সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নিন

যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নিন

যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নিন

“ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।”—১ যোহন ৫:৩.

১, ২. (ক) কেন কর্তৃপক্ষের প্রতি বশীভূত হওয়ার ধারণা আজকে অনেকের কাছে অপছন্দের? (খ) যারা কোনোকিছু মেনে নিতে চায় না, তারা কি আসলেই স্বাধীন? ব্যাখ্যা করুন।

 “কর্তৃত্ব” শব্দটি বর্তমানে জনপ্রিয় শব্দ নয়। অন্য একজন ব্যক্তির ইচ্ছাকে মেনে নেওয়ার ধারণাকে অনেকে অপছন্দ করবে। “আমি কী করব না করব, তা অন্যকে বলে দিতে হবে না,” এইরকম কথা সেই লোকেদের মনোভাবকে প্রকাশ করে, যারা অন্যের কর্তৃত্বকে মেনে নিতে চায় না। কিন্তু, এই লোকেরা কি আসলেই স্বাধীন? কখনোই না! অধিকাংশ লোকই নিছক সেই অগণিত ব্যক্তিদের মানগুলোকে অনুসরণ করে, যারা “এই যুগের অনুরূপ।” (রোমীয় ১২:২) স্বাধীন হওয়া তো দূরের কথা, খ্রিস্টান প্রেরিত পিতরের ভাষায় তারা আসলে “ক্ষয়ের দাস।” (২ পিতর ২:১৯) তারা “এই জগতের যুগ অনুসারে, আকাশের কর্ত্তৃত্বাধিপতির অনুসারে,” অর্থাৎ শয়তান দিয়াবলের অনুসারে চলে।—ইফি. ২:২.

একজন লেখক গর্ব করে বলেছিলেন: “আমি আমার বাবামাকে বা কোনো যাজককে বা একজন ধর্মীয় পরিচারককে কিংবা এমনকি বাইবেলকে আমার জন্য কোনটা ঠিক, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেব না।” এটা ঠিক যে, কেউ কেউ হয়তো তাদের কর্তৃত্বের অপব্যবহার করে আর তারা আমাদের বাধ্যতা পাওয়ার যোগ্য নয়। কিন্তু, নির্দেশনার যে প্রয়োজন রয়েছে, সেই বিষয়কে সরাসরি অস্বীকার করাই কি উত্তর? খবরের কাগজের শিরোনামগুলোর দিকে এক ঝলক তাকানো অত্যন্ত ভয়াবহ উত্তর জোগায়। এটা খুবই দুঃখজনক যে, মানুষের যখন নির্দেশনার এত বেশি প্রয়োজন, তখন অধিকাংশই এটাকে গ্রহণ করতে চায় না।

কর্তৃত্ব সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি

৩. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা কীভাবে দেখিয়েছিল যে, তারা অন্ধের মতো মানব কর্তৃপক্ষের বশীভূত হয়নি?

খ্রিস্টান হিসেবে জগতের চেয়ে আমাদের এক ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। এমন নয় যে, আমাদেরকে যা বলা হয়, অন্ধের মতো আমরা তা-ই বিশ্বাস করি। এর বিপরীতে, মাঝে মাঝে আমাদের অন্যের ইচ্ছাকে মেনে নেওয়া প্রত্যাখ্যান করতে হয়, এমনকি যদি তারা কর্তৃত্বপূর্ণ পদেও থাকে। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের বেলায়ও এটা সত্য ছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিতদের যখন প্রচার বন্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা মহাযাজক ও মহাসভার অন্যান্য পদমর্যাদার কর্তৃত্বপরায়ণ লোকেদের দাবির কাছে নতিস্বীকার করেনি। তারা মানব কর্তৃপক্ষের কথা মেনে চলার জন্য সঠিক মনোভাব পরিত্যাগ করেনি।—পড়ুন, প্রেরিত ৫:২৭-২৯.

৪. ইব্রীয় শাস্ত্রের কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে অনেকে এক অপ্রিয় জীবনধারা অনুসরণ করেছিল?

