যিহোবা—বাইবেলের সময়ে “নিস্তারকর্ত্তা”
যিহোবা—বাইবেলের সময়ে “নিস্তারকর্ত্তা”
“হে ঈশ্বর, আমার পক্ষে ত্বরা কর; তুমিই আমার সহায় ও আমার নিস্তারকর্ত্তা।”—গীত. ৭০:৫.
১, ২. (ক) কখন ঈশ্বরের উপাসকরা সাহায্যের জন্য তাঁর শরণাপন্ন হয়? (খ) কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয় আর কোথায় আমরা এর উত্তর খুঁজে পেতে পারি?
ছুটি কাটানোর সময়, ২৩ বছর বয়সি এক বিবাহিত মহিলার বাবামা জানতে পারে যে, তাদের মেয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। তাকে খুন করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হয়। দেরি না করে তারা গোছগাছ শুরু করে এবং বাড়ির দিকে রওনা দেয় আর সাহায্যের জন্য সারাক্ষণ তারা যিহোবার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে। ২০ বছর বয়সি একজন সাক্ষিকে পরীক্ষা করে এমন একটা রোগ ধরা পড়ে, যার ফলে অবশেষে তিনি পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গেসঙ্গে তিনি প্রার্থনায় যিহোবার শরণাপন্ন হন। একজন একক মা, যিনি একটা চাকরি খোঁজার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, তার কাছে নিজের ও তার ১২ বছর বয়সি মেয়ের জন্য খাবার কেনার মতো যথেষ্ট টাকা নেই। তিনি মনপ্রাণ উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন। হ্যাঁ, চরম পরীক্ষা ও কষ্টের মুখে পড়লে ঈশ্বরের উপাসকরা সাধারণত সাহায্যের জন্য যিহোবার শরণাপন্ন হয়। আপনি কি কখনো একান্ত প্রয়োজনের সময় যিহোবার সাহায্য চেয়েছেন?
২ একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়: আমরা কি আসলেই আশা করতে পারি যে, যিহোবা সাহায্যের জন্য করা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন? গীতসংহিতার ৭০ গীতে বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মতো উত্তর পাওয়া যায়। এই অনুপ্রাণিত গীতটি যিহোবার একজন অনুগত উপাসক দায়ূদ লিখেছিলেন, যিনি জীবনে অনেক কঠিন পরীক্ষা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই অনুপ্রাণিত গীতরচক যিহোবা সম্বন্ধে এই কথা বলতে পরিচালিত হয়েছিলেন: “হে ঈশ্বর, . . . তুমিই আমার সহায় ও আমার নিস্তারকর্ত্তা।” (গীত. ৭০:৫) গীতসংহিতার ৭০ গীত পরীক্ষা করা আমাদের এটা দেখতে সাহায্য করতে পারে যে, কেন আমরাও প্রয়োজনের সময় যিহোবার শরণাপন্ন হতে এবং সম্পূর্ণরূপে এই নির্ভরতা রাখতে পারি যে, তিনি আমাদের “নিস্তারকর্ত্তা” হবেন।
‘তুমিই নিস্তারকর্ত্তা’
৩. (ক) গীতসংহিতার ৭০ গীতে সাহায্যের জন্য করা কোন সনির্বন্ধ আকুতি রয়েছে? (খ) ৭০ গীতে দায়ূদ কোন আস্থা প্রকাশ করেছেন?
৩ গীতসংহিতার ৭০ গীতটি ঈশ্বরের সাহায্যের জন্য করা সনির্বন্ধ আকুতি সহকারে শুরু ও শেষ হয়। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৭০:১-৫.) দায়ূদ যিহোবার কাছে মিনতি করেন, যেন তিনি তাকে উদ্ধার করার জন্য ‘ত্বরা করেন।’ এর মধ্যেকার পদগুলোতে দায়ূদ পাঁচটা মিনতি করেন, যেগুলোর প্রত্যেকটা আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকে। ২ ও ৩ পদ সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বলে, যারা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। দায়ূদ যিহোবার কাছে এই মিনতি করেন যেন তিনি এই শত্রুদের পরাজিত করেন এবং তাদের দুষ্টতার জন্য তাদেরকে লজ্জিত করেন। ৪ পদে বলা অনুরোধগুলো ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। দায়ূদ প্রার্থনা করেন যেন যারা যিহোবার অন্বেষণ করে, তারা আমোদ করে এবং তাঁকে মহিমান্বিত করে। তার গীতের উপসংহারে দায়ূদ যিহোবাকে বলেন: “তুমিই আমার সহায় ও আমার নিস্তারকর্ত্তা।” লক্ষ করুন, দায়ূদ এমনটা বলেননি যে, “তুমি প্রমাণিত হও,” যেন আরেকটা মিনতি করছেন। এর পরিবর্তে, তিনি বলেন “তুমিই,” যা তার আস্থাকে প্রকাশ করে। দায়ূদ নিশ্চিত যে, তিনি ঐশিক সাহায্য লাভ করবেন।
৪, ৫. গীতসংহিতার ৭০ গীত থেকে দায়ূদ সম্বন্ধে আমরা কী শিখি এবং আমরা কোন আস্থা রাখতে পারি?
৪ গীতসংহিতার ৭০ গীত দায়ূদ সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত দেয়? তিনি যখন নাছোড়বান্দা শত্রুদের মুখোমুখি হয়েছিলেন, যারা তার জীবন কেড়ে নিতে চেয়েছিল, তখন দায়ূদ বিষয়গুলোকে নিজের হাতে তুলে নেননি। এর পরিবর্তে, তিনি এই নির্ভরতা রেখেছিলেন যে, যিহোবা তাঁর নিরূপিত সময়ে ও উপায়ে বিরোধীদের মোকাবিলা করবেন। (১ শমূ. ২৬:১০) দায়ূদ সবসময় দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের সাহায্য ও উদ্ধার করেন, যারা তাঁর অন্বেষণ করে। (ইব্রীয় ১১:৬) দায়ূদ বিশ্বাস করতেন যে, অন্যদেরকে যিহোবার মহত্ত্ব সম্বন্ধে বলার মাধ্যমে এই ধরনের সত্য উপাসকদের আনন্দ করার ও যিহোবাকে মহিমান্বিত করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।—গীত. ৫:১১; ৩৫:২৭.
৫ দায়ূদের মতো আমরাও এই পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা আমাদের সহায় এবং আমাদের “নিস্তারকর্ত্তা।” তাই, আমরা যখন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হই অথবা সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন অনুভব করি, তখন উপযুক্তভাবেই আমরা প্রার্থনা করতে পারি যাতে যিহোবা সত্বর আমাদের সাহায্য করেন। (গীত. ৭১:১২) কিন্তু, যিহোবা হয়তো কীভাবে সাহায্যের জন্য করা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিতে পারেন? কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে পারেন, তা আলোচনা করার আগে, আসুন আমরা তিনটে উপায় বিবেচনা করি, যে-উপায়গুলোতে যিহোবা দায়ূদকে নিস্তার বা রক্ষা করেছিলেন, তাকে জরুরি মুহূর্তে সাহায্য করেছিলেন।
বিরোধীদের কাছ থেকে উদ্ধার
৬. কী দায়ূদকে জানতে সাহায্য করেছিল যে, যিহোবা ধার্মিক ব্যক্তিদের রক্ষা করেন?
৬ সেই সময়ে প্রাপ্ত বাইবেলের অনুপ্রাণিত নথি থেকে দায়ূদ জানতে পেরেছিলেন যে, ধার্মিক ব্যক্তিরা সাহায্যের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারে। যিহোবা যখন ভক্তিহীন জগতের ওপর জলপ্লাবন নিয়ে এসেছিলেন, তখন তিনি নোহ ও তার ঈশ্বরভয়শীল পরিবারকে রক্ষা করেছিলেন। (আদি. ৭:২৩) যিহোবা যখন সদোম ও ঘমোরার দুষ্ট লোকেদের ওপর অগ্নি ও গন্ধক বর্ষণ করেছিলেন, তখন তিনি ধার্মিক লোট ও তার দুই মেয়েকে তাদের জীবন নিয়ে পালানোর জন্য সাহায্য করেছিলেন। (আদি. ১৯:১২-২৬) যিহোবা যখন গর্বিত ফরৌণ ও তার সেনাবাহিনীকে সূফসাগরে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, তখন তিনি তাঁর লোকেদের সুরক্ষিত রেখেছিলেন আর এভাবে তাদেরকে ভয়ানক ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করেছিলেন। (যাত্রা. ১৪:১৯-২৮) তাই, এতে কি অবাক হওয়ার কিছু আছে যে, আরেকটা গীতে দায়ূদ যিহোবাকে “পরিত্রাণসাধক ঈশ্বর” হিসেবে উচ্চপ্রশংসা করেছিলেন?—গীত. ৬৮:২০.
৭-৯. (ক) ঈশ্বরের রক্ষা করার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করার কোন কারণ দায়ূদের ছিল? (খ) দায়ূদ তার উদ্ধারের জন্য কাকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন?
৭ এ ছাড়া, যিহোবার রক্ষা করার ক্ষমতার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রাখার ব্যাপারে দায়ূদের ব্যক্তিগত কারণ ছিল। দায়ূদ ব্যক্তিগতভাবে এই অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন যে, যিহোবার “অনন্তস্থায়ী বাহুযুগল” সেই ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে পারে, যারা তাঁর সেবা করে। (দ্বিতী. ৩৩:২৭) একাধিকবার, যিহোবা দায়ূদকে ‘শত্রুগণের’ হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। (গীত. ১৮:১৭-১৯, ৪৮) একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন।
৮ দায়ূদের সামরিক দক্ষতার জন্য ইস্রায়েলের স্ত্রীলোকেরা যখন তার প্রশংসা করতে শুরু করেছিল, তখন রাজা শৌল এতটাই ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি দুবার দায়ূদের দিকে তার বর্শা নিক্ষেপ করেছিলেন। (১ শমূ. ১৮:৬-৯) দুবারই দায়ূদ তার বর্শার দ্বারা বিদ্ধ হওয়া থেকে রেহাই পেয়েছিলেন। এটা কি কেবল একজন অভিজ্ঞ যোদ্ধা হিসেবে দায়ূদের দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতার জন্য হয়েছিল? না। বাইবেলের বিবরণ ব্যাখ্যা করে যে, “সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন।” (পড়ুন, ১ শমূয়েল ১৮:১১-১৪.) পরবর্তী সময়ে, পলেষ্টীয়দের দ্বারা দায়ূদকে হত্যা করার বিষয়ে শৌলের ফন্দি যখন ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল, তখন “শৌল দেখিয়া জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্ত্তী।”—১ শমূ. ১৮:১৭-২৮.
৯ দায়ূদ তার উদ্ধারের জন্য কাকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন? গীতসংহিতার ১৮ গীতের শীর্ষলিখন বলে, “যে দিন সদাপ্রভু . . . শৌলের হস্ত হইতে দায়ূদকে উদ্ধার করিলেন, সেই দিন তিনি সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই গীতের কথা নিবেদন করিলেন।” দায়ূদ এই বলে গানের মধ্যে তার অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন: “সদাপ্রভু মম শৈল, মম দুর্গ, ও মম রক্ষাকর্ত্তা, মম ঈশ্বর, মম দৃঢ় শৈল, আমি তাঁহার শরণাগত।” (গীত. ১৮:২) এটা জানা কি বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে না যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করতে সক্ষম?—গীত. ৩৫:১০.
ব্যাধিশয্যায় ধরে রাখা
১০, ১১. কী আমাদেরকে নির্ধারণ করতে সাহায্য করে যে, কখন দায়ূদ হয়তো গীতসংহিতার ৪১ গীতে উল্লেখিত অসুস্থতা ভোগ করেছিলেন?
১০ একবার রাজা দায়ূদ গুরুতর অসুস্থতা ভোগ করেছিলেন, যা গীতসংহিতার ৪১ গীতে উল্লেখ করা হয়েছে। অসুস্থতার কারণে কিছু সময়ের জন্য শয্যাগত থাকাকালীন দায়ূদ এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে, তার কিছু শত্রুর কাছে মনে হয়েছিল যেন তিনি ‘আর উঠিবেন’ না। (৭, ৮ পদ) কখন দায়ূদ এইরকম গুরুতর অসুস্থতার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন? এই গীতে উল্লেখিত পরিস্থিতিগুলো হয়তো দায়ূদের জীবনের সেই চাপপূর্ণ সময়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যখন তার ছেলে অবশালোম সিংহাসন দখল করার চেষ্টা করেছিলেন।—২ শমূ. ১৫:৬, ১৩, ১৪.
১১ উদাহরণস্বরূপ, দায়ূদ একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর বিষয়ে উল্লেখ করেন, যিনি তার সঙ্গে রুটি খেতেন অথচ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। (৯ পদ) এটা হয়তো আমাদেরকে দায়ূদের জীবনের একটা ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। অবশালোমের বিদ্রোহের সময় দায়ূদের বিশ্বস্ত মন্ত্রী অহীথোফল দায়ূদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অবশালোমের সঙ্গে যোগ দেন। (২ শমূ. ১৫:৩১; ১৬:১৫) ব্যাধিশয্যায় পড়ে থাকা একজন দুর্বল রাজার কথা একটু কল্পনা করুন, যার ওঠার মতো কোনো শক্তি নেই এবং যিনি জানেন যে, তার চারপাশে এমন চক্রান্তকারীরা রয়েছে, যারা তার মৃত্যু কামনা করে, যাতে তারা তাদের মন্দ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত করতে পারে।—৫ পদ।
১২, ১৩. (ক) দায়ূদ কোন আস্থা প্রকাশ করেছিলেন? (খ) কীভাবে ঈশ্বর হয়তো দায়ূদকে শক্তিশালী করেছিলেন?
১২ ‘নিস্তারকর্ত্তার’ প্রতি দায়ূদের নির্ভরতা অটল ছিল। অসুস্থ আছেন এমন একজন ন্যায়নিষ্ঠ উপাসক সম্বন্ধে দায়ূদ বলেছিলেন: “বিপদের দিনে সদাপ্রভু তাহাকে নিস্তার করিবেন। ব্যাধিশয্যাগত হইলে সদাপ্রভু তাহাকে ধরিয়া রাখিবেন; তাহার পীড়ার সময়ে তুমি তাহার সমস্ত শয্যা পরিবর্ত্তন করিয়াছ।” (গীত. ৪১:১, ৩) আবারও এখানে দায়ূদের আস্থা লক্ষ করুন, যা এই কথাগুলোর মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে যে, “সদাপ্রভু . . . ধরিয়া রাখিবেন।” দায়ূদ নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা তাকে রক্ষা করবেন। কীভাবে?
১৩ দায়ূদ এইরকম আশা করেননি যে, যিহোবা অলৌকিক কাজ করে তার অসুস্থতা দূর করে দেবেন। এর পরিবর্তে, দায়ূদ নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা “তাহাকে ধরিয়া” রাখবেন—অর্থাৎ ব্যাধিশয্যায় থাকাকালীন তাকে সমর্থন ও শক্তি জোগাবেন। নিশ্চিতভাবেই দায়ূদের এইরকম সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। তাকে দুর্বল করে দিয়েছিল এমন অসুস্থতা ছাড়াও তার চারপাশে সেই শত্রুরা ছিল, যারা তার সম্বন্ধে মন্দ কথা বলে বেড়াত। (৫, ৬ পদ) যিহোবা হয়তো দায়ূদকে সান্ত্বনামূলক বিষয় স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাকে শক্তিশালী করেছিলেন। তবে উল্লেখযোগ্য যে, দায়ূদ বলেছিলেন: “তুমি আমার সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠায়,” NW] আমাকে ধরিয়া রাখিয়াছ।” (১২ পদ) এ ছাড়া, দায়ূদ হয়তো এই বিষয়টা বিবেচনা করেও শক্তি লাভ করেছিলেন যে, তার দুর্বল অবস্থা এবং তার শত্রুরা যে-মন্দ কথাগুলো বলে বেড়াচ্ছিল, সেগুলো সত্ত্বেও যিহোবা তাকে একজন নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করেন। অবশেষে দায়ূদ তার অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়েছিলেন। এটা জানা কি আশ্বাসদায়ক নয় যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের ধরে রাখতে পারেন, যারা অসুস্থ?—২ করি. ১:৩.
ভরণপোষণ জোগান
১৪, ১৫. কখন দায়ূদ ও তার লোকেরা ভরণপোষণের প্রয়োজন অনুভব করেছিল আর তারা কোন সাহায্য লাভ করেছিল?
