সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহ-ধনের অধ্যক্ষ’?

আপনি কি ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহ-ধনের অধ্যক্ষ’?

আপনি কি ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহ-ধনের অধ্যক্ষ’?

“ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।”—রোমীয় ১২:১০.

১. ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমরা কোন আশ্বাসগুলো পাই?

 ঈশ্বরের বাক্য বার বার আমাদের আশ্বাস দেয় যে, আমরা যখন নিরুৎসাহিত বা ভগ্নচিত্ত হই, তখন যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন। উদাহরণস্বরূপ, এই সান্ত্বনাদায়ক কথাগুলো লক্ষ করুন: “সদাপ্রভু পতনোন্মুখ সকলকে ধরিয়া রাখেন, অবনত সকলকে উত্থাপন করেন।” “তিনি ভগ্নচিত্তদিগকে সুস্থ করেন, তাহাদের ক্ষত সকল বাঁধিয়া দেন।” (গীত. ১৪৫:১৪; ১৪৭:৩) অধিকন্তু, আমাদের স্বর্গীয় পিতা নিজে বলেন: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর তোমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিব; তোমাকে বলিব, ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশা. ৪১:১৩.

২. কীভাবে যিহোবা তাঁর দাসদের সমর্থন জোগান?

কিন্তু, কীভাবে যিহোবা, যিনি অদৃশ্য স্বর্গে বাস করেন, তিনি ‘আমাদের হস্ত ধারণ করেন’? আমরা যখন মর্মবেদনার কারণে “অবনত” হই, তখন কীভাবে তিনি ‘আমাদের উত্থাপন করেন’? যিহোবা ঈশ্বর বিভিন্ন উপায়ে এই ধরনের সমর্থন জোগান। উদাহরণস্বরূপ, তিনি তাঁর লোকেদের পবিত্র আত্মার মাধ্যমে “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দেন। (২ করি. ৪:৭; যোহন ১৪:১৬, ১৭) এ ছাড়া, ঈশ্বরের দাসেরা সেই উৎসাহজনক শক্তি অনুভব করে, যা ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেলে প্রাপ্ত বার্তা থেকে পাওয়া যায়। (ইব্রীয় ৪:১২) অন্য আর কোনো উপায় কি আছে, যেটার দ্বারা যিহোবা আমাদের শক্তিশালী করেন? আমরা প্রথম পিতর বইয়ে এর উত্তর খুঁজে পাই।

‘ঈশ্বরের বহুবিধ অনুগ্রহ-ধন’

৩. (ক) বিভিন্ন পরীক্ষা সম্বন্ধে প্রেরিত পিতর কোন বিবৃতি দিয়েছেন? (খ) পিতরের প্রথম চিঠির পরের অংশে কী আলোচনা করা হয়েছে?

আত্মায় অভিষিক্ত বিশ্বাসীদের উদ্দেশে লেখার সময় প্রেরিত পিতর লেখেন যে, তাদের জন্য প্রচুর পুরস্কার অপেক্ষা করছে বলে তাদের আনন্দ করার উত্তম কারণ রয়েছে। এরপর তিনি আরও বলেন: “অবকাশমতে এখন অল্প কাল নানাবিধ পরীক্ষায় দুঃখার্ত্ত হইতেছ।” (১ পিতর ১:১-৬) এখানে উল্লেখিত বহুবিধ বা “নানাবিধ” শব্দটি লক্ষ করুন। এটি ইঙ্গিত করে যে, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা আসবে। কিন্তু, পিতর সেখানেই থেমে থাকেন না এবং তার ভাইদেরকে এইরকম সন্দেহের মধ্যে রাখেন না যে, তারা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা সহ্য করতে পারবে কি না। এর পরিবর্তে, পিতর উল্লেখ করেন, খ্রিস্টানরা নিশ্চিত থাকতে পারে যে, তারা যে-বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে থাকে, সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য যিহোবা তাদেরকে সাহায্য করবেন, তা সেগুলো যেরকমই হোক না কেন। সেই আশ্বাস পিতরের চিঠির পরের অংশে দেওয়া হয়েছে, যেখানে এই প্রেরিত ‘সকল বিষয়ের পরিণামের’ বা শেষের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।—১ পিতর ৪:৭.

৪. প্রথম পিতর ৪:১০ পদের কথাগুলো কেন আমাদের জন্য সান্ত্বনাদায়ক?

পিতর বলেন: “তোমরা যে যেমন অনুগ্রহদান পাইয়াছ, তদনুসারে ঈশ্বরের বহুবিধ অনুগ্রহ-ধনের উত্তম অধ্যক্ষের মত পরস্পর পরিচর্য্যা কর [‘করবার জন্য তা ব্যবহার কর,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]।” (১ পিতর ৪:১০) এখানে পিতর আবারও “বহুবিধ” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তিনি মূলত বলছেন যে, ‘পরীক্ষা যেমন বিভিন্নভাবে এসে থাকে, তেমনই ঈশ্বরও নানাভাবে অনুগ্রহ-ধন বা অযাচিত দয়া প্রকাশ করেন।’ সেই বিবৃতি কেন সান্ত্বনাদায়ক? এটি ইঙ্গিত করে যে, আমাদের পরীক্ষার ধরন যা-ই হোক না কেন, ঈশ্বরের অযাচিত দয়া সবসময়ই প্রকাশ পাবে, যা আমাদের সহ্য করতে সাহায্য করবে। কিন্তু, পিতরের বিবৃতিতে আপনি কি লক্ষ করেছেন যে, যিহোবার অযাচিত দয়া আমাদের প্রতি কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে? সহখ্রিস্টানদের মাধ্যমে।

‘পরস্পর পরিচর্য্যা করা’

৫. (ক) প্রত্যেক খ্রিস্টানের কী করা উচিত? (খ) কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সমস্ত সদস্যের উদ্দেশে বলার সময় পিতর বলেন: “সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম কর।” এরপর তিনি আরও বলেন: ‘তোমরা যে যেমন অনুগ্রহদান পাইয়াছ, তদনুসারে পরস্পর পরিচর্য্যা করিবার জন্য তা ব্যবহার কর।’ (১ পিতর ৪:৮, ১০) তাই, মণ্ডলীর প্রত্যেককে সহখ্রিস্টানদের গেঁথে তোলায় অংশ নিতে হবে। আমাদের ওপর এমন মূল্যবান কিছুর ভার অর্পণ করা হয়েছে, যেটা হচ্ছে যিহোবার আর এটা অন্যদের কাছে বন্টন করার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। তাহলে, আমাদেরকে আস্থা সহকারে কী প্রদান করা হয়েছে? পিতর বলেন যে, এটা হচ্ছে এক “অনুগ্রহদান।” সেই দান কী? কীভাবে আমরা ‘পরস্পর পরিচর্য্যা করিবার জন্য তা ব্যবহার করি’?

৬. কিছু দান কী, যেগুলো খ্রিস্টানদেরকে আস্থা সহকারে প্রদান করা হয়েছে?

ঈশ্বরের বাক্য বলে: “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে।” (যাকোব ১:১৭) বাস্তবিকই সমস্ত দান, যেগুলোর ভার যিহোবা তাঁর লোকেদের ওপর দেন, সেগুলো হচ্ছে যিহোবার অযাচিত দয়ার প্রকাশ। একটা উল্লেখযোগ্য দান, যা যিহোবা আমাদের প্রদান করেন, তা হল পবিত্র আত্মা। সেই দান আমাদেরকে প্রেম, মঙ্গলভাব ও মৃদুতার মতো ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তুলতে সমর্থ করে। ফলে, এই গুণগুলো আমাদের সহবিশ্বাসীদের প্রতি আন্তরিক স্নেহ দেখাতে ও তাদেরকে স্বেচ্ছায় সমর্থন করতে পরিচালিত করে। সেই উত্তম দানগুলোর মধ্যে প্রকৃত প্রজ্ঞা ও জ্ঞানও রয়েছে, যেগুলো আমরা পবিত্র আত্মার সাহায্যে অর্জন করে থাকি। (১ করি. ২:১০-১৬; গালা. ৫:২২, ২৩) বস্তুতপক্ষে, আমাদের সমস্ত কর্মশক্তি, ক্ষমতা ও মেধাকে এমন দান হিসেবে দেখা যেতে পারে, যেগুলো আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রশংসা ও সম্মান নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করা হয়। আমাদের সহবিশ্বাসীদের কাছে ঈশ্বরের অযাচিত দয়া প্রকাশের এক মাধ্যম হিসেবে আমাদের ক্ষমতা ও গুণাবলিকে কাজে লাগানোর ঈশ্বরদত্ত দায়িত্ব আমাদের রয়েছে।

‘পরিচর্য্যা করিবার জন্য তা ব্যবহার কর’—কীভাবে?

৭. (ক) “তদনুসারে” অভিব্যক্তিটি কী ইঙ্গিত করে? (খ) আমাদের নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত এবং কেন?

আমরা যে-দানগুলো পেয়েছি, সেই সম্বন্ধে পিতর আরও বলেন: ‘তোমরা যে যেমন অনুগ্রহদান পাইয়াছ, তদনুসারে তা ব্যবহার কর।’ বিশেষণীয় অভিব্যক্তি “তদনুসারে” ইঙ্গিত করে যে, গুণাবলি ও ক্ষমতা যে শুধু বিভিন্ন ধরনেরই হতে পারে, তা নয় কিন্তু এগুলোর পরিমাণও ভিন্ন হতে পারে। দান যা-ই হোক না কেন, প্রত্যেককে জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন ‘পরস্পর পরিচর্য্যা করিবার জন্য তা [অর্থাৎ যে-নির্দিষ্ট দান তিনি লাভ করেছেন, সেটা] ব্যবহার করে।’ অধিকন্তু, ‘উত্তম অধ্যক্ষের মত তা ব্যবহার কর’ বাক্যাংশটি হচ্ছে এক আদেশ। তাই, আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমার সহবিশ্বাসীদের শক্তিশালী করার জন্য আমাকে আস্থা সহকারে যে-দানগুলো প্রদান করা হয়েছে, আমি কি সত্যিই সেগুলো ব্যবহার করি?’ (তুলনা করুন, ১ তীমথিয় ৫:৯, ১০.) ‘নাকি আমি যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতাগুলোকে মূলত আমার নিজের উপকারার্থে—সম্ভবত ধনসম্পদ অর্জন করার বা সামাজিক পদমর্যাদা লাভ করার জন্য—ব্যবহার করি?’ (১ করি. ৪:৭) যদি আমরা আমাদের দানগুলোকে ‘পরস্পর পরিচর্য্যা করিবার জন্য’ ব্যবহার করি, তাহলে আমরা যিহোবাকে প্রীত বা খুশি করব।—হিতো. ১৯:১৭; পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:১৬.

৮, ৯. (ক) কয়েকটা উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টানরা তাদের সহবিশ্বাসীদের সেবা করে থাকে? (খ) আপনার মণ্ডলীর ভাইবোনেরা কীভাবে একে অন্যকে সাহায্য করে থাকে?

ঈশ্বরের বাক্য বিভিন্ন উপায় সম্বন্ধে উল্লেখ করে, যেগুলোর মাধ্যমে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা একে অন্যের পরিচর্যা করত। (পড়ুন, রোমীয় ১৫:২৫, ২৬; ২ তীমথিয় ১:১৬-১৮.) একইভাবে আজকেও, সত্য খ্রিস্টানরা সহবিশ্বাসীদের প্রতি তাদের দানকে ব্যবহার করার আদেশ সর্বান্তঃকরণে পালন করে থাকে। এমন কয়েকটা উপায় বিবেচনা করুন, যে-উপায়ে এটা করা হয়ে থাকে।

অনেক ভাই সভার বিভিন্ন বিষয়বস্তু প্রস্তুত করার জন্য প্রতি মাসে অনেক সময় ব্যয় করে থাকে। সভাতে এসে তারা যখন এই আধ্যাত্মিক রত্ন প্রকাশ করে, যেগুলো তারা তাদের বাইবেল অধ্যয়নের সময় লাভ করেছে, তখন তাদের অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ কথাগুলো মণ্ডলীর সকলকে স্থির থাকতে অনুপ্রাণিত করে। (১ তীম. ৫:১৭) অসংখ্য ভাইবোন সহবিশ্বাসীদের প্রতি তাদের উষ্ণ অনুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করার জন্য পরিচিত। (রোমীয় ১২:১৫) কেউ কেউ নিয়মিতভাবে ‘বিষণ্ণ’ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ করে ও তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে প্রার্থনা করে। (১ থিষল. ৫:১৪, NW) যে-সহখ্রিস্টানরা কোনো পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করছে, তাদের উদ্দেশে আন্তরিক উৎসাহজনক কিছু কথা লেখার জন্য অন্যেরা সময় করে নেয়। আবার কেউ কেউ সদয়ভাবে সেই ব্যক্তিদের মণ্ডলীর সভাগুলোতে উপস্থিত থাকার জন্য সাহায্য করে থাকে, যারা শারীরিকভাবে সীমাবদ্ধ। হাজার হাজার সাক্ষি ত্রাণ কাজে অংশ নেয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণে সহবিশ্বাসীদেরকে সাহায্য করে থাকে। এইরকম যত্নশীল ভাইবোনদের প্রদত্ত কোমল স্নেহ ও ব্যবহারিক সহযোগিতা হচ্ছে “ঈশ্বরের বহুবিধ অনুগ্রহ-ধনের” প্রকাশ।—পড়ুন, ১ পিতর ৪:১১.

কোনটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

১০. (ক) ঈশ্বরের প্রতি তার সেবার কোন দুটো দিকের ব্যাপারে পৌল চিন্তিত ছিলেন? (খ) আজকে আমরা কীভাবে পৌলকে অনুকরণ করি?

১০ সহবিশ্বাসীদের পক্ষে ব্যবহার করার জন্য ঈশ্বরের দাসদেরকে আস্থা সহকারে শুধুমাত্র একটা দানই প্রদান করা হয়নি কিন্তু সেইসঙ্গে সহমানবদের কাছে বন্টন করার জন্য একটা বার্তাও প্রদান করা হয়েছে। প্রেরিত পৌল যিহোবার প্রতি তার সেবার এই দুটো দিককেই শনাক্ত করেছিলেন। তিনি ইফিষ মণ্ডলীর উদ্দেশে লিখেছিলেন যে, তাদের উপকারার্থে ‘ঈশ্বরের দয়ার ব্যবস্থা জানাবার ভার’ তাকে দেওয়া হয়েছিল। (ইফি. ৩:২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) তা সত্ত্বেও, তিনি আরও বলেছিলেন: “ঈশ্বর . . . আমাদিগকে পরীক্ষাসিদ্ধ করিয়া আমাদের উপরে সুসমচারের ভার রাখিয়াছেন।” (১ থিষল. ২:৪) পৌলের মতো, আমরাও স্বীকার করি যে, আমাদের ওপর আস্থা সহকারে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচারক হিসেবে সেবা করার কার্যভার প্রদান করা হয়েছে। প্রচার কাজে উদ্যোগের সঙ্গে অংশ নিয়ে আমরা সেই উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি, যা পৌল সুসমাচারের একজন অক্লান্ত ঘোষণাকারী হিসেবে স্থাপন করেছিলেন। (প্রেরিত ২০:২০, ২১; ১ করি. ১০:৩৪) আমরা জানি যে, রাজ্যের বার্তা প্রচার করা জীবন রক্ষা করতে পারে। কিন্তু, একইসময়ে আমরা সহবিশ্বাসীদেরকে দান বা “কোন আত্মিক বর প্রদান” করার বিভিন্ন সুযোগ খোঁজার মাধ্যমে পৌলকে অনুকরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি।—পড়ুন, রোমীয় ১:১১, ১২; ১০:১৩-১৫.

১১. প্রচার করার ও আমাদের ভাইদের গেঁথে তোলার কার্যভারকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

১১ এই দুটো খ্রিস্টীয় কাজের মধ্যে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এই ধরনের একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা, একটা পাখির সম্বন্ধে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার অনুরূপ: তার দুটো ডানার মধ্যে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? উত্তরটা স্পষ্ট। একটা পাখির সঠিকভাবে ওড়ার জন্য তার দুটো ডানারই প্রয়োজন আছে। অনুরূপভাবে, খ্রিস্টান হিসেবে পরিপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ার জন্য ঈশ্বরের সেবার দুটো দিকেই আমাদের অংশ নেওয়া প্রয়োজন। তাই, সুসমাচার প্রচার করার এবং সহবিশ্বাসীদের গেঁথে তোলার বিষয়ে আমাদের কার্যভারকে আলাদা আলাদা হিসেবে দেখার পরিবর্তে, আমরা সেগুলোকে ঠিক সেভাবে দেখে থাকি, যেমনটা প্রেরিত পিতর ও পৌল দেখত—এমন দায়িত্ব হিসেবে, যা একটা অন্যটার পরিপূরক। কোন দিক দিয়ে?

১২. কীভাবে আমরা যিহোবার এক মাধ্যম হিসেবে সেবা করি?

১২ সুসমাচার প্রচারক হিসেবে, ঈশ্বরের রাজ্যের উৎসাহজনক বার্তার দ্বারা আমাদের সহমানবদের হৃদয়কে স্পর্শ করার চেষ্টা করতে গিয়ে শিক্ষাদানের যতটুকু দক্ষতাই আমাদের রয়েছে, আমরা তা কাজে লাগাই। এর মাধ্যমে আমরা আশা করি যে, আমরা তাদেরকে খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে উঠতে সাহায্য করব। তবে, আমাদের সহবিশ্বাসীদেরকে উৎসাহজনক কথাবার্তা ও সাহায্যকারী বিভিন্ন কাজের—ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার প্রকাশের—দ্বারা উদ্দীপিত করার চেষ্টা করতে গিয়ে আমাদের যে-ক্ষমতা ও অন্যান্য দান রয়েছে, সেগুলোও আমরা ব্যবহার করি। (হিতো. ৩:২৭; ১২:২৫) এর মাধ্যমে আমরা আশা করি যে, তাদেরকে খ্রিস্টের শিষ্য হিসেবে স্থির থাকার জন্য সাহায্য করতে পারব। দুটো কাজেই—জনসাধারণ্যে প্রচার করার ও ‘পরস্পর পরিচর্য্যা করিবার’ বিষয়ে—যিহোবার এক মাধ্যম হিসেবে সেবা করার চমৎকার সুযোগ আমাদের রয়েছে।—গালা. ৬:১০.

“পরস্পর স্নেহশীল হও”

১৩. কী হবে যদি আমরা ‘পরস্পর পরিচর্য্যা করা’ থেকে বিরত থাকি?

১৩ পৌল তার সহবিশ্বাসীদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০) বাস্তবিকই, আমাদের ভাইদের প্রতি স্নেহ থাকা আমাদেরকে ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার অধ্যক্ষ হিসেবে সর্বান্তঃকরণে সেবা করতে অনুপ্রাণিত করে। আমরা উপলব্ধি করি যে, শয়তান যদি আমাদেরকে ‘পরস্পর পরিচর্য্যা করিবার’ ক্ষেত্রে বিরত রাখতে সফল হয়, তাহলে সে আমাদের একতাকে দুর্বল করে দেবে। (কল. ৩:১৪) ফলে, একতা না থাকলে প্রচার কাজে উদ্যোগও হ্রাস পাবে। শয়তান খুব ভালোভাবেই জানে যে, আমরা যেন উড়তে না পারি, সেইজন্য বলতে গেলে, আমাদের যেকোনো একটা ডানাতে আঘাত করলেই যথেষ্ট।

১৪. আমাদের ‘পরস্পর পরিচর্য্যা করা’ থেকে কারা উপকৃত হয়? একটা উদাহরণ দিন।

১৪ ‘পরস্পর পরিচর্য্যা করা’ শুধুমাত্র যারা ঈশ্বরের অযাচিত দয়া লাভ করে, তাদেরকেই উপকৃত করে না কিন্তু সেইসঙ্গে যারা এটা দেখায় তাদেরকেও উপকৃত করে। (হিতো. ১১:২৫) উদাহরণস্বরূপ, রায়েন ও রনি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনোয়ার এক দম্পতি। তারা যখন জানতে পারে যে, হারিকেন ক্যাটরিনা সহসাক্ষিদের হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে, তখন ভ্রাতৃপ্রেম তাদেরকে চাকরি ছেড়ে দিতে, তাদের আ্যপার্টমেন্ট বিক্রি করে দিতে, পুরোনো ট্রেইলার কিনে সেটাকে বসবাসের উপযোগী করে তুলতে এবং ১,৪০০ কিলোমিটার দূরে লুইজিয়ানায় যেতে পরিচালিত করেছিল। তাদের ভাইবোনদেরকে সাহায্য করার জন্য নিজেদের সময়, শক্তি ও সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে তারা সেখানে এক বছরেরও বেশি সময় থেকেছিল। “ত্রাণ বিতরণের কাজে অংশ নেওয়া আমাকে ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী করেছিল,” ২৯ বছর বয়সি রায়েন বলেন। “আমি দেখেছি যে, যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের যত্ন নেন।” রায়েন আরও বলেন: “অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ভাইদের সঙ্গে কাজ করা আমাকে শিখতে সাহায্য করেছে যে, কীভাবে ভাইবোনদের যত্ন নিতে হয়। আমি এও শিখেছিলাম যে, আমাদের মতো যুবক বয়সি ব্যক্তিদের জন্য যিহোবার সংগঠনে করার মতো অনেক কাজ রয়েছে।” ২৫ বছর বয়সি রনি বলেন: “অন্যদেরকে সাহায্য করায় অংশ নিতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আমি এখন আমার জীবনের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি সুখ অনুভব করি। আমি জানি যে, আসন্ন বছরগুলোতে এই চমৎকার অভিজ্ঞতা থেকে আমি ক্রমাগত উপকার লাভ করব।”

১৫. ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করে চলার কোন উত্তম কারণগুলো আমাদের রয়েছে?

১৫ বাস্তবিকই, সুসমাচার প্রচার করার ও সহবিশ্বাসীদের গেঁথে তোলার বিষয়ে ঈশ্বরের আদেশের বাধ্য হওয়া সকলের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসে। আমরা যাদের সাহায্য করি, তারা আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হয় ও সেইসঙ্গে আমরা সেই আনন্দ উপভোগ করি, যা দান করা থেকে আসে। (প্রেরিত ২০:৩৫) যখন প্রত্যেক সদস্য অন্যদের প্রতি প্রেমপূর্ণ আগ্রহ প্রকাশ করে, তখন পুরো মণ্ডলীতে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। অধিকন্তু, একে অন্যের প্রতি আমরা যে-প্রেম ও স্নেহ দেখাই, তা স্পষ্টভাবে আমাদেরকে সত্য খ্রিস্টান হিসেবে চিহ্নিত করে। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) সর্বোপরি, আমাদের যত্নবান পিতা যিহোবার সম্মান হয়, কারণ যারা সংকটের মধ্যে রয়েছে, তাদেরকে শক্তিশালী করার বিষয়ে তাঁর আকাঙ্ক্ষা তাঁর পার্থিব দাসদের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। তাই, ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহ-ধনের উত্তম অধ্যক্ষের মত পরস্পর পরিচর্য্যা করিতে’ আমাদের দানকে ব্যবহার করার কত উত্তম কারণই না আমাদের রয়েছে! আপনি কি ক্রমাগত তা করে চলবেন?—পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১০.

আপনার কি মনে আছে?

• কোন কোন উপায়ে যিহোবা তাঁর দাসদের শক্তিশালী করেন?

• আমাদের ওপর আস্থা সহকারে কী প্রদান করা হয়েছে?

• কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের সহবিশ্বাসীদের সেবা করতে পারি?

• কী আমাদেরকে ‘পরস্পর পরিচর্য্যা করিবার’ বিষয়ে আমাদের দানকে ক্রমাগত ব্যবহার করতে পরিচালিত করবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি অন্যদেরকে সেবা করার জন্য, নাকি নিজেকে সন্তুষ্ট করার জন্য আপনার ‘অনুগ্রহদানকে’ ব্যবহার করেন?

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমরা অন্যদের কাছে সুসমাচার প্রচার করি ও সহখ্রিস্টানদের সাহায্য করি

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

ত্রাণকর্মীরা তাদের আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের জন্য প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য