সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সমস্ত বিষয়ে ঈশ্বরের নির্দেশনা খুঁজুন

সমস্ত বিষয়ে ঈশ্বরের নির্দেশনা খুঁজুন

সমস্ত বিষয়ে ঈশ্বরের নির্দেশনা খুঁজুন

“এই ঈশ্বর অনন্তকালতরে আমাদের ঈশ্বর; তিনি চিরকাল আমাদের পথদর্শক হইবেন।”—গীত. ৪৮:১৪.

১, ২. কেন আমাদের নিজের প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে, যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত আর কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

 আমরা যখন অসার বা ক্ষতিকর বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমাদের নিজেদেরকে প্রতারিত করা সহজ। (হিতো. ১২:১১) যদি আমরা সত্যি সত্যি এমন কিছু করতে চাই, যা একজন খ্রিস্টানের জন্য উপযুক্ত নয়, তাহলে আমাদের হৃদয় প্রায়ই তা করার জন্য প্রতারণাপূর্ণ যুক্তি দিয়ে পূর্ণ হয়। (যির. ১৭:৫, ৯) তাই, গীতরচক প্রজ্ঞা প্রদর্শন করেছিলেন, যখন তিনি যিহোবার কাছে এই প্রার্থনা করেছিলেন: “তোমার দীপ্তি ও তোমার সত্য প্রেরণ কর; তাহারাই আমার পথপ্রদর্শক হউক।” (গীত. ৪৩:৩) তিনি যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন, তার নিজ সীমিত প্রজ্ঞার ওপর নয় আর তিনি নির্দেশনার জন্য এর চেয়ে ভাল আর কোনো উৎসের ওপর নির্ভর করতে পারতেন না। গীতরচকের মতো, আমাদেরও নির্দেশনার জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে হবে।

কিন্তু, কেন আমাদের অন্য সমস্তকিছুর ঊর্ধ্বে যিহোবার নির্দেশনার ওপর নির্ভর করা উচিত? কখন আমাদের তা খোঁজা উচিত? এর থেকে উপকার লাভ করার জন্য আমাদের কোন মনোভাব গড়ে তোলা উচিত আর আজকে যিহোবা আমাদের কীভাবে নির্দেশনা দেন? এই প্রবন্ধে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।

কেন যিহোবার নির্দেশনার ওপর নির্ভর করব?

৩-৫. কোন কারণগুলোর জন্য যিহোবার নির্দেশনার ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে?

যিহোবা হলেন আমাদের স্বর্গীয় পিতা। (১ করি. ৮:৬) আমাদের প্রত্যেকের সম্বন্ধে তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান রয়েছে আর আমাদের প্রত্যেকের হৃদয় তিনি পড়তে পারেন। (১ শমূ. ১৬:৭; হিতো. ২১:২) রাজা দায়ূদ ঈশ্বরকে বলেছিলেন: “তুমিই আমার উপবেশন ও আমার উত্থান জানিতেছ, তুমি দূর হইতে আমার সঙ্কল্প বুঝিতেছ। যখন আমার জিহ্বাতে একটী কথাও নাই, দেখ, সদাপ্রভু, তুমি উহা সমস্তই জানিতেছ।” (গীত. ১৩৯:২, ৪) যেহেতু যিহোবা আমাদের সকলকে খুব ভালভাবে জানেন, তাহলে আমরা কীভাবেই বা সন্দেহ করতে পারি যে, আমাদের জন্য কোনটা সর্বোত্তম হবে, তা তিনি জানেন? এ ছাড়া, যিহোবা হলেন সর্বপ্রজ্ঞাবান। তিনি সমস্তকিছু দেখতে পান, যেকোনো মানুষের চেয়ে আরও গভীরে দেখেন আর আদি অবধি শেষের বিষয় জানেন। (যিশা. ৪৬:৯-১১; রোমীয় ১১:৩৩) তিনিই হলেন ‘একমাত্র প্রজ্ঞাবান্‌ ঈশ্বর।’—রোমীয় ১৬:২৭.

