‘অসার বিষয়গুলোকে’ অস্বীকার করুন
‘অসার বিষয়গুলোকে’ অস্বীকার করুন
“যে অসারদের পিছনে পিছনে দৌড়ে, সে বুদ্ধিবিহীন।”—হিতো. ১২:১১.
১. আমাদের কিছু মূল্যবান বিষয় কী আর সেগুলোকে ব্যবহার করার সর্বোত্তম উপায় কী?
খ্রিস্টান হিসেবে, আমাদের সকলেরই বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান বিষয় রয়েছে। সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে স্বাস্থ্য ও শক্তি, সহজাত মানসিক ক্ষমতা বা অর্থনৈতিক সম্পদ। যেহেতু আমরা যিহোবাকে ভালবাসি, তাই আমরা তাঁর সেবায় সেই বিষয়গুলোকে ব্যবহার করতে পেরে সুখী আর এভাবে আমরা এই অনুপ্রাণিত পরামর্শে সাড়া দিই: “তুমি সদাপ্রভুর সম্মান কর আপনার ধনে” বা মূল্যবান বিষয়গুলোর দ্বারা।—হিতো. ৩:৯.
২. অসার বিষয়গুলো সম্বন্ধে বাইবেল কোন সাবধানবাণী দেয় আর এই সাবধানবাণী আক্ষরিক অর্থে কীভাবে প্রয়োগ করা যায়?
২ অন্যদিকে, বাইবেল অসার বিষয়গুলো সম্বন্ধেও বলে এবং সেগুলোর পিছনে ছুটতে গিয়ে আমাদের সম্পদ নষ্ট করার ব্যাপারে সাবধান করে। এই ক্ষেত্রে, হিতোপদেশ ১২:১১ পদের কথাগুলো বিবেচনা করুন: “যে আপন জমি চাষ করে, সে যথেষ্ট আহার পায়; কিন্তু যে অসারদের পিছনে পিছনে দৌড়ে, সে বুদ্ধিবিহীন।” এই প্রবাদটি আক্ষরিক অর্থে কীভাবে প্রযোজ্য, তা বোঝা কঠিন কিছু নয়। একজন ব্যক্তি যদি তার পরিবারকে সমর্থন করতে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য তার সময় ও শক্তিকে ব্যয় করেন, তাহলে আপেক্ষিক নিরাপত্তা লাভ করার এক উত্তম সম্ভাবনা তার রয়েছে। (১ তীম. ৫:৮) কিন্তু, তিনি যদি অসার বিষয়গুলোর পিছনে ছুটতে গিয়ে তার সম্পদ নষ্ট করেন, তাহলে তা দেখায় যে তিনি “বুদ্ধিবিহীন,” অর্থাৎ তার ভারসাম্যপূর্ণ বিচার ও সঠিক প্রেরণার ঘাটতি রয়েছে। খুব সম্ভবত, এই ধরনের একজন ব্যক্তির অভাব লেগেই থাকবে।
৩. অসার বিষয়গুলো সম্বন্ধে বাইবেলের সাবধানবাণীকে কীভাবে আমাদের উপাসনার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়?
৩ কিন্তু, কী হবে যদি আমরা আমাদের উপাসনার ক্ষেত্রে এই প্রবাদের নীতিটি প্রয়োগ করি? তাহলে আমরা দেখতে পাব যে, একজন খ্রিস্টান যিনি অধ্যবসায়ের সঙ্গে এবং বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করেন, তিনি প্রকৃত নিরাপত্তা উপভোগ করছেন। তিনি এখনই ঈশ্বরের আশীর্বাদের বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারেন এবং তার ভবিষ্যতের বিষয়ে এক নিশ্চিত আশা রয়েছে। (মথি ৬:৩৩; ১ তীম. ৪:১০) কিন্তু, একজন খ্রিস্টান যিনি অসার বিষয়গুলোর দ্বারা বিক্ষিপ্ত হন, তিনি যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে ও তার অনন্তজীবনের প্রত্যাশাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেন। কীভাবে আমরা তা এড়াতে পারি? আমাদের জীবনের সেই বিষয়গুলোকে নির্ধারণ করতে হবে, যেগুলো ‘অসার’ এবং সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য এক দৃঢ়সংকল্প গড়ে তুলতে হবে।—পড়ুন, তীত ২:১১, ১২.
৪. সাধারণ অর্থে অসার বিষয়গুলো কী?
৪ তাহলে অসার বিষয়গুলো কী? সাধারণ অর্থে, সেগুলো এমন যেকোনো কিছু হতে পারে, যেগুলো আমাদেরকে সর্বান্তঃকরণে যিহোবার সেবা করা থেকে বিক্ষিপ্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বিভিন্ন ধরনের আমোদপ্রমোদ। অবশ্য, আমোদপ্রমোদের নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। কিন্তু, আমরা যখন আমাদের উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজগুলোকে অবহেলা করে “আনন্দ-ফূর্তির” পিছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করি, তখন আমোদপ্রমোদ এক অসার বিষয় হয়ে ওঠে, যা আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের ওপর প্রতিকূলভাবে প্রভাব ফেলে। (উপ. ২:২৪; ৪:৬) এটা এড়ানোর জন্য, একজন খ্রিস্টান তার মূল্যবান সময়কে কীভাবে ব্যয় করেন, তা সতর্কতার সঙ্গে নজর রাখার মাধ্যমে ভারসাম্য গড়ে তোলেন। (পড়ুন, কলসীয় ৪:৫.) কিন্তু কিছু অসার বিষয় রয়েছে, যেগুলো আমোদপ্রমোদের চেয়ে আরও অনেক বেশি বিপদজনক। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, মিথ্যা দেবতারা।
অসার দেবতাদের অস্বীকার করুন
৫. “অবস্তু” বা অসার শব্দটিকে বাইবেল প্রায়ই কীভাবে প্রয়োগ করে থাকে?
৫ এটা আগ্রহজনক যে, মূল ইব্রীয় ভাষায় যেখানে “অবস্তু” বা অসার শব্দটি দেখা যায়, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিথ্যা দেবতাদের প্রতি প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবা ইস্রায়েলের উদ্দেশে বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের জন্য অবস্তু প্রতিমা [“দেবতা,” NW] নির্ম্মাণ করিও না, এবং ক্ষোদিত প্রতিমা কিম্বা স্তম্ভ স্থাপন করিও না, ও তাহার কাছে প্রণিপাত করিবার নিমিত্তে তোমাদের দেশে কোন ক্ষোদিত প্রস্তর রাখিও না।” (লেবীয়. ২৬:১) রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু মহান্ ও অতি কীর্ত্তনীয়, তিনি সমস্ত দেবতা অপেক্ষা ভয়ার্হ। কেননা জাতিগণের সমস্ত দেবতা অবস্তুমাত্র, কিন্তু সদাপ্রভু আকাশমণ্ডলের নির্ম্মাতা।”—১ বংশা. ১৬:২৫, ২৬.
৬. কেন মিথ্যা দেবতারা অসার?
৬ দায়ূদ যেমন ইঙ্গিত করেছিলেন, আমাদের চারপাশে যিহোবার মহত্ত্বের অনেক প্রমাণ রয়েছে। (গীত. ১৩৯:১৪; ১৪৮:১-১০) যিহোবার সঙ্গে এক চুক্তির সম্পর্কে থাকা ইস্রায়েলীয়দের জন্য কী এক বিশেষ সুযোগই না ছিল! তারা কতই না মূর্খ ছিল যে, তারা তাঁর কাছ থেকে সরে গিয়ে ক্ষোদিত প্রতিমা ও স্তম্ভের সামনে প্রণিপাত করেছিল! সংকটের সময়ে তাদের মিথ্যা দেবতারা সত্যিই অসার বলে প্রমাণিত হয়েছিল, যারা তাদের নিজেদেরকেই রক্ষা করতে পারেনি আর তাদের উপাসকদের রক্ষা করা তো দূরের কথা।—বিচার. ১০:১৪, ১৫; যিশা. ৪৬:৫-৭.
৭, ৮. কীভাবে “ধন” এক দেবতার মতো হয়ে উঠতে পারে?
৭ আজকে অনেক দেশে, লোকেরা এখনও মনুষ্যনির্মিত প্রতিমাগুলোর সামনে প্রণিপাত করে এবং এই ধরনের দেবতারা এখনও ঠিক ততটাই অকেজো, যতটা তারা অতীতে ছিল। (১ যোহন ৫:২১) কিন্তু, বাইবেল প্রতিমা ছাড়াও আরও অন্যান্য বিষয়কে দেবতা হিসেবে বর্ণনা করে। উদাহরণস্বরূপ, যিশুর এই কথাগুলো বিবেচনা করুন: “কেহই দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না; কেননা সে হয় ত এক জনকে দ্বেষ করিবে, আর এক জনকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনের প্রতি অনুরক্ত হইবে, আর এক জনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।”—মথি ৬:২৪.
৮ কীভাবে “ধন” এক দেবতার মতো হয়ে উঠতে পারে? উদাহরণ হিসেবে, প্রাচীন ইস্রায়েলে মাঠে পড়ে থাকা একটা পাথরের কথা চিন্তা করুন। এই ধরনের একটা পাথর বাড়ি বা দেওয়াল নির্মাণের জন্য উপকারজনক হতে পারে। অন্যদিকে, এটাকে যদি একটা “স্তম্ভ” বা “ক্ষোদিত প্রস্তর” হিসেবে স্থাপন করা হতো, তাহলে এটা যিহোবার লোকেদের জন্য বিঘ্নজনক হয়ে উঠত। (লেবীয়. ২৬:১) অনুরূপভাবে, টাকাপয়সারও একটা নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। আমাদের কেবল ভরণপোষণের জন্য টাকাপয়সার প্রয়োজন রয়েছে আর আমরা যিহোবার সেবায় এটাকে উপকারজনক হিসেবে কাজে লাগাতে পারি। (উপ. ৭:১২; লূক ১৬:৯) কিন্তু, আমরা যদি টাকাপয়সার পিছনে ছোটাকে আমাদের খ্রিস্টীয় সেবার আগে রাখি, তাহলে টাকাপয়সা মূলত আমাদের কাছে এক দেবতা হয়ে ওঠে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০.) এই জগতে, যেখানে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হওয়াটা লোকেদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেখানে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, এই ব্যাপারে আমরা যেন এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখি।—১ তীম. ৬:১৭-১৯.
৯, ১০. (ক) একজন খ্রিস্টান শিক্ষাকে কীভাবে দেখে থাকেন? (খ) উচ্চশিক্ষার একটা বিপদ কী?
৯ উপকারজনক বিষয় যে এক অসার বিষয় হয়ে উঠতে পারে, সেটার আরেকটা উদাহরণ হচ্ছে জাগতিক লেখাপড়া। আমরা চাই যে, আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন সুশিক্ষিত হয়, যাতে তারা তাদের নিজেদের ভরণপোষণ জোগাতে পারে। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একজন সুশিক্ষিত খ্রিস্টান বোধগম্যতা সহকারে আরও ভালভাবে বাইবেল পড়তে পারে, সমস্যাগুলো নিয়ে যুক্তি করতে পারে এবং সুযুক্তিপূর্ণ উপসংহারে আসতে পারে আর বাইবেলের সত্যগুলোকে স্পষ্ট ও দৃঢ়প্রত্যয়জনকভাবে শিক্ষা দিতে পারে। ভাল শিক্ষা গ্রহণ করতে সময় লাগে ঠিকই, কিন্তু সেই সময়টা সার্থক হয়।
১০ তবে, কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা সম্বন্ধে কী বলা যায়? সাধারণত, এই ধরনের শিক্ষাকে সাফল্যের এক চাবিকাঠি হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও, অনেকে যারা এই ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করে, তারা তাদের মনকে ক্ষতিকর মতবাদের দ্বারা পূর্ণ করে। এই ধরনের শিক্ষা তারুণ্যের মূল্যবান বছরগুলোকে নষ্ট করে দেয়, যে-সময়টাকে যিহোবার সেবায় সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করা যেত। (উপ. ১২:১) সম্ভবত এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যে-দেশগুলোতে অনেকেই এই ধরনের শিক্ষা লাভ করেছে, সেখানে খুব কম লোকেরই ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য এই জগতের উন্নত শিক্ষাপদ্ধতির ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে, একজন খ্রিস্টান যিহোবার ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করেন।—হিতো. ৩:৫.
মাংসিক আকাঙ্ক্ষাকে এক দেবতা হয়ে উঠতে দেবেন না
১১, ১২. কেন পৌল কয়েক জনের বিষয়ে বলেছিলেন: “উদর তাহাদের ঈশ্বর”?
১১ ফিলিপীয়দের প্রতি তার পত্রে, প্রেরিত পৌল অন্য আরেকটা বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন, যা এক দেবতা হয়ে উঠতে পারে। তিনি এমন কারো কারো সম্বন্ধে বলেন, যারা একসময় সহউপাসক ছিল আর তিনি বলেন: “অনেকে এমন চলিতেছে, যাহাদের বিষয়ে তোমাদিগকে বার বার বলিয়াছি, এবং এখনও রোদন করিতে করিতে বলিতেছি, তাহারা খ্রীষ্টের ক্রুশের শত্রু; তাহাদের পরিণাম বিনাশ; উদর তাহাদের ঈশ্বর, এবং . . . তাহারা পার্থিব বিষয় ভাবে।” (ফিলি. ৩:১৮, ১৯) কীভাবে একজন ব্যক্তির পেট বা উদর এক দেবতা হয়ে উঠতে পারে?
