সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যে-গুণগুলোকে আমাদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে

যে-গুণগুলোকে আমাদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে

যে-গুণগুলোকে আমাদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে

“ধার্ম্মিকতা, ভক্তি [“ঈশ্বরীয় ভক্তি,” NW], বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য্য, [এবং] মৃদুভাব, এই সকলের অনুধাবন কর।”—১ তীম. ৬:১১.

১. “অনুধাবন” শব্দটির অর্থ কী, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

 আপনি যখন “অনুধাবন” শব্দটি শোনেন, তখন আপনার মনে কোন বিষয়টা আসে? সম্ভবত আপনি মোশির দিনের কথা চিন্তা করেন, যখন মিশরীয় সেনাবাহিনী ইস্রায়েলের পিছনে “ধাবমান” হয়েছিল আর এর ফলে সূফ সাগরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। (যাত্রা. ১৪:২৩) অথবা আপনার হয়তো প্রাচীন ইস্রায়েলে দুর্ঘটনাক্রমে হত্যা করে ফেলেছেন এমন একজন ব্যক্তি যে-বিপদের মুখোমুখি হন, তা মনে পড়ে। তাকে নির্ধারিত ছয়টা আশ্রয় নগরের মধ্যে যেকোনো একটাতে দ্রুত যেতে হতো। নতুবা “রক্তের প্রতিশোধদাতা অন্তরে উষ্ণ হওয়াতে নরহন্তার পশ্চাৎ ধাবমান্‌ হইয়া . . . তাহাকে ধরিয়া সাংঘাতিক আঘাত করে।”—দ্বিতী. ১৯:৬.

২. (ক) কিছু খ্রিস্টানকে কোন পুরস্কার অনুধাবন করার জন্য ঈশ্বর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন? (খ) আজকে অধিকাংশ খ্রিস্টানের জন্য যিহোবা কোন আশা রেখেছেন?

উপরোক্ত বাইবেলের উদাহরণগুলোর বৈসাদৃশ্যে ইতিবাচক এই মনোভাবটা বিবেচনা করুন, যা প্রেরিত পৌলের ছিল: “লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে আমি খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের কৃত ঊর্দ্ধ্বদিক্‌স্থ আহ্বানের পণ পাইবার জন্য যত্ন করিতেছি।” (ফিলি. ৩:১৪) বাইবেল দেখায় যে, পৌলসহ ১,৪৪,০০০ জন অভিষিক্ত খ্রিস্টান সেই স্বর্গীয় জীবনের পুরস্কার লাভ করে। যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে তারা পৃথিবীতে হাজার বছর শাসন করবে। এই ধরনের ব্যক্তিদের ঈশ্বর কতই না অপূর্ব লক্ষ্য অনুধাবন করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন! কিন্তু, আজকে বেশির ভাগ সত্য খ্রিস্টানের ভিন্ন ধরনের আশা বা লক্ষ্য রয়েছে। যিহোবা প্রেমের সঙ্গে তাদেরকে সেই বিষয়টা দেওয়ার প্রস্তাব দেন, যা আদম ও হবা হারিয়েছিল আর তা হল, পরমদেশ পৃথিবীতে নিখুঁত স্বাস্থ্য নিয়ে অনন্তজীবনের আশা।—প্রকা. ৭:৪, ৯; ২১:১-৪.

৩. ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার প্রতি কীভাবে আমরা উপলব্ধি দেখাতে পারি?

পাপী মানুষরা যা সঠিক, তা করার বিষয়ে তাদের অসিদ্ধ প্রচেষ্টার দ্বারা অনন্তজীবন লাভ করতে পারে না। (যিশা. ৬৪:৬) যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে পরিত্রাণ সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের প্রেমময় ব্যবস্থার ওপর একমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করার দ্বারাই অনন্তজীবন লাভ করা সম্ভব। ঈশ্বরের সেই অযাচিত দয়ার প্রতি আমাদের উপলব্ধি দেখানোর জন্য আমরা কী করতে পারি? একটা বিষয় যা আমরা করতে পারি, তা হল আমরা এই আজ্ঞা পালন করতে পারি: “ধার্ম্মিকতা, ঈশ্বরীয় ভক্তি, বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য্য, [এবং] মৃদুভাব, এই সকলের অনুধাবন কর।” (১ তীম. ৬:১১) এই গুণগুলো বিবেচনা করা আমাদের প্রত্যেককে সেগুলো আরও “অধিক” অনুধাবন করতে আরও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।—১ থিষল. ৪:১.

“ধার্ম্মিকতা . . . অনুধাবন কর”

৪. কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, ‘ধার্ম্মিকতার’ অনুধাবন করা গুরুত্বপূর্ণ আর একজন ব্যক্তিকে শুরুতে কোন পদক্ষেপগুলো নিতে হবে?

তীমথিয়ের কাছে লেখা দুটো চিঠিতেই প্রেরিত পৌল অনুধাবন করার মতো গুণগুলোর তালিকা করেছেন আর প্রতিবারই তিনি “ধার্ম্মিকতা” সম্বন্ধে প্রথমে উল্লেখ করেছেন। (১ তীম. ৬:১১; ২ তীম. ২:২২) অধিকন্তু, অন্যান্য রচনাংশে বাইবেল বার বার আমাদের ধার্মিকতার অনুগমন বা অনুধাবন করতে উৎসাহিত করে। (হিতো. ১৫:৯; হিতো. ২১:২১; যিশা. ৫১:১) তা শুরু করার একটা উপায় হল, ‘একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তিনি যাঁহাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পারিবার’ বা তাঁদের সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার মাধ্যমে। (যোহন ১৭:৩) ধার্মিকতার অনুধাবন করা একজন ব্যক্তিকে কাজ করতে—অতীতের পাপের জন্য অনুতপ্ত হতে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য ‘ফিরিতে’—অনুপ্রাণিত করবে।—প্রেরিত ৩:১৯.

৫. ঈশ্বরের সামনে ধার্মিক অবস্থান অর্জন ও বজায় রাখার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

যে-লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি অকপটভাবে ধার্মিকতার অনুধাবন করছে, তারা তাদের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছে এবং সেই উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছে। আপনি যদি এখন একজন বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কি কখনো এই বিষয়টা ভেবে দেখেছেন যে, আপনার জীবনধারার দ্বারা দেখানো উচিত বা জীবনধারা সম্ভবত দেখায় যে, আপনি ক্রমাগত ধার্মিকতার অনুধাবন করছেন? একটা যে-উপায়ে আপনি তা করতে পারেন, তা হল আপনি কীভাবে জীবনযাপন করবেন, সেই সম্বন্ধে আপনাকে যখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে, তখন বাইবেল থেকে এটা নির্ণয় করা যে, কোনটা ‘সদসৎ বিষয়’ বা সঠিক অথবা ভুল। (পড়ুন, ইব্রীয় ৫:১৪.) উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি বিয়ের বয়সি একজন অবিবাহিত খ্রিস্টান হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কি বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান নন, এমন কারো সঙ্গে যেকোনো ধরনের রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে তোলা এড়িয়ে চলার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ? আপনি ঠিক তা-ই, যদি আপনি ধার্মিকতার অনুধাবন করে থাকেন।—১ করি. ৭:৩৯.

৬. প্রকৃতই ধার্মিকতা অনুধাবন করার সঙ্গে কী জড়িত?

ধার্মিক হওয়াটা আত্মধার্মিক অথবা “অতি ধার্ম্মিক” হওয়া থেকে ভিন্ন। (উপ. ৭:১৬) যিশু অন্যদের চেয়ে ভাল দেখানোর জন্য এই ধরনের ধার্মিকতা দেখানোর বিরুদ্ধে সাবধান করেছেন। (মথি ৬:১) প্রকৃতই ধার্মিকতা অনুধাবন করার সঙ্গে হৃদয়—ভুল চিন্তাধারা, আচরণ, মনোভাব এবং আকাঙ্ক্ষা সংশোধন করা—জড়িত। তা করার জন্য আমরা যদি কাজ করে চলি, তাহলে আমরা সম্ভবত গুরুতর পাপ করব না। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৪:২৩; তুলনা করুন, যাকোব ১:১৪, ১৫.) অধিকন্তু, যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করবেন এবং অন্যান্য খ্রিস্টীয় গুণগুলো অনুধাবন করার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করবেন।

“ঈশ্বরীয় ভক্তি . . . অনুধাবন কর”

৭. “ঈশ্বরীয় ভক্তি” কী?

ভক্তির সঙ্গে একান্তভাবে উৎসর্গ করা এবং আনুগত্য জড়িত। একটি বাইবেল অভিধান বলে, যে-গ্রিক শব্দকে “ঈশ্বরীয় ভক্তি” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি “ঈশ্বরীয় ভয় সম্বন্ধে উত্তম ও মনোযোগপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাকে” বর্ণনা করে। ইস্রায়েলীয়রা প্রায়ই এই ধরনের ভক্তি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল, যেমনটা এমনকি ঈশ্বর তাদেরকে মিশর থেকে মুক্ত করে দেওয়ার পরও তাদের অবাধ্যতামূলক কাজের দ্বারা দেখা যায়।

৮. (ক) আদমের পাপ কোন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে? (খ) কীভাবে এই ‘নিগূঢ়তত্ত্বের’ উত্তর প্রকাশ করা হয়েছে?

সিদ্ধ মানুষ আদম পাপ করার পর, হাজার হাজার বছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি, “কোনো মানুষ কি নিখুঁত ঈশ্বরীয় ভক্তি দেখাতে পারবে?” শত শত বছর ধরে কোনো পাপী মানুষ নিখুঁত ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুযায়ী জীবনযাপন করতে সমর্থ হয়নি। কিন্তু, যিহোবা তাঁর নিরূপিত সময়ে এই ‘নিগূঢ়তত্ত্বের’ উত্তর প্রকাশ করবেন। তিনি তাঁর একজাত স্বর্গীয় পুত্রের জীবনকে মরিয়মের গর্ভে স্থানান্তরিত করেছিলেন, যাতে তিনি সিদ্ধ মানুষ হিসেবে জন্ম নিতে পারেন। তাঁর অবমানিত মৃত্যুসহ তাঁর পার্থিব জীবনকালে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, একান্তভাবে উৎসর্গীকৃত হওয়ার এবং সত্য ঈশ্বরের প্রতি পূর্ণরূপে অনুগত হওয়ার অর্থ কী। প্রার্থনায় তাঁর প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার প্রতি তাঁর উপাসনাপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছিল। (মথি ১১:২৫; যোহন ১২:২৭, ২৮) এভাবে, যিহোবা পৌলকে যিশুর উদাহরণযোগ্য জীবনধারা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে ‘ঈশ্বরীয় ভক্তি’ সম্বন্ধে বলার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৩:১৬. *

৯. কীভাবে আমরা ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুধাবন করতে পারি?

আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থায় আমরা নিখুঁত ঈশ্বরীয় ভক্তি দেখাতে পারব না। কিন্তু, আমরা এর অনুধাবন করতে পারি। এর জন্য আমাদের খ্রিস্টকে যতটা সম্ভব নিবিড়ভাবে আমাদের আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করতে হবে। (১ পিতর ২:২১) এভাবে, আমরা সেই কপটীদের মতো হব না, যারা ‘ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইয়াছে।’ (২ তীম. ৩:৫) তার মানে এই নয় যে, প্রকৃত ঈশ্বরীয় ভক্তির সঙ্গে বাহ্যিক বেশভূষার কোনোই সম্পর্ক নেই। অবশ্যই সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা বিয়ের পোশাক বাছাই করি অথবা কেনাকাটা করার সময় কী পরব তা নির্ধারণ, যা-ই করি না কেন, আমাদের বেশভূষা সবসময় আমাদের এই দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত যে, আমরা ‘ঈশ্বর-ভক্তি’ দেখাই। (১ তীম. ২:৯, ১০) হ্যাঁ, ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুধাবন করার জন্য ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলো আমাদের রোজকার জীবনে বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।

“বিশ্বাস . . . অনুধাবন কর”

১০. আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় রাখার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১০ রোমীয় ১০:১৭ পদ পড়ুন। দৃঢ় বিশ্বাস অর্জন করার ও বজায় রাখার জন্য একজন খ্রিস্টানকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত মূল্যবান সত্যগুলো নিয়ে ধ্যান করে যেতে হবে। “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” অনেক উত্তম প্রকাশনা জুগিয়েছে। তিনটি ব্যতিক্রমী বই হল সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন, মহান শিক্ষকের কাছ থেকে শেখো (ইংরেজি) এবং “আইস, আমার পশ্চাদ্গামী হও” (ইংরেজি), যে-খণ্ডগুলো আমাদেরকে খ্রিস্টকে আরও ভালভাবে জানতে সাহায্য করার এবং এগুলোর দ্বারা তাঁকে অনুকরণ করতে সমর্থ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এ ছাড়া, দাস শ্রেণী বিভিন্ন সভা ও সম্মেলনের ব্যবস্থা করে থাকে, যেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো “খ্রীষ্টের বাক্য” তুলে ধরে। আপনি যখন “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ” করেন, তখন কি আপনি আরও উপকার লাভ করার বিভিন্ন উপায় দেখতে পান?—ইব্রীয় ২:১.

১১. আমাদের বিশ্বাস অনুধাবন করার ক্ষেত্রে প্রার্থনা ও বাধ্যতা কোন ভূমিকা পালন করে?

১১ প্রার্থনা হল দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আরেকটা সহায়ক। যিশুর অনুসারীরা একবার তাঁর কাছে মিনতি করে বলেছিল: “আমাদের বিশ্বাসের বৃদ্ধি করুন।” আমরাও একই বিষয় করার জন্য ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ করতে পারি। (লূক ১৭:৫) এর জন্য আমাদের ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত; বিশ্বস্ততা বা বিশ্বাস হল ‘আত্মার ফলের’ একটা দিক। (গালা. ৫:২২, ২৩) অধিকন্তু, ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হওয়া আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা হয়তো আরও বেশি করে প্রচার কাজে অংশ নিতে পারি। তা সম্ভবত আমাদের মধ্যে গভীর সুখ নিয়ে আসবে। আর আমরা যখন আশীর্বাদগুলোর বিষয়ে চিন্তা করি, যা ‘প্রথমে রাজ্যের ও ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করিবার’ মাধ্যমে আসে, তখন আমাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।—মথি ৬:৩৩.

“প্রেম . . . অনুধাবন কর”

১২, ১৩. (ক) যিশুর নতুন আজ্ঞা কী? (খ) কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে আমাদের খ্রিস্টতুল্য প্রেম অনুধাবন করতে হবে?

১২ প্রথম তীমথিয় ৫:১, ২ পদ পড়ুন। খ্রিস্টানরা পরস্পরের প্রতি কীভাবে প্রেম দেখাতে পারে, সেই সম্বন্ধে পৌল ব্যবহারিক পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের ঈশ্বরীয় ভক্তির অন্তর্ভুক্ত ‘পরস্পরকে প্রেম করিবার’ নতুন আজ্ঞা, যেমনটা তিনি আমাদের প্রেম করেছেন। (যোহন ১৩:৩৪) প্রেরিত যোহন উল্লেখ করেছিলেন: “যাহার সাংসারিক জীবনোপায় আছে, সে আপন ভ্রাতাকে দীনহীন দেখিলে যদি তাহার প্রতি আপন করুণা রোধ করে, তবে ঈশ্বরের প্রেম কেমন করিয়া তাহার অন্তরে থাকে?” (১ যোহন ৩:১৭) আপনি কি এমন ঘটনাগুলোর কথা চিন্তা করতে পারেন, যখন আপনি ব্যবহারিক উপায়ে প্রেম প্রদর্শন করেছেন?

১৩ আরেকটা যে-উপায়ে আমরা প্রেম অনুধাবন করতে পারি, তা হল ক্ষমা করার মাধ্যমে, আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ পুষে না রেখে। (পড়ুন, ১ যোহন ৪:২০.) এর পরিবর্তে, আমরা এই অনুপ্রাণিত পরামর্শ অনুসরণ করতে চাই: “পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু [“যিহোবা,” NW] যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর।” (কল. ৩:১৩) মণ্ডলীতে কি এমন কেউ রয়েছে, যার ক্ষেত্রে আপনি এই পরামর্শ কাজে লাগাতে পারেন? আপনি কি তাকে ক্ষমা করবেন?

“ধৈর্য্য . . . অনুধাবন কর”

১৪. ফিলাদিল্‌ফিয়ার মণ্ডলী থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৪ স্বল্পস্থায়ী লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রাণপণ করা হচ্ছে এক কথা কিন্তু যখন লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হয় অথবা তা আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দূরে থাকে, তখন তা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। স্পষ্টতই, অনন্তজীবনের লক্ষ্য অনুধাবন করার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন। “তুমি আমার ধৈর্য্যের কথা রক্ষা করিয়াছ, এই কারণ আমিও তোমাকে সেই পরীক্ষাকাল হইতে রক্ষা করিব,” প্রভু যিশু ফিলাদিল্‌ফিয়া মণ্ডলীকে বলেছিলেন। (প্রকা. ৩:১০) বস্তুতপক্ষে, যিশু ধৈর্যের প্রয়োজন সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন, যে-গুণ আমাদের পরীক্ষা এবং প্রলোভনের মুখোমুখি হলেও হাল না ছেড়ে দিতে সাহায্য করে। প্রথম শতাব্দীর ফিলাদিল্‌ফিয়া মণ্ডলীর ভাইয়েরা বিশ্বাসের অনেক পরীক্ষার মধ্যে নিশ্চিতভাবেই উদাহরণযোগ্য ধৈর্য দেখিয়েছিল। তাই, যিশু তাদেরকে আসন্ন মহাপরীক্ষার সময়ে আরও সাহায্য করার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন।—লূক ১৬:১০.

১৫. ধৈর্য সম্বন্ধে যিশু কী কী শিখিয়েছিলেন?

১৫ যিশু জানতেন যে, তাঁর অনুসারীরা অবিশ্বাসী আত্মীয়স্বজন ও জগতের কাছ থেকে ঘৃণার মুখোমুখি হবে, তাই অন্ততপক্ষে দুবার তিনি তাদেরকে এভাবে উৎসাহিত করেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ১০:২২; ২৪:১৩) যিশু এও দেখিয়েছিলেন যে, কীভাবে সেই সময় তাঁর শিষ্যরা ধৈর্য ধরার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য পেতে পারে। একটা দৃষ্টান্তে তিনি সেই ব্যক্তি বিশেষদের পাথুরে ভূমির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যারা “আনন্দপূর্ব্বক [ঈশ্বরের] বাক্য গ্রহণ করে,” তবে যখন বিশ্বাসের পরীক্ষার মুখোমুখি হয়, তখন সরে পড়ে। কিন্তু, তিনি তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারীদের উত্তম ভূমির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন এই কারণে যে, তারা ঈশ্বরের বাক্য “ধরিয়া রাখে” এবং “ধৈর্য্য সহকারে ফল উৎপন্ন করে।”—লূক ৮:১৩, ১৫.

১৬. কোন প্রেমময় ব্যবস্থা লক্ষ লক্ষ লোককে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছে?

১৬ আপনি কি ধৈর্য ধরার রহস্য লক্ষ করেছেন? আমাদের ঈশ্বরের বাক্য ‘ধরিয়া রাখিতে’ হবে, আমাদের হৃদয় ও মনে সেটিকে জীবন্ত রাখতে হবে। পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি)—এক সঠিক, সহজপাঠ্য অনুবাদের বাইবেল—অনেক অনেক ভাষায় থাকায় তা করা সুবিধাজনক ও সম্ভবপর হয়েছে। আমরা যদি প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্যের একটা অংশ নিয়ে ধ্যান করি, তাহলে তা আমাদেরকে “ধৈর্য্য সহকারে” ফল উৎপন্ন করে চলার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।—গীত. ১:১, ২.

“মৃদুভাব” ও শান্তির “অনুধাবন কর”

১৭. (ক) কেন “মৃদুভাব” খুবই গুরুত্বপূর্ণ? (খ) কীভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, তিনি মৃদুশীল ছিলেন?

১৭ কেউই এমন কিছুর জন্য অভিযুক্ত হতে চায় না, যা তিনি বলেননি বা করেননি। অন্যায্য সমালোচনার প্রতি রাগান্বিতভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো মানুষের জন্য খুবই সাধারণ। “মৃদুভাব” দেখানো আরও কতই না উত্তম! (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৫:১.) অন্যায্য সমালোচনার মোকাবিলা করার সময় মৃদুভাব দেখানোর জন্য অনেক শক্তির প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে যিশু খ্রিস্ট নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। “তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না; দুঃখভোগ কালে তর্জ্জন করিতেন না, কিন্তু যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁহার উপর ভার রাখিতেন।” (১ পিতর ২:২৩) এই ক্ষেত্রে আমরা যিশুর মতো এতটা ভাল করার আশা করতে পারি না কিন্তু আমরা কি আরও পূর্ণরূপে মৃদুভাব দেখানোর ক্ষেত্রে উন্নতি করার জন্য কাজ করতে পারি?

১৮. (ক) মৃদুভাব কোন উত্তম বিষয় সম্পাদন করে? (খ) অন্য কোন গুণ অনুধাবন করার জন্য আমাদের জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?

১৮ যিশুকে অনুকরণ করে আমরা যেন আমাদের বিশ্বাসের পক্ষে “উত্তর দিতে সর্ব্বদা প্রস্তুত” থাকি এবং “মৃদুতা ও ভয় [‘শ্রদ্ধা,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] সহকারে উত্তর” দিই। (১ পিতর ৩:১৫) হ্যাঁ, মৃদুভাব থাকা ভিন্ন মতামতকে প্রচণ্ড তর্কবিতর্কের দিকে মোড় নেওয়া থেকে রোধ করে আর তা পরিচর্যায় আমাদের যে-লোকেদের সঙ্গে দেখা হয় বা সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে উভয় ক্ষেত্রেই। (২ তীম. ২:২৪, ২৫) মৃদুভাব আমাদের শান্তি উপভোগ করতে সাহায্য করে। সম্ভবত, এই কারণে পৌল তীমথিয়ের কাছে তার দ্বিতীয় চিঠিতে ‘শান্তিকে’ সেই গুণগুলোর তালিকাভুক্ত করেছিলেন, যেগুলো অনুধাবন করতে হবে। (২ তীম. ২:২২; তুলনা করুন, ১ তীমথিয় ৬:১১.) হ্যাঁ, ‘শান্তি’ হল আরেকটা গুণ, যা অনুধাবন করার জন্য শাস্ত্র আমাদের উৎসাহিত করে।—গীত. ৩৪:১৪; ইব্রীয় ১২:১৪.

১৯. সাতটা খ্রিস্টীয় গুণ বিবেচনা করার পর আপনি কোনটা অনুধাবন করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন এবং কেন?

১৯ আমরা সংক্ষেপে সাতটা খ্রিস্টীয় গুণ বিবেচনা করেছি, যেগুলো অনুধাবন করার জন্য আমাদের উৎসাহিত করা হয়েছে—ধার্মিকতা, ঈশ্বরীয় ভক্তি, বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য, মৃদুতা এবং শান্তি। প্রতিটা মণ্ডলীতে এটা কতই না আশীর্বাদস্বরূপ হয়, যখন ভাই ও বোনেরা এই মূল্যবান গুণগুলো আরও পূর্ণরূপে প্রদর্শন করার জন্য প্রচেষ্টা করে! এটা যিহোবাকে সম্মানিত করবে এবং তাঁর প্রশংসা করার জন্য আমাদের প্রত্যেককে গঠন করার বিষয়ে তাঁকে সুযোগ করে দেবে।

[পাদটীকা]

^ ১ তীমথিয় ৩:১৬ (NW): “বাস্তবিকই, ঈশ্বরীয় ভক্তির এই পবিত্র নিগূঢ়তত্ত্ব অনস্বীকার্যভাবে মহৎ: তিনি মাংসে প্রকাশ পেলেন, আত্মাতে ধার্ম্মিক ঘোষিত হলেন, দূতেদের কাছে উপস্থিত হলেন, জাতিগণের মধ্যে প্রচারিত হলেন, জগতে বিশ্বাস দ্বারা গৃহীত হলেন, সপ্রতাপে ঊদ্ধের্ব উপনীত হলেন।”

ধ্যান করার মতো বিষয়গুলো

• ধার্মিকতা ও ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুধাবন করার সঙ্গে কী জড়িত?

• কী আমাদেরকে বিশ্বাস ও ধৈর্য অনুধাবন করতে সাহায্য করবে?

• কীভাবে প্রেম পরস্পরের সঙ্গে আমাদের আচরণে প্রভাব ফেলে?

• কেন আমাদের মৃদুভাব ও শান্তি অনুধাবন করতে হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

লোকেদের প্রভাবিত করার জন্য ধার্মিকতা দেখানোর বিরুদ্ধে যিশু সাবধান করে দিয়েছিলেন

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের বাক্যের সত্যগুলো নিয়ে ধ্যান করার দ্বারা আমরা বিশ্বাস অনুধাবন করতে পারি

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমরা প্রেম ও মৃদুভাব অনুধাবন করতে পারি