যিহোবাকে নিয়ত আপনার সম্মুখে রাখুন
যিহোবাকে নিয়ত আপনার সম্মুখে রাখুন
“আমি সদাপ্রভুকে নিয়ত সম্মুখে রাখিয়াছি।”—গীত. ১৬:৮.
১. বাইবেলের বিবরণগুলো আমাদের ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে?
যিহোবার লিখিত বাক্যে মানবজাতির সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ সম্বন্ধে এক চমৎকার বিবরণ রয়েছে। সেই বাক্যে এমন অনেক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে। অবশ্য, তাদের কথা ও কাজগুলোকে আমাদের আনন্দের জন্য নিছক গল্প হিসেবে বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বরং, এই ধরনের বিবরণ আমাদেরকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী করতে পারে।—যাকোব ৪:৮.
২, ৩. গীতসংহিতা ১৬:৮ পদের কথাগুলোর অর্থ কী?
২ আমরা সকলেই বাইবেলের সুপরিচিত চরিত্রগুলোর—অব্রাহাম, সারা, মোশি, রূৎ, দায়ূদ, ইষ্টের, প্রেরিত পৌল ও অন্যান্যদের—অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। কিন্তু, কম পরিচিত এমন ব্যক্তিদের বিবরণগুলোও আমাদের উপকৃত করতে পারে। বাইবেলের বিবরণগুলো নিয়ে ধ্যান করা আমাদেরকে গীতরচকের এই কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার জন্য সাহায্য করতে পারে: “আমি সদাপ্রভুকে নিয়ত সম্মুখে রাখিয়াছি; তিনি ত আমার দক্ষিণে, আমি বিচলিত হইব না।” (গীত. ১৬:৮) এই কথাগুলোর অর্থ কী?
৩ একজন সৈনিক সাধারণত তার ডানহাত দিয়ে খড়্গ ব্যবহার করতেন আর ঢালটা বাঁহাতে থাকায় তার ডান দিকটা অরক্ষিত থাকত। তা সত্ত্বেও, তিনি সুরক্ষিত থাকতেন, যদি তার কোনো বন্ধু তার ডান দিকে কাছাকাছি থেকে লড়াই করতেন। আমরা যদি যিহোবাকে মনে রাখি এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করি, তাহলে তিনি আমাদের সুরক্ষা করবেন। তাই আসুন আমরা দেখি যে, কীভাবে বাইবেলের বিবরণগুলো বিবেচনা করা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পারে, যাতে আমরা ‘সদাপ্রভুকে নিয়ত আমাদের সম্মুখে রাখি।’
যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন
৪. একটা শাস্ত্রীয় উদাহরণ দিন, যা দেখায় যে ঈশ্বর প্রার্থনার উত্তর দেন।
৪ আমরা যদি যিহোবাকে আমাদের সম্মুখে রাখি, তাহলে তিনি আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন। (গীত. ৬৫:২; ৬৬:১৯) অব্রাহামের বয়স্ক দাস, সম্ভবত ইলীয়েষরের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে। ইস্হাকের জন্য এক ঈশ্বরভয়শীল স্ত্রী খুঁজে আনতে অব্রাহাম তাকে আরম-নহরয়িমে পাঠিয়েছিলেন। ইলীয়েষর ঐশিক নির্দেশনার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন এবং যখন রিবিকা তার উটগুলোকে জল পান করিয়েছিলেন, তখন তিনি সেটাকে যিহোবার কাছ থেকে আসা নির্দেশনা বলে মেনে নিয়েছিলেন। যেহেতু তিনি আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন, তাই ইলীয়েষর এমন একজনকে খুঁজে পেয়েছিলেন, যিনি ইস্হাকের প্রিয়তমা স্ত্রী হয়েছিলেন। (আদি. ২৪:১২-১৪, ৬৭) এটা ঠিক যে, অব্রাহামের দাস এক বিশেষ দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু, আমাদেরও কি এই বিষয়ে এতখানি নিশ্চিত হওয়া উচিত নয় যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শোনেন?
৫. কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবার কাছে করা এমনকি এক সংক্ষিপ্ত, নীরব প্রার্থনাও কার্যকারী হতে পারে?
