সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যে-বিষয়গুলো থেকে আমাদের অবশ্যই পলায়ন করতে হবে

যে-বিষয়গুলো থেকে আমাদের অবশ্যই পলায়ন করতে হবে

যে-বিষয়গুলো থেকে আমাদের অবশ্যই পলায়ন করতে হবে

“হে সর্পের বংশেরা, আগামী কোপ হইতে পলায়ন করিতে তোমাদিগকে কে চেতনা দিল?”—মথি ৩:৭.

১. পলায়ন করার বিষয়ে বাইবেলের কিছু উদাহরণ কী?

 আপনি যখন “পলায়ন” শব্দটি শোনেন, তখন কোন বিষয়টা চিন্তা করেন? কারো কারো হয়তো, পোটীফরের স্ত্রীর অনৈতিক প্রস্তাব থেকে সুদর্শন যুবক যোষেফের পলায়নের কথাটা মনে আসে। (আদি. ৩৯:৭-১২) অন্যেরা হয়তো সেই খ্রিস্টানদের কথা চিন্তা করতে পারে, যারা যিশুর এই সাবধানবাণীর বাধ্য হয়ে সা.কা. ৬৬ সালে যিরূশালেম থেকে পলায়ন করেছিল: “যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন . . . যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক।”—লূক ২১:২০, ২১.

২, ৩. (ক) যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনা করার অর্থ কী ছিল? (খ) যোহন যে-সাবধানবাণী দিয়েছিলেন, সেটাকে যিশু কীভাবে জোরালো করেছিলেন?

ওপরে উল্লেখিত উদাহরণগুলোর সঙ্গে আক্ষরিকভাবে পলায়ন করা জড়িত ছিল। আজকে, সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশে সত্য খ্রিস্টানদের জন্য রূপকভাবে পলায়ন করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। যোহন বাপ্তাইজক “পলায়ন” শব্দটি এই অর্থে ব্যবহার করেছিলেন। যারা যোহনকে দেখতে এসেছিল, তাদের মধ্যে আত্মধার্মিক যিহুদি ধর্মীয় নেতারা ছিল, যারা অনুতপ্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন অনুভব করেনি। তারা সেই সাধারণ লোকেদের নিচু চোখে দেখত, যারা অনুতাপের প্রতীক হিসেবে বাপ্তাইজিত হচ্ছিল। যোহন নির্ভীকভাবে সেই কপট নেতাদের উন্মোচিত করে দিয়েছিলেন: “হে সর্পের বংশেরা, আগামী কোপ হইতে পলায়ন করিতে তোমাদিগকে কে চেতনা দিল? অতএব মনপরিবর্ত্তনের উপযোগী ফলে ফলবান্‌ হও।”—মথি ৩:৭, ৮.

যোহন আক্ষরিক পলায়নের কথা বলছিলেন না। তিনি আসন্ন এক বিচারের বিষয়ে অর্থাৎ কোপ বা ক্রোধের দিন সম্বন্ধে সাবধান করছিলেন; আর তিনি ধর্মীয় নেতাদের বলেছিলেন যে, তারা যদি সেই দিন থেকে রেহাই পেতে চায়, তাহলে তাদের এমন ফল উৎপন্ন করতে হবে, যা তাদের অনুতাপের প্রমাণ দেবে। পরবর্তী সময়ে, যিশু নির্ভীকভাবে ধর্মীয় নেতাদের নিন্দা করেছিলেন—তাদের নিষ্ঠুর মনোভাব দেখিয়েছিল যে, তাদের প্রকৃত পিতা ছিল শয়তান দিয়াবল। (যোহন ৮:৪৪) যোহনের পূর্বের সাবধানবাণীকে জোরালো করে যিশু তাদেরকে ‘কালসর্পের বংশ’ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তোমরা কেমন করিয়া বিচারে নরকদণ্ড [“গিহেন্না,” NW] এড়াইবে?” (মথি ২৩:৩৩) “গিহেন্না” শব্দটি দ্বারা যিশু কী বুঝিয়েছিলেন?

৪. “গিহেন্না” শব্দটি দ্বারা যিশু কী বুঝিয়েছিলেন?

গিহেন্না ছিল যিরূশালেমের বাইরে এক উপত্যকাময় এলাকা, যেখানে আবর্জনা ও মৃত পশুপাখির শব পোড়ানো হতো। যিশু অনন্ত মৃত্যুর প্রতীক হিসেবে গিহেন্না শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। (২৭ পৃষ্ঠা দেখুন।) “গিহেন্না” থেকে রেহাই পাওয়ার বিষয়ে তাঁর প্রশ্ন দেখিয়েছিল যে, এক শ্রেণী হিসেবে সেই ধর্মীয় নেতারা অনন্ত ধ্বংসের উপযুক্ত ছিল।—মথি ৫:২২, ২৯, NW.

৫. কীভাবে যোহন ও যিশুর সাবধানবাণীগুলো সত্য হয়েছিল?

যিহুদি নেতারা যিশু ও তাঁর অনুসারীদের তাড়না করার দ্বারা তাদের পাপকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। পরবর্তী সময়ে, যোহন ও যিশু যেমন সাবধান করেছিল, তেমনই ঈশ্বরের ক্রোধের দিন এসেছিল। সেই ক্ষেত্রে, “আগামী কোপ” একটা নির্দিষ্ট স্থান অর্থাৎ যিরূশালেম ও যিহূদিয়ায় কেন্দ্রীভূত ছিল, তাই আক্ষরিকভাবে পালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হতো। সেই ক্রোধ এসেছিল, যখন সা.কা. ৭০ সালে রোমীয় সৈন্যরা যিরূশালেম ও এর মন্দির ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই ‘ক্লেশ’ যিরূশালেমের ওপর আসা যেকোনো অভিজ্ঞতার চেয়ে সাংঘাতিক ছিল। অনেককে হত্যা করা হয়েছিল অথবা বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এটা এক ব্যাপক ধ্বংসকে নির্দেশ করেছিল, যা অনেক নামধারী খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মের লোকেদের জন্য অপেক্ষা করছে।—মথি ২৪:২১.

যে-ভাবী ক্রোধ থেকে পলায়ন করতে হবে

৬. প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কী বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল?

প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মধ্যে কেউ কেউ ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং লোকেরা তাদের অনুসারীও হয়েছিল। (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০) যিশুর প্রেরিতরা যখন বেঁচে ছিল, তখন তারা এই ধরনের ধর্মভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে এক “বাধা” হিসেবে কাজ করেছিল কিন্তু তারা মারা যাওয়ার পর, অনেক মিথ্যা খ্রিস্টীয় সম্প্রদায় বৃদ্ধি পেয়েছিল। আজকে, খ্রিস্টীয়জগতের মধ্যে শত শত পরস্পরবিরোধী ধর্ম রয়েছে। বাইবেল খ্রিস্টীয়জগতের পাদরিদের উত্থান সম্বন্ধে নির্দেশ করে, দলগতভাবে তাদেরকে “সেই পাপ-পুরুষ” এবং “সেই বিনাশ-সন্তান” হিসেবে বর্ণনা করে, “যাহাকে প্রভু যীশু . . . সংহার করিবেন, ও আপন আগমনের প্রকাশ দ্বারা লোপ করিবেন।”—২ থিষল. ২:৩, ৬-৮.

৭. কেন “সেই পাপ-পুরুষ” অভিব্যক্তিটি খ্রিস্টীয় জগতের পাদরিশ্রেণীর প্রতি প্রযোজ্য হয়?

খ্রিস্টীয়জগতের পাদরিরা এই অর্থে পাপ-পুরুষ যে, বাইবেলের বিপরীত বিভিন্ন শিক্ষা, ছুটির দিন ও আচরণ অনুমোদন করার দ্বারা তারা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে ভ্রান্ত করেছে। যিশু যাদের নিন্দা করেছিলেন, সেই ধর্মীয় নেতাদের মতো আধুনিক দিনের উপাসকরা, যারা ‘সেই বিনাশ-সন্তানের’ অংশ, তারা পুনরুত্থানের কোনো আশা ছাড়াই ধ্বংসের মুখোমুখি হবে। (২ থিষল. ১:৬-৯) কিন্তু, সেই লোকেদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, যারা খ্রিস্টীয়জগতের পাদরিশ্রেণী ও অন্যান্য মিথ্যা ধর্মের যাজকদের দ্বারা ভ্রান্ত হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা সেই ঘটনাগুলো বিবেচনা করি, যেগুলো সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেম প্রথম ধ্বংস হওয়ার পরে ঘটেছিল।

“তোমরা বাবিলের মধ্য হইতে পলায়ন কর”

৮, ৯. (ক) যে-যিহুদিরা বাবিলে বন্দি ছিল, তাদের জন্য যিরমিয়ের কোন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বার্তা ছিল? (খ) মাদীয় ও পারসিকদের দ্বারা বাবিল জয় করার পর কোন ধরনের পলায়ন সম্ভবপর হয়েছিল?

