সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশুর বাক্যগুলোর দ্বারা আপনার মনোভাবকে প্রভাবিত হতে দিন

যিশুর বাক্যগুলোর দ্বারা আপনার মনোভাবকে প্রভাবিত হতে দিন

যিশুর বাক্যগুলোর দ্বারা আপনার মনোভাবকে প্রভাবিত হতে দিন

“ঈশ্বর যাঁহাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বরের বাক্য বলেন।”—যোহন ৩:৩৪.

১, ২. পর্বতেদত্ত উপদেশে প্রাপ্ত যিশুর কথাগুলোকে হয়তো কীসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে আর কেন আমরা বলতে পারি যে, তা ‘ঈশ্বরের বাক্যের’ ওপর ভিত্তি করে?

 জানামতে, বর্তমানে সবচেয়ে বড় কাটা হিরের মধ্যে একটা হল ৫৩০ ক্যারেটের স্টার অভ্‌ আফ্রিকা। এটা সত্যিই এক মূল্যবান রত্ন! কিন্তু, যিশুর পর্বতেদত্ত উপদেশে প্রাপ্ত আধ্যাত্মিক রত্নগুলো আরও বেশি মূল্যবান। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ খ্রিস্টের বাক্যগুলোর উৎস হলেন যিহোবা! যিশুর সম্বন্ধে উল্লেখ করে বাইবেল বলে: “ঈশ্বর যাঁহাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বরের বাক্য বলেন।”—যোহন ৩:৩৪-৩৬.

যদিও পর্বতেদত্ত উপদেশ হয়তো আধঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে দেওয়া হয়েছিল, তবুও এর মধ্যে ইব্রীয় শাস্ত্রের আটটি বই থেকে ২১টি উদ্ধৃতি রয়েছে। তাই, এই উপদেশ সম্পূর্ণরূপে ‘ঈশ্বরের বাক্যের’ ওপর ভিত্তি করে। আসুন, এখন আমরা দেখি যে, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের প্রিয় পুত্রের এই প্রভাববিস্তারকারী উপদেশে প্রাপ্ত অমূল্য বাক্যগুলোর মধ্যে থেকে কয়েকটা কাজে লাগাতে পারি।

“প্রথমে তোমার ভ্রাতার সহিত সম্মিলিত হও”

৩. ক্রোধের প্রভাবগুলো সম্বন্ধে সাবধান করে দেওয়ার পর, যিশু কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?

খ্রিস্টান হিসেবে আমরা সুখী ও শান্তিপ্রবণ কারণ আমাদের ওপর ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা রয়েছে আর এর ফলের অন্তর্ভুক্ত আনন্দ ও শান্তি। (গালা. ৫:২২, ২৩) যিশু চাননি যেন তাঁর শিষ্যরা তাদের শান্তি ও সুখ হারিয়ে ফেলে, তাই তিনি তাদেরকে দীর্ঘস্থায়ী ক্রোধের মারাত্মক প্রভাবগুলো সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন। (পড়ুন, মথি ৫:২১, ২২.) এরপর তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “অতএব তুমি যখন যজ্ঞবেদির নিকটে আপন নৈবেদ্য উৎসর্গ করিতেছ, তখন সেই স্থানে যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভ্রাতার কোন কথা আছে, তবে সেই স্থানে বেদির সম্মুখে তোমার নৈবেদ্য রাখ, আর চলিয়া যাও, প্রথমে তোমার ভ্রাতার সহিত সম্মিলিত হও, পরে আসিয়া তোমার নৈবেদ্য উৎসর্গ করিও।”মথি ৫:২৩, ২৪.