৫ মাঝে মাঝে আমাদের হয়তো ঈশ্বরের সাহায্যের জন্য দ্রুত প্রার্থনা করার প্রয়োজন হতে পারে। একবার, পারস্যরাজ অর্তক্ষস্ত লক্ষ করেন যে, তার পানপাত্রবাহক নহিমিয় বিষণ্ণ হয়ে আছেন। “তুমি কি ভিক্ষা চাও?” রাজা জিজ্ঞেস করেন। ‘তাহাতে নহিমিয় স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিলেন।’ স্পষ্টতই, নহিমিয়ের সেই নীরব প্রার্থনাকে সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বর সেই প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন কারণ যিরূশালেমের প্রাচীর পুনর্নিমাণ করার জন্য নহিমিয়কে রাজা সাহায্য করেছিলেন। (পড়ুন, নহিমিয় ২:১-৮.) হ্যাঁ, এমনকি এক সংক্ষিপ্ত, নীরব প্রার্থনাও কার্যকারী হতে পারে।
৬, ৭. (ক) প্রার্থনার বিষয়ে ইপাফ্রা কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন? (খ) কেন আমাদের অন্যদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত?
৬ আমাদেরকে ‘এক জন অন্য জনের নিমিত্ত প্রার্থনা করিবার’ জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এমনকি যদিও আমরা সবসময় তাৎক্ষণিক প্রমাণ পাই না যে, এই ধরনের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়। (যাকোব ৫:১৬) “খ্রীষ্টের বিশ্বস্ত পরিচারক” ইপাফ্রা তার বিশ্বাসে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন। রোম থেকে লেখার সময় পৌল বলেছিলেন: “ইপাফ্রা তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন, তিনি ত তোমাদেরই [কলসীয়দের] এক জন, খ্রীষ্ট যীশুর দাস; তিনি সতত প্রার্থনায় তোমাদের পক্ষে মল্লযুদ্ধ করিতেছেন, যেন তোমরা ঈশ্বরের সমস্ত ইচ্ছাতে সিদ্ধ ও কৃতনিশ্চয় হইয়া দাঁড়াইয়া থাক। কারণ আমি তাঁহার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিতেছি যে, তোমাদের জন্য এবং যাঁহারা লায়দিকেয়াতে ও যাঁহারা হিয়রাপলিতে আছেন, তাঁহাদের জন্য তাঁহার বড়ই যত্ন।”—কল. ১:৭; ৪:১২, ১৩.
৭ কলসী, লায়দিকেয়া এবং হিয়রাপলি ছিল এশিয়া মাইনরের একই অঞ্চলের কয়েকটা নগর। হিয়রাপলির খ্রিস্টানরা সিবিলি দেবীর উপাসকদের মধ্যে বাস করত, বস্তুবাদিতা লায়দিকেয়ার খ্রিস্টানদের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল আর কলসীর খ্রিস্টানরা মানবদর্শনের দ্বারা বিপদগ্রস্ত ছিল। (কল. ২:৮) তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, কলসীর ইপাফ্রা সেই নগরের বিশ্বাসীদের জন্য ‘প্রার্থনা করিয়াছিলেন’! বাইবেল যদিও বলে না যে, কীভাবে ইপাফ্রার প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি সহবিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করা বন্ধ করেননি; আমাদেরও বন্ধ করা উচিত নয়। যদিও আমরা “পরাধিকারচর্চ্চক” নই, তবে আমরা হয়তো জানি যে, পরিবারের কোনো সদস্য অথবা কোনো বন্ধু বিশ্বাসের চরম পরীক্ষা ভোগ করছে। (১ পিতর ৪:১৫) তার জন্য ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থনা করা কতই না উপযুক্ত হবে! অন্যদের বিনতির দ্বারা পৌল সাহায্য লাভ করেছিলেন আর একইভাবে আমাদের প্রার্থনাও অনেক উত্তম কিছু করতে পারে।—২ করি. ১:১০, ১১.
৮. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, ইফিষের প্রাচীনরা প্রার্থনার গুরুত্বকে উপলব্ধি করত? (খ) ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার বিষয়ে আমাদের কেমন মনোভাব থাকা উচিত?
