সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ব্যক্তিগত পছন্দগুলোর ব্যাপারে কি আপনার একগুঁয়ে হওয়া উচিত?

ব্যক্তিগত পছন্দগুলোর ব্যাপারে কি আপনার একগুঁয়ে হওয়া উচিত?

ব্যক্তিগত পছন্দগুলোর ব্যাপারে কি আপনার একগুঁয়ে হওয়া উচিত?

 দুটো বাচ্চা একসঙ্গে খেলা করছে। একটা বাচ্চা তার প্রিয় খেলনাটা, অন্য বাচ্চাটার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে, “এটা আমার!” একেবারে ছোটোবেলা থেকেই, অসিদ্ধ মানুষেরা কিছুটা স্বার্থপর মনোভাব দেখিয়ে থাকে। (আদি. ৮:২১; রোমীয় ৩:২৩) অধিকন্তু, সামগ্রিকভাবে জগৎ এক স্বার্থপর মনোভাবকে তুলে ধরে। আমরা যদি এই মনোভাবকে এড়িয়ে চলতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই স্বার্থপর প্রবণতাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর লড়াই করতে হবে। যদি আমরা তা না করি, তাহলে আমরা সহজেই অন্যদের বিঘ্ন জন্মাতে এবং যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দুর্বল করে দিতে পারি।—রোমীয় ৭:২১-২৩.

আমাদের কাজগুলো অন্যদের ওপর যে-প্রভাব ফেলে থাকে, তা বিবেচনা করার জন্য আমাদেরকে উৎসাহিত করে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “সকলই বিধেয়, কিন্তু সকলই যে হিতজনক, তাহা নয়; সকলই বিধেয়, কিন্তু সকলই যে গাঁথিয়া তুলে, তাহা নয়।” পৌল আরও বলেছিলেন: “কাহারও বিঘ্ন জন্মাইও না।” (১ করি. ১০:২৩, ৩২) তাই, ব্যক্তিগত পছন্দগুলোর সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলোর সম্বন্ধে নিজেদেরকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা বিজ্ঞতার কাজ: ‘যখন মণ্ডলীর শান্তি হুমকির সম্মুখীন হয়, তখন আমি কি নির্দিষ্ট কিছু অধিকার ত্যাগ করতে ইচ্ছুক থাকি? আমি কি বাইবেলের নীতিগুলোকে মেনে চলতে প্রস্তুত আছি, এমনকী তখনও যখন তা করা হয়তো কঠিন হতে পারে?’

চাকরি বাছাই করার ক্ষেত্রে

অধিকাংশ লোকই তাদের চাকরি বাছাই করার বিষয়টাকে এমন এক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখে থাকে, যেটা অন্যদের ওপর সামান্যই প্রভাব ফেলে থাকে কিংবা কোনো প্রভাব ফেলে না বললেই চলে। কিন্তু, দক্ষিণ আমেরিকার একটা ছোটো শহরের একজন ব্যবসায়ীর অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন। তিনি একজন জুয়াড়ি ও মাতাল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার ফলে, তিনি আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করেছিলেন ও তার জীবনধারাকে পরিবর্তন করেছিলেন। (২ করি. ৭:১) তিনি যখন মণ্ডলীর সঙ্গে জনসাধারণ্যে প্রচার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তখন একজন প্রাচীন কৌশলে তাকে তার চাকরির ধরন সম্বন্ধে ভেবে দেখতে উৎসাহিত করেছিলেন। কিছু সময় ধরে, সেই ব্যক্তি ওই শহরে আখের রস থেকে তৈরি খাঁটি মদের প্রধান জোগানদাতা ছিলেন— যে-পানীয়টার বিবিধ ব্যবহার রয়েছে, কিন্তু সেই অঞ্চলে ওই পানীয়টা সাধারণত কোমল পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে একমাত্র নেশা করার উদ্দেশ্যেই পান করা হয়।

সেই ব্যক্তিটি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি যদি জনসাধারণ্যে প্রচার করেন অথচ এইরকম একটা দ্রব্য বিক্রি করে চলেন, তাহলে তা মণ্ডলীর সুনাম নষ্ট করবে এবং যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদিও তাকে এক বড় পরিবারের ভরণপোষণ জোগাতে হয়েছিল, তবুও তিনি মদ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি এখন কাগজের তৈরি সামগ্রী বিক্রি করে তার পরিবারের ভরণপোষণ করেন। এই ব্যক্তি, তার স্ত্রী এবং তাদের পাঁচ ছেলে-মেয়েরর মধ্যে দুই মেয়ে এখন বাপ্তাইজিত। তারা নির্দ্বিধায় উদ্যোগের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করে থাকে।

বন্ধুবান্ধব বাছাই করার ক্ষেত্রে

যারা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, তাদের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশা করা কি নিছক ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় নাকি বাইবেলের নীতিগুলোও এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে? একজন বোন এমন এক যুবকের সঙ্গে একটা পার্টিতে যেতে চেয়েছিলেন, যে-যুবক ব্যক্তিটি একজন সত্য খ্রিস্টান ছিল না। বিপদগুলো সম্বন্ধে তাকে সতর্ক করা সত্ত্বেও, তিনি ভেবেছিলেন যে তা করার অধিকার তার রয়েছে আর তাই তিনি সেই পার্টিতে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরেই, তাকে বেশ কড়া ঘুমের ওষুধ মেশানো এক পানীয় খেতে দেওয়া হয়েছিল। বেশ কয়েক ঘন্টা পরে তিনি জেগে উঠে বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার তথাকথিত বন্ধু তাকে ধর্ষণ করেছে।—তুলনা করুন, আদিপুস্তক ৩৪:২.

অবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করার ফল সবসময় এইরকম দুঃখজনক না-ও হতে পারে কিন্তু বাইবেল সতর্ক করে: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতো. ১৩:২০) এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, খারাপ বন্ধুবান্ধব বাছাই করা আমাদেরকে বিপদের মুখে ফেলে! “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়,” হিতোপদেশ ২২:৩ পদ বলে, “কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়।” আমাদের বন্ধুবান্ধব আমাদেরকে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।—১ করি. ১৫:৩৩; যাকোব ৪:৪.

পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের ক্ষেত্রে

স্টাইল ও ফ্যাশন প্রতিনিয়তই পালটায়। কিন্তু, পোশাক-আশাক এবং সাজগোজ সম্বন্ধীয় বাইবেলের নীতিগুলো একই রয়েছে। পৌল খ্রিস্টান নারীদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, তারা যেন “সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা” করে—যে-নীতিটি পুরুষদের প্রতিও সমানভাবে প্রযোজ্য। (১ তীম. ২:৯) পৌল পোশাক-আশাক সম্বন্ধীয় স্টাইলের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাদাসিধে হতে বলছিলেন না অথবা তিনি এটাও বলছিলেন না যে, সমস্ত খ্রিস্টানের একইরকম রুচি থাকতে হবে। কিন্তু সলজ্জ বা শালীনতা সম্বন্ধে কী বলা যায়? একটি অভিধান শালীনতাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করে, “ঔদ্ধত্য ও দম্ভহীন হওয়া . . . পোশাক-আশাক, কথাবার্তা বা আচারব্যবহারের ক্ষেত্রে ভদ্র হওয়া।”

আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে: ‘আমি কি সততার সঙ্গে বলতে পারি যে, আমি শালীনতা দেখাচ্ছি, যদি আমি এমনভাবে পোশাক-আশাক পরার ব্যাপারে আমার অধিকারের প্রতি একগুঁয়ে হই, যা আমার প্রতি অযথা মনোযোগ আকর্ষণ করে? আমার পোশাক-আশাকের ধরন কি আমি কে বা আমি কীরকম নীতি অনুযায়ী জীবনযাপন করি, সেই বিষয়ে কোনো ভুল ইঙ্গিত দেয়?’ এই ক্ষেত্রে আমরা ‘প্রত্যেক জন [নিজেদের] বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখিবার’ দ্বারা ‘কোন বিষয়ে কোন ব্যাঘাত জন্মানো’ এড়াতে পারি।—২ করি. ৬:৩; ফিলি. ২:৪.

ব্যাবসা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে

করিন্থ মণ্ডলীতে যখন ভুল বা প্রতারণামূলক আচরণ সম্পর্কিত গুরুতর বিষয়গুলো উত্থাপিত হয়েছিল, তখন পৌল লিখেছিলেন: “বরং অন্যায় সহ্য কর না কেন? বরং বঞ্চিত হও না কেন?” পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তারা যেন একজন ভাইকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে, কিছু ত্যাগস্বীকার করতে ইচ্ছুক হয়। (১ করি. ৬:১-৭) যুক্তরাষ্ট্রের একজন ভাই এই পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। তার খ্রিস্টান নিয়োগকর্তার সঙ্গে তার প্রাপ্য বেতন নিয়ে মতপার্থক্য হয়েছিল। শাস্ত্রীয় নির্দেশাবলি মেনে এই দুই ভাই বেশ কয়েকবার এই উদ্দেশ্যে মিলিত হয়েছিল কিন্তু তারা সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারেনি। অবশেষে, তারা বিষয়টা ‘মণ্ডলীতে’ নিয়ে গিয়েছিল, যা খ্রিস্টান প্রাচীনদের দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয়ে থাকে।—মথি ১৮:১৫-১৭.

দুঃখের বিষয় যে, এরপরও বিষয়টা সমাধান করা যায়নি। অনেক প্রার্থনার পর, সেই কর্মচারী ভাইটি তার বেশিরভাগ অর্থই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা তার প্রাপ্য ছিল বলে তিনি মনে করেছিলেন। কেন? তিনি পরে বলেছিলেন, “এই মতপার্থক্য আমার আনন্দ কেড়ে নিয়েছিল এবং সেই মূল্যবান সময়কে নষ্ট করছিল, যা আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে ব্যবহার করা যেতে পারত।” সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, ভাইটি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার আনন্দ ফিরে এসেছে আর তিনি তার কাজে যিহোবার আশীর্বাদ অনুভব করেছিলেন।

এমনকী ছোটো ছোটো বিষয়ের ক্ষেত্রেও

আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দগুলোর বিষয়ে একগুঁয়ে না হওয়া ছোটো ছোটো বিষয়েও অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসে। এক জেলা সম্মেলনের প্রথম দিনে, এক অগ্রগামী দম্পতি আগে এসে পৌঁছেছিল এবং তারা ঠিক সেই জায়গাতে আসন সংরক্ষণ করেছিল, যেখানটায় তারা বসতে চেয়েছিল। যখন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তখন বেশ কয়েকটা ছেলে-মেয়ে নিয়ে এক বড় পরিবার তাড়াহুড়ো করে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছিল। সেই পরিবারটি যে পর্যাপ্ত আসনের খোঁজ করছে তা লক্ষ করে, অগ্রগামী দম্পতিটি তাদের দুটো আসন ছেড়ে দিয়েছিল। এর ফলে পুরো পরিবারের পক্ষে একসঙ্গে বসা সম্ভব হয়েছিল। সম্মেলনের কিছুদিন পরে, সেই অগ্রগামী দম্পতি ওই পরিবারের কাছ থেকে ধন্যবাদ-জ্ঞাপক একটা চিঠি পেয়েছিল। চিঠিটাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে, সম্মেলনে দেরি করে পৌঁছে তারা কত নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিল। অগ্রগামী দম্পতির সদয় আচরণের ফলে সেই অনুভূতি শীঘ্র আনন্দ এবং কৃতজ্ঞতায় পরিণত হয়েছিল।

যখন আমাদের সুযোগ থাকে, তখন আসুন আমরা স্বেচ্ছায় অন্যদের জন্য আমাদের পছন্দগুলো ত্যাগ করি। যে-প্রেম “স্বার্থ চেষ্টা করে না,” তা প্রদর্শন করার দ্বারা আমরা আমাদের মণ্ডলীর মধ্যে এবং আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করি। (১ করি. ১৩:৫) কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে রক্ষা করি।

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফ্যাশন বাছাই করার ক্ষেত্রে আপনি কি ব্যক্তিগত পছন্দগুলো ত্যাগ করতে ইচ্ছুক?

[২০, ২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি আপনার ভাইবোনদের জন্য আপনার আসন ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক?