সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক আন্তরিক প্রার্থনার প্রতি যিহোবার উত্তর

এক আন্তরিক প্রার্থনার প্রতি যিহোবার উত্তর

এক আন্তরিক প্রার্থনার প্রতি যিহোবার উত্তর

“লোকেরা যেন জানতে পারে যে তুমি, যাঁর নাম যিহোবা, একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর ওপর পরাৎপর।”—গীত. ৮৩:১৮, NW.

১, ২. অনেকে ঈশ্বরের নাম সম্বন্ধে জানতে পেরে কোন অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল আর কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা যেতে পারে?

 কয়েক বছর আগে, এক ভদ্রমহিলা তার পাড়াতেই ঘটা একটা দুঃখজনক ঘটনার কারণে খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন। রোমান ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় তিনি সাহায্যের জন্য স্থানীয় যাজকের কাছে গিয়েছিলেন কিন্তু সেই যাজক তার সঙ্গে এমনকি কথাও বলতে চাননি। তাই, তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি জানি না তুমি কে . . ., কিন্তু আমি এটুকু জানি যে, তুমি রয়েছ। দয়া করে, তোমাকে জানার সুযোগ করে দাও!” এর অল্প কিছুদিন পর, যিহোবার সাক্ষিরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল এবং তাকে সেই সান্ত্বনা ও জ্ঞান প্রদান করেছিল, যা তিনি খুঁজছিলেন। অন্যান্য অনেক বিষয়ের মধ্যে তারা তাকে এই বিষয়টা শিখিয়েছিল যে, ঈশ্বরের একটা ব্যক্তিগত নাম রয়েছে আর তা হল যিহোবা। সেটা জানা তার ওপর গভীরভাবে ছাপ ফেলেছিল। “হ্যাঁ,” তিনি বলেছিলেন, “সেই ছেলেবেলা থেকে আমি এই ঈশ্বরকেই জানতে চেয়েছি!”

অনেকের একইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল। প্রায়ই, তারা বাইবেল থেকে গীতসংহিতা ৮৩:১৮ পদ পড়ার সময় প্রথম যিহোবার নাম দেখেছিল। নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলে এই পদ বলে: “লোকেরা যেন জানতে পারে যে তুমি, যাঁর নাম যিহোবা, একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর ওপর পরাৎপর।” কিন্তু, আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, গীতসংহিতার ৮৩ গীতটি কেন লেখা হয়েছিল? কোন ঘটনাগুলো প্রত্যেককে এই বিষয়টা স্বীকার করতে বাধ্য করবে যে, যিহোবাই হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর? এই গীতে আজকে আমাদের জন্য কোন বার্তা রয়েছে? এই প্রবন্ধে আমরা সেই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব। *

যিহোবার লোকেদের বিরুদ্ধে এক চক্রান্ত

৩, ৪. গীতসংহিতার ৮৩ গীত কে রচনা করেছেন আর তিনি কোন হুমকির বিষয় বর্ণনা করেন?

গীতসংহিতার ৮৩ গীতের শীর্ষলিখন অনুসারে, এটি হল “আসফের সঙ্গীত।” সম্ভবত সেই গীতের রচয়িতা ছিলেন রাজা দায়ূদের রাজত্বের সময়ের একজন বিখ্যাত বাদক লেবীয় আসফের কোনো বংশধর। সেই গীতে, গীতরচক যিহোবার কাছে অনুরোধ করেন, যাতে তাঁর সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করার ও তাঁর নামকে জানানোর জন্য যিহোবা পদক্ষেপ নেন। সেই গীত নিশ্চয়ই শলোমনের মৃত্যুর কিছুসময় পর রচিত হয়েছিল। কেন? কারণ দায়ূদ ও শলোমনের রাজত্বের সময়, সোরের রাজা ইস্রায়েলের প্রতি বন্ধুত্বপরায়ণ ছিলেন। গীতসংহিতার ৮৩ গীত যখন রচিত হয়েছিল, সেই সময়ের মধ্যে সোরের অধিবাসীরা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল এবং এর শত্রুদের পক্ষ নিয়েছিল।

