একটা পৌত্তলিক ছুটির দিনকে কি খ্রিস্টীয় করা যেতে পারে?
একটা পৌত্তলিক ছুটির দিনকে কি খ্রিস্টীয় করা যেতে পারে?
ইতালিতে ২০০৪ সালের শীতকালে বড়দিনের মরসুমে, এক বিতর্ক জমে উঠেছিল। কিছু প্রশিক্ষক এবং শিক্ষক বড়দিনের ধর্মীয় প্রথাগুলো সম্বন্ধে যেকোনো উল্লেখ কমিয়ে দেওয়ার অথবা এমনকি সেগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে দেওয়ার ধারণাকে সমর্থন করেছিল। ক্যাথলিক কিংবা প্রটেস্টান্ট নয় এমন স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের বৃদ্ধিরত সংখ্যা বিবেচনা করে তারা এই বিষয়টাকে সমর্থন করেছিল। অন্যদিকে, শিক্ষা সংক্রান্ত পরিধির অন্যেরা এবং অন্য পেশার লোকেরা দাবি করেছিল যে, এই প্রথাগুলোকে সম্মান করতে হবে এবং সম্পূর্ণরূপে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।
কিন্তু, এই মতবিরোধ ছাড়াও, বড়দিনের প্রথাগুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই উৎস সম্বন্ধে কী বলা যায়? এই বিতর্ক যখন চরমে পৌঁছাতে থাকে, তখন ভ্যাটিকানের সংবাদপত্র লসসেরভাতোরে রোমানো কিছু আগ্রহজনক মন্তব্য করেছিল।
যে-তারিখে বড়দিন উদ্যাপন করা হয়, সেটার বিষয়ে ক্যাথলিক সংবাদপত্র বলেছিল: “ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে যিশুর জন্মের প্রকৃত তারিখ, রোমীয় ইতিহাসের অর্থাৎ সরকারি লোকগণনা এবং পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে করা গবেষণার অনিশ্চয়তার আড়ালে চাপা পড়ে
যায়। . . . সুপরিচিত ২৫শে ডিসেম্বর তারিখটা চতুর্থ শতাব্দীতে চার্চ অভ্ রোম বেছে নিয়েছিল। পৌত্তলিক রোমে এই তারিখটা সূর্যদেবতার উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত ছিল . . . যদিও কনস্ট্যানটিনের একটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে খ্রিস্টধর্ম ইতিমধ্যেই রোমে দৃঢ়ভাবে স্বীকৃত হয়েছিল, তবুও . . . সূর্যদেবতার পৌরাণিক কাহিনী তখনও ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল, বিশেষত সৈন্যদের মধ্যে। উপরোক্ত উৎসবগুলো, যেগুলো ২৫শে ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে ছিল, সেগুলো জনপ্রিয় প্রথা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। এই বিষয়টাই চার্চ অভ্ রোমকে সূর্যদেবতার স্থানে ন্যায়বিচারের প্রকৃত সূর্য যিশু খ্রিস্টকে স্থাপন করার ও এই দিনকে তাঁর জন্মদিন উদ্যাপনের দিন হিসেবে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে সেই দিনের এক খ্রিস্টীয় ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে বলে ঘোষণা করার ধারণা প্রদান করেছিল।”ক্রিসমাস ট্রি সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়, যেটা এখন ক্যাথলিক প্রথার একটা অংশ হয়ে উঠেছে?
ক্যাথলিক সংবাদপত্রের প্রবন্ধটি ইঙ্গিত করে যে, প্রাচীনকালে অনেক চিরহরিৎ গাছের যেমন “দেবদারু গাছের শাখাকে জাদুকরী অথবা ঔষধি গুণসম্পন্ন বলে মনে করা হতো, যা রোগ নিরাময় করত।” প্রবন্ধটি বলে চলে: “বড়দিনের আগের রাতে অর্থাৎ ২৪শে ডিসেম্বর, পার্থিব পরমদেশের বৃক্ষ সম্বন্ধীয় অত্যন্ত জনপ্রিয় কাহিনীসহ আদম ও হবাকে স্মরণ করা হতো। সেই গাছটা একটা আপেল গাছ হওয়া উচিত ছিল কিন্তু যেহেতু শীতকালে একটা আপেল গাছ অনুপযুক্ত হতো, তাই মঞ্চে একটা দেবদারু গাছ স্থাপন করা হতো আর এর শাখাগুলোতে কিছু আপেল ঝোলানো হতো অথবা ভবিষ্যতে আসন্ন মুক্তিকে চিত্রিত করতে বিস্কুটের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি বিশেষ আকৃতির কমিউনিয়ন ঝোলানো হতো, যেগুলো যিশুর নৈশভোজোৎসবে যিশুর উপস্থিতিকে চিত্রিত করার প্রতীক ছিল আর সেইসঙ্গে বাচ্চাদের জন্য ক্যান্ডি ও উপহার ঝোলানো হতো।” পরবর্তী সময় সম্বন্ধে কী বলা যায়?
ষোড়শ শতাব্দীতে যে সর্বপ্রথম জার্মানিতে ক্রিসমাস ট্রি ব্যবহার করার প্রথা শুরু হয়েছিল, তা উল্লেখ করতে গিয়ে লসসেরভাতোরে রোমানো বলেছিল: “ইতালি ছিল এমন দেশগুলোর মধ্যে একটা, যেগুলো সবশেষে ক্রিসমাস ট্রি-র ব্যবহার গ্রহণ করে নিয়েছিল এবং এর আংশিক কারণ ছিল ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এই গুজব যে, ক্রিসমাস ট্রি-র ব্যবহার হল এক প্রটেস্টান্ট প্রথা আর তাই এর স্থলে যাবপাত্র [যিশুর জন্মের দৃশ্য] রাখা উচিত।” পোপ পল ষষ্ঠ ‘[রোমের সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে]’ যিশুর জন্মের দৃশ্যের কাছে ‘একটা বিশাল ক্রিসমাস ট্রি স্থাপন করার প্রথা শুরু করেন।’
প্রাচীনকালের পৌত্তলিকতা থেকে উদ্ভূত এমন ঘটনা ও প্রতীকগুলোকে একজন ধর্মীয় নেতা আপাতদৃষ্টিতে খ্রিস্টীয় অর্থ প্রদান করবেন, এই বিষয়টাকে কি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়? সঠিক পথ সম্বন্ধে শাস্ত্র সত্য খ্রিস্টানদেরকে পরামর্শ দেয়: “ধর্ম্মে ও অধর্ম্মে পরস্পর কি সহযোগিতা? অন্ধকারের সহিত দীপ্তিরই বা কি সহভাগিতা?” —২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৭.
[৮, ৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ক্রিসমাস ট্রি (বিপরীত পৃষ্ঠায়) এবং ভ্যাটিকানে যিশুর জন্মের দৃশ্য
[সৌজন্যে]
© ২০০৩ BiblePlaces.com
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
সূর্যদেবতা
[সৌজন্যে]
Museum Wiesbaden