ভাববাদী যিরমিয় যিরূশালেমের ধ্বংস সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যা সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে ঘটেছিল। তিনি বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের লোকেদের বন্দিত্বে নিয়ে যাওয়া হবে কিন্তু “সত্তর বৎসর” পর তাদেরকে নিজ দেশে পুনর্স্থাপন করা হবে। (যির. ২৯:৪, ১০) যে-যিহুদিরা বাবিলে বন্দি ছিল, তাদের জন্য যিরমিয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছিল; তাদেরকে সেই মিথ্যা ধর্ম থেকে অকলুষিত থাকতে হবে, যা বাবিলে প্রচলিত ছিল। এভাবে তারা নিরূপিত সময়ে যিরূশালেমে ফিরে যাওয়ার এবং বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপন করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। এটা সা.কা.পূ. ৫৩৯ সালে মাদীয় ও পারসিকদের দ্বারা বাবিল জয়ের পর পরই ঘটেছিল। পারস্যের রাজা কোরস ২য় যিহুদিদের যিরূশালেমে ফিরে যাওয়ার ও যিহোবার মন্দির পুনর্নিমাণ করার আদেশ জারি করেছিলেন।—ইষ্রা ১:১-৪.

হাজার হাজার যিহুদি এই সুযোগ গ্রহণ করেছিল ও ফিরে গিয়েছিল। (ইষ্রা ২:৬৪-৬৭) তা করার মাধ্যমে তারা যিরমিয়ের এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক আজ্ঞা পরিপূর্ণ করেছিল যে, তাদের ক্ষেত্রে পালানোর সঙ্গে এক অর্থে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া জড়িত ছিল। (পড়ুন, যিরমিয় ৫১:৬, ৪৫, ৫০.) বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে সমস্ত যিহুদি যিরূশালেম থেকে যিহূদায় যাওয়ার দীর্ঘ যাত্রা করতে পারেনি। যারা বাবিলে থেকে গিয়েছিল, যেমন বৃদ্ধ ভাববাদী দানিয়েল, তারাও ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করতে পারত, একমাত্র যদি তারা পূর্ণহৃদয়ে যিরূশালেমের বিশুদ্ধ উপাসনাকে সমর্থন করত এবং বাবিলীয়দের মিথ্যা উপাসনা থেকে পৃথক থাকত।

১০. “মহতী বাবিল” কোন ধরনের “ঘৃণাস্পদ সকলের” জন্য দায়ী?

১০ আজকে কোটি কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ধর্মের সঙ্গে যুক্ত, যেগুলোর উৎস প্রাচীন বাবিলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে দেখা যাবে। (আদি. ১১:৬-৯) দলগতভাবে সেই ধর্মগুলোকে “মহতী বাবিল, পৃথিবীর বেশ্যাগণের ও ঘৃণাস্পদ সকলের জননী” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (প্রকা. ১৭:৫) মিথ্যা ধর্ম যে এই জগতের রাজনৈতিক শাসকদের সমর্থন করছে, তার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যে-“ঘৃণাস্পদ সকলের” জন্য সে দায়ী, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অনেক যুদ্ধ, যার ফলে লক্ষ লক্ষ লোক “পৃথিবীতে হত হইয়াছে।” (প্রকা. ১৮:২৪) অন্যান্য “ঘৃণাস্পদ সকলের” অন্তর্ভুক্ত হল, শিশু যৌন নিপীড়ন এবং পাদরিদের দ্বারা সংঘটিত ও গির্জার কর্তৃপক্ষদের দ্বারা প্রশ্রয় দেওয়া অন্যান্য ধরনের যৌন অনৈতিকতা। তাই, এতে কি অবাক হওয়ার কিছু আছে যে, যিহোবা ঈশ্বর শীঘ্রই এই পৃথিবীকে মিথ্যা ধর্ম থেকে মুক্ত করবেন?—প্রকা. ১৮:৮.

১১. মহতী বাবিল ধ্বংস হওয়ার আগে পর্যন্ত সত্য খ্রিস্টানদের কোন দায়িত্ব রয়েছে?

