সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একাগ্র হৃদয়ে আনুগত্য বজায় রাখুন

একাগ্র হৃদয়ে আনুগত্য বজায় রাখুন

একাগ্র হৃদয়ে আনুগত্য বজায় রাখুন

“আমি তোমার সত্যে চলিব; তোমার নাম ভয় করিতে আমার চিত্তকে একাগ্র কর।”—গীত. ৮৬:১১.

১, ২. (ক) গীতসংহিতা ৮৬:২, ১১ পদ অনুসারে, কী আমাদেরকে পরীক্ষা বা প্রলোভনের মুখে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করবে? (খ) কখন আন্তরিক আনুগত্য গড়ে তোলা উচিত?

 কেন কিছু খ্রিস্টান কারাবন্ধন বা তাড়না সত্ত্বেও, বছরের পর বছর ধরে বিশ্বস্ত থেকে পরবর্তী সময়ে বস্তুবাদিতার কাছে নতিস্বীকার করে? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের রূপক হৃদয়, অর্থাৎ আমরা ভিতরে যেরকম ব্যক্তি, সেটার সঙ্গে জড়িত। ৮৬তম গীত আনুগত্যকে একাগ্র হৃদয়ের সঙ্গে যুক্ত করে; অর্থাৎ এক সম্পূর্ণ হৃদয়, যেটা বিভক্ত নয়। “আমার প্রাণ রক্ষা কর, কেননা আমি সাধু [“অনুগত,” NW],” গীতরচক দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন। “হে আমার ঈশ্বর, তোমাতে বিশ্বাসকারী তোমার দাসকে তুমিই ত্রাণ কর।” দায়ূদ আরও প্রার্থনা করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে শিক্ষা দেও, আমি তোমার সত্যে চলিব; তোমার নাম ভয় করিতে আমার চিত্তকে একাগ্র কর।”—গীত. ৮৬:২, ১১.

যদি আমরা সম্পূর্ণ হৃদয়ে যিহোবার ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর না করি, তাহলে অন্যান্য উদ্বেগ ও স্নেহের সম্পর্কগুলো সত্য ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্যকে দুর্বল করে দেবে। স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাগুলো সেই রাস্তার নীচে লুকানো মাইনের মতো, যে-রাস্তায় আমরা হাঁটাচলা করি। এমনকি কঠিন পরিস্থিতিগুলোর মধ্যেও আমরা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তবুও আমরা শয়তানের কৌশল ও ফাঁদগুলোর শিকারে পরিণত হয়ে যেতে পারি। তাই, এটা কতই না গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা বা প্রলোভন আসার আগে আমরা যেন এখনই যিহোবার প্রতি আন্তরিক আনুগত্য গড়ে তুলি! “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা,” বাইবেল বলে, “তোমার হৃদয় রক্ষা কর।” (হিতো. ৪:২৩) এক্ষেত্রে আমরা যিহূদা থেকে আসা একজন ভাববাদীর অভিজ্ঞতা থেকে মূল্যবান শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি, যাকে যিহোবা ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়ামের কাছে পাঠিয়েছিলেন।

“আমি আপনাকে উপহার দিব”

৩. ঈশ্বরের ভাববাদীর বলা বিচারের বার্তার প্রতি যারবিয়াম কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

এই দৃশ্যটা কল্পনা করুন। ঈশ্বরের লোক সবেমাত্র রাজা যারবিয়ামকে একটা তিক্ত বার্তা প্রদান করেছেন, যিনি ইস্রায়েলের উত্তরে দশ বংশের রাজ্যে বাছুর উপাসনা প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাজা বার্তা শুনে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি তার লোকেদের সেই বার্তাবাহককে ধরার আদেশ দেন। কিন্তু, যিহোবা তাঁর দাসের সঙ্গে রয়েছেন। রাজা ক্রুদ্ধ হয়ে যে-হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তা তৎক্ষণাৎ শুকিয়ে যায় আর মিথ্যা উপাসনার জন্য ব্যবহৃত বেদি দুভাগ হয়ে যায়। হঠাৎ, যারবিয়ামের আচরণ পরিবর্তিত হয়। তিনি ঈশ্বরের লোককে অনুরোধ করেন: “আমার হস্ত যেন পুনরায় স্বস্থ হয়, এই জন্য আপনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে অনুগ্রহ যাচ্ঞা করুন, আমার নিমিত্ত প্রার্থনা করুন।” সেই ভাববাদী প্রার্থনা করেন আর রাজার হাত সুস্থ হয়ে যায়।—১ রাজা. ১৩:১-৬.