৮ অন্যেরা কি আমাদেরকে এমন লোক হিসেবে দেখে থাকে যে, আমরা প্রার্থনার বিশেষ সুযোগের জন্য কৃতজ্ঞ এবং নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করে থাকি? পৌল ইফিষের প্রাচীনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর, “তিনি হাঁটু পাতিয়া সকলের সহিত প্রার্থনা করিলেন।” এরপর, “সকলে বিস্তর রোদন করিলেন, এবং পৌলের গলা ধরিয়া তাঁহাকে চুম্বন করিতে লাগিলেন; সর্ব্বাপেক্ষা তাঁহার উক্ত এই কথার জন্য অধিক দুঃখ করিলেন যে, তাঁহারা তাঁহার মুখ আর দেখিতে পাইবেন না।” (প্রেরিত ২০:৩৬-৩৮) আমরা সেই প্রাচীনদের সবার নাম জানি না কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, তারা প্রার্থনার গুরুত্বকে উপলব্ধি করত। নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার বিশেষ সুযোগকে আমাদের মূল্যবান বলে গণ্য করা উচিত এবং এই বিশ্বাস নিয়ে ‘শুচি হস্ত তোলা’ উচিত যে, আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদেরকে উত্তর দেবেন।—১ তীম. ২:৮.
সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের বাধ্য হোন
৯, ১০. (ক) সলফাদের মেয়েরা কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিল? (খ) কীভাবে সলফাদের মেয়েদের বাধ্যতা, বিয়ে সম্বন্ধে একজন অবিবাহিত খ্রিস্টানের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করতে পারে?
৯ যিহোবাকে নিয়ত মনে রাখা আমাদেরকে তাঁর বাধ্য হতে সাহায্য করবে আর এর ফলে আমরা আশীর্বাদ লাভ করব। (দ্বিতী. ২৮:১৩; ১ শমূ. ১৫:২২) এর জন্য এক বাধ্য মনোভাবের প্রয়োজন। পাঁচ আপন বোন, সলফাদের মেয়েদের মনোভাবের কথা বিবেচনা করুন, যারা মোশির দিনে বাস করত। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে সাধারণত ছেলেরা তাদের বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার লাভ করত। সলফাদ কোনো ছেলে না রেখেই মারা গিয়েছিলেন আর যিহোবা নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই পাঁচ মেয়ে সম্পূর্ণ উত্তরাধিকার লাভ করবে—একটা শর্তে। তাদেরকে মনঃশির সন্তানদেরকে বিয়ে করতে হতো, যাতে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি একই গোষ্ঠীর মধ্যে থাকে।—গণনা. ২৭:১-৮; ৩৬:৬-৮.
১০ সলফাদের মেয়েদের এই বিশ্বাস ছিল যে, তারা যদি ঈশ্বরের বাধ্য হয়, তাহলে এর ফল ভাল হবে। “মোশিকে সদাপ্রভু যেরূপ আজ্ঞা করিলেন, সলফাদের কন্যাগণ তদ্রূপ কর্ম্ম করিল,” বাইবেল বলে। “ফলতঃ মহলা, তির্সা, হগ্লা, মিল্কা ও নোয়া, সলফাদের এই কন্যাগণ আপন আপন পিতৃব্য-পুত্ত্রদের সহিত বিবাহিতা হইল। যোষেফের পুত্ত্র মনঃশির সন্তানদের গোষ্ঠীর মধ্যে তাহাদের বিবাহ হইল; তাহাতে তাহাদের অধিকার তাহাদের পিতৃগোষ্ঠীর সম্পর্কীয় বংশেই রহিল।” (গণনা. ৩৬:১০-১২) সেই বাধ্য মেয়েরা যিহোবার আদেশ অনুযায়ীই কাজ করেছিল। (যিহো. ১৭:৩, ৪) একইরকম বিশ্বাস দেখিয়ে, আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব অবিবাহিত খ্রিস্টানরা “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার মাধ্যমে ঈশ্বরের বাধ্য হয়।—১ করি. ৭:৩৯.
১১, ১২. কীভাবে কালেব দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের ওপর তার আস্থা রয়েছে?
১১ আমাদের সম্পূর্ণরূপে যিহোবার বাধ্য থাকতে হবে, যেমনটা ইস্রায়েলীয় কালেব ছিলেন। (দ্বিতী. ১:৩৬) সা.কা.পূ. ১৬ শতাব্দীতে মিশর থেকে ইস্রায়েলের উদ্ধারের পর, মোশি কনান দেশ নিরীক্ষণ করার জন্য ১২ জন গুপ্তচরকে পাঠিয়েছিলেন কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ২ জন গুপ্তচর—কালেব ও যিহোশূয়—ঈশ্বরের ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রাখার ও সেই দেশে প্রবেশ করার জন্য লোকেদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিল। (গণনা. ১৪:৬-৯) প্রায় ৪০ বছর পর, যিহোশূয় ও কালেব তখনও জীবিত ছিল এবং সম্পূর্ণরূপে যিহোবার অনুগমন করেছিল আর ইস্রায়েলীয়দেরকে প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঈশ্বর যিহোশূয়কে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু, সেই দশজন অবিশ্বাসী গুপ্তচর স্পষ্টতই প্রান্তরে ইস্রায়েলের ৪০ বছর ঘুরে বেড়ানোর সময় মারা গিয়েছিল।—গণনা. ১৪:৩১-৩৪.