১২ এইরকম মনে হয় যে, পৌলের সেই পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলোকে চরিতার্থ করার বাসনাই, পৌলের সঙ্গে যিহোবাকে সেবা করার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কেউ কেউ হয়তো আক্ষরিকভাবে পেটুক ও মাতাল হওয়া পর্যন্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ করেছে। (হিতো. ২৩:২০, ২১; তুলনা করুন, দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৮-২১.) অন্যেরা হয়তো প্রথম শতাব্দীর জগতে প্রাপ্তিসাধ্য সুযোগ-সুবিধাগুলোর সদ্ব্যবহার করা বেছে নিয়েছে ও এর ফলে যিহোবার সেবা থেকে বিক্ষিপ্ত হয়েছে। আমরা যেন কখনোই তথাকথিত উত্তম জীবনযাপন করার আকাঙ্ক্ষাকে, যিহোবার প্রতি সর্বান্তঃকরণে সেবা করার ক্ষেত্রে নিজেদেরকে ধীর হয়ে যেতে সুযোগ না দিই।—কল. ৩:২৩, ২৪.
১৩. (ক) লোভ কী এবং কীভাবে পৌল এটাকে বর্ণনা করেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা লোভ করা এড়াতে পারি?
১৩ এ ছাড়া, পৌল মিথ্যা উপাসনার আরেকটা দিক সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “অতএব তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ, কুঅভিলাষ, এবং লোভ, এ ত প্রতিমাপূজা।” (কল. ৩:৫) লোভ হচ্ছে আমাদের অধিকারে নেই এমন কিছু পাওয়ার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এটা হতে পারে বস্তুগত জিনিসগুলো পাওয়ার বাসনা। এমনকি অবৈধ যৌনসম্পর্কও এটার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। (যাত্রা. ২০:১৭) এইরকম মনে করা কি গুরুগম্ভীর নয় যে, এই ধরনের বাসনা প্রতিমাপূজার, মিথ্যা দেবতার উপাসনার সমরূপ? যেকোনো মূল্যেই হোক, এই ধরনের মন্দ আকাঙ্ক্ষাকে দমন করা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা দেখাতে যিশু সুস্পষ্ট বর্ণনা ব্যবহার করেছিলেন।—পড়ুন, মার্ক ৯:৪৭; ১ যোহন ২:১৬.
অসার কথাবার্তার বিষয়ে সাবধান হোন
১৪, ১৫. (ক) কোন “অবস্তু” বা অসার বিষয় যিরমিয়ের দিনের অনেককে বিঘ্নিত করেছিল? (খ) মোশির কথাগুলো কেন মূল্যবান ছিল?
১৪ কথাবার্তাও অসার বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, যিহোবা যিরমিয়কে বলেছিলেন: “সেই ভাববাদীরা আমার নামে মিথ্যা ভাববাণী বলে; আমি তাহাদিগকে প্রেরণ করি নাই, তাহাদিগকে আজ্ঞা দিই নাই, তাহাদের কাছে কথা কহি নাই; তাহারা তোমাদের নিকটে মিথ্যা দর্শন ও মন্ত্র, অবস্তু ও আপন আপন হৃদয়ের প্রতারণামূলক ভাববাণী বলে।” (যির. ১৪:১৪) সেই মিথ্যা ভাববাদীরা দাবি করেছিল যে, তারা যিহোবার নামে কথা বলে কিন্তু তারা আসলে তাদের নিজস্ব ধারণাকে, তাদের নিজস্ব প্রজ্ঞাকে ছড়িয়ে দিয়েছিল। তাই, তাদের কথাগুলো ছিল “অবস্তু” বা অসার বিষয়। সেগুলো ছিল অর্থহীন ও সেগুলো আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে সত্যিই হুমকিস্বরূপ হয়েছিল। সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে, অনেকে যারা এই ধরনের নিরর্থক বা অসার কথাবার্তায় মনোযোগ দিয়েছিল, তারা বাবিলীয় সৈন্যদের হাতে অকালমৃত্যুর শিকার হয়েছিল।
১৫ অন্যদিকে, মোশি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “আমি অদ্য তোমাদের কাছে সাক্ষ্যরূপে যাহা যাহা কহিলাম, তোমরা সেই সমস্ত কথায় মনোযোগ কর . . . বস্তুতঃ ইহা তোমাদের পক্ষে নিরর্থক বাক্য নহে, কেননা ইহা তোমাদের জীবন, এবং তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে যর্দ্দন পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে এই বাক্য দ্বারা দীর্ঘায়ু হইবে।” (দ্বিতী. ৩২: ৪৬, ৪৭) হ্যাঁ, এই কথাগুলো মোশি ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় বলেছিলেন। তাই সেগুলো ছিল মূল্যবান, বস্তুতপক্ষে সেই জাতির মঙ্গলের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যারা সেগুলোতে মনোযোগ দিয়েছিল, তারা দীর্ঘায়ু এবং উন্নতি লাভ করেছিল। আমরা যেন সবসময় অসার কথাবার্তাকে অস্বীকার করি এবং সত্যের মূল্যবান বাক্যের প্রতি আসক্ত থাকি।
১৬. বিজ্ঞানীদের সেই বিবৃতিগুলোকে আমরা কীভাবে দেখি, যেগুলো ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে?
