সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঘরে ঘরে পরিচর্যা—কেন এখন গুরুত্বপূর্ণ?

ঘরে ঘরে পরিচর্যা—কেন এখন গুরুত্বপূর্ণ?

ঘরে ঘরে পরিচর্যা—কেন এখন গুরুত্বপূর্ণ?

“তাঁহারা প্রতিদিন ধর্ম্মধামে ও বাটীতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।”—প্রেরিত ৫:৪২.

১, ২. (ক) যিহোবার সাক্ষিরা কোন পদ্ধতিতে প্রচার করার জন্য পরিচিত? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

 পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক জাতির কাছেই এটা এক পরিচিত দৃশ্য। পরিপাটী পোশাক পরিহিত দুজন ব্যক্তি একটা ঘরে যায় এবং গৃহকর্তাকে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে বাইবেল থেকে সংক্ষিপ্ত বার্তা জানানোর প্রচেষ্টা করে। গৃহকর্তা যদি বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখান, তাহলে তারা হয়তো বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি তুলে ধরে এবং বিনামূল্য একটা গৃহ বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব দেয়। এরপর তারা পরের ঘরটাতে চলে যায়। আপনি যদি এই কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন, তাহলে সম্ভবত দেখতে পান যে, এমনকি আপনি কথা বলতে শুরু করার আগেই লোকেরা প্রায়ই আপনাকে একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে শনাক্ত করে থাকে। বাস্তবিকই, ঘরে ঘরে পরিচর্যা আমাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।

প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার বিষয়ে যিশু যে-দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি। (মথি ২৮:১৯, ২০) আমরা বাজারে, রাস্তার কোণায় কোণায় এবং অন্যান্য জনসাধারণের এলাকায় সাক্ষ্য দিয়ে থাকি। (প্রেরিত ১৭:১৭) টেলিফোন ও চিঠির মাধ্যমে আমরা অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমরা সেই ব্যক্তিদেরকে বাইবেলের সত্য জানাই, যাদের সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন কাজের সময় দেখা হয়। এমনকি আমাদের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটও রয়েছে, যা ৩০০টারও বেশি ভাষায় বাইবেলভিত্তিক তথ্য লাভের সুযোগ প্রদান করে। * এইসমস্ত পদ্ধতি উত্তম ফলাফল নিয়ে আসে। তবে, অধিকাংশ জায়গায় সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের প্রধান উপায় হল ঘরে ঘরে প্রচার করা। প্রচার করার এই পদ্ধতির ভিত্তি কী? কীভাবে এটা আধুনিক দিনের ঈশ্বরের লোকেদের দ্বারা এতটা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে? আর কেন এখন তা গুরুত্বপূর্ণ?

প্রেরিতদের পদ্ধতি

৩. যিশু প্রচার সম্বন্ধে প্রেরিতদের কোন নির্দেশনা দিয়েছিলেন আর তাদেরকে যেভাবে প্রচার করতে হতো, সেই বিষয়ে এটা কী ইঙ্গিত দেয়?

ঘরে ঘরে প্রচার করার পদ্ধতির ভিত্তি শাস্ত্রে রয়েছে। যিশু যখন প্রেরিতদের প্রচার করার জন্য পাঠিয়েছিলেন, তখন তিনি তাদের এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন: “তোমরা যে নগরে কি গ্রামে প্রবেশ করিবে, তথাকার কোন্‌ ব্যক্তি যোগ্য, তাহা অনুসন্ধান করিও।” কীভাবে তাদের যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজতে হতো? যিশু এই বলে তাদেরকে লোকেদের বাড়িতে যেতে বলেছিলেন: “তাহার গৃহে প্রবেশ করিবার সময়ে সেই গৃহকে মঙ্গলবাদ করিও। তাহাতে সেই গৃহ যদি যোগ্য হয়, তবে তোমাদের শান্তি তাহার প্রতি বর্ত্তুক।” আগে থেকে কোনো আমন্ত্রণ ছাড়াই কি তারা সাক্ষাৎ করত? যিশুর পরের কথাগুলো লক্ষ করুন: “আর যে কেহ তোমাদিগকে গ্রহণ না করে, এবং তোমাদের কথা না শুনে, সেই গৃহ কিম্বা সেই নগর হইতে বাহির হইবার সময়ে আপন আপন পায়ের ধূলা ঝাড়িয়া ফেলিও।” (মথি ১০:১১-১৪) এই নির্দেশনা স্পষ্ট করে যে, প্রেরিতরা ‘চারিদিকে গ্রামে গ্রামে যাইবার, সর্ব্বত্র সুসমাচার প্রচার করিবার’ সময় তাদেরকেই লোকেদের সঙ্গে ঘরে সাক্ষাৎ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হতো।—লূক ৯:৬.

৪. বাইবেলের কোথায় নির্দিষ্টভাবে ঘরে ঘরে প্রচার সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে?

বাইবেল নির্দিষ্টভাবে বলে যে, প্রেরিতরা বাটীতে বা ঘরে ঘরে প্রচার করত। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত ৫:৪২ পদ তাদের সম্বন্ধে বলে: “তাঁহারা প্রতিদিন ধর্ম্মধামে ও বাটীতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।” প্রায় ২০ বছর পর, প্রেরিত পৌল ইফিষে মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে এই কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “কোন হিতকথা গোপন না করিয়া তোমাদিগকে সকলই জানাইতে, এবং সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে শিক্ষা দিতে, সঙ্কুচিত হই নাই।” সেই প্রাচীনরা বিশ্বাসী হওয়ার আগে কি পৌল তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন? স্পষ্টতই করেছিলেন, কারণ অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাদেরকে “ঈশ্বরের প্রতি মনপরিবর্ত্তন এবং আমাদের প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাস বিষয়ে” শিক্ষা দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২০:২০, ২১) প্রেরিত ২০:২০ পদের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে রবার্টসনের নতুন নিয়মের শব্দচিত্র (ইংরেজি) বইটি বলে: “এটা লক্ষ করা যথার্থ যে, এই মহান প্রচারকরা ঘরে ঘরে প্রচার করত।”

আধুনিক দিনের পঙ্গপাল

৫. যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে প্রচার কাজ সম্বন্ধে কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে?

প্রথম শতাব্দীতে যে-সাক্ষ্যদানের কাজ করা হয়েছিল, তা ছিল আমাদের দিনে করা হবে এমন এক মহৎ কাজের পূর্বাভাস মাত্র। ভাববাদী যোয়েল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের প্রচার কাজকে পঙ্গপালসহ বিভিন্ন পতঙ্গের ধ্বংসাত্মক মহামারীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। (যোয়েল ১:৪) একটা বাহিনীর মতো অগ্রসর হয়ে পঙ্গপাল বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে, ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং তাদের পথে আসা সমস্তকিছু গোগ্রাসে গিলে ফেলে। (পড়ুন, যোয়েল ২:২, ৭-৯.) আধুনিক দিনে সাক্ষ্যদানের কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের লোকেদের অধ্যবসায় ও পুঙ্খানুপুঙ্খতার কী এক স্পষ্ট চিত্র! ভবিষ্যদ্বাণীমূলক এই চিত্রের পরিপূর্ণতায় অভিষিক্ত খ্রিস্টান এবং তাদের “আরও মেষ” সহযোগীদের দ্বারা ব্যবহৃত সবচেয়ে প্রধান পদ্ধতি হল ঘরে ঘরে পরিচর্যা। (যোহন ১০:১৬) কীভাবে আমরা যিহোবার সাক্ষিরা, প্রচারের বিষয়ে প্রেরিতদের এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছি?

৬. উনিশশো বাইশ সালে ঘরে ঘরে সাক্ষ্যদানের বিষয়ে কোন উৎসাহ প্রদান করা হয়েছিল কিন্তু কেউ কেউ কীভাবে সাড়া দিয়েছিল?

উনিশশো উনিশ সাল থেকে সাক্ষ্যদানের কাজে প্রত্যেক খ্রিস্টানের ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করার দায়িত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় “পরিচর্যা অপরিহার্য” শিরোনামের একটা প্রবন্ধে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের “সক্রিয়ভাবে লোকেদের কাছে ছাপানো বার্তা নিয়ে যাওয়ার এবং তাদের ঘরে তাদের সঙ্গে কথা বলার ও স্বর্গরাজ্য যে সন্নিকট, সেই সম্বন্ধে সাক্ষ্যদান করার” গুরুত্ব মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বুলেটিন-এ (এখন আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা) বিস্তারিত উপস্থাপনাগুলো জোগানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, যারা আসলে ঘরে ঘরে প্রচার করত, তাদের সংখ্যা প্রথমে সামান্য ছিল। কেউ কেউ তা করা থেকে বিরত ছিল। তারা বিভিন্ন আপত্তি জানিয়েছিল কিন্তু মূল সমস্যাটা ছিল যে, কেউ কেউ ঘরে ঘরে প্রচার করাটাকে তাদের মর্যাদাকে খর্ব করে বলে মনে করেছিল। ক্ষেত্রের পরিচর্যার ওপর জোর দেওয়া যত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল, ততই এই ধরনের অনেক ব্যক্তি ধীরে ধীরে যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছিল।

৭. উনিশশো পঞ্চাশের দশকে কোন প্রয়োজন স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল?

পরের দশকগুলোতে প্রচার কাজের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে, ঘরে ঘরে পরিচর্যার ক্ষেত্রে আরও ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতির কথা বিবোচনা করুন। ১৯৫০ এর দশকের প্রথম দিকে সেই দেশের ২৮ শতাংশ সাক্ষি তাদের প্রচার কাজকে ইস্তাহার বিতরণ অথবা পত্রিকা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে সীমিত রেখেছিল। ৪০ শতাংশেরও বেশি সাক্ষি প্রচার কাজে অনিয়মিত ছিল এবং কোনো সাক্ষ্যদান না করেই মাসের পর মাস কাটিয়ে দিত। সমস্ত উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টানকে ঘরে ঘরে প্রচার করতে সাহায্য করার জন্য কী করা যেতে পারে?

৮, ৯. উনিশশো তিপ্পান্ন সালে কোন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল আর ফলাফল কী হয়েছিল?

উনিশশো তিপ্পান্ন সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে, ঘরে ঘরে পরিচর্যার ওপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। ভাই নেথেন এইচ. নর ঘোষণা করেছিলেন যে, সমস্ত খ্রিস্টান অধ্যক্ষের প্রধান কাজ হওয়া উচিত প্রত্যেক খ্রিস্টানকে নিয়মিতভাবে ঘরে ঘরে প্রচার করার এক পরিচারক হয়ে উঠতে সাহায্য করা। “প্রত্যেকের,” তিনি বলেছিলেন, “ঘরে ঘরে সুসমাচার প্রচার করতে সমর্থ হওয়া উচিত।” এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশ্বব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। যারা তখনও ঘরে ঘরে প্রচার করেনি, তাদেরকে লোকেদের ঘরে যাওয়ার, তাদের সঙ্গে বাইবেল থেকে যুক্তি করার এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।

এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ফলাফল ছিল উল্লেখযোগ্য। এক দশকের মধ্যে, পৃথিবীব্যাপী প্রকাশকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ১০০ শতাংশ, পুনর্সাক্ষাতের সংখ্যা ১২৬ শতাংশ এবং বাইবেল অধ্যয়নের সংখ্যা ১৫০ শতাংশ। আজকে, প্রায় ৭০ লক্ষ রাজ্য প্রকাশক পৃথিবীব্যাপী সুসমাচার প্রচার করছে। এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হল, ঘরে ঘরে পরিচর্যায় তাঁর লোকেদের প্রচেষ্টার ওপর যিহোবার আশীর্বাদের একটা প্রমাণ।—যিশা. ৬০:২২.

রক্ষার জন্য লোকেদের চিহ্নিত করা

১০, ১১. (ক) যিহিষ্কেলকে কোন দর্শন দেওয়া হয়েছিল, যেমনটা যিহিষ্কেল ৯ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে? (খ) কীভাবে সেই দর্শন আমাদের দিনে পরিপূর্ণ হচ্ছে?

১০ ঘরে ঘরে পরিচর্যার গুরুত্ব ভাববাদী যিহিষ্কেলকে দেওয়া দর্শন থেকে দেখা যেতে পারে। সেই দর্শনে যিহিষ্কেল অস্ত্রধারী ছয়জন পুরুষকে ও সেইসঙ্গে মসীনাবস্ত্র পরিহিত সপ্তম পুরুষকে দেখেছিলেন, যার কাছে লেখকের মস্যাধার ছিল। সপ্তম পুরুষকে বলা হয়েছে, “তুমি নগরের মধ্য দিয়া, যিরূশালেমের মধ্য দিয়া যাও, এবং তাহার মধ্যে কৃত সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্যের বিষয়ে যে সকল লোক দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে ও কোঁকায়, তাহাদের প্রত্যেকের কপালে চিহ্ন দেও।” চিহ্নিতকরণের সেই কাজের পর, বিনাশক অস্ত্রধারী ছয় পুরুষকে আদেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা এমন সকলকে হত্যা করে, যাদের সেই চিহ্ন নেই।—পড়ুন, যিহিষ্কেল ৯:১-৬.

১১ আমরা জানি যে, এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতায়, “মসীনা-বস্ত্র পরিহিত” পুরুষ আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অবশিষ্টাংশকে চিত্রিত করে। প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার কাজের মাধ্যমে অভিষিক্ত শ্রেণী সেই ব্যক্তিদের কপালে এক রূপক চিহ্ন দিয়ে থাকে, যারা খ্রিস্টের ‘আরও মেষের’ অংশ হয়। (যোহন ১০:১৬) সেই চিহ্ন কী? এটা এই প্রমাণ যে, যেমনটা তাদের অনাবৃত কপালে দেখা যায়, এই মেষেরা যিশু খ্রিস্টের উৎসর্গীকৃত ও বাপ্তাইজিত শিষ্য আর তারা খ্রিস্টতুল্য নতুন মনুষ্য বা ব্যক্তিত্ব পরিধান করেছে। (ইফি. ৪:২০-২৪) এই মেষতুল্য ব্যক্তিরা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সঙ্গে এক পাল হয় এবং তাদেরকে এখনও অন্যদের চিহ্ন দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহযোগিতা করে।—প্রকা. ২২:১৭.

১২. কপালে চিহ্ন দেওয়া সম্বন্ধে যিহিষ্কেলের দর্শন কীভাবে আমাদের পক্ষে মেষতুল্য ব্যক্তিদের খোঁজার গুরুত্বকে তুলে ধরে?

১২ যে-লোকেরা “দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে ও কোঁকায়,” তাদেরকে ক্রমাগত খোঁজা কেন এত জরুরি, সেই বিষয়ে যিহিষ্কেলের দর্শন একটা কারণ সম্বন্ধে তুলে ধরে। এর সঙ্গে জীবন জড়িত। শীঘ্রই, অস্ত্রধারী ছয় পুরুষ দ্বারা চিত্রিত যিহোবার দণ্ডদানকারী স্বর্গীয়বাহিনী সেই ব্যক্তিদের ধ্বংস করে দেবে, যাদের সেই রূপক চিহ্ন নেই। সেই আসন্ন বিচার সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, প্রভু যিশু ও সেইসঙ্গে ‘আপনার পরাক্রমের দূতগণ, যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন।’ (২ থিষল. ১:৭, ৮) লক্ষ করুন যে, লোকেরা সুসমাচারের প্রতি তাদের সাড়া দেওয়ার ওপর ভিত্তি করে বিচারিত হবে। তাই, ঈশ্বরের বার্তা ঘোষণা শেষ পর্যন্ত তীব্র গতিতে চলবে। (প্রকা. ১৪:৬, ৭) এটা যিহোবার সমস্ত উৎসর্গীকৃত দাসদের ওপর গুরু দায়িত্ব অর্পণ করে।—পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩:১৭-১৯.

১৩. (ক) প্রেরিত পৌল কোন দায়িত্ব বোধ করেছিলেন এবং কেন? (খ) আপনার এলাকার লোকেদের প্রতি আপনি কোন দায়িত্ব বোধ করেন?

১৩ প্রেরিত পৌল অন্যদেরকে সুসমাচার জানানোর জন্য ব্যক্তিগত দায়িত্ব বোধ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “গ্রীক ও বর্ব্বর, বিজ্ঞ ও অজ্ঞ, সকলের কাছে আমি ঋণী। তদনুসারে আমার যতটা সাধ্য, আমি রোম-নিবাসী তোমাদের কাছেও সুসমাচার প্রচার করিতে উৎসুক।” (রোমীয় ১:১৪, ১৫) তার প্রতি যে-করুণা দেখানো হয়েছিল, সেটার প্রতি কৃতজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে পৌল ঈশ্বরের সেই অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়া থেকে অন্যেরা যেন উপকার লাভ করতে পারে, সেইজন্য তাদেরকে সাহায্য করার প্রচেষ্টা করতে বাধ্যবাধকতা বোধ করেছিলেন, ঠিক যেমনটা তিনিও সেই দয়া থেকে উপকৃত হয়েছিলেন। (১ তীম. ১:১২-১৬) এটা ঠিক এমন ছিল যেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে তিনি নিজেকে ঋণী বলে মনে করেছিলেন, যে-ঋণ কেবল সেই ব্যক্তিকে সুসমাচার জানানোর মাধ্যমে পরিশোধ করা যেতে পারে। আপনিও কি আপনার এলাকার লোকেদের কাছে নিজেকে ঋণী বলে মনে করেন?—পড়ুন, প্রেরিত ২০:২৬, ২৭.

১৪. জনসাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে প্রচার করার পিছনে আমাদের প্রধান কারণ কী?

১৪ যদিও মানবজীবন রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ঘরে ঘরে প্রচার করার আরও মহৎ কারণ রয়েছে। মালাখি ১:১১ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণীতে যিহোবা ঘোষণা করেন: “সূর্য্যের উদয়স্থান অবধি তাহার অস্তগমনস্থান পর্য্যন্ত জাতিগণের মধ্যে আমার নাম মহৎ, এবং . . . আমার নামের উদ্দেশে . . . শুচি নৈবেদ্য উৎসৃষ্ট হইতেছে; কেননা জাতিগণের মধ্যে আমার নাম মহৎ।” এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতাস্বরূপ, যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাসেরা নম্রভাবে তাদের পরিচর্যার সময় সমস্ত পৃথিবীতে জনসাধারণ্যে তাঁর নামের প্রশংসা করছে। (যাত্রা. ৬:২; গীত. ১০৯:৩০; মথি ২৪:১৪) জনসাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে প্রচার করার পিছনে আমাদের প্রধান কারণ হল, যিহোবাকে “স্তব-বলি” প্রদান করা।—ইব্রীয় ১৩:১৫.

সামনে খুবই উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো রয়েছে

১৫. (ক) কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা সপ্তম দিনে যিরীহো প্রদক্ষিণ করার সময় তাদের কাজকে জোরদার করেছিল? (খ) এটা প্রচার কাজ সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত দেয়?

১৫ প্রচার কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন ঘটনাগুলো এখনও ঘটা বাকি রয়েছে? যিহোশূয়ের বইয়ে লিপিবদ্ধ যিরীহোর আক্রমণ একটা দৃষ্টান্ত জোগায়। মনে করে দেখুন যে, ঈশ্বর যিরীহো ধ্বংস করার ঠিক আগে ইস্রায়েলীয়দের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যেন তারা দিনে একবার করে ছয় দিন নগর প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু, সপ্তম দিনে তাদের কাজে লক্ষণীয় বৃদ্ধি দেখা দিয়েছিল। যিহোবা যিহোশূয়কে বলেছিলেন: “তোমরা সাত বার নগর প্রদক্ষিণ করিবে, ও যাজকগণ তূরী বাজাইবে। আর তাহারা উচ্চৈঃস্বরে মহাশব্দকারী শিঙ্গা বাজাইলে . . . সমস্ত লোক অতি উচ্চৈঃস্বরে সিংহনাদ করিয়া উঠিবে, তাহাতে নগরের প্রাচীর স্বস্থানে পড়িয়া যাইবে।” (যিহো. ৬:২-৫) আমাদের প্রচার কাজেও একই ধরনের প্রসার ঘটা সম্ভব। কোনো সন্দেহ নেই যে, বর্তমান বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের সময় আমরা এই জগতের ইতিহাসে ঈশ্বরের নাম ও রাজ্যের সবচেয়ে মহৎ সাক্ষ্যদান দেখতে পাব।

১৬, ১৭. (ক) ‘মহাক্লেশ’ শেষ হওয়ার আগে, কী সম্পাদিত হবে? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

১৬ এমন সময় হয়তো আসতে পারে, যখন আমরা যে-বার্তা ঘোষণা করি, তা ঠিক ‘সিংহনাদের’ মতো। প্রকাশিত বাক্যে জোরালো বিচারের বার্তাকে “বৃহৎ বৃহৎ শিলাবর্ষণ” হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলোর “এক একটী এক এক তালন্ত পরিমিত।” * আর প্রকাশিত বাক্য ১৬:২১ পদ বলে: “সেই আঘাত অতিশয় ভারী।” সেই চূড়ান্ত বিচারের বার্তা ঘোষণার ক্ষেত্রে ঘরে ঘরে পরিচর্যা ঠিক কোন ভূমিকা পালন করবে, তা দেখা এখনও বাকি আছে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, ‘মহাক্লেশ’ শেষ হওয়ার আগে, যিহোবার নাম এমনভাবে জানানো হবে, যেমনটা মানব ইতিহাসে আর কখনো জানানো হয়নি।—প্রকা. ৭:১৪; যাত্রা. ৩:১৫; যিহি. ৩৮:২৩.

১৭ সামনে যে-অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো রয়েছে, সেগুলোর জন্য অপেক্ষা করার সময় আমরা যেন ক্রমাগত উদ্যোগের সঙ্গে রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করে চলি। সেই কার্যভার পালন করার সময় ঘরে ঘরে পরিচর্যায় আমরা কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হই এবং কীভাবে আমরা সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ অফিসিয়াল ওয়েব সাইটের ঠিকানা হল, www.watchtower.org.

^ এই তথ্য যদি গ্রিক তালন্তকে নির্দেশ করে থাকে, তা হলে প্রতিটা শিলার ওজন হবে প্রায় ২০ কিলোগ্রাম।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ঘরে ঘরে প্রচার করার শাস্ত্রীয় ভিত্তি কী?

• কীভাবে আধুনিক দিনে ঘরে ঘরে পরিচর্যার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল?

• কেন যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাসদের প্রচার করার দায়িত্ব রয়েছে?

• সামনে খুবই উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনাগুলো রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

প্রেরিত পৌলের মতো আপনি কি অন্যদের কাছে প্রচার করার দায়িত্ব বোধ করেন?

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫৩ সালে ভাই নর