গীতরচক দশটা জাতির নাম উল্লেখ করেন, যেগুলো ঈশ্বরের লোকেদের ধ্বংস করার জন্য চক্রান্ত করছিল। সেই শত্রুরা ইস্রায়েলের আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল আর তাদের সম্বন্ধে এভাবে তালিকা করা হয়েছে: “ইদোমের তাম্বু সকল ও ইশ্মায়েলীয়গণ, মোয়াব ও হাগারীয়গণ, গবাল, অম্মোন ও অমালেক, সোর-বাসীদের সহিত পলেষ্টীয়া; অশূরিয়াও তাহাদের সঙ্গে যোগ দিয়াছে।” (গীত. ৮৩:৬-৮) এই গীত কোন ঐতিহাসিক ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে? কেউ কেউ মনে করে যে, এই গীতটি যিহোশাফটের দিনে অম্মোন, মোয়াব এবং সেয়ীর পর্বতের অধিবাসীদের যৌথবাহিনীর দ্বারা ইস্রায়েলের ওপর আক্রমণকে নির্দেশ করে। (২ বংশা. ২০:১-২৬) অন্যেরা মনে করে যে, ইস্রায়েলের ইতিহাসজুড়ে এর প্রতিবেশীদের কাছ থেকে যে-সাধারণ শত্রুতা ভোগ করেছিল, এটি সেই বিষয়ে বলে।

৫. গীতসংহিতার ৮৩ গীত থেকে আজকে খ্রিস্টানরা কোন উপকার লাভ করে?

ঘটনা যা-ই হোক না কেন, এটা স্পষ্ট যে, যিহোবা ঈশ্বর এমন এক সময়ে এই প্রার্থনাপূর্ণ গীতটি লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যখন তাঁর জাতি বিপদের মধ্যে ছিল। এই গীত আজকেও ঈশ্বরের সেই দাসদের উৎসাহ প্রদান করে, যারা ইতিহাসজুড়ে তাদেরকে ধ্বংস করতে নাছোড়বান্দা এমন শত্রুদের দ্বারা একটার পর একটা আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে। আর এটা নিশ্চিতভাবেই অদূর ভবিষ্যতে আমাদেরকে শক্তিশালী করবে, যখন আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করে এমন সকলকে ধ্বংস করতে মাগোগ দেশীয় গোগ এক চূড়ান্ত পদক্ষেপের জন্য তার বাহিনীকে সংগঠিত করবে।—পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৮:২, ৮, ৯, ১৬.

প্রধান চিন্তার বিষয়

৬, ৭. (ক) গীতসংহিতা ৮৩ গীতের শুরুর কথাগুলোতে গীতরচক কীসের জন্য প্রার্থনা করেন? (খ) গীতরচকের প্রধান চিন্তার বিষয় কী ছিল?

গীতরচক যেভাবে প্রার্থনায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন তা শুনুন: “হে ঈশ্বর, মৌনী থাকিও না; হে ঈশ্বর, নীরব ও নিস্তব্ধ হইও না। কেননা, দেখ, তোমার শত্রুগণ গর্জ্জন করিতেছে, তোমার বিদ্বেষিগণ মস্তক তুলিয়াছে। তাহারা তোমার প্রজাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিতেছে . . . কারণ তাহারা একচিত্তে মন্ত্রণা করিয়াছে; তাহারা তোমার বিরুদ্ধে নিয়ম স্থাপন করে।”—গীতসংহিতা ৮৩:১-৩, ৫.

গীতরচকের প্রধান চিন্তার বিষয় কী ছিল? এটা ঠিক যে, তিনি অবশ্যই তার নিজের ও তার পরিবারের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই চিন্তিত ছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিহোবার নামের ওপর যে-নিন্দা এসেছে এবং সেই নাম বহনকারী জাতির বিরুদ্ধে যে-হুমকি এসেছে, সেগুলোই ছিল তার প্রার্থনার বিষয়বস্তু। এই পুরোনো জগতের কঠিন চূড়ান্ত দিনগুলো সহ্য করার সময়ে আমরা সকলে যেন অনুরূপ, ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখি।—পড়ুন, মথি ৬:৯, ১০.

৮. ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে জাতিগুলোর চক্রান্তের পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?

গীতরচক ইস্রায়েলের শত্রুদের কথা উদ্ধৃত করেছিলেন, যারা বলেছিল: “আইস, আমরা উহাদিগকে উচ্ছিন্ন করি, আর জাতি থাকিতে না দিই, যেন ইস্রায়েলের নাম আর স্মরণে না থাকে।” (গীত. ৮৩:৪) ঈশ্বরের মনোনীত লোকেদেরকে সেই জাতিগুলো কতই না ঘৃণা করত! কিন্তু, তাদের চক্রান্তের পিছনে আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল। তারা ইস্রায়েল দেশের প্রতি লোভ করেছিল এবং গর্ব করে বলেছিল: “আইস, আমরা অধিকার করিয়া লই আপনাদের জন্য ঈশ্বরের নিবাস সকল।” (গীত. ৮৩:১২) আমাদের দিনে কি অনুরূপ কিছু ঘটেছে? হ্যাঁ, ঘটেছে!

‘তোমার পবিত্র নিবাস’

৯, ১০. (ক) প্রাচীনকালে, ঈশ্বরের পবিত্র নিবাস কী ছিল? (খ) আজকে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশ এবং “আরও মেষ” কোন আশীর্বাদগুলো উপভোগ করে?

প্রাচীনকালে, প্রতিজ্ঞাত দেশকে ঈশ্বরের পবিত্র নিবাস হিসেবে উল্লেখ করা হতো। সেই বিজয় সংগীতের কথা স্মরণ করে দেখুন, যেটি ইস্রায়েলীয়রা মিশর থেকে উদ্ধার লাভের পর গেয়েছিল: “তুমি যে লোকদিগকে মুক্ত করিয়াছ, তাহাদিগকে নিজ দয়াতে চালাইতেছ, তুমি নিজ পরাক্রমে তাহাদিগকে তোমার পবিত্র নিবাসে লইয়া যাইতেছ।” (যাত্রা. ১৫:১৩) পরে, সেই ‘নিবাসের’ অন্তর্ভুক্ত ছিল যাজকবর্গসহ একটা মন্দির ও একটা রাজধানী শহর যিরূশালেম, যেখানে দায়ূদের বংশ থেকে আসা রাজারা যিহোবার সিংহাসনে উপবেশন করত। (১ বংশা. ২৯:২৩) তাই, উপযুক্ত কারণেই যিশু যিরূশালেমকে “মহান্‌ রাজার নগরী” বলেছিলেন।—মথি ৫:৩৫.

১০ আমাদের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়? সা.কা. ৩৩ সালে, এক নতুন জাতি ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ জন্ম হয়েছিল। (গালা. ৬:১৬) যিশু খ্রিস্টের অভিষিক্ত ভাইদের নিয়ে গঠিত ওই জাতি সেই কাজ সম্পাদন করেছিল, যা করতে মাংসিক ইস্রায়েল শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল আর তা হল, ঈশ্বরের নামের সাক্ষি হওয়া। (যিশা. ৪৩:১০; ১ পিতর ২:৯) তাদের কাছে যিহোবা সেই একই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যা তিনি প্রাচীন ইস্রায়েলের প্রতি করেছিলেন: “আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে।” (২ করি. ৬:১৬; লেবীয়. ২৬:১২) ১৯১৯ সালে, ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ অবশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে যিহোবা এক বিশেষ সম্পর্কে নিয়ে এসেছিলেন এবং সেই সময়ে তারা একটা ‘দেশ’ অর্থাৎ কার্যকলাপের এক আধ্যাত্মিক রাজ্য অধিকার করেছিল, যেখানে তারা এক আধ্যাত্মিক পরমদেশ উপভোগ করেছে। (যিশা. ৬৬:৮) ১৯৩০-এর দশক থেকে, লক্ষ লক্ষ “আরও মেষ” তাদের পালে যোগ দিয়েছে। (যোহন ১০:১৬) এই আধুনিক দিনের খ্রিস্টানদের সুখ ও আধ্যাত্মিক উন্নতি যিহোবার সার্বভৌমত্বের যথার্থতার জোরালো প্রমাণ জোগায়। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯১:১, ২.) শয়তানকে তা কতই না ক্রুদ্ধ করে!

১১. সবসময়ের জন্য ঈশ্বরের শত্রুদের প্রধান লক্ষ্য কী?

১১ শয়তান শেষকালজুড়ে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশ ও তাদের আরও মেষ সঙ্গীদের বিরোধিতা করার জন্য তার পার্থিব প্রতিনিধিদের উসকে দিয়েছে। নাতসি শাসনের সময় পশ্চিম ইউরোপে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম্যবাদী সরকারের সময় পূর্ব ইউরোপে তা ঘটেছিল। এ ছাড়া, আরও অনেক দেশে তা ঘটেছিল এবং আবারও ঘটবে, বিশেষ করে মাগোগ দেশীয় গোগের চূড়ান্ত আক্রমণের সময়। সেই আক্রমণের সময়, বিরোধীরা হয়তো লোভাতুর হয়ে যিহোবার লোকেদের বিষয়সম্পত্তি ও মূল্যবান সম্পদ দখল করতে পারে, যেমনটা অতীতে শত্রুরা করেছিল। কিন্তু, সবসময়ের জন্য শয়তানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আমরা যে এক দল হিসেবে রয়েছি, তা ভেঙে দেওয়া যাতে আমাদের ঈশ্বরদত্ত নাম আর স্মরণে না থাকে। তাঁর সার্বভৌমত্বের এই ধরনের বিরোধিতার প্রতি যিহোবা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান? গীতরচকের কথাগুলো আবারও বিবেচনা করুন।

যিহোবার বিজয়ের এক নমুনা

১২-১৪. মগিদ্দো শহরের কাছে কোন দুটো ঐতিহাসিক বিজয় সম্বন্ধে গীতরচক লেখেন?

১২ শত্রু জাতিগুলোর পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করার বিষয়ে যিহোবার ক্ষমতার ওপর গীতরচকের দৃঢ় বিশ্বাস লক্ষ করুন। তিনি সেই গীতে, ইস্রায়েলের শত্রুদের ওপর তাদের দুটো চূড়ান্ত বিজয়ের ঘটনাকে অন্তর্ভুক্ত করেন, যা প্রাচীন মগিদ্দো শহরের কাছে ঘটেছিল, যেখানে এই একই নামে একটা উপত্যকাও ছিল। গ্রীষ্মকালে দেখা যায়, কীশোন নদীর শুষ্ক নদীগর্ভ উপত্যকার মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে গিয়েছে। শীতকালের প্রবল বর্ষণের পর, নদীর জল সমভূমিকে প্লাবিত করে। সম্ভবত সেই কারণেই, এই নদীকে ‘মগিদ্দোর জলও’ বলা হয়।—বিচার. ৪:১৩; ৫:১৯.

১৩ মগিদ্দো থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে উপত্যকার ওপারে মোরি পর্বত অবস্থিত, যেখানে বিচারক গিদিয়োনের দিনে মিদিয়নীয়, অমালেকীয় এবং পূর্বাঞ্চলের যৌথবাহিনী যুদ্ধ করার জন্য একত্রিত হয়েছিল। (বিচার. ৭:১, ১২) গিদিয়োনের ছোট্ট বাহিনীর সংখ্যা শেষপর্যন্ত মাত্র ৩০০ জনে এসে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু যিহোবার সাহায্যে তারা বৃহৎ শত্রুবাহিনীকে পরাজিত করেছিল। কীভাবে? ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুসরণ করে, তারা রাতের বেলা হাতে ঘট নিয়ে শত্রু শিবিরকে বেষ্টন করেছিল, যেগুলোর ভিতরে জ্বলন্ত মশাল লুকোনো ছিল। গিদিয়োন যখন সংকেত দিয়েছিলেন, তখন তার লোকেরা ঘটগুলো ভেঙে ফেলেছিল এবং লুকোনো মশালগুলো হঠাৎ প্রকাশ পেয়ে গিয়েছিল। একই সময়ে তারা তাদের তূরী বাজিয়েছিল এবং চিৎকার করে বলেছিল: “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] ও গিদিয়োনের খড়্গ।” সেই শত্রুরা বিভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছিল এবং তারা একে অন্যকে হত্যা করতে শুরু করেছিল; যারা রক্ষা পেয়েছিল, তারা যর্দন নদীর ওপারে পালিয়ে গিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে, শত্রুদের পিছু নেওয়ায় আরও কিছু ইস্রায়েলীয় যোগ দিয়েছিল। সবশুদ্ধ, ১,২০,০০০ জন শত্রুকে হত্যা করা হয়েছিল।—বিচার. ৭:১৯-২৫; ৮:১০.

১৪ মগিদ্দো থেকে উপত্যকার ওপারে মোরি পর্বত থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার ছাড়িয়ে তাবোর পর্বত অবস্থিত। সেখানে বিচারক বারক অতীতে ১০,০০০ ইস্রায়েলীয় সৈন্যকে হাৎসোরের কনানীয় রাজা যাবীনের সেনাপতি সীষরার অধীনস্থ সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার জন্য একত্রিত করেছিলেন। এই কনানীয় সেনাবাহিনীর ৯০০ যুদ্ধরথ ছিল, যেগুলোতে লোহার তৈরি বড় বড় কাস্তে লাগানো ছিল, যেগুলো চাকার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরত। সামান্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইস্রায়েলের সেনাবাহিনীকে তাবোর পর্বতে একত্রিত হতে দেখে সীষরার সেনাবাহিনী উপত্যকার দিকে এগিয়ে যেতে প্ররোচিত হয়েছিল। এরপর, “সদাপ্রভু . . . সীষরাকে এবং তাঁহার সমস্ত রথ ও সমস্ত সৈন্যকে . . . ছিন্ন ভিন্ন করিলেন।” খুব সম্ভবত, হঠাৎ প্রবল বর্ষণের কারণে কীশোন নদীর কুল উপচে পড়ায় রথগুলো কাদায় আটকে গিয়েছিল। সমগ্র সেনাবাহিনী ইস্রায়েলীয়দের দ্বারা হত হয়েছিল।—বিচার. ৪:১৩-১৬; ৫:১৯-২১.

১৫. (ক) যিহোবা কী করবেন বলে গীতরচক প্রার্থনা করেন? (খ) ঈশ্বরের চূড়ান্ত যুদ্ধের নাম আমাদের কী মনে করিয়ে দেয়?

১৫ গীতরচক যিহোবার কাছে সেই জাতিগুলোর প্রতি অনুরূপ কিছু করার জন্য অনুরোধ জানান, যারা তার দিনে ইস্রায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছিল। তিনি প্রার্থনা করেন: “ইহাদের প্রতি তদ্রূপ কর, যেরূপ মিদিয়নের প্রতি করিয়াছিলে, কীশোন নদীতে যেরূপ সীষরার ও যাবীনের প্রতি করিয়াছিলে; তাহারা ঐন্‌দোরে বিনষ্ট হইল, ভূমির উপরে সারস্বরূপ হইল।” (গীত. ৮৩:৯, ১০) তাৎপর্যপূর্ণভাবে, শয়তানের জগতের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের চূড়ান্ত যুদ্ধকে বলা হয় হর্‌মাগিদোন (অর্থাৎ “মগিদ্দো পর্বত”) অথবা আরমাগিদোন। সেই নামটা আমাদেরকে মগিদ্দোর কাছে সংঘটিত চূড়ান্ত যুদ্ধগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই প্রাচীন যুদ্ধগুলোতে যিহোবার বিজয় আমাদেরকে আরমাগিদোনের যুদ্ধে তাঁর নিশ্চিত বিজয়ের বিষয়ে আশ্বাস দেয়।—প্রকা. ১৬:১৩-১৬.

যিহোবার সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদনের জন্য প্রার্থনা করুন

১৬. কীভাবে বিরোধীদের মুখ আজকে “লজ্জায় পরিপূর্ণ” হয়েছে?

১৬ এই “শেষ কালে” যিহোবা তাঁর লোকেদের নির্মূল করে দেওয়ার বিষয়ে সমস্ত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করেছেন। (২ তীম. ৩:১) ফলস্বরূপ, বিরোধীরা লজ্জিত হয়েছে। গীতসংহিতা ৮৩:১৬ পদ এই বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিল, যখন এটি বলেছিল: “তুমি ইহাদের মুখ লজ্জায় পরিপূর্ণ কর, যেন, হে সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] ইহারা তোমার নামের অন্বেষণ করে।” একটার পর একটা দেশে, বিরোধীরা যিহোবার সাক্ষিদের মুখকে বন্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। সেই দেশগুলোতে, একমাত্র সত্য ঈশ্বরের উপাসকদের অটল মনোভাব ও ধৈর্য সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের জন্য এক সাক্ষ্য হিসেবে কাজ করেছে আর অনেকে ‘যিহোবার নামের অন্বেষণ’ করেছে। অনেক দেশে, যেখানে একসময় যিহোবার সাক্ষিদের প্রচণ্ড তাড়না করা হয়েছে, সেখানে এখন হাজার হাজার, এমনকি লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যিহোবার আনন্দিত প্রশংসাকারী হয়েছে। যিহোবার জন্য কী এক বিজয়! আর তাঁর শত্রুদের জন্য এটা কতই না বিব্রতকর!—পড়ুন, যিরমিয় ১:১৯.

১৭. বিরোধীদের সামনে কোন সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি রয়েছে এবং কোন কথাগুলো আমরা শীঘ্রই স্মরণ করব?

১৭ অবশ্য, আমরা জানি যে, যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। আর আমরা এখনও সুসমাচার প্রচার করে চলছি—এমনকি বিরোধীদের কাছেও। (মথি ২৪:১৪, ২১) কিন্তু, এই ধরনের বিরোধীদের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার ও পরিত্রাণ লাভ করার সুযোগ শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে। মানুষের পরিত্রাণের চেয়ে ‘যিহোবার’ নামের পবিত্রীকরণ আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৮:২৩, NW.) ঈশ্বরের লোকেদের ধ্বংস করার জন্য জাতিগুলো যখন ভবিষ্যদ্বাণীকৃত বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায় একত্রিত হবে, তখন আমরা গীতরচকের প্রার্থনার এই কথাগুলো স্মরণ করব: “ইহারা চিরতরে লজ্জিত ও বিহ্বল হউক, ইহারা হতাশ ও বিনষ্ট হউক।”—গীত. ৮৩:১৭.

১৮, ১৯. (ক) যিহোবার সার্বভৌমত্বের একগুঁয়ে বিরোধীদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? (খ) চূড়ান্তভাবে যিহোবার সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদনের বিষয়টা যে এগিয়ে আসছে, তা আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

১৮ যিহোবার সার্বভৌমত্বের একগুঁয়ে বিরোধীদের জন্য এক অপমানজনক ধ্বংস অপেক্ষা করছে। ঈশ্বরের বাক্য প্রকাশ করে যে, যারা “সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না”—আর এই কারণে আরমাগিদোনে ধ্বংস হয়—তারা ‘অনন্তকালস্থায়ী বিনাশ’ ভোগ করবে। (২ থিষল. ১:৭-৯) তাদের ধ্বংস এবং যারা যিহোবাকে সত্যে উপাসনা করে, তাদের রক্ষা এই দৃঢ়প্রত্যয়জনক প্রমাণ হবে যে, যিহোবাই হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর। নতুন জগতে, সেই মহান বিজয়ের কথা চিরকাল স্মরণে থাকবে। ‘ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক লোকের পুনরুত্থানে’ যারা ফিরে আসবে, তারা যিহোবার মহৎ কর্ম সম্বন্ধে শিখতে পারবে। (প্রেরিত ২৪:১৫) নতুন জগতে, তারা যিহোবার সার্বভৌমত্বের অধীনে বাস করার মধ্যে যে প্রজ্ঞা রয়েছে, তার দৃঢ়প্রত্যয়জনক প্রমাণ দেখতে পাবে। আর তাদের মধ্যে থাকা মৃদুশীল ব্যক্তিরা শীঘ্রই এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হবে যে, যিহোবাই হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর।

১৯ আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের জন্য কী অপূর্ব এক ভবিষ্যতের ব্যবস্থাই না করেছেন! আপনি কি এই প্রার্থনা করতে প্রেরণা পান না, যেন শীঘ্রই যিহোবা তাঁর প্রতি করা গীতরচকের এই প্রার্থনার চূড়ান্ত উত্তর দেন: “[তোমার শত্রুরা] বিব্রত ও বিনষ্ট হোক; লোকেরা যেন জানতে পারে যে তুমি, যাঁর নাম যিহোবা, একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর ওপর পরাৎপর”?—গীত. ৮৩:১৭, NW, ১৮.

[পাদটীকা]

^ এই প্রবন্ধটি বিবেচনা করার আগে, আপনি নিজে গীতসংহিতার ৮৩ গীতের বিষয়বস্তুর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য এটি পড়ে উপকৃত হবেন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

গীতসংহিতার ৮৩ গীত যখন লেখা হয়েছিল তখন ইস্রায়েল কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল?

গীতসংহিতার ৮৩ গীতের রচয়িতার প্রধান চিন্তার বিষয় কী ছিল?

• আজকে কারা শয়তানের শত্রুতার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে?

• কীভাবে যিহোবা শেষপর্যন্ত গীতসংহিতা ৮৩:১৮ পদে প্রকাশিত প্রার্থনার উত্তর দেবেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

প্রাচীন মগিদ্দোর কাছে সংঘটিত যুদ্ধগুলো কীভাবে আমাদের ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

কীশোন নদী

হরোশৎ

কর্মিল পর্বত

যিষ্রিয়েল উপত্যকা

মগিদ্দো

তানক

গিল্‌বোয় পর্বত

হারদ উনুই

মোরি পর্বত

ঐন্‌দোর

তাবোর পর্বত

গালীল সমুদ্র

যর্দন নদী

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

কী একজন গীতরচককে এক আন্তরিক প্রার্থনা রচনা করতে প্রেরণা দিয়েছিল?