সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আপন প্রথম প্রেম” বজায় রাখুন

“আপন প্রথম প্রেম” বজায় রাখুন

“আপন প্রথম প্রেম” বজায় রাখুন

“তোমার যাহা আছে, তাহা দৃঢ়রূপে ধারণ কর।”—প্রকা. ৩:১১.

১, ২. যিহোবার সম্বন্ধে আপনি যা শিখছিলেন, তা যে সত্য, সেই ব্যাপারে আপনি যখন দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছিলেন, তখন আপনার কেমন লেগেছিল?

 আপনার কি মনে আছে যে, কখন আপনি সেই চমৎকার প্রত্যাশা সম্বন্ধে শিখেছিলেন, যা যিহোবা বাধ্য মানবজাতিকে দেন? আপনি যদি আগে অন্য কোনো ধর্মের সদস্য হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কাছে যখন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলোকে শাস্ত্রের আলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল বা যে-শিক্ষাগুলো আপনার কাছে বোঝা কঠিন, সেগুলোকে স্পষ্ট করা হয়েছিল, তখন আপনার কেমন লেগেছিল? সম্ভবত আপনি উপলব্ধি করেছেন যে, আপনি ভ্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু, এখন আপনি জ্ঞানালোকিত হয়েছেন বলে কতই না আনন্দিত! আপনি যদি খ্রিস্টান বাবামার দ্বারা লালিত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কি মনে পড়ে যে, যিহোবার সম্বন্ধে আপনি যা শিখছিলেন সেটাই যে সত্য, সেই বিষয়ে যখন আপনি দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছিলেন এবং এরপর এর সঙ্গে সংগতি রেখে জীবনযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন আপনার কেমন লেগেছিল?—রোমীয় ১২:২.

আপনার আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের মধ্যে অনেকে আপনাকে বলবে যে, তারা উল্লসিত হয়েছিল, যিহোবার নিকটবর্তী হয়েছিল এবং কৃতজ্ঞ হয়েছিল যে, যিহোবা তাদেরকে তাঁর দিকে আকর্ষণ করেছেন। (যোহন ৬:৪৪) তাদের সুখ তাদেরকে খ্রিস্টীয় কাজে অংশ নিতে পরিচালিত করেছিল। তারা এতটাই আনন্দে পূর্ণ ছিল যে, তারা তাদের অনুভূতি সকলকে জানাতে চেয়েছিল। আপনারও কি অনুরূপ অভিজ্ঞতা রয়েছে?

৩. ইফিষীয় মণ্ডলীতে কোন অবস্থা বিরাজ করছিল, যখন যিশু তাদের উদ্দেশে একটা বার্তা পাঠিয়েছিলেন?

ইফিষের প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর উদ্দেশে কথা বলার সময় যিশু তাদের “আপন প্রথম প্রেম” সম্বন্ধে বলেছিলেন। ইফিষীয়দের অনেক ভাল গুণ ছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও, যিহোবার জন্য একসময় তাদের যে-প্রেম ছিল, তা হ্রাস পেয়েছিল। তাই, যিশু তাদের বলেছিলেন: “আমি জানি তোমার কার্য্য সকল এবং তোমার পরিশ্রম ও ধৈর্য্য; আর আমি জানি যে, তুমি দুষ্টদিগকে সহ্য করিতে পার না, এবং আপনাদিগকে প্রেরিত বলিলেও যাহারা প্রেরিত নয়, তাহাদিগকে পরীক্ষা করিয়াছ ও মিথ্যাবাদী নিশ্চয় করিয়াছ; এবং তোমার ধৈর্য্য আছে, আর তুমি আমার নামের জন্য ভার বহন করিয়াছ, ক্লান্ত হও নাই। তথাচ তোমার বিরুদ্ধে আমার কথা আছে, তুমি আপন প্রথম প্রেম পরিত্যাগ করিয়াছ।”—প্রকা. ২:২-৪.

৪. ইফিষীয়দের প্রতি যিশুর বার্তা কেন আজকে প্রাসঙ্গিক?

প্রকাশিত বাক্য বইয়ে ইফিষীয় ও অন্যান্য মণ্ডলীর উদ্দেশে যিশুর পরামর্শ, ১৯১৪ সাল থেকে কিছু সময়ের জন্য অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মধ্যে যে-অবস্থা বিরাজ করছিল, সেই ক্ষেত্রে উপযুক্ত হয়ে এসেছে। (প্রকা. ১:১০) তা সত্ত্বেও, এইরকম হতে পারে যে, এমনকি এখনও কিছু খ্রিস্টান যিহোবা ও খ্রিস্টীয় সত্যের প্রতি “[তাহাদের] প্রথম প্রেম” হারিয়ে ফেলতে পারে। সেই কথা মনে রেখে আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, আপনার নিজের অভিজ্ঞতাগুলো স্মরণ করার ও সেগুলো নিয়ে ধ্যান করার দ্বারা কীভাবে ঈশ্বর ও সত্যের প্রতি আপনার প্রথম যে-প্রেম ও উদ্যোগ ছিল, সেটা বজায় রাখতে পারেন, সেটাকে সতেজ করতে পারেন ও সেটাকে আরও দৃঢ় করতে পারেন।

সত্য সম্বন্ধে কী আপনাকে প্রত্যয়ী করেছিল?

৫, ৬. (ক) কোন বিষয়ে প্রত্যেক খ্রিস্টানের দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে হবে? (খ) কী আপনাকে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিল যে, যিহোবার সাক্ষিরা সত্য শিক্ষা দেয়? (গ) কী একজন ব্যক্তিকে তার আপন প্রথম প্রেমকে পুনরুজ্জীবিত করায় সাহায্য করতে পারে?

যেকেউ যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে, তাদের প্রত্যেককে প্রথমে নিজেদের “পরীক্ষা” বা প্রমাণ করতে হবে যে, “ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।” (রোমীয় ১২:১, ২) এর মধ্যে বাইবেলের সত্য শেখা জড়িত। যে-বিষয়টা একজন ব্যক্তিকে দৃঢ়প্রত্যয়ী করে যে, যিহোবার সাক্ষিরা সত্য বিষয় শিক্ষা দেয়, অন্য ব্যক্তিকে হয়তো অন্য আরেকটা বিষয় দৃঢ়প্রত্যয়ী করাতে পারে। কেউ কেউ স্মরণ করে যে, বাইবেল থেকে তারা যখন ঐশিক নাম সম্বন্ধে পড়েছিল বা যখন তারা মৃতদের প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে বুঝেছিল, তখন তাদের জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল। (যাত্রা ৩:১৫; উপ. ৯:৫, ১০) কারো কারো কাছে, যিহোবার লোকেদের মধ্যে বিরাজমান প্রেম তাদের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) এ ছাড়া, অন্যেরা জগতের অংশ না হওয়া বলতে কী বোঝায়, সেই বিষয়ের ওপর যুক্তি করেছিল। তারা এই উপসংহারে পৌঁছেছিল যে, সত্য খ্রিস্টানরা রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াতে বা জাতিগত কোনো যুদ্ধে অংশ নিতে পারে না।—যিশা. ২:৪; যোহন ৬:১৫; ১৭:১৪-১৬.

অনেকের জন্য এগুলো ও অন্যান্য যুক্তি ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রথম প্রেমকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। কী আপনাকে সত্যের ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিল, তা মনে করার জন্য সময় করে নিন। আপনি হলেন স্বতন্ত্র পরিস্থিতি ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন ব্যক্তি, তাই যিহোবাকে ভালবাসার ও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর বিশ্বাস করার মৌলিক কারণগুলো হয়তো অন্যদের চেয়ে আপনারটা আলাদা হবে। খুব সম্ভবত, সেই একই কারণগুলো আজকেও আপনার কাছে একইরকম উপযুক্ত, যতখানি আপনি প্রথম যখন সেই বিষয়গুলো সম্বন্ধে শিখেছিলেন, তখন ছিল। সত্য বদলে যায়নি। তাই, সেই চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলোকে পুনরালোচনা করা এক অর্থে সত্যের প্রতি আপনার প্রথম প্রেমকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:১৫১, ১৫২; ১৪৩:৫.

আপনার ভিত্তিকে আরও দৃঢ় করুন

৭. কেন সত্যের প্রতি আমাদের প্রথম প্রেমকে দৃঢ় করা উচিত এবং কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

আপনি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার সময় থেকে সম্ভবত আপনার জীবনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সত্যের প্রতি আপনার প্রথম প্রেম গুরুত্বপূর্ণ ছিল কিন্তু সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার বিশ্বাসকে পরীক্ষায় ফেলে এমন নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য আপনার আরও গভীর প্রেমের প্রয়োজন ছিল। তবে, যিহোবা আপনাকে শক্তি জুগিয়েছিলেন। (১ করি. ১০:১৩) তাই, বছরের পর বছর ধরে আপনার অভিজ্ঞতাগুলোও আপনার কাছে মূল্যবান। সেগুলো আপনাকে আপনার প্রথম প্রেমকে আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করেছে আর এই অভিজ্ঞতাগুলোর মাধ্যমে আপনি নিজে ঈশ্বরের উত্তম ও প্রীতিজনক ইচ্ছা পরীক্ষা বা প্রমাণ করে দেখতে পারেন।—যিহো. ২৩:১৪; গীত. ৩৪:৮.

৮. কীভাবে যিহোবা নিজেকে মোশির কাছে শনাক্ত করেছিলেন আর কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরকে আরও অন্তরঙ্গভাবে জানতে পেরেছিল?

উদাহরণস্বরূপ, যখন যিহোবা ইস্রায়েলীয়দেরকে মিশরের দাসত্ব থেকে উদ্ধার করার বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছিলেন, সেই সময় তারা যে-পরিস্থিতির মধ্যে ছিল, তা বিবেচনা করুন। ঈশ্বর নিজেকে মোশির কাছে এই বলে শনাক্ত করেছিলেন: “আমি যে আছি সেই আছি [“আমি যা হতে চাই, তা-ই হই,” NW]।” (যাত্রা. ৩:৭, ৮, ১৩, ১৪) আসলে যিহোবা বলছিলেন যে, তাঁর লোকেদের মুক্ত করার জন্য যে-ভূমিকাই গ্রহণ করার প্রয়োজন হোক, তিনি তা গ্রহণ করবেন। পরবর্তী সময়ে ঘটা ঘটনাগুলোতে এবং পরিস্থিতির প্রয়োজনে, ইস্রায়েলীয়রা দেখেছিল যে যিহোবা তাঁর ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক—সর্বশক্তিমান, বিচারক, নেতা, উদ্ধারকর্তা, যোদ্ধা এবং জোগানদাতা হিসেবে নিজেকে—প্রকাশ করেছিলেন।—যাত্রা. ১২:১২; ১৩:২১; ১৪:২৪-৩১; ১৬:৪; নহি. ৯:৯-১৫.

৯, ১০. কোন ধরনের পরিস্থিতি একজন ব্যক্তিকে ঈশ্বরকে জানতে সাহায্য করতে পারে আর এই অভিজ্ঞতাগুলো স্মরণ করা কেন ভাল?

আপনার পরিস্থিতি প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের পরিস্থিতির চেয়ে ভিন্ন। তা সত্ত্বেও, সম্ভবত আপনার এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যেগুলো আপনাকে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিল যে, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আপনার প্রতি আগ্রহী, যা আপনার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল। সম্ভবত যিহোবা কোনো না কোনোভাবে নিজেকে একজন জোগানদাতা, সান্ত্বনাকারী বা শিক্ষক হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৩০:২০খ, ২১.) কিংবা আপনি হয়তো আপনার প্রার্থনার এক স্পষ্ট উত্তর পেয়েছিলেন বলে উপলব্ধি করেছিলেন। আপনি হয়তো এক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন আর এরপর একজন সহখ্রিস্টান আপনাকে সাহায্য জুগিয়েছিলেন। কিংবা ব্যক্তিগত অধ্যয়ন হয়তো উপযুক্ত শাস্ত্রপদগুলোকে আপনার মনোযোগে নিয়ে এসেছিল।

১০ আপনাকে যদি এই অভিজ্ঞতাগুলোর কথা কাউকে বলতে হয়, তাহলে কেউ কেউ হয়তো আপনার মতো এগুলো শুনে প্রভাবিত না-ও হতে পারে। সর্বোপরি, ঘটনাগুলো কোনো অলৌকিক বিষয় ছিল না। কিন্তু, আপনি সেগুলোকে খুবই অর্থপূর্ণ হিসেবে দেখেছিলেন। হ্যাঁ, যিহোবা আপনার জন্য ঠিক তা-ই প্রমাণিত হয়েছিলেন, যা হওয়া প্রয়োজন ছিল। সত্যে আপনি কত সময় ধরে আছেন, তা বিবেচনা করুন। আপনি কি এমন কয়েকটা ঘটনার কথা মনে করতে পারেন, যখন আপনি আপনার জীবনে যিহোবার ব্যক্তিগত যত্নের বিষয় উপলব্ধি করেছিলেন? যদি করে থাকেন, তাহলে সেই ঘটনাগুলো ও সেগুলো আপনার মধ্যে যে-অনুভূতি এনে দিয়েছিল তা স্মরণ করা, আপনার হৃদয়ে যিহোবার প্রতি সেই একই ভালবাসার অনুভূতিকে উদ্দীপিত করতে পারে, যা আপনি তখন অনুভব করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন। সেগুলো নিয়ে ধ্যান করুন। সেগুলো হচ্ছে প্রমাণ যে, যিহোবা আপনার প্রতি ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী এবং আর কেউই সেই দৃঢ়প্রত্যয়কে আপনার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে না।

আত্মপরীক্ষা করুন

১১, ১২. সত্যের প্রতি একজন খ্রিস্টানের প্রেম হ্রাস পাওয়ার কারণ কী হতে পারে এবং যিশু কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?

১১ যদি আপনি ঈশ্বরের জন্য ও সত্যের জন্য একইরকম প্রেম অনুভব না করেন, যা একসময় আপনি অনুভব করেছিলেন, তাহলে তার কারণ এই নয় যে, কোনোকিছু ঈশ্বরের দিক থেকে পালটে গিয়েছে। যিহোবা কখনোই পরিবর্তিত হন না। (মালাখি ৩:৬; যাকোব ১:১৭) তিনি সেই তখনও আপনার প্রতি আগ্রহী ছিলেন আর এখনও আপনার প্রতি একইরকম আগ্রহী। তাহলে, যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনোকিছু যদি পরিবর্তিত হয়ে থাকে, সেটা কী হতে পারে? এইরকম কি হতে পারে যে, আপনি অতিরিক্ত চাপের মধ্যে আছেন বলে মনে করেন বা উদ্বেগের কারণে অত্যন্ত জর্জরিত বোধ করেন? সম্ভবত অতীতে আপনি আরও ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করতেন, আরও অধ্যবসায়ের সঙ্গে অধ্যয়ন করতেন, আরও ঘন ঘন ধ্যান করতেন। এখন আপনি প্রচারে যতটা উদ্যোগী ও মণ্ডলীর সভাগুলোতে যতটা নিয়মিত, তার চেয়ে কি আগে আরও বেশি ছিলেন?—২ করি. ১৩:৫.

১২ আপনি হয়তো নিজে উক্ত প্রবণতাগুলোকে শনাক্ত করতে পারবেন না কিন্তু যদি পারেন, তাহলে কী আপনাকে এইরকম পরিবর্তন করার দিকে পরিচালিত করেছে? উপযুক্ত চিন্তাগুলো, যেমন আপনার পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ভরণপোষণ জোগানো, আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া বা সেইরকম বিষয়গুলো কি যিহোবার দিন যে নিকটবর্তী, সেই বিষয়ে আপনার তৎপরতার মনোভাবকে কমিয়ে দিয়েছে? যিশু তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন: ‘আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে; কেননা সেই দিন সমস্ত ভূতলনিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে। কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে পার।’—লূক ২১:৩৪-৩৬.

১৩. যাকোব ঈশ্বরের বাক্যকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন?

১৩ অনুপ্রাণিত বাইবেল লেখক যাকোব সহবিশ্বাসীদের ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে সৎভাবে আত্মপরীক্ষা করতে জোরালো অনুরোধ জানিয়েছিলেন। যাকোব লিখেছিলেন: “বাক্যের কার্য্যকারী হও, আপনাদিগকে ভুলাইয়া শ্রোতামাত্র হইও না। কেননা যে কেহ বাক্যের শ্রোতামাত্র, কার্য্যকারী নয়, সে এমন ব্যক্তির তুল্য, যে দর্পণে আপনার স্বাভাবিক মুখ দেখে; কারণ সে আপনাকে দেখিল, চলিয়া গেল, আর সে কিরূপ লোক, তাহা তখনই ভুলিয়া গেল। কিন্তু যে কেহ হেঁট হইয়া স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত করে, ও তাহাতে নিবিষ্ট থাকে, ভুলিয়া যাইবার শ্রোতা না হইয়া কার্য্যকারী হয়, সেই আপন কার্য্যে ধন্য হইবে।”—যাকোব ১:২২-২৫.

১৪, ১৫. (ক) কীভাবে বাইবেল আপনাকে আপনার আধ্যাত্মিক অবস্থাকে উন্নত করায় সাহায্য করতে পারে? (খ) কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আপনি চিন্তা করতে পারেন?

১৪ একজন ব্যক্তি ফিটফাট আছেন কি না, তা দেখার জন্য দর্পণ বা আয়না ব্যবহার করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যদি দেখেন যে, তার টাই কুঁচকে আছে, তাহলে তিনি সেটাকে ঠিক করতে পারেন। একজন মহিলা যদি দেখেন যে, তার চুল এলোমেলো হয়ে আছে, তাহলে তিনি তা আঁচড়াতে পারেন। অনুরূপভাবে, শাস্ত্র আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে সাহায্য করে যে, আমরা কেমন। আমাদের কেমন হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে বাইবেল যা বলে, সেটার সঙ্গে যখন আমরা নিজেদের তুলনা করি, তখন আমরা এটিকে একটা আয়না হিসেবে ব্যবহার করছি। কিন্তু, কোনো ত্রুটি দেখে আমরা যদি সেটাকে শুধরানোর জন্য কিছুই না করি, তাহলে আয়না দেখে কী লাভ হবে? আমরা বিজ্ঞ হব, যদি আমরা ঈশ্বরের “সিদ্ধ ব্যবস্থায়” যা দেখি, সেটার ভিত্তিতে কাজ করে চলি, এটার “কার্য্যকারী” হই। তাই, যেকেউ উপলব্ধি করে যে, যিহোবা ও সত্যের জন্য তাদের প্রথম প্রেম হ্রাস পেয়ে গিয়েছে, তাহলে তাদের এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা উচিত: ‘জীবনে আমি কোন চাপগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি আর আমি সেই বিষয়ে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি? অতীতে আমি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি? কোনোকিছু কি বদলে গিয়েছে?’ যদি এই ধরনের আত্মপরীক্ষা কোনো দুর্বলতাকে প্রকাশ করে, তাহলে সেগুলোকে উপেক্ষা করবেন না। যদি কোনো রদবদল করার প্রয়োজন হয়, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই সেগুলো করার চেষ্টা করুন।—ইব্রীয় ১২:১২, ১৩.

১৫ এইভাবে ধ্যান করা আপনাকে আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য যুক্তিসংগত লক্ষ্যগুলো স্থাপন করতে সাহায্য করতে পারে। প্রেরিত পৌল অনুপ্রাণিত হয়ে তার সহকর্মী তীমথিয়কে তার পরিচর্যাকে উন্নত করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। পৌল এই যুবক ব্যক্তিকে জোরালো অনুরোধ করেছিলেন: “এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।” আমাদেরও ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে চিন্তা করা উচিত যে, আমাদের পক্ষে কীরকম উন্নতি করা সম্ভব।—১ তীম. ৪:১৫.

১৬. শাস্ত্রের আলোকে আত্মপরীক্ষা করার সময় কোন বিপদের বিষয়ে আপনার সতর্ক হওয়া প্রয়োজন?

১৬ যেকোনো সৎ আত্মপরীক্ষা কিছু দুর্বলতাকে প্রকাশ করে। সেই বিষয়টা একজনকে নিরুৎসাহিত মনে করাতে পারে কিন্তু আপনার প্রতি সেটা ঘটতে দেবেন না। সর্বোপরি, আত্মপরীক্ষা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে কোথায় উন্নতি করার প্রয়োজন আছে, সেটা শনাক্ত করা। অবশ্য, অসিদ্ধতার কারণে একজন খ্রিস্টানকে শয়তান অযোগ্য মনে করাতে পারে। বস্তুতপক্ষে, এইরকম দাবি করা হয়েছিল যে, ঈশ্বর তাঁকে সেবা করার সমস্ত প্রচেষ্টাকে অবজ্ঞার চোখে দেখেন। (ইয়োব ১৫:১৫, ১৬; ২২:৩) সেটা হচ্ছে এক মিথ্যা, যেবিষয়ে যিশু প্রবলভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন; বরং ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেককে মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেন। (পড়ুন, মথি ১০:২৯-৩১.) এর পরিবর্তে, আপনার অসিদ্ধতা সম্বন্ধে অবগত থাকা, যিহোবার সাহায্যে নম্রভাবে আরও ভাল কিছু করার সংকল্পকে উন্নত করতে পারে। (২ করি. ১২:৭-১০) যদি অসুস্থতা বা আপনার বয়স সেই কারণ হয়, যা আপনাকে কাজ করার ক্ষেত্রে সীমিত করে দেয়, তাহলে এমন লক্ষ্যগুলো স্থাপন করুন, যা যুক্তিযুক্ত, তবে আপনার প্রেমকে পরিত্যাগ করবেন না বা আপনার প্রেমকে হ্রাস পেতে দেবেন না।

কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো অনেক বিষয় রয়েছে

১৭, ১৮. আপনার প্রথমে যে-প্রেম ছিল, সেটাকে দৃঢ় করার মাধ্যমে কোন উপকারগুলো পাওয়া যায়?

১৭ প্রথমে আপনার যে-প্রেমের ভিত্তি ছিল, সেটাকে ক্রমাগত দৃঢ় করার মাধ্যমে প্রচুর উপকার পাওয়া যায়। আপনি আপনার ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞানকে এবং এই প্রেমপূর্ণ নির্দেশনার জন্য আপনার উপলব্ধিকে গভীর করতে পারেন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২:১-৯; ৩:৫, ৬.) “[সদাপ্রভুর শাসন সকল] পালন করিলে মহাফল হয়,” গীতরচক বলেছিলেন। “সদাপ্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বসনীয়, অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক।” অধিকন্তু, “ধন্য তাহারা, যাহারা আচরণে সিদ্ধ, যাহারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-পথে চলে।”—গীত. ১৯:৭, ১১; ১১৯:১.

১৮ আপনি নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, অনেক উত্তম বিষয় রয়েছে, যেজন্য আপনার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। জগতে যা হচ্ছে না হচ্ছে, সেটার পিছনে যে-কারণগুলো রয়েছে, তা আপনি বুঝতে পারেন। আপনি আধ্যাত্মিক যত্ন ও মনোযোগ থেকে উপকার লাভ করতে পারেন, যা ঈশ্বর তাঁর লোকেদের আজকে প্রদান করছেন। কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনিও এই কারণে কৃতজ্ঞ বোধ করবেন যে, যিহোবা আপনাকে তাঁর বিশ্বব্যাপী মণ্ডলীতে আকর্ষণ করেছেন এবং তাঁর একজন সাক্ষি হওয়ার বিশেষ সুযোগ প্রদান করেছেন। আপনার আশীর্বাদগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হোন! যদি আপনি সেগুলোর একটা তালিকা তৈরি করেন, তাহলে এটা সম্ভবত এক দীর্ঘ তালিকা হবে। তা করা নিঃসন্দেহে আপনাকে এই পরামর্শ কাজে লাগাতে সাহায্য করবে: “তোমার যাহা আছে, তাহা দৃঢ়রূপে ধারণ কর।”—প্রকা. ৩:১১.

১৯. ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের ওপর ধ্যান করা ছাড়াও, আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে বজায় রাখার ক্ষেত্রে অপরিহার্য বিষয় কী?

১৯ সময়ের প্রবাহে আপনার বিশ্বাস কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা নিয়ে ধ্যান করা হচ্ছে শুধুমাত্র একটা পদক্ষেপ, যা আপনাকে সেই বিষয়টা দৃঢ়রূপে ধারণ করায় সাহায্য করতে পারে, যা আপনার রয়েছে। এই পত্রিকা আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে অন্যান্য অপরিহার্য বিষয়ের দিকে বার বার মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রার্থনা, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ এবং উদ্যোগের সঙ্গে জনসাধারণ্যের পরিচর্যায় রত হওয়া। এই বিষয়গুলো আপনাকে প্রথমে আপনার যে-প্রেম ছিল, সেটাকে ক্রমাগত পুনরুজ্জীবিত করতে, সতেজ করতে ও সেটাকে দৃঢ় করায় সাহায্য করতে পারে।—ইফি. ৫:১০; ১ পিতর ৩:১৫; যিহূদা ২০, ২১.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• যিহোবাকে ভালবাসতে শুরু করার বিষয়ে আপনার কারণগুলো কীভাবে আপনার জন্য এখন উৎসাহের এক উৎস হতে পারে?

• বছরের পর বছর ধরে ঘটা আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে চিন্তা করা আপনাকে কোন বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করতে পারে?

• ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভালবাসার বিষয়ে কেন আপনার আত্মপরীক্ষা করা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

সত্যের কোন বিষয়টা আপনাকে আকৃষ্ট ও দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিল?

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি নিজের মধ্যে এমন বিষয়গুলো দেখেন, যেগুলো রদবদল করা প্রয়োজন?