সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পবয়সিরা, এখনই তোমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করো

অল্পবয়সিরা, এখনই তোমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করো

অল্পবয়সিরা, এখনই তোমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করো

“তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর।”—উপ. ১২:১.

১. কীভাবে যিহোবা তাঁর অল্পবয়সি উপাসকদের প্রতি তাঁর আস্থা প্রকাশ করেন?

 যিহোবা অল্পবয়সি খ্রিস্টানদের খুবই মূল্যবান ও শিশিরবিন্দুর মতো সতেজ হিসেবে দেখে থাকেন। বস্তুতপক্ষে, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তাঁর পুত্রের “বিক্রম-দিনে” যুবক-যুবতীরা খ্রিস্টের সেবায় “স্বেচ্ছায় দত্ত” হবে। (গীত. ১১০:৩) এই ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের সময়ের জন্য ছিল, যখন অধিকাংশ লোক ঈশ্বরবিহীন হবে, টাকাপয়সা ও নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এবং অবাধ্য হবে। তবে যিহোবা জানতেন যে, যে-অল্পবয়সিরা তাঁকে উপাসনা করবে, তারা ভিন্ন হবে। অল্পবয়সি ভাই ও বোনেরা, তোমাদের প্রতি তাঁর কত আস্থাই না রয়েছে!

২. যিহোবাকে স্মরণ করার সঙ্গে কী জড়িত?

ঈশ্বরের সেই আনন্দের কথা কল্পনা করে দেখুন, যখন তিনি দেখেন যে, অল্পবয়সিরা তাঁকে তাদের মহান সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্মরণ করছে। (উপ. ১২:১) স্বাভাবিকভাবেই, যিহোবাকে স্মরণ করার সঙ্গে কেবল তাঁর সম্বন্ধে চিন্তা করার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। এর অর্থ পদক্ষেপ নেওয়া—তাঁকে খুশি করে এমন কাজ করা, তাঁর আইন ও নীতিগুলোর দ্বারা আমাদের রোজকার জীবনকে পরিচালিত হতে দেওয়া। এ ছাড়া, এর অর্থ যিহোবার ওপর নির্ভর করা, এটা জেনে যে তিনি আমাদের মঙ্গল নিয়ে অনেক চিন্তা করেন। (গীত. ৩৭:৩; যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) তোমরা কি তোমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে এইরকমটাই বোধ করো?

“তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর”

৩, ৪. কীভাবে যিশু যিহোবার ওপর নির্ভরতা দেখিয়েছিলেন আর কেন আজকে যিহোবার ওপর নির্ভর করা গুরুত্বপূর্ণ?

ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করেছিলেন এমন সবচেয়ে উত্তম একজনের উদাহরণ ছিল অবশ্যই যিশু খ্রিস্ট। তিনি হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদের কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করেছিলেন: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” যিশুর বাপ্তিস্মের কিছু পরেই, তাঁর কাছে শয়তান এসেছিল, যে তাঁকে জাগতিক ক্ষমতা ও গৌরব গ্রহণ করার জন্য পরীক্ষা বা প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল। (লূক ৪:৩-১৩) যিশু ভ্রান্ত হননি। তিনি জানতেন যে, প্রকৃত “ধন, সম্মান ও জীবন” হল “নম্রতার ও সদাপ্রভুর ভয়ের পুরস্কার।”—হিতো. ২২:৪.

আজকের জগৎ লোভ ও স্বার্থপরতার দ্বারা শাসিত। এইরকম এক পরিবেশে আমরা যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করলে বিজ্ঞতার কাজ করব। এ ছাড়া মনে রাখবেন যে, যিহোবার দাসদের সেই সংকীর্ণ পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করতে শয়তান যেকোনোকিছু করবে, যে-পথ জীবনের দিকে পরিচালিত করে। সে সকলকে প্রশস্ত পথে দেখতে চায়, যা ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। তার দ্বারা প্রতারিত হোয়ো না! এর পরিবর্তে, তোমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হও। তাঁর ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করো এবং “প্রকৃতরূপে জীবন” শক্ত করে ধরে রাখো, যা নিশ্চিত এবং খুবই নিকটে।—১ তীম. ৬:১৯.

অল্পবয়সিরা, বিজ্ঞ হও!

