সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশুর বাক্যগুলো যেভাবে সুখ বৃদ্ধি করে

যিশুর বাক্যগুলো যেভাবে সুখ বৃদ্ধি করে

যিশুর বাক্যগুলো যেভাবে সুখ বৃদ্ধি করে

“[যিশু] পর্ব্বতে উঠিলেন; আর . . . তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহার নিকটে আসিলেন। তখন তিনি . . . তাঁহাদিগকে . . . উপদেশ দিতে লাগিলেন।”—মথি ৫:১, ২.

১, ২. (ক) কোন পরিস্থিতিগুলোতে যিশু তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশ দিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে যিশু তাঁর বক্তৃতা শুরু করেছিলেন?

 ব ছরটা হল সা.কা. ৩১ সাল। যিরূশালেমে নিস্তারপর্ব পালন করার জন্য যিশু গালীলে তাঁর প্রচার অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধ করেন। (যোহন ৫:১) গালীলে ফিরে তিনি ১২ জন প্রেরিতকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের নির্দেশনার জন্য সারারাত প্রার্থনা করেন। পরের দিন, যিশু যখন অসুস্থদের সুস্থ করেন, তখন লোকেরা একত্রিত হয়। তাঁর শিষ্যদের ও উপস্থিত অন্যদের নিয়ে তিনি একটা পর্বতের পাশে বসেন এবং উপদেশ বা শিক্ষা দিতে শুরু করেন।—মথি ৪:২৩–৫:২; লূক ৬:১২-১৯.

ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক রাখার ফলে যে সুখ লাভ করা যায়, তা দেখানোর মাধ্যমে যিশু তাঁর বক্তৃতা—পর্বতেদত্ত উপদেশ—শুরু করেন। (পড়ুন, মথি ৫:১-১২. *) সুখ হল ‘ভাল এক অবস্থা, যা পরিতৃপ্তি থেকে তীব্র আনন্দে পরিণত হয়।’ যিশু যে-নয়টা সুখ সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন, তা তুলে ধরে যে, কেন খ্রিস্টানরা সুখী আর কেন এই বাক্যগুলো প্রায় ২,০০০ বছর আগে যেমন ছিল, বর্তমানেও ঠিক ততটাই উপকারী। আসুন, আমরা এখন এগুলোর প্রত্যেকটা বিবেচনা করি।

“যাহারা আত্মাতে দীনহীন”

৩. আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন হওয়ার অর্থ কী?

“ধন্য যাহারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই।” (মথি ৫:৩) “যাহারা আত্মাতে দীনহীন” বা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন, তারা বুঝতে পারে যে, তারা আধ্যাত্মিকভাবে নিঃস্ব আর তাদের ঈশ্বরের করুণার প্রয়োজন রয়েছে।

৪, ৫. (ক) যারা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন, তারা কেন সুখী? (খ) কীভাবে আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পরিতৃপ্ত হতে পারে?

যারা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন, তারা সুখী কারণ “স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই।” যিশুকে মশীহ হিসেবে মেনে নেওয়া তাঁর পার্থিব শিষ্যদের জন্য ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যে তাঁর সঙ্গে শাসন করার সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করেছে। (লূক ২২:২৮-৩০) ব্যক্তিগতভাবে আমরা স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে সহদায়াদ হওয়ার আশা রাখি কিংবা রাজ্য শাসনের অধীনে পার্থিব পরমদেশে অনন্তজীবনের জন্য আকাঙ্ক্ষা করি, যা-ই হোক না কেন, আমরা সুখী হতে পারি, যদি কিনা আমরা সত্যিই আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন থাকি এবং ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করার বিষয়ে পুরোপুরি অবগত থাকি।

সকলেই তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন নয় কারণ অনেকের বিশ্বাসের অভাব রয়েছে এবং তারা ‘পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায় না।’ (২ থিষল. ৩:১, ২; ইব্রীয় ১২:১৬, NW) যে-উপায়গুলোতে আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পরিতৃপ্ত করতে পারি, সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল, অধ্যবসায়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করা, শিষ্য তৈরির কাজে উদ্যোগের সঙ্গে অংশগ্রহণ করা এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে নিয়মিতভাবে উপস্থিত থাকা।—মথি ২৮:১৯, ২০; ইব্রীয় ১০:২৩-২৫.

যে-শোককারীরা “ধন্য”

৬. “যাহারা শোক করে,” তারা কারা আর কেন তারা “ধন্য”?

“ধন্য যাহারা শোক করে, কারণ তাহারা সান্ত্বনা পাইবে।” (মথি ৫:৪) “যাহারা শোক করে,” তারা “আত্মাতে দীনহীন” বা আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন এমন লোকেদের সমরূপ। তারা এই অর্থে শোক করে না যে, তারা নিজেদের জীবনযাপন নিয়ে অভিযোগ করে। তাদের শোক হল, নিজেদের পাপপূর্ণ অবস্থা এবং মানব অসিদ্ধতার কারণে বিদ্যমান পরিস্থিতির জন্য দুঃখ করা। কেন এই শোককারীরা “ধন্য”? কারণ তারা ঈশ্বর ও খ্রিস্টে বিশ্বাস করে এবং যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক থাকার কারণে সান্ত্বনা পায়।—যোহন ৩:৩৬.

৭. শয়তানের জগৎ সম্বন্ধে আমাদের কেমন বোধ করা উচিত?

ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে আমরা কি শয়তানের জগতে ছেয়ে থাকা অধার্মিকতার জন্য শোক করি? এই জগৎ যা দিতে চায়, সেই সম্বন্ধে আমরা আসলে কেমন বোধ করি? প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়।” (১ যোহন ২:১৬) কিন্তু কী হবে, যদি আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের নিজেদের আধ্যাত্মিকতা ‘জগতের আত্মা’ অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন মানবসমাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে এমন প্ররোচনাকারী শক্তি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তাহলে আসুন আমরা আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করি এবং প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য চাই। আমরা যদি যিহোবার আরও নিকটবর্তী হই, তাহলে আমরা ‘সান্ত্বনা পাইব,’ তা আমাদের দুর্দশার কারণ যা-ই থাকুক না কেন।—১ করি. ২:১২; গীত. ১১৯:৫২; যাকোব ৫:১৪, ১৫.

“যাহারা মৃদুশীল,” তারা কতই না সুখী!

৮, ৯. মৃদুশীল হওয়ার অর্থ কী আর কেন মৃদুশীল ব্যক্তিরা সুখী?

“ধন্য যাহারা মৃদুশীল, কারণ তাহারা দেশের অধিকারী হইবে।” (মথি ৫:৫) “মৃদুভাব” অথবা নম্রতা, দুর্বলতা বা কপটতাপূর্ণ শান্তভাবকে নির্দেশ করে না। (১ তীম. ৬:১১) আমরা যদি মৃদুশীল হয়ে থাকি, তাহলে আমরা যিহোবার ইচ্ছা পালন করার এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে নেওয়ার মাধ্যমে নম্রতা দেখাব। এ ছাড়া মৃদুভাব, সহবিশ্বাসী ও অন্যদের সঙ্গে আমাদের আচরণেও স্পষ্ট হবে। এই ধরনের নম্রতা প্রেরিত পৌলের পরামর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।—পড়ুন, রোমীয় ১২:১৭-১৯.

কেন যারা মৃদুশীল, তারা সুখী? কারণ “তাহারা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে,” মৃদুশীল ব্যক্তি যিশু বলেছিলেন। তিনি হলেন পৃথিবীর প্রধান অধিকারী। (গীত. ২:৮; মথি ১১:২৯; ইব্রীয় ২:৮, ৯) কিন্তু, “খ্রীষ্টের” মৃদুশীল ‘সহদায়াদরাও’ পৃথিবীর অধিকারী হবে। (রোমীয় ৮:১৬, ১৭) যিশুর রাজ্যের অধীনে দেশে বা পৃথিবীতে, অন্যান্য অনেক নম্র ব্যক্তি অনন্তজীবন উপভোগ করবে।—গীত. ৩৭:১০, ১১.

১০. কীভাবে মৃদুতার অভাব আমাদের সেবার বিশেষ সুযোগ এবং অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?

১০ যিশুর মতো আমাদেরও মৃদুশীল হওয়া উচিত। কিন্তু, আমরা যদি বিরোধী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি বলে পরিচিত হয়ে থাকি, তাহলে কী? এই ধরনের এক আক্রমণাত্মক ও শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবের কারণে লোকেরা হয়তো আমাদের এড়িয়ে চলবে। আমরা যদি মণ্ডলীতে বিভিন্ন দায়িত্ব লাভ করার জন্য আকাঙ্ক্ষী এমন ভাই হয়ে থাকি, তাহলে এই বৈশিষ্ট্য আমাদের অযোগ্য করে তুলবে। (১ তীম. ৩:১,) পৌল তীতকে বলেছিলেন, যাতে তিনি ক্রীতের খ্রিস্টানদেরকে সর্বদা স্মরণ করিয়ে দেন যেন তারা “নির্ব্বিরোধ ও ক্ষান্তশীল হয়, সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা দেখায়।” (তীত ৩:১, ২) এই ধরনের মৃদুতা অন্যদের কাছে কী এক আশীর্বাদস্বরূপ!

তারা “ধার্ম্মিকতার” জন্য ক্ষুধিত

১১-১৩. (ক) ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত হওয়ার অর্থ কী? (খ) যারা ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত, তারা কীভাবে “পরিতৃপ্ত” হবে?

১১ “ধন্য যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত, কারণ তাহারা পরিতৃপ্ত হইবে।” (মথি ৫:৬) যিশুর মনে যে-“ধার্ম্মিকতার” বিষয়টা ছিল, তা হল, ঈশ্বরের ইচ্ছা ও আজ্ঞাগুলো মেনে চলার দ্বারা যা সঠিক, তা করার গুণ। গীতরচক বলেছিলেন যে, তিনি ঈশ্বরের ধার্মিক শাসনকলাপের “আকাঙ্ক্ষায় ক্ষুণ্ণ” হয়েছিলেন। (গীত. ১১৯:২০) আমরা কি ধার্মিকতাকে এতটাই মূল্যবান বলে গণ্য করি যে, আমরা এর জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত?

১২ যিশু বলেছিলেন যে, যারা ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত, তারা সুখী হবে কারণ তারা “পরিতৃপ্ত।” এটা সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের পর সম্ভবপর হয়েছিল, কারণ যিহোবার পবিত্র আত্মা সেই সময় “ধার্ম্মিকতার সম্বন্ধে . . . জগৎকে দোষী” করতে শুরু করেছিল। (যোহন ১৬:৮) পবিত্র আত্মার মাধ্যমে ঈশ্বর কিছু পুরুষকে খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র রচনা করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যেটি “ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত” অত্যন্ত উপকারী। (২ তীম. ৩:১৬) এ ছাড়া, ঈশ্বরের আত্মা আমাদেরকে ‘সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিতে’ সমর্থ করে, “যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও . . . ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।” (ইফি. ৪:২৪) এটা জানা কি সান্ত্বনাজনক নয় যে, যারা যিশুর মুক্তির মূল্যের ভিত্তিতে অনুতপ্ত হয়ে তাদের পাপের জন্য ক্ষমা চায়, তারা ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক অবস্থান অর্জন করতে পারে?—পড়ুন, রোমীয় ৩:২৩, ২৪.

১৩ আমাদের যদি পার্থিব আশা থাকে তাহলে, ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সেই সময় সম্পূর্ণরূপে পরিতৃপ্ত হবে, যখন আমরা পৃথিবীতে ধার্মিক অবস্থায় অনন্তজীবন উপভোগ করব। কিন্তু, ততদিন অবধি আসুন আমরা যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা প্রথমে [ঈশ্বরের] রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।” (মথি ৬:৩৩) তা করা আমাদেরকে ঈশ্বরের উপাসনার সঙ্গে যুক্ত প্রচুর কাজ করার সুযোগ করে দেবে এবং আমাদেরকে সুখী করবে।—১ করি. ১৫:৫৮.

“যাহারা দয়াশীল,” তারা যেকারণে সুখী

১৪, ১৫. কীভাবে আমরা করুণা দেখাতে পারি আর কেন “যাহারা দয়াশীল” বা করুণাময়, তারা সুখী?

১৪ “ধন্য যাহারা দয়াশীল, কারণ তাহারা দয়া পাইবে।” (মথি ৫:৭) “যাহারা দয়াশীল” বা করুণাময়, তারা অন্যদের প্রতি সমবেদনা এবং মমতা বোধের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। যিশু অলৌকিকভাবে অনেকের দুঃখকষ্ট লাঘব করেছিলেন কারণ তিনি তাদের প্রতি করুণা বা মমতা বোধ করেছিলেন। (মথি ১৪:১৪) করুণা দেখানো হয় যখন লোকেরা তাদের বিরুদ্ধে পাপ করে এমন ব্যক্তিদের ক্ষমা করে, ঠিক যেমন যিহোবা অনুতপ্ত ব্যক্তিদের ‘করুণার’ সঙ্গে ক্ষমা করেন। (যাত্রা. ৩৪:৬, NW, ৭; গীত. ১০৩:১০) আমরা এভাবে ও সেইসঙ্গে আমাদের সদয় কথাবার্তা এবং কাজের মাধ্যমে করুণা দেখাতে পারি, যা অবহেলিত ব্যক্তি বিশেষের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে। করুণা দেখানোর এক উত্তম উপায় হল, অন্যদেরকে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে জানানো। লোকদের প্রতি করুণাবিষ্ট হয়ে বা মমতা বোধ করে যিশু “তাহাদিগকে অনেক বিষয় শিক্ষা দিতে লাগিলেন।”—মার্ক ৬:৩৪.

১৫ যিশুর এই কথাগুলোর সঙ্গে একমত হওয়ার কারণ আমাদের রয়েছে: “ধন্য যাহারা দয়াশীল, কারণ তাহারা দয়া পাইবে।” আমরা যদি অন্যদের সঙ্গে করুণাপূর্ণভাবে আচরণ করি, তাহলে প্রতিদানে তারাও হয়তো আমাদের প্রতি করুণা দেখাবে। ঈশ্বর যখন আমাদেরকে বিচারে নিয়ে আসবেন, তখন তিনি হয়তো আমাদের প্রতি প্রতিকূল বিচার করবেন না, যদি কিনা আমরা অন্যদের প্রতি করুণা দেখিয়ে থাকি। (যাকোব ২:১৩) পাপের ক্ষমা এবং অনন্তজীবন কেবলমাত্র করুণাময় ব্যক্তিদের জন্যই।—মথি ৬:১৫.

“যাহারা নির্ম্মলান্তঃকরণ,” তারা যেকারণে সুখী

১৬. “নির্ম্মলান্তঃকরণ” হওয়ার অর্থ কী আর যাদের সেই গুণ রয়েছে, তারা কীভাবে “ঈশ্বরের দর্শন” পায় বা তাঁকে দেখতে পায়?

১৬ “ধন্য যাহারা নির্ম্মলান্তঃকরণ, কারণ তাহারা ঈশ্বরের দর্শন পাইবে।” (মথি ৫:৮) আমরা যদি “নির্ম্মলান্তঃকরণ” হই, তাহলে নির্মলতা বা বিশুদ্ধতা আমাদের আবেগ-অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা ও মনোভাবে স্পষ্ট হবে। আমরা সেই “প্রেম” প্রদর্শন করব, “যাহা শুচি হৃদয় . . . হইতে উৎপন্ন।” (১ তীম. ১:৫) অন্তঃকরণে শুচি হওয়ায় আমরা “ঈশ্বরের দর্শন” পাব বা তাঁকে দেখতে পাব। তবে, এর অর্থ এই নয় যে, যিহোবাকে আক্ষরিকভাবে দেখা যাবে, কারণ “মনুষ্য [ঈশ্বরকে] দেখিলে বাঁচিতে পারে না।” (যাত্রা. ৩৩:২০) কিন্তু, যিশু যেহেতু ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বকে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন, তাই তিনি বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৭-৯) পৃথিবীতে যিহোবার উপাসক হিসেবে আমরা আমাদের পক্ষে তাঁকে কাজ করতে দেখার মাধ্যমে “ঈশ্বরের দর্শন” পেতে পারি বা ঈশ্বরকে দেখতে পারি। (ইয়োব ৪২:৫) অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের জন্য ঈশ্বরকে দেখা সেই সময় চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়, যখন তারা আত্মিক জীবনে পুনরুত্থিত হয় এবং সত্যিকার অর্থে তাদের স্বর্গীয় পিতাকে দেখে।—১ যোহন ৩:২.

১৭. নির্মলান্তকরণ হওয়া আমাদের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে?

১৭ যেহেতু এক বিশুদ্ধ হৃদয় নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে শুচি, তাই এটা সেই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে না, যেগুলো যিহোবার চোখে অশুচি। (১ বংশা. ২৮:৯; যিশা. ৫২:১১) আমরা যদি নির্মলান্তকরণ হই, তাহলে আমরা যা বলি ও করি, তা বিশুদ্ধ হবে এবং যিহোবার প্রতি আমাদের সেবায় কোনো কপটতা থাকবে না।

“যাহারা মিলন করিয়া দেয়,” তারা ঈশ্বরের পুত্র হয়ে ওঠে

১৮, ১৯. “যাহারা মিলন করিয়া দেয়” বা শান্তিপ্রবণ, তারা কীভাবে আচরণ করে?

১৮ “ধন্য যাহারা মিলন করিয়া দেয়, কারণ তাহারা ঈশ্বরের পুত্ত্র বলিয়া আখ্যাত হইবে।” (মথি ৫:৯) “যাহারা মিলন করিয়া দেয়” বা শান্তিপ্রবণ, তারা যা করে ও যা করে না, সেটার দ্বারা শনাক্তিকৃত হয়। যিশুর মনে যাদের কথা ছিল, আমরা যদি সেই লোকেদের মতো হই, তাহলে আমরা শান্তিপ্রবণ এবং ‘অপকারের পরিশোধে কাহারও অপকার করি না।’ এর পরিবর্তে, আমরা ‘সকলের প্রতি সর্ব্বদা সদাচরণের অনুধাবন করি।’—১ থিষল. ৫:১৫.

১৯ মথি ৫:৯ পদে যে-গ্রিক শব্দকে “মিলন করিয়া দেয়” বা শান্তিপ্রবণ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির আক্ষরিক অর্থ “শান্তিস্থাপনকারী।” শান্তিপ্রবণ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই সক্রিয়ভাবে শান্তি বৃদ্ধি করতে হবে। শান্তিস্থাপনকারীরা এমন কিছু করে না, যা “মিত্রভেদ জন্মায়।” (হিতো. ১৬:২৮) শান্তিপ্রবণ ব্যক্তি হিসেবে আমরা “সকলের সহিত শান্তির অনুধাবন” করার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো নিয়ে থাকি।—ইব্রীয় ১২:১৪.

২০. কারা এখন “ঈশ্বরের পুত্ত্র” এবং আর কারা অবশেষে ঈশ্বরের সন্তান হবে?

২০ শান্তিপ্রবণ ব্যক্তিরা সুখী কারণ “তাহারা ঈশ্বরের পুত্ত্র বলিয়া আখ্যাত হইবে।” বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের যিহোবা দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তারা “ঈশ্বরের পুত্ত্র।” ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে ইতিমধ্যেই যিহোবার সঙ্গে তাদের এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রয়েছে কারণ তারা খ্রিস্টের ওপর বিশ্বাস করে এবং পূর্ণহৃদয়ে ‘প্রেমের ও শান্তির ঈশ্বরের’ উপাসনা করে। (২ করি. ১৩:১১; যোহন ১:১২) যিশুর শান্তিপ্রবণ “আরও মেষ” সম্বন্ধে কী বলা যায়? তারা যিশুকে তাঁর হাজার বছর রাজত্বে “সনাতন পিতা” হিসেবে পাবে কিন্তু রাজত্বের শেষে যিশু যিহোবার বশীভূত হবেন এবং তারা তখন সম্পূর্ণ অর্থে ঈশ্বরের সন্তান হবে।—যোহন ১০:১৬; যিশা. ৯:৬; রোমীয় ৮:২১; ১ করি. ১৫:২৭, ২৮.

২১. আমরা যদি “আত্মার বশে জীবন ধারণ করি,” তাহলে আমরা কীভাবে আচরণ করব?

২১ আমরা যদি “আত্মার বশে জীবন ধারণ করি,” তাহলে শান্তিপ্রবণ মনোভাব আমাদের এমন একটা গুণ হবে, যা সহজেই অন্যদের চোখে পড়বে। আমরা “পরস্পরকে জ্বালাতন” অথবা “একে অন্যকে বিরক্ত” করব না। (গালা. ৫:২২-২৬; বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) এর পরিবর্তে, আমরা “মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে” থাকার বা শান্তিপ্রবণ হওয়ার চেষ্টা করি।—রোমীয় ১২:১৮.

তাড়িত হওয়া সত্ত্বেও সুখী!

২২-২৪. (ক) সেই ব্যক্তিদের সুখের কারণ কী, যারা ধার্মিকতার জন্য তাড়িত? (খ) পরের দুটো অধ্যয়ন প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

২২ “ধন্য যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য তাড়িত হইয়াছে, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই।” (মথি ৫:১০) এই বিষয়টাকে সম্প্রসারিত করে যিশু আরও বলেছিলেন: “ধন্য তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে। আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর; কারণ তোমাদের পূর্ব্বে যে ভাববাদিগণ ছিলেন, তাঁহাদিগকে তাহারা সেই মত তাড়না করিত।”মথি ৫:১১, ১২.

২৩ ঈশ্বরের প্রাচীনকালের ভাববাদীদের মতো খ্রিস্টানরা জানে যে, তাদেরকে নিন্দা করা, তাড়না করা এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলা হবেই—এই সমস্তকিছুই “ধার্ম্মিকতার জন্য।” কিন্তু, এই ধরনের পরীক্ষাগুলো বিশ্বস্ততার সঙ্গে সহ্য করার দ্বারা আমাদের যিহোবাকে খুশি এবং সম্মান করার পরিতৃপ্তি রয়েছে। (১ পিতর ২:১৯-২১) আমাদের দুঃখকষ্ট এখন ও ভবিষ্যতে যিহোবার সেবা করার বিষয়ে আমাদের যে-আনন্দ, সেটাকে হ্রাস করে দিতে পারে না। অথবা এটা স্বর্গীয় রাজ্যে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করার সুখকে বা সেই সরকারের পার্থিব প্রজাদের একজন হিসেবে অনন্তজীবন লাভ করার আনন্দকেও কমিয়ে দিতে পারে না। এই ধরনের আশীর্বাদ ঈশ্বরের অনুগ্রহ, দয়া এবং উদারতার প্রমাণ জোগায়।

২৪ পর্বতেদত্ত উপদেশ থেকে আরও অনেক কিছু শেখার আছে। পরবর্তী দুটো অধ্যয়ন প্রবন্ধে বিভিন্ন শিক্ষা সম্বন্ধে বিবেচনা করা হয়েছে। আসুন আমরা দেখি যে, কীভাবে আমরা যিশু খ্রিস্টের সেই বাক্যগুলোকে কাজে লাগাতে পারি।

[পাদটীকা]

^ নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেল এবং অন্যান্য অনুবাদ যেমন, টুডেজ ইংলিশ ভারসন এবং বাংলা জুবিলী বাইবেল “ধন্য” শব্দটি ব্যবহার করার পরিবর্তে আরও সঠিক শব্দ “সুখী” ব্যবহার করেছে। তাই, এই প্রবন্ধে আমরা “ধন্য” শব্দটির সমার্থ হিসেবে “সুখী” শব্দটি আলোচনা করব।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কেন “যাহারা আত্মাতে দীনহীন” বা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন, তারা সুখী?

• সেই ব্যক্তিদের সুখের কারণ কী, “যাহারা মৃদুশীল”?

• তাড়িত হওয়া সত্ত্বেও কেন খ্রিস্টানরা সুখী?

• যিশুর দ্বারা আলোচিত কোন সুখটা বিশেষভাবে আপনাকে প্রভাবিত করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু যে-নয়টা সুখ সম্বন্ধে তুলে ধরেছেন, সেগুলো তখন যেমনটা ছিল, বর্তমানেও ঠিক ততটাই উপকারী

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

করুণা দেখানোর একটা উত্তম উপায় হল, অন্যদেরকে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে জানানো