৪. (ক) কেন রাজার প্রস্তাব ভাববাদীর আনুগত্য সম্বন্ধে সত্যিই এক পরীক্ষা ছিল? (খ) ভাববাদীর উত্তর কী ছিল?

এরপর যারবিয়াম সত্য ঈশ্বরের লোককে বলেন: “আপনি আমার সহিত গৃহে আসিয়া আরাম করুন, আর আমি আপনাকে উপহার দিব।” (১ রাজা. ১৩:৭) ভাববাদী এখন কী করবেন? রাজার প্রতি বিচারের বার্তা ঘোষণা করার পর তার কি রাজার আতিথেয়তা গ্রহণ করা উচিত? (গীত. ১১৯:১১৩) নাকি রাজার নিমন্ত্রণকে তার প্রত্যাখ্যান করা উচিত, এমনকি যদিও রাজাকে দেখে মনে হয় যে, তিনি অনুশোচনা করেছেন? এটা নিশ্চিত যে, যারবিয়ামের তার বন্ধুদেরকে অনেক মূল্যবান উপহার দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে। যদি ঈশ্বরের ভাববাদী বস্তুগত বিষয়ের জন্য কোনোরকম গোপন আকাঙ্ক্ষা পুষে রাখেন, তাহলে রাজার প্রস্তাব সম্ভবত তার জন্য এক বিরাট প্রলোভন হবে। কিন্তু, যিহোবা ভাববাদীকে আদেশ দিয়েছেন: “তুমি অন্ন ভোজন ও জল পান করিও না, এবং যে পথ দিয়া যাইবে, সেই পথ দিয়া ফিরিয়া আসিও না।” তাই, সেই ভাববাদী স্পষ্টভাবে উত্তর দেন: “যদি আপনি আমাকে আপন বাটীর অর্দ্ধেক দেন, তথাপি আপনার সহিত প্রবেশ করিব না, আমি এই স্থানে অন্ন ভোজন বা জল পান করিব না।” আর সেই ভাববাদী অন্য পথ দিয়ে বৈথেল ত্যাগ করেন। (১ রাজা. ১৩:৮-১০) ভাববাদীর এই সিদ্ধান্ত আন্তরিক আনুগত্য সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?—রোমীয় ১৫:৪.

‘সন্তুষ্ট থাকুন’

৫. কীভাবে বস্তুবাদিতা আনুগত্যের সঙ্গে জড়িত এক বিষয়?

বস্তুবাদিতাকে হয়তো আনুগত্যের সঙ্গে জড়িত কোনো বিষয় বলে মনে না-ও হতে পারে কিন্তু আসলে এটা জড়িত। আমাদের সত্যিই যা প্রয়োজন, তা জোগানোর জন্য যিহোবার প্রতিজ্ঞায় কি আমরা নির্ভর করি? (মথি ৬:৩৩; ইব্রীয় ১৩:৫) জীবনকে আরও আরামদায়ক করে তুলবে এমন কিছু বস্তুগত বিষয় ছাড়া কি আমরা বেঁচে থাকতে পারব, যদি বর্তমানে সেগুলো অর্জন করা আমাদের সামর্থ্যের বাইরে থাকে? (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:১১-১৩.) আমরা এখনই যা চাই, সেগুলো পাওয়ার জন্য আমরা কি ঈশতান্ত্রিক বিশেষ সুযোগগুলোকে পরিত্যাগ করতে প্রলুব্ধ হই? যিহোবার প্রতি অনুগত সেবা কি আমাদের জীবনে প্রথম স্থানে রয়েছে? আমাদের উত্তরগুলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সেবা সর্বান্তঃকরণে করছি কি না, তার ওপর নির্ভর করবে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “ভক্তি, সন্তোষযুক্ত হইলে, মহালাভের উপায়, কেননা আমরা জগতে কিছুই সঙ্গে আনি নাই, কিছুই সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেও পারি না; কিন্তু গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে আমরা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিব।”—১ তীম. ৬:৬-৮.

৬. আমাদেরকে কোন “উপহারগুলোর” প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে আর আমরা সেগুলোকে গ্রহণ করব কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কী আমাদেরকে সাহায্য করবে?

উদাহরণস্বরূপ, আমাদের নিয়োগকর্তা হয়তো আমাদের আরও ভাল বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধাসহ পদোন্নতির প্রস্তাব দিতে পারেন। অথবা আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে, চাকরি খোঁজার জন্য যদি আমরা অন্য কোনো দেশে বা জায়গায় যাই, তাহলে আরও বেশি টাকাপয়সা অর্জন করতে পারব। প্রথমে, এইরকম সুযোগগুলোকে হয়তো যিহোবার কাছ থেকে এক আশীর্বাদ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের কি এর পিছনে উদ্দেশ্যগুলোকে পরীক্ষা করে দেখা উচিত নয়? আমাদের প্রধান চিন্তা হওয়া উচিত, “আমার সিদ্ধান্ত কীভাবে যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে?”

৭. কেন বস্তুবাদিতাপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাকে উপড়ে ফেলা গুরুত্বপূর্ণ?

শয়তানের বিধিব্যবস্থা অবিরতভাবে বস্তুবাদিতাকে উৎসাহিত করছে। (পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫, ১৬.) দিয়াবলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের হৃদয়কে কলুষিত করা। তাই, আমাদের হৃদয়ে যেকোনো বস্তুবাদিতাপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাকে শনাক্ত করতে ও তা উপড়ে ফেলতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। (প্রকা. ৩:১৫-১৭) জগতের সমস্ত রাজ্য দেওয়ার বিষয়ে শয়তানের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করতে যিশুর কোনো সমস্যাই ছিল না। (মথি ৪:৮-১০) তিনি সাবধান করেছিলেন: “সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” (লূক ১২:১৫) আনুগত্য আমাদের নিজেদের পরিবর্তে যিহোবার ওপর নির্ভর করতে সাহায্য করবে।

একজন বৃদ্ধ ভাববাদী “তাঁহাকে মিথ্যা কথা কহিলেন”

৮. ঈশ্বরের ভাববাদীর আনুগত্য কীভাবে পরীক্ষিত হয়েছিল?

ঈশ্বরের ভাববাদী যদি তার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য যাত্রা চালিয়ে যেতেন, তাহলে বিষয়গুলো ভালভাবেই সম্পন্ন হতো। কিন্তু, বলতে গেলে প্রায় তখনই তিনি আরেকটা পরীক্ষার মুখোমুখি হন। “বৈথেলে এক জন প্রাচীন ভাববাদী বাস করিতেন,” বাইবেল বলে এবং সেদিন যা যা ঘটেছিল, সেই বিষয়ে “তাঁহার এক পুত্ত্র আসিয়া . . . সমস্তই তাঁহাকে জ্ঞাত করিল।” সমস্ত বিবরণ শুনে সেই বৃদ্ধ ব্যক্তি তার ছেলেদেরকে গর্দভ সাজাতে বলেন, যাতে তিনি ঈশ্বরের ভাববাদীকে ধরতে পারেন। অল্পসময় পরই তিনি দেখতে পান যে, ভাববাদী একটা এলা বৃক্ষের নীচে বিশ্রাম নিচ্ছেন আর তিনি তাকে বলেন: “আমার সহিত গৃহে চলুন, আহার করুন।” সত্য ঈশ্বরের ভাববাদী যখন সেই নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন, তখন সেই বৃদ্ধ ব্যক্তি উত্তর দেন: “আপনি যেমন, আমিও তেমনি ভাববাদী; এক জন [স্বর্গীয়] দূত আমাকে সদাপ্রভুর বাক্য দ্বারা এই কথা কহিয়াছেন, তুমি উহাকে অন্ন ভোজন ও জল পান করাইবার জন্য সঙ্গে করিয়া তোমার গৃহে ফিরাইয়া আন।” কিন্তু শাস্ত্র বলে: “তিনি তাঁহাকে মিথ্যা কথা কহিলেন।”—১ রাজা. ১৩:১১-১৮.

৯. প্রতারক ব্যক্তিদের সম্বন্ধে শাস্ত্র কী বলে আর তারা কাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে?

বৃদ্ধ ভাববাদীর উদ্দেশ্য যা-ই থাকুক না কেন, তিনি মিথ্যা কথা বলেছিলেন। হয়তো সেই বৃদ্ধ ব্যক্তি একসময় যিহোবার একজন বিশ্বস্ত ভাববাদী ছিলেন। কিন্তু, এক্ষেত্রে তিনি প্রতারণাপূর্ণভাবে কাজ করছিলেন। শাস্ত্র এই ধরনের আচরণকে জোরালোভাবে নিন্দা করে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:৩২.) প্রতারক ব্যক্তিরা কেবলমাত্র নিজেদেরকেই আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে না কিন্তু প্রায়ই অন্যদেরও ক্ষতি করে থাকে।

বৃদ্ধ ব্যক্তির ‘সহিত তিনি ফিরিয়া গেলেন’

১০. ঈশ্বরের ভাববাদী কীভাবে বৃদ্ধ ব্যক্তির নিমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছিলেন আর এর ফলাফল কী হয়েছিল?

১০ যিহূদা থেকে আসা ভাববাদীর উচিত ছিল সেই বৃদ্ধ ভাববাদীর ছলনা বোঝা। তিনি নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন, ‘কেন যিহোবা অন্য কারো কাছে আমার জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়ে দূতকে প্রেরণ করবেন?’ ভাববাদী সেই নির্দেশনা স্পষ্ট করে দেওয়ার জন্য যিহোবাকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন কিন্তু শাস্ত্রে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে, তিনি এইরকম কিছু করেছিলেন। এর পরিবর্তে, “তিনি [সেই বৃদ্ধ ব্যক্তির] সহিত ফিরিয়া গিয়া তাঁহার গৃহে অন্ন ভোজন ও জল পান করিলেন।” এতে যিহোবা খুশি হননি। প্রতারিত ভাববাদী যখন শেষপর্যন্ত যিহূদায় ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন, তখন একটা সিংহ তাকে পেয়ে হত্যা করেছিল। ভাববাদী হিসেবে তার কর্মজীবনের কী এক দুঃখজনক পরিসমাপ্তি!—১ রাজা. ১৩:১৯-২৫. *

১১. অহিয় কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

১১ অন্যদিকে, ভাববাদী অহিয় তার বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত বিশ্বস্ত থেকেছিলেন, যাকে যারবিয়ামকে রাজা হিসেবে অভিষেক করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। অহিয় যখন বৃদ্ধ ও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তখন যারবিয়াম তার অসুস্থ ছেলের মঙ্গলের বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য তার স্ত্রীকে অহিয়র কাছে পাঠিয়েছিলেন। অহিয় সাহসের সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, যারবিয়ামের ছেলে মারা যাবে। (১ রাজা. ১৪:১-১৮) অহিয় যে-বিভিন্ন আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যে অবদান রাখার বিশেষ সুযোগও ছিল। কীভাবে? তার লেখাগুলো পরবর্তী সময়ে যাজক ইষ্রা উৎস বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।—২ বংশা. ৯:২৯.

১২-১৪. (ক) অপেক্ষাকৃত অল্পবয়স্ক ভাববাদীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঘটনা থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি? (খ) প্রাচীনদের দেওয়া বাইবেলভিত্তিক পরামর্শের প্রতি সতর্কতা ও প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা প্রদান করার প্রয়োজনীয়তাকে উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১২ বাইবেল বলে না যে, কেন সেই অপেক্ষাকৃত অল্পবয়স্ক ভাববাদী বিপথগামী হওয়ার ও বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে ভোজন-পান করার আগে যিহোবার সঙ্গে পরামর্শ করে নেননি। এইরকম কি হতে পারে যে, সেই বৃদ্ধ ব্যক্তি তাকে সেই কথাগুলোই বলেছিলেন, যা আসলে তিনি শুনতে চেয়েছিলেন? এখানে আমাদের জন্য কোন শিক্ষা রয়েছে? যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা যা চান, সেগুলোর যথার্থতা সম্বন্ধে আমাদের পুরোপুরি দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে হবে। আর যাকিছুই ঘটুক না কেন, সেগুলো অনুসরণ করার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।

১৩ পরামর্শের ব্যাপারে কেউ কেউ শুধু সেই বিষয়টাই শুনে থাকে, যা আসলে তারা শুনতে চায়। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রকাশককে হয়তো এমন একটা চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে, যেটা তার সেই সময়কে কাটছাঁট করতে পারে, যে-সময়টুকু তিনি পরিবার ও ঈশতান্ত্রিক কাজগুলোর জন্য ব্যয় করতে পারেন। তিনি হয়তো পরামর্শের জন্য একজন প্রাচীনকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। সেই প্রাচীন হয়তো শুরুতে এই কথা স্বীকার করেন যে, সেই প্রকাশক তার পরিবারকে কীভাবে সমর্থন করবে, তা তিনি বলে দিতে পারেন না। এরপর প্রাচীন হয়তো সেই ভাইকে যে-চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটা গ্রহণ করলে আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে কী কী বিপদ জড়িত রয়েছে, সেই বিষয়ে তার সঙ্গে পুনরালোচনা করতে পারেন। সেই ভাই কি কেবলমাত্র প্রাচীনের প্রারম্ভিক মন্তব্যগুলোই মনে রাখবেন নাকি পরবর্তী পরামর্শকে তিনি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন? সেই ভাইকে স্পষ্টতই নির্ধারণ করতে হবে যে, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কোন বিষয়টা তার জন্য সর্বোত্তম।

১৪ আরেকটা সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনা করুন। একজন বোন হয়তো একজন প্রাচীনকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, তার অবিশ্বাসী স্বামীর কাছ থেকে তার পৃথক থাকা উচিত কি না। সেই প্রাচীন নিঃসন্দেহে ব্যাখ্যা করবেন যে, সেই বোন পৃথক থাকবেন কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব হল তার নিজের। এরপর তিনি হয়তো সেই বিষয়ে বাইবেলের পরামর্শ পুনরালোচনা করতে পারেন। (১ করি. ৭:১০-১৬) প্রাচীন যা বলেন, সেই কথার প্রতি বোন কি যথার্থ বিবেচনা প্রদান করবেন? নাকি তিনি ইতিমধ্যেই স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন? এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, প্রার্থনাপূর্বক বাইবেলভিত্তিক পরামর্শ বিবেচনা করা তার জন্য বিজ্ঞতার কাজ হবে।

বিনয়ী হোন

১৫. ঈশ্বরের ভাববাদীর ভুল থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৫ যিহূদা থেকে আসা ভাববাদীর ভুল থেকে আমরা আর কী শিখতে পারি? হিতোপদেশ ৩:৫ পদ বলে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।” যিহূদা থেকে আসা ভাববাদী অতীতে যিহোবার ওপর যেভাবে নির্ভর করেছিলেন, সেইমতো নির্ভর করার পরিবর্তে, তিনি এই সময়টাতে তার নিজের বিচারবুদ্ধির ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করেছিলেন। তার ভুলের জন্য তাকে তার জীবন ও ঈশ্বরের কাছে সুনাম দুটোই হারাতে হয়েছিল। তার অভিজ্ঞতা যিহোবার প্রতি আমাদের সেবার ক্ষেত্রে বিনয়ী ও অনুগত হওয়ার গুরুত্বের ওপর কতই না জোর দেয়!

১৬, ১৭. কী আমাদেরকে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করবে?

১৬ আমাদের হৃদয়ের স্বার্থপর প্রবণতা হচ্ছে, আমাদেরকে ভ্রান্ত করা। “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য।” (যির. ১৭:৯) যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার জন্য ঔদ্ধত্য ও নিজের ওপর নির্ভর করার প্রবণতাসহ পুরোনো মনুষ্য বা ব্যক্তিত্বকে পরিত্যাগ করার জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে। আর আমাদের নতুন ব্যক্তিত্বকে পরিধান করতে হবে, “যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় [“আনুগত্যে,” NW] ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।”—পড়ুন, ইফিষীয় ৪:২২-২৪.

১৭ “প্রজ্ঞাই নম্রদিগের [‘বিনয়ীদের,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] সহচরী,” হিতোপদেশ ১১:২ পদ বলে। বিনয়ভাব সহকারে যিহোবার ওপর নির্ভর করা আমাদের গুরুতর ভুলগুলো এড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, অবসন্নতা বা নিরুৎসাহ সহজেই আমাদের বিচার করার ক্ষমতাকে বিকৃত করে দিতে পারে। (হিতো. ২৪:১০) আমরা হয়তো পবিত্র সেবার নির্দিষ্ট কিছু দিকে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারি এবং এইরকম মনে করা শুরু করি যে, বছরের পর বছর ধরে আমরা যথেষ্ট করেছি, এখন হয়তো অন্যদের সেই ভার বহন করার সময়। কিংবা আমরা হয়তো আরও “স্বাভাবিক” এক জীবন লাভ করার আকাঙ্ক্ষা করতে পারি। কিন্তু, ‘প্রাণপণ করা’ এবং ‘প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া পড়া’ আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করবে।—লূক ১৩:২৪; ১ করি. ১৫:৫৮.

১৮. কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার তা যদি আমরা না জানি, তাহলে আমরা কী করতে পারি?

১৮ মাঝে মাঝে, আমাদের হয়তো কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নিতে হতে পারে আর কোন পথ অবলম্বন করা সঠিক, তা হয়তো সঙ্গেসঙ্গে স্পষ্ট না-ও হতে পারে। তখন কি আমরা নিজেরাই বিষয়গুলোকে সমাধান করতে প্রলুব্ধ হব? যখনই আমরা নিজেদেরকে এইরকম পরিস্থিতিতে দেখতে পাব, তখনই আমরা সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করে বিজ্ঞ হব। “যদি তোমাদের কাহারও জ্ঞানের অভাব হয়,” যাকোব ১:৫ পদ বলে, “তবে সে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করুক; তিনি সকলকে অকাতরে দিয়া থাকেন।” আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদেরকে প্রয়োজনীয় পবিত্র আত্মা দান করবেন, যাতে আমরা উত্তম সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারি।—পড়ুন, লূক ১১:৯, ১৩.

অনুগত থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন

১৯, ২০. আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

১৯ সত্য উপাসনা থেকে শলোমনের বিচ্যুত হওয়ার পরের অশান্ত বছরগুলো ঈশ্বরের দাসদের আনুগত্যকে চরমভাবে পরীক্ষায় ফেলেছিল। এটা ঠিক যে, অনেকে কোনো না কোনোভাবে আপোশ করেছিল। তা সত্ত্বেও, কেউ কেউ যিহোবার প্রতি অনুগত থেকেছিল।

২০ প্রতিদিন আমাদের এমন বাছাই ও সিদ্ধান্তগুলোর মুখোমুখি হতে হয়, যেগুলো আমাদের আনুগত্যকে পরীক্ষায় ফেলে। আমরাও নিজেদের বিশ্বস্ত প্রমাণ করতে পারি। আমাদের হৃদয়কে একাগ্র করার সময় আসুন আমরা যিহোবার প্রতি সবসময় অনুগত থাকি, এই বিষয়ে পুরোপুরি আস্থা রাখি যে, তিনি তাঁর ‘অনুগত ব্যক্তিদের’ প্রতি অবিরত আশীর্বাদ বর্ষণ করবেন।—২ শমূ. ২২:২৬, NW.

[পাদটীকা]

^ যিহোবা সেই বৃদ্ধ ভাববাদীর মৃত্যু ঘটিয়েছিলেন কি না, সেই বিষয়ে বাইবেল কিছু বলে না।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• আমাদের হৃদয় থেকে বস্তুবাদিতাপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাগুলোকে উপড়ে ফেলার জন্য কেন আমাদের কাজ করা উচিত?

• কী আমাদেরকে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করবে?

• কীভাবে বিনয়ভাব আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

প্রলোভন প্রতিরোধ করতে কি আপনার সমস্যা হয়?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি বাইবেলভিত্তিক পরামর্শের প্রতি প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা দেখাবেন?