প্রাক্‌-খ্রিস্টীয় যুগে ঈশ্বরের অসংখ্য দাস একইরকম দৃঢ়সংকল্প নিয়ে কাজ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, মোশি “ফরৌণের কন্যার পুত্ত্র বলিয়া আখ্যাত হইতে অস্বীকার করিলেন . . . ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ মনোনীত করিলেন,” এমনকি যদিও তা করা ‘রাজার কোপকে’ জাগিয়ে তুলেছিল। (ইব্রীয় ১১:২৪, ২৫, ২৭) যোষেফ পোটীফরের স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টাকে প্রতিরোধ করেছিলেন, যার প্রতিশোধ নেওয়ার ও যোষেফের ক্ষতি করার ক্ষমতা ছিল। (আদি. ৩৯:৭-৯) দানিয়েল “মনে স্থির করিলেন যে, তিনি রাজার আহারীয় দ্রব্যে . . . আপনাকে অশুচি করিবেন না,” যদিও এই ব্যাপারে তার অবস্থান বাবিলের নপুংসকদের অধ্যক্ষের জন্য মেনে নেওয়া এতটা সহজ ছিল না। (দানি. ১:৮-১৪) এই ধরনের উদাহরণ দেখায় যে, পরিণতি যা-ই হোক না কেন, অতীতে ঈশ্বরের দাসেরা যা সঠিক সেটার পক্ষে এক দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারা শুধুমাত্র মানুষের কাছে অনুমোদন পাওয়ার জন্য তাদের ইচ্ছার বশীভূত হয়নি; আমাদেরও তা করা উচিত নয়।

৫. কর্তৃত্বের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে জগতের চেয়ে আলাদা?

আমাদের সাহসী পদক্ষেপকে নিছক একগুঁয়েমি বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়; কিংবা আমরা সেইরকম বিদ্রোহীদের মতো নই, যারা দেখাতে চায় যে, তারা রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে একমত নয়। এর পরিবর্তে, আমরা যেকোনো মানুষের চেয়ে বরং যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নিতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। যখন মানুষের আইনের সঙ্গে ঈশ্বরের আইনের সংঘাত ঘটে, তখন আমরা কী করব, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয় না। প্রথম শতাব্দীর প্রেরিতদের মতো, আমরা মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করি।

৬. যিহোবার আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হওয়া কেন সবসময় সর্বোত্তম?

ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে মেনে নিতে কী আমাদের সাহায্য করেছে? আমরা হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদে উল্লেখিত কথাগুলোর সঙ্গে একমত: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” আমরা বিশ্বাস করি যে, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে যা চান, তা শেষপর্যন্ত আমাদের উপকার করবে। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২, ১৩.) বাস্তবিকই, যিহোবা নিজেকে ইস্রায়েলীয়দের কাছে এভাবে বর্ণনা করেছিলেন, “আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।” এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “আহা! তুমি কেন আমার আজ্ঞাতে অবধান কর নাই? করিলে তোমার শান্তি নদীর ন্যায়, তোমার ধার্ম্মিকতা সমুদ্র-তরঙ্গের ন্যায় হইত।” (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) আমরা এই কথাগুলোতে বিশ্বাস বা নির্ভর করি। আমরা নিশ্চিত যে, ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হওয়া সবসময়ই আমাদের সর্বোচ্চ মঙ্গলের জন্য।

৭. ঈশ্বরের বাক্যে বলা কোনো আজ্ঞা যদি আমরা পুরোপুরি বুঝে উঠতে না পারি, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?

এমনকি আমরা যদি যিহোবার বাক্যে লিপিবদ্ধ কিছু চাহিদা পুরোপুরিভাবে বুঝে উঠতে না-ও পারি, তবুও আমরা তাঁর কর্তৃত্বকে মেনে নিই ও তাঁর বাধ্য হই। এটা কোনো অন্ধ বিশ্বাস নয়; কিন্তু নির্ভরতাকে ইঙ্গিত করে। এটা আমাদের এই আন্তরিক আস্থাকে প্রতিফলিত করে যে, যিহোবা জানেন আমাদের জন্য কোনটা ভাল। আমাদের বাধ্যতা আমাদের ভালবাসারও এক প্রকাশ কারণ প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।” (১ যোহন ৫:৩) কিন্তু, আমাদের বাধ্যতার আরেকটা দিক রয়েছে, যেটাকে আমাদের উপেক্ষা করা উচিত নয়।

আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল প্রশিক্ষিত করা

৮. ‘জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল পটু’ করা কীভাবে যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

বাইবেল আমাদের বলে যে, আমাদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল . . . সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু” বা প্রশিক্ষিত করা উচিত। (ইব্রীয় ৫:১৪) তাই, আমাদের লক্ষ্য কেবল গতানুগতিকভাবে ঈশ্বরের আইনের বাধ্য হওয়া নয়; এর পরিবর্তে, আমরা যিহোবার মানগুলোর ওপর ভিত্তি করে “সদসৎ বিষয়ের বিচারণে” বা সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে সমর্থ হতে চাই। যিহোবার পথে যে-প্রজ্ঞা রয়েছে, তা আমরা দেখতে চাই, যাতে আমরা গীতরচকের মতো বলতে পারি: “তোমার ব্যবস্থা আমার অন্তরে আছে।”—গীত. ৪০:৮.

৯. কীভাবে আমরা আমাদের বিবেককে যিহোবার মানগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে পারি আর তা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

গীতরচক যেমন করেছিলেন, তেমনই ঈশ্বরের আইনগুলোকে উপলব্ধি করার জন্য বাইবেল থেকে আমরা যা পড়ি, তা নিয়ে আমাদের ধ্যান করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যখন আমরা যিহোবার নির্দিষ্ট কোনো চাহিদা সম্বন্ধে জানতে পাই, তখন আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘কেন এই আজ্ঞা বা নীতি বিজ্ঞ? এটার বাধ্য হওয়া কেন আমার জন্য সবচেয়ে মঙ্গলজনক? এই ব্যাপারে যারা ঈশ্বরের পরামর্শকে অবজ্ঞা করেছে, তাদের ওপর কোন মন্দ পরিণতিগুলো এসেছে?’ এভাবে আমাদের বিবেক যখন যিহোবার পথের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়, তখন আমরা সম্ভবত এমন সিদ্ধান্তগুলো নিই, যেগুলো তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রাখে। আমরা ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] ইচ্ছা কি, তাহা বুঝিতে’ সমর্থ হই ও এরপর বাধ্যতার পথ অনুসরণ করি। (ইফি. ৫:১৭) এটা সবসময় সহজ নয়।

শয়তান ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে

১০. একটা ক্ষেত্র কী, যেখানে শয়তান ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেছে?

১০ শয়তান দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে এসেছে। তার স্বাধীনচেতা মনোভাব বিভিন্ন উপায়ে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, বিবাহের ঐশিক ব্যবস্থার প্রতি সম্মানের অভাব থাকার বিষয়টা বিবেচনা করুন। কিছু দম্পতি বিয়ে না করেই একসঙ্গে থাকা বেছে নেয় আবার অন্যেরা তাদের সঙ্গীর কাছ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ফাঁক খোঁজে। এই উভয় দলের লোকই হয়তো একজন বিখ্যাত অভিনেত্রীর সঙ্গে একমত হবে, যিনি দাবি করেছিলেন: “নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই শুধুমাত্র একজন সঙ্গীর সঙ্গে বাস করা অসম্ভব।” তিনি আরও বলেছিলেন: “আমার জানামতে এমন একজনও নেই, যিনি বিশ্বস্ত থাকেন বা বিশ্বস্ত থাকতে চান।” নিজের ব্যর্থ সম্পর্কের কথা মনে করে, একজন জনপ্রিয় অভিনেতা একই ধরনের কথা বলেছিলেন: “আমাদের বাকি জীবন শুধুমাত্র একজন সঙ্গীর সঙ্গেই কাটিয়ে দেওয়া আসলে আমাদের স্বভাব কি না, সেই ব্যাপারে আমি সন্দিহান।” আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘বিয়ের ব্যাপারে আমি কি যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নিই, নাকি আমার চিন্তাধারার ওপর জগতের শিথিল মনোভাব প্রভাব ফেলেছে?’

১১, ১২. (ক) তরুণ-তরুণীদের জন্য যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নেওয়া কেন কঠিন হতে পারে? (খ) যিহোবার আইন ও নীতিগুলোকে অসম্মান করার দুঃখজনক পরিণতির একটা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন।

১১ তুমি কি যিহোবার সংগঠনে একজন তরুণ বা তরুণী? যদি হও, তাহলে যিহোবার কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ণ করার ব্যাপারে শয়তানের প্রচেষ্টার তুমি হচ্ছ এক বিশেষ লক্ষ্যবস্তু। “যৌবনকালের অভিলাষ” ও সেইসঙ্গে তোমার সঙ্গীসাথিদের কাছ থেকে আসা চাপ হয়তো তোমাকে এইরকম মনে করাতে পারে যে, ঈশ্বরের আইনগুলো দুর্বহ। (২ তীম. ২:২২) সেইরকম চিন্তা মনে আসতে দিও না। ঈশ্বরের মানগুলোর পিছনে যে-প্রজ্ঞা রয়েছে, তা দেখার আপ্রাণ চেষ্টা করো। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল তোমাকে “ব্যভিচার হইতে পলায়ন” করতে বলে। (১ করি. ৬:১৮) এই ক্ষেত্রেও নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করো: ‘কেন এই আজ্ঞা বিজ্ঞ? এই ব্যাপারে বাধ্যতা কীভাবে আমাকে উপকৃত করবে?’ তুমি হয়তো এমন কিছুজনকে চেনো, যারা ঈশ্বরের পরামর্শকে অবজ্ঞা করেছে ও এরপর সেই ভুলের জন্য চরম মূল্য দিয়েছে। তারা কি এখন সত্যিই সুখী? যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সময় তারা যে-আনন্দ উপভোগ করেছিল, তার চেয়ে তাদের কি আরও ভাল জীবন রয়েছে? তারা কি সত্যিই সুখের কিছু রহস্য পেয়েছে, যা ঈশ্বরের বাকি দাসেরা উপলব্ধি করতে পারে না?—পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:১৪.

১২ কিছুদিন আগে শ্যারন নামে একজন খ্রিস্টান বোনের করা মন্তব্যগুলো বিবেচনা করুন: “যিহোবার আইনকে অবজ্ঞা করার কারণে আমি মারাত্মক এইডস রোগের দ্বারা সংক্রামিত হয়েছি। যিহোবাকে সেবা করার সময়কার সুখী জীবনের কথা আমার প্রায়ই মনে পড়ে।” তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, যিহোবার আইন ভঙ্গ করা বোকামি আর তার সেগুলোকে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে মূল্যায়ন করা উচিত ছিল। যিহোবার আইন হচ্ছে আমাদের সুরক্ষার জন্য। শ্যারন ওপরের কথাগুলো লেখার মাত্র সাত সপ্তাহ পর মারা গিয়েছেন। তার দুঃখজনক অভিজ্ঞতা যেমন দেখায় যে, যারা এই দুষ্ট ব্যবস্থার অংশ হয়, তাদেরকে দেওয়ার মতো ভাল কিছুই শয়তানের নেই। ‘মিথ্যার পিতা’ হিসেবে সে অনেক প্রতিজ্ঞা করে কিন্তু সেগুলো পূর্ণ হয় না, ঠিক যেমনটা হবাকে সে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিল, সেই ক্ষেত্রে হয়েছিল। (যোহন ৮:৪৪) সত্যিই, যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নেওয়া সবসময়ই সর্বোত্তম।

এক স্বাধীনচেতা মনোভাবের বিরুদ্ধে সাবধান হোন

১৩. একটা ক্ষেত্র কী, যেখানে আমাদের এক স্বাধীনচেতা মনোভাবের বিরুদ্ধে সাবধান হতে হবে?

১৩ যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে এক স্বাধীনচেতা মনোভাবের বিরুদ্ধে আমাদের সাবধান হতে হবে। এক উদ্ধত মনোভাব আমাদের এইরকম মনে করাতে পারে যে, আমাদের কারো কাছ থেকে নির্দেশনার প্রয়োজন নেই। উদাহরণস্বরূপ, আমরা হয়তো ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দেয়, তাদের পরামর্শকে অগ্রাহ্য করতে পারি। ঈশ্বর এমন এক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেটার মাধ্যমে এক বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণী উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক খাদ্য সরবরাহ করে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) আমাদের নম্রভাবে স্বীকার করা উচিত যে, আজকে যিহোবার লোকেদের যত্ন নেওয়ার জন্য এটা হচ্ছে তাঁর উপায়। বিশ্বস্ত প্রেরিতদের মতো হোন। কিছু শিষ্য যখন বিঘ্ন পেয়েছিল, তখন যিশু প্রেরিতদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তোমরাও কি চলিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছে?” উত্তরে পিতর বলেছিলেন: “প্রভু কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে।”—যোহন ৬:৬৬-৬৮.

১৪, ১৫. বাইবেলের পরামর্শের প্রতি কেন আমাদের নম্রভাবে বশীভূত হওয়া উচিত?

১৪ যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নেওয়ার সঙ্গে তাঁর বাক্যের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া পরামর্শের প্রতি সাড়া দেওয়া জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস আমাদেরকে ‘জাগিয়া থাকিতে ও মিতাচারী হইতে’ পরামর্শ দিয়ে আসছে। (১ থিষল. ৫:৬) এই ধরনের পরামর্শ এই শেষকালে খুবই উপযুক্ত, যেখানে অনেকে “আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়।” (২ তীম. ৩:১, ২) এই ধরনের জনপ্রিয় মনোভাব দ্বারা কি আমরা প্রভাবিত হতে পারি? হ্যাঁ, হতে পারি। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এমন লক্ষ্যগুলো আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে ফেলতে পারে অথবা আমরা হয়তো বস্তুবাদিতাপূর্ণ এক মনোভাব গড়ে তুলতে পারি। (লূক ১২:১৬-২১) তাই, বাইবেলের পরামর্শকে মেনে নেওয়া ও শয়তানের জগতে বিদ্যমান স্বার্থপর জীবনধারাকে এড়িয়ে চলা কতই না বিজ্ঞতার কাজ!—১ যোহন ২:১৬.

১৫ বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর কাছ থেকে প্রাপ্ত আধ্যাত্মিক খাদ্য, স্থানীয় মণ্ডলীগুলোতে নিযুক্ত প্রাচীনদের মাধ্যমে বিতরিত হয়। বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয়: “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ নিকাশ দিতে হইবে বলিয়া তাঁহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করিতেছেন,—যেন তাঁহারা আনন্দপূর্ব্বক সেই কার্য্য করেন, আর্ত্তস্বরপূর্ব্বক না করেন; কেননা ইহা তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়।” (ইব্রীয় ১৩:১৭) এর মানে কি এই যে, মণ্ডলীর প্রাচীনরা ভুল করতে পারে না? অবশ্যই না! ঈশ্বর তাদের অসিদ্ধতাগুলোকে বরং যেকোনো মানুষের চেয়ে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পান। তা সত্ত্বেও, তিনি আশা করেন যেন আমরা বশীভূত হই। এমনকি যদিও তারা অসিদ্ধ, তবুও প্রাচীনদের সঙ্গে সহযোগিতা করা প্রমাণ দেয় যে, আমরা যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নিই।

নম্রতার গুরুত্ব

১৬. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে যিশুর প্রতি কীভাবে আমরা সম্মান দেখাতে পারি?

১৬ আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে, যিশু হলেন মণ্ডলীর প্রকৃত মস্তক। (কল. ১:১৮) এটা হচ্ছে একটা কারণ যে, কেন আমরা নিযুক্ত প্রাচীনদের নির্দেশনার প্রতি নম্রভাবে বশীভূত হই, তাদের ‘অতিশয় সমাদর করি।’ (১ থিষল. ৫:১২, ১৩) অবশ্য, মণ্ডলীর প্রাচীনরাও মণ্ডলীর উদ্দেশে তাদের নিজস্ব মতামত নয় কিন্তু ঈশ্বরের বার্তা প্রদান করার ব্যাপারে সতর্ক থেকে দেখাতে পারে যে, তারাও বশীভূত। তারা তাদের ব্যক্তিগত কিছু ধারণাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ‘যাহা লিখিত আছে, তাহা অতিক্রম করে না।’—১ করি. ৪:৬.

১৭. কেন এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনোভাব বিপদজনক?

১৭ মণ্ডলীর সমস্ত সদস্যের তাদের নিজস্ব গৌরব অনুসন্ধান করার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। (হিতো. ২৭:২) স্পষ্টতই, সেটা একজন নির্দিষ্ট শিষ্যের জন্য একটা ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যার সঙ্গে প্রেরিত যোহনের দেখা হয়েছিল। তিনি লিখেছিলেন: “তাহাদের প্রাধান্যপ্রিয় দিয়ত্রিফি আমাদিগকে গ্রাহ্য করে না। এই জন্য, যদি আমি আসি, তবে সে যে সকল কার্য্য করে, তাহা স্মরণ করাইব, কেননা সে দুর্ব্বাক্য দ্বারা আমাদের গ্লানি করে।” (৩ যোহন ৯, ১০) এর মধ্যে এমনকি আজকে আমাদের জন্যও এক শিক্ষা রয়েছে। আমাদের মধ্যে থাকা উচ্চাকাঙ্ক্ষার যেকোনো লেশ উপড়ে ফেলার উত্তম কারণ আমাদের রয়েছে। বাইবেল আমাদের বলে: “বিনাশের পূর্ব্বে অহঙ্কার, পতনের পূর্ব্বে মনের গর্ব্ব।” যারা ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে মেনে নেয়, তাদের অহংকার বা ঔদ্ধত্যের ফাঁদকে প্রতিরোধ করতে হবে, তা না হলে তা অপমানের দিকে পরিচালিত করতে পারে।—হিতো. ১১:২; ১৬:১৮.

১৮. কী আপনাকে যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নিতে সাহায্য করবে?

১৮ হ্যাঁ, জগতের স্বাধীনচেতা মনোভাবকে প্রতিরোধ করা ও যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নেওয়াকে আপনার লক্ষ্য করে তুলুন। যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে আপনার যে-বিশেষ সুযোগ রয়েছে, তা নিয়ে সময়ে সময়ে উপলব্ধি সহকারে ধ্যান করুন। আপনি ঈশ্বরের লোকেদের মাঝে রয়েছেন, তা হচ্ছে প্রমাণ যে, তিনি আপনাকে তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আকর্ষণ করেছেন। (যোহন ৬:৪৪) ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে কখনো হালকা করে দেখবেন না। জীবনের সমস্ত দিকে এটা দেখাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করুন যে, আপনি এক স্বাধীনচেতা মনোভাবকে প্রত্যাখ্যান করছেন এবং যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নিচ্ছেন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নেওয়ার সঙ্গে কী জড়িত?

• আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল প্রশিক্ষিত করা কীভাবে যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

• কোন কোন ক্ষেত্রে শয়তান ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে?

• যিহোবার কর্তৃত্বকে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে নম্রতা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

“মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে”

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের মানগুলো অনুসরণ করা সবসময় বিজ্ঞতার কাজ