১২ প্রান্তরে ইস্রায়েলীয়দের অভিজ্ঞতা থেকে বয়স্ক রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে কালেব যিহোশূয়ের সামনে এসে বলতে পেরেছিলেন: “আমি সম্পূর্ণরূপে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুগামী ছিলাম।” (পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ১৪:৬-৯.) পঁচাশি বছর বয়স্ক কালেব বলেছিলেন যে, তাকে যেন সেই পার্বত্য এলাকা দেওয়া হয়, যে-বিষয়ে ঈশ্বর তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যদিও সেখানে শত্রুরা তাদের বৃহৎ ও প্রাচীরবেষ্টিত নগরে বাস করত।—যিহো. ১৪:১০-১৫.
১৩. আমাদের পরীক্ষাগুলো সত্ত্বেও, আমরা কী করলে আশীর্বাদ লাভ করব?
১৩ বিশ্বস্ত ও বাধ্য কালেবের মতো আমরাও ঐশিক সাহায্য লাভ করব, যদি আমরা ‘সম্পূর্ণরূপে সদাপ্রভুর অনুগামী হই।’ আমরা যদি বড় বড় সমস্যার সম্মুখীন হই, তাহলে আমরা ‘সম্পূর্ণরূপে সদাপ্রভুর অনুগামী হইলে’ আশীর্বাদ লাভ করব। কিন্তু সারাজীবন ধরে অনুগামী হওয়া, যেমনটা কালেব হয়েছিলেন, কঠিন হতে পারে। যদিও রাজা শলোমন শুরুতে ভালই ছিলেন কিন্তু তার বৃদ্ধ বয়সে তার স্ত্রীরা মিথ্যা দেবতাদের সেবা করার জন্য তার হৃদয়কে বিপথগামী করেছিল এবং তিনি “আপন পিতা দায়ূদের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে সদাপ্রভুর অনুগামী হইলেন না।” (১ রাজা. ১১:৪-৬) আমাদের যে-পরীক্ষাগুলোর সম্মুখীনই হতে হোক না কেন, আমরা যেন সর্বদা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের বাধ্য থাকি এবং তাঁকে নিয়ত আমাদের সম্মুখে রাখি।
সবসময় যিহোবার ওপর নির্ভর করুন
১৪, ১৫. নয়মীর অভিজ্ঞতা থেকে আপনি ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা সম্বন্ধে কী শিখেছেন?
১৪ আমাদের বিশেষ করে সেই সময়ে ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে হবে, যখন আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মনে হওয়ার কারণে আমরা বিষণ্ণ হয়ে পড়ি। বয়স্কা নয়মীর কথা বিবেচনা করুন, যিনি সেই শত্রু মৃত্যুর দ্বারা তার স্বামী ও দুই ছেলেকে হারিয়েছিলেন। তিনি যখন মোয়াব থেকে যিহূদায় ফিরে এসেছিলেন, তখন শোকাহত হয়ে বলেছিলেন: “আমাকে নয়মী [মনোরমা] বলিও না। বরং মারা [তিক্তা] বলিয়া ডাক, কেননা সর্ব্বশক্তিমান আমার প্রতি অতিশয় তিক্ত ব্যবহার করিয়াছেন। আমি পরিপূর্ণা হইয়া যাত্রা করিয়াছিলাম, এখন সদাপ্রভু আমাকে শূন্যা করিয়া ফিরাইয়া আনিলেন। তোমরা কেন আমাকে নয়মী বলিয়া ডাকিতেছ? সদাপ্রভু ত আমার বিপক্ষে প্রমাণ দিয়াছেন, সর্ব্বশক্তিমান আমাকে নিগ্রহ করিয়াছেন।”—রূৎ. ১:২০, ২১.
১৫ যদিও নয়মী দুর্দশাগ্রস্ত ছিলেন কিন্তু রূতের বিবরণ বইটি মনোযোগের সঙ্গে পড়া দেখায় যে, তিনি ক্রমাগত যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। আর তার পরিস্থিতি কতই না পালটে গিয়েছিল! নয়মীর বিধবা পুত্রবধূ রূৎ বোয়সের স্ত্রী হয়েছিলেন এবং একটা ছেলের জন্ম দিয়েছিলেন। নয়মী সেই সন্তানের ধাত্রী হয়েছিলেন আর বিবরণ বলে: “‘নয়মীর এক পুত্ত্র জন্মিল’, এই বলিয়া তাহার প্রতিবাসিনীগণ তাহার নাম রাখিল; তাহারা তাহার নাম ওবেদ রাখিল। সে যিশয়ের পিতা, আর যিশয় দায়ূদের পিতা।” (রূৎ. ৪:১৪-১৭) নয়মী যখন পৃথিবীতে পুনরুত্থিত হবেন, তখন তিনি জানতে পারবেন যে, রূৎ, যিনিও সেখানে থাকবেন, মশীহ যিশুর পূর্বপুরুষী হয়েছিলেন। (মথি ১:৫, ৬, ১৬) নয়মীর মতো আমরাও নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, কীভাবে নেতিবাচক পরিস্থিতিগুলো পরিবর্তিত হবে। তাই, আসুন আমরা সবসময় ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করি, ঠিক যেমনটা আমাদেরকে হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদে উপদেশ দেওয়া হয়েছে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”
পবিত্র আত্মার ওপর নির্ভর করুন
১৬. কীভাবে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা প্রাচীন ইস্রায়েলের কিছু প্রাচীনকে সাহায্য করেছিল?
১৬ আমরা যদি যিহোবাকে নিয়ত আমাদের সম্মুখে রাখি, তাহলে তিনি আমাদেরকে তাঁর পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালনা দেবেন। (গালা. ৫:১৬-১৮) ঈশ্বরের আত্মা সেই ৭০ জন প্রাচীনের ওপর ছিল, যাদেরকে ইস্রায়েলের ‘লোকদের ভার বহনে’ মোশিকে সাহায্য করতে বেছে নেওয়া হয়েছিল। কেবল ইল্দদ ও মেদদের নাম উল্লেখ করা আছে কিন্তু পবিত্র আত্মা তাদের সকলকে তাদের কার্যভার পালন করতে সমর্থ করেছিল। (গণনা. ১১:১৩-২৯) কোনো সন্দেহ নেই যে, তারা দক্ষ, ঈশ্বরভয়শীল, নির্ভরযোগ্য এবং সৎ ছিল ঠিক সেই ব্যক্তিদের মতো, যাদেরকে আগে বাছাই করা হয়েছিল। (যাত্রা. ১৮:২১) আজকে খ্রিস্টান প্রাচীনরাও এই ধরনের গুণাবলি প্রদর্শন করে।
১৭. আবাস নির্মাণের ক্ষেত্রে যিহোবার পবিত্র আত্মা কোন ভূমিকা পালন করেছিল?
১৭ যিহোবার পবিত্র আত্মা প্রান্তরে আবাস নির্মাণের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। যিহোবা বৎসলেলকে আবাসের প্রধান শিল্পী ও নির্মাতা হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন এবং ‘তাহাকে ঈশ্বরের আত্মায়-জ্ঞানে, বুদ্ধিতে, বিদ্যায় ও সর্ব্বপ্রকার শিল্প-কৌশলে-পরিপূর্ণ করিবার’ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (যাত্রা. ৩১:৩-৫) সেই অপূর্ব কার্যভার সম্পাদন করার জন্য “বিজ্ঞমনা” লোকেরা বৎসলেলের এবং তার সহকারী অহলীয়াবের সঙ্গে কাজ করেছিল। অধিকন্তু, যিহোবার আত্মা ইচ্ছুক হৃদয়ের ব্যক্তিদের উদার দান করতে পরিচালিত করেছিল। (যাত্রা. ৩১:৬; ৩৫:৫, ৩০-৩৪) সেই একই আত্মা রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরের বর্তমান দিনের দাসদের তাদের যথাসাধ্য করতে অনুপ্রাণিত করে। (মথি ৬:৩৩) আমাদের হয়তো নির্দিষ্ট দক্ষতা রয়েছে কিন্তু আমাদের পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করতে হবে এবং সেটিকে আমাদের পরিচালনা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে, যদি আমরা যিহোবার সেই কাজ সম্পাদন করতে চাই, যা যিহোবা আমাদের দিনে তাঁর লোকেদের দিয়েছেন।—লূক ১১:১৩.
বাহিনীগণের যিহোবার প্রতি সবসময় সশ্রদ্ধ মনোভাব বজায় রাখুন
১৮, ১৯. (ক) ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে কোন ধরনের মনোভাব উৎপন্ন করে? (খ) শিমিয়োন ও হান্নার উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখেছেন?
১৮ পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে সশ্রদ্ধ মনোভাব উৎপন্ন করে, যা যিহোবাকে নিয়ত আমাদের সম্মুখে রাখে। ঈশ্বরের প্রাচীন লোকেদের বলা হয়েছিল: “বাহিনীগণের যিহোবাকে পবিত্র বলে শ্রদ্ধা করতে হবে।” (যিশা. ৮:১৩, বাইংটন) প্রথম শতাব্দীতে যিরূশালেমে দুজন ভক্ত বা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিল, শিমিয়োন ও হান্না। (পড়ুন, লূক ২:২৫-৩৮.) শিমিয়োন মশীহ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন এবং “ইস্রায়েলের সান্ত্বনার অপেক্ষাতে” ছিলেন। ঈশ্বর শিমিয়োনের ওপর পবিত্র আত্মা বর্ষণ করেছিলেন এবং তাকে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি মশীহকে দেখার জন্য বেঁচে থাকবেন। আর তা-ই ঘটেছিল। সা.কা.পূ. ২ সালের একটা দিনে যিশুর মা মরিয়ম ও পালক বাবা যোষেফ, শিশুটিকে মন্দিরে নিয়ে এসেছিল। পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, শিমিয়োন মশীহ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্য বলেছিলেন এবং মরিয়মের দুঃখ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যিনি যিশুকে যখন যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন ভোগ করেছিলেন। কিন্তু, “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] খ্রীষ্টকে” কোলে নেওয়ার পর, শিমিয়োন যে-প্রচুর আনন্দ লাভ করেছিলেন, তা কল্পনা করে দেখুন! আর শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি শিমিয়োন আজকে ঈশ্বরের দাসদের জন্য কী এক চমৎকার উদাহরণই না স্থাপন করেছেন!
১৯ চুরাশি বছর বয়স্কা শ্রদ্ধেয় বিধবা হান্না ‘ধর্ম্মধাম হইতে প্রস্থান করিতেন না।’ তিনি “উপবাস ও প্রার্থনা সহকারে” রাতদিন যিহোবার উপাসনা করতেন। শিশু যিশুকে যখন মন্দিরে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন হান্নাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভাবী মশীহকে দেখে তিনি কতই না কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন! বস্তুতপক্ষে, তিনি “যত লোক যিরূশালেমের মুক্তির অপেক্ষা করিতেছিল, তাহাদিগকে যীশুর কথা বলিতে লাগিলেন।” হান্না এই সুসংবাদ অন্যদের কাছে বলার জন্য বাধ্যবাধকতা বোধ করেছিলেন! শিমিয়োন ও হান্নার মতো আজকে বয়স্ক খ্রিস্টানরা এটা জেনে অত্যন্ত আনন্দিত যে, যিহোবার সাক্ষি হিসেবে তাঁর সেবা করার জন্য বয়স কোনো বিষয় নয়।
২০. আমাদের বয়স যা-ই হোক না কেন, আমাদের কী করতে হবে এবং কেন?
২০ আমাদের বয়স যা-ই হোক না কেন, যিহোবাকে নিয়ত আমাদের সম্মুখে রাখতে হবে। তাহলে, তিনি তাঁর রাজত্ব ও তাঁর আশ্চর্য কাজগুলো সম্বন্ধে অন্যদের বলার ব্যাপারে আমাদের নম্র প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করবেন। (গীত. ৭১:১৭, ১৮; ১৪৫:১০-১৩) কিন্তু, আমরা যদি যিহোবাকে সম্মান করতে চাই, তাহলে আমাদের ঈশ্বরীয় গুণাবলি প্রদর্শন করতে হবে। বাইবেলের আরও বিবরণ পরীক্ষা করার দ্বারা এই ধরনের গুণ সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি?
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা প্রার্থনা শোনেন?
• কেন আমাদের সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের বাধ্য হওয়া উচিত?
• এমনকি আমরা যদি বিষণ্ণও থাকি, তবুও কেন আমাদের সবসময় যিহোবার ওপর নির্ভর করা উচিত?
• কীভাবে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা তাঁর লোকেদের সাহায্য করে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার কাছে করা নহিমিয়ের প্রার্থনা কার্যকারী ছিল
[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
নয়মী যে-আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন, তা স্মরণে রাখা আমাদের যিহোবার ওপর নির্ভর করতে সাহায্য করবে