মর্যাদা প্রদর্শন করার মাধ্যমে যিহোবাকে সম্মান করুন
মর্যাদা প্রদর্শন করার মাধ্যমে যিহোবাকে সম্মান করুন
“[সদাপ্রভুর] ক্রিয়া প্রভা ও প্রতাপস্বরূপ।”—গীত. ১১১:৩.
১, ২. (ক) “মর্যাদা” শব্দটিকে আপনি কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন? (খ) এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে?
বাইবেল ঈশ্বর সম্বন্ধে বলে যে, তিনি মর্যাদা বা ‘প্রভা পরিহিত।’ (গীত. ১০৪:১) মানুষের কাছে মর্যাদা প্রদর্শন করার সঙ্গে মাঝে মাঝে পরিপাটী পোশাক-আশাক পরা জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত পৌল চেয়েছিলেন যেন খ্রিস্টান নারীরা ‘সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করে; বেণীবদ্ধ কেশপাশে ও স্বর্ণ বা মুক্তা বা বহুমূল্য পরিচ্ছদ দ্বারা নয়।’ (১ তীম. ২:৯) কিন্তু, যে-মর্যাদাপূর্ণ আচরণ যিহোবার ‘প্রভা ও প্রতাপকে’ সম্মানিত করে, তা এর চেয়ে আরও বেশি কিছু।—গীত. ১১১:৩.
২ বাংলা বাইবেলে “মর্যাদা” শব্দটি আসেনি। তবে ‘মর্যাদার’ জন্য ব্যবহৃত ইব্রীয় শব্দকে “প্রতাপ,” “মহিমা,” “গৌরব” এবং “সম্মান” হিসেবেও অনুবাদ করা যেতে পারে, যে-শব্দগুলো বাংলা বাইবেলে এসেছে। একটি অভিধানের সংজ্ঞা অনুযায়ী, “মর্যাদা” হল, “যোগ্য, সম্মানিত অথবা শ্রদ্ধাপূর্ণ হওয়ার গুণ বা অবস্থা।” আর কেউই যিহোবার চেয়ে বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য নয়। তাই, তাঁর উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে আমাদের কথায় ও কাজে মর্যাদাপূর্ণ হওয়া উচিত। কিন্তু, কেন মানুষ মর্যাদা সহকারে কাজ করতে পারে? কীভাবে যিহোবার মর্যাদা ও প্রতাপ স্পষ্ট হয়? ঈশ্বরের মর্যাদা দ্বারা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত? এই গুণ প্রদর্শন করার বিষয়ে যিশু খ্রিস্ট আমাদের কী শিক্ষা দিতে পারেন? আর কীভাবে আমরা ঈশ্বরীয় মর্যাদা প্রদর্শন করতে পারি?
যেকারণে আমরা মর্যাদা সহকারে কাজ করতে পারি
৩, ৪. (ক) আমাদেরকে প্রদত্ত মর্যাদার প্রতি আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত? (খ) গীতসংহিতা ৮:৫-৯ পদ ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে কাকে নির্দেশ করে? (পাদটীকা দেখুন।) (গ) অতীতে যিহোবা কাদেরকে মর্যাদা প্রদান করেছিলেন?
৩ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট হওয়ায় সব মানুষের মর্যাদা সহকারে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে। যিহোবা প্রথম মানুষকে পৃথিবীর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত করে তাকে মর্যাদা দিয়েছিলেন। (আদি. ১:২৬, ২৭) এমনকি মানুষ সিদ্ধতা থেকে পতিত হওয়ার পরও যিহোবা পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মানুষের দায়িত্ব সম্বন্ধে পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এভাবে যিহোবা এখনও মানুষকে মর্যাদা দিয়ে ‘বিভূষিত’ করেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৮:৫-৯.) * আমাদেরকে যে-মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে, তার জন্য মর্যাদাপূর্ণ সাড়া দেওয়া প্রয়োজন—আর তা হল শ্রদ্ধা ও মর্যাদা সহকারে যিহোবার মহান নামের প্রশংসা করা।
৪ যিহোবা বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের কিছুটা মর্যাদা দিয়েছেন, যারা তাঁকে পবিত্র সেবা প্রদান করে। ঈশ্বর হেবলের বলি গ্রহণ করার দ্বারা তাকে মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং তার ভাই কয়িনের বলি অগ্রাহ্য করেছিলেন। (আদি. ৪:৪, ৫) মোশিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যেন তিনি যিহোশূয়কে ‘তাহার সম্মানের ভাগী’ করেন, যে-ব্যক্তির তার পরে ইস্রায়েলীয়দের নেতা হওয়ার কথা ছিল। (গণনা. ২৭:২০) দায়ূদের পুত্র শলোমনের বিষয়ে বাইবেল বলে: “সদাপ্রভু সমস্ত ইস্রায়েলের দৃষ্টিতে শলোমনকে অতিশয় মহান্ করিলেন, এবং তাঁহাকে এমন রাজপ্রতাপ দিলেন, যাহা পূর্ব্বে ইস্রায়েলের কোন রাজা প্রাপ্ত হন নাই।” (১ বংশা. ২৯:২৫) ঈশ্বর পুনরুত্থিত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরকে অসাধারণ মর্যাদা প্রদান করবেন, যারা বিশ্বস্তভাবে “তাঁহার রাজ্যের প্রতাপের গৌরব” ঘোষণা করেছে। (গীত. ১৪৫:১১-১৩) এভাবে যিহোবার উচ্চপ্রশংসা করার দ্বারা যিশুর ‘আরও মেষের’ বৃদ্ধিরত দলেরও এক মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।—যোহন ১০:১৬.
