ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশুর অদ্বিতীয় ভূমিকা উপলব্ধি করুন
ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশুর অদ্বিতীয় ভূমিকা উপলব্ধি করুন
“আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না।”—যোহন ১৪:৬.
১, ২. ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশুর অদ্বিতীয় ভূমিকা সম্বন্ধে কেন আমাদের আগ্রহী হওয়া উচিত?
যুগ যুগ ধরে অনেকেই তাদের চারপাশের লোকেদের থেকে আলাদা থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, কিন্তু খুব কম লোকই তাতে সফল হয়েছে। এমনকি খুব অল্পসংখ্যক লোকই উপযুক্তভাবে দাবি করতে পারে যে, তারা বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিক দিয়ে অদ্বিতীয়। তবে, ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্ট অনেক দিক দিয়ে অদ্বিতীয়।
২ যিশুর অদ্বিতীয় ভূমিকা সম্বন্ধে কেন আমাদের আগ্রহী হওয়া উচিত? কারণ এই ক্ষেত্রে আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবার সঙ্গে আমাদের নিজেদের সম্পর্ক জড়িত! যিশু বলেছিলেন: “আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না।” (যোহন ১৪:৬; ১৭:৩) যে-বিভিন্ন দিক দিয়ে যিশু অদ্বিতীয়, আসুন আমরা সেগুলোর কয়েকটা পরীক্ষা করে দেখি। তা করা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে তাঁর ভূমিকার প্রতি আমাদের উপলব্ধি গড়ে তুলবে।
‘একজাত পুত্ত্র’
৩, ৪. (ক) কেন আমরা বলতে পারি যে, যিশু একজাত পুত্র হিসেবে তাঁর ভূমিকায় অদ্বিতীয়? (খ) কীভাবে সৃষ্টির কাজে যিশুর ভূমিকা অদ্বিতীয় ছিল?
৩ যিশু ঈশ্বরের কেবল এক সাধারণ পুত্র নন। তিনি হলেন ঈশ্বরের ‘একজাত পুত্ত্র।’ (যোহন ৩:১৬, ১৮) যে-গ্রিক শব্দকে এখানে “একজাত” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটিকে “অদ্বিতীয়” হিসেবেও অনুবাদ করা যেতে পারে। “অদ্বিতীয়” শব্দের অর্থ, “এই ধরনের শুধু একটিই রয়েছে।” যিহোবার তো অগণিত আত্মিক পুত্র রয়েছে। তাহলে, কোন অর্থে যিশু “অদ্বিতীয়”?
৪ যিশু এই অর্থে অদ্বিতীয় যে, তিনি হলেন তাঁর পিতার একমাত্র সরাসরি সৃষ্টি। তিনি হলেন প্রথমজাত পুত্র। বস্তুতপক্ষে, তিনি হলেন “সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত।” (কল. ১:১৫) তিনি হলেন “ঈশ্বরের সৃষ্টির আদি।” (প্রকা. ৩:১৪) সৃষ্টির কাজেও একজাত পুত্রের ভূমিকা অদ্বিতীয়। তিনি সৃষ্টিকর্তা বা সৃষ্টির উৎস ছিলেন না। কিন্তু, যিহোবা অন্য সমস্তকিছু সৃষ্টি করার জন্য তাঁকে প্রতিনিধি বা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। (পড়ুন, যোহন ১:৩.) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তথাপি আমাদের জ্ঞানে একমাত্র ঈশ্বর সেই পিতা, যাঁহা হইতে সকলই হইয়াছে, ও আমরা যাঁহারই জন্য; এবং একমাত্র প্রভু সেই যীশু খ্রীষ্ট, যাঁহার দ্বারা সকলই হইয়াছে, এবং আমরা যাঁহারই দ্বারা আছি।”—১ করি. ৮:৬.
৫. কীভাবে শাস্ত্র যিশুর অদ্বিতীয় ভূমিকার ওপর জোর দেয়?
৫ কিন্তু, যিশুর অদ্বিতীয় হওয়ার পিছনে আরও অনেক কিছু জড়িত রয়েছে। শাস্ত্রে তাঁকে অনেক উপাধি বা আখ্যা দ্বারা আখ্যায়িত করা হয়েছে, যেগুলো ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে তাঁর অদ্বিতীয় ভূমিকার ওপর জোর দেয়। এখন আসুন আমরা আরও পাঁচটা উপাধি পরীক্ষা করে দেখি, যেগুলো খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ যিশুর প্রতি প্রয়োগ করা হয়েছে।
“সেই বাক্য”
৬. কেন এটা উপযুক্ত যে, যিশুকে “সেই বাক্য” বলা হয়?
৬ যোহন ১:১৪ পদ পড়ুন। কেন যিশুকে “সেই বাক্য” বা লোগোস বলা হয়? এই উপাধিটি সেই কাজকে শনাক্ত করে, যা তিনি অন্য বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীরা অস্তিত্বে আসার সময় থেকে সম্পাদন করে আসছেন। যিহোবা তাঁর পুত্রকে অন্য আত্মিক পুত্রদের কাছে তথ্য ও নির্দেশনা জানাতে ব্যবহার করেছিলেন আর এমনকি ঈশ্বর এই পুত্রকে পৃথিবীতে মানুষের কাছে তাঁর বার্তা জানানোর জন্যও ব্যবহার করেছিলেন। যিশুই যে সেই বাক্য বা ঈশ্বরের মুখপাত্র, তা যিহুদি শ্রোতাদেরকে বলা খ্রিস্টের এই কথাগুলোর দ্বারা নিশ্চিত হয়: “আমার উপদেশ আমার নহে, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার। যদি কেহ তাঁহার ইচ্ছা পালন করিতে ইচ্ছা করে, সে এই উপদেশের বিষয়ে জানিতে পারিবে, ইহা ঈশ্বর হইতে হইয়াছে, না আমি আপনা হইতে বলি।” (যোহন ৭:১৬, ১৭) যিশু এমনকি স্বর্গীয় প্রতাপে ফিরে যাওয়ার পর এখনও “ঈশ্বরের সেই বাক্য” উপাধিটি বহন করে চলেছেন।—প্রকা. ১৯:১১, ১৩, NW, ১৬.
৭. “সেই বাক্য” হিসেবে যিশু তাঁর ভূমিকায় যে-নম্রতা দেখান, তা আমরা কীভাবে অনুকরণ করতে পারি?
৭ একটু ভেবে দেখুন যে, এই উপাধিটি কী ইঙ্গিত করে। যদিও যিশুই হলেন যিহোবার সমস্ত সৃষ্ট প্রাণীর মধ্যে সর্ববিজ্ঞ, কিন্তু তাই বলে তিনি কেবল তাঁর নিজস্ব প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করেন না। তাঁর পিতা তাঁকে যেভাবে নির্দেশনা দেন, তিনি সেভাবে কথা বলেন। তিনি সবসময় যিহোবার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করান, নিজের প্রতি নয়। (যোহন ১২:৫০) আমাদের অনুকরণের জন্য কী এক চমৎকার উদাহরণ! আমাদেরও ‘মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করিবার’ মহামূল্যবান সুযোগ দেওয়া হয়েছে। (রোমীয় ১০:১৫) যিশুর নম্রতা দেখানোর উদাহরণের প্রতি উপলব্ধির দ্বারা, আমাদের নিজস্ব ধারণা তুলে ধরা পরিহার করতে পরিচালিত হওয়া উচিত। শাস্ত্রে বর্ণিত জীবনরক্ষাকারী বার্তা জানানোর বিষয়টা যখন আসে, তখন আমরা “যাহা লিখিত আছে, তাহা অতিক্রম করিতে” চাই না।—১ করি. ৪:৬.
“যিনি আমেন”
৮, ৯. (ক) “আমেন” শব্দের অর্থ কী আর কেন যিশুকে বলা হয় “যিনি আমেন”? (খ) কীভাবে যিশু “যিনি আমেন” হিসেবে তাঁর ভূমিকা পরিপূর্ণ করেছিলেন?
৮ প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪ পদ পড়ুন। কেন যিশুকে বলা হয়, “যিনি আমেন”? যে-শব্দটিকে “আমেন” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি হচ্ছে একটি ইব্রীয় শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ আর এটির অর্থ হচ্ছে, “তা-ই হোক” অথবা “নিশ্চয়ই।” ইব্রীয় ভাষার যে-মূল শব্দ থেকে এটি নেওয়া হয়েছে, সেটির অর্থ হচ্ছে “বিশ্বস্ত হওয়া” বা “নির্ভরযোগ্য।” যিহোবার বিশ্বস্ততার বিষয়ে বর্ণনা করার জন্য এই একই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (দ্বিতী. ৭:৯; যিশা. ৪৯:৭) তাই, যিশুকে যখন “যিনি আমেন” হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তখন কোন দিক দিয়ে তিনি অদ্বিতীয়? লক্ষ করুন যে, ২ করিন্থীয় ১:১৯, ২০ পদ কীভাবে উত্তর দেয়: “ঈশ্বরের পুত্ত্র যীশু খ্রীষ্ট, যিনি . . . তোমাদের নিকটে প্রচারিত হইয়াছেন, তিনি ‘হাঁ’ আবার ‘না’ হন নাই, কিন্তু তাঁহাতেই ‘হাঁ’ হইয়াছে; কারণ ঈশ্বরের যত প্রতিজ্ঞা, তাঁহাতেই সে সকলের ‘হাঁ’ হয়, সে জন্য তাঁহার দ্বারা ‘আমেন’ও হয়, যেন আমাদের দ্বারা ঈশ্বরের গৌরব হয়।”
৯ যিশু হলেন সমস্ত ঐশিক প্রতিজ্ঞার “যিনি আমেন।” বলিদানমূলক মৃত্যুসহ পৃথিবীতে তাঁর নিষ্কলঙ্ক জীবনধারা যিহোবা ঈশ্বরের সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার বিষয়টাকে নিশ্চিত ও সম্ভবপর করেছে। বিশ্বস্ততা বজায় রাখার মাধ্যমে, যিশু শয়তানের সেই দাবিকেও মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন, যা ইয়োব পুস্তকে লিপিবদ্ধ রয়েছে, যে-দাবিটা হল অভাব, দুঃখকষ্ট এবং পরীক্ষার মধ্যে ঈশ্বরের দাসেরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবে। (ইয়োব ১:৬-১২; ২:২-৭) ঈশ্বরের সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে, প্রথমজাত পুত্র সেই অভিযোগের সবচেয়ে অকাট্য উত্তর দিতে পেরেছিলেন। অধিকন্তু, যিশু যিহোবার সর্বজনীন সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা সংক্রান্ত বড় বিচার্য বিষয়ে তাঁর পিতার পক্ষসমর্থন করার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম প্রমাণ জুগিয়েছেন।
১০. “যিনি আমেন” হিসেবে যিশুর অদ্বিতীয় ভূমিকায়, কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?
১০ “যিনি আমেন” হিসেবে যিশুর অদ্বিতীয় ভূমিকায়, কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি? যিহোবার প্রতি ক্রমাগত বিশ্বস্ত থেকে এবং তাঁর সর্বজনীন সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে। তা করে, আমরা হিতোপদেশ ২৭:১১ পদে লিপিবদ্ধ এই অনুরোধের প্রতি ইতিবাচকভাবে সাড়া দেব: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।”
“এক নূতন নিয়মের মধ্যস্থ”
১১, ১২. কীভাবে মধ্যস্থ হিসেবে যিশুর ভূমিকা অদ্বিতীয়?
১১ প্রথম তীমথিয় ২:৫, ৬ পদ পড়ুন। যিশু হলেন ‘ঈশ্বরের ও মনুষ্যদের মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থ।’ তিনি হলেন “এক নূতন নিয়মের” বা চুক্তির “মধ্যস্থ।” (ইব্রীয় ৯:১৫; ১২:২৪) কিন্তু, মোশিকেও একজন মধ্যস্থ—ব্যবস্থা চুক্তির মধ্যস্থ—বলা হয়েছে। (গালা. ৩:১৯) তাহলে, মধ্যস্থ হিসেবে যিশুর ভূমিকা কীভাবে অদ্বিতীয়?
১২ যে-শব্দটিকে “মধ্যস্থ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, মূল ভাষায় সেটি হচ্ছে আইন সংক্রান্ত এক পরিভাষা। এটি যিশুকে নতুন চুক্তির একজন বৈধ মধ্যস্থ (বা এক অর্থে, একজন উকিল) হিসেবে উল্লেখ করে, যে-চুক্তিটা এক নতুন জাতি ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ জন্ম সম্ভবপর করেছিল। (গালা. ৬:১৬) এই জাতি আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত, যারা এক স্বর্গীয় “রাজকীয় যাজকবর্গ” গঠন করে। (১ পিতর ২:৯; যাত্রা. ১৯:৬) ব্যবস্থা চুক্তি, যেটার মধ্যস্থ ছিলেন মোশি, সেই চুক্তি এইরকম এক জাতি উৎপন্ন করতে সমর্থ ছিল না।
১৩. মধ্যস্থ হিসেবে যিশুর ভূমিকার সঙ্গে কী জড়িত?
১৩ মধ্যস্থ হিসেবে যিশুর ভূমিকার সঙ্গে কী জড়িত? যিহোবা সেই ব্যক্তিদের প্রতি যিশুর রক্তের মূল্যকে প্রয়োগ করেন, যাদেরকে নতুন চুক্তিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এভাবে, যিহোবা বৈধভাবে তাদের ধার্মিক হিসেবে স্বীকৃতি দেন। (রোমীয় ৩:২৪; ইব্রীয় ৯:১৫) এর ফলে, ঈশ্বর তাদেরকে নতুন চুক্তিতে প্রবেশ করার যোগ্য হিসেবে দেখেন, যাদের স্বর্গীয় রাজা ও যাজক হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে! তাদের মধ্যস্থ হিসেবে, যিশু তাদেরকে ঈশ্বরের সামনে এক শুদ্ধ মান বজায় রাখতে সাহায্য করেন।—ইব্রীয় ২:১৬.
১৪. কেন সমস্ত খ্রিস্টানের, তা তাদের আশা যা-ই হোক না কেন, মধ্যস্থ হিসেবে যিশুর ভূমিকাকে সত্যিই উপলব্ধি করা উচিত?
১৪ সেই ব্যক্তিদের বিষয়ে কী বলা যায়, যারা নতুন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নয় অর্থাৎ যারা স্বর্গে নয় কিন্তু পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রাখে? নতুন চুক্তির অংশী না হলেও এই ব্যক্তিরা এটার উপকার ভোগকারী। তারা তাদের পাপের ক্ষমা লাভ করে এবং ঈশ্বরের বন্ধু হিসেবে ধার্মিক গণিত হয়। (যাকোব ২:২৩; ১ যোহন ২:১, ২) আমাদের আশা স্বর্গীয় বা পার্থিব, যা-ই হোক না কেন, আমাদের প্রত্যেকের নতুন চুক্তির মধ্যস্থ হিসেবে যিশুর ভূমিকাকে উপলব্ধি করার উত্তম কারণ রয়েছে।
‘মহাযাজক’
১৫. মহাযাজক হিসেবে যিশুর ভূমিকা কীভাবে সেই সমস্ত মানুষের চেয়ে ভিন্ন, যারা মহাযাজক হিসেবে সেবা করেছে?
১৫ অতীতে অনেকে মহাযাজক হিসেবে সেবা করেছে কিন্তু মহাযাজক হিসেবে যিশুর ভূমিকা সত্যিই অদ্বিতীয়। কীভাবে? পৌল ব্যাখ্যা করেন: “ঐ মহাযাজকগণের ন্যায় প্রতিদিন অগ্রে নিজ পাপের, পরে প্রজাবৃন্দের পাপের নিমিত্ত নৈবেদ্য উৎসর্গ করা ইহাঁর পক্ষে আবশ্যক নয়, কারণ আপনাকে উৎসর্গ করাতে ইনি সেই কার্য্য একবারে [“চিরকালের মত একবারই,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] সাধন করিয়াছেন। কেননা ব্যবস্থা যে মহাযাজকদিগকে নিযুক্ত করে, তাহারা দুর্ব্বলতাবিশিষ্ট মনুষ্য; কিন্তু ব্যবস্থার পশ্চাৎকালীয় ঐ শপথের বাক্য যাঁহাকে নিযুক্ত করে, তিনি অনন্তকালের জন্য সিদ্ধিপ্রাপ্ত পুত্ত্র।”—ইব্রীয় ৭:২৭, ২৮. *
১৬. কেন যিশুর দেওয়া বলি সত্যিই অদ্বিতীয়?
১৬ যিশু একজন সিদ্ধ মানুষ ছিলেন, পাপ করার পূর্বে আদম যেমন ছিল, ঠিক সেটার সমতুল্য। (১ করি. ১৫:৪৫) সেই হিসেবে, যিশু ছিলেন একমাত্র মানুষ, যিনি এক নিখুঁত, পরিপূর্ণ বলি উৎসর্গ করার মতো অবস্থানে ছিলেন, এমন এক বলি, যেটা বার বার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মোশির ব্যবস্থার অধীনে, প্রতিদিন বিভিন্ন বলি উৎসর্গ করা হতো। কিন্তু, এইসমস্ত বলি ও যাজকীয় সেবা কেবল এক ছায়া ছিল যে, যিশু কী সম্পাদন করতে যাচ্ছিলেন। (ইব্রীয় ৮:৫; ১০:১) যেহেতু যিশু অন্যান্য মহাযাজকের চেয়ে বেশি কিছু সম্পাদন করতে সমর্থ ও তাঁর ভূমিকায় স্থায়ীভাবে সেবা করবেন, তাই মহাযাজক হিসেবে যিশুর ভূমিকা অদ্বিতীয়।
১৭. আমাদের মহাযাজক হিসেবে যিশুর ভূমিকাকে কেন আমাদের উপলব্ধি করা উচিত আর কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
১৭ মহাযাজক হিসেবে যিশুর প্রদেয় সেবার আমাদের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে তা আমাদেরকে ঈশ্বরের সামনে এক শুদ্ধ মান বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর কী এক চমৎকার মহাযাজককেই না আমরা পেয়েছি! “আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না,” পৌল লিখেছিলেন, “কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে।” (ইব্রীয় ৪:১৫) সত্যিই, এই বিষয়ের প্রতি উপলব্ধির দ্বারা আমাদের ‘আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করিতে’ পরিচালিত হওয়া উচিত, ‘যিনি আমাদের জন্য মরিয়াছিলেন।’—২ করি. ৫:১৪, ১৫; লূক ৯:২৩.
সেই ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ‘বংশ’
১৮. আদম পাপ করার পর কোন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল আর এই ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে পরে কী প্রকাশ করা হয়েছিল?
১৮ এদনে যখন এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে, মানবজাতি সমস্তকিছু—ঈশ্বরের সামনে এক শুদ্ধ মান, অনন্তজীবন, সুখ ও পরমদেশ—হারিয়ে ফেলেছে, তখন যিহোবা ঈশ্বর এক উদ্ধারকর্তার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। এই ব্যক্তিকে ‘বংশ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। (আদি. ৩:১৫) এই অশনাক্ত বংশ যুগ যুগ ধরে বাইবেলের অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণীর এক মূলভাব হয়ে এসেছে। তাঁর অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের একজন বংশধর হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া, রাজা দায়ূদের বংশধারায় তাঁর আসার কথা ছিল।—আদি. ২১:১২; ২২:১৬-১৮; ২৮:১৪; ২ শমূ. ৭:১২-১৬.
১৯, ২০. (ক) সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ কে? (খ) কেন বলা যেতে পারে যে, ভবিষ্যদ্বাণীকৃত বংশের মধ্যে যিশু ছাড়াও অন্যান্যরা অন্তর্ভুক্ত?
১৯ এই প্রতিজ্ঞাত বংশ কে ছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর গালাতীয় ৩:১৬ পদে পাওয়া যায়। (পড়ুন।) কিন্তু, পরে সেই একই অধ্যায়ে প্রেরিত পৌল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বলেন: “আর তোমরা যদি খ্রীষ্টের হও, তবে সুতরাং অব্রাহামের বংশ, প্রতিজ্ঞানুসারে দায়াধিকারী।” (গালা. ৩:২৯) এটা কীভাবে হতে পারে যে, খ্রিস্টই হলেন সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ কিন্তু সেইসঙ্গে আরও অন্যান্য ব্যক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত?
২০ লক্ষ লক্ষ লোক অব্রাহামের বংশ থেকে এসেছে বলে দাবি করেছে, এমনকি কেউ কেউ ভাববাদী হিসেবে কাজ করেছে। কিছু ধর্ম এই দাবির ওপর প্রচুর গুরুত্ব দেয় যে, তাদের ভাববাদীরা অব্রাহামের বংশ থেকে এসেছে। কিন্তু, এরা সকলেই কি সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ? না। প্রেরিত পৌল যেমন ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় তুলে ধরেন যে, অব্রাহামের সমস্ত বংশধরই সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ হিসেবে দাবি করতে পারে না। অব্রাহামের অন্য পুত্রদের বংশধররা মানবজাতিকে আশীর্বাদ করার জন্য ব্যবহৃত হয়নি। আশীর্বাদের বংশ একমাত্র ইস্হাকের মাধ্যমেই আসার কথা ছিল। (ইব্রীয় ১১:১৮) শেষপর্যন্ত, একমাত্র মানুষ যিশু খ্রিস্ট, যাঁর বংশবৃত্তান্ত অব্রাহাম থেকে শুরু করে বাইবেলে লিপিবদ্ধ রয়েছে, তিনিই হলেন ভবিষ্যদ্বাণীকৃত সেই বংশের মুখ্য অংশ। * অন্য সকলে, যারা পরবর্তী সময়ে অব্রাহামের বংশের গৌণ অংশ হয়েছিল, তারা এই অর্থে সেই বংশের অংশ হয় কারণ তারা “খ্রীষ্টের।” হ্যাঁ, এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতায় যিশুর ভূমিকা সত্যিই অদ্বিতীয়।
২১. যিহোবার উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশু তাঁর অদ্বিতীয় ভূমিকাকে যেভাবে পরিপূর্ণ করেছেন, সেই বিষয়ে কী আপনাকে প্রভাবিত করে?
২১ যিহোবার উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশুর অদ্বিতীয় ভূমিকার এই সংক্ষিপ্ত পুনরালোচনা থেকে আমরা কী শিখেছি? ঈশ্বরের একজাত পুত্র তাঁর সৃষ্টির সময় থেকেই সত্যিই অদ্বিতীয়। তবে, ঈশ্বরের এই অদ্বিতীয় পুত্র, যিনি যিশু হয়েছিলেন, তিনি সবসময়ই নম্রভাবে তাঁর পিতার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিলেন, কখনোই নিজের গৌরব পাওয়ার চেষ্টা করেননি। (যোহন ৫:৪১; ৮:৫০) আজকে আমাদের জন্য কী এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ! যিশুর মতো, আমরাও যেন ‘সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে করাকে’ আমাদের লক্ষ্য করে তুলি।—১ করি. ১০:৩১.
[পাদটীকাগুলো]
^ বাইবেলের একজন পণ্ডিত ব্যক্তির কথা অনুসারে, যে-শব্দটিকে “চিরকালের মত একবারই” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা এক গুরুত্বপূর্ণ বাইবেলভিত্তিক ধারণাকে প্রকাশ করে, যা “খ্রিস্টের মৃত্যুর নিশ্চয়তা, অদ্বিতীয়তা বা অসাধারণত্ব সম্বন্ধে ইঙ্গিত দেয়।”
^ এমনকি যদিও সা.কা. প্রথম শতাব্দীর যিহুদিরা ভেবেছিল যে, অব্রাহামের আক্ষরিক বংশধর হিসেবে তারা অনুগ্রহপ্রাপ্ত লোক হবে, কিন্তু তবুও তারা মশীহ বা খ্রিস্ট হিসেবে একজন ব্যক্তির জন্যই প্রতীক্ষা করে ছিল।—যোহন ১:২৫; ৭:৪১, ৪২; ৮:৩৯-৪১.
আপনার কি মনে আছে?
• যিশুর উপাধি বা আখ্যাগুলো থেকে তাঁর অদ্বিতীয় ভূমিকা সম্বন্ধে আপনি কী শিখেছেন? (বাক্স দেখুন।)
• যিহোবার অদ্বিতীয় পুত্রের উদাহরণ আপনি কীভাবে অনুকরণ করতে পারেন?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশুর অদ্বিতীয় ভূমিকাকে প্রতিফলিত করে এমন কয়েকটা উপাধি
◼ একজাত পুত্র। (যোহন ১:৩) যিশু হচ্ছেন তাঁর পিতার একমাত্র সরাসরি সৃষ্টি।
◼ সেই বাক্য। (যোহন ১:১৪) যিহোবা অন্য সৃষ্ট প্রাণীদের কাছে তথ্য ও নির্দেশনা জানানোর জন্য তাঁর পুত্রকে মুখপাত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।
◼ যিনি আমেন। (প্রকা. ৩:১৪) যিশুর বলিদানমূলক মৃত্যুসহ পৃথিবীতে তাঁর নিষ্কলঙ্ক জীবনধারা যিহোবা ঈশ্বরের সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার বিষয়টাকে নিশ্চিত ও সম্ভবপর করেছে।
◼ নতুন চুক্তির মধ্যস্থ। (১ তীম. ২:৫, ৬) একজন বৈধ মধ্যস্থ হিসেবে, যিশু ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ নামে এক নতুন জাতির জন্ম সম্ভবপর করেছেন, যা সেই খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত, যারা এক স্বর্গীয় “রাজকীয় যাজকবর্গ” গঠন করবে।—গালা. ৬:১৬; ১ পিতর ২:৯.
◼ মহাযাজক। (ইব্রীয় ৭:২৭, ২৮) যিশুই ছিলেন একমাত্র মানুষ, যিনি এক নিখুঁত বলি উৎসর্গ করার মতো অবস্থানে ছিলেন, যে-বলি বার বার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি আমাদেরকে পাপ থেকে ধৌত করতে এবং এর মারাত্মক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে পারেন।
◼ সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ। (আদি. ৩:১৫) যিশু খ্রিস্টই হলেন একমাত্র মানুষ, যিনি সেই ভবিষ্যদ্বাণীকৃত বংশের মুখ্য অংশ। অন্যান্যরা, যারা পরবর্তী সময়ে অব্রাহামের বংশের গৌণ অংশ হয়েছিল, তারা হল “খ্রীষ্টের।”—গালা. ৩:২৯.