অধিকন্তু, যিহোবা আমাদের ভালবাসেন এবং সবসময় আমাদের জন্য যা সর্বোত্তম, তা-ই চান। (যোহন ৩:১৬; ১ যোহন ৪:৮) একজন প্রেমময় ঈশ্বর হিসেবে, তিনি আমাদের প্রতি উদার। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে, জ্যোতির্গণের সেই পিতা হইতে নামিয়া আইসে।” (যাকোব ১:১৭) যারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের দ্বারা পরিচালিত হতে সুযোগ দেয়, তারা তাঁর উদারতা থেকে প্রচুররূপে উপকৃত হয়।

শেষে বলা যায়, যিহোবা হলেন সর্বশক্তিমান। এই বিষয়ে গীতরচক বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি পরাৎপরের অন্তরালে থাকে, সে সর্ব্বশক্তিমানের ছায়াতে বসতি করে। আমি সদাপ্রভুর বিষয়ে বলিব, ‘তিনি আমার আশ্রয়, আমার দুর্গ, আমার ঈশ্বর, আমি তাঁহাতে নির্ভর করিব’।” (গীত. ৯১:১, ২) আমরা যখন যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করি, তখন আমরা এমন একজন ঈশ্বরের কাছে আশ্রয় খুঁজছি, যিনি ব্যর্থ হতে পারেন না। আমরা এমনকি বিরোধিতার মুখোমুখি হলেও যিহোবা আমাদের সমর্থন করেন। তিনি আমাদের হতাশ করবেন না। (গীত. ৭১:৪, ৫; পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:১৯-২৬.) হ্যাঁ, যিহোবা জানেন যে, আমাদের জন্য কোনটা সর্বোত্তম, আমাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয়টাই তিনি চান এবং আমাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় জোগানোর ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। তাঁর নির্দেশনাকে তুচ্ছ করা আমাদের জন্য কত মূর্খতাই না হবে! কিন্তু, কখন আমাদের তাঁর নির্দেশনার প্রয়োজন?

কখন আমাদের নির্দেশনার প্রয়োজন?

৬, ৭. কখন আমাদের যিহোবার নির্দেশনার প্রয়োজন?

সত্যিই, আমাদের শৈশব থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সারাজীবন ঈশ্বরের নির্দেশনা প্রয়োজন। গীতরচক বলেছিলেন: “এই ঈশ্বর অনন্তকালতরে আমাদের ঈশ্বর; তিনি চিরকাল আমাদের পথদর্শক হইবেন।” (গীত. ৪৮:১৪) গীতরচকের মতো, বিজ্ঞ খ্রিস্টানরা কখনোই নির্দেশনার জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা বন্ধ করে না।

অবশ্য, এমন সময়ও আসে, যখন আমরা বিশেষভাবে সাহায্যের প্রয়োজন অনুভব করি। মাঝে মাঝে আমরা “সঙ্কটাপন্ন” হই, সম্ভবত তাড়না, গুরুতর অসুস্থতার মুখোমুখি হই বা হঠাৎ করে আমাদের চাকরি চলে যেতে পারে। (গীত. ৬৯:১৬, ১৭) এই সময়গুলোতে, যিহোবার প্রতি ফেরা সান্ত্বনাদায়ক আর আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী থাকি যে, তিনি আমাদের সহ্য করতে এবং বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে নির্দেশনা দেবেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০২:১৭.) কিন্তু, অন্যান্য পরিস্থিতিতেও আমাদের তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, যখন আমরা আমাদের প্রতিবেশীর কাছে রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে কথা বলি, তখন আমাদের সাক্ষ্যদান যদি কার্যকারী হতে হয়, তাহলে আমাদের যিহোবার নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে। আর যখন আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়—হতে পারে আমোদপ্রমোদ, পোশাক-আশাক ও সাজগোজ, মেলামেশা, চাকরি, শিক্ষা বা অন্য যেকোনো বিষয়ে—সেই সময় আমরা একমাত্র তখনই বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করি, যখন যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করি। আসলে, আমাদের জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে।

ঈশ্বরের নির্দেশনা না খোঁজার বিপদগুলো

৮. হবার নিষিদ্ধ ফল খাওয়া কোন বিষয়গুলোকে ইঙ্গিত করেছিল?

কিন্তু মনে রাখবেন যে, যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করার ব্যাপারে আমাদের ইচ্ছুক হতে হবে। আমরা না চাইলে ঈশ্বর আমাদের তা করতে জোর করবেন না। প্রথম মানুষ, যে কিনা যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ না করা বেছে নিয়েছিল, সে ছিল হবা আর তার উদাহরণ দেখায় যে, একটা ভুল সিদ্ধান্ত কতটা গুরুতর হতে পারে। এ ছাড়া, তার কাজ কোন বিষয়গুলোকে ইঙ্গিত করেছিল, সেটাও ভেবে দেখুন। হবা নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিল কারণ সে “ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত” হতে চেয়েছিল। (আদি. ৩:৫) তা করে, সে নিজেকে ঈশ্বরের স্থানে রেখেছিল, ভাল-মন্দ বিষয়ে যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করার পরিবর্তে, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছিল। এভাবে, সে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। সে নিজেই তার প্রভু হতে চেয়েছিল। তার স্বামী আদম সেই একই বিদ্রোহের পথ অনুধাবন করেছিল।—রোমীয় ৫:১২.

৯. আমরা যদি যিহোবার নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করি, তাহলে আমরা আসলে কী করছি আর তা করা কেন সবচেয়ে মূর্খতার কাজ?

আজকে, আমরা যদি যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ না করি, তাহলে আমরাও একইভাবে তাঁর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করতে ব্যর্থ হচ্ছি। উদাহরণস্বরূপ, এমন একজন ব্যক্তির কথা চিন্তা করুন, যিনি পর্নোগ্রাফি দেখার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। তিনি যদি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে তিনি এই বিষয়ে যিহোবার নির্দেশাবলি সম্বন্ধে জানেন। যেখানে অশুচি বিষয়গুলো এমনকি মুখে আনাও উচিত নয়, সেখানে কামলালসাপূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকার তো প্রশ্নই আসে না। (ইফি. ৫:৩) যিহোবার নির্দেশাবলি প্রত্যাখ্যান করে, এই ধরনের একজন ব্যক্তি যিহোবার সার্বভৌমত্বকে তুচ্ছ করছেন, তাঁর মস্তকপদকে প্রত্যাখ্যান করছেন। (১ করি. ১১:৩) সেটা হচ্ছে সবচেয়ে মূর্খতার কাজ, কারণ যিরমিয় বলেছিলেন, “মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।”—যির. ১০:২৩.

১০. কেন আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে দায়িত্বের সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত?

১০ কেউ কেউ হয়তো এইরকম মনে করে যিরমিয়ের কথাগুলো সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলতে পারে যে, যেহেতু যিহোবা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন, তাই আমরা সেটাকে যেভাবে ব্যবহার করি, সেই বিষয়ে যিহোবার সমালোচনা করা উচিত নয়। কিন্তু ভুলে যাবেন না যে, স্বাধীন ইচ্ছা হচ্ছে এক দায়িত্ব ও সেইসঙ্গে এক উপহার। আমরা যা বলা ও করা বেছে নিই, সেই বিষয়ে ঈশ্বরের কাছে আমাদের নিকাশ দিতে হবে। (রোমীয় ১৪:১০) যিশু বলেছিলেন: “হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে, মুখ তাহাই বলে।” তিনি আরও বলেছিলেন: “অন্তঃকরণ হইতে কুচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, বেশ্যাগমন, চৌর্য্য, মিথ্যাসাক্ষ্য, নিন্দা আইসে।” (মথি ১২:৩৪; ১৫:১৯) তাই, আমাদের কথা ও কাজগুলো আমাদের হৃদয়ের অবস্থাকে প্রকাশ করে। সেগুলো দেখায় যে, আমরা আসলে কেমন। সেইজন্য একজন বিজ্ঞ খ্রিস্টান সমস্ত বিষয়ে যিহোবার নির্দেশনা খোঁজেন। এর মাধ্যমে যিহোবা দেখতে পান যে, সেই ব্যক্তি ‘সরলচিত্ত’ এবং তিনি তার প্রতি ‘মঙ্গল করিবেন।’—গীত. ১২৫:৪.

১১. ইস্রায়েলের ইতিহাস থেকে আমরা কী শিখি?