৫. এই জগতের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তোমরা কেমন বোধ করো?

যে-অল্পবয়সিরা তাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে, তারা তাদের সমবয়সিদের চেয়ে বিজ্ঞ। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৯৯, ১০০.) ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার ফলে তারা পূর্ণরূপে অবগত আছে যে, এই জগতের প্রত্যাশা আসলে কত ক্ষীণ। এমনকি তুলনামূলকভাবে তোমাদের সংক্ষিপ্ত জীবনকালেও কোনো সন্দেহ নেই যে, অল্পবয়সিরা তোমরা ভয় ও উদ্বিগ্নতাকে বৃদ্ধি পেতে দেখছ। স্কুলে তোমরা হয়তো দূষণ, বিশ্ব উষ্ণায়ণ, বনভূমি নিধন এবং একই ধরনের সমস্যার কথা শুনেছ। লোকেরা এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত কিন্তু কেবল যিহোবার সাক্ষিরাই পূর্ণরূপে জানে যে, এগুলো সেই চিহ্নের অংশ, যা শয়তানের জগতের শেষকে নির্দেশ করে।—প্রকা. ১১:১৮.

৬. কীভাবে কিছু অল্পবয়সি প্রতারিত হয়েছে?

দুঃখজনক যে, ঈশ্বরের কিছু অল্পবয়স্ক দাস অসতর্ক হয়ে পড়েছে এবং এই জগতের যে কেবল সংক্ষিপ্ত সময় রয়েছে, সেটাকে উপেক্ষা করেছে। (২ পিতর ৩:৩, ৪) অন্যেরা কুসংসর্গ ও পর্নোগ্রাফির দ্বারা গুরুতর পাপে পতিত হয়েছে। (হিতো. ১৩:২০) এখন ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারানো কত দুঃখজনকই না হবে, যে-সময়ে আমরা শেষের একেবারে কাছে রয়েছি! এর পরিবর্তে, সা.কা.পূ. ১৪৭৩ সালে ইস্রায়েলীয়রা যখন মোয়াব তলভূমিতে শিবির স্থাপন করেছিল এবং প্রতিজ্ঞাত দেশের একেবারে দোরগোঁড়ায় ছিল, তখন তাদের প্রতি যা ঘটেছিল সেখান থেকে শেখো। সেখানে কী ঘটেছিল?

তারা শেষ সীমায় এসে ফাঁদে পড়েছিল

৭, ৮. (ক) মোয়াব তলভূমিতে শয়তান কোন কৌশল ব্যবহার করেছিল? (খ) আজকে শয়তান কোন কৌশল ব্যবহার করছে?

সেই সময়, শয়তান স্পষ্টতই ইস্রায়েলীয়দের তাদের প্রতিজ্ঞাত উত্তরাধিকার লাভ করাকে প্রতিরোধ করতে চেয়েছিল। ভাববাদী বিলিয়মের দ্বারা তাদেরকে অভিশাপ দিতে ব্যর্থ হয়ে, শয়তান আরও সূক্ষ্ম এক কৌশল ব্যবহার করেছিল; সে যিহোবার কাছ থেকে আশীর্বাদ লাভ করার ব্যাপারে তাদের অযোগ্য করে তোলার প্রচেষ্টা করেছিল। তাদেরকে প্রলোভিত করার জন্য মোয়াবের ছলনাময়ী নারীদের ব্যবহার করা হয়েছিল আর এই সময় দিয়াবল কিছুটা হলেও সফল হয়েছিল। লোকেরা মোয়াবের কন্যাদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রাখতে শুরু করেছিল এবং বাল-পিয়োরের সামনে প্রণিপাত করেছিল! যদিও তাদের মূল্যবান উত্তরাধিকার, প্রতিজ্ঞাত দেশ একেবারে নিকটে ছিল কিন্তু প্রায় ২৪,০০০ ইস্রায়েলীয় তাদের জীবন হারিয়েছিল। সেটা কত দুঃখজনকই না ছিল!—গণনা. ২৫:১-৩, ৯.

আজকে, আমরা দ্রুত আরও উত্তম প্রতিজ্ঞাত দেশের—নতুন বিধিব্যবস্থার—দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শয়তান তার স্বভাব অনুযায়ী আবারও ঈশ্বরের লোকেদের কলুষিত করার জন্য যৌন অনৈতিকতাকে ব্যবহার করছে। জগতের নৈতিক মান এতটাই নীচে নেমে গিয়েছে যে, ব্যভিচারকে স্বাভাবিক বলে বিবেচনা করা হয় এবং সমকামিতাকে ব্যক্তিগত বাছাইয়ের মতো একটা সাধারণ বিষয় বলে দেখা হয়। একজন খ্রিস্টান বোন বলেছিলেন, “কেবলমাত্র ঘরে ও কিংডম হলেই আমার সন্তানরা শেখে যে, সমকামিতা ও বিয়ের বাইরে যৌনসম্পর্ক ঈশ্বরের চোখে খারাপ।”

৯. ‘সৌকুমার্য্যের’ সময়ে কী ঘটতে পারে আর অল্পবয়সিরা কীভাবে এর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে?

যে-অল্পবয়সিরা তাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে, তারা জানে যে, যৌনসম্পর্ক এক পবিত্র উপহার যা জীবন ও সন্তান জন্মদানের সঙ্গে যুক্ত। তাই, তারা স্বীকার করে যে, যৌনসম্পর্ক এমন উপায়ে উপভোগ করা উচিত, যেভাবে ঈশ্বর নির্দেশনা দিয়েছেন—বৈবাহিক ব্যবস্থার মধ্যে। (ইব্রীয় ১৩:৪) কিন্তু, ‘সৌকুমার্য্যের’ সময়ে—যে-সময়কালে যৌন অনুভূতি প্রবল থাকে আর তা একজনের বিচারবুদ্ধিকে বিকৃত করতে পারে—শুদ্ধ থাকা কঠিন হতে পারে। (১ করি. ৭:৩৬) তোমরা কী করতে পারো, যখন অনুপযুক্ত চিন্তাভাবনা তোমাদের মনের মধ্যে ঢুকে পড়ে? গঠনমূলক বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করার জন্য যিহোবার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করো। যিহোবা সবসময় তাদের কথা শোনেন, যারা আন্তরিকভাবে তাঁর কাছে আসে। (পড়ুন, লূক ১১:৯-১৩.) এ ছাড়া, গঠনমূলক কথাবার্তাও মনকে পুনরায় কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করতে পারে।

তোমাদের লক্ষ্যগুলো বিজ্ঞতার সঙ্গে বাছাই করো!

১০. আমরা কোন ধরনের নেতিবাচক মনোভাব এড়িয়ে চলতে চাই আর নিজেদেরকে আমরা কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?

১০ একটা যে-কারণে জগতের অনেক অল্পবয়সি অসংযত এবং মাংসিক আনন্দের জন্য বেঁচে থাকে, তা হল তাদের কোনো ‘দর্শন’ নেই—ভবিষ্যতের জন্য কোনো ঐশিক নির্দেশনা অথবা নিশ্চিত আশা নেই। (হিতো. ২৯:১৮) তারা যিশাইয়ের দিনের ঈশ্বরবিহীন ইস্রায়েলীয়দের মতো, যারা “আমোদ প্রমোদ . . . মাংস ভক্ষণ ও দ্রাক্ষারস পান” করার জন্য জীবনযাপন করত। (যিশা. ২২:১৩) এই ধরনের লোকেদের ঈর্ষা করার পরিবর্তে, সেই অত্যন্ত মূল্যবান প্রত্যাশা নিয়ে চিন্তা করো না কেন, যা যিহোবা তাঁর অনুগত লোকেদের সামনে রেখেছেন? তোমরা যদি ঈশ্বরের একজন অল্পবয়সি দাস হয়ে থাকো, তাহলে তোমরা কি আকুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন জগতের জন্য অপেক্ষা করে আছ? তোমরা কি সেই ‘পরমধন্য আশাসিদ্ধির জন্য অপেক্ষা করিবার’ সময়ে ‘সংযত জীবন যাপন করিবার’ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করো, যা যিহোবা তোমাদের সামনে রেখেছেন? (তীত ২:১২, ১৩) তোমাদের উত্তর সেই লক্ষ ও অগ্রাধিকারগুলোকে প্রভাবিত করবে, যেগুলো তোমরা তোমাদের জন্য স্থাপন করেছ।

১১. যে-খ্রিস্টান অল্পবয়সিরা এখনও স্কুলে পড়ছে, তাদের কেন কঠোর পরিশ্রম করা উচিত?

১১ জগৎ চায় যেন অল্পবয়সিরা জাগতিক লক্ষ্যগুলোর প্রতি তাদের শক্তিকে কাজে লাগায়। এটা স্বাভাবিক যে, তোমাদের মধ্যে যারা এখনও স্কুলে রয়েছ, তাদের উত্তম মৌলিক শিক্ষা লাভ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা উচিত। সর্বোপরি, তোমাদের লক্ষ্য কেবল উপযুক্ত চাকরি পাওয়াই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে মণ্ডলীর জন্য এক সম্পদ এবং একজন উৎপাদনশীল রাজ্য ঘোষণাকারী হওয়া। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তোমাদেরকে অন্যদের সঙ্গে ভালভাবে ভাববিনিময় করতে, যুক্তিযুক্তভাবে চিন্তা করতে এবং শান্তভাবে ও সম্মানের সঙ্গে যুক্তি করতে সমর্থ হতে হবে। তবে, যে-অল্পবয়সিরা বাইবেল অধ্যয়ন ও এর নীতিগুলো তাদের জীবনে কাজে লাগানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, তারা প্রাপ্তিসাধ্য সর্বোত্তম শিক্ষা লাভ করে এবং সফল ও অনন্ত ভবিষ্যদের জন্য এক উত্তম ভিত্তি স্থাপন করে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১:১-৩. *

১২. খ্রিস্টান পরিবারগুলোর কোন উদাহরণ অনুকরণ করা উচিত?

১২ ইস্রায়েলে বাবামাদের দ্বারা সন্তানদের শিক্ষা লাভ করার বিষয়টাকে অনেক উচ্চমূল্য দেওয়া হতো। সেই শিক্ষায় জীবনের প্রায় প্রতিটা দিক, বিশেষভাবে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো জড়িত ছিল। (দ্বিতী. ৬:৬, ৭) তাই, যে-অল্পবয়সি ইস্রায়েলীয়রা তাদের বাবামা ও অন্যান্য ঈশ্বরভয়শীল বয়স্ক ব্যক্তির কথা শুনত, তারা কেবল জ্ঞানই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে প্রজ্ঞা, অন্তর্দৃষ্টি, বুদ্ধি ও পরিণামদর্শিতা বা চিন্তা করার ক্ষমতা লাভ করত, যে-বিরল বৈশিষ্ট্যগুলো ঐশিক শিক্ষা প্রদান করতে পারে। (হিতো. ১:২-৪; ২:১-৫, ১১-১৫) খ্রিস্টান পরিবারগুলোরও আজকে শিক্ষার প্রতি একই মনোযোগ প্রদান করা উচিত।

যারা তোমাদের ভালবাসে, তাদের কথা শোনো

১৩. কিছু অল্পবয়স্ক কোন ধরনের উপদেশ লাভ করে থাকে আর কেন তাদের সতর্ক থাকা উচিত?

১৩ অল্পবয়সিরা সমস্ত ধরনের লোকের কাছ থেকে উপদেশ লাভ করে থাকে—যার মধ্যে স্কুলের উপদেষ্টারাও রয়েছে, যারা সাধারণত কেবল এই জগতের সাফল্য নিয়ে চিন্তা করে। দয়া করে ঈশ্বরের বাক্য এবং বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর দ্বারা জোগানো আধ্যাত্মিক খাদ্যের আলোকে এই ধরনের সমস্ত উপদেশ প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করো। তোমরা তোমাদের বাইবেল অধ্যয়ন থেকে জেনেছ যে, অল্পবয়সি ও অনভিজ্ঞরা শয়তানের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। উদাহরণস্বরূপ, এদন উদ্যানে অনভিজ্ঞ হবা শয়তানের কথা শুনেছিল আর সে এমন একজন অপরিচিত ব্যক্তি ছিল, যে হবার প্রতি কোনো ভালবাসাই দেখায়নি। হবা যদি যিহোবার কথা শুনত, তাহলে ফলাফল কত ভিন্নই না হতো, যিনি অনেক উপায়ে হবার প্রতি তাঁর প্রেমের প্রমাণ দিয়েছিলেন!—আদি. ৩:১-৬.

