সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এই শেষকালে বিয়ে করা ও বাবামা হওয়া

এই শেষকালে বিয়ে করা ও বাবামা হওয়া

এই শেষকালে বিয়ে করা ও বাবামা হওয়া

“সময় সঙ্কুচিত।”—১ করি. ৭:২৯.

১. (ক) চলতি কোন পরিবর্তনগুলো সেই বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো “মোকাবিলা করা কঠিন”? (খ) কেন পরিবর্তিত পারিবারিক মূল্যবোধগুলো আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়?

 ঈশ্বরের বাক্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, ‘শেষকাল’ যুদ্ধবিগ্রহ, ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ এবং মহামারী দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হবে। (দানি. ৮:১৭, ১৯; লূক ২১:১০, ১১) এ ছাড়া, বাইবেল সতর্ক করেছিল যে, মানব ইতিহাসের এই চূড়ান্ত সময়কাল হবে বিরাট সামাজিক পরিবর্তনের এক সময়। পারিবারিক জীবনের মধ্যে বিভিন্ন গোলযোগ সেই বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত হবে, যেগুলো এই ‘শেষকালের’ বিষম সময়ে “মোকাবিলা করা কঠিন।” (২ তীম. ৩:১, NW, ২-৪) কেন এই ধরনের পরিবর্তন আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়? কারণ সেগুলো এত ব্যাপক ও জোরালো যে, সেগুলো আজকে খ্রিস্টানরা বিয়ে করা ও বাবামা হওয়াকে যেভাবে দেখে থাকে, সেটাকে প্রভাবিত করতে পারে। কোন দিক দিয়ে?

২. বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদকে এই জগৎ কীভাবে দেখে থাকে?

বর্তমান দিনে, বিবাহবিচ্ছেদ খুবই সহজ এবং ব্যাপক হয়ে উঠেছে আর অনেক দেশে বিবাহবিচ্ছেদের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু, আমাদের স্পষ্টভাবে মনে রাখা উচিত যে, বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ সম্বন্ধে আমাদের চারপাশের জগতে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য যে-দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে সেটার চেয়ে যিহোবা ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাহলে, যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি কী?

৩. যিহোবা ও যিশু খ্রিস্ট বিয়েকে কোন দৃষ্টিতে দেখে?

যারা বিবাহিত তাদের কাছ থেকে যিহোবা ঈশ্বর চান যেন তারা তাদের বিয়ের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। তিনি যখন প্রথম পুরুষ ও নারীকে বিয়েতে একতাবদ্ধ করেছিলেন, তখন যিহোবা বলেছিলেন যে, “মনুষ্য . . . আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।” পরবর্তী সময়ে যিশু খ্রিস্ট সেই উক্তি পুনরাবৃত্তি করে আরও বলেছিলেন: “অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” অধিকন্তু যিশু বলেছিলেন: “ব্যভিচার দোষ ব্যতিরেকে যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে।” (আদি. ২:২৪; মথি ১৯:৩-৬, ৯) তাই, যিহোবা ও যিশু বিয়েকে চিরজীবনের এক বন্ধন হিসেবে দেখে থাকে, যা কেবল তখনই শেষ হয়ে যায়, যখন একজন সঙ্গী মারা যান। (১ করি. ৭:৩৯) যেহেতু বিয়ে এক পবিত্র ব্যবস্থা, তাই বিবাহবিচ্ছেদ হালকাভাবে নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বরের বাক্য বলে যে, যিহোবা সেই বিবাহবিচ্ছেদকে ঘৃণা করেন, যার কোনো শাস্ত্রীয় ভিত্তি নেই। *পড়ুন, মালাখি ২:১৩-১৬; ৩:৬.

বিয়েকে দায়িত্বের সঙ্গে দেখুন

৪. কেন কিছু খ্রিস্টান অল্পবয়স্ক তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করেছে বলে অনুশোচনা করে?

আমরা যে-ভক্তিহীন জগতে বাস করছি, তা যৌনতায় ছেয়ে আছে। প্রতিদিন আমরা ব্যাপক পরিমাণ যৌন উদ্দীপক চিত্রের মুখোমুখি হতে পারি। সেগুলো আমাদের ওপর, বিশেষত মণ্ডলীতে আমাদের যে-প্রিয় অল্পবয়সিরা রয়েছে, তাদের ওপর যে-প্রভাব ফেলতে পারে, সেগুলোকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। এই ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতি অল্পবয়সি খ্রিস্টানদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত, যা কিনা এমনকি তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তুলতে পারে? কেউ কেউ খুব অল্প বয়সে বিয়ে করার মাধ্যমে এর সঙ্গে মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে। এভাবে তারা যৌন অনৈতিকতায় জড়িত হওয়া এড়াতে পারবে বলে আশা করে। কিন্তু, খুব শীঘ্রই কেউ কেউ সেই সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনা করেছে। কেন? একবার বিয়ে হওয়ার নতুনত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর, তারা বুঝতে পেরেছে যে, রোজকার বিষয়গুলোতে তাদের এবং তাদের সঙ্গীদের মধ্যে খুব কমই মিল আছে। স্বাভাবিকভাবেই, এই দম্পতিরা তখন গুরুতর এক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।

৫. কী দম্পতিদের তাদের বিয়ের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করবে? (এ ছাড়া, পাদটীকা দেখুন।)

এমন কারো সঙ্গে—এমনকি একজন সহখ্রিস্টান হলেও—বিয়ে হওয়া নিশ্চিতভাবেই কঠিন হতে পারে, যদি আপনি যেমনটা আশা করেছিলেন, তার চেয়ে তিনি একেবারে ভিন্ন হন। (১ করি. ৭:২৮) তবে, পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, প্রকৃত খ্রিস্টানরা জানে যে, অশাস্ত্রীয় বিবাহবিচ্ছেদ অসুখী বিয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্যাগুলোর কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়। তাই, যারা তাদের বিয়ের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে চায় বলে তাদের বিয়েকে টিকিয়ে রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে, তারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কাছ থেকে সম্মান ও প্রেমময় সাহায্য পাওয়ার যোগ্য। *

৬. বিয়ের প্রত্যাশাকে খ্রিস্টান যুবক-যুবতীদের কীভাবে দেখা উচিত?

তুমি কি একজন যুবক বা যুবতী এবং এখনও অবিবাহিত? যদি তা-ই হয়, তাহলে বিয়ের প্রত্যাশা সম্বন্ধে তোমার কীভাবে বিবেচনা করা উচিত? বিপরীত লিঙ্গের একজন খ্রিস্টানের সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্ক শুরু করার আগে যতদিন পর্যন্ত না তুমি দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছ, ততদিন পর্যন্ত যদি অপেক্ষা করো, তাহলে তুমি অনেক দুঃখ এড়াতে পারবে। অবশ্য, বিয়ের জন্য শাস্ত্র কোনো নির্দিষ্ট বয়স সম্বন্ধে বলে না। * কিন্তু, বাইবেল দেখায় যে সেই পর্যন্ত তোমার অপেক্ষা করা উচিত, যতক্ষণ না তুমি জীবনের সেই সময় পার করো, যখন যৌন অনুভূতি অনেক প্রবল থাকে। (১ করি. ৭:৩৬) কেন? কারণ প্রবল যৌন আকাঙ্ক্ষা উত্তম বিচারবুদ্ধিকে বিকৃত করে দিতে পারে আর এর ফলে তুমি মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পরিচালিত হতে পারো, যা পরবর্তী সময়ে দুঃখ নিয়ে আসতে পারে। মনে রাখবে যে, বিয়ে সম্বন্ধে বাইবেলে দেওয়া যিহোবার বিজ্ঞ পরামর্শ তোমার উপকার ও সুখের জন্য দেওয়া হয়েছে।—পড়ুন, যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.

বাবামা হওয়াকে দায়িত্বের সঙ্গে দেখুন

৭. কিছু অল্পবয়স্ক দম্পতি কোন অভিজ্ঞতা লাভ করে আর কেন তা বিয়েকে ভারগ্রস্ত করতে পারে?

কিছু দম্পতি, যারা অল্প বয়সে বিয়ে করে, তারা দেখতে পায় যে অনেক কম বয়সে তারা বাবামা হয়ে গিয়েছে। একটা বাচ্চা, যার প্রতি দিনের ২৪ ঘন্টাই মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, তার জন্মানোর আগে, তাদের আসলে পরস্পরকে সঠিকভাবে জানার সময় হয়ে ওঠেনি। যখন নবজাত শিশু স্বাভাবিকভাবেই মায়ের মনোযোগের প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে, তখন অল্পবয়সি স্বামী হয়তো ঈর্ষান্বিত বোধ করতে পারে। অধিকন্তু, নিদ্রাহীন রাত মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা দম্পতির সম্পর্ককে ভারগ্রস্ত করে। তারা হঠাৎ করেই বুঝতে পারে যে, তারা তাদের অনেকটা স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে। এখন তারা আগের মতো আর স্বাধীনভাবে বিভিন্ন স্থানে যেতে ও বিভিন্ন কাজ করতে পারে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে তাদের কীভাবে দেখা উচিত?

৮. বাবামা হওয়াকে কীভাবে দেখা উচিত এবং কেন?

ঠিক যেমন বিয়েকে এক দায়িত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত, তেমনই বাবামা হওয়াকে এক ঈশ্বরদত্ত দায়িত্ব ও বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। শিশুর আগমনের কারণে এক খ্রিস্টান দম্পতির জীবনে যে-রদবদলেরই প্রয়োজন হোক না কেন, সেগুলোর সঙ্গে দায়িত্বপূর্ণ উপায়ে মোকাবিলা করতে তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। যেহেতু যিহোবা মানুষকে সন্তান ধারণের ক্ষমতা দিয়েছেন, তাই বাবামাদের নবজাত শিশুকে “সদাপ্রভুদত্ত অধিকার” হিসেবে দেখতে হবে। (গীত. ১২৭:৩) একজন খ্রিস্টান বাবা ও মা ‘প্রভুতে পিতামাতা’ হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রচেষ্টা করবে।—ইফি. ৬:১.

৯. (ক) একটা সন্তানকে মানুষ করে তোলার সঙ্গে কী জড়িত? (খ) স্ত্রীকে আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় রাখার জন্য সাহায্য করতে স্বামী কী করতে পারেন?

একটা সন্তান মানুষ করে তোলার সঙ্গে বেশ কিছু বছরের আত্মত্যাগ জড়িত। এর জন্য প্রচুর সময় ও শক্তির প্রয়োজন। একজন খ্রিস্টান স্বামীকে বুঝতে হবে যে, একটা শিশু জন্মানোর পর কয়েক বছরের জন্য তার স্ত্রী সম্ভবত সভার সময় বিক্ষিপ্ত হতে পারেন এবং বাইবেল অধ্যয়ন ও ধ্যানের জন্য তিনি হয়তো খুব কম সময়ই পেতে পারেন। এটা তার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের ওপর দুর্বল প্রভাব ফেলতে পারে। বাবামা হওয়াকে দায়িত্বের সঙ্গে দেখতে হলে, সন্তানকে দেখাশোনা করার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য স্বামী তার যথাসাধ্য সমস্তকিছু করবেন। তার স্ত্রী সভাতে হয়তো যা শুনতে পাননি, তা তিনি পরবর্তী সময়ে ঘরে তার সঙ্গে কার্যক্রমের কিছু বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করার দ্বারা তা পূরণ করার চেষ্টা করতে পারেন। এ ছাড়া, স্ত্রীকে রাজ্যের প্রচার কাজে অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ করার জন্য সুযোগ দিয়ে তিনি হয়তো বাচ্চার যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন।—পড়ুন, ফিলিপীয় ২:৩, ৪.

১০, ১১. (ক) কীভাবে সন্তানদেরকে যিহোবার ‘চেতনা প্রদানে’ মানুষ করে তোলা যায়? (খ) কেন অনেক খ্রিস্টান বাবামা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য?

১০ বাবামা হওয়াকে দায়িত্বের সঙ্গে দেখার জন্য কেবল সন্তানের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবা জোগানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। বিশেষ করে শেষকালের এই বিপদজনক সময়ে, অল্পবয়স্কদের একেবারে ছোটোবেলা থেকেই সেই নৈতিক নীতিগুলো সম্বন্ধে শিখতে হবে, যেগুলোর দ্বারা তারা জীবনযাপন করবে। সন্তানদের “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে” মানুষ করে তোলা উচিত। (ইফি. ৬:৪) ‘চেতনা প্রদানের’ অন্তর্ভুক্ত যিহোবার চিন্তাভাবনা একটা সন্তানের মনে একেবারে ছোটো থাকতেই শুরু করে কিশোর বয়সের কঠিন বছরগুলোতে গেঁথে দেওয়া।—২ তীম. ৩:১৪, ১৫.

১১ যিশু যখন তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন যে, তাদের ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করা’ উচিত, তখন তিনি নিঃসন্দেহে এটা বুঝিয়েছিলেন যে, বাবামাদের তাদের সন্তানদেরকে শিষ্য হয়ে উঠতে সাহায্য করা উচিত। (মথি ২৮:১৯, ২০) এই জগৎ অল্পবয়সিদের ওপর চাপ ফেলে বলে এটা এক কঠিন বিষয়। তাই, যে-বাবামারা তাদের সন্তানদের উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান হওয়ার জন্য মানুষ করে তোলায় সফল হয়, তারা প্রকৃতই মণ্ডলীর সকলের কাছ থেকে উষ্ণ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তারা দায়িত্ববান বাবামা হিসেবে তাদের বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততার দ্বারা জগতের চাপকে “জয়” করেছে।—১ যোহন ৫:৪.

এক মহৎ উদ্দেশ্যর জন্য অবিবাহিত অথবা নিঃসন্তান থাকা

১২. কেন কোনো কোনো খ্রিস্টান কিছু সময়ের জন্য অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়?

১২ যেহেতু “সময় সঙ্কুচিত” এবং “এই সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে,” তাই ঈশ্বরের বাক্য আমাদের অবিবাহিত থাকার উপকারগুলো বিবেচনা করতে জোরালো পরামর্শ দেয়। (১ করি. ৭:২৯-৩১) ফলে, কিছু খ্রিস্টান জীবনভর অবিবাহিত থাকা বেছে নেয় অথবা বিয়ে করার আগে কিছু বছর অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এটা প্রশংসাযোগ্য যে, তারা অবিবাহিত থাকার ফলে যে-স্বাধীনতা লাভ করে, সেটাকে স্বার্থপর আগ্রহগুলো অনুধাবন করার জন্য ব্যবহার করে না। অনেকে “একাগ্রমনে” যিহোবাকে সেবা করার জন্য অবিবাহিত থাকে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:৩২-৩৫.) কিছু অবিবাহিত খ্রিস্টান অগ্রগামী অথবা বেথেলকর্মী হিসেবে সেবা করে। কেউ কেউ মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল-এ যোগদান করার জন্য যোগ্য হয়ে যিহোবার সংগঠনে তাদের কার্যকারিতাকে বাড়ানোর প্রচেষ্টা করে। বস্তুতপক্ষে, যারা অবিবাহিত থাকাকালীন কিছু সময়ের জন্য পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে কাজ করে এবং পরে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়, তারা প্রায়ই এইরকম বোধ করে যে, তাদের বিয়ে সেই মূল্যবান শিক্ষাগুলো থেকে এখনও উপকার লাভ করছে, যা তারা তাদের অল্পবয়সে শিখেছিল।

১৩. কেন কিছু খ্রিস্টান দম্পতি সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়?

১৩ পৃথিবীর কিছু অংশে পারিবারিক জীবনে আরেক ধরনের পরিবর্তন দেখা গিয়েছে—অসংখ্য দম্পতি সন্তানহীন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেউ কেউ অর্থনৈতিক কারণগুলোর জন্য তা করে থাকে; অন্যেরা লাভজনক এক কেরিয়ারের পিছনে ছোটার জন্য মুক্ত থাকতে চায় বলে তা করে থাকে। খ্রিস্টানদের মধ্যেও এমন দম্পতিরা রয়েছে, যারা সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকে। কিন্তু, বেশির ভাগ সময়ই তারা যিহোবাকে সেবা করার জন্য মুক্ত থাকতে চায় বলে তা করে থাকে। এর অর্থ এই নয় যে, এই দম্পতিরা স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন উপভোগ করে না। তারা উপভোগ করে থাকে। তা সত্ত্বেও, তারা রাজ্যের বিষয়গুলোকে বিয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু বিশেষ সুযোগের ঊর্দ্ধে রাখতে ইচ্ছুক। (১ করি. ৭:৩-৫) এই ধরনের কিছু দম্পতি সীমা ও জেলার কাজে অথবা বেথেলে যিহোবা ও তাদের ভাইদের সেবা করে থাকে। অন্যেরা অগ্রগামী অথবা মিশনারি হিসেবে কাজ করে। যিহোবা তাদের কাজ এবং তাঁর নামের প্রতি তাদের প্রদর্শিত প্রেম ভুলে যাবেন না।—ইব্রীয় ৬:১০.

“দৈহিক ক্লেশ”

১৪, ১৫. খ্রিস্টান বাবামারা কোন “দৈহিক ক্লেশ” সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে?

১৪ প্রেরিত পৌল বিবাহিত দম্পতিকে বলেছিলেন যে, তাদের “দৈহিক ক্লেশ” ঘটবে। (১ করি. ৭:২৮) এর সঙ্গে হয়তো দম্পতি, তাদের সন্তান ও তাদের বৃদ্ধ বাবামার স্বাস্থ্যগত সমস্যা জড়িত থাকতে পারে। এ ছাড়া, এর সঙ্গে হয়তো তাদের সন্তান মানুষ করে তোলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন সমস্যা ও মর্মবেদনা জড়িত থাকতে পারে। এই প্রবন্ধের শুরুতেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, ‘শেষকাল’ এমন ‘বিষম সময়’ নিয়ে আসবে, ‘যেটার সঙ্গে মোকাবিলা করা কঠিন।’ মোকাবিলা করা কঠিন এমন বিষয়গুলোর মধ্যে সন্তানরাও থাকবে, যারা “পিতামাতার অবাধ্য” হবে।—২ তীম. ৩:১ NW, ২-৩.

১৫ সন্তান মানুষ করে তোলা খ্রিস্টান বাবামাদের জন্য এক গুরুতর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আমরা বর্তমান ‘বিষম সময়ের’ প্রতিকূল প্রভাবগুলো থেকে মুক্ত নই। তাই, খ্রিস্টান বাবামাদের সেই মারাত্মক প্রভাবের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করে যেতে হবে, যা “এই জগতের যুগ” তাদের সন্তানদের ওপর ফেলতে পারে। (ইফি. ২:২, ৩) আর সেই লড়াইয়ে সবসময় জয়ী হওয়া যায় না! খ্রিস্টান পরিবারের কোনো ছেলে অথবা মেয়ে যদি যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটা সত্যিই সেই বাবামাদের জন্য “ক্লেশ,” যারা তাকে ঈশ্বরের সত্যে মানুষ করে তোলার প্রচেষ্টা করেছে।—হিতো. ১৭:২৫.

‘তৎকালে মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে’

১৬. যিশু কোন “ক্লেশ” সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন?

১৬ কিন্তু, আরও অনেক বেশি মাত্রার আরেকটা মহাক্লেশ, বিয়ে ও সন্তান মানুষ করে তোলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো ‘ক্লেশকে’ ছাড়িয়ে যাবে। তাঁর আগমন বা উপস্থিতি ও যুগান্ত সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণীতে যিশু বলেছিলেন: “তৎকালে এরূপ ‘মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না’।” (মথি ২৪:৩, ২১) পরবর্তী সময়ে যিশু প্রকাশ করেছিলেন যে, এক বিস্তর লোক এই “মহাক্লেশ” থেকে রক্ষা পাবে। তবে, শয়তানের বিধিব্যবস্থা ক্রমাগত যিহোবার শান্তিপূর্ণ সাক্ষিদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ করার দ্বারা লড়াই করে যাবে। নিঃসন্দেহে, এটা আমাদের—প্রাপ্তবয়স্ক ও একইসঙ্গে সন্তান—সকলের জন্য এক কঠিন সময় হবে।

১৭. (ক) কেন আমরা আস্থা সহকারে ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে পারি? (খ) বিয়ে ও বাবামা হওয়া সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর কোন বিষয়ের প্রভাব ফেলা উচিত?

১৭ তা সত্ত্বেও, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমাদের অযথা ভয় পাওয়া উচিত নয়। যে-বাবামারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত তারা তাদের অল্পবয়স্ক সন্তানসহ সুরক্ষা পাওয়ার আশা রাখতে পারে। (পড়ুন, যিশাইয় ২৬:২০, ২১; সফ. ২:২, ৩; ১ করি. ৭:১৪) তবে, আমরা যে বিষম সময়ে বাস করছি সেই বিষয়ে সচেতনতা যেন এখন এই শেষকালে বিয়ে ও বাবামা হওয়া সম্বন্ধে আমরা যেভাবে চিন্তা করি, তার ওপর প্রভাব ফেলে। (২ পিতর ৩:১০-১৩) এভাবে আমাদের জীবন—তা আমরা অবিবাহিত অথবা বিবাহিত, সন্তানসহ অথবা সন্তানহীন, যা-ই হোক না কেন—যিহোবা ও খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর জন্য সম্মান ও প্রশংসা নিয়ে আসবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার দিনের কথা মনে রেখে জীবনযাপন করুন (ইংরেজি) বইয়ের ১২৫ পৃষ্ঠায় “তিনি বিবাহবিচ্ছেদকে ঘৃণা করেন,” উপশিরোনামের বিষয়বস্তু দেখুন।

^ যারা বৈবাহিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করছে, তারা ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকা ও ২০০১ সালের এপ্রিল - জুন সচেতন থাক! পত্রিকায় প্রাপ্ত বিবাহ সম্বন্ধীয় প্রবন্ধগুলো পুনরালোচনা করার মাধ্যমে শক্তিশালী হবে।

^ যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে (ইংরেজি) বইয়ের ৩০ অধ্যায়ের “আমি কি বিয়ের জন্য প্রস্তুত?” প্রবন্ধটি দেখো।

পুনরালোচনা

• কেন অল্পবয়সি খ্রিস্টানদের তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করা উচিত নয়?

• সন্তান মানুষ করে তোলার সঙ্গে কী জড়িত?

• কেন অনেক খ্রিস্টান অবিবাহিত থাকে অথবা বিয়ে করে থাকলে নিঃসন্তান থাকে?

• খ্রিস্টান বাবামারা হয়তো কোন “ক্লেশ” সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেন অল্পবয়সি খ্রিস্টানদের বিয়ে করার জন্য অপেক্ষা করা বিজ্ঞতার কাজ?

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন স্বামী তার স্ত্রীকে আধ্যাত্মিক কার্যক্রমগুলোতে অর্থপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে সাহায্য করার জন্য অনেক কিছু করতে পারেন

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেন কিছু খ্রিস্টান দম্পতি সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়?