সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘এই পথ, এই পথেই চল’

‘এই পথ, এই পথেই চল’

‘এই পথ, এই পথেই চল’

এমিলিয়া পিডারসনের কাহিনি

বলেছেন রূথ ই. পাপাস

 আমার মা, এমিলিয়া পিডারসন ১৮৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তিনি একজন স্কুল শিক্ষিকা হয়েছিলেন কিন্তু তিনি আসলে তার জীবন, লোকেদেরকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে সাহায্য করার কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। মায়ের এই আকাঙ্ক্ষার প্রমাণ ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার জেসপার নামক ছোট্ট শহরে অবস্থিত আমাদের বাড়িতে থাকা একটা বিশাল বাক্স। তিনি এটা কিনেছিলেন, যাতে তার জিনিসপত্র ভরে চিনে নিয়ে যেতে পারেন, যেখানে তিনি খ্রিস্টীয়জগতের একজন মিশনারি হিসেবে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, যখন তার মা মারা যান, তখন তাকে তার পরিকল্পনা বাদ দিতে হয় এবং তার ছোটো ছোটো ভাইবোনের দেখাশোনা করার জন্য বাড়িতেই থাকতে হয়। ১৯০৭ সালে আমার বাবা থিওডোর হোলিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯২৫ সালের ২ ডিসেম্বর আমার জন্ম হয় আর সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে আমিই ছিলাম সবার ছোটো।

মায়ের মনে বাইবেল সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন ছিল, যেগুলোর উত্তর খোঁজার জন্য তিনি অত্যন্ত উদ্‌গ্রীব ছিলেন। এর মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিল এই শিক্ষা সম্বন্ধে যে, নরক হল দুষ্টদের জন্য অগ্নিময় যাতনার এক স্থান। তিনি লুথারিয়ান গির্জার একজন পরিদর্শনকারী তত্ত্বাবধায়ককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাইবেলের কোথায় তিনি এই শিক্ষা সম্বন্ধে সমর্থন খুঁজে পেতে পারেন। বস্তুতপক্ষে, তিনি তাকে বলেন যে, বাইবেল কী বলে, তাতে কিছু যায় আসে না—অগ্নিময় যাতনার এক নরক সম্বন্ধীয় শিক্ষাটা শিখতে হবে।

তার আধ্যাত্মিক ক্ষুধা পরিতৃপ্ত হয়

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, আমার মায়ের বোন অর্থাৎ আমার মাসি এমা, সংগীতের ওপর পড়াশোনা করার জন্য মিনেসোটার নর্থফিল্ডে গিয়েছিলেন। তিনি তার শিক্ষক মিলিউস ক্রিস্চানসনের বাড়িতে থাকতেন, যার স্ত্রী একজন বাইবেল ছাত্র ছিলেন—যিহোবার সাক্ষিদের তখন এই নামেই ডাকা হতো। এমা মাসি তাদের বলেছিলেন যে, তার এক দিদি আছেন, যিনি বাইবেলের একজন আন্তরিক পাঠক। এর অল্পসময় পরেই, মিসেস ক্রিস্চানসন মাকে তার বাইবেল সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর উত্তরসহ একটা চিঠি লিখেছিলেন।

একদিন, লরা ওটহাউট নামে একজন বাইবেল ছাত্র, দক্ষিণ ডাকোটার সু ফলস্‌ থেকে ট্রেনে করে জেসপার শহরে প্রচার করতে আসেন। মা তার কাছ থেকে পাওয়া বাইবেল সাহিত্যাদি অধ্যয়ন করেন আর ১৯১৫ সালে তিনি অন্যদের কাছে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে বলতে শুরু করেন এবং বোন লরার দেওয়া সাহিত্যাদি বিতরণ করেন।

১৯১৬ সালে মা শুনতে পান যে, আইওয়ার সু সিটির একটা সম্মেলনে চার্লস টেজ রাসেল আসবেন। মা সেখানে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই মায়ের পাঁচ জন সন্তান হয়েছিল আর তার সবচেয়ে ছোটো ছেলে মারভিনের বয়স তখন মাত্র পাঁচ মাস। তা সত্ত্বেও, সব ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তিনি সু সিটির সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রায় ১৬০ কিলোমিটার পথ ট্রেনযাত্রা করেছিলেন। তিনি ভাই রাসেলের বক্তৃতা শুনেছিলেন, “ফটো-ড্রামা অভ্‌ ক্রিয়েশন” দেখেছিলেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। বাড়িতে ফিরে তিনি সেই সম্মেলন সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যেটি জেসপার জার্নাল-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯২২ সালে, ওহাইওর সিডার পয়েন্টে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে যোগদানকারী প্রায় ১৮,০০০ জন ব্যক্তির মধ্যে আমার মা-ও ছিলেন একজন। সেই সম্মেলনের পর থেকে তিনি কখনো ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করা বন্ধ করেননি। বস্তুতপক্ষে, তার উদাহরণই আমাদেরকে এই পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছিল: ‘এই পথ, এই পথেই চল।’—যিশা. ৩০:২১.

রাজ্যের পরিচর্যার ফলগুলো

১৯২০-র দশকের শুরুর দিকে, আমার বাবা-মা জেসপার শহরের বাইরে অবস্থিত একটা বাড়িতে চলে যায়। বাবার একটা সফল ব্যাবসা ছিল আর তাকে একটা বড় পরিবারের ভরণপোষণ করতে হতো। মা যতটা বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন বাবা ততটা করেননি, কিন্তু তিনি পূর্ণহৃদয়ে প্রচার কাজকে সমর্থন করতেন আর সেই সময়ে ভ্রমণকারী বলে ডাকা হতো এমন ভ্রমণ পরিচারকদের জন্য আমাদের বাড়ির দরজা খুলে দিতেন। প্রায়ই, কোনো ভ্রমণ পরিচারক যখন আমাদের বাড়িতে বক্তৃতা দিতেন, তখন প্রায় এক-শো জন বা তারও বেশি লোক উপস্থিত হতো—আমাদের বসার ঘর, খাবার ঘর এবং শোবার ঘর লোকে ভর্তি হয়ে যেত।

আমার বয়স যখন প্রায় সাত বছর, তখন আমার মাসি লেটি ফোন করে বলেন যে, তার প্রতিবেশী এড লারসন আর তার স্ত্রী বাইবেল অধ্যয়ন করতে চায়। তারা বাইবেলের সত্যগুলোকে সানন্দে গ্রহণ করে নেয় আর পরে তাদের আরেক প্রতিবেশী, আট সন্তানের মা মার্থা ভ্যান ড্যালেনকে অধ্যয়নে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। বোন মার্থা ও তার পুরো পরিবারও বাইবেল ছাত্র হয়েছিল। *

সেই সময়ে, গর্ডন ক্যামেরুড নামে একজন যুবক বাবার সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন, যিনি আমাদের বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে থাকতেন। গর্ডনকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল: “তোমার মালিকের মেয়েদের ব্যাপারে সাবধান। তারা এক অদ্ভুত ধর্ম পালন করে।” কিন্তু, গর্ডন বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন আর খুব শীঘ্র এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হন যে, তিনি সত্য খুঁজে পেয়েছেন। তিন মাস পরে তিনি বাপ্তিস্ম নেন। তার বাবা-মাও বিশ্বাসী হয়েছিল আর আমাদের পরিবারগুলো—হোলিন পরিবার, ক্যামেরুড পরিবার এবং ভ্যান ড্যালেন পরিবার—ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছিল।

সম্মেলনগুলোর দ্বারা শক্তি লাভ করা

সিডার পয়েন্টে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দ্বারা মা এতটাই উৎসাহিত হয়েছিলেন যে, তিনি আর কোনো সম্মেলন বাদ দিতে চাননি। তাই আমার ছোটোবেলার স্মৃতিগুলোর মধ্যে, সেই সমাবেশগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘযাত্রা করার বিভিন্ন স্মৃতি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৯৩১ সালে ওহাইওর কলাম্বাসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ সেখানেই যিহোবার সাক্ষি নামটা গ্রহণ করা হয়েছিল। (যিশা. ৪৩:১০-১২) এ ছাড়া, ১৯৩৫ সালে ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের কথাও আমার খুব ভালোভাবে মনে আছে, যেখানে একটা ঐতিহাসিক বক্তৃতা প্রকাশিত বাক্যে বলা “বিস্তর জনতা” বা ‘বিস্তর লোককে’ শনাক্ত করেছিল। (প্রকা. ৭:৯; কিং জেমস ভারসন) সেই সম্মেলনে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল এমন ৮০০-রও বেশি লোকের মধ্যে আমার দুই দিদি লিলিয়েন এবং ইউনিসও ছিল।

আমাদের পরিবার ১৯৩৭ সালে ওহাইওর কলাম্বাসে; ১৯৩৮ সালে ওয়াশিংটনের সিয়াটেলে এবং ১৯৩৯ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের জন্য যাত্রা করে। ভ্যান ড্যালেন ও ক্যামেরুড পরিবার এবং অন্যেরাও আমাদের সঙ্গে যায় আর যাত্রাপথে আমরা তাঁবু খাটিয়ে থাকি। ১৯৪০ সালে ইউনিস দিদির সঙ্গে লিও ভ্যান ড্যালেনের বিয়ে হয় আর তারা অগ্রগামী হয়। সেই একই বছরে লিলিয়েন দিদির সঙ্গে গর্ডন ক্যামেরুডের বিয়ে হয় আর তারাও অগ্রগামী হয়।

১৯৪১ সালে মিসৌরীর সেন্ট লুইসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনটা ছিল এক বিশেষ সম্মেলন। সেখানে হাজার হাজার অল্পবয়সি সন্তান (ইংরেজি) নামক বইটি পেয়েছিল। সেই সম্মেলনটা আমার জন্য এক সন্ধিক্ষণ ছিল। এর অল্পসময় পরেই, ১৯৪১ সালের ১ সেপ্টেম্বর আমার দাদা মারভিন ও তার স্ত্রী জয়েসের সঙ্গে আমিও একজন অগ্রগামী হই। তখন আমার বয়স ছিল ১৫ বছর।

আমাদের কৃষকসমাজে সমস্ত ভাইবোনের পক্ষে সম্মেলনগুলোতে যোগ দেওয়া কঠিন ছিল কারণ সেগুলো প্রায়ই ফসল কাটার সময়ে অনুষ্ঠিত হতো। তাই, যারা সম্মেলনে যোগ দিতে পারত না, তাদের উপকারের জন্য সম্মেলনের পর আমাদের বাড়ির পিছনের উঠানে সম্মেলনের বিষয়বস্তু পুনরালোচনা করার ব্যবস্থা করা হতো। সেগুলো বেশ আনন্দদায়ক সমাবেশ ছিল।

গিলিয়েড ও বিদেশে কার্যভার

১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিশনারি সেবার জন্য অগ্রগামীদের প্রশিক্ষণ দিতে গিলিয়েড স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথম ক্লাসে ভ্যান ড্যালেন পরিবার থেকে ছয় জন সদস্য ছিল—এমিল, আর্থার, হোমার এবং লিও এই চার জন ভাই; তাদের পিসতুতো ভাই ডোনাল্ড; লিওর স্ত্রী অর্থাৎ আমার দিদি ইউনিস। যেহেতু আমরা জানতাম না যে, আবার কবে আমরা তাদেরকে দেখতে পাব, তাই আমরা মিশ্র অনুভূতি নিয়ে তাদেরকে বিদায় জানাই। গ্র্যাজুয়েশনের পর তাদের ছয় জনকেই পুয়ের্টো রিকোতে কার্যভার দেওয়া হয়, যেখানে তখন বারো জনেরও কম সাক্ষি ছিল।

এক বছর পরে, লিলিয়েন দিদি এবং গর্ডন দাদাবাবু আর মারভিন দাদা ও জয়েস বউদি, গিলিয়েড-এর তৃতীয় ক্লাসে যোগ দিয়েছিল। তাদেরকেও পুয়ের্টো রিকোতে পাঠানো হয়েছিল। এরপর ১৯৪৪ সালে, ১৮ বছর বয়সে আমি গিলিয়েড-এর চতুর্থ ক্লাসে যোগ দিই। ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্র্যাজুয়েশনের পর আমি পুয়ের্টো রিকোতে আমার ভাইবোনদের সঙ্গে যোগ দিই। আমার জন্য কতই না নতুন এক অভিজ্ঞতা! যদিও স্প্যানিশ ভাষা শেখাটা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, তা সত্ত্বেও শীঘ্র আমাদের মধ্যে কয়েক জন ২০-টারও বেশি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে শুরু করে। যিহোবা সেই কাজের ওপর আশীর্বাদ বর্ষণ করেছিলেন। বর্তমানে পুয়ের্টো রিকোতে প্রায় ২৫,০০০ জন সাক্ষি রয়েছে!

আমাদের পরিবারে বিভিন্ন দুঃখজনক ঘটনা আঘাত হানে

১৯৫০ সালে লিও দাদাবাবু আর ইউনিস দিদির ছেলে মার্কের জন্মের পর, তারা পুয়ের্টো রিকোতেই থেকে যায়। ১৯৫২ সালে তারা নিজেদের দেশে তাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার জন্য ছুটি নেওয়ার পরিকল্পনা করে। ১১ এপ্রিল তারা বিমানে চড়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, তাদের বিমানটা ওড়ার অল্পসময় পরেই সমুদ্রে ভেঙে পড়ে। লিও দাদাবাবু আর ইউনিস দিদি মারা যায়। দু-বছর বয়সি মার্ককে সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। একজন রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাকে একটা লাইফবোটের মধ্যে ছুঁড়ে দেন ও তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়া হয়—আর সে বেঁচে যায়। *

এর পাঁচ বছর পরে, ১৯৫৭ সালের ৭ মার্চ, বাবা-মা গাড়িতে করে কিংডম হলে যাওয়ার সময় সেই গাড়ির চাকা পাংচার হয়। রাস্তার ধারে চাকা বদলানোর সময় পাশ দিয়ে যাওয়া একটা গাড়ি বাবাকে ধাক্কা দেয় আর তিনি তৎক্ষণাৎ মারা যান। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বক্তৃতায় প্রায় ৬০০ জন ব্যক্তি যোগ দেয় আর সেই এলাকায় এক চমৎকার সাক্ষ্য দেওয়া হয়, যেখানে বাবা একজন সম্মাননীয় ব্যক্তি ছিলেন।

নতুন নতুন কার্যভার

বাবার মৃত্যুর ঠিক আগে, আমি আর্জেন্টিনাতে সেবা করার জন্য কার্যভার পাই। ১৯৫৭ সালের আগস্ট মাসে আমি আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে, মেন্ডোজা শহরে গিয়ে পৌঁছাই। ১৯৫৮ সালে জর্জ পাপাসকে আর্জেন্টিনাতে কার্যভার দেওয়া হয়, যিনি গিলিয়েড-এর ৩০তম ক্লাসের একজন গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। জর্জ আর আমি ভালো বন্ধু হয়ে উঠি আর ১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে আমরা বিয়ে করি। ১৯৬১ সালে, আমার মা ৮৩ বছর বয়সে মারা যান। তিনি সত্য উপাসনার পথে বিশ্বস্তভাবে চলেছিলেন এবং অনেককে সেই একই পথে চলতে সাহায্য করেছিলেন।

দশ বছর ধরে জর্জ আর আমি একত্রে অন্যান্য মিশনারির সঙ্গে বিভিন্ন মিশনারি হোমে সেবা করি। তারপর, সাত বছর আমরা সীমার কাজ করি। ১৯৭৫ সালে আমরা পরিবারের অসুস্থ সদস্যদেরকে সাহায্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসেছিলাম। ১৯৮০ সালে আমার স্বামীকে স্প্যানিশভাষী ক্ষেত্রে সীমার কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০-টা স্প্যানিশভাষী মণ্ডলী ছিল। ২৬ বছর ধরে আমরা সেই মণ্ডলীগুলোর অনেকগুলোতে পরিদর্শন করেছি আর মণ্ডলীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩,০০০-এরও বেশি হতে দেখেছি।

তারা ‘এই পথে’ চলেছে

মা তার পরিবারের অল্পবয়সি সদস্যদের পূর্ণসময়ের পরিচর্যা গ্রহণ করতে দেখার আনন্দও লাভ করেন। উদাহরণস্বরূপ, আমার বড়োদিদি এস্টারের এক মেয়ে ক্যারল, ১৯৫৩ সালে অগ্রগামীর কাজ শুরু করে। ডেনিস ট্রামবরের সঙ্গে তার বিয়ে হয় আর সেই সময় থেকে তারা পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় রত আছে। এস্টার মাসির আরেক মেয়ে লোয়িসের বিয়ে হয় ওয়েনডেল জেনসেনের সঙ্গে। তারা গিলিয়েড-এর ৪১তম ক্লাসে যোগ দেয় এবং নাইজেরিয়াতে ১৫ বছর ধরে মিশনারি হিসেবে সেবা করে। মার্ক, যার বাবা-মা বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল, তাকে লিও দাদাবাবুর বোন রূথ লা লন্ড ও তার স্বামী কার্টিস দত্তক নেয় এবং মানুষ করে। মার্ক ও তার স্ত্রী লাভন অনেক বছর ধরে অগ্রগামীর কাজ করেছে আর তাদের চার ছেলে-মেয়েকে ‘এই পথেই’ মানুষ করেছে।—যিশা. ৩০:২১.

আমার ভাইবোনদের মধ্যে এখন শুধু অরলিন দাদাই বেঁচে আছেন, যার বয়স ৯০-এর কোঠার মাঝামাঝি। তিনি এখনও বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করে যাচ্ছেন। জর্জ আর আমি আনন্দের সঙ্গে পূর্ণসময়ের পরিচর্যার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

মা যা রেখে গিয়েছেন

এখন আমার কাছে মায়ের একটা মূল্যবান সম্পদ রয়েছে আর সেটা হল তার ডেস্ক। এটা আমার বাবা তাকে বিয়ের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। এর একটা ড্রয়ারে তার পুরোনো স্ক্র্যাপবুক বা সংগ্রহ পুস্তক আছে, যেটার মধ্যে চিঠিপত্র এবং খবরের কাগজে প্রকাশিত তার লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধ রয়েছে, যেগুলো রাজ্য সম্বন্ধে উত্তম সাক্ষ্য দিয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি ১৯০০ দশকের শুরুর দিকে লেখা। সেই ডেস্কে মায়ের মিশনারি ছেলে-মেয়েদের লেখা মূল্যবান চিঠিগুলোও রয়েছে। সেগুলো বার বার পড়া আমি কতই না উপভোগ করি! আর আমাদেরকে লেখা তার চিঠিগুলো সবসময়ই উৎসাহজনক এবং ইতিবাচক ছিল। মা কখনো তার মিশনারি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে পারেননি। কিন্তু, মিশনারি সেবার প্রতি তার উদ্যোগ ছিল, যা তার পরবর্তী প্রজন্মগুলোর অন্যদের হৃদয়কে অনুপ্রাণিত করেছে। পরমদেশ পৃথিবীতে বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা বড়ো পরিবারের পুনর্মিলন দেখার জন্য আমি কত অধীর আগ্রহেই না অপেক্ষা করে আছি!—প্রকা. ২১:৩, ৪.

[পাদটীকাগুলো]

^ এমিল এইচ. ভ্যান ড্যালেনের জীবনকাহিনির জন্য ১৯৮৩ সালের ১৫ জুন প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২৭-৩০ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ১৯৫২ সালের ২২ জুন সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ৩-৪ পৃষ্ঠা দেখুন।

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

এমিলিয়া পিডারসন

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯১৬: মা, বাবা (মারভিনকে কোলে নিয়ে আছেন); নীচে, বাম দিক থেকে ডান দিকে: অরলিন, এস্টার, লিলিয়েন, মিল্ডরেড

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

লিও এবং ইউনিস, তাদের মৃত্যুর কিছুদিন আগে

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫০: বাম দিক থেকে ডান দিকে, ওপরে: এস্টার, মিল্ডরেড, লিলিয়েন, ইউনিস, রূথ; নীচে: অরলিন, মা, বাবা এবং মারভিন

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

জর্জ এবং রূথ পাপাস, ২০০১ সালে তাদের সীমার কাজের সময়