যিহোবার মর্যাদা ও প্রতাপ স্পষ্ট হয়
৫. যিহোবার মর্যাদা কতটা মহৎ?
৫ মানুষের নগণ্যতার সঙ্গে ঈশ্বরের মহত্ত্বের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে এমন একটি গীতে গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রভু, সমস্ত পৃথিবীতে তোমার নাম কেমন মহিমান্বিত। তুমি আকাশমণ্ডলের ঊদ্ধের্বও তোমার প্রভা সংস্থাপন করিয়াছ।” (গীত. ৮:১) “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর” সৃষ্টির আগে থেকে শুরু করে, পৃথিবীকে এক পরমদেশ তৈরি করার এবং মানব পরিবারকে সিদ্ধতায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মহান পরিপূর্ণতার পর পর্যন্ত—অনন্ত অনন্তকাল পর্যন্ত—যিহোবা ঈশ্বরই হলেন নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে মহান ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।—আদি. ১:১; ১ করি. ১৫:২৪-২৮; প্রকা. ২১:১-৫.
৬. কেন গীতরচক বলেছেন যে, যিহোবা মর্যাদা পরিহিত?
৬ ঈশ্বরভয়শীল গীতরচক নিশ্চয়ই কত রোমাঞ্চিতই না হয়েছিলেন, যখন তিনি অগণিত চকচকে “রত্ন” দ্বারা খচিত তারা-ভরা রাতের আকাশের নীরব মহিমা দেখেছিলেন! ঈশ্বর কীভাবে ‘আকাশমণ্ডলকে চন্দ্রাতপের ন্যায় বিস্তার করিয়াছেন,’ তা দেখে বিস্মিত হয়ে গীতরচক যিহোবাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন, যিনি তাঁর চমৎকার সৃজনীশক্তির দক্ষতার কারণে মর্যাদা পরিহিত। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৪:১, ২.) অদৃশ্য এবং সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার মর্যাদা ও প্রতাপ তাঁর দৃশ্যত কাজের মধ্যে স্পষ্ট হয়।
৭, ৮. আকাশমণ্ডলে আমরা যিহোবার মর্যাদা ও প্রতাপের কোন প্রমাণ দেখতে পাই?
৭ উদাহরণস্বরূপ, মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কথা বিবেচনা করুন। এই বিপুল সংখ্যক তারকারাজি, গ্রহ এবং সৌরজগতে পৃথিবী গ্রহটাকে এত ক্ষুদ্রাকার বলে মনে হয়, যেন তা এক দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে একটা বালুকণার মতো। কেবল এই একটা ছায়াপথেই ১০,০০০ কোটিরও বেশি তারা রয়েছে! আপনি যদি না থেমে দিনের ২৪ ঘন্টার প্রতি সেকেন্ডে একটা করে তারা গোনেন, তাহলে ১০,০০০ কোটি তারা গোনার জন্য আপনার ৩,০০০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে।
৮ শুধুমাত্র মিল্কিওয়ে ছায়াপথেই যদি ১০,০০০ কোটি তারা থাকে, তাহলে নিখিলবিশ্বের বাকি ছায়াপথগুলো সম্বন্ধে কী বলা যায়? জ্যোতির্বিদরা অনুমান করে দেখেছে যে, ৫০০ কোটি থেকে শুরু করে ১২,৫০০ কোটি ছায়াপথের মধ্যে মিল্কিওয়ে হল মাত্র একটা ছায়াপথ। পুরো নিখিলবিশ্বে কতগুলো তারা রয়েছে? এর উত্তর নিশ্চয়ই বোধের অগম্য। তা সত্ত্বেও, যিহোবা “তারাগণের সংখ্যা গণনা করেন, সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে ডাকেন।” (গীত. ১৪৭:৪) যিহোবাকে এই ধরনের মর্যাদা ও প্রতাপ পরিহিত দেখে আপনি কি তাঁর মহান নামের উচ্চপ্রশংসা করতে অনুপ্রাণিত হন না?
৯, ১০. কীভাবে রুটি জোগানোর বিষয়টা আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রজ্ঞাকে মহিমান্বিত করে?
৯ আসুন এখন আমরা বিশাল আকাশমণ্ডল থেকে চোখ সরিয়ে খাদ্যের মতো সাধারণ কিছুর দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করি। যিহোবা কেবল ‘আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্ম্মাণই’ করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি “ক্ষুধিতদিগকে খাদ্য দান করেন।” (গীত. ১৪৬:৬, ৭) ঈশ্বরের ‘প্রভা ও প্রতাপ’ তাঁর মহৎ কাজগুলোর মধ্যে দেখা যায়, যেগুলোর মধ্যে তাঁর জোগানো গাছপালাও রয়েছে, যেখান থেকে খাদ্য তৈরি করা হয়। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১১:১-৫.) যিশু তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আজ আমাদিগকে দেও।” (মথি ৬:১১) ইস্রায়েলীয়রাসহ অনেক প্রাচীন লোকের খাদ্যতালিকার মধ্যে রুটি ছিল এক প্রধান খাদ্য। যদিও রুটিকে এক সাধারণ খাবার বলে বিবেচনা করা হয় কিন্তু যে-রাসায়নিক প্রক্রিয়া অল্প কয়েকটা মৌলিক উপাদানকে সুস্বাদু রুটিতে পরিণত করে, তা আদৌ সাধারণ বিষয় নয়।
১০ যখন বাইবেল লেখা হয়েছিল, তখন ইস্রায়েলীয়রা রুটি তৈরি করার জন্য গম বা যবের সুজি এবং জল ব্যবহার করত। রুটি তৈরির প্রক্রিয়ায় মাঝে মাঝে তাড়ি অথবা ইস্ট ব্যবহার করা হতো। এই সাধারণ উপাদানগুলো এক বিস্ময়কর সংখ্যক রাসায়নিক যৌগ গঠন করার জন্য সংযুক্ত হয়, যেগুলোর পরস্পরের সঙ্গে সক্রিয় সংযোগ রয়েছে। এই যৌগগুলোর মধ্যে সঠিক সম্পর্ক পুরোপুরি বোঝা যায় না। অধিকন্তু, দেহের মধ্যে রুটি যেভাবে পরিপাক হয়, সেটাও আরেকটা বিস্ময়কর জটিল প্রক্রিয়া। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, গীতরচক গেয়েছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার নির্ম্মিত বস্তু কেমন বহুবিধ! তুমি প্রজ্ঞা দ্বারা সে সমস্ত নির্ম্মাণ করিয়াছ”! (গীত. ১০৪:২৪) আপনিও কি একইভাবে যিহোবার প্রশংসা করতে অনুপ্রাণিত হন?
ঈশ্বরের মর্যাদা ও প্রতাপ দ্বারা আপনি কীভাবে প্রভাবিত হন?
১১, ১২. ঈশ্বরের সৃজনশীল কাজগুলো বিবেচনা করা আমাদের ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে?
১১ রাতের আকাশ দেখে বিস্মিত হওয়ার জন্য আমাদের জ্যোতির্বিদ হতে অথবা রুটি উপভোগ করার জন্য আমাদের রসায়নবিদ হতে হবে না। কিন্তু, আমাদের সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্ব উপলব্ধি করার জন্য আমাদেরকে তাঁর হস্তের কার্য বিবেচনা করার জন্য সময় করে নিতে হবে। এই ধরনের ধ্যান আমাদের জন্য কী করতে পারে? এর প্রভাব যিহোবার অন্য ধরনের কাজ নিয়ে ধ্যান করার মতো একই হয়।
১২ যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য যে-মহৎ কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলোর বিষয়ে দায়ূদ গেয়েছিলেন: “তোমার প্রভার গৌরবযুক্ত প্রতাপ, ও তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল আমি ধ্যান করিব” বা চিন্তা করব। (গীত. ১৪৫:৫) বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং আমরা যা পড়ি, তা নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় করে নিয়ে আমরা এই কাজগুলোর প্রতি চিন্তা দেখাই। এই ধরনের বিবেচনার প্রভাব কী? ঈশ্বরের মর্যাদা ও প্রতাপের প্রতি আমাদের উপলব্ধি বৃদ্ধি পায়। তাহলে, নিশ্চিতভাবে আমরা দায়ূদের সঙ্গে যিহোবার সম্মান করায় ও এই কথা বলায় যোগ দিতে পরিচালিত হই: “আমি তোমার মহিমার বর্ণনা করিব।” (গীত. ১৪৫:৬) ঈশ্বরের অপূর্ব কাজগুলো নিয়ে ধ্যান করার দ্বারা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী হওয়া এবং উদ্যম ও দৃঢ়সংকল্প সহকারে অন্যদেরকে তাঁর সম্বন্ধে বলতে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত। আপনি কি উদ্যোগের সঙ্গে সুসমাচার ঘোষণা করছেন এবং লোকেদেরকে যিহোবা ঈশ্বরের মর্যাদা, প্রতাপ ও মহত্ত্ব উপলব্ধি করার জন্য সাহায্য করছেন?
যিশু নিখুঁতভাবে ঈশ্বরের মর্যাদা প্রতিফলিত করেন
১৩. (ক) দানিয়েল ৭:১৩, ১৪ পদ অনুযায়ী, যিহোবা তাঁর পুত্রকে কী প্রদান করেছেন? (খ) রাজা হিসেবে যিশু তাঁর প্রজাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন?
১৩ ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্ট উদ্যোগের সঙ্গে সুসমাচার ঘোষণা করেছিলেন এবং তাঁর মর্যাদাপূর্ণ ও মহান স্বর্গীয় পিতাকে সম্মান করেছিলেন। যিহোবা তাঁর একজাত পুত্রকে ‘কর্ত্তৃত্ব ও রাজত্ব’ প্রদান করার দ্বারা তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন। (পড়ুন, দানিয়েল ৭:১৩, ১৪.) তা সত্ত্বেও, যিশু উদ্ধত অথবা উদাসীন নন। এর ঠিক বিপরীতে—তিনি হলেন একজন সমবেদনাময় শাসক, যিনি তাঁর প্রজাদের সীমাবদ্ধতা বোঝেন এবং তাদেরকে কিছুটা মর্যাদা দেন। একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন যে, মনোনীত রাজা হিসেবে যিশু সেই লোকেদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিলেন, যাদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল, বিশেষভাবে যারা প্রত্যাখ্যাত ও অন্যদের কাছে অপ্রিয় ছিল।
১৪. প্রাচীন ইস্রায়েলে কুষ্ঠরোগীদের কীভাবে দেখা হতো?
১৪ প্রাচীনকালে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই মর্মান্তিকভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করত। একটু একটু করে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির দেহের বিভিন্ন অংশ আক্রান্ত হতো। একজন কুষ্ঠরোগীকে সারিয়ে তোলাকে একজন ব্যক্তিকে মৃত্যু থেকে উত্থাপন করার মতোই কঠিন বলে মনে করা হতো। (গণনা. ১২:১২; ২ রাজা. ৫:৭, ১৪) কুষ্ঠরোগীদের অশুচি বলে ঘোষণা করা হতো এবং সমাজ থেকে তাদের ঘৃণাভরে পরিহার ও বিতাড়িত করা হতো। লোকেদের কাছাকাছি গেলে তাদেরকে চিৎকার করে এই সাবধানবাণী বলতে হতো: “অশুচি, অশুচি।” (লেবীয়. ১৩:৪৩-৪৬) একজন কুষ্ঠরোগী মৃত ব্যক্তির মতোই ছিল। রব্বিদের নথি অনুযায়ী, একজন কুষ্ঠরোগীকে যেকোনো ব্যক্তির প্রায় ১.৭ মিটারের মধ্যে আসার অনুমতি দেওয়া হতো। তথ্য অনুযায়ী, এমনকি দূর থেকেও কুষ্ঠরোগীকে দেখলে একজন ধর্মীয় নেতা তাকে দূরে রাখার জন্য পাথর ছুঁড়তেন।
১৫. একজন কুষ্ঠরোগীর সঙ্গে যিশু কেমন আচরণ করেছিলেন?
১৫ কিন্তু, একজন কুষ্ঠরোগীর প্রতি যিশুর প্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্য, যিনি তাঁর কাছে এসেছিলেন এবং সুস্থ হওয়ার জন্য বিনতি করেছিলেন। (পড়ুন, মার্ক ১:৪০-৪২.) কুষ্ঠরোগীকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে, যিশু সেই পরিত্যক্ত ব্যক্তির সঙ্গে সমবেদনা সহকারে ও মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে আচরণ করেছিলেন। যিশু যা দেখেছিলেন তা হল, একজন করুণ ব্যক্তির স্বস্তির প্রয়োজন রয়েছে। হৃদয়ে উদ্দীপিত হয়ে, যিশু তাঁর সমবেদনার অনুভূতির দ্বারা অবিলম্বে কাজ করতে পরিচালিত হয়েছিলেন। তিনি কাছে গিয়েছিলেন, কুষ্ঠরোগীকে স্পর্শ করেছিলেন এবং তাকে সুস্থ করেছিলেন।
১৬. অন্যদের সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে যিশুর ব্যবহার থেকে আপনি কী শিখেছেন?
১৬ যিশু যে-উপায়ে তাঁর পিতার মর্যাদা প্রতিফলিত করেছিলেন, তাঁর অনুসারী হিসেবে আমরা কীভাবে তা অনুকরণ করতে পারি? একটা উপায় হল, এটা স্বীকার করার মাধ্যমে যে, সমস্ত মানুষ—তা তাদের পদমর্যাদা, স্বাস্থ্য অথবা বয়স, যা-ই হোক না কেন—উপযুক্ত সমাদর বা সম্মান পাওয়ার যোগ্য। (১ পিতর ২:১৭) বিশেষভাবে যারা তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে যেমন, স্বামীদের, বাবামাদের ও খ্রিস্টান প্রাচীনদের তাদের যত্নাধীনে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি মর্যাদা দেখানো আর এভাবে তাদেরকে নিজ নিজ আত্মসম্মান বজায় রাখতে সাহায্য করা প্রয়োজন। এটা যে সমস্ত খ্রিস্টানের জন্য একটা চাহিদা, সেই বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে বাইবেল বলে: “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।”—রোমীয় ১২:১০.
উপাসনায় মর্যাদা প্রদর্শন করা
১৭. উপাসনায় যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার সময় মর্যাদা প্রদর্শন করার বিষয়ে আমরা শাস্ত্র থেকে কী শিখতে পারি?
১৭ বাইবেল ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা যখন উপাসনায় যিহোবার নিকটবর্তী হই, তখন মর্যাদা দেখানোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। “তুমি ঈশ্বরের গৃহে গমন কালে তোমার চরণ সাবধানে রাখ,” উপদেশক ৫:১ পদ বলে। মোশি ও যিহোশূয় উভয়েই যখন পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে ছিল, তখন তাদেরকে জুতো খুলে ফেলার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। (যাত্রা. ৩:৫; যিহো. ৫:১৫) তাদেরকে তা সম্মান অথবা শ্রদ্ধার ইঙ্গিত হিসেবে করতে হয়েছিল। ইস্রায়েলীয় যাজকদের “উলঙ্গতার আচ্ছাদনার্থে” শুক্ল জাঙ্ঘিয়া পরতে হতো। (যাত্রা. ২৮:৪২, ৪৩) এটা বেদির সামনে সেবা করার সময় তাদের শরীর অসংগতভাবে অনাবৃত হয়ে যাওয়া থেকে রোধ করত। যাজকের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে মর্যাদার ঈশ্বরীয় মানকে সমর্থন করতে হতো।
১৮. কীভাবে যিহোবার প্রতি আমাদের উপাসনায় মর্যাদা প্রদর্শিত হয়?
১৮ অতএব, উপাসনায় মর্যাদার সঙ্গে সম্মান জড়িত। সম্মান পাওয়ার যোগ্য হতে হলে আমাদেরও সম্মানপূর্বক কাজ করতে হবে। আমরা যে-মর্যাদা প্রদর্শন করি, তা ছদ্মবেশ অথবা নিছক শনাক্তিকরণ বস্ত্রের চেয়ে আরও বেশি কিছু হতে হবে। এটা মানুষের চোখ যা দেখতে পায়, সেটাকে ছাড়িয়ে ঈশ্বর যা দেখেন, তা—আমাদের হৃদয়কে—দেখা উচিত। (১ শমূ. ১৬:৭; হিতো. ২১:২) মর্যাদা আমাদের অংশ হওয়া উচিত আর আমাদের আচরণ, আমাদের মনোভাব, অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, এমনকি নিজেদেরকে আমরা যেভাবে দেখি ও নিজেদের সম্বন্ধে যেরকম বোধ করি, তাতে প্রভাব ফেলা উচিত। বস্তুতপক্ষে, সবসময় এবং আমাদের সমস্ত কথায় ও কাজে মর্যাদা প্রকাশ পাওয়া উচিত। যখন আমাদের আচরণ, চালচলন, পোশাক-আশাক ও সাজগোজের বিষয়টা আসে, তখন আমরা প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোতে মনোযোগ দিই: “আমরা কোন বিষয়ে কোন ব্যাঘাত জন্মাই না, যেন সেই পরিচর্য্যা-পদ কলঙ্কিত না হয়; কিন্তু ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া সর্ব্ববিষয়ে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি।” (২ করি. ৬:৩, ৪) আমরা ‘আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের শিক্ষা সর্ব্ববিষয়ে ভূষিত করি।’—তীত ২:১০.
ঈশ্বরীয় মর্যাদা প্রদর্শন করে চলুন
১৯, ২০. (ক) অন্যদের মর্যাদা দেওয়ার এক উত্তম উপায় কী? (খ) মর্যাদার বিষয়ে আমাদের সংকল্প কী হওয়া উচিত?
১৯ অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা, যারা ‘খ্রীষ্টের পক্ষেই রাজ-দূতের কর্ম্ম করিতেছে,’ তারা মর্যাদা প্রদর্শন করে। (২ করি. ৫:২০) “আরও মেষ,” যারা তাদেরকে অনুগতভাবে সমর্থন করে, তারা মশীহ রাজ্যের পক্ষে মর্যাদাসম্পন্ন দূত। একজন রাজদূত অথবা দূত তার সরকারের পক্ষে সাহসের সঙ্গে এবং মর্যাদা সহকারে কথা বলেন। তাই, আমাদেরও ঈশ্বরের সরকার অর্থাৎ রাজ্যের সমর্থনের পক্ষে মর্যাদা এবং সাহসের সঙ্গে কথা বলা উচিত। (ইফি. ৬:১৯, ২০) আর আমরা যখন অন্যদের কাছে “মঙ্গলের সুসমাচার” নিয়ে যাই, তখন আমরা কি তাদেরকে মর্যাদা দিচ্ছি না?—যিশা. ৫২:৭.
২০ মর্যাদা সহকারে আচরণ করার দ্বারা ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করার জন্য আমাদের সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত। (১ পিতর ২:১২) আসুন আমরা সবসময় তাঁর প্রতি, তাঁর উপাসনার প্রতি এবং আমাদের সহউপাসকদের প্রতি গভীর সম্মান দেখাই। আর যিহোবা, যিনি মর্যাদা ও প্রতাপ পরিহিত, তিনি যেন তাঁকে উপাসনা করার ক্ষেত্রে আমাদের মর্যাদাপূর্ণ আচরণে খুশি হন।
[পাদটীকা]
^ গীতসংহিতার অষ্টম গীতে দায়ূদের অভিব্যক্তিগুলো ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে সিদ্ধ ব্যক্তি যিশু খ্রিস্টকেও নির্দেশ করে।—ইব্রীয় ২:৫-৯.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• যিহোবার মর্যাদার প্রতাপ উপলব্ধি করা আমাদের ওপর কোন প্রভাব ফেলা উচিত?
• একজন কুষ্ঠরোগীর প্রতি যিশু যেভাবে সাড়া দিয়েছিলেন, তা থেকে মর্যাদা সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি?
• কীভাবে আমরা মর্যাদাপূর্ণ উপায়গুলোতে যিহোবাকে সম্মান করতে পারি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
কীভাবে যিহোবা হেবলকে মর্যাদা দিয়েছিলেন?
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার মহৎ কাজগুলো এমনকি রুটি জোগানোর মধ্যেও স্পষ্ট হয়
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন কুষ্ঠরোগীর সঙ্গে যিশুর আচরণ থেকে আপনি মর্যাদা সম্বন্ধে কী শিখেছেন?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
মর্যাদাপূর্ণ উপাসনার সঙ্গে যিহোবাকে সম্মান করা জড়িত