১৬ আমরা কি আজকে অসার বিষয়গুলো বলতে শুনি? হ্যাঁ। উদাহরণস্বরূপ, কিছু বিজ্ঞানী বলে, বিবর্তন সংক্রান্ত মতবাদ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংঘটিত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো প্রদর্শন করে যে, ঈশ্বরে বিশ্বাস করার আর কোনো প্রয়োজন নেই এবং সমস্তকিছুকেই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এই ধরনের উদ্ধত বিবৃতিগুলো কি আমাদের চিন্তিত করে? কখনোই না! মানব জ্ঞান বা প্রজ্ঞা ঈশ্বরের প্রজ্ঞার চেয়ে ভিন্ন। (১ করি. ২:৬, ৭) কিন্তু আমরা জানি যে, যখন মানুষের শিক্ষাগুলো ঈশ্বর যা প্রকাশ করেছেন, সেটার সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে, তখন সবসময় মানুষের শিক্ষাগুলোই ভুল প্রমাণিত হয়। (পড়ুন, রোমীয় ৩:৪.) কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক উন্নতি সত্ত্বেও, মানব প্রজ্ঞা সম্বন্ধে বাইবেলের এই মূল্যায়ন সত্য হিসেবে অব্যাহত থাকে: “এই জগতের যে জ্ঞান, তাহা ঈশ্বরের নিকটে মূর্খতা।” ঈশ্বরের অসীম প্রজ্ঞার তুলনায় মানুষের যুক্তি হচ্ছে অর্থহীন।—১ করি. ৩:১৮-২০.
১৭. খ্রিস্টীয়জগতের নেতাদের এবং ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের কথাগুলোকে কীভাবে দেখা উচিত?
১৭ অসার কথাবার্তার আরেকটা উদাহরণ খ্রিস্টীয়জগতের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে পাওয়া যায়। তারা দাবি করে যে, তারা ঈশ্বরের নামে কথা বলে কিন্তু তাদের অধিকাংশ কথাই শাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে নয় আর তারা যা বলে, তা মূলত অর্থহীন। ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিরাও অসার কথাবার্তা বলে, নিযুক্ত ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ চেয়ে তাদের মহৎ প্রজ্ঞা রয়েছে বলে দাবি করে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) কিন্তু, ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিরা তাদের নিজ প্রজ্ঞা অনুযায়ী কথা বলে ও তাদের কথাবার্তা হচ্ছে অসার আর যেকেউ তা শোনে, তাদের জন্য তা বিঘ্নজনক হয়। (লূক ১৭:১, ২) কীভাবে আমরা তাদের দ্বারা ভ্রান্ত হওয়া এড়াতে পারি?
অসার কথাবার্তাকে যেভাবে অস্বীকার করা যায়
১৮. কোন কোন উপায়ে আমরা ১ যোহন ৪:১ পদের পরামর্শ প্রয়োগ করতে পারি?