১১ ইস্রায়েলের ইতিহাস মনে করে দেখুন। সেই জাতি যখন ভাল বিষয়গুলো বাছাই করেছিল, যিহোবার আদেশের বাধ্য হয়েছিল, তখন যিহোবা তাদেরকে রক্ষা করেছিলেন। (যিহো. ২৪:১৫, ২১, ৩১) কিন্তু, প্রায় সময়ই তারা তাদের স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার করেছিল। যিরমিয়ের দিনে, যিহোবা তাদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তাহারা শুনিল না, কর্ণপাতও করিল না, বরং আপনাদের মন্ত্রণায়, আপনাদের হৃদয়ের কঠিনতায় আচরণ করিল, তাহারা অগ্রসর না হইয়া পিছে হটিয়া গেল।” (যির. ৭:২৪-২৬) কতই না দুঃখজনক! আমরা যেন কখনো হৃদয়ের কঠিনতা বা একগুঁয়েমির কারণে অথবা আমাদের কামনা-বাসনাকে চরিতার্থ করার কারণে যিহোবার নির্দেশনাকে প্রত্যাখ্যান না করি এবং আমাদের নিজেদের মন্ত্রণায় বা পরামর্শে না চলি ও এর ফলে “অগ্রসর না হইয়া পিছে হটিয়া” না যাই!

ঈশ্বরের পরামর্শ অনুসরণ করার জন্য কী করতে হবে?

১২, ১৩. (ক) কোন গুণ আমাদেরকে যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করতে চাইতে পরিচালিত করে? (খ) কেন বিশ্বাস অপরিহার্য?

১২ যিহোবার প্রতি আমাদের ভালবাসা আমাদেরকে তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করতে চাইতে পরিচালিত করে। (১ যোহন ৫:৩) কিন্তু, পৌল এমন অন্য কিছু করার প্রয়োজনের প্রতি নির্দেশ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “আমরা বিশ্বাস দ্বারা চলি, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়।” (২ করি. ৫:৬, ৭) কেন বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ? যিহোবা আমাদের “ধর্ম্মপথে” পরিচালিত করেন, কিন্তু সেই পথগুলো এই জগতে কোনো ধনসম্পদ বা উচ্চ পদমর্যাদা এনে দেয় না। (গীত. ২৩:৩) সেই কারণে, আমাদের বিশ্বাসের চোখ অতুলনীয় আধ্যাত্মিক পুরস্কারগুলোর প্রতি নিবিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যা যিহোবাকে সেবা করার মাধ্যমে আসে। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৪:১৭, ১৮.) আর বিশ্বাস আমাদেরকে অল্পকিছু বস্তুগত বিষয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে সাহায্য করে।—১ তীম. ৬:৮.

১৩ যিশু ইঙ্গিত করেছিলেন যে, সত্য উপাসনার সঙ্গে আত্মত্যাগ জড়িত, যেটার জন্যও বিশ্বাসের প্রয়োজন। (লূক ৯:২৩, ২৪) কিছু বিশ্বস্ত উপাসক বড় বড় ত্যাগস্বীকার করেছে, দরিদ্রতা, নিপীড়ন, ভেদাভেদ আর এমনকি চরম তাড়নাও সহ্য করেছে। (২ করি. ১১:২৩-২৭; প্রকা. ৩:৮-১০) একমাত্র দৃঢ় বিশ্বাসই তাদেরকে আনন্দের সঙ্গে তা করতে সমর্থ করেছে। (যাকোব ১:২, ৩) দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের পুরোপুরি দৃঢ়প্রত্যয়ী করে যে, যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করা সবসময়ই সর্বোত্তম। এটা সবসময়ই আমাদের স্থায়ী মঙ্গলের জন্য। আমরা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত যে, যারা অনুগত থেকে সহ্য করে তাদের পুরস্কার, যেকোনো সাময়িক কষ্টের চেয়ে অনেক গুণ বেশি।—ইব্রীয় ১১:৬.

১৪. কেন হাগারকে নম্রতা প্রদর্শন করতে হয়েছিল?

