সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আইস, আমার পশ্চাদ্গামী হও”

“আইস, আমার পশ্চাদ্গামী হও”

“আইস, আমার পশ্চাদ্গামী হও”

“কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, প্রতিদিন আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদ্গামী হউক।”—লূক ৯:২৩.

১, ২. (ক) কোন সদয় আমন্ত্রণ যিশু জানিয়েছিলেন? (খ) যিশুর আমন্ত্রণে আপনি কীভাবে সাড়া দিয়েছেন?

 যিশুর পরিচর্যার শেষের দিকে, তিনি যিহূদিয়ার উত্তর-পূর্বে যর্দনের ওপারে পিরিয়া অঞ্চলে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন। তাঁর কাছে একজন যুবক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করেন যে, অনন্তজীবনের অধিকারী হওয়ার জন্য তাকে কী করতে হবে। সেই যুবক ব্যক্তি বিশ্বস্তভাবে মোশির ব্যবস্থা পালন করছিলেন কি না, সেই বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার পর যিশু তাকে এক উল্লেখযোগ্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “যাও, তোমার যাহা কিছু আছে, বিক্রয় কর, আর দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদ্গামী হও।” (মার্ক ১০:২১) একটু ভেবে দেখুন—পরাৎপর ঈশ্বরের একজাত পুত্র যিশুর পশ্চাদ্‌গামী হওয়ার বা তাঁকে অনুসরণ করার জন্য এক আমন্ত্রণ!

সেই যুবক ব্যক্তি ওই আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কিন্তু অন্যেরা তা গ্রহণ করেছিল। এর আগে, যিশু ফিলিপকে বলেছিলেন: “আমার পশ্চাৎ আইস।” (যোহন ১:৪৩) ফিলিপ সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন ও পরে একজন প্রেরিত হয়েছিলেন। যিশু সেই একই আমন্ত্রণ মথিকেও জানিয়েছিলেন এবং তিনিও সেটা গ্রহণ করেছিলেন। (মথি ৯:৯; ১০:২-৪) বস্তুতপক্ষে, যিশু সমস্ত ধার্মিকতার প্রেমিককে সেই একই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, প্রতিদিন আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদ্গামী হউক।” (লূক ৯:২৩) তাই, যে-কেউই যিশুর অনুসারী হতে পারে, যদি সে সত্যিই হতে চায়। আপনারও কি সেই আকাঙ্ক্ষা রয়েছে? আমাদের মধ্যে অধিকাংশই ইতিমধ্যে যিশুর সেই সদয় আমন্ত্রণে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছি এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় আমরা অন্যদেরকে সেই আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

৩. কীভাবে আমরা যিশুকে অনুসরণ করা থেকে ভেসে চলে যাওয়া এড়াতে পারি?

দুঃখের বিষয় যে, যদিও কেউ কেউ বাইবেলের সত্যের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে কিন্তু তারা অধ্যয়ন করা চালিয়ে যায় না। এর পরিবর্তে, তারা ধীরগতি হয়ে পড়ে এবং শেষপর্যন্ত যিশুকে অনুসরণ করা থেকে ‘ভাসিয়া চলিয়া যায়।’ (ইব্রীয় ২:১) কীভাবে আমরা সেই ফাঁদে পতিত হওয়া এড়াতে পারি? এক্ষেত্রে সাহায্যকারী হতে পারে, যদি আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করি: ‘কেন আমরা আসলে যিশুকে অনুসরণ করা বেছে নিয়েছিলাম? তাঁকে অনুসরণ করা বলতে কী বোঝায়?’ এই দুটো প্রশ্নের উত্তর মনে রাখা সেই উত্তম পথে থাকার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে জোরালো করবে, যে-পথ আমরা বেছে নিয়েছি। এ ছাড়া, এটা যিশুকে অনুসরণ করার জন্য অন্যদেরকে উৎসাহিত করতে আমাদের সাহায্য করবে।

কেন যিশুকে অনুসরণ করবেন?

৪, ৫. কেন যিশু নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্য?

ভাববাদী যিরমিয় বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যির. ১০:২৩) ইতিহাস, যিরমিয়ের কথাগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এটা দিন দিন আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, অসিদ্ধ মানুষেরা সফলভাবে নিজেদের শাসন করতে পারে না। আমরা যিশুকে অনুসরণ করার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি কারণ আমরা শিখেছি যে, তিনি এমন এক দিক দিয়ে আমাদের নেতা হওয়ার যোগ্য, যা অন্য আর কোনো মানুষ কখনো হতে পারবে না। যিশুর কিছু যোগ্যতা বিবেচনা করুন।

প্রথমত, যিশু স্বয়ং যিহোবার দ্বারা মশীহ নেতা হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। আমাদের কোন ধরনের নেতার প্রয়োজন রয়েছে, সেই সম্বন্ধে আমাদের সৃষ্টিকর্তার চেয়ে ভালো আর কেই-বা জানতে পারেন? দ্বিতীয়ত, যিশুর সেই গুণাবলি রয়েছে, যেগুলোকে আমরা প্রশংসা ও অনুকরণ করতে পারি। (পড়ুন, যিশাইয় ১১:২, ৩.) তিনি হলেন এক নিখুঁত উদাহরণ। (১ পিতর ২:২১) তৃতীয়ত, যারা যিশুকে অনুসরণ করে, সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে তিনি গভীরভাবে চিন্তা করেন আর এই বিষয়টা তিনি তাদের জন্য তাঁর জীবন দেওয়ার সময় দেখিয়েছিলেন। (পড়ুন, যোহন ১০:১৪, ১৫.) এ ছাড়া, তিনি আমাদেরকে এমন এক জীবনের দিকে পরিচালিত করার দ্বারা নিজেকে একজন যত্নবান মেষপালক হিসেবে দেখান, যে-জীবন এখনই সুখ নিয়ে আসে এবং এক গৌরবান্বিত অনন্ত ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করে। (যোহন ১০:১০, ১১; প্রকা. ৭:১৬, ১৭) এগুলোর এবং অন্যান্য কারণে, আমরা যখন যিশুকে অনুসরণ করা বেছে নিয়েছিলাম, তখন আমরা এক বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু, যিশুকে অনুসরণ করার সঙ্গে কী জড়িত?

৬. যিশুকে অনুসরণ করার সঙ্গে কী জড়িত?

খ্রিস্টের অনুসারী হওয়ার অর্থ, নিজেদেরকে শুধু খ্রিস্টান বলার চেয়ে আরও বেশি কিছু। প্রায় দু-শো কোটি লোক নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করে কিন্তু তাদের কাজগুলো তাদেরকে ‘অধর্ম্মাচারী’ হিসেবে প্রকাশ করে। (পড়ুন, মথি ৭:২১-২৩.) বিভিন্ন ব্যক্তি যখন যিশুকে অনুসরণ করার আমন্ত্রণের প্রতি আগ্রহ দেখায়, তখন আমরা তাদের কাছে ব্যাখ্যা করি যে, সত্য খ্রিস্টানরা যিশুর শিক্ষাগুলো ও উদাহরণের সঙ্গে মিল রেখে তাদের সমগ্র জীবনধারাকে চালিত করে—আর তা তারা তাদের জীবনের প্রতিটা দিন করে থাকে। এর মানে কী, তা বোঝার জন্য যিশু সম্বন্ধে আমরা যা জানি, সেইরকম কয়েকটা বিষয় বিবেচনা করুন।

যিশুর প্রজ্ঞার উদাহরণকে অনুকরণ করুন

৭, ৮. (ক) প্রজ্ঞা কী আর কেন যিশু প্রচুররূপে এটার অধিকারী ছিলেন? (খ) কীভাবে যিশু প্রজ্ঞা প্রদর্শন করেছিলেন এবং কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?

যিশু অনেক উল্লেখযোগ্য গুণ প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু আমরা চারটের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করব: তাঁর প্রজ্ঞা, তাঁর নম্রতা, তাঁর উদ্যোগ এবং তাঁর ভালোবাসা। প্রথমে, তাঁর প্রজ্ঞার—জ্ঞান ও বোধগম্যতাকে ব্যবহারিক উপায়ে কাজে লাগানোর ক্ষমতার—বিষয় বিবেচনা করুন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “[যিশুর] মধ্যে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের সমস্ত ধন নিহিত।” (কল. ২:৩, বাংলা জুবিলী বাইবেল) যিশু কোথা থেকে এই ধরনের প্রজ্ঞা পেয়েছিলেন? তিনি নিজে বলেছিলেন: “পিতা আমাকে যেমন শিক্ষা দিয়াছেন, তদনুসারে এই সকল কথা কহি।” (যোহন ৮:২৮) যিশুর প্রজ্ঞার উৎস ছিলেন যিহোবা, তাই যিশুর বিচারবুদ্ধির সঠিকতা দেখে আমরা অবাক হই না।

উদাহরণস্বরূপ, যিশু তাঁর জীবনের পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক বিচারবুদ্ধি কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি তাঁর জীবনকে সাদাসিধে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, শুধুমাত্র এই একটা উদ্দেশ্যের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন: ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা। তিনি রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর সময় ও শক্তিকে নিয়োজিত করেছিলেন। এক ‘সরল চক্ষু’ বজায় রাখার প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে আমরা যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করি আর এভাবে আমরা সেই অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর দ্বারা নিজেদের ভারগ্রস্ত করা এড়িয়ে চলি, যেগুলো আমাদের শক্তি ও মনোযোগকে নিঃশেষ করে দেয়। (মথি ৬:২২) অনেক খ্রিস্টান তাদের জীবনযাপনকে সাদাসিধে রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যাতে তারা পরিচর্যায় আরও বেশি সময় দিতে পারে। কেউ কেউ অগ্রগামী পরিচর্যা শুরু করতে সমর্থ হয়েছে। আপনি যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, তাহলে সেটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করা’ অনেক সুখ ও পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে।—মথি ৬:৩৩.

যিশুর মতো নম্র হোন

৯, ১০. কীভাবে যিশু তাঁর নম্রতা প্রদর্শন করেছিলেন?

যিশুর ব্যক্তিত্বের দ্বিতীয় যে-দিক সম্বন্ধে আমরা বিবেচনা করব, তা হচ্ছে নম্রতা। অসিদ্ধ মানুষকে যখন কর্তৃত্ব দেওয়া হয়, তখন তারা প্রায়ই গর্ব করতে শুরু করে। এক্ষেত্রে যিশু কতই না ভিন্ন ছিলেন! যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে তাঁর মুখ্য ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও, তাঁর মধ্যে অহংকারের লেশমাত্র ছিল না। আর সেই ক্ষেত্রে তাঁকে অনুকরণ করতে আমাদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক। ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন।” (ফিলি. ২:৫-৭) এর সঙ্গে কী জড়িত ছিল?

১০ যিশু স্বর্গে তাঁর পিতার সঙ্গে থাকার গৌরবান্বিত সুযোগকে উপভোগ করতেন কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় “আপনাকে শূন্য করিলেন।” তাঁর জীবন এক যিহুদি কুমারীর গর্ভে স্থানান্তর করা হয়েছিল, যাতে একজন সামান্য ছুতোর মিস্ত্রির ঘরে এক অসহায় শিশু হিসেবে জন্মগ্রহণ করার আগে পর্যন্ত নয় মাস ধরে সেখানে বৃদ্ধি পেতে পারে। যোষেফের গৃহে যিশু বৃদ্ধি পেয়ে এক শিশু, শিশু থেকে বালক ও এরপর একজন কিশোর হয়েছিলেন। তিনি নিষ্পাপ ছিলেন। তবুও, তরুণ বয়সে তিনি তাঁর মানব পিতামাতার বশীভূত ছিলেন, যারা অসিদ্ধ ও পাপী ছিল। (লূক ২:৫১, ৫২) কী এক অসাধারণ নম্রতা!

১১. কোন কোন উপায়ে আমরা যিশুর নম্রতাকে অনুকরণ করতে পারি?

১১ আমরা যিশুর নম্রতাকে অনুকরণ করি, যখন আমরা স্বেচ্ছায় এমন কার্যভারগুলো গ্রহণ করি, যেগুলোকে নিকৃষ্ট বলে মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ, সুসমাচার প্রচার করার কার্যভার সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। এই ধরনের কাজকে হয়তো নিকৃষ্ট বলে মনে হতে পারে, বিশেষভাবে যখন লোকেরা উদাসীনতা, উপহাস অথবা বিরোধিতার সঙ্গে সাড়া দেয়। কিন্তু, প্রচার কাজে অধ্যবসায়ী হয়ে আমরা তাঁকে অনুসরণ করার বিষয়ে যিশুর আমন্ত্রণের প্রতি অন্যদের সাড়া দিতে সাহায্য করি। এভাবে আমরা জীবন রক্ষা করতে সাহায্য করি। (পড়ুন, ২ তীমথিয় ৪:১-৫.) আরেকটা উদাহরণ হল, আমাদের কিংডম হলকে রক্ষণাবেক্ষণ করা। এর সঙ্গে সেইসমস্ত কাজ করা জড়িত, যেমন ময়লা ফেলার পাত্র পরিষ্কার করা, মেঝে মোছা এবং টয়লেট পরিষ্কার করা—এই সমস্তই হচ্ছে নিকৃষ্ট কাজ! কিন্তু, আমরা উপলব্ধি করি যে, আমাদের কিংডম হলকে—স্থানীয় এলাকায় বিশুদ্ধ উপাসনার কেন্দ্রস্থলকে—রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের পবিত্র সেবার অংশ। আপাতদৃষ্টিতে নিকৃষ্ট বলে মনে হয় এমন কার্যভারগুলো স্বেচ্ছায় সম্পন্ন করার মাধ্যমে আমরা নম্রতা দেখাই আর এভাবে আমরা খ্রিস্টের পদচিহ্ন অনুসরণ করি।

যিশুর মতো উদ্যোগী হোন

১২, ১৩. (ক) কীভাবে যিশু উদ্যোগ প্রদর্শন করেছিলেন আর কী তাঁকে প্রেরণা দিয়েছিল? (খ) কী আমাদেরকে পরিচর্যায় উদ্যোগী হতে প্রেরণা দেবে?

১২ পরিচর্যায় যিশুর উদ্যোগ সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি অনেক কাজ করেছিলেন। তাঁর জীবনের প্রথম দিকে তিনি সম্ভবত তাঁর পালক বাবা যোষেফের সঙ্গে ছুতোর মিস্ত্রির কাজ করেছিলেন। তাঁর পরিচর্যার সময়ে, যিশু বিভিন্ন অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল অসুস্থদের সুস্থ করা এবং মৃতদের পুনরুত্থিত করা। কিন্তু, তাঁর প্রধান কাজ ছিল সুসমাচার প্রচার করা এবং শুনতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের উপদেশ বা শিক্ষা দেওয়া। (মথি ৪:২৩) তাঁর অনুসারী হিসেবে, আমাদেরও একই কাজ রয়েছে। কীভাবে আমরা তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি? একটা বিষয় হচ্ছে, আমরা যিশুর মতো একই প্রেরণার দ্বারা পরিচালিত হতে পারি।

১৩ সর্বোপরি, ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসাই যিশুকে প্রচার করতে ও শিক্ষা দিতে প্রেরণা দিয়েছিল। কিন্তু, যিশু সেই সত্যগুলোকেও ভালোবাসতেন, যেগুলো তিনি শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁর কাছে সেই সত্যগুলো অমূল্য ধনের মতো ছিল আর তিনি সেগুলো অন্যদের জানানোর জন্য উৎসুক ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে আমরাও একইরকম বোধ করি। কিছু মূল্যবান সত্য সম্বন্ধে একটু চিন্তা করুন, যেগুলো আমরা ঈশ্বরের বাক্য থেকে শিখেছি! আমরা সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিচার্য বিষয় সম্বন্ধে এবং কীভাবে এটার মীমাংসা করা হবে, সেই সম্বন্ধে জানি। মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে এবং ঈশ্বরের নতুন জগতে ভবিষ্যৎ আশীর্বাদগুলোর বিষয়ে শাস্ত্র কী বলে, সেই সম্বন্ধে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি। আমরা সেই সত্যগুলো সাম্প্রতিক সময়ে বা অনেক আগে, যখনই শিখে থাকি না কেন, সেগুলোর মূল্য কখনো হ্রাস পায় না। পুরোনো বা নতুন, যা-ই হোক না কেন, এই ধরনের সত্যগুলো বাস্তবিকই অমূল্য ধন। (পড়ুন, মথি ১৩:৫২.) আন্তরিক উদ্যমের সঙ্গে প্রচার করার মাধ্যমে আমরা অন্যদের প্রতি সেই ভালোবাসা প্রকাশ করি, যা যিহোবা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।

১৪. কীভাবে আমরা যিশুর শিক্ষাদানের পদ্ধতি অনুকরণ করতে পারি?

১৪ এ ছাড়া, যিশু কীভাবে শিক্ষা দিতেন, তা-ও লক্ষ করুন। তিনি সবসময় তাঁর শ্রোতাদেরকে শাস্ত্রের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করাতেন। তিনি প্রায়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানানোর আগে এভাবে বলতেন: “লেখা আছে।” (মথি ৪:৪; ২১:১৩) তাঁর কথাগুলোতে তিনি ইব্রীয় শাস্ত্রের অর্ধেকেরও বেশি বই থেকে সরাসরি উদ্ধৃতি করেছিলেন অথবা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেছিলেন। যিশুর মতো আমরাও আমাদের পরিচর্যায় সবসময় বাইবেল থেকে শিক্ষা দিই এবং যখনই সম্ভব শাস্ত্র খুলে দেখানোর প্রচেষ্টা করি। এভাবে, আমরা সৎহৃদয়ের লোকেদের এটা দেখতে দিই যে, আমরা ঈশ্বরের চিন্তাধারা সম্বন্ধে শিক্ষা দিচ্ছি, আমাদের নিজেদের চিন্তাধারা নয়। যখন কেউ বাইবেল থেকে পড়তে এবং ঈশ্বরের বাক্যের মূল্য ও অর্থ সম্বন্ধে আলোচনা করতে রাজি হয়, তখন আমরা কতই না আনন্দিত হই! আর এই ধরনের ব্যক্তিরা যখন যিশুকে অনুসরণ করার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে, তখন আমাদের আনন্দ উপচে পড়ে।

যিশুকে অনুসরণ করার অর্থ অন্যদেরকে ভালোবাসা

১৫. যিশুর একটা উল্লেখযোগ্য গুণ কী ছিল এবং কীভাবে সেই সম্বন্ধে চিন্তা করা আমাদের প্রভাবিত করে?

১৫ যিশুর ব্যক্তিত্বের শেষ দিক, যা আমরা আলোচনা করব, সেটা সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী—সহমানবদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে।” (২ করি. ৫:১৪) আমরা যখন সমগ্র মানবজাতির জন্য এবং আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে আমাদের জন্য যিশুর ভালোবাসা সম্বন্ধে চিন্তা করি, তখন তা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে এবং আমরা তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা বোধ করি।

১৬, ১৭. কোন কোন উপায়ে যিশু অন্যদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন?

১৬ কীভাবে যিশু অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন? মানবজাতির জন্য তাঁর নিজ প্রাণ সমর্পণ করার ইচ্ছা হল তাঁর প্রেমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রকাশ। (যোহন ১৫:১৩) কিন্তু তাঁর পরিচর্যার সময়, যিশু অন্যান্য উপায়েও ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, যারা কষ্ট পাচ্ছিল, তাদের জন্য তিনি সমবেদনা বোধ করেছিলেন। তিনি যখন মরিয়মকে ও তার সঙ্গে আরও অন্যান্য লোককে লাসারের মৃত্যুতে কাঁদতে দেখেছিলেন, তখন তাদের দুঃখ তাঁকে অনেকখানি স্পর্শ করেছিল। যদিও তিনি লাসারকে পুনরুত্থিত করতে যাচ্ছিলেন কিন্তু এই মৃত্যু তাঁকে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে, তিনিও ‘কাঁদিয়াছিলেন।’—যোহন ১১:৩২-৩৫.

১৭ যিশুর পরিচর্যার শুরুর দিকে, একজন কুষ্ঠরোগী যিশুর কাছে এসে বলেছিলেন: “যদি আপনার ইচ্ছা হয়, আমাকে শুচি করিতে পারেন।” যিশু কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? বিবরণ বলে: ‘তিনি করুণাবিষ্ট হইলেন।’ এরপর তিনি অসাধারণ কিছু করেছিলেন। “তিনি . . . হাত বাড়াইয়া তাহাকে স্পর্শ করিলেন, কহিলেন, আমার ইচ্ছা, তুমি শুচীকৃত হও। তৎক্ষণাৎ কুষ্ঠরোগ তাহাকে ছাড়িয়া গেল, সে শুচীকৃত হইল।” মোশির ব্যবস্থার অধীনে কুষ্ঠরোগীরা অশুচি ছিল আর নিশ্চিতভাবেই যিশু এই ব্যক্তিকে স্পর্শ না করেও সুস্থ করতে সমর্থ ছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিশু যখন সেই কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করেছিলেন, তখন তিনি সেই কুষ্ঠরোগীকে অন্য আরেকজন মানুষের স্পর্শ অনুভব করার সুযোগ দিয়েছিলেন, সম্ভবত কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম বার। কী এক কোমল সমবেদনা!—মার্ক ১:৪০-৪২.

১৮. আমরা যে “পরদুঃখে দুঃখিত,” তা আমরা কীভাবে প্রদর্শন করতে পারি?

১৮ খ্রিস্টের অনুসারী হিসেবে আমাদেরও “পরদুঃখে দুঃখিত” হওয়ার মাধ্যমে আমাদের ভালোবাসা দেখানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। (১ পিতর ৩:৮) দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতা বা প্রচণ্ড বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন একজন সহবিশ্বাসীর অনুভূতি উপলব্ধি করা হয়তো সহজ নয়—বিশেষ করে আমরা নিজেরা যদি কখনো এই ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ না করে থাকি। কিন্তু, যিশু অসুস্থদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন, এমনকী যদিও তিনি নিজে কখনো অসুস্থ হননি। কীভাবে আমরা একই ধরনের সহমর্মিতার অনুভূতি গড়ে তুলতে পারি? ভুক্তভোগীরা যখন তাদের হৃদয় উজাড় করে আমাদের কাছে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে, তখন ধৈর্য ধরে তা শোনার মাধ্যমে। এ ছাড়া, আমরা হয়তো নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি যদি তাদের পরিস্থিতিতে থাকতাম, তাহলে আমার কেমন লাগত?’ আমরা যদি অন্যদের অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হই, তাহলে আমরা ‘বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বলতে’ সমর্থ হব। (১ থিষল. ৫:১৪, NW) এভাবে, আমরা যিশুকে অনুসরণ করে চলতে সমর্থ হব।

১৯. কোন কোন উপায়ে আমরা যিশুর উদাহরণের দ্বারা প্রভাবিত হই?

১৯ যিশু খ্রিস্টের কথাবার্তা ও কাজগুলোর মধ্যে আমরা অধ্যয়ন করার জন্য কত রোমাঞ্চকর বিষয়গুলোই না খুঁজে পাই! আমরা তাঁর সম্বন্ধে যত বেশি জানব, তত বেশি তাঁর মতো হতে চাইব—আর তত বেশি অন্যদেরকেও একই কাজ করার জন্য সাহায্য করতে চাইব। তাই, আসুন আমরা মশীহ রাজাকে অনুসরণ করে আনন্দ খুঁজে নিই—এখন ও চিরকাল!

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কীভাবে আমরা যিশুর মতো প্রজ্ঞা দেখাতে পারি?

• কোন কোন উপায়ে আমরা নম্রতা প্রদর্শন করতে পারি?

• কীভাবে আমরা পরিচর্যার জন্য উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারি?

• কোন কোন উপায়ে আমরা অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর ক্ষেত্রে যিশুকে অনুকরণ করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

একটি প্রকাশনা যেটি খ্রিস্টকে অনুকরণ করতে আমাদের সাহায্য করে

দু-হাজার সাত সালের জেলা সম্মেলন কার্যক্রমের সময় ইংরেজিতে ১৯২ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ করা হয়েছিল, যেটির শিরোনাম হল “আইস, আমার পশ্চাদ্গামী হও।” এই প্রকাশনাটি খ্রিস্টানদেরকে যিশুর ওপর, বিশেষ করে তাঁর গুণাবলি ও কাজের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ভূমিকামূলক দুটো অধ্যায়ের পর, প্রথম বিভাগটি যিশুর উল্লেখযোগ্য গুণাবলির—তাঁর নম্রতা, তাঁর সাহস, তাঁর প্রজ্ঞা, তাঁর বাধ্যতা ও তাঁর ধৈর্যের—এক সারাংশ করে।

এরপরে শিক্ষক ও সুসমাচার প্রচারক হিসেবে যিশুর কাজের ওপর এবং তাঁর মহৎ প্রেম যে-উপায়গুলোতে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর ওপর কয়েকটা বিভাগ রয়েছে। পুরো বইজুড়ে এমনভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে তা একজন খ্রিস্টানের পক্ষে যিশুকে অনুকরণ করায় সাহায্য করে।

আমরা নিশ্চিত যে, এই প্রকাশনাটি আমাদের সকলকে নিজেদের পরীক্ষা করে দেখতে এবং এটা জিজ্ঞেস করতে পরিচালিত করবে: ‘আমি কি সত্যিই যিশুকে অনুসরণ করছি? কীভাবে আমি আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁকে অনুসরণ করতে পারি?’ এ ছাড়া, এটি “যত লোক অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত [“সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন,” NW],” তাদেরকে খ্রিস্টের অনুসারী হয়ে উঠতেও সাহায্য করবে।—প্রেরিত ১৩:৪৮.

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু পৃথিবীতে আসতে এবং একজন মানব শিশু হিসেবে জন্ম নিতে সম্মত হয়েছিলেন। সেটার জন্য কোন গুণের প্রয়োজন হয়েছিল?

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরিচর্যায় উদ্যোগী হতে কী আমাদের প্রেরণা দেবে?