১৪ দায়ূদ যখন ইস্রায়েলের রাজা হয়েছিলেন, তখন তিনি সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য ও পানীয় উপভোগ করতেন আর এমনকি অন্যদেরকে তার মেজে ভোজন করতে আমন্ত্রণ জানাতেন। (২ শমূ. ৯:১০) কিন্তু, দায়ূদ এও জানতেন যে, এগুলোর অভাব থাকলে কেমন বোধ হয়। তার ছেলে অবশালোম যখন বিদ্রোহ করে সিংহাসন দখল করার চেষ্টা করেছিল, তখন দায়ূদ ও সেইসঙ্গে কিছু অনুগত সমর্থক যিরূশালেম থেকে চলে গিয়েছিল। তারা যর্দন নদীর পূর্ব দিকে গিলিয়দ দেশে পালিয়ে গিয়েছিল। (২ শমূ. ১৭:২২, ২৪) পলাতক হিসেবে বসবাস করতে বাধ্য হয়ে দায়ূদ ও তার লোকেরা শীঘ্রই খাদ্য, পানীয় ও সেইসঙ্গে বিশ্রামের একান্ত প্রয়োজন অনুভব করেছিল। কিন্তু, অপেক্ষাকৃত সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা কোথা থেকে ভরণপোষণ পাবে?
১৫ শেষে, দায়ূদ ও তার লোকেরা মহনয়িম নগরে আসে। সেখানে তিনজন সাহসী ব্যক্তির—শোবি, মাখীর ও বর্সিল্লয়ের—সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়। ঐশিকভাবে নিযুক্ত রাজাকে সাহায্য করার জন্য তারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক ছিল, কারণ অবশালোম যদি রাজপদের ক্ষমতা লাভ করতেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি এমন যেকাউকে কঠোর শাস্তি দিতেন, যিনি দায়ূদকে সমর্থন করেছিলেন। দায়ূদ ও তার লোকেদের কঠিন অবস্থা বুঝতে পেরে এই তিনজন অনুগত প্রজা অনেক প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে এসেছিল, যেগুলোর মধ্যে ছিল শয্যা, গম, যব, ভাজা শস্য, শিম, মসূর, মধু, দধি এবং মেষপাল। (পড়ুন, ২ শমূয়েল ১৭:২৭-২৯.) এই তিনজন ব্যক্তির অসাধারণ আনুগত্য এবং আতিথেয়তা নিশ্চয়ই দায়ূদের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। তারা তার জন্য যা করেছিল, তা দায়ূদ কীভাবে ভুলতে পারেন?
১৬. দায়ূদ ও তার লোকেদের ভরণপোষণ জোগানোর চূড়ান্ত উৎস কে ছিলেন?
১৬ কিন্তু, দায়ূদ ও তার লোকেদের ভরণপোষণ জোগানোর চূড়ান্ত উৎস কে ছিলেন? দায়ূদের এই আস্থা ছিল যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের যত্ন নেন। যিহোবা নিশ্চিতভাবেই তার অন্যান্য দাসকে, রূপকভাবে বললে, মৃদু ঠেলা দিতে পারেন অর্থাৎ তাদেরকে কোনো সহউপাসকের প্রয়োজনের সময় সাহায্যে আসতে অনুপ্রাণিত করে থাকেন। গিলিয়দ দেশে যা ঘটেছিল, তা যখন দায়ূদ বিবেচনা করেছিলেন, তখন নিঃসন্দেহে তিনি সেই তিনজন ব্যক্তির দয়াকে যিহোবার প্রেমময় যত্নের এক অভিব্যক্তি হিসেবে দেখেছিলেন। দায়ূদ তার জীবনের শেষ দিকে লিখেছিলেন: “আমি যুবক ছিলাম, এখন বৃদ্ধ হইয়াছি, কিন্তু ধার্ম্মিককে [যার অন্তর্ভুক্ত তিনি নিজেও] পরিত্যক্ত দেখি নাই, তাহার বংশকে খাদ্য ভিক্ষা করিতে দেখি নাই।” (গীত. ৩৭:২৫) এটা জানা কি সান্ত্বনাদায়ক নয় যে, যিহোবার হাত কখনো খাটো নয়?—হিতো. ১০:৩.
‘যিহোবা ভক্তদিগকে উদ্ধার করিতে জানেন’
১৭. যিহোবা বার বার কী দেখিয়েছেন?
১৭ অনেক উপাসকদের মধ্যে দায়ূদ হলেন মাত্র একজন, যাকে যিহোবা বাইবেলের সময়ে রক্ষা করেছিলেন। দায়ূদের সময় থেকে ঈশ্বর বার বার প্রেরিত পিতরের এই কথাগুলোর সত্যতা দেখিয়েছেন: “ইহাতে জানি, প্রভু [“যিহোবা,” NW] ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে . . . জানেন।” (২ পিতর ২:৯) আরও দুটো উদাহরণ বিবেচনা করুন।
১৮. কীভাবে যিহোবা হিষ্কিয়ের দিনে উদ্ধার করেছিলেন?
১৮ সাধারণ কাল পূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে যখন পরাক্রমী অশূরীয়রা যিহূদা আক্রমণ করেছিল এবং যিরূশালেমকে হুমকি দিয়েছিল, তখন রাজা হিষ্কিয় এই প্রার্থনা করেছিলেন: “হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW], . . . আমাদিগকে নিস্তার কর; তাহাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানিতে পারিবে যে, তুমি, কেবল মাত্র তুমিই সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW]।” (যিশা. ৩৭:২০) হিষ্কিয়ের প্রধান চিন্তার বিষয় ছিল ঈশ্বরের নাম ও সুখ্যাতি। যিহোবা সেই আন্তরিক প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। মাত্র এক রাতের মধ্যেই একজন স্বর্গদূত ১,৮৫,০০০ জন অশূরীয়কে আঘাত করেছিলেন আর এভাবে যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের উদ্ধার করেছিলেন।—যিশা. ৩৭:৩২, ৩৬.
১৯. কোন সাবধানবাণীতে কান দিয়ে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছিল?
১৯ যিশু তাঁর মৃত্যুর ঠিক আগে, যিহূদিয়াতে তাঁর শিষ্যদের উপকারের জন্য এক ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সাবধানবাণী দিয়েছিলেন। (পড়ুন, লূক ২১:২০-২২.) কয়েক দশক পার হয়ে যায় কিন্তু সা.কা. ৬৬ সালে যিহুদি বিদ্রোহের কারণে রোমীয় সেনাবাহিনী যিরূশালেমে আসে। সেস্টিয়াস গ্যালাসের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী মন্দিরের দেওয়ালের কিছু অংশ দুর্বল করে দিতে সফল হয়; এরপর তারা হঠাৎ করে ফিরে যায়। এটাকে যিশুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়ার এক সুযোগ হিসেবে বুঝতে পেরে বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা পর্বতে পালিয়ে গিয়েছিল। রোমীয় সেনাবাহিনী সাধারণ কাল ৭০ সালে ফিরে আসে। এই বার তারা ফিরে যায় না এবং যিরূশালেমকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেয়। যে-খ্রিস্টানরা যিশুর সাবধানবাণীতে কান দিয়েছিল, তারা সেই ভয়ংকর বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছিল।—লূক ১৯:৪১-৪৪.
২০. কেন আমরা আমাদের “নিস্তারকর্ত্তা” হিসেবে যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারি?
২০ যিহোবা যে তাঁর লোকেদের সাহায্য করেন, সেটার প্রমাণ বিবেচনা করা বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। অতীতে তিনি যা করেছেন, তা আস্থার ভিত্তি জোগায়। এখন কিংবা ভবিষ্যতে আমরা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোরই সম্মুখীন হই না কেন, আমরা আমাদের “নিস্তারকর্ত্তা” হিসেবে যিহোবার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রাখতে পারি। কিন্তু, কীভাবে যিহোবা হয়তো আমাদের রক্ষা করতে পারেন? আর শুরুতে উল্লেখিত ব্যক্তি বিশেষদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? কীভাবে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছিল? আসুন, আমরা তা পরবর্তী প্রবন্ধে লক্ষ করি।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• গীতসংহিতার ৭০ গীত আমাদের জন্য কোন আস্থার কারণ জোগায়?
• কীভাবে দায়ূদকে তার অসুস্থতার সময় ধরে রাখা হয়েছিল?
• কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে বিরোধীদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারেন?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবা হিষ্কিয়ের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন