সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

শিষ্য তৈরির কাজে আনন্দ লাভ করুন

শিষ্য তৈরির কাজে আনন্দ লাভ করুন

শিষ্য তৈরির কাজে আনন্দ লাভ করুন

“অতএব তোমরা গিয়া . . . শিষ্য কর।”—মথি ২৮:১৯.

১-৩. (ক) বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার সুযোগ সম্বন্ধে অনেকে কেমন বোধ করে? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

 “আমি পাকিস্তান থেকে আসা একটা পরিবারের সঙ্গে গত ১১ সপ্তাহ ধরে বাইবেল অধ্যয়ন করছি,” একজন বোন লিখেছিলেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে একটা হিন্দিভাষী দলে সেবা করছেন। “স্বাভাবিকভাবেই,” তিনি বলে চলেন, “আমরা বন্ধু হয়ে উঠেছি। যখনই আমি চিন্তা করি যে, এই পরিবারটি শীঘ্র পাকিস্তানে ফিরে যাবে, তখনই আমার চোখে জল চলে আসে। তাদের সাহচর্য হারাব বলে দুঃখিত হওয়ার কারণেই শুধু আমার চোখে জল আসে না, কিন্তু আমি তাদেরকে যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার সময় যে-আনন্দ পেয়েছি, সেই কারণেও।”

এই বোনের মতো, আপনিও কি সেই একই আনন্দ লাভ করেছেন, যা কারো সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার দ্বারা পাওয়া যায়? যিশু ও তাঁর প্রথম শতাব্দীর শিষ্যরা শিষ্য তৈরির কাজে অনেক আনন্দ লাভ করেছিল। যিশু যে-৭০ জন শিষ্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, তারা যখন আনন্দপূর্ণ খবর নিয়ে ফিরে এসেছিল, তখন যিশু নিজে “পবিত্র আত্মায় উল্লাসিত” হয়েছিলেন। (লূক ১০:১৭-২১) একইভাবে, আজকে অনেকে শিষ্য তৈরির কাজে প্রচুর আনন্দ লাভ করে। বস্তুতপক্ষে, ২০০৭ সালে কঠোর পরিশ্রমী, আনন্দিত প্রকাশকরা প্রতি মাসে গড়ে ৬৫ লক্ষ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেছে!

কিন্তু, কিছু প্রকাশক এখনও একটা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার আনন্দ লাভ করেনি। অন্যেরা হয়তো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোনো অধ্যয়ন পরিচালনা করেনি। একটা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার প্রচেষ্টা করার সময়, আমরা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে পারি? কীভাবে আমরা সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারি? আর আমরা কোন পুরস্কারগুলো লাভ করি, যখন আমরা যিশুর এই আদেশের বাধ্য হওয়ার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করি: “অতএব তোমরা গিয়া . . . শিষ্য কর”?—মথি ২৮:১৯.

যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো আমাদের আনন্দকে কেড়ে নিতে পারে

৪, ৫. (ক) বিশ্বের কিছু কিছু জায়গার লোকেরা কীভাবে সাড়া দিয়ে থাকে? (খ) অন্যান্য কিছু জায়গায় প্রকাশকরা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়?

বিশ্বের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় লোকেরা অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে আমাদের সাহিত্য গ্রহণ করে এবং আমাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে খুবই আগ্রহী। অস্ট্রেলিয়ার এক দম্পতি, যারা জাম্বিয়ায় সাময়িকভাবে সেবা করছিল, তারা লিখেছিল: “এই কথা সত্য। জাম্বিয়া হচ্ছে প্রচার করার এক পরমদেশ। এখানে রাস্তায় সাক্ষ্যদানের কাজ চমৎকার! লোকেরা আমাদের কাছে এগিয়ে আসে, কেউ কেউ এমনকী পত্রিকার নির্দিষ্ট সংখ্যাগুলো চায়।” সাম্প্রতিক এক বছরে, জাম্বিয়াতে ভাইবোনেরা ২,০০,০০০-রও বেশি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেছে—অর্থাৎ গড়ে প্রত্যেক প্রকাশকের একটারও বেশি বাইবেল অধ্যয়ন রয়েছে।

কিন্তু, অন্যান্য জায়গায় প্রকাশকরা হয়তো সাহিত্য অর্পণ এবং নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করাকে কঠিন বলে মনে করতে পারে। কেন? কারণ কোনো প্রকাশক যখন লোকেদের দরজায় কড়া নাড়েন, তখন তারা প্রায়ই ঘরে থাকে না, আবার যাদেরকে ঘরে পাওয়া যায়, তারা হয়তো ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন। তারা হয়তো এমন পরিবারে মানুষ হয়ে উঠেছে, যেখানে ধর্মকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না বা তারা মিথ্যা ধর্মে বিদ্যমান ভণ্ডামি দেখে ধর্মের প্রতি বিরূপ হতে পারে। অনেকে মিথ্যা পালকদের কারণে আধ্যাত্মিকভাবে বিপর্যস্ত, ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। (মথি ৯:৩৬) তাই এটা খুবই স্বাভাবিক যে, এই লোকেরা বাইবেল আলোচনায় জড়িত হওয়ার ব্যাপারে দ্বিধান্বিত হতে পারে।

৬. কিছু প্রকাশকের হয়তো কোন সীমাবদ্ধতাগুলো রয়েছে?

কিছু বিশ্বস্ত প্রকাশক ভিন্ন ধরনের এক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়ে থাকে, যা তাদের আনন্দকে কেড়ে নিতে পারে। যদিও একসময় তারা শিষ্য তৈরির কাজে বেশ সক্রিয় ছিল, কিন্তু এখন তারা অসুস্থতা বা বার্ধক্যের সীমাবদ্ধতাগুলোর কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ ছাড়া, আমরা নিজেরাই নিজেদের ওপর যে-সীমাবদ্ধতাগুলো চাপিয়ে দিই, সেগুলোও বিবেচনা করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে নিজেকে অযোগ্য মনে করেন? আপনি হয়তো মোশির মতো অনুভব করেন, যেমনটা যিহোবা তাকে ফরৌণের সঙ্গে কথা বলার জন্য নিযুক্ত করার সময় তিনি অনুভব করেছিলেন। মোশি বলেছিলেন: “হায় প্রভু! আমি বাক্‌পটু নহি, ইহার পূর্ব্বেও ছিলাম না, . . . পরেও নহি।” (যাত্রা. ৪:১০) অযোগ্যতার অনুভূতির সঙ্গে ব্যর্থতার ভয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা হয়তো এই ভেবে দুশ্চিন্তা করতে পারি যে, আমরা দক্ষ শিক্ষক নই, তাই একজন ব্যক্তি শিষ্য হয়ে উঠবে না। সেইরকম অভিজ্ঞতা এড়ানোর জন্য আমরা হয়তো কোনো অধ্যয়ন পরিচালনা করার সুযোগকেই উপেক্ষা করতে পারি। কীভাবে আমরা সবেমাত্র উল্লেখিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি?

আপনার হৃদয়কে প্রস্তুত করুন

৭. কী যিশুকে তাঁর পরিচর্যায় প্রেরণা দিয়েছিল?

প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে, আমাদের নিজেদের হৃদয়কে প্রস্তুত করা। যিশু বলেছিলেন: “হৃদয়ের উপচয় হইতে . . . মুখ কথা কহে।” (লূক ৬:৪৫) অন্যদের মঙ্গলের ব্যাপারে আন্তরিক চিন্তা যিশুকে তাঁর পরিচর্যায় প্রেরণা দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, তিনি যখন সহযিহুদিদের দুর্বল আধ্যাত্মিক অবস্থা লক্ষ করেছিলেন, তখন “তিনি তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন।” তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “শস্য প্রচুর . . . শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।”—মথি ৯:৩৬-৩৮.

৮. (ক) আমাদের কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করা উচিত? (খ) একজন বাইবেল ছাত্রীর মন্তব্য থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

আমরা যখন শিষ্য তৈরির কাজে রত হই, তখন আমাদের এই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত যে, কেউ একজন আমাদেরকে বাইবেল অধ্যয়ন করানোর জন্য সময় করে নিয়েছিলেন বলে আমরা কতখানি উপকৃত হয়েছি। এ ছাড়া, সেই লোকেদের বিষয়েও চিন্তা করুন, যাদের সঙ্গে পরিচর্যায় আমাদের দেখা হবে এবং আমরা যে-বার্তা বহন করি, সেটা শোনার দ্বারা তারা কীভাবে উপকৃত হবে। একজন মহিলা তার দেশের শাখা অফিসের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “যারা আমার বাড়িতে এসে আমাকে শিক্ষা দিয়ে থাকে, সেই সাক্ষিদের প্রতি আমি কতখানি কৃতজ্ঞ, তা আপনাদের জানাতে চাই। আমি জানি যে, মাঝে মাঝে তারা নিশ্চয়ই আমার ওপর বিরক্ত হয়ে যায় কারণ আমার অনেক প্রশ্ন থাকে এবং আমি সবসময়ই তাদেরকে দেরি করিয়ে দিই। কিন্তু, তারা সবসময় আমার ব্যাপারে ধৈর্য ধরে এবং তারা যা শিখেছে, তা আমাকে জানাতে উৎসুক। আমার জীবনে এই লোকেরা এসেছে বলে আমি যিহোবা ও যিশুকে ধন্যবাদ দিই।”

৯. যিশু কোন বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন আর কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?

অবশ্য, তাদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে যিশুর প্রচেষ্টায় প্রত্যেকেই সাড়া দেয়নি। (মথি ২৩:৩৭) কেউ কেউ কিছু সময়ের জন্য তাঁকে অনুসরণ করেছিল আর এরপর তাঁর শিক্ষার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল ও “তাঁহার সঙ্গে আর যাতায়াত করিল না।” (যোহন ৬:৬৬) কিন্তু, যিশু কিছু ব্যক্তির প্রতিকূল সাড়ার কারণে এইরকম মনে করেননি যে, তাঁর বার্তা গুরুত্বহীন। যদিও তিনি যে-বীজ বপন করেছিলেন, সেগুলোর বেশিরভাগই কোনো ফল উৎপন্ন করেনি কিন্তু যিশু যে-ভালো বিষয় করছিলেন, সেটার ওপর তিনি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে, ক্ষেত্রের শস্য কাটার মতো শ্বেতবর্ণ হয়েছিল এবং তিনি সেই শস্য কাটায় সাহায্য করে প্রচুর আনন্দ লাভ করেছিলেন। (পড়ুন, যোহন ৪:৩৫, ৩৬.) তাই, শুধুমাত্র ফলহীন এলাকাকেই না দেখে, আমরাও কি একইভাবে শস্যছেদনের কাজে অংশগ্রহণ করার ওপর আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে এবং ফলের আশা করতে পারি? আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, কীভাবে আমরা এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে পারি।

শস্য কাটার লক্ষ্য নিয়ে বপন করুন

১০, ১১. আপনার আনন্দ বজায় রাখার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

১০ একজন কৃষক শস্য কাটার লক্ষ্য নিয়েই বীজ বপন করে থাকেন। অনুরূপভাবে, আমাদেরও বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে প্রচার করতে হবে। কিন্তু, আপনি যদি ক্ষেত্রের পরিচর্যায় নিয়মিত সময় ব্যয় করেন আর অল্পকিছু লোককে ঘরে পান বা পুনর্সাক্ষাতে গিয়ে তাদের না পান, তাহলে কী? এটা হতাশাজনক হতে পারে। তাই বলে আপনার কি ঘরে ঘরে পরিচর্যার ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত? নিশ্চয়ই না! এখনও এই পদ্ধতিতে প্রচার করার মাধ্যমেই অনেক লোকের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করা হয়।

১১ কিন্তু, আপনার আনন্দ বজায় রাখার জন্য আপনি কি প্রচারের অন্যান্য পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, হয়তো লোকেদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আরও কয়েকটা উপায়কে কাজে লাগাতে পারেন? উদাহরণস্বরূপ, আপনি কি রাস্তায় বা কর্মস্থলে লোকেদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন? আপনি কি টেলিফোনের মাধ্যমে লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা যোগাযোগ রাখার জন্য সেই লোকেদের ফোন নম্বর জোগাড় করতে পারেন, যাদেরকে আপনি ইতিমধ্যেই রাজ্যের বার্তা জানিয়েছেন? আপনার পরিচর্যায় অধ্যবসায়ী হওয়ার ও খাপ খাইয়ে নেওয়ার মাধ্যমে আপনি সেই ব্যক্তি বিশেষদের খুঁজে পাওয়ার আনন্দ লাভ করতে পারবেন, যারা রাজ্যের বার্তার প্রতি অনুকূলভাবে সাড়া দেবে।

উদাসীনতার সঙ্গে মোকাবিলা করা

১২. আমাদের এলাকার অনেককে যদি উদাসীন বলে মনে হয়, তাহলে আমরা হয়তো কী করতে পারি?

১২ কী হবে যদি আপনার এলাকার অনেকে ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে থাকে? তাদের আগ্রহের বিষয়গুলোতে আবেদন তৈরি করার জন্য আপনি কি আপনার উপস্থাপনাকে খাপ খাওয়াতে পারেন? প্রেরিত পৌল করিন্থের সহবিশ্বাসীদের লিখেছিলেন: ‘আমি যিহূদীদের কাছে যিহূদীর ন্যায় হইলাম; আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থাবিহীন নই, তথাপি ব্যবস্থাবিহীনদের কাছে ব্যবস্থাবিহীনের ন্যায় হইলাম।’ পৌলের উদ্দেশ্য কী ছিল? তিনি বলেছিলেন, “কতকগুলি লোককে পরিত্রাণ করিবার জন্য আমি সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ হইলাম।” (১ করি. ৯:২০-২২) আমরাও কি একইভাবে আমাদের এলাকার লোকেদের সঙ্গে মতৈক্য স্থাপন করতে পারি? ধর্মকে তেমন গুরুত্ব দেয় না এমন অনেক লোক তাদের পারিবারিক সম্পর্কের মানকে উন্নত করতে চায়। তারাও হয়তো জীবনে একটা উদ্দেশ্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমরা কি এমন এক উপায়ে সেই লোকেদের কাছে রাজ্যের বার্তা তুলে ধরতে পারি, যা তাদের কাছে আবেদন তৈরি করবে?

১৩, ১৪. শিষ্য তৈরির কাজে আমরা যে-আনন্দ লাভ করি, সেটাকে আমরা হয়তো কীভাবে বৃদ্ধি করতে সমর্থ হতে পারি?

১৩ ক্রমবর্ধিষ্ণু সংখ্যক প্রকাশকরা সেই আনন্দকে বৃদ্ধি করেছে, যা শিষ্য তৈরির কাজ থেকে তারা লাভ করে আর এমনকী তা সেই এলাকাগুলোতেও, যেখানে অধিকাংশ লোককে উদাসীন বলে মনে হতে পারে। কীভাবে? একটা বিদেশি ভাষা শেখার মাধ্যমে। ৬০-এর কোঠায় বয়স এমন এক দম্পতি লক্ষ করে যে, তাদের মণ্ডলীর নির্ধারিত এলাকায় হাজার হাজার চাইনিজ ছাত্রছাত্রী ও তাদের পরিবার বাস করে। “এই কারণে আমাদেরকে চাইনিজ ভাষা শেখার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল,” স্বামী বলেন। “যদিও এর মানে ছিল যে, প্রতিদিন আমাদেরকে এই ভাষার পিছনে যথেষ্ট সময় দিতে হতো,” তিনি বলে চলেন, “কিন্তু এর ফলে, আমাদের এলাকার চাইনিজ লোকেদের সঙ্গে অনেক বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল।”

১৪ এমনকী আপনি যদি একটা বিদেশি ভাষা শিখতে সমর্থ না-ও হন, তবুও আপনি সমস্ত জাতির লোকেদের জন্য সুসমাচার (ইংরেজি) পুস্তিকাটির সদ্‌ব্যবহার করতে পারেন, যখন আপনার সেই লোকেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, যারা আপনার চেয়ে ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। এ ছাড়া, আপনি সাধারণত সেই লোকেদের ভাষায় সাহিত্যও সংগ্রহ করতে পারেন, যাদের সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ হয়। এটা ঠিক যে, আরেকটা ভাষা ও সংস্কৃতির লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বাড়তি সময় ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত এই নীতিটিকে উপেক্ষা করবেন না: “যে বেশী বীজ বোনে সে বেশী ফসল কাটবে।”—২ করি. ৯:৬, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।

সমগ্র মণ্ডলী জড়িত

১৫, ১৬. (ক) শিষ্য তৈরি করার কাজ কেন মণ্ডলীগত এক প্রচেষ্টা? (খ) বয়স্ক ব্যক্তিরা কোন ভূমিকা পালন করে?

১৫ কিন্তু, শিষ্য তৈরি করার কাজ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করে না। এর পরিবর্তে, এটা মণ্ডলীগত এক প্রচেষ্টা। কেন? যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) আর বাস্তবিকই, যখন বাইবেল ছাত্ররা সভাগুলোতে যোগ দেয়, তখন আমাদের সমাবেশের প্রেমপূর্ণ পরিবেশ প্রায়ই তাদের ওপর ছাপ ফেলে থাকে। একজন বাইবেল ছাত্রী লিখেছিলেন: “সভাগুলোতে যেতে আমার খুবই ভালো লাগে। সেখানে লোকেরা সবসময় উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়!” যিশু বলেছিলেন যে, যারা তাঁর অনুসারী হবে, তারা হয়তো তাদের মাংসিক পরিবারের কাছ থেকে বিরোধিতার শিকার হতে পারে। (পড়ুন, মথি ১০:৩৫-৩৭.) কিন্তু, তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, মণ্ডলীতে সেই ব্যক্তিরা অসংখ্য আধ্যাত্মিক “ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা, সন্তান” পাবে।—মার্ক ১০:৩০.

১৬ আমাদের বয়স্ক ভাইবোনেরা বাইবেল ছাত্রছাত্রীদের উন্নতি করায় সাহায্য করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কোন উপায়ে? এমনকী কিছু বয়স্ক ব্যক্তি যদিও নিজেরা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে সমর্থ নয় কিন্তু মণ্ডলীর সভাগুলোতে তাদের গঠনমূলক মন্তব্য, সেইসমস্ত ব্যক্তির বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে, যারা সেগুলো শোনে। “ধার্ম্মিকতার পথে” চলার বিষয়ে তাদের নথি মণ্ডলীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং সৎহৃদয়ের লোকেদেরকে ঈশ্বরের সংগঠনের দিকে আকৃষ্ট করে।—হিতো. ১৬:৩১.

আমাদের ভয় কাটিয়ে ওঠা

১৭. অযোগ্যতার অনুভূতিকে কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১৭ কী হবে, যদি আপনি অযোগ্যতার অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করে থাকেন? মনে রাখবেন যে, যিহোবা মোশিকে পবিত্র আত্মা দিয়ে ও তার ভাই হারোণকে সঙ্গী হিসেবে জুগিয়ে তাকে সাহায্য করেছিলেন। (যাত্রা. ৪:১০-১৭) যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ঈশ্বরের আত্মা সাক্ষ্যদানের কাজে আমাদেরকে সাহায্য প্রদান করবে। (প্রেরিত ১:৮) অধিকন্তু, যিশু কর্মীদেরকে দুজন দুজন করে প্রচারে পাঠিয়েছিলেন। (লূক ১০:১) তাই, আপনি যদি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করাকে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে মনে করেন, তাহলে ঈশ্বরের আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করুন, যেন তা আপনাকে প্রজ্ঞা দান করে ও এরপর আপনাকে প্রচার করার জন্য এমন একজন সঙ্গী জোগায়, যিনি আপনাকে আস্থা প্রদান করতে পারেন ও যার অভিজ্ঞতা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এটা স্মরণে রাখা বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে যে, এই অসাধারণ কাজকে সম্পাদন করার জন্য যিহোবা সামান্য লোকেদের—“জগতের দুর্ব্বল বিষয় সকল”—ব্যবহার করা বেছে নিয়েছিলেন।১ করি. ১:২৬-২৯.

১৮. কীভাবে আমরা ব্যর্থতার ভয়কে কাটিয়ে উঠতে পারি?

১৮ কীভাবে আমরা ব্যর্থতার ভয়কে কাটিয়ে উঠতে পারি? আমাদের মনে রাখা উচিত যে, একজনকে শিষ্য তৈরি করা কোনো খাবার তৈরি করার মতো নয়, যেটার সাফল্য বা ব্যর্থতা মূলত একজন ব্যক্তির—রাঁধুনির—ওপর নির্ভর করে। এর পরিবর্তে, শিষ্য তৈরি করার কাজের সঙ্গে অন্তত তিন পক্ষের সহযোগিতার প্রয়োজন। যিহোবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা সম্পাদন করেন অর্থাৎ ব্যক্তিকে তাঁর দিকে আকৃষ্ট করেন। (যোহন ৬:৪৪) আমরা ও মণ্ডলীর অন্যান্যরা ছাত্রকে উন্নতি করতে সাহায্য করার জন্য শিক্ষাদানের কৌশল ব্যবহার করতে আমাদের যথাসাধ্য করি। (পড়ুন, ২ তীমথিয় ২:১৫.) আর ছাত্র যা শেখেন, সেই অনুযায়ী তাকে কাজ করতে হয়। (মথি ৭:২৪-২৭) একজন ব্যক্তি যদি বাইবেল অধ্যয়ন করা বন্ধ করে দেন, তাহলে আমরা হয়তো দুঃখ পেয়ে থাকি। আমরা আশা করি যে, বাইবেল ছাত্ররা সঠিক বিষয় বাছাই করবে কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তিকে “ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে।”—রোমীয় ১৪:১২.

কোন পুরস্কারগুলো রয়েছে?

১৯-২১. (ক) বাইবেল অধ্যয়নগুলো পরিচালনা করা থেকে আমরা কোন উপকারগুলো লাভ করি? (খ) যিহোবা সেইসমস্ত ব্যক্তিকে কীভাবে দেখেন, যারা প্রচার কাজে রত হয়?

১৯ বাইবেল অধ্যয়নগুলো পরিচালনা করা, প্রথমে রাজ্যের বিষয় চেষ্টা করার ওপর আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখে। এ ছাড়া, এটা ঈশ্বরের বাক্যের সত্যগুলোকে আমাদের মন ও হৃদয়ের গভীরে গেঁথে দেয়। কেন? ব্যারাক নামে একজন অগ্রগামী ব্যাখ্যা করেন: “বাইবেল অধ্যয়নগুলো পরিচালনা করা আপনাকে ঈশ্বরের বাক্যের আরও ভালো ছাত্র হয়ে উঠতে বাধ্য করে। আমি দেখেছি যে, অন্য কাউকে কার্যকারীভাবে শিক্ষা দিতে হলে প্রথমে আমার নিজের দৃঢ়প্রত্যয়কে শক্তিশালী করতে হবে।”

২০ আপনি যদি কোনো বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা না করে থাকেন, তাহলে তার মানে কি এই যে, ঈশ্বরের কাছে আপনার সেবার কোনো মূল্য নেই? অবশ্যই, মূল্য আছে! যিহোবা তাঁকে প্রশংসা করার ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টাকে খুবই মূল্যবান বলে গণ্য করেন। যারা প্রচার কাজে রত হয়, তারা সবাই “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী।” কিন্তু, বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা আরও আনন্দ নিয়ে আসে, যখন আমরা দেখি যে আমরা যে-বীজ বপন করেছি, সেটাকে ঈশ্বর কীভাবে বৃদ্ধি করেন। (১ করি. ৩:৬, ৯) “আপনি যখন দেখেন যে, একজন বাইবেল ছাত্র উন্নতি করছেন,” এমি নামে একজন অগ্রগামী বলেন, “তখন আপনি যিহোবার প্রতি অগাধ কৃতজ্ঞতা বোধ করেন, কারণ তিনি আপনাকে সেই ব্যক্তিকে এক চমৎকার উপহার দেওয়ার—যিহোবাকে জানার ও অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ দেওয়ার—জন্য ব্যবহার করছেন।”

২১ বাইবেল অধ্যয়নগুলো শুরু ও পরিচালনা করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করা আমাদেরকে এখন ঈশ্বরের সেবা করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করবে এবং নতুন জগতে পরিত্রাণ পাওয়ার আশাকে শক্তিশালী করবে। যিহোবার সাহায্যে আমরাও হয়তো তাদেরকে পরিত্রাণ লাভ করতে সাহায্য করতে পারি, যারা আমাদের কথা শোনে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৪:১৬.) আনন্দ করার কী এক কারণই না তা হবে!

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো কাউকে কাউকে বাইবেল অধ্যয়নগুলো পরিচালনা করা থেকে বিরত করতে পারে?

• আমাদের এলাকার অনেককে যদি উদাসীন বলে মনে হয়, তাহলে আমরা হয়তো কী করতে পারি?

• বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার ফলে আমরা কোন পুরস্কারগুলো লাভ করি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সৎহৃদয়ের লোকেদের খুঁজে বের করার জন্য আপনি কি প্রচারের অন্যান্য পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করেন?