১৪. কেন আমাদের যিহোবা ও বিশ্বাসী বাবামা উভয়ের কথাই শোনা উচিত?

১৪ তোমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাও তোমাদের ভালবাসেন আর তাঁর ভালবাসা সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ। তিনি চান তোমরা যেন কেবল এখনকার জন্য নয় কিন্তু চিরকালের জন্য সুখী থাকো! তাই, এক যত্নশীল বাবা অথবা মায়ের কোমলতা সহকারে তিনি তোমাদেরকে ও যারা তাঁকে উপাসনা করে, তাদের সকলকে বলেন: “এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।” (যিশা. ৩০:২১) তোমাদের যদি বিশ্বাসী বাবামা থাকে, যারা সত্যিই যিহোবাকে ভালবাসে, তাহলে তোমাদের বাড়তি আশীর্বাদ রয়েছে। অগ্রাধিকার ও লক্ষ্যগুলো স্থাপন করার সময় সম্মানের সঙ্গে তাদের পরামর্শ শোনো। (হিতো. ১:৮, ৯) সর্বোপরি, তারা চায় তোমরা যেন জীবন লাভ করো, যা এই জগতের ধনসম্পদ বা প্রতিপত্তির চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান।—মথি ১৬:২৬.

১৫, ১৬. (ক) যিহোবার ওপর আমরা কোন আস্থা রাখতে পারি? (খ) বারূকের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করি?

১৫ যারা তাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে, তারা তাদের জীবনকে সাদাসিধে রাখে, এই নিশ্চয়তা নিয়ে যে, যিহোবা “কোন ক্রমে” তাদেরকে ছাড়বেন না “ও কোন ক্রমে” তাদেরকে ত্যাগ করবেন না। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৫.) যেহেতু এই গঠনমূলক মনোভাব জগতের চিন্তাভাবনার বিপরীত, তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা জগতের আত্মার মনোভাবের দ্বারা আমাদেরকে প্রভাবিত হতে না দিই। (ইফি. ২:২) এই ক্ষেত্রে যিরমিয়ের সচিব বারূকের কথা বিবেচনা করো, যিনি যিরূশালেমের সেই কঠিন শেষ সময়ে বাস করতেন, যা অবশেষে সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে নগরের ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে।

১৬ মনে হয় যে, বারূক নিজের জন্য বস্তুগতভাবে আরও উত্তম এক জীবন লাভ করতে চেয়েছিল। যিহোবা তা লক্ষ করেছিলেন এবং সদয়ভাবে বারূককে নিজের জন্য ‘মহৎ মহৎ বিষয়ের’ চেষ্টা না করে চলার ব্যাপারে সাবধান করেছিলেন। বারূক নম্র ও বিজ্ঞ বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন কারণ তিনি যিহোবার কথা শুনেছিলেন এবং যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। (যির. ৪৫:২-৫) অন্যদিকে, বারূকের সমসাময়িক যে-লোকেরা ‘মহৎ মহৎ বিষয়ের’ চেষ্টা করেছিল, যিহোবাকে দ্বিতীয় স্থানে রেখেছিল, তারা শীঘ্রই সমস্তকিছু কল্‌দীয়দের (বাবিলীয়দের) হাতে হারিয়েছিল। অনেকে তাদের জীবনও হারিয়েছিল। (২ বংশা. ৩৬:১৫-১৮) বারূকের অভিজ্ঞতা আমাদের এটা দেখতে সাহায্য করে যে, ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক এই জগতের ধনসম্পদ ও সুনাম থেকেও আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বোত্তম উদাহরণগুলোর প্রতি লক্ষ রাখো

১৭. কেন যিশু, পৌল ও তীমথিয় আজকে যিহোবার দাসদের জন্য উত্তম আদর্শ?

১৭ জীবনের পথে আমাদের সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরের বাক্য আমাদের অনেক উত্তম আদর্শ জোগায়। উদাহরণস্বরূপ, যিশু ছিলেন সর্বকালের সর্বমহান মেধাবী মানুষ কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সেই বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন, যা লোকেদেরকে চিরকালের জন্য উপকার করবে—“রাজ্যের সুসমাচার।” (লূক ৪:৪৩) যিহোবাকে তার সর্বোত্তমটা দেওয়ার জন্য প্রেরিত পৌল লাভজনক বৃত্তি পরিত্যাগ করেছিলেন এবং তার সময় ও শক্তিকে সুসমাচার প্রচার করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। “বিশ্বাস সম্বন্ধে . . . যথার্থ বৎস” তীমথিয়, পৌলের উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করেছিলেন। (১ তীম. ১:২) যিশু, পৌল এবং তীমথিয় কি তাদের জীবনধারার জন্য অনুশোচনা করেছিল? কখনোই না! বস্তুতপক্ষে, পৌল বলেছিলেন যে, জগৎ তাকে যা দিতে চেয়েছে, সেটাকে তিনি ঈশ্বরের সেবা করার বিশেষ সুযোগের তুলনায় ‘মলবৎ গণ্য করিয়াছিলেন।’—ফিলি. ৩:৮-১১.

১৮. একজন অল্পবয়সি ভাই কোন বিরাট পরিবর্তন করেছিল এবং কেন তার কোনো অনুশোচনা নেই?

১৮ আজকে অনেক অল্পবয়স্ক খ্রিস্টান যিশু, পৌল ও তীমথিয়ের বিশ্বাস অনুকরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক ভাল বেতনের চাকরি ছিল এমন একজন অল্পবয়স্ক ভাই লিখেছিল: “যেহেতু আমি বাইবেলের নীতিগুলোর দ্বারা জীবনযাপন করতাম, তাই শীঘ্রই আমি পদোন্নতি লাভ করেছিলাম। আর্থিক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমার মনে হয়েছিল যে, আমি বায়ুর অনুধাবন করছি। আমি যখন কোম্পানির নির্বাহী কমিটির কাছে গিয়ে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা অনুধাবন করার ব্যাপারে আমার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছিলাম, তখন তারা আমাকে সঙ্গে সঙ্গে আরও টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, এই আশা করে যে, আমি থেকে যাব। কিন্তু, আমি মনস্থির করে ফেলেছিলাম। অনেক লোক বুঝতে পারেনি যে, কেন আমি পূর্ণসময়ের সেবা অনুধাবন করার জন্য এক লাভজনক ক্যারিয়ার ত্যাগ করেছি। আমার উত্তর হল যে, আমি সত্যিই ঈশ্বরের কাছে আমার উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলতে চাই। যেহেতু আমার জীবন এখন আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত, তাই আমার যথেষ্ট সুখ ও পরিতৃপ্তি রয়েছে, যা কোনো পরিমাণ অর্থ অথবা প্রতিপত্তি আমাকে দিতে পারত না।”

১৯. অল্পবয়সিদেরকে কোন বিজ্ঞ বাছাই করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে?

১৯ বিশ্বব্যাপী, হাজার হাজার অল্পবয়সি একই ধরনের বিজ্ঞ বাছাই করেছে। তাই অল্পবয়সিরা, তোমরা যখন তোমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করো, তখন যিহোবার দিনের আকাঙ্ক্ষা করো বা সেই দিনের কথা মনে রেখো। (২ পিতর ৩:১১, ১২) তাদেরকে দেখে ঈর্ষা করো না, যারা এই জগৎ থেকে অনেক লাভবান হচ্ছে। এর পরিবর্তে, যারা সত্যিই তোমাদের ভালবাসে তাদের কথা শোনো। ‘স্বর্গে ধন’ সঞ্চয় করা হল সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ, যা তোমরা করতে পারো আর কেবলমাত্র এটারই চির উপকার রয়েছে। (মথি ৬:১৯, ২০; পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫-১৭.) হ্যাঁ, তোমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করো। তোমরা যদি তা করো, তাহলে যিহোবা তোমাদের আশীর্বাদ করবেন।

[পাদটীকা]

^ উচ্চশিক্ষা ও চাকরির বিষয়ে ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৬-৩১ পৃষ্ঠা দেখো।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের ওপর নির্ভরতা দেখাই?

• সর্বোত্তম শিক্ষা কোনটা?

• বারূকের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

• কারা উত্তম আদর্শ হিসেবে কাজ করে এবং কেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবা সর্বোত্তম শিক্ষা জুগিয়ে থাকেন

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

বারূক যিহোবার কথা শুনেছিলেন এবং যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। এই উদাহরণ থেকে তোমরা কী শিখতে পারো?