সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার”!

“বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার”!

“বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার”!

“রোপক কিছু নয়, সেচকও কিছু নয়, বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার।”—১ করি. ৩:৭.

১. কোন উপায়ে আমরা “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী”?

 “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী।” এভাবেই প্রেরিত পৌল সেই বিশেষ সুযোগের বিষয়ে বর্ণনা করেছেন, যা আমরা সকলে উপভোগ করতে পারি। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৩:৫-৯.) পৌল যে-কাজকে নির্দেশ করেছিলেন তা হল, শিষ্য তৈরির কাজ। তিনি এটাকে বীজ বপন ও জল সেচন করার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। আমরা যদি সেই অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজে সফল হতে চাই, তাহলে আমাদের যিহোবার সাহায্যের প্রয়োজন। পৌল আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, “বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার।”

২. “বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার,” এই বিষয়টা কেন আমাদের পরিচর্যার প্রতি এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে সাহায্য করে?

নম্র করে তোলার মতো এই বিষয়টা আমাদের পরিচর্যার প্রতি এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে সাহায্য করে। আমরা হয়তো প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করতে পারি কিন্তু এর ফলে আসা যেকোনো বৃদ্ধির জন্য সমস্ত প্রশংসা পরিশেষে যিহোবার কাছেই যায়। কেন? কারণ যত চেষ্টাই করি না কেন, আমরা কেউই বৃদ্ধির প্রক্রিয়া পুরোপুরি বুঝতে পারি না আর তা নিয়ন্ত্রণ করা তো দূরের কথা। রাজা শলোমন এই পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে প্রকাশ করেছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন: “সর্ব্বসাধক ঈশ্বরের কার্য্যও তুমি জান না।”—উপ. ১১:৫.

৩. আক্ষরিক বীজ বপন করার ও শিষ্য তৈরি করার মধ্যে কোন সাদৃশ্য রয়েছে?

বৃদ্ধির প্রক্রিয়া আমরা বুঝতে পারি না বলে কি আমাদের কাজ ব্যর্থ হয়ে যায়? না। বরং, তা এই কাজকে রোমাঞ্চকর ও আগ্রহজনক করে তোলে। রাজা শলোমন বলেছিলেন: “তুমি প্রাতঃকালে আপন বীজ বপন কর, এবং সায়ংকালেও হস্ত নিবৃত্ত করিও না। কেননা ইহা কিম্বা উহা, কোন্‌টা সফল হইবে, কিম্বা উভয় সমভাবে উৎকৃষ্ট হইবে, তাহা তুমি জান না।” (উপ. ১১:৬) সত্যিই, যখন আক্ষরিক বীজ বপন করার বিষয়টা আসে, তখন আমরা জানি না যে, তা কোথায় অঙ্কুরিত হবে বা আদৌ অঙ্কুরিত হবে কি না। অনেক বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। শিষ্য তৈরির কাজ সম্বন্ধেও একই কথা বলা যেতে পারে। যিশু এই বিষয়টা দুটি দৃষ্টান্তে তুলে ধরেছিলেন, যেগুলো মার্ক সুসমাচারের ৪ অধ্যায়ে আমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আসুন আমরা দেখি যে, এই দুটি দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

বিভিন্ন ধরনের ভূমি

৪, ৫. যিশুর বীজবাপকের দৃষ্টান্তটি সংক্ষেপে বলুন, যিনি বীজ ছড়িয়ে দেন।

মার্ক ৪:১-৯ পদে যেমন লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যিশু একজন বীজবাপক সম্বন্ধে বর্ণনা করেন, যিনি যে-বীজ ছড়িয়ে অথবা ছিটিয়ে দেন, তা বিভিন্ন স্থানে পড়ে: “দেখ, বীজবাপক বীজ বপন করিতে গেল; বপনের সময়ে কতক বীজ পথের পার্শ্বে পড়িল তাহাতে পক্ষীরা আসিয়া তাহা খাইয়া ফেলিল। আর কতক বীজ পাষাণময় স্থানে পড়িল, যেখানে অধিক মাটী পাইল না; তাহাতে অধিক মাটী না পাওয়াতে তাহা শীঘ্র অঙ্কুরিত হইয়া উঠিল, কিন্তু সূর্য্য উঠিলে পর পুড়িয়া গেল, এবং তাহার মূল না থাকাতে শুকাইয়া গেল। আর কতক বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়িল, তাহাতে কাঁটাবন বাড়িয়া তাহা চাপিয়া রাখিল, তাহার ফল ধরিল না। আর কতক বীজ উত্তম ভূমিতে পড়িল, তাহা অঙ্কুরিত হইয়া ও বাড়িয়া উঠিয়া ফল দিল; কতক ত্রিশ গুণ, কতক ষাট গুণ, ও কতক শত গুণ ফল দিল।”

বাইবেলের সময়ে সাধারণত ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বীজ বপন করা হতো। বীজবাপক তার জামার ভাঁজে অথবা একটা থলিতে বীজ নিয়ে হাতকে খুবই প্রসারিত করে তা ছড়িয়ে দিতেন। তাই, এই দৃষ্টান্তে বীজবাপক ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন ধরনের ভূমিতে বীজ বপন করেন না। বরং, ছড়িয়ে দেওয়া বীজ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পড়ে।

৬. কীভাবে যিশু বীজবাপকের দৃষ্টান্তটি ব্যাখ্যা করেছিলেন?

আমাদের এই দৃষ্টান্তের অর্থ অনুমান করার প্রয়োজন নেই। যিশু এই সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন, যেমনটা মার্ক ৪:১৪-২০ পদে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে: “সেই বীজবাপক বাক্য-বীজ বুনে। পথের পার্শ্বে যাহারা, তাহারা এমন লোক, যাহাদের মধ্যে বাক্য-বীজ বুনা যায়; আর যখন তাহারা শুনে, তৎক্ষণাৎ শয়তান আসিয়া, তাহাদের মধ্যে যাহা বপন করা হইয়াছিল, সেইবাক্য হরণ করিয়া লইয়া যায় আর সেইরূপ যাহারা পাষাণময় ভূমিতে উপ্ত তাহারা এমন লোক, যাহারা বাক্যটী শুনিয়া তৎক্ষণাৎ আহলাদপূর্ব্বক গ্রহণ করে; আর তাহাদের অন্তরে মূল নাই, কিন্তু তাহারা অল্প কালমাত্র স্থির থাকে, পরে সেই বাক্য হেতু ক্লেশ কিম্বা তাড়না ঘটিলে তৎক্ষণাৎ বিঘ্ন পায়। আর অন্য যাহারা কাঁটাবনের মধ্যে উপ্ত, তাহারা এমন লোক, যাহারা বাক্যটি শুনিয়াছে, কিন্তু সংসারের চিন্তা, ধনের মায়া ও অন্যান্য বিষয়ের অভিলাষ ভিতরে গিয়া ঐ বাক্য চাপিয়া রাখে, তাহাতে তাহা ফলহীন হয়। আর যাহারা উত্তম ভূমিতে উপ্ত, তাহারা এমন লোক, যাহারা সেই বাক্য শুনিয়া গ্রাহ্য করে, এবং কেহ ত্রিশ গুণ, কেহ ষাট গুণ ও কেহ শত গুণ, ফল দেয়।”

৭. বীজ ও বিভিন্ন ধরনের ভূমি কী চিত্রিত করে?

লক্ষ করুন, যিশু বলেননি যে, বিভিন্ন ধরনের বীজ ব্যবহার করা হচ্ছে। বরং, তিনি বিভিন্ন ধরনের ভূমিতে পড়া একই ধরনের বীজ সম্বন্ধে বলেন, যেগুলোর প্রত্যেকটা ভিন্ন ভিন্ন ফল উৎপন্ন করে। প্রথম ভূমির ধরন হল শক্ত বা কঠিন; দ্বিতীয়টা হল অগভীর; তৃতীয়টা কাঁটাবনের দ্বারা আবৃত; আর চতুর্থটা হল উত্তম অথবা ভাল ভূমি, যেখানে ফলন সন্তোষজনক। (লূক ৮:৮) বীজ কী? এটা হল, ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত রাজ্যের বার্তা। (মথি ১৩:১৯) বিভিন্ন ধরনের ভূমি কী চিত্রিত করে? বিভিন্ন ধরনের হৃদয়ের অবস্থাসম্পন্ন লোকেদের।—পড়ুন, লূক ৮:১২, ১৫.

৮. (ক) বীজবাপক কাকে চিত্রিত করে? (খ) রাজ্যের প্রচার কাজের প্রতি সাড়া কেন বিভিন্ন রকমের হয়?

বীজবাপক কাকে চিত্রিত করে? তিনি ঈশ্বরের সেই সহকার্যকারীদের চিত্রিত করেন, যারা রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করে। পৌল ও আপল্লোর মতো, তারা রোপণ ও জল সেচন করে। কিন্তু, যদিও তারা কঠোর পরিশ্রম করে, তাদের ফলাফল ভিন্ন হয়। কেন? সেই ব্যক্তিদের হৃদয়ের বিভিন্ন অবস্থার জন্য, যারা বার্তা শুনে থাকে। দৃষ্টান্তে, এই ফলাফলের ওপর বীজবাপকের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এটা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক, বিশেষভাবে আমাদের সেই বিশ্বস্ত ভাই ও বোনদের জন্য, যারা আপাতদৃষ্টিতে সামান্য বাস্তব ফলাফলসহ অনেক বছর ধরে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক দশক ধরে কাজ করছে! * কেন সান্ত্বনাদায়ক?

৯. প্রেরিত পৌল ও যিশু উভয়েই কোন সান্ত্বনামূলক সত্যের ওপর জোর দিয়েছিল?

বীজবাপকের বিশ্বস্ততা তার কাজের ফলাফল দ্বারা পরিমাপ করা হয় না। এই বিষয়টা পৌল পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “যাহার যেরূপ নিজের শ্রম, সে তদ্রূপ বেতন পাইবে।” (১ করি. ৩:৮) বেতন বা পুরস্কার হল শ্রম অনুসারে, সেই শ্রমের ফলাফল অনুসারে নয়। একইভাবে, যিশুও এই বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছিলেন, যখন তাঁর শিষ্যরা প্রচার কাজ থেকে ফিরে এসেছিল। তারা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল কারণ যিশুর নাম ব্যবহার করায় ভূতগণ তাদের বশীকৃত হয়েছিল। সেটা যত রোমাঞ্চকরই হোক না কেন, যিশু তাদের বলেছিলেন: “আত্মারা যে তোমাদের বশীভূত হয়, ইহাতে আনন্দ করিও না; কিন্তু তোমাদের নাম যে স্বর্গে লিখিত আছে, ইহাতেই আনন্দ কর।” (লূক ১০:১৭-২০) এমনকি যেখানে একজন বীজবাপক হয়তো তার কাজের ফলস্বরূপ অনেক বৃদ্ধি না-ও দেখে থাকেন, তবুও এটা বোঝায় না যে তিনি অন্যদের চেয়ে কম অধ্যবসায়ী অথবা কম বিশ্বস্ত ছিলেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফলাফল শ্রোতার হৃদয়ের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু, ঈশ্বরই মূলত বৃদ্ধি দান করেন!

যারা বাক্য শোনে, তাদের দায়িত্ব

১০. যে-ব্যক্তি বাক্য শোনেন, তিনি উত্তম ভূমির সমরূপ কি না, তা কোন বিষয়টা নির্ধারণ করে?

১০ যারা বাক্য শোনে, তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাদের সাড়া দেওয়ার বিষয়টা কি পূর্বেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল? না। তারা উত্তম ভূমির সমরূপ হবে কি না, তা তাদের নিজেদের বাছাই করার বিষয়। বস্তুতপক্ষে, একজন ব্যক্তির হৃদয়ের অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে ভাল বা খারাপ হতে পারে। (রোমীয় ৬:১৭) যিশু তাঁর দৃষ্টান্তে বলেছিলেন যে, কেউ কেউ যখন বাক্য “শুনে, তৎক্ষণাৎ,” শয়তান এসে তা হরণ করে নিয়ে যায়। কিন্তু, এইরকমটাই যে ঘটতে হবে এমন নয়। যাকোব ৪:৭ পদে খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করা হয়েছে, যেন তারা “দিয়াবলের প্রতিরোধ” করে আর তাহলে সে তাদের কাছ থেকে পলায়ন করবে। যিশু অন্যদের কথাও বলেছেন, যারা প্রথম প্রথম আনন্দের সঙ্গে বাক্য গ্রহণ করে অথচ পরে “তাহাদের অন্তরে মূল নাই” বলে বিঘ্ন পায়। কিন্তু, ঈশ্বরের দাসদের “বদ্ধমূল ও সংস্থাপিত” হওয়ার জন্য উপদেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা “প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা কি” তা বুঝতে “এবং জ্ঞানাতীত যে খ্রীষ্টের প্রেম, তাহা যেন জানিতে সমর্থ” হয়।—ইফি. ৩:১৭-১৯; কল. ২:৬, ৭.

১১. কীভাবে একজন ব্যক্তি চিন্তাভাবনা ও ধনের দ্বারা বাক্যকে চেপে রাখা এড়াতে পারে?

১১ অন্য যে-ব্যক্তিরা বাক্য শুনেছিল, তাদেরকে এমনভাবে চিত্রিত করা হয়েছে যে, তারা বাক্যকে “সংসারের চিন্তা, ধনের মায়া” দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হতে ও চেপে রাখতে দেয়। (১ তীম. ৬:৯, ১০) কীভাবে তারা তা এড়াতে পারে? প্রেরিত পৌল উত্তর দেন: “তোমাদের আচার ব্যবহার ধনাসক্তিবিহীন হউক; তোমাদের যাহা আছে, তাহাতে সন্তুষ্ট থাক; কারণ তিনিই বলিয়াছেন, ‘আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।’”—ইব্রীয় ১৩:৫.

১২. উত্তম ভূমির দ্বারা চিত্রিত ব্যক্তিরা কেন ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ ফল উৎপন্ন করে?

১২ শেষে যিশু বলেন যে, যারা উত্তম ভূমিতে উপ্ত হয়েছে, তারা “কতক ত্রিশ গুণ, কতক ষাট গুণ, ও কতক শত গুণ ফল” দেয়। এমনকি যদিও বাক্যের প্রতি সাড়া দেয় এমন কিছু ব্যক্তির হৃদয়ের অবস্থা উত্তম এবং ফল দেয়, তবুও সুসমাচার ঘোষণা করায় তারা যা করতে সমর্থ, তা তাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী আলাদা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, বার্ধক্য অথবা দুর্বল করে দেয় এমন অসুস্থতা হয়তো কেউ কেউ প্রচার কাজে যতটুকু করতে পারে, সেটাকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। (তুলনা করুন, মার্ক ১২:৪৩, ৪৪.) আবারও, এই ক্ষেত্রে বীজবাপকের হয়তো সামান্যই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বা কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই কিন্তু তিনি যখন দেখেন যে, যিহোবা বৃদ্ধি দিয়েছেন, তখন তিনি আনন্দ করেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১২৬:৫, ৬.

যে-বীজবাপক নিদ্রা যান

১৩, ১৪. (ক) যিশুর দেওয়া সেই ব্যক্তির দৃষ্টান্তটি সংক্ষেপে বর্ণনা করুন, যিনি বীজ ছড়িয়ে দেন। (খ) বীজবাপক কাকে চিত্রিত করে এবং বীজ কী?

১৩ মার্ক ৪:২৬-২৯ পদে আমরা বীজবাপক সম্বন্ধে আরেকটা দৃষ্টান্ত পাই: “ঈশ্বরের রাজ্য এইরূপ। কোন ব্যক্তি যেন ভূমিতে বীজ বুনে; পরে রাত দিন নিদ্রা যায় ও উঠে, ইতিমধ্যে ঐ বীজ অঙ্কুরিত হইয়া বাড়িয়া উঠে, কিরূপে, তাহা সে জানে না। ভূমি আপনা আপনি ফল উৎপন্ন করে; প্রথমে অঙ্কুর, পরে শীষ, তাহার পর শীষের মধ্যে পূর্ণ শস্য। কিন্তু ফল পাকিলে সে তৎক্ষণাৎ কাস্তে লাগায়, কেননা শস্য কাটিবার সময় উপস্থিত।”

১৪ বীজবাপক কে? খ্রিস্টীয়জগতের কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, এটা স্বয়ং যিশুকে নির্দেশ করে। কিন্তু, কীভাবে এটা বলা যেতে পারে যে, যিশু নিদ্রা যান আর বীজ কীভাবে বৃদ্ধি পায়, তা তিনি জানেন না? নিশ্চিতভাবেই, যিশু বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সম্বন্ধে অবগত আছেন! এর পরিবর্তে, আগে উল্লেখিত বীজবাপকের মতো এই বীজবাপকও আলাদা আলাদা রাজ্য ঘোষণাকারীদের চিত্রিত করে, যারা তাদের উদ্যোগী প্রচার কাজের দ্বারা রাজ্যের বীজ বপন করে। ভূমিতে যে-বীজ বপন করা হয়, তা হল সেই বাক্য, যা তারা প্রচার করে থাকে। *

১৫, ১৬. যিশু তাঁর বীজবাপকের দৃষ্টান্তে আক্ষরিক ও আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি সম্বন্ধে কোন সত্য তুলে ধরেছিলেন?

১৫ যিশু বলেন যে, বীজবাপক “রাত দিন নিদ্রা যায় ও উঠে।” এটা বীজবাপকের অবহেলা নয়। এটা কেবল স্বাভাবিক জীবনযাপনকে চিত্রিত করে, যা অধিকাংশ লোকই অনুসরণ করে থাকে। এই পদে যে-শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, তা একটা সময়কাল ধরে দিনে কাজ করার ও রাতে ঘুমানোর এক ক্রমাগত প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। যিশু ব্যাখ্যা করেন যে, সেই সময়কালে কী ঘটেছিল। “ঐ বীজ অঙ্কুরিত হইয়া বাড়িয়া উঠে,” তিনি বলেন। এরপর যিশু আরও যুক্ত করেন: “কিরূপে, তাহা সে জানে না।” এই বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয় যে, বৃদ্ধিটা “আপনা আপনি” ঘটে থাকে। *

১৬ যিশু এখানে কোন বিষয়টা তুলে ধরেছিলেন? লক্ষ করুন যে, বৃদ্ধির ওপর এবং যে-ধারাবাহিক উপায়ে এটা ঘটে থাকে, সেটার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। “ভূমি আপনা আপনি ফল উৎপন্ন করে; প্রথমে অঙ্কুর, পরে শীষ, তাহার পর শীষের মধ্যে পূর্ণ শস্য।” (মার্ক ৪:২৮) এই বৃদ্ধি ধীরে ধীরে ও পর্যায়ক্রমে ঘটে। এটাকে জোর করা অথবা ত্বরান্বিত করা যায় না। আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির বেলায়ও একই বিষয় সত্য। এটা পর্যায়ক্রমে ঘটে, যখন যিহোবা সেই ব্যক্তির হৃদয়ে সত্যকে বৃদ্ধি পেতে দেন, যিনি “সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন।”—প্রেরিত ১৩:৪৮, NW; ইব্রীয় ৬:১.

১৭. সত্যের বীজ যখন ফল প্রদান করে, তখন কারা আনন্দে অংশগ্রহণ করে?

১৭ কীভাবে বীজবাপক “ফল পাকিলে . . . তৎক্ষণাৎ” শস্য কাটায় অংশ নেন? যিহোবা যখন রাজ্যের সত্যকে নতুন শিষ্যদের হৃদয়ে বৃদ্ধি পেতে দেন, তখন তারা পরিশেষে এতটা উন্নতি করে থাকে যে, তারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের জীবনকে তাঁর কাছে উৎসর্গ করে। তারা তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নেয়। যে-ভাইয়েরা ক্রমাগত পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হয়, তারা ধীরে ধীরে মণ্ডলীতে আরও দায়িত্ব নিতে সমর্থ হয়। মূল বীজবাপক ও সেইসঙ্গে এমন সমস্ত রাজ্য ঘোষণাকারী রাজ্যের ফল কাটে বা লাভ করে, যারা হয়তো সেই বীজ বপনে ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত হয়নি, যে-বীজ নির্দিষ্ট শিষ্য উৎপন্ন করেছে। (পড়ুন, যোহন ৪:৩৬-৩৮.) বস্তুতপক্ষে, “যে বুনে ও যে কাটে, উভয়ে একত্র আনন্দ করে।”

আজকে আমাদের জন্য শিক্ষা

১৮, ১৯. (ক) কীভাবে যিশুর দৃষ্টান্তের এই পুনরালোচনা আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহিত করেছে? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

১৮ মার্ক ৪ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ দুটি দৃষ্টান্তের পুনরালোচনা থেকে আমরা কী শিখেছি? আমরা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি যে, আমাদের একটা কাজ রয়েছে—বীজ বপন করা। আমাদের এই কাজ করা থামিয়ে দিতে কখনোই অজুহাত, সম্ভাব্য সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলোকে আমাদের সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। (উপ. ১১:৪) কিন্তু, একই সময়ে আমরা ঈশ্বরের সহকার্যকারী হিসেবে গণ্য হওয়ার অপূর্ব বিশেষ সুযোগ সম্বন্ধে অবগত আছি। যিহোবাই আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি দান করেন এবং আমাদের ও সেইসঙ্গে যারা বার্তা গ্রহণ করে, তাদের প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেন। আমরা বুঝতে পারি যে, কাউকে আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য আমরা জোর করতে পারি না। আর বৃদ্ধি যদি ধীরে ধীরে হয় অথবা না-ও হয়, তাহলেও আমাদের নিরুৎসাহিত অথবা হতাশ হয়ে পড়া উচিত নয়। এটা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, আমাদের সাফল্য যিহোবার প্রতি এবং তিনি আমাদের “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার” প্রচার করার যে-বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন, সেটার প্রতি আমাদের বিশ্বস্ততার দ্বারা পরিমাপ করা হয়।—মথি ২৪:১৪.

১৯ নতুন শিষ্য ও রাজ্যের কাজের বৃদ্ধি সম্বন্ধে যিশু আমাদের আর কী শিক্ষা দিয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর সুসমাচারের বিবরণে লিপিবদ্ধ অন্যান্য দৃষ্টান্তে পাওয়া যায়। পরের প্রবন্ধে আমরা এই দৃষ্টান্তগুলোর কয়েকটি বিশ্লেষণ করব।

[পাদটীকাগুলো]

^ আইসল্যান্ডে ভাই গেঅর্গ ফিউলনার লিন্ডালের পরিচর্যার উদাহরণ, যা যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ২০০৫ (ইংরেজি) বইয়ের ২১০-২১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই বিশ্বস্ত দাসদের অভিজ্ঞতাগুলো, যারা তাৎক্ষণিক ফলাফল ছাড়াই অনেক বছর ধরে আয়ার্ল্যান্ডে অধ্যবসায়ী ছিল, তা বিবেচনা করুন, যেগুলো যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ১৯৮৮ (ইংরেজি) বইয়ের ৮২-৯৯ পৃষ্ঠায় পাওয়া যায়।

^ আগে এই পত্রিকায় ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে, বীজ সেই ব্যক্তিত্বের গুণাবলিকে চিত্রিত করে, যেটিকে পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পরিপক্বতার দিকে বৃদ্ধি পেতে হবে। কিন্তু লক্ষ করা উচিত যে, যিশুর দৃষ্টান্তে বীজ খারাপ বীজে অথবা পচা ফলে পরিণত হয়নি। এটা কেবল পরিপক্বতার দিকে বৃদ্ধি পায়।—১৯৮০ সালের ১৫ জুন প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ১৭-১৯ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ এই অভিব্যক্তির আরেকটা ব্যবহার কেবল প্রেরিত ১২:১০ পদে পাওয়া যায়, যেখানে একটা লৌহদ্বারের বিষয়ে বলা হয়েছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থাৎ “আপনি” খুলে যায়।

আপনার কি মনে আছে?

• আক্ষরিক বীজ বপন করা ও রাজ্যের বার্তা প্রচার করার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য কী?

• কীভাবে যিহোবা একজন রাজ্য প্রচারকের বিশ্বস্ততা পরিমাপ করেন?

• যিশু আক্ষরিক ও আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির মধ্যে কোন সাদৃশ্যের ওপর জোর দিয়েছেন?

• কীভাবে “যে বুনে ও যে কাটে, উভয়ে একত্র আনন্দ করে”?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কেন যিশু ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচারককে একজন বীজবাপকের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

উত্তম ভূমির দ্বারা চিত্রিত ব্যক্তিরা তাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী রাজ্যের প্রচার কাজে সর্বান্তঃকরণে অংশ নেয়

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঈশ্বরই বৃদ্ধি দিতে থাকেন