সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি করো

পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি করো

পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি করো

“আমি উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিয়াছি, নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িয়াছি, বিশ্বাস রক্ষা করিয়াছি।”—২ তীম. ৪:৭.

১, ২. তার্ষের শৌল তার জীবনে কোন পরিবর্তনগুলো করেছিলেন আর তিনি কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ গ্রহণ করেছিলেন?

 সেই ব্যক্তি ছিলেন বুদ্ধিমান ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু, তিনি ‘আপন মাংসের অভিলাষ অনুসারে আচরণ করিতেন।’ (ইফি. ২:৩) পরে তিনি নিজেকে “ধর্ম্মনিন্দক, তাড়নাকারী ও অপমানকারী” হিসেবে বর্ণনা করেন। (১ তীম. ১:১৩) তিনি ছিলেন তার্ষের শৌল।

পরে, শৌল তার জীবনে আমূল পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি তার পূর্বের জীবনধারা ত্যাগ করেছিলেন এবং ‘আপনার হিত চেষ্টা নয়, কিন্তু অনেকের হিত চেষ্টা করিবার’ জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। (১ করি. ১০:৩৩) তিনি কোমল হয়েছিলেন এবং সেই ব্যক্তিদের জন্য কোমল স্নেহ দেখিয়েছিলেন, যারা পূর্বে তার বিদ্বেষের শিকার হয়েছিল। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ২:৭, ৮.) “আমি . . . পরিচারক হইয়াছি,” তিনি লিখেছিলেন এবং আরও বলেছিলেন: “আমি সমস্ত পবিত্রগণের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম হইলেও আমাকে এই অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, যাহাতে পরজাতিদের কাছে আমি খ্রীষ্টের সেই ধনের বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করি, যে ধনের সন্ধান করিয়া উঠা যায় না।”—ইফি. ৩:৭, ৮.

৩. কোন উপায়ে পৌলের চিঠিগুলো ও তার পরিচর্যার নথি অধ্যয়ন করা আমাদের সাহায্য করতে পারে?

শৌল, যিনি পৌল হিসেবেও পরিচিত ছিলেন, তিনি উল্লেখযোগ্য আধ্যাত্মিক উন্নতি করেছিলেন। (প্রেরিত ১৩:৯) সত্যে আমাদের ব্যক্তিগত উন্নতিকে ত্বরান্বিত করার একটা নিশ্চিত উপায় হল, পৌলের চিঠিগুলো এবং তার পরিচর্যার নথি অধ্যয়ন করা এবং এরপর তার বিশ্বাসের উদাহরণ অনুকরণ করা। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:৩৪; ইব্রীয় ১৩:৭.) এসো আমরা দেখি যে, কীভাবে তা করা আমাদেরকে ব্যক্তিগত অধ্যয়নের উত্তম তালিকা গড়ে তুলতে, লোকেদের প্রতি অকৃত্রিম প্রেম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে এবং নিজেদের সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে অনুপ্রাণিত করবে।

পৌলের অধ্যয়নের তালিকা

৪, ৫. কীভাবে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন পৌলকে উপকৃত করেছিল?

একজন ফরীশী হিসেবে “গমলীয়েলের চরণে” মানুষ হয়েছেন এবং ‘পৈতৃক ব্যবস্থার সূক্ষ্ম নিয়মানুসারে শিক্ষিত হইয়াছেন’ বলে পৌলের শাস্ত্র সম্বন্ধে ইতিমধ্যেই কিছু জ্ঞান ছিল। (প্রেরিত ২২:১-৩; ফিলি. ৩:৪-৬) তার বাপ্তিস্মের পর পরই তিনি ‘আরব দেশে চলিয়া গিয়াছিলেন’—হয় সিরিয়া মরুভূমিতে নতুবা আরবীয় উপদ্বীপের কোনো নির্জন স্থানে, যা ধ্যানের জন্য সহায়ক ছিল। (গালা. ১:১৭) স্পষ্টতই, পৌল শাস্ত্র সম্বন্ধে গভীরভাবে বিবেচনা করতে চেয়েছিলেন, যা প্রমাণ দিয়েছিল যে, যিশুই ছিলেন সেই মশীহ। অধিকন্তু, পৌল সেই কাজের জন্য প্রস্তুত হতে চেয়েছিলেন, যা তার সম্মুখে ছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ৯:১৫, ১৬, ২০, ২২.) আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করার জন্য পৌল সময় করে নিয়েছিলেন।

ব্যক্তিগত অধ্যয়ন থেকে পৌল যে-শাস্ত্রীয় জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছিলেন, তা তাকে কার্যকারীভাবে সত্য শেখাতে সমর্থ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, যিশুই যে মশীহ ছিলেন এই বিষয়টা প্রমাণ করার জন্য পৌল পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ার সমাজগৃহে ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে কমপক্ষে পাঁচটা সরাসরি উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়াও, পৌল বেশ কয়েক বার পবিত্র লেখা থেকে উল্লেখ করেছিলেন। বাইবেলে বর্ণিত বিষয়গুলোতে তার যুক্তিতর্ক এতটাই দৃঢ়প্রত্যয়জনক ছিল যে, আরও শেখার জন্য “অনেক যিহূদী ও যিহূদি-ধর্ম্মাবলম্বী ভক্ত লোক পৌল ও বার্ণবার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল।” (প্রেরিত ১৩:১৪-৪৪) যখন রোমীয় যিহুদিদের একদল লোক কয়েক বছর পর তার বাড়িতে এসেছিল, তখন পৌল তাদের কাছে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছিলেন, “তাঁহাদের কাছে তিনি . .  ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেন, এবং মোশির ব্যবস্থা ও ভাববাদিগণের গ্রন্থ লইয়া যীশুর বিষয়ে তাঁহাদিগকে বুঝাইতে চেষ্টা করিলেন।”—প্রেরিত ২৮:১৭, ২২, ২৩.

৬. পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার সময় কী পৌলকে আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করেছিল?

পরীক্ষা ভোগ করার সময় পৌল শাস্ত্র পরীক্ষা করে চলেছিলেন এবং সেগুলোর অনুপ্রাণিত বার্তা থেকে শক্তি লাভ করেছিলেন। (ইব্রীয় ৪:১২) তার মৃত্যুর দণ্ডাদেশের আগে রোমে বন্দি থাকাকালীন পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন, যেন তিনি তার কাছে “পুস্তকগুলি” এবং “চর্ম্মের পুস্তক কয়খানি” নিয়ে আসেন। (২ তীম. ৪:১৩) সেই নথিগুলো সম্ভবত ইব্রীয় শাস্ত্রের অংশ ছিল, যেগুলো পৌল গভীর অধ্যয়নের জন্য ব্যবহার করতেন। বাইবেল অধ্যয়নের এক তালিকা বজায় রাখার দ্বারা শাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করা পৌলের কাছে অপরিহার্য ছিল আর তাই তিনি অটল থাকতে পেরেছিলেন।

৭. নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন থেকে তোমরা যে-উপকারগুলো লাভ করতে পারো, সেগুলো উল্লেখ করো।

উদ্দেশ্যপূর্ণ ধ্যানসহ নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করতে সাহায্য করবে। (ইব্রীয় ৫:১২-১৪) ঈশ্বরের বাক্যের মূল্য সম্বন্ধে গীতরচক গেয়েছিলেন: “তোমার মুখের ব্যবস্থা আমার পক্ষে উত্তম, সহস্র সহস্র স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা অপেক্ষা উত্তম। তোমার আজ্ঞা সকল আমাকে শত্রুগণ অপেক্ষা জ্ঞানবান করে; কারণ সেই সকল চিরকাল আমার। আমি সমস্ত কুপথ হইতে আপন চরণ নিবৃত্ত করিয়াছি, যেন আমি তোমার বাক্য পালন করি।” (গীত. ১১৯:৭২, ৯৮, ১০১) তোমাদের কি ব্যক্তিগত অধ্যয়নের একটা তালিকা রয়েছে? প্রতিদিন বাইবেল পড়ার ও তোমরা যা পড়ো, তা নিয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করার দ্বারা তোমরা কি ঈশ্বরের সেবার ভাবী কার্যভারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছ?

শৌল লোকেদের ভালবাসতে শিখেছিলেন

৮. যিহুদিধর্মের বাইরের লোকেদের সঙ্গে শৌল কেমন ব্যবহার করতেন?

একজন খ্রিস্টান হওয়ার আগে শৌল তার ধর্মের ব্যাপারে উদ্যোগী ছিলেন কিন্তু যিহুদিধর্মের বাইরের লোকেদের প্রতি তার সামান্যই চিন্তা ছিল। (প্রেরিত ২৬:৪, ৫) কিছু যিহুদি যখন স্তিফানকে পাথর মারছিল, তখন তিনি অনুমোদন সহকারে তা দেখেছিলেন। শৌল যা দেখেছিলেন, সেটার দ্বারা তিনি নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলেন, স্তিফানের মৃত্যুদণ্ডকে হয়তো উপযুক্ত শাস্তি হিসেবে মনে করেছিলেন। (প্রেরিত ৬:৮-১৪; ৭:৫৪–৮:১) সেই অনুপ্রাণিত বিবরণ বলে: “শৌল মণ্ডলীর উচ্ছেদ সাধন করিতে লাগিলেন, ঘরে ঘরে প্রবেশ করিয়া পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে টানিয়া আনিয়া কারাগারে সমর্পণ করিতে লাগিলেন।” (প্রেরিত ৮:৩) তিনি ‘তাঁহাদের বিরুদ্ধে অতিমাত্র উন্মত্ত হইয়া বিদেশীয় নগর পর্য্যন্তও তাঁহাদিগকে তাড়না করিয়াছিলেন।’—প্রেরিত ২৬:১১.

৯. কোন অভিজ্ঞতার কারণে শৌল লোকেদের সঙ্গে তার আচরণ পুনরায় পরীক্ষা করে দেখেছিলেন?

প্রভু যিশু যখন শৌলের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তখন তিনি দম্মেশকে খ্রিস্টের শিষ্যদের হয়রান করার জন্য সেই পথে ছিলেন। ঈশ্বরের পুত্রের অতিপ্রাকৃত প্রভা শৌলকে অন্ধ করে দিয়েছিল এবং তিনি অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। যিহোবা যে-সময়ে শৌলের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অননিয়কে ব্যবহার করেছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে লোকেদের প্রতি শৌলের মনোভাব পুরোপুরি পালটে গিয়েছিল। (প্রেরিত ৯:১-৩০) খ্রিস্টের একজন অনুসারী হওয়ার পর, তিনি সমস্ত লোকের সঙ্গে যিশুর মতো আচরণ করতে কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলেন। এর অর্থ ছিল, দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত হওয়া এবং “মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে” থাকা।—পড়ুন, রোমীয় ১২:১৭-২১.

১০, ১১. কীভাবে পৌল লোকেদের জন্য অকৃত্রিম প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন?

১০ পৌল কেবল অন্যদের সঙ্গে শান্তি বজায় রেখেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি তাদের প্রতি অকৃত্রিম প্রেম দেখাতে চেয়েছিলেন আর খ্রিস্টীয় পরিচর্যা তাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছিল। তার প্রথম মিশনারি যাত্রার সময় তিনি এশিয়া মাইনরে সুসমাচার প্রচার করেছিলেন। প্রচণ্ড বিরোধিতা সত্ত্বেও, পৌল ও তার সহযোগীরা মৃদুশীল ব্যক্তিদের খ্রিস্টধর্মকে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য সাহায্য করেছিলেন। তারা পুনরায় লুস্ত্রায় ও ইকনিয়তে গিয়েছিল, এমনকি যদিও সেই নগরের লোকেরা পৌলকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল।—প্রেরিত ১৩:১-৩; ১৪:১-৭, ১৯-২৩.

১১ এরপর, পৌল ও তার দল ফিলিপীর মাকিদনিয়াতে সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন লোকেদের অনুসন্ধান করেছিল। লুদিয়া নামে একজন যিহুদি ধর্মান্তরিত মহিলা সুসমাচার শুনেছিলেন এবং একজন খ্রিস্টান হয়েছিলেন। শাসনকর্তারা পৌল ও সীলকে বেত্রাঘাত করেছিল এবং তাদেরকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল। কিন্তু, পৌল কারারক্ষকের কাছে প্রচার করেছিলেন আর এর ফলে তিনি ও তার পরিবার যিহোবার উপাসক হিসেবে বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন।—প্রেরিত ১৬:১১-৩৪.

১২. কী অপমানকারী শৌলকে যিশু খ্রিস্টের প্রেমময় প্রেরিত হতে অনুপ্রাণিত করেছে?

১২ কেন একসময়ের তাড়নাকারী শৌল তার দ্বারা উপদ্রুত লোকেদের বিশ্বাসকে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন? কী সেই অপমানকারী ব্যক্তিকে সদয় ও প্রেমময় প্রেরিত হতে অনুপ্রাণিত করেছিল, যিনি নিজের জীবনকে পর্যন্ত ঝুঁকির মুখে ফেলতে ইচ্ছুক ছিলেন, যাতে অন্যেরা ঈশ্বর ও খ্রিস্ট সম্বন্ধে সত্য জানতে পারে? পৌল নিজে ব্যাখ্যা করেন: “[ঈশ্বর] আমাকে . . . আপন অনুগ্রহ দ্বারা আহ্বান করিয়াছেন, তিনি . . . আপন পুত্ত্রকে আমাতে প্রকাশ করিবার সুবাসনা করিলেন।” (গালা. ১:১৫, ১৬) তীমথিয়কে পৌল লিখেছিলেন: “এই জন্য দয়া পাইয়াছি, যেন যীশু খ্রীষ্ট এই অগ্রগণ্য আমাতে সম্পূর্ণ দীর্ঘসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করেন, যাহাতে আমি তাহাদের আদর্শ হইতে পারি, যাহারা অনন্ত জীবনের নিমিত্ত তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে।” (১ তীম. ১:১৬) যিহোবা পৌলকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং এই ধরনের অযাচিত দয়া ও করুণা লাভ করা তাকে অন্যদের কাছে সুসমাচার প্রচার করার দ্বারা প্রেম দেখাতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

১৩. কীসের দ্বারা আমাদেরকে অন্যদের প্রতি প্রেম দেখাতে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত আর কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

১৩ একইভাবে, যিহোবা আমাদের পাপ ও ভুলগুলোকেও ক্ষমা করেন। (গীত. ১০৩:৮-১৪) “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?” গীতরচক জিজ্ঞেস করেছিলেন। (গীত. ১৩০:৩) ঈশ্বরের করুণা ছাড়া আমরা কেউই পবিত্র সেবার আনন্দ লাভ করতে পারব না অথবা অনন্তজীবন লাভ করার প্রত্যাশাও করতে পারব না। ঈশ্বর আমাদের সকলের প্রতি প্রচুর অযাচিত দয়া প্রদর্শন করেছেন। তাই, পৌলের মতো আমাদেরও অন্যদের কাছে প্রচার করার ও তাদেরকে সত্য সম্বন্ধে শেখানোর এবং আমাদের সহবিশ্বাসীদের শক্তিশালী করার মাধ্যমে তাদের প্রতি প্রেম প্রসারিত করার আকাঙ্ক্ষা করা উচিত।—পড়ুন, প্রেরিত ১৪:২১-২৩.

১৪. কীভাবে আমরা আমাদের পরিচর্যাকে বাড়াতে সমর্থ হতে পারি?

১৪ সুসমাচারের একজন পরিচারক হিসেবে পৌল উন্নতি করতে চেয়েছিলেন আর যিশুর উদাহরণ তার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। যেসমস্ত উপায়ে ঈশ্বরের পুত্র লোকেদের প্রতি অতুলনীয় প্রেম দেখিয়েছিলেন, সেটা হল তাঁর জনসাধারণ্যে পরিচর্যার মাধ্যমে। যিশু বলেছিলেন: “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।” (মথি ৯:৩৫-৩৮) পৌল নিজে একজন উদ্যোগী কর্মী হওয়ার দ্বারা আরও কার্যকারী লোকের বিষয়ে তার নিজের করা যেকোনো অনুরোধের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিলেন। তোমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তোমরা কি তোমাদের পরিচর্যার গুণগত মানকে উন্নত করতে পারো? অথবা তোমরা কি রাজ্যের প্রচার কাজে যেটুকু সময় ব্যয় করো, তার চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে পারো, হয়তো এমনকি তোমাদের জীবনকে রদবদল করতে পারো, যাতে একজন অগ্রগামী হতে পারো? এসো আমরা অন্যদেরকে ‘জীবনের বাক্য ধরিয়া রাখিতে’ সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের প্রতি অকৃত্রিম প্রেম দেখাই।—ফিলি. ২:১৬.

নিজের সম্বন্ধে পৌলের দৃষ্টিভঙ্গি

১৫. তার সহখ্রিস্টানদের তুলনায় পৌল নিজেকে কীভাবে দেখেছিলেন?

১৫ একজন খ্রিস্টান পরিচারক হিসেবে, পৌল আরেকটা উপায়ে আমাদের জন্য এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন। যদিও তিনি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে অনেক বিশেষ সুযোগ লাভ করেছিলেন কিন্তু পৌল খুব ভালভাবে জানতেন যে, তিনি সেই আশীর্বাদগুলো অর্জন করেননি এবং সেগুলো তিনি তার কর্মদক্ষতার কারণে পাননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি যে-আশীর্বাদগুলো লাভ করেছিলেন, সেগুলো ছিল ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার অভিব্যক্তি। পৌল স্বীকার করেছিলেন যে, অন্যান্য খ্রিস্টানও সুসমাচারের কার্যকারী পরিচারক ছিলেন। ঈশ্বরের লোকেদের মাঝে তার দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও, তিনি নম্র ছিলেন।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৯-১১.

১৬. ত্বক্‌চ্ছেদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে পৌল কীভাবে নম্রতা ও বিনয়ভাব দেখিয়েছিলেন?

১৬ আন্তিয়খিয়ার সুরিয়া নগরে যে-সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেটাকে পৌল কীভাবে মোকাবিলা করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। সেখানকার খ্রিস্টীয় মণ্ডলী ত্বক্‌চ্ছেদের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছিল। (প্রেরিত ১৪:২৬–১৫:২) যেহেতু পৌল অচ্ছিন্নত্বক্‌ পরজাতীয়দের কাছে প্রচার করায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাই তিনি হয়তো মনে করেছিলেন যে, ন-যিহুদিদের সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে তিনি পারদর্শী আর তাই সমস্যা সমাধান করার জন্য তিনি সুযোগ্য। (পড়ুন, গালাতীয় ২:৮, ৯.) কিন্তু, তার প্রচেষ্টা যখন সেই বিষয়টাকে সমাধান করতে পারেনি, তখন নম্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে তিনি বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার জন্য যিরূশালেমের পরিচালক গোষ্ঠীর কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা অনুসরণ করেছিলেন। এর সদস্যরা যখন বিষয়টা শুনেছিল, সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল এবং তাদের একজন বার্তাবাহক হওয়ার জন্য তাকে নিযুক্ত করেছিল, তখন তিনি তাতে পূর্ণরূপে সহযোগিতা করেছিলেন। (প্রেরিত ১৫:২২-৩১) এভাবে পৌল তার সহদাসদের ‘সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান’ করেছিলেন।—রোমীয় ১২:১০খ.

১৭, ১৮. (ক) মণ্ডলীর লোকেদের প্রতি পৌল কোন অনুভূতি গড়ে তুলেছিলেন? (খ) পৌলের প্রস্থানের প্রতি ইফিষের প্রাচীনদের প্রতিক্রিয়া তার সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

১৭ নম্র পৌল নিজেকে মণ্ডলীর ভাইবোনদের কাছ থেকে দূরে রাখেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাদের সঙ্গে লেগে ছিলেন। রোমীয়দের কাছে লেখা তার চিঠির শেষে, তিনি ২০ জনেরও বেশি লোকের নাম ধরে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তাদের বেশির ভাগ সম্বন্ধে শাস্ত্রে আর কোথাও উল্লেখ নেই এবং মাত্র অল্প কয়েক জনের বিশেষ সুযোগ ছিল। কিন্তু, তারা যিহোবার অনুগত দাস ছিল এবং পৌল তাদেরকে অত্যন্ত ভালবাসতেন।—রোমীয় ১৬:১-১৬.

১৮ পৌলের নম্র ও বন্ধুত্বপরায়ণ আচরণ মণ্ডলীগুলোকে গেঁথে তুলেছিল। তিনি শেষবারের মতো ইফিষের প্রাচীনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর তারা “পৌলের গলা ধরিয়া তাঁহাকে চুম্বন করিতে লাগিলেন; সর্ব্বাপেক্ষা তাঁহার উক্ত এই কথার জন্য অধিক দুঃখ করিলেন যে, তাঁহারা তাঁহার মুখ আর দেখিতে পাইবেন না।” একজন গর্বিত ও উদাসীন ব্যক্তির প্রস্থান নিশ্চয়ই এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করত না।—প্রেরিত ২০:৩৭, ৩৮.

১৯. সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা ‘নম্রতা’ দেখাতে পারি?

১৯ যারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করতে চায়, তাদের সকলের পৌলের মতো একই নম্র মনোভাব দেখাতে হবে। তিনি সহখ্রিস্টানদের কাছে মিনতি করেছিলেন, “প্রতিযোগিতার কিম্বা অনর্থক দর্পের বশে কিছুই করিও না, বরং নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (ফিলি. ২:৩) কীভাবে আমরা সেই পরামর্শ অনুসরণ করতে পারি? একটা উপায় হল, আমাদের মণ্ডলীতে প্রাচীনদের সঙ্গে সহযোগিতা করে, তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করে এবং তাদের নেওয়া বিচার সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো মেনে নিয়ে। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:১৭.) আরেকটা উপায় হল, আমাদের সমস্ত বিশ্বাসী ভাই ও বোনকে উচ্চমূল্য দিয়ে। যিহোবার লোকেদের মণ্ডলীগুলো প্রায়ই বিভিন্ন জাতীয়, সাংস্কৃতিক, বর্ণ এবং সাম্প্রদায়িক পটভূমির লোকেদের নিয়ে গঠিত। তাই, আমাদের কি সকলের সঙ্গে পক্ষপাতহীনভাবে ও স্নেহ সহকারে আচরণ করতে শেখা উচিত নয়, যেমনটা পৌল করেছিলেন? (প্রেরিত ১৭:২৬; রোমীয় ১২:১০ক) আমাদের উৎসাহিত করা হয়েছে যে, “যেমন খ্রীষ্ট তোমাদিগকে গ্রহণ করিলেন, তেমনি ঈশ্বরের গৌরবের জন্য তোমরা এক জন অন্যকে গ্রহণ কর।”—রোমীয় ১৫:৭.

জীবন দৌড়ে ‘ধৈর্য্যপূর্ব্বক দৌড়ান’

২০, ২১. কী আমাদেরকে জীবন দৌড়ে সফলভাবে দৌড়াতে সাহায্য করবে?

২০ একজন খ্রিস্টানের জীবনকে দীর্ঘ দৌড় প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। পৌল লিখেছিলেন: “আমি . . . নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িয়াছি, বিশ্বাস রক্ষা করিয়াছি। এখন অবধি আমার নিমিত্ত ধার্ম্মিকতার মুকুট তোলা রহিয়াছে; প্রভু, সেই ধর্ম্মময় বিচারকর্ত্তা, সেই দিন আমাকে তাহা দিবেন; কেবল আমাকে নয়, বরং যত লোক তাঁহার প্রকাশপ্রাপ্তি ভাল বাসিয়াছে, সেই সকলকেও দিবেন।”—২ তীম. ৪:৭, ৮.

২১ পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করা আমাদেরকে অনন্তজীবনের দৌড়ে সফলভাবে দৌড়াতে সাহায্য করবে। (ইব্রীয় ১২:১) তাই, যেকোনোভাবেই হোক এসো আমরা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের উত্তম তালিকা গড়ে তুলে, লোকেদের জন্য গভীর প্রেম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে এবং এক নম্র মনোভাব বজায় রেখে আধ্যাত্মিক উন্নতি করে চলি।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• নিয়মিত ব্যক্তিগত শাস্ত্র অধ্যয়ন থেকে পৌল কীভাবে উপকৃত হয়েছিলেন?

• কেন লোকেদের প্রতি গভীর ভালবাসা থাকা সত্য খ্রিস্টানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

• কোন গুণাবলি থাকা তোমাদেরকে অন্যদের সঙ্গে পক্ষপাতহীনভাবে আচরণ করতে সাহায্য করবে?

• কীভাবে পৌলের উদাহরণ তোমাদের মণ্ডলীর প্রাচীনদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

শাস্ত্র থেকে শক্তি লাভ করো, যেমনটা পৌল করেছিলেন

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

অন্যদের কাছে সুসমাচার বলার মাধ্যমে প্রেম দেখাও

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

তোমরা কি জানো, কী পৌলকে তার ভাইবোনদের কাছে প্রিয় করে তুলেছিল?