১১ যে-সত্য খ্রিস্টানরা এটা জানে, তাদের দায়িত্ব হল মহতী বাবিলের সদস্যদের সাবধান করা। একটা যে-উপায়ে তারা তা করে থাকে, তা হল বাইবেল ও যাকে যিশু “উপযুক্ত সময়ে” আধ্যাত্মিক “খাদ্য” জোগানোর জন্য নিযুক্ত করেছেন সেই ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে প্রকাশিত সম্পর্কযুক্ত সাহিত্যাদি বিতরণ করার দ্বারা। (মথি ২৪:৪৫) ব্যক্তি বিশেষরা যখন বাইবেলের বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখায়, তখন বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে তাদেরকে সাহায্য করার ব্যবস্থা করা হয়। আশা করা হয় যে, তারা খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই ‘বাবিলের মধ্য হইতে পলায়ন করিবার’ প্রয়োজনীয়তা দেখতে পাবে।—প্রকা. ১৮:৪.

প্রতিমাপূজা থেকে পলায়ন করুন

১২. মূর্তি ও প্রতিমাপূজাকে ঈশ্বর কোন দৃষ্টিতে দেখেন?

১২ মহতী বাবিলে আরেকটা যে-ঘৃণার্হ অভ্যাস সাধারণ ব্যাপার তা হল, মূর্তি ও প্রতিমাপূজা। ঈশ্বর সেগুলোকে “ঘৃণার্হ বস্তু সকল” ও “পুত্তলি” বলে অভিহিত করেছেন। (দ্বিতী. ২৯:১৭) ঈশ্বরকে খুশি করতে চায় এমন সকলকে অবশ্যই ঈশ্বরের এই উক্তির সঙ্গে মিল রেখে প্রতিমাপূজা এড়িয়ে চলতে হবে: “আমি সদাপ্রভু, ইহাই আমার নাম; আমি আপন গৌরব অন্যকে, কিম্বা আপন প্রশংসা ক্ষোদিত প্রতিমাগণকে দিব না।”—যিশা. ৪২:৮.

১৩. আমাদের কোন সূক্ষ্ম ধরনের প্রতিমাপূজা থেকে পলায়ন করতে হবে?

১৩ এ ছাড়া, ঈশ্বরের বাক্য সূক্ষ্ম ধরনের প্রতিমাপূজা সম্বন্ধে উন্মোচন করে। উদাহরণস্বরূপ, এটি লোভকে “প্রতিমাপূজা” বলে। (কল. ৩:৫) লোভ করার অর্থ হল নিষিদ্ধ কিছুর, যেমন অন্য ব্যক্তির সম্পত্তির প্রতি আকাঙ্ক্ষা করা। (যাত্রা. ২০:১৭) যে-স্বর্গদূত শয়তান দিয়াবলে পরিণত হয়েছিল, সে পরাৎপরের মতো হওয়ার ও উপাসনা পাওয়ার লোভাতুর আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলেছিল। (লূক ৪:৫-৭) এটা তাকে যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার এবং হবাকে এমন কিছু পাওয়ার জন্য লোভ করার দিকে প্রলুব্ধ করতে পরিচালিত করেছিল, যা ঈশ্বর নিষেধ করেছিলেন। এক অর্থে, আদমও তার প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার বাধ্য হওয়ার পরিবর্তে তার স্ত্রীর সাহচর্য আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্য তার স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাকে সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিমাপূজা করেছিল। এর বৈসাদৃশ্যে, যারা ঈশ্বরের ক্রোধের দিন থেকে পলায়ন করতে চায়, তাদের সকলকে তাঁকে একাগ্র ভক্তি প্রদান করতে হবে এবং এই ধরনের যেকোনো লোভকে প্রতিরোধ করতে হবে।

“তোমরা ব্যভিচার হইতে পলায়ন কর”

১৪-১৬. (ক) কেন যোষেফ নৈতিকতার এক উত্তম উদাহরণ ছিলেন? (খ) আমাদের যদি অশুচি যৌন আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহলে কী করা উচিত? (গ) কীভাবে আমরা ব্যভিচার থেকে পলায়ন করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারি?

১৪ প্রথম করিন্থীয় ৬:১৮ পদ পড়ুন। পোটীফরের স্ত্রী যখন যোষেফকে প্রলুব্ধ করতে চেয়েছিলেন, তখন তিনি আক্ষরিকভাবে তার কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। অবিবাহিত ও বিবাহিত উভয় খ্রিস্টানদের জন্য তিনি কতই না উত্তম এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন! স্পষ্টতই, যোষেফের বিবেক অতীতের বিভিন্ন ঘটনার দ্বারা গঠিত হয়েছিল, যা অনৈতিকতা সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দিয়েছিল। আমরা যদি ‘ব্যভিচার হইতে পলায়ন করিবার’ আজ্ঞা পালন করতে চাই, তাহলে আমরা এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলব, যেগুলো হয়তো আমাদের সাথিদের ছাড়া অন্যদের প্রতি যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে পারে। আমাদের বলা হয়েছে: “তোমরা . . . আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ, কুঅভিলাষ, এবং লোভ, এ ত প্রতিমাপূজা। এই সকলের কারণ অবাধ্যতার সন্তানগণের প্রতি ঈশ্বরের ক্রোধ উপস্থিত হয়।”—কল. ৩:৫, ৬.

১৫ লক্ষ করুন যে, “ঈশ্বরের ক্রোধ উপস্থিত।” জগতের অনেকে অনুপযুক্ত যৌন আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলে এবং সেগুলোর কাছে নতিস্বীকার করে। তাই, খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের ঈশ্বরের সাহায্য ও পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করতে হবে, যাতে অশুচি যৌন আকাঙ্ক্ষা আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করে। অধিকন্তু, বাইবেল অধ্যয়ন, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান এবং আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে সুসমাচার সম্বন্ধে বলা আমাদেরকে ‘আত্মার বশে চলিতে’ সাহায্য করবে। এভাবে আমরা ‘মাংসের অভিলাষ পূর্ণ করিব না।’—গালা. ৫:১৬.

১৬ আমরা যদি পর্নোগ্রাফি দেখি, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই ‘আত্মার বশে চলিতেছি’ না। একইভাবে, প্রত্যেক খ্রিস্টানকে যৌন উদ্দীপক বিষয়বস্তু পড়া, দেখা ও শোনার বিরুদ্ধে সাবধান থাকতে হবে। অনুরূপভাবে, ঈশ্বরের ‘পবিত্রগণের’ জন্য এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে ঠাট্টা করার অথবা সেগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলার মাধ্যমে আনন্দ খোঁজা অন্যায়। (ইফি. ৫:৩, ৪) এভাবে আমরা আমাদের প্রেমময় পিতাকে দেখাই যে, আমরা সত্যিই তাঁর আসন্ন ক্রোধ থেকে রেহাই পেতে ও ধার্মিক নতুন জগতে বাস করতে চাই।

“টাকা-পয়সার প্রতি ভালবাসা” থেকে পলায়ন করুন

১৭, ১৮. কেন আমাদের “টাকা-পয়সার প্রতি ভালবাসা” থেকে পলায়ন করতে হবে?

১৭ তীমথিয়ের কাছে লেখা প্রথম চিঠিতে পৌল সেই নীতিগুলো তুলে ধরেছিলেন, যেগুলো এমন খ্রিস্টান দাসদের পরিচালিত করা উচিত, যাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো খ্রিস্টান মালিকদের কাছ থেকে বস্তুগত সুবিধা লাভের প্রত্যাশা করেছিল। অন্যেরা হয়তো স্বার্থপর লাভের জন্য পবিত্র বিষয়কে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল। পৌল ‘ভক্তিকে [বস্তুগত বিষয়] লাভের উপায় জ্ঞান করিবার’ বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন। সমস্যার মূল হতে পারে “ধনাসক্তি [“টাকা-পয়সার প্রতি ভালবাসা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন],” যা ধনী অথবা গরিব যেকারো ওপরই খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।—১ তীম. ৬:১, ২, ৫, ৯, ১০.

১৮ আপনি কি বাইবেলের এমন ব্যক্তি বিশেষদের উদাহরণ চিন্তা করতে পারেন, যিহোবার সঙ্গে যাদের সম্পর্ক ‘টাকা-পয়সার প্রতি ভালবাসার’ অথবা টাকা দিয়ে কেনা যেতে পারে এমন অপ্রয়োজনীয় জিনিসের প্রতি ভালবাসার কারণে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল? (যিহো. ৭:১১, ২১; ২ রাজা. ৫:২০, ২৫-২৭) পৌল তীমথিয়কে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি, হে ঈশ্বরের লোক, এই সকল হইতে পলায়ন কর; এবং ধার্ম্মিকতা, ভক্তি, বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য্য, মৃদুভাব, এই সকলের অনুধাবন কর।” (১ তীম. ৬:১১) এই উপদেশে মনোযোগ দেওয়া সেই সকলের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যারা আসন্ন ক্রোধের দিন থেকে রক্ষা পেতে চায়।

“তুমি যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন কর”

১৯. সমস্ত অল্পবয়স্কের কী প্রয়োজন?

১৯ হিতোপদেশ ২২:১৫ পদ পড়ুন। একজন অল্পবয়স্কের হৃদয়ের অজ্ঞানতা সহজেই তাকে বিপথে চালিত করতে পারে। যে-বিষয়টা এটাকে প্রতিহত করতে পারে, তা হল বাইবেলভিত্তিক শাসন। অনেক খ্রিস্টান অল্পবয়স্ক, যাদের বাবামা তাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, তারা বাইবেলে লিপিবদ্ধ নীতিগুলো খোঁজার ও সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। অন্যেরা মণ্ডলীতে আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব ব্যক্তিদের বিজ্ঞ উপদেশ থেকে উপকার লাভ করে। বাইবেলের পরামর্শ যে-ই দিক না কেন, সেগুলো পালন করা এখন ও ভবিষ্যতে সুখের দিকে পরিচালিত করতে পারে।—ইব্রীয় ১২:৮-১১.

২০. কীভাবে অল্পবয়স্করা ভুল আকাঙ্ক্ষা থেকে পলায়ন করার জন্য সাহায্য পেতে পারে?

২০ দ্বিতীয় তীমথিয় ২:২০-২২ পদ পড়ুন। উপকারজনক শাসনের অভাব রয়েছে এইরকম অনেক অল্পবয়স্ক হৃদয় মূর্খ পথগুলোর যেমন, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, লোভ, ব্যভিচার, টাকাপয়সার প্রতি ভালবাসা এবং আমোদপ্রমোদের পিছনে ছোটার শিকারে পরিণত হয়েছে। এগুলো ‘যৌবনকালের অভিলাষকে’ প্রতিফলিত করে, যা থেকে আমাদের পলায়ন করার জন্য বাইবেল জোরালো পরামর্শ দেয়। পলায়ন করার জন্য একজন অল্পবয়স্ক খ্রিস্টানকে ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, তা সেটা যেখান থেকেই আসুক না কেন। “যাহারা শুচি হৃদয়ে প্রভুকে ডাকে, তাহাদের সহিত” ঈশ্বরীয় গুণগুলো অনুধাবন করার ঐশিক উপদেশ বিশেষভাবে উপকারী।

২১. যিশু খ্রিস্ট তাঁর মেষতুল্য অনুসারীদের সম্বন্ধে কোন অপূর্ব প্রতিজ্ঞা করেছেন?

২১ আমরা অল্পবয়স্ক বা বৃদ্ধ যে-ই হই না কেন, যারা আমাদের ভ্রান্ত করতে চায়, তাদের কথা শোনা প্রত্যাখ্যান করা দেখায় যে, আমরা যিশুর সেই মেষতুল্য অনুসারীদের মধ্যে গণ্য হতে চাই, যারা ‘অপর লোকদের [“অপরিচিতদের,” NW] রব থেকে পলায়ন’ করে। (যোহন ১০:৫) কিন্তু, ঈশ্বরের ক্রোধের দিন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমাদের কেবল ক্ষতিকর বিষয়গুলো থেকে পালানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। এ ছাড়া, আমাদের এমন গুণগুলো অনুধাবন করতে হবে, যেগুলো ইতিবাচক। পরের প্রবন্ধে এগুলোর মধ্যে সাতটা বিবেচনা করা হবে। এগুলোর প্রতি আরেকটু বেশি মনোযোগ দেওয়ার উত্তম কারণ আমাদের রয়েছে কারণ যিশু এই অপূর্ব প্রতিজ্ঞা করেছেন: “আমি [আমার মেষদিগকে] অনন্ত জীবন দিই, তাহারা কখনই বিনষ্ট হইবে না, এবং কেহই আমার হস্ত হইতে তাহাদিগকে কাড়িয়া লইবে না।”—যোহন ১০:২৮.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ধর্মীয় নেতাদের যিশু কোন সাবধানবাণী দিয়েছেন?

• আজকে লক্ষ লক্ষ লোক কোন বিপদজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়?

• আমাদের কোন সূক্ষ্ম ধরনের প্রতিমাপূজা থেকে পলায়ন করতে হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮, ৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি যখন “পলায়ন” শব্দটি শোনেন, তখন কোন বিষয়টা চিন্তা করেন?