সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পবয়সেই যিহোবাকে সেবা করা বেছে নাও

অল্পবয়সেই যিহোবাকে সেবা করা বেছে নাও

অল্পবয়সেই যিহোবাকে সেবা করা বেছে নাও

“যাহা যাহা শিখিয়াছ ও যাহার যাহার প্রমাণ জ্ঞাত হইয়াছ [“নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করেছ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন], তাহাতেই স্থির থাক।”—২ তীম. ৩:১৪.

১. যিহোবা তাঁর অল্পবয়স্ক সাক্ষিদের সেবাকে কীভাবে দেখেন?

 অল্পবয়স্কদের পবিত্র সেবা যিহোবার কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তিনি তাদের সম্বন্ধে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। “তোমার বিক্রম-দিনে তোমার প্রজাগণ স্বেচ্ছায় দত্ত উপহার হইবে,” গীতরচক গেয়েছিলেন। “পবিত্র শোভায়, ঊষার গর্ব্ভ হইতে, তোমার যুবকেরা তোমার কাছে শিশিরতুল্য।” (গীত. ১১০:৩) হ্যাঁ, সেই তরুণ-তরুণীদের যিহোবা খুবই উচ্চমূল্য দিয়ে থাকেন, যারা তাঁর সেবা করতে ইচ্ছুক।

২. আজকে অল্পবয়স্করা তাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কোন জাগতিক প্রভাবগুলোর মুখোমুখি হয়ে থাকে?

খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে তোমরা যারা অল্পবয়স্ক রয়েছ, তোমরা কি যিহোবার কাছে উৎসর্গীকরণ করেছ? অনেকে হয়তো সত্য ঈশ্বরের সেবা করা বেছে নেওয়াকে কঠিন বলে মনে করে। ব্যবসায়িক নেতারা, শিক্ষকরা এবং মাঝে মাঝে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবরা তরুণ-তরুণীদের বস্তুগত লক্ষ্যগুলোর পিছনে ছুটতে উৎসাহিত করে। অল্পবয়স্করা যখন আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোর পিছনে ছোটে, তখন জগৎ প্রায়ই তাদেরকে তাচ্ছিল্য করে। কিন্তু, প্রকৃত বিষয়টা হল, সত্য ঈশ্বরকে সেবা করাই হচ্ছে অনুধাবন করার মতো সর্বোত্তম পথ। (গীত. ২৭:৪) এক্ষেত্রে, তিনটে প্রশ্ন বিবেচনা করো: কেন তোমাদের ঈশ্বরকে সেবা করা উচিত? অন্যেরা যা-ই বলুক বা করুক না কেন, কীভাবে তোমরা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত এক জীবন পরিচালিত করায় সফল হতে পারো? পবিত্র সেবার কোন অপূর্ব সুযোগগুলো তোমাদের জন্য খোলা থাকতে পারে?

যিহোবাকে সেবা করা সঠিক কাজ

৩. যিহোবার সৃষ্টির দ্বারা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত?

কেন তোমাদের সত্য ও জীবন্ত ঈশ্বরের সেবা করা উচিত? প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদ প্রধান কারণ সম্বন্ধে জানায়: “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।” যিহোবা হলেন অস্তিত্বমান সমস্তকিছুর অপূর্ব সৃষ্টিকর্তা। এই পৃথিবী কতই না সুন্দর! গাছপালা, ফুল, পশুপাখি, সমুদ্র, পর্বতমালা এবং জলপ্রপাত—এই সমস্তকিছুই যিহোবা সৃষ্টি করেছেন। “পৃথিবী [ঈশ্বরের] সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ,” গীতসংহিতা ১০৪:২৪ পদ বলে। আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি যে, যিহোবা প্রেমের সঙ্গে আমাদের একটা দেহ ও একটা মন দিয়েছেন, যার ফলে আমরা পৃথিবী ও এর মধ্যেকার উত্তম বিষয়গুলো উপভোগ করতে পারি! বিস্ময়কর সৃষ্টির জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতাবোধের কারণে কি আমাদের তাঁকে সেবা করতে পরিচালিত হওয়া উচিত নয়?

৪, ৫. কোন ঐশিক কাজগুলো যিহোশূয়কে যিহোবার নিকটবর্তী করেছিল?

যিহোবাকে সেবা করার আরেকটা কারণ ইস্রায়েলীয় নেতা যিহোশূয়ের কথাগুলোতে পাওয়া যায়। তার জীবনের শেষ দিকে, যিহোশূয় ঈশ্বরের লোকেদের বলেছিলেন: “তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণে ও সমস্ত প্রাণে ইহা জ্ঞাত হও যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে।” কেন যিহোশূয় তা বলতে পেরেছিলেন?—যিহো. ২৩:১৪.

মিশরে একজন বালক হিসেবে বেড়ে ওঠার সময় যিহোশূয় নিশ্চয়ই ইস্রায়েলীয়দেরকে নিজস্ব একটা দেশ দেওয়ার বিষয়ে যিহোবার প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে জানতেন। (আদি. ১২:৭; ৫০:২৪, ২৫; যাত্রা ৩:৮) এরপর যিহোশূয় দেখেছেন যে, মিশরের ওপর দশটা আঘাত নিয়ে আসার এবং ইস্রায়েল সন্তানদের চলে যেতে দেওয়ার জন্য একগুঁয়ে ফরৌণকে বাধ্য করানোর দ্বারা যিহোবা তাঁর সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে শুরু করেছেন। যিহোশূয় সেই ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন, যারা সূফসাগরের মধ্যে থেকে উদ্ধার লাভ করেছিল এবং এরপর তিনি ফরৌণ ও তার সেনাবাহিনীকে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হতে দেখেছিলেন। সীনয় মরুভূমির ‘ভয়ানক মহাপ্রান্তরের’ মধ্যে দিয়ে এক দীর্ঘ যাত্রার সময়, যিহোশূয় দেখেছিলেন যে, কীভাবে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের প্রয়োজনীয় সমস্তকিছু জুগিয়েছিলেন। একজন ব্যক্তিও তৃষ্ণা অথবা ক্ষুধার তাড়নায় মারা যায়নি। (দ্বিতী. ৮:৩-৫, ১৪-১৬; যিহো. ২৪:৫-৭) ইস্রায়েলীয়দের জন্য যখন পরাক্রমী কনানীয় জাতিগুলোকে পরাজিত করে প্রতিজ্ঞাত দেশ অধিকার করার সময় এসেছিল, তখন যিহোশূয় দেখেছিলেন যে, কীভাবে ঈশ্বর, যাঁকে তিনি ও অন্যান্য ইস্রায়েলীয় উপাসনা করতেন, তাদেরকে এই কাজে সমর্থন করেছিলেন।—যিহো. ১০:১৪, ৪২.

৬. কী তোমাদের ঈশ্বরকে সেবা করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে?

যিহোশূয় জানতেন যে, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো রেখেছেন। তাই, যিহোশূয় ঘোষণা করেছিলেন: “আমি ও আমার পরিজন আমরা সদাপ্রভুর সেবা করিব।” (যিহো. ২৪:১৫) তোমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তোমরা যখন সেই প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে চিন্তা করো, যেগুলো সত্য ঈশ্বর ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ করেছেন এবং যেগুলো তিনি ভবিষ্যতে পরিপূর্ণ করবেন, তখন তোমরা কি যিহোশূয়ের মতো তাঁকে সেবা করার আকাঙ্ক্ষা করো?

৭. কেন জলে বাপ্তিস্ম নেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ?

যিহোবার সৃজনশীল কাজগুলো নিয়ে ধ্যান করা এবং তাঁর অপূর্ব ও সম্পূর্ণরূপে নির্ভরযোগ্য প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করার দ্বারা তোমাদের কেবল যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গীকরণ করতেই নয় কিন্তু জলে বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে সেই উৎসর্গীকরণের প্রতীককে প্রকাশ করতেও পরিচালিত হওয়া উচিত। সেই ব্যক্তিদের জন্য বাপ্তিস্ম নেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ, যারা ঈশ্বরকে সেবা করতে চায়। এটা আমাদের আদর্শ যিশু স্পষ্ট করেছেন। মশীহ হিসেবে তাঁর কাজ শুরু করার ঠিক আগে তিনি বাপ্তিস্মের জন্য যোহন বাপ্তাইজকের কাছে এসেছিলেন। কেন যিশু সেই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? “আমার ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই,” পরবর্তী সময়ে তিনি বলেছিলেন, “কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহারই ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য।” (যোহন ৬:৩৮) তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য নিজেকে সমর্পণের প্রতীক হিসেবে যিশু বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন।—মথি ৩:১৩-১৭.

৮. কেন তীমথিয় ঈশ্বরকে উপাসনা করা বেছে নিয়েছিলেন আর তোমাদের হয়তো কী করতে হবে?

এ ছাড়া, একজন অল্পবয়স্ক খ্রিস্টান তীমথিয়ের কথা বিবেচনা করুন, যাকে যিহোবা পরে অনেক কাজ ও বিশেষ সুযোগ প্রদান করেছিলেন। কেন তীমথিয় সত্য ঈশ্বরকে উপাসনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? বাইবেল আমাদের বলে যে, ‘তিনি যাহা যাহা শিখিয়াছেন ও নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করিয়াছিলেন, তাহাতেই স্থির ছিলেন।’ (২ তীম. ৩:১৪) তোমরা যদি ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করে থাকো এবং নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করো যে, এটির শিক্ষাগুলো সত্য, তাহলে তোমরাও তীমথিয়ের মতো অবস্থানে আছ। এখন তোমাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তোমরা কী করতে চাও, সেই সম্বন্ধে তোমাদের বাবামাকে বলো না কেন? মণ্ডলীর প্রাচীনদের সঙ্গে তারা তোমাদের বাপ্তিস্মের শাস্ত্রীয় চাহিদাগুলো বুঝতে সাহায্য করতে পারে।—পড়ুন, প্রেরিত ৮:১২.

৯. তোমরা যখন বাপ্তিস্মের পদক্ষেপ নেবে, তখন অন্যেরা কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে?

তোমরা যদি বাপ্তিস্ম নিয়ে থাকো, তাহলে তা সত্য ঈশ্বরকে সেবা করার ক্ষেত্রে এক চমৎকার শুরু হবে। এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে তোমরা এক দীর্ঘ দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রবেশ করছ, যেখানে পুরস্কার হল অনন্তজীবন এবং সেই আনন্দ, যা এখন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার মাধ্যমে আসে। (ইব্রীয় ১২:২, ৩) এ ছাড়া, তোমরা তোমাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য, যারা ইতিমধ্যেই সেই ধাবনক্ষেত্রে রয়েছে এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে তোমাদের বন্ধুবান্ধবের জন্যও আনন্দ নিয়ে আসবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, তোমরা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করবে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৩:১৫.) এটা ঠিক যে, অন্যেরা হয়তো বুঝবে না যে, কেন তোমরা যিহোবাকে উপাসনা করা বেছে নিয়েছ আর তারা হয়তো তোমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। তারা হয়তো এমনকি তোমাদের বিরোধিতাও করতে পারে। কিন্তু, তোমরা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারো।

অন্যেরা যখন প্রশ্ন তোলে বা তোমাদের বিরোধিতা করে

১০, ১১. (ক) ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে তোমাদের সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে লোকেরা হয়তো কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারে? (খ) সত্য উপাসনা সম্বন্ধীয় প্রশ্নের ব্যাপারে যিশু যেভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, তা থেকে তোমরা কী শিখতে পারো?

১০ যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তোমাদের সিদ্ধান্ত হয়তো সহছাত্র-ছাত্রী, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনকে বিভ্রান্ত করতে পারে। তারা হয়তো তোমাদের জিজ্ঞেস করতে পারে যে, কেন তোমরা এই পথ বেছে নিয়েছ এবং তারা হয়তো তোমাদের বিশ্বাস নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে। তোমাদের কীভাবে উত্তর দেওয়া উচিত? অবশ্য, তোমাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিকে বিশ্লেষণ করতে হবে, যাতে তোমাদের বাছাইয়ের কারণগুলো ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হও। আর তোমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য যিশুর চেয়ে কোন উত্তম উদাহরণই বা তোমরা অনুসরণ করতে পারো?

১১ যিহুদি ধর্মীয় নেতারা যখন যিশুকে পুনরুত্থান সম্বন্ধে জেরা করছিল, তখন তিনি সেই শাস্ত্রপদের প্রতি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন, যেগুলো তারা বিবেচনা করেনি। (যাত্রা. ৩:৬; মথি ২২:২৩, ৩১-৩৩) একজন অধ্যাপক যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, সর্বমহৎ আজ্ঞা কোনটি, তখন যিশু তার কাছে উপযুক্ত বাইবেলের পদ উদ্ধৃত করেছিলেন। সেই ব্যক্তি উত্তরের জন্য যিশুর কাছে কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন। (লেবীয়. ১৯:১৮; দ্বিতী. ৬:৫; মার্ক ১২:২৮-৩৪) যিশুর শাস্ত্র ব্যবহার ও তাঁর কথা বলার ধরন “তাঁহাকে লইয়া লোকসমূহের মধ্যে মতভেদ” সৃষ্টি করেছিল আর তাঁর বিরোধীরা তাঁর ক্ষতি করতে পারেনি। (যোহন ৭:৩২-৪৬) তোমরা যখন তোমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে প্রশ্নের উত্তর দাও, তখন বাইবেল ব্যবহার কোরো এবং “মৃদুতা ও ভয় সহকারে [“শ্রদ্ধার সঙ্গে,” ইজি-টু-রিড ভারসন] উত্তর দিও।” (১ পিতর ৩:১৫) তোমরা যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানো, তাহলে তা স্বীকার করো এবং গবেষণা করার প্রস্তাব দাও। পরে, যদি তোমাদের নিজের ভাষায় থাকে, তাহলে ওয়াচটাওয়ার পাবলিকেশনস ইনডেক্স অথবা সিডি-রমে ওয়াচটাওয়ার লাইব্রেরি ব্যবহার করে সেই বিষয়টা দেখতে পারো। উত্তম প্রস্তুতি সহকারে তোমরা “কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা . . . জানিতে” পারবে।—কল. ৪:৬.

১২. তাড়নার দ্বারা কেন তোমাদের নিজেদেরকে নিরুৎসাহিত হতে দেওয়া উচিত নয়?

১২ তোমাদের অবস্থান ও বিশ্বাস সম্বন্ধে তোমরা হয়তো প্রশ্নের চেয়ে আরও বেশি কিছুর মুখোমুখি হতে পারো। সর্বোপরি, ঈশ্বরের শত্রু শয়তান দিয়াবল জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে। (পড়ুন, ১ যোহন ৫:১৯.) প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রশংসা ও অনুমোদন আশা করা অবাস্তব হবে আর তোমরা হয়তো বিরোধিতারও মুখোমুখি হতে পারো। কিছু লোক হয়তো ‘নিন্দা করিতে’ পারে এবং তারা হয়তো তা করেই যেতে পারে। (১ পিতর ৪:৪) কিন্তু মনে রাখবে, তোমরাই কেবল একা নও। যিশু খ্রিস্টও তাড়না ভোগ করেছিলেন। প্রেরিত পিতরও ভোগ করেছিলেন এবং তিনি লিখেছিলেন: “প্রিয়েরা, তোমাদের পরীক্ষার্থে যে আগুন [দুঃখকষ্ট] তোমাদের মধ্যে জ্বলিতেছে, ইহা বিজাতীয় ঘটনা বলিয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না; বরং যে পরিমাণে খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সহভাগী হইতেছ, সেই পরিমাণে আনন্দ কর।”—১ পিতর ৪:১২, ১৩.

১৩. খ্রিস্টানরা যখন তাড়িত হয়, তখন কেন তারা আনন্দ করতে পারে?

১৩ একজন খ্রিস্টান হিসেবে তাড়না অথবা বিরোধিতা ভোগ করা হচ্ছে আনন্দ করার একটা কারণ। কেন? কারণ জগতের অনুমোদন লাভ করা ইঙ্গিত দেবে যে, তোমরা শয়তানের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করছ—ঈশ্বরের মান অনুযায়ী নয়। যিশু সাবধান করে দিয়েছিলেন: “ধিক্‌ তোমাদিগকে, যখন সকল লোকে তোমাদের সুখ্যাতি করে, কারণ তাহাদের পিতৃপুরুষেরা ভাক্ত ভাববাদীদের প্রতি তাহাই করিত।” (লূক ৬:২৬) তাড়না ইঙ্গিত দেয় যে, শয়তান ও তার জগৎ তোমাদের ওপর রাগান্বিত কারণ তোমরা যিহোবার সেবা করছ। (পড়ুন, মথি ৫:১১, ১২.) আর ‘খ্রীষ্টের নাম প্রযুক্ত তিরস্কৃত হওয়া’ হচ্ছে আনন্দ করার মতো বিষয়।—১ পিতর ৪:১৪.

১৪. তাড়না সত্ত্বেও একজন ব্যক্তি যখন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন, তখন কোন উত্তম ফল হতে পারে?

১৪ বিরোধিতা সত্ত্বেও তোমরা যখন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকো, তখন অন্ততপক্ষে চারটে ইতিবাচক ফল রয়েছে। তোমরা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়ে থাকো। তোমাদের বিশ্বস্ততার সঙ্গে ধৈর্য ধরা তোমাদের খ্রিস্টান ভাই ও বোনদের উৎসাহিত করে। কিছু পর্যবেক্ষক, যারা যিহোবাকে জানে না, তারা হয়তো তাঁকে অন্বেষণ করতে পরিচালিত হতে পারে। (পড়ুন, ফিলিপীয় ১:১২-১৪.) আর তোমরা যখন দেখবে যে, কীভাবে যিহোবা পরীক্ষা সহ্য করতে শক্তি জোগান, তখন তাঁর প্রতি তোমাদের ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে।

তোমাদের সামনে ‘এক বৃহৎ দ্বার’ খোলা রয়েছে

১৫. প্রেরিত পৌলের সামনে কোন ‘বৃহৎ দ্বার’ খোলা ছিল?

১৫ ইফিষে তার পরিচর্যা সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমার সম্মুখে এক দ্বার খোলা রহিয়াছে, তাহা বৃহৎ ও কার্য্যসাধক।” (১ করি. ১৬:৮, ৯) এটা ছিল সেই দ্বার, যা ওই নগরে সুসমাচার প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার বিরাট কাজের দিকে পরিচালিত করেছিল। সেই দ্বারে প্রবেশ করার মাধ্যমে পৌল অনেককে যিহোবাকে জানতে ও তাঁকে উপাসনা করতে সাহায্য করেছিলেন।

১৬. কীভাবে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশ ১৯১৯ সালে ‘এক খোলা দ্বারে’ প্রবেশ করেছে?

১৬ গৌরবান্বিত যিশু খ্রিস্ট ১৯১৯ সালে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের সামনে “এক খোলা দ্বার” রেখেছিলেন। (প্রকা. ৩:৮) তারা সেই দ্বারে প্রবেশ করেছিল এবং আগের চেয়ে আরও বেশি উদ্যোগ সহকারে সুসমাচার প্রচার করতে ও বাইবেলের সত্য শিক্ষা দিতে শুরু করেছিল। তাদের পরিচর্যার ফল কী হয়েছে? সুসমাচার এখন পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে আর প্রায় ৭০ লক্ষ লোকের ঈশ্বরের নতুন জগতে অনন্তজীবন পাওয়ার আশা রয়েছে।

১৭. কীভাবে তোমরা ‘বৃহৎ ও কার্য্যসাধক এক দ্বারে’ প্রবেশ করতে পারো?

১৭ ‘বৃহৎ ও কার্য্যসাধক এক দ্বার’ এখনও যিহোবার সমস্ত দাসের জন্য খোলা রয়েছে। যারা এর মধ্যে দিয়ে যায় তারা আনন্দ ও পরিতৃপ্তি লাভ করে, যখন তারা সুসমাচার প্রচারে এক বিরাট অংশ নিয়ে থাকে। তোমরা, যিহোবার অল্পবয়স্ক দাসেরা, ‘সুসমাচারে বিশ্বাস করিবার’ জন্য অন্যদের সাহায্য করার অতুলনীয় সুযোগকে কতটা উচ্চমূল্য হিসেবে গণ্য করে থাকো? (মার্ক ১:১৪, ১৫) তোমরা কি একজন নিয়মিত অথবা সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার কথা বিবেচনা করেছ? কিংডম হল নির্মাণ, বেথেল সেবা এবং মিশনারি ক্ষেত্র হল অন্যান্য সুযোগ, যেগুলো তোমাদের অনেকের সামনে খোলা থাকতে পারে। যেহেতু শয়তানের দুষ্ট জগতের জন্য সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, তাই রাজ্যের সেবার এই ক্ষেত্রগুলোতে প্রবেশ করা প্রতিদিন আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়ছে। এখনও সময় থাকতে থাকতে তোমরা কি সেই ‘বৃহৎ দ্বারে’ প্রবেশ করবে?

“আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়”

১৮, ১৯. (ক) কী দায়ূদকে যিহোবাকে সেবা করার এক দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা রাখতে সাহায্য করেছিল? (খ) কী দেখায় যে, দায়ূদ কখনো ঈশ্বরকে সেবা করার ক্ষেত্রে দুঃখ প্রকাশ করেননি?

১৮ অনুপ্রাণিত গীতরচক অন্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, “আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়।” (গীত. ৩৪:৮) প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ যখন একজন মেষপালক বালক ছিলেন, তখন যিহোবা তাকে বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিলেন। ঈশ্বর তাকে গলিয়াতের সঙ্গে লড়াইয়ে সমর্থন করেছিলেন এবং তাকে অন্যান্য অনেক দুর্দশা থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (১ শমূ. ১৭:৩২-৫১; গীত. ১৮, শীর্ষলিখন) ঈশ্বরের মহৎ প্রেমপূর্ণ দয়ার কারণে দায়ূদ লিখতে পরিচালিত হয়েছিলেন: “সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমিই বাহুল্যরূপে সাধন করিয়াছ আমাদের পক্ষে তোমার আশ্চর্য্য কার্য্য সকল ও তোমার সঙ্কল্প সকল; তোমার তুল্য কেহ নাই।”—গীত. ৪০:৫.

১৯ দায়ূদ যিহোবাকে গভীরভাবে প্রেম করেছিলেন এবং তার সমস্ত হৃদয় ও মন দিয়ে তাঁর প্রশংসা করতে চেয়েছিলেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪০:৮-১০.) বছর গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়ূদ কখনো সত্য ঈশ্বরের উপাসনায় তার জীবন ব্যয় করেছিলেন বলে অনুশোচনা করেননি। ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুযায়ী জীবনযাপন করা তার সর্বমহৎ সম্পদ—অতুলনীয় সুখের উৎস—ছিল। বৃদ্ধ বয়সে দায়ূদ বলেছিলেন: “হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি আমার আশা; তুমি বাল্যকাল হইতে আমার বিশ্বাস-ভূমি। হে ঈশ্বর, বৃদ্ধ বয়স ও পক্বকেশের কাল পর্য্যন্তও আমাকে পরিত্যাগ করিও না।” (গীত. ৭১:৫, ১৮) যিহোবার ওপর দায়ূদের নির্ভরতা এবং তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও প্রগাঢ় হয়েছিল, এমনকি যদিও তার দৈহিক শক্তি হ্রাস পেয়েছিল।

২০. কেন ঈশ্বরকে সেবা করা তোমাদের জীবনকে সর্বোত্তমভাবে ব্যয় করার উপায়?

২০ যিহোশূয়, দায়ূদ ও তীমথিয়ের জীবন এই প্রমাণ দেয় যে, যিহোবাকে সেবা করা হল তোমাদের জীবনকে সর্বোত্তমভাবে ব্যয় করার উপায়। এই জগতে কোনো কেরিয়ারের স্বল্পমেয়াদি বস্তুগত সুবিধাগুলো তোমরা ‘সমস্ত হৃদয় ও সমস্ত প্রাণের সহিত সদাপ্রভুর সেবা করিবার’ মাধ্যমে যে-দীর্ঘমেয়াদি উপকারগুলো লাভ করো, সেগুলোর ধারেকাছেও যেতে পারে না। (যিহো. ২২:৫) প্রার্থনায় তোমরা যদি যিহোবার কাছে উৎসর্গীকরণ না করে থাকো, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞেস করো, ‘কী আমাকে একজন যিহোবার সাক্ষি হতে বাধা দিচ্ছে?’ তোমরা যদি ইতিমধ্যেই যিহোবার একজন বাপ্তাইজিত উপাসক হয়ে থাকো, তাহলে তোমরা কি তোমাদের জীবনে আনন্দকে বাড়াতে চাও? অতএব, তোমাদের পরিচর্যাকে বৃদ্ধি করো এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি করে চলো। পরের প্রবন্ধ দেখাবে যে, প্রেরিত পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করার মাধ্যমে কীভাবে তোমরা আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারো।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কেন আমাদের ঈশ্বরকে সেবা করা উচিত, সেই সম্বন্ধে দুটো কারণ বলো।

• কী তীমথিয়কে ঈশ্বরকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে?

• কেন তোমাদের তাড়নার মুখেও দৃঢ় থাকা উচিত?

• সেবার কোন সুযোগগুলো তোমাদের সামনে খোলা রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবাকে সেবা করা হল জীবনের সর্বোত্তম উপায়

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

তুমি কি তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারো?