সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কী ধরনের ব্যক্তি হতে চান?

আপনি কী ধরনের ব্যক্তি হতে চান?

আপনি কী ধরনের ব্যক্তি হতে চান?

 ফি লিপিনসের একটা শহরের পুলিশ বিভাগের প্রধান, একজন অগ্রগামী বোনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “সেই ব্যক্তিকে তার আচরণ পরিবর্তন করতে সাহায্য করার জন্য আপনারা কী করেছিলেন?” তার ডেস্কের ওপর রাখা একগাদা কাগজপত্র দেখিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন: “জানেন, এগুলো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে অতীতের বিভিন্ন মামলার নথিপত্র? আপনারা এই শহরের একটা বিরাট ঝামেলা দূর করেছেন।” যে-ব্যক্তিকে নিয়ে কথা হচ্ছিল, তিনি ছিলেন একজন হিংস্র মাতাল, যিনি অনবরত সমস্যার সৃষ্টি করতেন। কী তাকে তার জীবনে এইরকম অবিশ্বাস্য পরিবর্তনগুলো করতে পরিচালিত করেছিল? সেটি ছিল, ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেলের বার্তা।

অনেক ব্যক্তি প্রেরিত পৌলের এই পরামর্শে মনোযোগ দিয়েছে যে, ‘তোমরা পূর্ব্বকালীন আচরণ সম্বন্ধে সেই পুরাতন মনুষ্যকে [“ব্যক্তিত্বকে,” NW] ত্যাগ কর, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে [“ব্যক্তিত্বকে,” NW] পরিধান কর, যাহা ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।’ (ইফি. ৪:২২-২৪) আমাদের ছোটো বা বড় যে-পরিবর্তনগুলোই করতে হোক না কেন, নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করা হচ্ছে একজন খ্রিস্টান হয়ে ওঠার অংশ।

কিন্তু, বিভিন্ন পরিবর্তন করা এবং বাপ্তিস্মের যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য উন্নতি করা হচ্ছে কেবল এক শুরু। যখন আমরা জলে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করি, তখন আমরা অনেকটা সেইরকম এক কাঠের টুকরোর মতো হই, যেটাকে কেটে একটা মৌলিক আকার দেওয়া হয়েছে। সেই টুকরোটাকে দেখে হয়তো বোঝা যায় যে, সেটাকে কী বানানো হবে কিন্তু আরও অনেক কাজ করা বাকি রয়েছে। সেই জিনিসটাকে সুন্দর দেখানোর জন্য মিস্ত্রিকে এখনও আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কিছু কাজ করতে হবে। বাপ্তিস্মের সময়, ঈশ্বরের একজন সেবক হয়ে ওঠার জন্য আমাদের মৌলিক কিছু গুণ থাকে। কিন্তু, আমাদের নতুন ব্যক্তিত্ব এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। বিভিন্ন রদবদল করার মাধ্যমে আমাদের এটাকে ক্রমাগত উন্নত করতে হবে।

এমনকি পৌলও উন্নতি করার প্রয়োজনীয়তা লক্ষ করেছিলেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন: “সৎকার্য্য করিতে ইচ্ছা করিলেও মন্দ আমার কাছে উপস্থিত হয়।” (রোমীয় ৭:২১) পৌল নিশ্চিতভাবেই জানতেন যে, তিনি কী ধরনের ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি কী ধরনের ব্যক্তি হতে চান। আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমাদেরও নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে: ‘আমার মধ্যে কী উপস্থিত? আমি কী ধরনের ব্যক্তি? আর আমি কী ধরনের ব্যক্তি হতে চাই?’

“আমার” মধ্যে কী “উপস্থিত”?

আমরা যখন একটা পুরোনো বাড়িকে মেরামত করি, তখন শুধুমাত্র বাইরে রং করাই যথেষ্ট হয় না, যদি কিনা এর ভিতরের কড়িকাঠে পচন ধরে। বাড়ির কাঠামোর ত্রুটিগুলোকে মেরামত না করলে, সেগুলো পরবর্তী সময়ে কেবল বিভিন্ন ঝামেলাই ডেকে আনবে। একইভাবে, ওপর ওপর সরলতা যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে নিজেদের ব্যক্তিত্বের একেবারে গভীরে পরীক্ষা করতে হবে এবং সেই সমস্যাগুলোকে শনাক্ত করতে হবে, যেগুলোর সমাধান হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে, পুরোনো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো পুনরায় উপস্থিত হবে। তাই, আত্মপরীক্ষা আবশ্যক। (২ করি. ১৩:৫) আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করতে এবং সেগুলো শুধরাতে হবে। তা করার জন্য যিহোবা আমাদেরকে সাহায্য জুগিয়েছেন।

পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়্গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, এবং প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।” (ইব্রীয় ৪:১২) ঈশ্বরের লিখিত বাক্য বাইবেলের বার্তা আমাদের জীবনের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে। এটা আমাদের ভিতরের গভীর অংশ ভেদ করে—রূপকভাবে, অস্থির একেবারে ভিতরের অংশে মজ্জায় গিয়ে পৌঁছায়। এটা আমাদের চিন্তাভাবনা ও উদ্দেশ্যগুলোকে প্রকাশ করে, বাইরে আমাদের যেরকম দেখা যায় বা আমরা কেমন ব্যক্তি, সেই বিষয়ে আমরা নিজেরা যা চিন্তা করি, সেটার তুলনায় আমরা ভিতরে আসলে কেমন ব্যক্তি, তা প্রদর্শন করে। আমাদের সমস্যাগুলোকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের কতই না সাহায্য করে!

আমরা যখন একটা পুরোনো বাড়ি সংস্কার করি, তখন শুধু ক্ষতিগ্রস্ত উপাদানগুলো বদলে দেওয়াই যথেষ্ট হবে না। ত্রুটির কারণ জানা আমাদেরকে সমস্যাগুলো পুনর্বার না ঘটার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। একইভাবে, শুধুমাত্র আমাদের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করাই নয় কিন্তু যেসব কারণে এগুলো হয়েছে বা যে-কারণগুলো এতে অবদান রেখেছে, সেগুলো দূর করা আমাদেরকে নিজেদের দুর্বলতাগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। বেশ কিছু বিষয় আমাদের ব্যক্তিত্বকে গঠন করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে আমাদের সামাজিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা, আমাদের পরিবেশ, সংস্কৃতি, বাবা-মা, আমাদের বন্ধুবান্ধব এবং আমাদের ধর্মীয় পটভূমি। এমনকি আমরা টেলিভিশনের যেসব অনুষ্ঠান এবং সিনেমা দেখে থাকি ও সেইসঙ্গে অন্যান্য ধরনের আমোদপ্রমোদও আমাদের ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে। যে-বিষয়গুলো আমাদের ব্যক্তিত্বের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেগুলোকে শনাক্ত করা সেগুলোর প্রভাবকে কমাতে আমাদের সাহায্য করে।

আত্মপরীক্ষা করার পর, আমরা হয়তো এমনটা বলার প্রবণতা দেখাতে পারি, ‘আমি আসলে এমনই।’ এটা ভুল যুক্তি। করিন্থের মণ্ডলীতে যারা ব্যভিচারী, সমকামী, মাতাল এবং এই ধরনের ব্যক্তি ছিল, তাদের বিষয়ে উল্লেখ করে পৌল বলেছিলেন: “তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে; কিন্তু তোমরা . . . আমাদের ঈশ্বরের আত্মায় আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ।” (১ করি. ৬:৯-১১) যিহোবার পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরাও প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারি।

মার্কোস * নামের একজন ব্যক্তির ঘটনা বিবেচনা করুন, যিনি ফিলিপিনসে বাস করেন। তিনি যে-পরিবেশ থেকে এসেছেন, সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মার্কোস বলেছিলেন: “আমার বাবা-মা সবসময়ই ঝগড়া করত। তাই, ১৯ বছর বয়সে আমি বিদ্রোহ করেছিলাম।” মার্কোস জুয়াখেলা, চুরি এবং সশস্ত্র ডাকাতির জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। তিনি এবং তার সঙ্গে আরও কয়েক জন এমনকি একটা বিমান ছিনতাই করার পরিকল্পনা করেছিলেন, তবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। মার্কোসের খারাপ কাজগুলো বিয়ের পরেও অব্যাহত ছিল। জুয়াখেলার কারণে তিনি তার সমস্তকিছু হারিয়েছিলেন। এর অল্পকিছু সময় পর, মার্কোস তার স্ত্রীর সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়নে যোগ দিয়েছিলেন, যা যিহোবার সাক্ষিরা তার স্ত্রীকে করাতো। প্রথমে, তিনি একজন সাক্ষি হওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে অযোগ্য মনে করেছিলেন। কিন্তু, শেখা বিষয়গুলো কাজে লাগানো এবং সভাগুলোতে উপস্থিত থাকা মার্কোসকে তার পূর্বের জীবনধারা পরিত্যাগ করতে সাহায্য করেছিল। তিনি এখন একজন বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান, যিনি কীভাবে অন্যেরাও পরিবর্তিত হতে পারে, সেই বিষয়ে নিয়মিত তাদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

আপনি কেমন ব্যক্তি হতে চান?

আমাদের খ্রিস্টীয় গুণাবলিকে উন্নত করার জন্য আমাদের কোন পরিবর্তন-গুলো করতে হবে? পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দেন: ‘এখন তোমরাও এ সকল ত্যাগ কর,—ক্রোধ, রাগ, হিংসা, নিন্দা ও তোমাদের মুখনির্গত কুৎসিত আলাপ। এক জন অন্য জনের কাছে মিথ্যা কথা কহিও না; তোমরা পুরাতন মনুষ্যকে [“ব্যক্তিত্বকে,” NW] তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ কর।’ প্রেরিত আরও বলেন: ‘সেই নূতন মনুষ্যকে [“ব্যক্তিত্বকে,” NW] পরিধান কর, যে আপন সৃষ্টিকর্ত্তার প্রতিমূর্ত্তি অনুসারে তত্ত্বজ্ঞানের নিমিত্ত নূতনীকৃত হইতেছে।’—কল. ৩:৮-১০.

তাই, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পুরোনো ব্যক্তিত্বকে পরিত্যাগ করা এবং নতুন ব্যক্তিত্বকে পরিধান করা। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কোন গুণাবলি গড়ে তোলা আমাদেরকে সাহায্য করবে? পৌল বলেন: “করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু [“যিহোবা,” NW] যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর। আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।” (কল. ৩:১২-১৪) এই গুণাবলি গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা আমাদেরকে “সদাপ্রভুর কাছে ও মনুষ্যদের কাছে অনুগ্রহ প্রাপ্ত” হতে সাহায্য করবে। (১ শমূ. ২:২৬) পৃথিবীতে থাকার সময় যিশু লক্ষণীয়ভাবে ঈশ্বরীয় গুণাবলি প্রদর্শন করেছিলেন। তাঁর উদাহরণ অধ্যয়ন করে এবং তাঁকে অনুকরণ করার মাধ্যমে আমরা খ্রিস্টের মতো আরও বেশি “ঈশ্বরের অনুকারী” হতে পারি।—ইফি. ৫:১, ২.

আরেকটা যে-উপায়ে আমরা নির্ধারণ করতে পারি যে, আমাদের কোন পরিবর্তনগুলো করা প্রয়োজন, তা হল বাইবেলে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো অধ্যয়ন করে এবং তাদের কোন বিষয়গুলো আকর্ষণীয় ছিল এবং কোনগুলো ছিল না, তা বিবেচনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কুলপতি যাকোবের ছেলে যোষেফের কথা চিন্তা করুন। অবিচারের শিকার হওয়া সত্ত্বেও, যোষেফ এক ইতিবাচক মনোভাব এবং ভিতরের সৌন্দর্য বজায় রেখেছিলেন। (আদি. ৪৫:১-১৫) অন্যদিকে, রাজা দায়ূদের ছেলে অবশালোম ভান করেছিলেন যে, প্রজাদের জন্য তিনি অনেক চিন্তা করেন আর তার সৌন্দর্যের জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, তিনি ছিলেন একজন বিশ্বাসঘাতক ও খুনি। (২ শমূ. ১৩:২৮, ২৯; ১৪:২৫; ১৫:১-১২) ভাল হওয়ার ভান করা এবং দৈহিক সৌন্দর্য একজনকে প্রকৃত অর্থে আকর্ষণীয় করে তোলে না।

আমরা সফল হতে পারি

আমাদের ব্যক্তিত্বকে উন্নত করতে এবং ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ওঠার জন্য আমাদেরকে গুপ্ত মনুষ্যের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। (১ পিতর ৩:৩, ৪) আমাদের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করার জন্য আমাদের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো এবং যে-বিষয়গুলো এর কারণ, সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং সেইসঙ্গে ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তুলতে হবে। আমরা কি এই আস্থা রাখতে পারি যে, এই ধরনের উন্নতি করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টায় আমরা সফল হব?

হ্যাঁ, যিহোবার সাহায্যে আমরা প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করতে পারব। গীতরচকের মতো আমরা প্রার্থনা করতে পারি: “হে ঈশ্বর, আমাতে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সৃষ্টি কর, আমার অন্তরে সুস্থির আত্মাকে নূতন করিয়া দেও।” (গীত. ৫১:১০) আমরা প্রার্থনা করতে পারি যাতে ঈশ্বরের আত্মা আমাদের মধ্যে কাজ করে ও তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে আরও বেশি করে মিল রেখে জীবনযাপন করার বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা আরও বৃদ্ধি পায়। সত্যিই, যিহোবার চোখে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠায় আমরা সফল হতে পারি!

[পাদটীকা]

^ তার আসল নাম নয়।

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই বাড়িটার কেবল বাইরের দিকে রং করাই কি যথেষ্ট হবে?

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার ব্যক্তিত্ব কি খ্রিস্টের মতো হয়ে উঠেছে?