১৪ এ ছাড়া, যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে নম্রতার ভূমিকাও বিবেচনা করুন। সারার দাসী হাগারের উদাহরণ এটা প্রদর্শন করে। সারা যখন নিঃসন্তান অবস্থায় ছিলেন, তখন তিনি হাগারকে অব্রাহামের কাছে দিয়েছিলেন এবং হাগারের গর্ভে অব্রাহামের সন্তান জন্মেছিল। এরপর, হাগার তার বন্ধ্যা কর্ত্রীর প্রতি উদ্ধত হয়ে পড়েছিলেন। ফলে, সারা “হাগারকে দুঃখ দিলেন” এবং হাগার তার কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। যিহোবার একজন দূত হাগারের সঙ্গে দেখা করে তাকে বলেছিলেন: “তুমি আপন কর্ত্রীর নিকটে ফিরিয়া গিয়া নম্র ভাবে তাহার হস্তের বশীভূতা হও।” (আদি. ১৬:২, ৬, ৮, ৯) সম্ভবত হাগার অন্য কোনো নির্দেশনা চাইতে পারতেন। দূতের কথা অনুযায়ী কাজ করার জন্য তাকে তার উদ্ধত মনোভাব পরিত্যাগ করতে হতো। তা সত্ত্বেও, হাগার নম্রভাবে দূতের কথা অনুসারে কাজ করেছিলেন আর তার ছেলে ইশ্মায়েল, তার বাবার শিবিরের নিরাপত্তার মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

১৫. কিছু পরিস্থিতির বিষয় বর্ণনা করুন, যেখানে যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য আজকে আমাদের দিক থেকে নম্রতার প্রয়োজন হতে পারে।

১৫ যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করার অর্থ হতে পারে যে, আমাদেরও নম্র হতে হবে। কাউকে কাউকে হয়তো এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মেনে নিতে হতে পারে যে, তারা যে-ধরনের আমোদপ্রমোদ পছন্দ করে, তা যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করে। একজন খ্রিস্টান হয়তো কাউকে দুঃখ দিয়েছেন আর এরজন্য হয়তো তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। কিংবা তিনি হয়তো একটা ভুল করেছেন আর তাকে সেটা স্বীকার করতে হবে। কিন্তু, কেউ যদি কোনো গুরুতর পাপ করেন, তাহলে কী? তার নিজেকে নম্র করতে হবে এবং প্রাচীনদের কাছে সেই পাপ স্বীকার করতে হবে। একজন ব্যক্তিকে হয়তো এমনকি সমাজচ্যুত করা হতে পারে। মণ্ডলীতে আবার ফিরে আসার জন্য তাকে অবশ্যই নম্রভাবে অনুতপ্ত ও পরিবর্তিত হতে হবে। এইরকম ও অনুরূপ পরিস্থিতিগুলোতে হিতোপদেশ ২৯:২৩ পদের কথাগুলো সান্ত্বনাদায়ক: “মনুষ্যের অহংকার তাহাকে নীচে নামাইবে, কিন্তু নম্রচিত্ত ব্যক্তি সম্মান পাইবে।”

যিহোবা কীভাবে আমাদের নির্দেশনা দেন?

১৬, ১৭. কীভাবে আমরা ঐশিক নির্দেশনার এক উৎস হিসেবে বাইবেল থেকে পুরোপুরি উপকার লাভ করতে পারি?

১৬ ঐশিক নির্দেশনার সর্বোচ্চ উৎস হচ্ছে, ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেল। (পড়ুন, ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.) সেই বাক্য থেকে সর্বাধিক উপকারিতা লাভ করতে আমরা শাস্ত্র থেকে সাহায্যকারী বাক্য খোঁজার জন্য কোনো কঠিন পরিস্থিতি উত্থাপিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে না থেকে বিজ্ঞ হই। এর পরিবর্তে, আমরা বাইবেল পাঠকে রোজকার এক অভ্যাসে পরিণত করব। (গীত. ১:১-৩) এভাবে, অনুপ্রাণিত বাক্য আমাদের পরিচিত হয়ে ওঠে। ঈশ্বরের চিন্তাধারা আমাদের চিন্তাধারা হয়ে ওঠে আর আমরা এমনকি অপ্রত্যাশিত সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকি।

১৭ অধিকন্তু, আমরা শাস্ত্রে যা কিছু পড়ি, তা নিয়ে ধ্যান করা ও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন বাইবেলের পদগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমরা বিবেচনা করি যে, কীভাবে সেগুলো নির্দিষ্ট পরিস্থিতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। (১ তীম. ৪:১৫) যখন আমরা গুরুতর সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, তখন আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, আমাদের যে-নির্দেশনার প্রয়োজন তা খুঁজে পেতে সাহায্য চাই। যিহোবার আত্মা আমাদের কিছু সাহায্যকারী শাস্ত্রীয় নীতি স্মরণ করতে সাহায্য করবে, যা আমরা বাইবেলেই অথবা বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা থেকে পড়েছি।—পড়ুন, গীতসংহিতা ২৫:৪, ৫.

১৮. কোন কোন উপায়ে যিহোবা আমাদেরকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজকে ব্যবহার করেন?

১৮ আমাদের খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজ হচ্ছে যিহোবার নির্দেশনা খোঁজার ক্ষেত্রে আরেকটা মূল্যবান উৎস। সেই ভ্রাতৃসমাজের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” ও এর প্রতিনিধিত্বকারী পরিচালক গোষ্ঠী, যারা ছাপানো বই-পত্রিকার আকারে এবং সভা ও সম্মেলনের কার্যক্রমগুলোর মাধ্যমে ক্রমাগত আধ্যাত্মিক খাদ্য সরবরাহ করে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; তুলনা করুন, প্রেরিত ১৫:৬, ২২-৩১.) অধিকন্তু, খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের মধ্যে পরিপক্ব ব্যক্তি বিশেষরা রয়েছে, বিশেষ করে প্রাচীনরা, যারা ব্যক্তিগত সাহায্য ও শাস্ত্রীয় পরামর্শ প্রদান করার যোগ্য। (যিশা. ৩২:১) খ্রিস্টীয় পরিবারের অল্পবয়সিদের জন্য বাড়তি মূল্যবান উৎস রয়েছে। তাদের বিশ্বাসী বাবামারা হচ্ছে ঈশ্বর নিযুক্ত কর্তৃপক্ষ, যাদের কাছে নির্দেশনা খোঁজার জন্য সবসময় তাদেরকে উৎসাহিত করা হয়।—ইফি. ৬:১-৩.

১৯. ক্রমাগত যিহোবার নির্দেশনা খোঁজার ফলে আমরা কোন আশীর্বাদগুলো উপভোগ করি?

১৯ হ্যাঁ, বিভিন্ন উপায়ে যিহোবা নির্দেশনা প্রদান করেন আর এর থেকে আমাদের পূর্ণ উপকারিতা লাভ করা উচিত। ইস্রায়েল জাতি যখন বিশ্বস্ত ছিল, এমন এক সময়ের কথা বলতে গিয়ে রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “আমাদের পিতৃপুরুষেরা তোমাতেই বিশ্বাস করিতেন; তাঁহারা বিশ্বাস করিতেন, আর তুমি তাঁহাদিগকে উদ্ধার করিতে। তাঁহারা তোমার নিকটে ক্রন্দন করিয়া রক্ষা পাইতেন, তোমাতে বিশ্বাস করিয়া লজ্জিত হইতেন না।” (গীত. ২২:৩-৫) যদি আমরা বিশ্বাস বা নির্ভরতার সঙ্গে যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করি, তাহলে আমরাও ‘লজ্জিত হইব না।’ আমরা আমাদের প্রত্যাশার ব্যাপারে হতাশ হব না। যদি আমরা আমাদের নিজস্ব প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে, ‘আমাদের গতি সদাপ্রভুতে অর্পণ করি,’ তাহলে আমরা এমনকি এখনই প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করব। (গীত. ৩৭:৫) আর যদি আমরা অনুগতভাবে সেই পথে লেগে থাকি, তাহলে সেই আশীর্বাদগুলো হবে অনন্ত। রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন; তিনি আপন সাধুগণকে পরিত্যাগ করেন না; তাহারা চিরকাল রক্ষিত হয় . . . ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীত. ৩৭:২৮, ২৯.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কেন আমরা যিহোবার নির্দেশনার ওপর নির্ভর করি?

• যিহোবার নির্দেশনাকে প্রত্যাখ্যান করা কী ইঙ্গিত করে?

• কিছু পরিস্থিতি কী, যেখানে একজন খ্রিস্টানের নম্রতার প্রয়োজন?

• কীভাবে আজকে যিহোবা আমাদের নির্দেশনা দেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি আপনার জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে যিহোবার ওপর নির্ভর করেন?

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

হবা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করেছিল

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

দূতের নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য হাগারের কোন গুণের প্রয়োজন হয়েছিল?