১৮ বৃদ্ধ প্রেরিত যোহন এই পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা সব অনুপ্রাণিত অভিব্যক্তিকে বিশ্বাস কোরো না, বরং অনুপ্রাণিত অভিব্যক্তিগুলোকে পরীক্ষা করে দেখো, সেগুলো ঈশ্বরের কাছ থেকে কি না।” (১ যোহন ৪:১, NW) যোহনের পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে, আমরা যাদের কাছে প্রচার করি, তাদের যা শেখানো হয়েছে, সেগুলোকে বাইবেলের সঙ্গে তুলনা করে দেখতে সবসময় উৎসাহিত করি। সেটা আমাদের জন্যও এক উত্তম মান। যদি এমন কোনো কথা আমাদের কানে আসে, যেগুলো সত্যের সমালোচনা করে বা যেগুলো মণ্ডলী, প্রাচীন বা আমাদের যেকোনো ভাইয়ের ওপর অপবাদ নিয়ে আসে, তাহলে আমরা যাচাই না করেই সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো গ্রহণ করে নিই না। এর পরিবর্তে, আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত: “এই গুজব যিনি ছড়াচ্ছেন, তিনি কি বাইবেল যা বলে, সেটার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছেন? এই গুজব বা অভিযোগগুলো কি যিহোবার উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিয়ে যায়? সেগুলো কি মণ্ডলীর শান্তি বৃদ্ধি করে?” ভ্রাতৃসমাজকে গেঁথে তোলার পরিবর্তে তাদেরকে ছোটো করে এমন যা কিছু আমরা শুনি, সেগুলো হচ্ছে অর্থহীন বিষয়।—২ করি. ১৩:১০, ১১.
১৯. কীভাবে প্রাচীনরা নিশ্চিত হয় যে, তাদের কথাবার্তা অসার নয়?
১৯ অসার কথাবার্তার বিষয়ে প্রাচীনরাও এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করে। যখন তাদের পরামর্শ দিতে হয়, তখন তারা নিজেদের সীমাবদ্ধতাগুলো মনে রাখে এবং শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত জ্ঞান ভাণ্ডারের ওপর ভিত্তি করে পরামর্শ দেয় না। তাদের সবসময় বাইবেল কী বলে, তা উল্লেখ করা উচিত। প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোতে এক যুক্তিযুক্ত নীতি পাওয়া যায়: “যাহা লিখিত আছে, তাহা অতিক্রম করিতে নাই।” (১ করি. ৪:৬) প্রাচীনরা বাইবেলে লিখিত কথাগুলো অতিক্রম করে না। আর এই পরামর্শের নীতি প্রয়োগ করার সময়, তারা বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের প্রকাশনায় লিখিত বাইবেলভিত্তিক পরামর্শকে অতিক্রম করে না।
২০. কোন কোন উপায়ে আমাদের অসার বিষয়গুলোকে অস্বীকার করতে সাহায্য করা হয়?
২০ অসার বিষয়গুলো—তা সেগুলো ‘দেবতা,’ কথাবার্তা বা অন্য যেকোনো কিছুই হোক—খুবই ক্ষতিকর। সেই কারণে আমরা সবসময় সেগুলোকে শনাক্ত করতে যিহোবার সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করি এবং সেগুলোকে কীভাবে অস্বীকার করা যায়, সেই ব্যাপারে তাঁর নির্দেশনা খুঁজি। যখন আমরা তা করি, তখন আমরা আসলে গীতরচকের সঙ্গে এই কথা বলি: “অলীকতা-দর্শন হইতে আমার চক্ষু ফিরাও, তোমার পথে আমাকে সঞ্জীবিত কর।” (গীত. ১১৯:৩৭) পরের প্রবন্ধে আমরা যিহোবার নির্দেশনা মেনে নেওয়ার মূল্য সম্বন্ধে আরও আলোচনা করব।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
• সাধারণ অর্থে কোন ‘অসার বিষয়গুলোকে’ আমাদের অস্বীকার করা উচিত?
• কীভাবে আমরা টাকাপয়সাকে এক দেবতার মতো করে তোলা পরিহার করতে পারি?
• কোন উপায়ে মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলো প্রতিমাপূজা হয়ে উঠতে পারে?
• কীভাবে আমরা অসার কথাবার্তাকে অস্বীকার করতে পারি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইস্রায়েলীয়দের ‘আপন জমি চাষ করিতে’ উৎসাহিত করা হয়েছিল, অসার বিষয়গুলোর অনুধাবন করতে নয়
[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
বস্তুগত বিষয়গুলোর প্রতি আকাঙ্ক্ষাকে কখনোই যিহোবার সেবায় নিজেকে ধীর হয়ে যেতে দেবেন না
[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনদের কথাগুলো খুবই মূল্যবান হতে পারে