে। অনুবাদের গুণগত মান লক্ষণীয়ভাবে উন্নত হয়েছে।”

যে-শব্দগুলো হৃদয়কে স্পর্শ করে

লোকেদের মাতৃভাষায় বাইবেল ও বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি উৎপন্ন করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে, যাতে তাদের হৃদয় স্পর্শ করা যায় আর ঠিক তা-ই হচ্ছে। ২০০৬ সালে, বুলগেরিয়ায় যিহোবার সাক্ষিরা খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বুলগেরীয় ভাষায় প্রকাশিত হওয়ায় রোমাঞ্চিত হয়েছিল। বুলগেরিয়া শাখা এরজন্য অনেক উপলব্ধিপূর্ণ মন্তব্য পাচ্ছে বলে রিপোর্ট করে। মণ্ডলীর সদস্যরা বলে যে, “এখন বাইবেল সত্যিই শুধুমাত্র তাদের মন নয় বরং হৃদয়কেও স্পর্শ করে।” সোফিয়ার একজন বয়স্ক ব্যক্তি মন্তব্য করেছিলেন: “আমি অনেক বছর ধরে বাইবেল পড়ছি কিন্তু আমি কখনো এমন একটা অনুবাদ পড়িনি, যেটি বোঝা আরও সহজ এবং সরাসরি হৃদয়ে পৌঁছায়।” একইভাবে আলবেনিয়ায়, একজন স্থানীয় সাক্ষি আলবেনীয় ভাষায় সম্পূর্ণ নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) এর ব্যক্তিগত কপিটি পাওয়ার পর মন্তব্য করেছিলেন: “আলবেনীয় ভাষায় ঈশ্বরের বাক্য শুনতে কতই না চমৎকার লাগে! যিহোবা যে আমাদের সঙ্গে আমাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলেন, তা কী এক বিশেষ সুযোগ!”

পুরো বাইবেল অনুবাদ করার জন্য একটা অনুবাদ দলের অনেক বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু এর ফলে যখন লক্ষ লক্ষ লোক প্রথমবারের মতো ঈশ্বরের বাক্য সত্যিই উপলব্ধি করতে পারে, তখন আপনি কি বলবেন না যে, সমস্ত প্রচেষ্টাই সার্থক?

“আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী”

অবশ্য, অনুবাদ হচ্ছে সুসমাচার কার্যকারীভাবে প্রচার করার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কাজের মধ্যে কেবলমাত্র একটা। বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি লেখা, ছাপানো ও প্রেরণ করার জন্য এবং যিহোবার সাক্ষিদের বিভিন্ন শাখা, সীমা ও মণ্ডলীর আরও অনেক সম্পর্কযুক্ত কাজের জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা ও খরচের প্রয়োজন হয়। তা সত্ত্বেও, এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঈশ্বরের লোকেরা “স্বেচ্ছায় দত্ত উপহার” হয়ে থাকে। (গীতসংহিতা ১১০:৩) তারা নিজেরা দান করতে পারাকে এক বিশেষ সুযোগ বলে মনে করে এবং এটাকে এক সম্মানের বিষয় হিসেবে দেখে থাকে, যার ফলে যিহোবা তাদেরকে তাঁর “সহকার্য্যকারী” বলে বিবেচনা করেন।—১ করিন্থীয় ৩:৫-৯.

এটা সত্য যে, যিহোবা যেহেতু বলেন, “রৌপ্য আমারই, স্বর্ণও আমারই,” তাই তিনি তাঁর কাজ সম্পাদন করার জন্য আমাদের আর্থিক সহযোগিতার ওপর নির্ভর করেন না। তা সত্ত্বেও, “সর্ব্ব জাতির কাছে” জীবনরক্ষাকারী সত্যগুলো প্রচার করার জন্য দান করার মাধ্যমে তাঁর নামকে পবিত্রীকৃত করায় অংশ নেওয়ার বিশেষ সুযোগ দিয়ে যিহোবা তাঁর দাসদের মর্যাদা দিয়েছেন। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) এই অদ্বিতীয় কাজে সমর্থন জোগানোর জন্য আপনি কি আপনার যথাসাধ্য করতে অনুপ্রাণিত হন না?

[পাদটীকা]

^ ভাষাগুলোর তালিকার জন্য এই পত্রিকার ২ পৃষ্ঠা দেখুন।

[১৮ পৃষ্ঠার বাক্স]

“এগুলো আমাদেরকে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে পরিচালিত করে”

যিহোবার সাক্ষিদের ক্যামেরুন শাখা অফিসের উদ্দেশে ১৪ বছর বয়সি একটা মেয়ে লিখেছিল: “আমার সারা বছরের স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কেনার পর, আমি আমার গত বছরের দুটি পাঠ্যপুস্তক ২,৫০০ ফ্রাঁতে [৫ মার্কিন ডলারে] বিক্রি করেছিলাম। আমি এই অর্থ আর সেইসঙ্গে আমার সঞ্চয় থেকে অতিরিক্ত ৯১০ ফ্রাঁ [১·৮২ মার্কিন ডলার] দান করছি। আপনারা যে-উত্তম কাজ করছেন, তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি আপনাদেরকে উৎসাহিত করছি। প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকার জন্য ধন্যবাদ। এগুলো আমাদেরকে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে পরিচালিত করে।”

[১৮ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

এক অতুলনীয় দান

যিহোবার সাক্ষিদের মেক্সিকো শাখা মানুয়েল নামে এক উপলব্ধিপরায়ণ ছয় বছর বয়সি ছেলের কাছ থেকে নীচের চিঠিটা পেয়েছে, যে চিয়াপাস রাজ্যে বাস করে। যেহেতু সে এখনও লিখতে পারে না, তাই একজন বন্ধু তার হয়ে এটা লিখে দিয়েছে। মানুয়েল বলে: “আমার দিদিমা আমাকে একটা শূকর দিয়েছিলেন। যখন এটা কয়েকটা বাচ্চা দিয়েছিল, তখন আমি সেগুলোর মধ্যে থেকে সবচেয়ে ভালটা বেছে নিয়েছিলাম এবং মণ্ডলীর ভাইদের সহযোগিতায় সেটাকে বড় করেছিলাম। সেই শূকর বিক্রি করে আমি যা পেয়েছি, তা আমি যথেষ্ট ভালবাসা সহকারে দান হিসেবে পাঠাচ্ছি। এটার ওজন হয়েছিল ১০০ কেজি আর এটা বিক্রি করে আমি ১,২৫০ পেসো [১১০ মার্কিন ডলার] পেয়েছি। দয়া করে যিহোবার জন্য এই অর্থ ব্যবহার করুন।”

[১৯ পৃষ্ঠার বাক্স]

‘বাইবেল অনুবাদ করার জন্য এটা ব্যবহার করুন’

ইউক্রেনে যিহোবার সাক্ষিদের ২০০৫ সালের জেলা সম্মেলনগুলোতে, ইউক্রেনীয় ভাষায় খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল। পরের দিন, সম্মেলনের একটা দান বাক্সে এই বার্তা পাওয়া গিয়েছিল: “আমার বয়স নয় বছর। গ্রিক শাস্ত্রের জন্য আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। আমাদের মা আমার ছোট ভাই ও আমাকে বাসে করে স্কুলে যাওয়ার জন্য এই অর্থ দিয়েছিলেন। কিন্তু, যখন বৃষ্টি হতো না, তখন আমরা হেঁটেই স্কুলে গিয়েছি আর এভাবে এই ৫০ রিভ্‌নিয়া [১০ মার্কিন ডলার] জমিয়েছি। আমার ভাই এবং আমি চাই আপনারা এই অর্থ পুরো বাইবেল ইউক্রেনীয় ভাষায় অনুবাদ করার জন্য ব্যবহার করুন।”

[২০ পৃষ্ঠার বাক্স]

কেউ কেউ যে-উপায়গুলোতে দান করে থাকে

শিক্ষামূলক কাজের জন্য দান

অনেকে “শিক্ষামূলক কাজের জন্য দান—মথি ২৪:১৪” লেখা দানবাক্সে দেওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আলাদা করে রাখে।

প্রত্যেক মাসে, মণ্ডলীগুলো এই অর্থ যিহোবার সাক্ষিদের সেই শাখা অফিসে পাঠিয়ে দেয়, যে-অফিস তাদের নিজের দেশের জন্য কাজ করে থাকে। স্বেচ্ছাকৃত দান হিসেবে দেওয়া অর্থও সরাসরি এই অফিসগুলোতে পাঠানো হয়ে থাকে। শাখা অফিসগুলোর ঠিকানা এই পত্রিকার ২ পৃষ্ঠায় পাওয়া যেতে পারে। চেকগুলো “ওয়াচ টাওয়ার”-কে প্রদানযোগ্য হিসেবে পাঠানো উচিত। এ ছাড়া, অলংকার অথবা অন্য কোনো মূল্যবান জিনিসও দান করা যেতে পারে। এই ধরনের দানের সঙ্গে একটা ছোট চিঠিতে উল্লেখ করে দেওয়া উচিত যে, এই দানগুলো এক শর্তহীন উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে।

শর্তযুক্ত দানের ট্রাস্ট ব্যবস্থা *

পৃথিবীব্যাপী ব্যবহারের জন্য অর্থ ওয়াচ টাওয়ার ট্রাস্টে রাখা যেতে পারে। তবে, অনুরোধ জানালে, প্রদত্ত অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আরও তথ্য জানার জন্য, দয়া করে আপনার স্থানীয় শাখা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

দাতব্য পরিকল্পনা *

শিক্ষামূলক কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপহার হিসেবে শর্তহীন অর্থ পাঠানো ছাড়াও, দান করার অন্যান্য উপায় রয়েছে। এগুলোর অন্তর্ভুক্ত:

বিমা: কোনো জীবনবিমা প্রকল্পের অথবা অবসর গ্রহণ/পেনশন পরিকল্পনার স্বত্বভোগী হিসেবে ওয়াচ টাওয়ার এর নাম দেওয়া যেতে পারে।

ব্যাঙ্ক আ্যকাউন্ট: ব্যাঙ্ক আ্যকাউন্ট, ডিপোজিটের সার্টিফিকেট অথবা ব্যক্তির অবসর গ্রহণকালীন আ্যকাউন্টগুলো স্থানীয় ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুসারে, ওয়াচ টাওয়ার এর ট্রাস্টে দেওয়া যেতে পারে অথবা ব্যক্তির মৃত্যুর পর ওয়াচ টাওয়ার-কে প্রদানযোগ্য হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।

স্টক ও বন্ড: স্টক ও বন্ডগুলোকে শর্তহীন উপহার হিসেবে ওয়াচ টাওয়ার-কে দান করা যেতে পারে।

স্থাবর সম্পত্তি: বিক্রয়যোগ্য স্থাবর সম্পত্তি হয় এক শর্তহীন উপহার হিসেবে দান করা যেতে পারে অথবা আবাসিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে দাতার জন্য জীবনস্বত্বরূপে সংরক্ষণ করে তা প্রদান করা যেতে পারে, এই শর্তে যে, তিনি তার জীবনকালে সেখানে বসবাস করতে পারবেন। কোনো স্থাবর সম্পত্তি দেওয়ার জন্য দলিলের ব্যবস্থা করার আগে আপনার দেশের শাখা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

বার্ষিক বৃত্তি উপহার: বার্ষিক বৃত্তি উপহার হল একটা ব্যবস্থা যেটার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ওয়াচটাওয়ার কর্পোরেশনকে অর্থ অথবা সম্পত্তির মালিকানাসূচক দলিলগুলো হস্তান্তর করেন। এটার বিনিময়ে, দাতা অথবা দাতার দ্বারা নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি জীবনভর প্রতি বছর এক নির্দিষ্ট বার্ষিক বৃত্তির অর্থ লাভ করেন। যে-বছর থেকে বার্ষিক বৃত্তি উপহার ব্যবস্থা চালু হয়, সেই সময় থেকে দাতা আয়করের ক্ষেত্রেও ছাড় পেয়ে থাকেন।

উইল ও ট্রাস্ট: সম্পত্তি অথবা অর্থ আইনসম্মতভাবে সম্পন্ন উইলের সাহায্যে ওয়াচ টাওয়ার-কে হস্তান্তর করা যেতে পারে অথবা ট্রাস্ট চুক্তির স্বত্বভোগী হিসেবে ওয়াচ টাওয়ার এর নাম দেওয়া যেতে পারে। কোনো ট্রাস্টের দ্বারা একটা ধর্মীয় সংগঠন উপকৃত হলে সেটা কর দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু সুযোগসুবিধা দিতে পারে।

“দাতব্য পরিকল্পনা” শব্দটা যেমন ইঙ্গিত করে যে, এই ধরনের দানগুলো করার জন্য সাধারণত দাতার আগে থেকেই পরিকল্পনা করা দরকার। যে-ব্যক্তিরা কোনো ধরনের দাতব্য পরিকল্পনার মাধ্যমে যিহোবার সাক্ষিদের শিক্ষামূলক কাজে সাহায্য করতে চায়, তাদের সহযোগিতা করার জন্য ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় একটা ব্রোশার প্রস্তুত করা হয়েছে, যেটির শিরোনাম হল চ্যারিটেবেল প্ল্যানিং টু বেনিফিট কিংডম সার্ভিস ওয়ার্ল্ডওয়াইড। * এই ব্রোশারটি উপহারগুলো দেওয়ার বিভিন্ন উপায় সম্বন্ধে তথ্য জোগানোর জন্য লিখিত হয়েছে, যেগুলো হয় এখনই বা মৃত্যুর পর উইলের মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে। ব্রোশারটি পড়া এবং তাদের নিজস্ব আইনগত অথবা কর উপদেষ্টাদের সঙ্গে পরামর্শ করার পর, অনেকেই পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের কাজকে সমর্থন করার জন্য সাহায্য করতে সমর্থ হয়েছে আর তা করার ফলে কর দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সুবিধাগুলো বৃদ্ধি করেছে।

আরও তথ্য জানার জন্য, নীচে দেওয়া ঠিকানায় অথবা আপনার দেশের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের যে-অফিস কাজ করছে, সেখানে চিঠি লিখে অথবা টেলিফোনে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

Jehovah’s Witnesses,

Post Box ৬৪৪০,

Yelahanka,

Bangalore ৫৬০ ০৬৪,

Karnataka.

Telephone: (০৮০) ২৮৪৬৮০৭২

[পাদটীকাগুলো]

^ ভারতে প্রযোজ্য নয়

^ নোট: বিভিন্ন দেশে করের নিয়মকানুন ভিন্ন হতে পারে। কর সংক্রান্ত আইন এবং পরিকল্পনার বিষয়ে মতামত লাভের জন্য দয়া করে আপনার হিসাবরক্ষক অথবা আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করুন। এ ছাড়া, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থানীয় শাখা অফিসের সঙ্গে দয়া করে আলোচনা করুন।

^ ভারতে পাওয়া যাচ্ছে না

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

মিসকিটো অনুবাদকরা, নিকারাগুয়া শাখা