৪, ৫. একজন অসন্তুষ্ট ভাইয়ের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

পশুবলিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ সেগুলো তখন তাঁর লোকেদের দ্বারা যিহোবাকে প্রদত্ত উপাসনার অংশ ছিল। কিন্তু, যিশু আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছুর ওপর জোর দিয়েছিলেন—ঈশ্বরের কাছে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার আগে সেই অসন্তুষ্ট ভাইয়ের সঙ্গে সম্মিলিত হওয়া বা তার সঙ্গে শান্তি স্থাপন করা।

তাহলে, যিশুর এই বাক্য থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি? নিশ্চিতভাবেই এই শিক্ষাটা হল, অন্যদের সঙ্গে আমরা যেভাবে আচরণ করি, তা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। (১ যোহন ৪:২০) বস্তুতপক্ষে, প্রাচীনকালে ঈশ্বরকে দেওয়া বলিগুলো অর্থহীন হয়ে যেত, যদি কিনা যে-ব্যক্তি সেগুলো দিতেন, তিনি সহমানবদের সঙ্গে সঠিকভাবে আচরণ না করতেন।—পড়ুন, মীখা ৬:৬-৮.

নম্রতা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

৬, ৭. সেই ভাইয়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক পুনর্স্থাপনের প্রচেষ্টা করার জন্য কেন নম্রতার প্রয়োজন, যাকে আমরা অসন্তুষ্ট করেছি?

একজন অসন্তুষ্ট ভাইয়ের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করা হয়তো আমাদের নম্রতাকে পরীক্ষায় ফেলে। নম্র লোকেরা সম্ভাব্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টায় সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করে না অথবা ঝগড়া করে না। কারণ তা এক ক্ষতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে—যেরকম পরিস্থিতি একসময় প্রাচীন করিন্থের খ্রিস্টানদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। সেই পরিস্থিতি সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল চিন্তা উদ্রেককারী এই বিষয়টা তুলে ধরেছিলেন: “তোমরা যে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিচার চাও, ইহাতে তোমাদের বিশেষ ক্ষতি হইতেছে। বরং অন্যায় সহ্য কর না কেন? বরং বঞ্চিত হও না কেন?”—১ করি. ৬:৭.

যিশু বলেননি যে, আমাদের ভাইকে কেবল এই বিষয়টা বোঝানোর জন্য তার কাছে যাওয়া উচিত নয় যে, আমরা ঠিক এবং তিনি ভুল। আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করা। শান্তি স্থাপন করার জন্য আমাদের অকপটভাবে প্রকাশ করতে হবে যে, আমরা কেমন অনুভব করি। এ ছাড়া, আমাদেরকে এও স্বীকার করতে হবে যে, অন্যের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে। আর ভুলটা যদি আমরা করে থাকি, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমরা নম্রতার সঙ্গে অপরাধ স্বীকার করতে চাইব।

“তোমার দক্ষিণ চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়”

৮. মথি ৫:২৯, ৩০ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলোর সারবস্তু বলুন।

যিশু তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশে, নৈতিকতা সম্বন্ধে উপযুক্ত পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানতেন যে, আমাদের অসিদ্ধ অঙ্গগুলো আমাদের ওপর এক বিপদজনক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, যিশু বলেছিলেন: “আর তোমার দক্ষিণ চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া দূরে ফেলিয়া দেও; কেননা তোমার সমস্ত শরীর নরকে [“গিহেন্নাতে,” NW] নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং এক অঙ্গের নাশ হওয়া তোমার পক্ষে ভাল। আর তোমার দক্ষিণ হস্ত যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা কাটিয়া দূরে ফেলিয়া দেও; কেননা তোমার সমস্ত শরীর নরকে [“গিহেন্নাতে,” NW] যাওয়া অপেক্ষা বরং এক অঙ্গের নাশ হওয়া তোমার পক্ষে ভাল।”মথি ৫:২৯, ৩০.

৯. কীভাবে আমাদের “চক্ষু” অথবা “হস্ত” আমাদের “বিঘ্ন” জন্মাতে পারে?

যিশুর দ্বারা উল্লেখিত “চক্ষু” কোনো কিছুর ওপর আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতা বা সামর্থ্যকে চিত্রিত করে আর “হস্ত,” আমরা হাত দিয়ে যা-কিছু করে থাকি, সেগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যদি আমরা সতর্ক না হই, তাহলে দেহের এই অঙ্গগুলো আমাদের “বিঘ্ন” জন্মাতে এবং “ঈশ্বরের সহিত” আমাদের ‘গমনাগমনকে’ বন্ধ করে দিতে পারে। (আদি. ৫:২২; ৬:৯) তাই, আমরা যখন যিহোবার অবাধ্য হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হই, তখন আমাদের দৃঢ়পদক্ষেপ নিতে হবে, রূপকভাবে বললে আমাদের একটা চোখকে উপড়ে ফেলতে এবং একটা হাতকে কেটে ফেলতে হবে।

১০, ১১. কী আমাদেরকে যৌন অনৈতিকতা এড়ানোর জন্য সাহায্য করতে পারে?

১০ কীভাবে আমরা আমাদের চোখকে অনৈতিক বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? “আমি নিজ চক্ষুর সহিত নিয়ম করিয়াছি,” ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি ইয়োব বলেছিলেন। “অতএব যুবতীর প্রতি কটাক্ষপাত কেন করিব?” (ইয়োব ৩১:১) ইয়োব একজন বিবাহিত ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ঈশ্বরের নৈতিক আইনগুলো লঙ্ঘন না করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। আমরা বিবাহিত অথবা অবিবাহিত, যা-ই হই না কেন, আমাদের মনোভাবও এইরকম থাকা উচিত। যৌন অনৈতিকতা এড়ানোর জন্য আমাদেরকে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হতে হবে, যা সেই ব্যক্তিদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন উৎপন্ন করে, যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে।—গালা. ৫:২২-২৫.

১১ যৌন অনৈতিকতা এড়ানোর জন্য নিজেদেরকে আমাদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘আমি কি আমার চোখকে আমার মধ্যে সেই অনৈতিক বিষয়গুলোর জন্য আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে দিই, যেগুলো বইপুস্তক, টেলিভিশন অথবা ইন্টারনেটে সহজেই পাওয়া যায়?’ আসুন আমরা শিষ্য যাকোবের এই কথাগুলোও মনে রাখি: “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে, এবং পাপ পরিপক্ব হইয়া মৃত্যুকে জন্ম দেয়।” (যাকোব ১:১৪, ১৫) বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গীকৃত কোনো ব্যক্তি যদি অনৈতিক মনোভাব নিয়ে বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি “দৃষ্টিপাত করে” বা করেই চলে, তাহলে তাকে এমন বিরাট পরিবর্তন করতে হবে, যা চোখ উপড়ে ফেলার এবং সেটাকে দূরে ফেলে দেওয়ার সমরূপ।—পড়ুন, মথি ৫:২৭, ২৮.

১২. পৌলের কোন পরামর্শ আমাদের অনৈতিক আকাঙ্ক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১২ আমাদের হাতের অনুপযুক্ত ব্যবহারের ফলে যিহোবার নৈতিক মানগুলো যেহেতু গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে, তাই নৈতিকভাবে শুচি থাকার জন্য আমাদের দৃঢ়ভাবে সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। অতএব আমাদের পৌলের এই পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া উচিত: “তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ, কুঅভিলাষ, এবং লোভ, এ ত প্রতিমাপূজা।” (কল. ৩:৫) “মৃত্যুসাৎ” শব্দটি দৃঢ়পদক্ষেপের ওপর জোর দেয়, যা অনৈতিক মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিতে হবে।

১৩, ১৪. কেন অনৈতিক চিন্তাভাবনা এবং কাজগুলো এড়ানো অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

১৩ নিজের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একজন ব্যক্তি হয়তো অপারেশন করিয়ে একটা হাত বা পা বাদ দেওয়ার জন্য ইচ্ছুক হতে পারেন। সেইসমস্ত অনৈতিক চিন্তাভাবনা এবং কাজ, যেগুলো আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ, সেগুলো এড়ানোর জন্য রূপকভাবে চোখ এবং হাত ‘দূরে ফেলিয়া দেওয়া’ আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। গিহেন্নার দ্বারা চিত্রিত অনন্ত ধ্বংস থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায় হল, মানসিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে শুচি থাকা।

১৪ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ ও অসিদ্ধতার কারণে নৈতিক শুচিতা বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন। “আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি,” পৌল বলেছিলেন, “পাছে অন্য লোকদের কাছে প্রচার করিবার পর আমি আপনি কোন ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া পড়ি।” (১ করি. ৯:২৭) তাই, আসুন আমরা নৈতিকতা সম্বন্ধে যিশুর প্রদত্ত পরামর্শ কাজে লাগানোর জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই এবং নিজেদেরকে যেন কখনো এমনভাবে কাজ করতে না দিই, যা তাঁর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রতি কৃতজ্ঞতার অভাবকে প্রকাশ করে।—মথি ২০:২৮; ইব্রীয় ৬:৪-৬.

“দেও”

১৫, ১৬. (ক) কীভাবে যিশু দান করার বিষয়ে এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন? (খ) লূক ৬:৩৮ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলোর অর্থ কী?

১৫ যিশুর বাক্য এবং সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ দেওয়ার বা দান করার মনোভাবকে জাগিয়ে তোলে। তিনি অসিদ্ধ মানবজাতির উপকারের জন্য পৃথিবীতে আসার মাধ্যমে মহান উদারতা প্রদর্শন করেছেন। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৮:৯.) একজন মানুষ হতে এবং সেই পাপী মানুষদের জন্য নিজের জীবন দান করতে যিশু স্বেচ্ছায় স্বর্গীয় গৌরব ত্যাগ করেছিলেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ রাজ্যে তাঁর সহদায়াদ হিসেবে স্বর্গে ধন লাভ করবে। (রোমীয় ৮:১৬, ১৭) আর নিশ্চিতভাবেই যিশু উদার হওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন:

১৬ “দেও, তাহাতে তোমাদিগকেও দেওয়া যাইবে; লোকে বিলক্ষণ পরিমাণে চাপিয়া ঝাঁকরিয়া উপচিয়া তোমাদের কোলে দিবে; কারণ তোমরা যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদেরও নিমিত্তে পরিমাণ করা যাইবে।” (লূক ৬:৩৮) ‘কোলে দেওয়া,’ কিছু বিক্রেতাদের দ্বারা একজন ক্রেতার প্রশস্ত ওপরের পোশাকের ভাঁজকে পূর্ণ করার প্রথাকে নির্দেশ করে, যে-পোশাক কটিবন্ধনি দ্বারা বদ্ধ থাকত এবং যেটা বিভিন্ন দ্রব্য বহন করার জন্য একটা থলির মতো ছিল। আমাদের নিজেদের স্বতঃস্ফূর্ত উদারতার প্রতিদানে আমরা বিলক্ষণ পরিমাণে পাব, সম্ভবত যখন আমাদের প্রয়োজন থাকে।—উপ. ১১:২.

১৭. কীভাবে যিহোবা দান করার বিষয়ে মুখ্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন আর কোন ধরনের দান আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসতে পারে?

১৭ যিহোবা সেই ব্যক্তিদের ভালোবাসেন ও পুরস্কৃত করেন, যারা আনন্দের সঙ্গে দান করে। তিনি নিজে মুখ্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন, তাঁর একজাত পুত্রকে দান করেছেন “যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) পৌল লিখেছিলেন: “যে ব্যক্তি আশীর্ব্বাদের সহিত বীজ বুনে, সে আশীর্ব্বাদের সহিত শস্যও কাটিবে। প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্ব্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।” (২ করি. ৯:৬, ৭) সত্য উপাসনাকে উচ্চীকৃত করার জন্য আমাদের সময়, শক্তি ও বস্তুগত সম্পদ দান করা নিশ্চিতভাবেই আমাদের জন্য আনন্দ এবং পুরস্কার নিয়ে আসবে।—পড়ুন, হিতোপদেশ ১৯:১৭; লূক ১৬:৯.

“তোমার সম্মুখে তূরী বাজাইও না”

১৮. কোন পরিস্থিতিগুলোতে আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছ থেকে কোনো “পুরস্কার” লাভ করব না?

১৮ “সাবধান, লোককে দেখাইবার জন্য তাহাদের সাক্ষাতে তোমাদের ধর্ম্মকর্ম্ম করিও না, করিলে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার নিকটে তোমাদের পুরস্কার নাই।” (মথি ৬:১) “ধর্ম্মকর্ম্ম” শব্দটির দ্বারা যিশু সেই আচরণকে বুঝিয়েছিলেন, যা ঐশিক ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি এই বোঝাননি যে, ঈশ্বরীয় কাজগুলো কখনো জনসমক্ষে করা উচিত নয় কারণ তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “[তাহাদের] দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হউক।” (মথি ৫:১৪-১৬) কিন্তু আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছ থেকে আমরা কোনো “পুরস্কার” লাভ করব না, যদি কিনা আমরা “দেখাইবার জন্য” এবং প্রশংসা লাভ করার জন্য কাজ করে থাকি, ঠিক যেমন অভিনেতারা একটা থিয়েটারের মঞ্চে অভিনয় করে থাকে। আমাদের যদি এই ধরনের মনোভাব থাকে, তাহলে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক অথবা রাজ্য শাসনের অধীনে অনন্ত আশীর্বাদগুলো উপভোগ করব না।

১৯, ২০. (ক) যিশু যখন “দান” করার সময় ‘তূরী বাজানোর’ বিরুদ্ধে বলেছিলেন, তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা ডান হাত যা করছে, তা বাম হাতকে জানতে দিই না?

১৯ আমাদের যদি সঠিক মনোভাব থাকে, তাহলে আমরা যিশুর এই উপদেশ পালন করব: “অতএব তুমি যখন দান কর, তখন তোমার সম্মুখে তূরী বাজাইও না, যেমন কপটীরা লোকের কাছে গৌরব পাইবার জন্য সমাজ-গৃহে ও পথে করিয়া থাকে; আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তাহারা আপনাদের পুরস্কার পাইয়াছে।” (মথি ৬:২) “দান” ছিল সেগুলো, যেগুলো অভাবী ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য দেওয়া হতো। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৮:৬, ৭.) যিশু ও তাঁর প্রেরিতদেরও এক সাধারণ তহবিল ছিল, যা দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা হতো। (যোহন ১২:৫-৮; ১৩:২৯) যেহেতু দরিদ্রদের দান করার পর আক্ষরিকভাবে তূরী বাজানো হতো না, তাই যিশু স্পষ্টতই অতিরঞ্জন ব্যবহার করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন যে, “দান” করার সময় আমাদের সামনে ‘তূরী বাজানো’ উচিত নয়। আমাদের এই ধরনের দান সম্বন্ধে জনসমক্ষে বলে বেড়ানো উচিত নয়, যেমনটা যিহুদি ফরীশীরা করত। যিশু তাদেরকে কপটী বলেছিলেন কারণ তারা দাতব্য দানগুলো সম্বন্ধে “সমাজ-গৃহে ও পথে” বলে বেড়াত। সেই কপটীরা “আপনাদের পুরস্কার পাইয়াছে।” লোকেদের কাছ থেকে জয়ধ্বনি ও সমাজগৃহে উল্লেখযোগ্য রব্বিদের সঙ্গে প্রধান প্রধান আসনই ছিল তাদের সমস্ত পুরস্কার কারণ যিহোবা তাদেরকে কিছুই দেবেন না। (মথি ২৩:৬) তাহলে, খ্রিস্টের শিষ্যদের কীভাবে আচরণ করতে হতো? যিশু তাদেরকে—এবং আমাদের বলেছেন:

২০ “কিন্তু তুমি যখন দান কর, তখন তোমার দক্ষিণ হস্ত কি করিতেছে, তাহা তোমার বাম হস্তকে জানিতে দিও না। এইরূপে তোমার দান যেন গোপনে হয়; তাহাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দিবেন।” (মথি ৬:৩, ৪) সাধারণত, আমাদের হাতদুটো একসঙ্গে কাজ করে। তাই, দক্ষিণ বা ডান হাত কী করছে, তা বাম হাতকে জানতে না দেওয়ার অর্থ হল, আমরা আমাদের দাতব্য কাজগুলোর কথা বলে বেড়াই না, এমনকি সেই ব্যক্তিদের কাছেও না যারা আমাদের এতই ঘনিষ্ঠ, ঠিক যেমন আমাদের বাম হাত আমাদের ডান হাতের ঘনিষ্ঠ।

২১. “যিনি গোপনে দেখেন,” তাঁর কাছ থেকে ফল পাওয়ার অন্তর্ভুক্ত কী?

২১ আমরা যদি আমাদের দান সম্বন্ধে দম্ভ না করি, তাহলে আমাদের “দান” গোপন থাকবে। ফলে আমাদের পিতা, “যিনি গোপনে দেখেন,” তিনি আমাদেরকে ফল দেবেন। স্বর্গে বাস করায় এবং মানুষের চোখে অদৃশ্য হওয়ায় মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের স্বর্গীয় পিতা “গোপনে” থাকেন। (যোহন ১:১৮) “যিনি গোপনে দেখেন,” তাঁর কাছ থেকে ফল পাওয়ার অন্তর্ভুক্ত হল, যিহোবার দ্বারা আমাদেরকে তাঁর সঙ্গে এক ‘অন্তরঙ্গ’ সম্পর্কে নিয়ে আসা, আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করা এবং আমাদেরকে অনন্তজীবন দান করা। (হিতো. ৩:৩২, NW; যোহন ১৭:৩; ইফি. ১:৭) এটা মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার চেয়ে আরও অনেক উত্তম!

মূল্যবান বলে গণ্য করার মতো বহুমূল্য বাক্যগুলো

২২, ২৩. কেন আমাদের যিশুর বাক্যগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করা উচিত?

২২ পর্বতেদত্ত উপদেশ নিশ্চিতভাবেই আধ্যাত্মিক রত্নে পরিপূর্ণ, যেগুলোর অনেক চমৎকার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিঃসন্দেহে, এগুলোর মধ্যে অমূল্য কথা রয়েছে, যেগুলো এমনকী এই সমস্যাপূর্ণ জগতেও আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসতে পারে। হ্যাঁ, আমরা যদি যিশুর বাক্যগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করি এবং সেগুলোকে আমাদের মনোভাব ও জীবনযাপনের ওপর প্রভাব ফেলতে দিই, তাহলে আমরা সুখী হব।

২৩ যিশু যা শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো যারা ‘শোনে’ ও “পালন করে,” তারা প্রত্যেকে আশীর্বাদ লাভ করবে। (পড়ুন, মথি ৭:২৪, ২৫.) তাই, আসুন আমরা যিশুর পরামর্শ পালন করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশের আরও বাক্য এই ধারাবাহিক প্রবন্ধের শেষ প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• একজন অসুন্তষ্ট ভাইয়ের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

• কীভাবে আমরা আমাদের ‘দক্ষিণ চক্ষুর’ দ্বারা বিঘ্ন পাওয়া এড়াতে পারি?

• দান করার বিষয়ে আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন অসন্তুষ্ট সহবিশ্বাসীর ‘সহিত সম্মিলিত হওয়া’ অথবা শান্তি স্থাপন করা কতই না উত্তম!

[১২, ১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবা সেই ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করেন, যারা আনন্দের সঙ্গে দান করে