সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ওই দেখুন! যিহোবার অনুমোদিত দাস

ওই দেখুন! যিহোবার অনুমোদিত দাস

ওই দেখুন! যিহোবার অনুমোদিত দাস

“ঐ দেখ, আমার দাস, . . . আমার প্রাণ তাঁহাতে প্রীত।”—যিশা. ৪২:১.

১. বিশেষভাবে স্মরণার্থ দিবস যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই যিহোবার লোকেদের কী করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং কেন?

 খ্রিস্টের মৃত্যু উদ্‌যাপন করার সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ‘বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা যীশুর প্রতি দৃষ্টি রাখিবার’ বিষয়ে প্রেরিত পৌলের পরামর্শ মেনে চলার জন্য ঈশ্বরের লোকেদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। পৌল আরও বলেছিলেন: “তাঁহাকেই আলোচনা [“ভাল করে বিবেচনা,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] কর, যিনি আপনার বিরুদ্ধে পাপিগণের এমন প্রতিবাদ সহ্য করিয়াছিলেন, যেন প্রাণের ক্লান্তিতে অবসন্ন না হও।” (ইব্রীয় ১২:২, ৩) খ্রিস্টের বিশ্বস্ততার পথ, যা তাঁর বলিদানের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল, সেটার প্রতি ভালো করে দৃষ্টি রাখা, অভিষিক্ত খ্রিস্টান ও তাদের আরও মেষ সহযোগী, উভয়কেই বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে যেতে এবং ‘প্রাণের ক্লান্তিতে অবসন্ন হওয়া’ এড়াতে সাহায্য করবে।—তুলনা করুন, গালাতীয় ৬:৯.

২. ঈশ্বরের পুত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যিহোবা ভাববাদী যিশাইয়কে ধারাবাহিক কিছু ভবিষ্যদ্‌বাণী লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যেগুলো সরাসরি তাঁর পুত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো আমাদেরকে “বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা” খ্রিস্ট যিশুর ‘প্রতি দৃষ্টি রাখিতে’ সাহায্য করবে। * এগুলো তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর দুঃখকষ্ট এবং আমাদের রাজা ও মুক্তিদাতা হিসেবে তাঁর উচ্চীকৃত অবস্থানের ওপর আলোকপাত করে। এগুলো স্মরণার্থ দিবস সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতাকে বৃদ্ধি করবে, যা এই বছর ৯ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর উদ্‌যাপন করা হবে।

দাসকে শনাক্ত করা হয়

৩, ৪. (ক) যিশাইয় বইয়ে ‘দাস’ শব্দটি কাদেরকে নির্দেশ করে? (খ) কীভাবে স্বয়ং বাইবেল যিশাইয় ৪২, ৪৯, ৫০, ৫২ এবং ৫৩ অধ্যায়ে উল্লেখিত দাসকে শনাক্ত করে?

‘দাস’ শব্দটি যিশাইয় বইয়ে অনেক বার এসেছে। কখনো কখনো এই শব্দটি স্বয়ং ভাববাদীকে নির্দেশ করেছে। (যিশা. ২০:৩; ৪৪:২৬) মাঝে মাঝে এটি সমগ্র ইস্রায়েল জাতির অথবা যাকোবের প্রতি প্রয়োগ করা হয়েছে। (যিশা. ৪১:৮, ৯; ৪৪:১, ২, ২১) কিন্তু, যিশাইয় ৪২, ৪৯, ৫০, ৫২ এবং ৫৩ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ দাস সম্বন্ধীয় উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো সম্বন্ধে কী বলা যায়? খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র সেই অধ্যায়গুলোতে বর্ণিত যিহোবার দাসের পরিচয় সম্বন্ধে কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখে না। আগ্রহের বিষয় হল, প্রেরিত বইয়ে উল্লেখিত ইথিওপীয় কর্মকর্তা এগুলোর মধ্যে একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী পড়ছিলেন, যখন সুসমাচার প্রচারক ফিলিপ সেই কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার জন্য পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তা, যিনি বাইবেলের সেই অংশটা পড়ছিলেন, যা আমরা এখন যিশাইয় ৫৩:৭, ৮ পদে পাই, তিনি ফিলিপকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “নিবেদন করি, ভাববাদী কাহার বিষয়ে এই কথা কহেন? নিজের বিষয়ে, না অন্য কাহারও বিষয়ে?” ফিলিপ সঙ্গেসঙ্গে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, যিশাইয় মশীহ যিশু সম্বন্ধে বলেছেন।—প্রেরিত ৮:২৬-৩৫.

যখন যিশু একেবারে শিশু ছিলেন, তখন শিমিয়োন নামে এক ধার্মিক ব্যক্তি পবিত্র আত্মার শক্তিতে ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘শিশু যীশু পরজাতিগণের প্রতি প্রকাশিত হইবার জ্যোতি’ বা দীপ্তি হয়ে উঠবেন, যেমনটা যিশাইয় ৪২:৬ এবং ৪৯:৬ পদে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছে। (লূক ২:২৫-৩২) অধিকন্তু, যিশুর পরীক্ষার রাতে তাঁর সঙ্গে যে-অবমাননাকর আচরণ করা হয়, সেই সম্বন্ধে যিশাইয় ৫০:৬-৯ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা হয়েছিল। (মথি ২৬:৬৭; লূক ২২:৬৩) সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনের পরে, প্রেরিত পিতর স্পষ্টভাবে যিশুকে যিহোবার “দাস” হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন। (যিশা. ৫২:১৩; ৫৩:১১; পড়ুন, প্রেরিত ৩:১৩, ২৬.) মশীহ সংক্রান্ত এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যিহোবা তাঁর দাসকে প্রশিক্ষণ দেন

৫. দাস কোন প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন?

ঈশ্বরের দাস সম্বন্ধে যিশাইয়ের একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী, পুত্রের মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময় যিহোবা ও তাঁর প্রথমজাত পুত্রের মধ্যে যে-অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল, তার ওপর আলোকপাত করে। (পড়ুন, যিশাইয় ৫০:৪-৯.) যিহোবা যে তাঁকে ক্রমাগতভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তা সেই দাস নিজে এই বলে প্রকাশ করেন: “তিনি . . . আমার কর্ণ জাগরিত করেন, যেন আমি শিক্ষাগ্রাহীদের ন্যায় শুনিতে পাই।” (যিশা. ৫০:৪) সেই সময়গুলোতে, যিহোবার দাস তাঁর পিতার কথা শুনেছিলেন ও তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছিলেন এবং বশীভূত এক শিষ্য হয়েছিলেন। নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার দ্বারা শিক্ষা লাভ করা কী এক অদ্বিতীয় সুযোগ!

৬. কীভাবে দাস তাঁর পিতার প্রতি নিখুঁত বশ্যতা দেখিয়েছেন?

এই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে দাস তাঁর পিতাকে “প্রভু সদাপ্রভু [“সার্বভৌম প্রভু যিহোবা,” NW]” বলে উল্লেখ করেন। এটা দেখায় যে, যিহোবার সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধীয় মৌলিক সত্যটা দাস শিখেছিলেন। তাঁর পিতার প্রতি নিখুঁত বশ্যতা দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন: “প্রভু সদাপ্রভু [“সার্বভৌম প্রভু যিহোবা,” NW] আমার কর্ণ খুলিয়াছেন, এবং আমি বিরুদ্ধাচারী হই নাই, পারঙ্মুখ হই নাই।” (যিশা. ৫০:৫) ভৌত নিখিলবিশ্ব ও মানুষ সৃষ্টির সময়ে তিনি “[সদাপ্রভুর] কাছে কার্য্যকারী [‘দক্ষ কর্মী,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]” ছিলেন। এই ‘দক্ষ কর্মী সদাপ্রভুর সম্মুখে নিত্য আহ্লাদ করিতেন; তাঁহার ভূমণ্ডলে আহ্লাদ করিতেন, মনুষ্য-সন্তানগণে ঈশ্বরের পুত্রের আনন্দ হইত।’—হিতো. ৮:২২-৩১.

৭. কী দেখায় যে, পরীক্ষার সময়ে তাঁর পিতার সমর্থনের প্রতি দাসের আস্থা ছিল?

দাস যে-প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন ও মানবজাতির জন্য তাঁর যে-আনন্দ, তা সেই সময়ে কাজে এসেছিল, যখন তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং চরম বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি ক্রমাগত তাঁর পিতার অভীষ্ট বা ইচ্ছা পালন করে প্রীত ছিলেন আর তা এমনকী প্রচণ্ড তাড়নার মুখেও। (গীত. ৪০:৮; মথি ২৬:৪২; যোহন ৬:৩৮) পৃথিবীতে তাঁর পরীক্ষার সময়কালজুড়ে তাঁর পিতার অনুমোদন ও সমর্থনের ব্যাপারে যিশুর আস্থা ছিল। যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে যেমন বলা হয়েছে, সেই অনুযায়ী যিশু বলতে পেরেছিলেন: “যিনি আমাকে ধার্ম্মিক করেন, তিনি নিকটবর্ত্তী; কে আমার সহিত বিবাদ করিবে? . . . দেখ, প্রভু সদাপ্রভু [“সার্বভৌম প্রভু যিহোবা,” NW] আমার সাহায্য করিবেন।” (যিশা. ৫০:৮, ৯) পৃথিবীতে দাসের পরিচর্যার সময়কালজুড়ে যিহোবা সত্যিই তাঁর বিশ্বস্ত দাসকে সাহায্য করেছিলেন, যে-বিষয়টা যিশাইয়ের আরেকটা ভবিষ্যদ্‌বাণী তুলে ধরে।

পৃথিবীতে দাসের পরিচর্যা

৮. কী প্রমাণ দেয় যে, যিশাইয় ৪২:১ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী যিশু যিহোবার “মনোনীত” ব্যক্তি ছিলেন?

সাধারণ কাল ২৯ সালে যিশু যখন বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন, তখন কী ঘটেছিল, সেই সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ আমাদের বলে: “পবিত্র আত্মা . . . তাঁহার উপরে নামিয়া আসিলেন, আর স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘তুমি আমার প্রিয় পুত্ত্র, তোমাতেই আমি প্রীত’” বা তোমার প্রতি আমার অনুমোদন রয়েছে। (লূক ৩:২১, ২২) এভাবে, যিহোবা স্পষ্টরূপে তাঁর “মনোনীত” ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছিলেন, যে-সম্বন্ধে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। (পড়ুন, যিশাইয় ৪২:১-৭.) যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে এই ভবিষ্যদ্‌বাণী উল্লেখযোগ্য উপায়ে পরিপূর্ণ করেছিলেন। মথি তার সুসমাচারের বিবরণে যিশাইয় ৪২:১-৪ পদে প্রাপ্ত কথাগুলো উদ্ধৃত করেছিলেন এবং সেগুলো যিশুর প্রতি প্রয়োগ করেছিলেন।—মথি ১২:১৫-২১.

৯, ১০. (ক) কীভাবে যিশু তাঁর পরিচর্যার সময়ে যিশাইয় ৪২:৩ পদ পরিপূর্ণ করেছিলেন? (খ) কীভাবে খ্রিস্ট পৃথিবীতে থাকাকালীন “ন্যায়বিচার প্রচলিত” করেছিলেন এবং কখন তিনি “পৃথিবীতে ন্যায়বিচার স্থাপন” করেন?

যিহুদিদের মধ্যে যে-সাধারণ লোকেরা ছিল, তাদেরকে যিহুদি ধর্মীয় নেতারা অবজ্ঞা করত। (যোহন ৭:৪৭-৪৯) সেই লোকেদের সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার করা হতো আর তাদেরকে ‘থেৎলা নলের’ সঙ্গে অথবা “সধূম শলিতা,” যা প্রায় নিভু নিভু অবস্থায় থাকে, সেটার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কিন্তু, দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত লোকেদের প্রতি যিশু সমবেদনা দেখিয়েছিলেন। (মথি ৯:৩৫, ৩৬) এই ধরনের ব্যক্তিদের তিনি এই বলে এক সদয় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব।” (মথি ১১:২৮) অধিকন্তু, সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে যিহোবার মানগুলো শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে যিশু ‘ন্যায়বিচার প্রচলিত করিয়াছিলেন।’ (যিশা. ৪২:৩) তিনি আরও দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের ব্যবস্থা যুক্তিবাদিতা ও করুণা সহকারে প্রয়োগ করতে হবে। (মথি ২৩:২৩) এ ছাড়া, ভেদাভেদ না করে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের কাছে প্রচার করার মাধ্যমে যিশু ন্যায়বিচার প্রদর্শন করেছিলেন।—মথি ১১:৫; লূক ১৮:১৮-২৩.

১০ অধিকন্তু, যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী এও বলেছিল যে, যিহোবার “মনোনীত” ব্যক্তি “পৃথিবীতে ন্যায়বিচার স্থাপন করেন।” (যিশা. ৪২:৪) খুব শীঘ্র তিনি তা করবেন, যখন মশীহ রাজ্যের রাজা হিসেবে তিনি সমস্ত রাজনৈতিক রাজ্য ধ্বংস করে দিয়ে সেগুলোর পরিবর্তে তাঁর নিজের ধার্মিক শাসন স্থাপন করবেন। তিনি এক নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন, যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।”—২ পিতর ৩:১৩; দানি. ২:৪৪.

‘দীপ্তি’ ও ‘নিয়ম’

১১. কোন অর্থে যিশু প্রথম শতাব্দীতে ‘জাতিগণের দীপ্তি’ ছিলেন এবং কীভাবে তিনি বর্তমান দিন পর্যন্তও তা-ই আছেন?

১১ যিশাইয় ৪২:৬ পদের পরিপূর্ণতা স্বরূপ, যিশু প্রকৃতই ‘জাতিগণের দীপ্তি’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে, তিনি মূলত যিহুদিদের জন্য আধ্যাত্মিক আলো নিয়ে এসেছিলেন। (মথি ১৫:২৪; প্রেরিত ৩:২৬) কিন্তু যিশু বলেছিলেন: “আমি জগতের জ্যোতি” বা দীপ্তি। (যোহন ৮:১২) তিনি যিহুদি ও পরজাতি উভয়ের জন্য দীপ্তি হয়েছিলেন আর তা কেবল আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোক নিয়ে আসার মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সমস্ত মানবজাতির জন্য তাঁর সিদ্ধ মানবজীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে উৎসর্গ করার মাধ্যমে। (মথি ২০:২৮) পুনরুত্থানের পর তিনি তাঁর শিষ্যদের “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” তাঁর সাক্ষি হওয়ার কার্যভার দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১:৮) পৌল ও বার্ণবা তাদের পরিচর্যার সময়ে ‘জাতিগণের দীপ্তি’ অভিব্যক্তিটি উদ্ধৃত করেছিল এবং সেটা সেই প্রচার কাজের প্রতি প্রয়োগ করেছিল, যা তারা ন-যিহুদিদের মধ্যে সম্পাদন করেছিল। (প্রেরিত ১৩:৪৬-৪৮; তুলনা করুন, যিশাইয় ৪৯:৬.) সেই কাজ এখনও চলছে কারণ পৃথিবীতে যিশুর অভিষিক্ত ভাইয়েরা ও তাদের সহযোগীরা আধ্যাত্মিক আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং লোকেদেরকে ‘জাতিগণের দীপ্তি’ যিশুর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে সাহায্য করছে।

১২. কীভাবে যিহোবা তাঁর দাসকে “প্রজাগণের নিয়মস্বরূপ . . . করিয়া” নিযুক্ত করেছেন?

১২ সেই একই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে যিহোবা তাঁর মনোনীত দাসকে বলেছিলেন: “আমি . . . তোমাকে রক্ষা করিব; এবং তোমাকে প্রজাগণের নিয়মস্বরূপ . . . করিয়া নিযুক্ত করিব।” (যিশা. ৪২:৬) যিশুকে ধ্বংস করে দেওয়ার ও পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্যা সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে তাঁকে বাধা দেওয়ার জন্য শয়তান অনবরত প্রচেষ্টা করেছিল কিন্তু যিহোবা যিশুকে তাঁর মৃত্যুবরণ করার নিরূপিত সময় না আসা পর্যন্ত রক্ষা করেছিলেন। (মথি ২:১৩; যোহন ৭:৩০) এরপর যিহোবা যিশুকে পুনরুত্থিত করেছিলেন এবং তাঁকে পৃথিবীর লোকেদের ‘নিয়ম’ বা চুক্তি অথবা প্রতিশ্রুতি হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। সেই গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞা এই নিশ্চয়তা জুগিয়েছিল যে, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাস ক্রমাগত ‘জাতিগণের দীপ্তি’ হবে অর্থাৎ আধ্যাত্মিক অন্ধকারে রয়েছে এমন ব্যক্তিদের স্বাধীন করবে।—পড়ুন, যিশাইয় ৪৯:৮, ৯. *

১৩. কোন উপায়ে যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে “অন্ধকারবাসিগণকে” উদ্ধার করেছিলেন আর কীভাবে তিনি তা করে চলেন?

১৩ এই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে মিল রেখে যিহোবার মনোনীত দাস “অন্ধদিগকে চক্ষু দিবে,” “কারাকূপ হইতে বন্দিদিগকে . . . বাহির করিয়া আনিবে” এবং “অন্ধকারবাসিগণকে” উদ্ধার করবে। (যিশা. ৪২:৭) যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে মিথ্যা ধর্মীয় পরম্পরাগত বিধি প্রকাশ করে দিয়ে এবং রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে তা করেছিলেন। (মথি ১৫:৩; লূক ৮:১) এভাবে তিনি সেই যিহুদিদের আধ্যাত্মিক বন্দিত্ব থেকে উদ্ধার করেছিলেন, যারা তাঁর শিষ্য হয়েছিল। (যোহন ৮:৩১, ৩২) একই উপায়ে যিশু লক্ষ লক্ষ ন-যিহুদি ব্যক্তির জন্য আধ্যাত্মিক উদ্ধার নিয়ে এসেছিলেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের ‘গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ কার্যভার দিয়েছেন এবং এই প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, “যুগান্ত পর্য্যন্ত” তিনি তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) তাঁর স্বর্গীয় অবস্থান থেকে খ্রিস্ট যিশু বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজের দেখাশোনা করছেন।

যিহোবা ‘দাসকে’ উন্নত করেছিলেন

১৪, ১৫. কেন এবং কীভাবে যিহোবা তাঁর দাসকে উন্নত করেছিলেন?

১৪ যিহোবা তাঁর মশীহ দাস সম্বন্ধীয় আরেকটা ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলেন: “দেখ, আমার দাস কৃতকার্য্য হইবেন; তিনি উচ্চ ও উন্নত ও মহামহিম হইবেন।” (যিশা. ৫২:১৩) যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি তাঁর পুত্রের অনুগত বশ্যতা এবং চরম পরীক্ষার মধ্যে তাঁর বিশ্বস্ততার জন্য যিহোবা তাঁকে উন্নত করেছিলেন।

১৫ প্রেরিত পিতর যিশু সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “তিনি স্বর্গে গমন করিয়া ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন; দূতগণ ও কর্ত্তৃত্ব সকল ও পরাক্রমসমূহ তাঁহার বশীকৃত হইয়াছে।” (১ পিতর ৩:২২) একইভাবে, প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “[তিনি] আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন। এই কারণ ঈশ্বর তাঁহাকে অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন, এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; যেন যীশুর নামে স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালনিবাসীদের ‘সমুদয় জানু পাতিত হয়, এবং সমুদয় জিহ্বা যেন স্বীকার করে’ যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু এইরূপে পিতা ঈশ্বর যেন মহিমান্বিত হন।”—ফিলি. ২:৮-১১.

১৬. কীভাবে ১৯১৪ সালে যিশুকে “মহামহিম” বা অতিশয় উচ্চীকৃত করা হয়েছিল আর তখন থেকে তিনি কী সম্পাদন করেছেন?

১৬ উনিশ-শো চোদ্দো সালে, যিহোবা যিশুকে এমনকী আরও উন্নত করেন। তাঁকে “মহামহিম” বা অতিশয় উচ্চীকৃত করা হয়েছিল, যখন যিহোবা তাঁকে মশীহ রাজ্যের রাজা হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। (গীত. ২:৬; দানি. ৭:১৩, ১৪) সেই সময় থেকে খ্রিস্ট “আপন শত্রুদের মধ্যে কর্ত্তৃত্ব” করছেন। (গীত. ১১০:২) তিনি প্রথমে শয়তান ও তার মন্দদূতদের পরাভূত করেন, তাদেরকে পৃথিবীর সীমার মধ্যে নিক্ষেপ করেন। (প্রকা. ১২:৭-১২) এরপর মহান কোরস হিসেবে তাঁর ভূমিকায় খ্রিস্ট পৃথিবীতে তাঁর অভিষিক্ত ভাইদের অবশিষ্টাংশকে ‘মহতী বাবিলের’ বন্দিত্ব থেকে উদ্ধার করেন। (প্রকা. ১৮:২; যিশা. ৪৪:২৮) তিনি পৃথিবীব্যাপী প্রচার কাজে নির্দেশনা দেন, যার ফলে তাঁর আধ্যাত্মিক ভাইদের “অবশিষ্ট লোকদের” এবং এরপর ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ অনুগত সঙ্গী লক্ষ লক্ষ ‘আরও মেষকে’ একত্রীকৃত করা হয়।—প্রকা. ১২:১৭; যোহন ১০:১৬; লূক ১২:৩২.

১৭. ‘দাস’ সম্বন্ধীয় যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা এই পর্যন্ত কী শিখেছি?

১৭ যিশাইয় বইয়ের এই উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো অধ্যয়ন করা নিশ্চিতভাবে আমাদের রাজা ও মুক্তিদাতা খ্রিস্ট যিশুর প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে বৃদ্ধি করেছে। পার্থিব পরিচর্যার সময়ে পুত্র হিসেবে তাঁর বশ্যতা সেই প্রশিক্ষণকে প্রতিফলিত করে, যা তিনি পৃথিবীতে আসার আগে তাঁর পিতার পাশে থেকে লাভ করেছিলেন। নিজের পরিচর্যা ও প্রচার কাজ, যা তিনি এখন পর্যন্ত দেখাশোনা করছেন, তার মাধ্যমে তিনি নিজেকে ‘জাতিগণের দীপ্তি’ হিসেবে প্রমাণিত করেছেন। এরপর আমরা যেমন দেখব, মশীহ দাস সম্বন্ধীয় আরেকটা ভবিষ্যদ্‌বাণী প্রকাশ করে যে, তিনি কষ্টভোগ করবেন এবং আমাদের উপকারের জন্য নিজের জীবন দান করবেন, যে-বিষয়গুলো তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থ দিবস ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ‘ভাল করে বিবেচনা করা’ উচিত।—ইব্রীয় ১২:২, ৩.

[পাদটীকাগুলো]

^ আপনি এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো যিশাইয় ৪২:১-৭; ৪৯:১-১২; ৫০:৪-৯ এবং ৫২:১৩–৫৩:১২ পদে পেতে পারেন।

^ যিশাইয় ৪৯:১-১২ পদে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্‌বাণী আলোচনার জন্য যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী—সমস্ত মানুষের জন্য জ্যোতি ২য় খণ্ড (ইংরেজি) বইয়ের ১৩৬-১৪৫ পৃষ্ঠা দেখুন।

পুনরালোচনা

• যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোতে উল্লেখিত ‘দাস’ কে আর কীভাবে আমরা তা জানি?

• যিহোবার কাছ থেকে দাস কোন প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন?

• কীভাবে যিশু ‘জাতিগণের দীপ্তি’?

• কীভাবে দাসকে উন্নত করা হয়েছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশাইয়ের দ্বারা উল্লেখিত ‘দাসকে’ ফিলিপ স্পষ্টভাবে মশীহ যিশু হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার মনোনীত দাস হিসেবে যিশু দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত লোকেদের প্রতি সমবেদনা দেখিয়েছিলেন

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু তাঁর পিতার দ্বারা উচ্চীকৃত হয়েছিলেন এবং মশীহ রাজ্যের রাজা হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন