সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিবাহের মধ্যে “ত্রিগুণ সূত্র” বজায় রাখুন

বিবাহের মধ্যে “ত্রিগুণ সূত্র” বজায় রাখুন

বিবাহের মধ্যে “ত্রিগুণ সূত্র” বজায় রাখুন

“ত্রিগুণ সূত্র শীঘ্র ছিঁড়ে না।”—উপ. ৪:১২.

১. কে প্রথম মানব দম্পতিকে বিবাহে আবদ্ধ করেছিলেন?

 গাছপালা ও প্রাণীজগৎ সৃষ্টি করার পর যিহোবা ঈশ্বর প্রথম মানুষ আদমকে সৃষ্টি করেছিলেন। পরে ঈশ্বর আদমকে ঘোর নিদ্রায় মগ্ন করেছিলেন এবং আদমের জন্য তিনি এক নিখুঁত সহকারিণী তৈরি করার জন্য তার একটা পাঁজর ব্যবহার করেছিলেন। তাকে দেখার পর আদম বলেছিল: “ইনি আমার অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস।” (আদি. ১:২৭; ২:১৮, ২১-২৩) যিহোবা এই ঘটনার প্রতি তাঁর অনুমোদন প্রদর্শন করেছিলেন, প্রথম মানব দম্পতিকে বিবাহে আবদ্ধ এবং তাদের ওপর তাঁর আশীর্বাদ ঘোষণা করেছিলেন।—আদি. ১:২৮; ২:২৪.

২. শয়তান কীভাবে আদম ও হবার মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছিল?

দুঃখজনক যে, শীঘ্রই ঈশ্বর যেভাবে বিবাহকে চেয়েছিলেন সেটার ওপর আক্রমণ এসেছিল। কীভাবে? এক দুষ্ট আত্মা, যাকে পরে শয়তান বলে অভিহিত করা হয়, সে হবাকে সেই একমাত্র গাছ থেকে খাওয়ার জন্য ভুলিয়েছিল, যা ওই দম্পতির জন্য নিষিদ্ধ ছিল। পরে, আদমও তার স্ত্রীর মতো অবাধ্য হয়েছিল আর এভাবে তারা আসলে ঈশ্বরের ন্যায্য শাসন ও উত্তম নির্দেশনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। (আদি. ৩:১-৭) যিহোবা যখন সেই দম্পতিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তারা কী করেছে, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, আদম ও হবার সম্পর্কের মধ্যে ইতিমধ্যেই ফাটল ধরে গিয়েছে। আদম এই বলে তার স্ত্রীর দোষ দিয়েছিল: “তুমি আমার সঙ্গিনী করিয়া যে স্ত্রী দিয়াছ, সে আমাকে ঐ বৃক্ষের ফল দিয়াছিল, তাই খাইয়াছি।”—আদি. ৩:১১-১৩.

৩. কিছু যিহুদি কোন ভুল দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছিল?

এর পরের শতাব্দীগুলোতে শয়তান বৈবাহিক বিরোধ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ধূর্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, কখনো কখনো বিয়ে সম্বন্ধে এক অশাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার জন্য সে ধর্মীয় নেতাদের ব্যবহার করেছে। খাবারে অতিরিক্ত লবণ দেওয়ার মতো তুচ্ছ ব্যাপারের জন্য স্বামীদেরকে তাদের স্ত্রীদের পরিত্যাগ করার অনুমতি দিয়ে কিছু যিহুদি নেতা ঈশ্বরের মানগুলোকে হালকা করে দিয়েছিল। কিন্তু, যিশু উল্লেখ করেছিলেন: “ব্যভিচার দোষ ব্যতিরেকে যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে।”—মথি ১৯:৯.

৪. কীভাবে বর্তমানে বৈবাহিক ব্যবস্থা আক্রমণের মুখে রয়েছে?

শয়তান এখনও বৈবাহিক বন্ধনকে ছিন্ন করার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছে। সমকামী বিয়ে, অবিবাহিত দম্পতিদের একসঙ্গে বসবাস এবং সহজেই বিবাহবিচ্ছেদ করা প্রমাণ দেয় যে, এই ক্ষেত্রে সে অনেকটা সফল হয়েছে। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৪.) খ্রিস্টান হিসেবে আমরা বিয়ের ব্যাপারে বিদ্যমান বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এড়ানোর জন্য কী করতে পারি? আসুন আমরা এক সুখী ও সফল বিয়ের কিছু বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করি।

বিবাহের মধ্যে যিহোবাকে রাখুন

৫. বিবাহের ক্ষেত্রে “ত্রিগুণ সূত্র” অভিব্যক্তিটির অর্থ কী?

একটা বিয়েকে সফল করতে হলে সেই সম্পর্কের মধ্যে যিহোবাকে রাখতে হবে। তাঁর বাক্য বলে: “ত্রিগুণ সূত্র শীঘ্র ছিঁড়ে না।” (উপ. ৪:১২) “ত্রিগুণ সূত্র” এক রূপক অভিব্যক্তি। এই দৃষ্টান্তটি যখন বিয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, তখন এটা প্রথম দুটো সূত্র স্বামী ও স্ত্রীকে অন্তর্ভুক্ত করে, যারা প্রধান সূত্র যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে একত্রে যুক্ত থাকে। ঈশ্বরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া একটা দম্পতিকে সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদান করে আর এটা বিয়েতে সর্বোত্তম সুখ লাভ করার একটা চাবিকাঠি।

৬, ৭. (ক) ঈশ্বর যে তাদের বিবাহের মধ্যে রয়েছেন, তা নিশ্চিত করার জন্য খ্রিস্টানরা কী করতে পারে? (খ) একজন বোন তার স্বামী সম্বন্ধে কোন মূল্যায়ন করেছেন?

তাদের বিয়ে যে এইরকম ত্রিগুণ সূত্র, তা নিশ্চিত করার জন্য একটা বিবাহিত দম্পতি কী করতে পারে? গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত, আর তোমার ব্যবস্থা আমার অন্তরে আছে।” (গীত. ৪০:৮) একইভাবে, ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আমাদেরকে পূর্ণহৃদয়ে তাঁকে সেবা করতে অনুপ্রাণিত করে। এভাবে, উভয় সাথিকেই যিহোবার সঙ্গে এক উষ্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়া উচিত। এ ছাড়া, বিবাহিত সাথিদের উচিত ঈশ্বরের প্রতি তাদের সাথির প্রেমকে শক্তিশালী করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা।—হিতো. ২৭:১৭.

ঈশ্বরের আইন যদি সত্যিই আমাদের মধ্যে থাকে, তাহলে বিশ্বাস, প্রত্যাশা ও প্রেমের মতো গুণগুলো প্রদর্শিত হবে এবং সেগুলো বৈবাহিক বন্ধনকে উন্নত করতে সাহায্য করবে। (১ করি. ১৩:১৩) স্যান্ড্রা নামে একজন খ্রিস্টান, যিনি ৫০ বছর ধরে বিবাহিত, তিনি বলেন: “আমার স্বামীর যে-বিষয়গুলোকে আমি সবচেয়ে বেশি মূল্যবান বলে গণ্য করি, তা হল তার আধ্যাত্মিক নির্দেশনা ও উপদেশ এবং যিহোবার প্রতি তাঁর প্রেম, যা আমার প্রতি তার প্রেমের চেয়ে আরও বেশি জোরালো।” স্বামীরা, আপনাদের সম্বন্ধেও কি একই মন্তব্য করা যেতে পারে?

৮. বিবাহে “সুফল” লাভ করতে হলে কী প্রয়োজন?

এক দম্পতি হিসেবে, আপনারা কি আধ্যাত্মিক বিষয় ও রাজ্যের কাজগুলোকে জীবনে প্রথমে রাখেন? এ ছাড়া, যিহোবাকে সেবা করার ক্ষেত্রে আপনি কি আপনার সাথিকে সত্যিই আপনার সহযোগী হিসেবে দেখেন? (আদি. ২:২৪) বিজ্ঞ রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “এক জন অপেক্ষা দুই জন ভাল, কেননা তাহাদের পরিশ্রমে সুফল হয়।” (উপ. ৪:৯) বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বরের আশীর্বাদ রয়েছে এমন এক প্রেমময় ও স্থায়ী বন্ধনের মতো “সুফল” লাভ করতে হলে একজন স্বামী ও স্ত্রীকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

৯. (ক) স্বামীদের কোন দায়িত্বগুলো রয়েছে? (খ) কলসীয় ৩:১৯ পদ অনুসারে, একজন স্বামীর তার স্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা উচিত?

ঈশ্বর একটা বিবাহের মধ্যে আছেন কি না, তার একটা ইঙ্গিত হল স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই তাঁর চাহিদাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার চেষ্টা করে। পরিবারের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো জোগানোর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর। (১ তীম. ৫:৮) এ ছাড়া, তাদের স্ত্রীদের আবেগগত চাহিদাগুলোর প্রতি বিবেচনা দেখানোর জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করা হয়। কলসীয় ৩:১৯ পদে আমরা পড়ি: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর, তাহাদের প্রতি কটুব্যবহার করিও না।” একজন বাইবেল পণ্ডিত ব্যাখ্যা করেন যে, “কটুব্যবহার” অভিব্যক্তিটির অন্তর্ভুক্ত হল, “তাদের প্রতি তিক্ত কথাবার্তা বলা অথবা তাদেরকে আঘাত করা এবং তাদেরকে প্রাপ্য স্নেহ, যত্ন, ভরণপোষণ, সুরক্ষা ও সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত করা।” স্পষ্টতই, এই ধরনের আচরণ একটা খ্রিস্টান পরিবারে অনুপযুক্ত হবে। যে-স্বামী প্রেমময় উপায়ে তার মস্তকপদকে ব্যবহার করেন, তিনি তার স্ত্রীর পক্ষে বশীভূত থাকাকে সহজ করে দেন।

১০. খ্রিস্টান স্ত্রীদের কোন ধরনের মনোভাব দেখানো উচিত?

১০ যে-খ্রিস্টান স্ত্রীরা তাদের বিবাহের মধ্যে যিহোবাকে রাখার চেষ্টা করে, তারা অবশ্যই ঈশ্বরের চাহিদাগুলোও মেনে চলবে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও। কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক।” (ইফি. ৫:২২, ২৩) শয়তান এই মিথ্যা তুলে ধরে হবাকে ভুলিয়েছিল যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়া স্থায়ী সুখ নিয়ে আসবে। স্পষ্টতই, এখন অনেক বিয়েতে স্বাধীনচেতা মনোভাব দেখা যায়। কিন্তু, ঈশ্বরভয়শীল নারীদের কাছে তাদের প্রেমময় মস্তকের বশীভূত হওয়া অপ্রীতিকর নয়। তারা মনে রাখে যে, যিহোবা হবাকে তার স্বামীর “অনুরূপ [“পরিপূরক,” NW]” হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন, যেটাকে ঈশ্বর স্পষ্টতই এক সম্মানীয় অবস্থান হিসেবে গণ্য করেছিলেন। (আদি. ২:১৮) যে-খ্রিস্টান স্ত্রী স্বেচ্ছায় সেই ব্যবস্থাকে মেনে নেন, তিনি সত্যিই তার স্বামীর “মুকুটস্বরূপ।”—হিতো. ১২:৪.

১১. কোন বিষয়টা একজন ভাইয়ের বিবাহে সাহায্য করেছে বলে তিনি উপসংহার করেছেন?

১১ বিবাহের মধ্যে ঈশ্বরকে রাখার আরেকটা সহায়ক হল, দম্পতিদের একসঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করা। জেরাল্ড, যিনি ৫৫ বছর ধরে সুখী বিবাহিত ব্যক্তি, তিনি বলেন: “এক সফল বিয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল, একসঙ্গে বাইবেল পড়া ও অধ্যয়ন করা।” তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন বিষয়, বিশেষ করে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো একসঙ্গে করা সাথিদেরকে পরস্পরের ও যিহোবার অনেক কাছে নিয়ে আসে।” একসঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করা একটা পরিবারকে যিহোবার মানগুলো স্পষ্টভাবে মনে রাখতে, আধ্যাত্মিকতাকে গভীর করতে এবং ক্রমাগত উন্নতি করতে সাহায্য করে।

১২, ১৩. (ক) কেন এক দম্পতির জন্য একসঙ্গে প্রার্থনা করা এত গুরুত্বপূর্ণ? (খ) আর কোন আধ্যাত্মিক কাজগুলো একটা বিয়েকে শক্তিশালী করে?

১২ এ ছাড়া, সুখী বিবাহিত দম্পতিরা একসঙ্গে প্রার্থনা করে। একজন স্বামী যখন তাদের পরিস্থিতিতে অদ্বিতীয় এমন কিছু নির্দিষ্ট অনুরোধের বিষয়ে ‘তাহার মনের কথা ভাঙ্গিয়া বলে,’ তখন নিশ্চিতভাবে তা বিবাহ বন্ধনকে দৃঢ় করবে। (গীত. ৬২:৮) উদাহরণস্বরূপ, পরিচালনা ও নির্দেশনার জন্য আপনারা একসঙ্গে সর্বশক্তিমানের কাছে মিনতি করার পর আপনার সাথির সঙ্গে যেকোনো মতবিরোধকে দূর করা কতই না সহজ হবে! (মথি ৬:১৪, ১৫) প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে প্রত্যেক সাথির অন্যজনকে সাহায্য করার ও ‘পরস্পর সহনশীল হইবার, এবং পরস্পর ক্ষমা করিবার’ সংকল্প নেওয়া কতই না উপযুক্ত হবে। (কল. ৩:১৩) মনে রাখবেন যে, প্রার্থনা ঈশ্বরের প্রতি আপনার নির্ভরতাকে প্রকাশ করে। রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “সকলের চক্ষু তোমার অপেক্ষা করে।” (গীত. ১৪৫:১৫) আমরা যখন প্রার্থনায় ঈশ্বরের অপেক্ষা করি, তখন এটা জেনে আমাদের কম ভাবনা বা উদ্বিগ্নতা থাকে যে, ‘তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন।’—১ পিতর ৫:৭.

১৩ বিবাহের মধ্যে যিহোবাকে রাখার আরেকটা চাবিকাঠি হল, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করা এবং পরিচর্যায় একসঙ্গে কাজ করা। আমাদের সভাগুলোতে দম্পতিরা শেখে যে, কীভাবে “নানাবিধ চাতুরীর” সঙ্গে লড়াই করা যায়, যেগুলো শয়তান পরিবারগুলোকে ভেঙে ফেলার জন্য ব্যবহার করে। (ইফি. ৬:১১) আর যে-স্বামী ও স্ত্রী নিয়মিতভাবে পরিচর্যায় একসঙ্গে কাজ করে, তারা ‘সুস্থির হইতে, নিশ্চল হইতে’ শেখে।—১ করি. ১৫:৫৮.

যখন বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়

১৪. কোন বিষয়গুলো বৈবাহিক চাপের কারণ হতে পারে?

১৪ এটা ঠিক যে, উপরোক্ত পরামর্শগুলো নতুন বা প্রথম নয় কিন্তু সেগুলো নিয়ে আপনার সাথির সঙ্গে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করুন না কেন? দেখুন যে, আপনার বিবাহের কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না। তবে, বাইবেল স্বীকার করে যে, এমনকি যাদের বিবাহে ঈশ্বর আছেন, তাদেরও “দৈহিক ক্লেশ ঘটিবে।” (১ করি. ৭:২৮) মানব অসিদ্ধতা, এই ভক্তিহীন জগতের মন্দ প্রভাব এবং দিয়াবলের ফাঁদগুলোর কারণে এমনকি ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের বিয়েগুলোতেও চরম চাপ দেখা দিতে পারে। (২ করি. ২:১১) কিন্তু, এই ধরনের চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন। হ্যাঁ, মোকাবিলা করা যেতে পারে। বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োব তার পশুপাল, তার পরিচারক এবং তার সন্তানদের হারিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও বাইবেল বলে: “এই সকলেতে ইয়োব পাপ করিলেন না, এবং ঈশ্বরের প্রতি অবিবেচনার দোষারোপ করিলেন না।”—ইয়োব ১:১৩-২২.

১৫. চাপ লোকেদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পরিচালিত করতে পারে আর এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সাথিরা কীভাবে সর্বোত্তমভাবে মোকাবিলা করতে পারে?

১৫ অন্যদিকে, ইয়োবের স্ত্রী তাকে বলেছিলেন: “তুমি কি এখনও তোমার সিদ্ধতা রক্ষা করিতেছ? ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দিয়া প্রাণত্যাগ কর।” (ইয়োব ২:৯) বস্তুতপক্ষে, যখন দুঃখজনক ঘটনা অথবা অন্যান্য কঠিন পরিস্থিতি দেখা দেয়, তখন এর ফলে আসা আবেগগত অস্থিরতা একজন ব্যক্তিকে অবিবেচকের মতো কাজ করার দিকে পরিচালিত করতে পারে। “উপদ্রব জ্ঞানবানকে ক্ষিপ্ত করে,” একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছিলেন। (উপ. ৭:৭) আপনার সাথি যদি কষ্ট অথবা ‘উপদ্রবের’ কারণে আঘাত দেওয়ার মতো কথা বলেন, তাহলে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। একইরকম প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়তো একজনকে অথবা আপনাদের দুজনকেই এমন কিছু বলতে প্ররোচিত করবে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপই করে তুলবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:৮.) তাই, এমন যেকোনো “অসংলগ্ন” কথা উপেক্ষা করুন, যা হয়তো হতাশা ও নিরুৎসাহিতার কারণে আসতে পারে।—ইয়োব ৬:৩.

১৬. (ক) মথি ৭:১-৫ পদে প্রাপ্ত যিশুর কথাগুলো কীভাবে বিবাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? (খ) কেন বিবাহে ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ?

১৬ বিবাহিত সঙ্গীদের বাস্তবসম্মত প্রত্যাশাগুলো রাখতে হবে। একজন সাথি হয়তো অপরের মধ্যে কোনো চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করতে পারেন এবং এমন চিন্তা করতে পারেন, ‘আমি তাকে পরিবর্তন করতে পারব।’ প্রেম ও ধৈর্য সহকারে, আপনি হয়তো আপনার সাথিকে ধীরে ধীরে উন্নতি করায় সাহায্য করতে পারেন। তবে, এটা ভুলে যাবেন না, যে-ব্যক্তি অন্যদের ছোটোখাটো ভুলগুলো তুলে ধরে, তাকে যিশু এমন ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন, যিনি তার ভাইয়ের চোখে “কুটা” দেখতে পান কিন্তু তার নিজের চোখেই যে “কড়িকাট” আছে, তা দেখতে ব্যর্থ হন। যিশু আমাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা বিচার করিও না।” (পড়ুন, মথি ৭:১-৫.) এর অর্থ এই নয় যে, গুরুতর ত্রুটিগুলো উপেক্ষা করা উচিত। প্রায় ৪০ বছর ধরে বিবাহিত রবার্ট বলেছিলেন: “পরস্পরের সঙ্গে খোলাখুলি ও অকপট হওয়ার এবং এরপর উপযুক্ত পর্যবেক্ষণগুলো মেনে নিতে ইচ্ছুক হওয়ার জন্য বিবাহিত দম্পতিদের তাদের জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন করা প্রয়োজন।” তাই, ভারসাম্যপূর্ণ হোন। আপনি আপনার সাথির মধ্যে যে-গুণগুলো দেখতে চান, সেগুলো না থাকার কারণে বিরক্ত না হয়ে, এখন তার মধ্যে যে-ইতিবাচক গুণগুলো রয়েছে, সেগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখাতে এবং তা উপভোগ করতে শিখুন।—উপ. ৯:৯.

১৭, ১৮. যখন সমস্যা দেখা দেয়, তখন সাহায্যের জন্য আমরা কার শরণাপন্ন হতে পারি?

১৭ জীবনের পরিস্থিতিগুলো যখন পরিবর্তিত হয়, তখন বিভিন্ন পরীক্ষা আসতে পারে। একজন দম্পতির যখন সন্তান থাকে, তখন তারা হয়তো বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে পারে। একজন সাথি অথবা সন্তান হয়তো গুরুতর অসুস্থ হতে পারে। বয়স্ক বাবামাদের হয়তো বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা হয়তো বাড়ি থেকে অনেক দূরে চলে যেতে পারে। ঈশতান্ত্রিক সুযোগ অথবা দায়িত্বগুলোর যত্ন নিতে গিয়ে হয়তো অন্যান্য পরিবর্তন আসতে পারে। এইসমস্ত পরিবর্তন একটা সম্পর্কের মধ্যে কিছু চাপ ও উদ্বিগ্নতা নিয়ে আসতে পারে।

১৮ আপনার বিবাহের চাপ যদি আপনাকে এইরকম মনে করতে পরিচালিত করে যে, আপনি শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছেন, তাহলে আপনি কী করতে পারেন? (হিতো. ২৪:১০) হাল ছেড়ে দেবেন না! ঈশ্বরের একজন দাস বিশুদ্ধ উপাসনা ছেড়ে দিক, শয়তান এর চেয়ে ভাল আর কী-ই বা চাইতে পারে। কোনো দম্পতি যদি তা করে, তাহলে সে এমনকি আরও খুশি হবে। তাই, আপনার বিয়ে ত্রিগুণ সূত্রের মধ্যে আছে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য আপনার যথাসাধ্য করুন। বাইবেলে এমন অনেকের বিবরণ রয়েছে, যারা চরম পরীক্ষাগুলো সত্ত্বেও বিশ্বস্ত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, একবার দায়ূদ মনপ্রাণ খুলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে বলেছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমার প্রতি কৃপা কর, কেননা মর্ত্ত্য . . . আমার প্রতি উপদ্রব করে।” (গীত. ৫৬:১) আপনি কি কখনো “মর্ত্ত্য” বা মানুষের দ্বারা উপদ্রব ভোগ করেছেন? আপনি যে-চাপ ভোগ করেন, তা আপনার দূরের বা কাছের যার কাছ থেকেই আসুক না কেন, মনে রাখবেন: দায়ূদ সহ্য করার শক্তি পেয়েছিলেন আর আপনিও তা পেতে পারেন। “আমি সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিলাম, তিনি আমাকে উত্তর দিলেন,” দায়ূদ বলেছিলেন। “আমার সকল আশঙ্কা হইতে উদ্ধার করিলেন।”—গীত. ৩৪:৪.

ক্রমাগত আশীর্বাদ

১৯. কোন উপায়ে আমরা শয়তানের আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারি?

১৯ এই শেষকালে বিবাহিত সাথিদের ‘পরস্পরকে আশ্বাস দিতে, এবং এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুলিতে’ হবে। (১ থিষল. ৫:১১) ভুলে যাবেন না, শয়তান মনে করে যে, যিহোবার প্রতি আমাদের আনুগত্য স্বার্থপরতার ওপর ভিত্তি করে। ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠাকে ভেঙে ফেলার জন্য সে সম্ভাব্য যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করবে, যার মধ্যে একটা বিয়ে ভেঙে ফেলাও রয়েছে। শয়তানের আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের যিহোবার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রাখতে হবে। (হিতো. ৩:৫, ৬) পৌল লিখেছিলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।”—ফিলি. ৪:১৩.

২০. একজনের বিবাহের মধ্যে ঈশ্বরকে রেখে চললে কোন আশীর্বাদগুলো আসে?

২০ একটা বিবাহের মধ্যে ঈশ্বরকে রাখার ফলে অনেক আশীর্বাদ আসে। এটা ৫১ বছর ধরে বিবাহিত যোয়েল ও তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন: “আমার স্ত্রী ও আমাদের সুখী সাহচর্যের জন্য আমি সবসময় যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই। সে আমার জন্য এক আদর্শ সাথি।” তাদের রহস্যটা কী? “আমরা সবসময় পরস্পরের প্রতি দয়া, ধৈর্য ও প্রেম দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা করি।” এই বিধিব্যবস্থায় আমাদের মধ্যে কেউই এগুলো নিখুঁতভাবে দেখাতে পারবে না। তা সত্ত্বেও, আসুন বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানোর ও যিহোবাকে আমাদের বিবাহের মধ্যে রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি। আমরা যদি তা করি, তাহলে আমাদের বিয়ে ‘ত্রিগুণ সূত্রের’ মতো হবে, যা “শীঘ্র ছিঁড়ে না।”—উপ. ৪:১২.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• বিবাহের মধ্যে যিহোবাকে রাখার অর্থ কী?

• যখন বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়, তখন বিবাহিত সঙ্গীদের কী করা উচিত?

• কীভাবে আমরা জানি যে, কখন ঈশ্বর একটা বিবাহের মধ্যে আছেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

একসঙ্গে প্রার্থনা করলে তা বিবাহিত দম্পতিদের কঠিন পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করতে সাহায্য করে