ইয়োব যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করেছিলেন
ইয়োব যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করেছিলেন
“সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নাম ধন্য হউক।”—ইয়োব ১:২১.
১. সম্ভবত কে ইয়োব বইটি লিখেছিলেন আর কখন?
মোশি যখন ফরৌণের ক্রোধ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মিশর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং মিদিয়নে বাস করতে শুরু করেছিলেন, তখন তার বয়স ছিল প্রায় ৪০ বছর। (প্রেরিত ৭:২৩) সেই দেশে থাকাকালীন তিনি হয়তো ইয়োবের পরীক্ষাগুলোর কথা শুনেছিলেন, যিনি নিকটবর্তী ঊষ দেশে বাস করতেন। কয়েক বছর পর, মোশি ও ইস্রায়েল জাতি যখন প্রান্তরে তাদের যাত্রার শেষের দিকে ঊষের কাছাকাছি ছিলেন, তখন মোশি হয়তো ইয়োবের জীবনের শেষ বছরগুলোর কথা জানতে পেরেছিলেন। যিহুদি বিশ্বাস অনুযায়ী, ইয়োবের মৃত্যুর কিছুদিন পর মোশি ইয়োব বইটি লিখেছিলেন।
২. কোন কোন উপায়ে ইয়োব বইটি আধুনিক দিনের যিহোবার দাসদের জন্য এক উৎসাহ?
২ ইয়োব বইটি আধুনিক দিনে ঈশ্বরের দাসদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। কোন কোন উপায়ে? বর্ণনাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সেই ঘটনাগুলোর ব্যাপারে আমাদের চোখ খুলে দেয়, যেগুলো স্বর্গে ঘটেছিল আর তা ঈশ্বরের সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত সর্বোচ্চ বিচার্য বিষয়কে তুলে ধরে। এ ছাড়া, ইয়োবের বিবরণ নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার সঙ্গে কী জড়িত, সেই বিষয়ে আমাদের বোধগম্যতাকে আরও গভীর করে এবং কেন যিহোবা মাঝে মাঝে তাঁর দাসদের কষ্ট ভোগ করতে দেন, তা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে। অধিকন্তু, ইয়োব বইটি শয়তান দিয়াবলকে যিহোবার প্রধান বিপক্ষ ও মানবজাতির শত্রু হিসেবে শনাক্ত করে। বইটি এও দেখায় যে, ইয়োবের মতো অসিদ্ধ মানুষেরা প্রচণ্ড পরীক্ষা সত্ত্বেও যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারে। আসুন আমরা ইয়োব বইয়ে বর্ণিত কিছু ঘটনা পরীক্ষা করে দেখি।
ইয়োব শয়তানের দ্বারা পরীক্ষিত হন
৩. ইয়োব সম্বন্ধে আমরা কী জানি আর কেন শয়তান তাকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল?
৩ ইয়োব ছিলেন একজন ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি, উত্তম নৈতিক গুণসম্পন্ন একজন কুলপতি। স্পষ্টতই, তিনি খুবই সম্মাননীয় একজন পরামর্শদাতা ছিলেন, যিনি দরিদ্রদের সাহায্য করতেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ইয়োব ঈশ্বরকে ভয় করতেন। ইয়োবকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি “সিদ্ধ [“নির্দোষ,” NW] ও সরল [“ন্যায়নিষ্ঠ,” NW], ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী ছিলেন।” ইয়োবের ঈশ্বরভক্তিই—তার ধনসম্পদ ও প্রভাব নয়—তাকে শয়তান দিয়াবলের আক্রমণের এক লক্ষ্যবস্তু করে তুলেছিল।—ইয়োব ১:১; ২৯:৭-১৬; ৩১:১.
৪. নীতিনিষ্ঠা কী?
৪ ইয়োব বইয়ের ভূমিকামূলক বর্ণনা স্বর্গের এক সমাবেশ সম্বন্ধে তুলে ধরে, যেখানে স্বর্গদূতেরা যিহোবার সামনে দণ্ডায়মান হয়েছিল। শয়তানও সেখানে উপস্থিত ছিল আর সে ইয়োবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। (পড়ুন, ইয়োব ১:৬-১১.) যদিও শয়তান ইয়োবের সহায়সম্পদের বিষয়ে উল্লেখ করেছিল কিন্তু সে ইয়োবের নীতিনিষ্ঠাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলার ওপর তার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল। “নীতিনিষ্ঠা” শব্দটি ন্যায়নিষ্ঠ, নির্দোষ, ধার্মিক এবং ত্রুটিহীন হওয়ার ধারণা বহন করে। বাইবেলে যেমনটা ব্যবহৃত হয়েছে, সেই অনুযায়ী মানব নীতিনিষ্ঠা যিহোবার প্রতি সম্পূর্ণ ভক্তিকে নির্দেশ করে।
৫. ইয়োব সম্বন্ধে শয়তান কোন দাবি করেছিল?
৫ শয়তান দাবি করেছিল যে, ঈশ্বরের প্রতি ইয়োবের উপাসনা নীতিনিষ্ঠার ওপর নয় বরং স্বার্থপরতার ওপর নির্ভর করে ছিল। শয়তান অভিযোগ করেছিল যে, ইয়োব কেবলমাত্র সেই সময় পর্যন্তই যিহোবার প্রতি অনুগত থাকবেন, যতক্ষণ যিহোবা তাকে পুরস্কৃত ও সুরক্ষা করে যাবেন। শয়তানের এই অভিযোগের এক উত্তর প্রদান করার জন্য, যিহোবা শয়তানকে সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ নিয়ে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন। ফল স্বরূপ, একদিনের মধ্যেই ইয়োব জানতে পারেন যে, তার পশুপাল চুরি অথবা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, তার বেশির ভাগ দূত বা পরিচারকদের হত্যা করা হয়েছে এবং তার দশ জন ছেলে-মেয়ে তাদের জীবন হারিয়েছে। (ইয়োব ১:১৩-১৯) ইয়োব কি শয়তানের আক্রমণের চাপে ভেঙে পড়েছিলেন? অনুপ্রাণিত বিবরণ ইয়োবের দুর্দশার প্রতি তার প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে বর্ণনা করে: “সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] দিয়াছিলেন, সদাপ্রভুই [“যিহোবাই,” NW] লইয়াছেন; যিহোবার নাম ধন্য হউক।”—ইয়োব ১:২১.
৬. (ক) স্বর্গে আরেকটা সমাবেশের সময় কী ঘটেছিল? (খ) শয়তান যখন যিহোবার প্রতি ইয়োবের নীতিনিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, তখন তার মনে কার কথা ছিল?
৬ পরবর্তী সময়ে স্বর্গে আরেকটা সমাবেশ হয়েছিল। আবারও শয়তান এই বলে ইয়োবকে দোষারোপ করেছিল: “চর্ম্মের জন্য চর্ম্ম, আর প্রাণের জন্য লোক সর্ব্বস্ব দিবে। কিন্তু তুমি এক বার হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার অস্থি ও মাংস স্পর্শ কর, সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে।” লক্ষ করুন যে, শয়তান তার অভিযোগের মধ্যে অন্যদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। “প্রাণের জন্য লোক সর্ব্বস্ব দিবে,” এই কথা বলার দ্বারা দিয়াবল কেবল ইয়োবের নীতিনিষ্ঠার বিষয়েই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে যিহোবাকে উপাসনা করে এমন যেকোনো ‘লোকের’ নীতিনিষ্ঠার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এরপর, ঈশ্বর ইয়োবকে যন্ত্রণাদায়ক রোগ দিয়ে আঘাত করার জন্য শয়তানকে অনুমতি দিয়েছিলেন। (ইয়োব ২:১-৮) কিন্তু, এগুলোই ইয়োবের সমস্ত পরীক্ষা ছিল না।
ইয়োবের অবস্থান পরীক্ষা করা
৭. কোন কোন উপায়ে ইয়োবের স্ত্রী ও যারা তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল তারা ইয়োবের ওপর চাপ নিয়ে এসেছিল?
৭ শুরুতে, ইয়োবের স্ত্রী তার স্বামীর মতো একই দুর্দশা ভোগ করেছিলেন। তার সন্তান ও পারিবারিক ধনসম্পদ হারানো নিশ্চয়ই তাকে দিশেহারা করে দিয়েছিল। তার স্বামীকে যন্ত্রণাদায়ক রোগে কষ্ট পেতে দেখা তার জন্য নিশ্চয়ই বেদনাদায়ক ছিল। তিনি ইয়োবকে আর্তনাদ করে বলেছিলেন: “তুমি কি এখনও তোমার সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] রক্ষা করিতেছ? ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দিয়া প্রাণত্যাগ কর।” এরপর, ইয়োবকে আপাতদৃষ্টিতে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তিন জন ব্যক্তি—ইলীফস, বিল্দদ ও সোফর—এসেছিল। সান্ত্বনা দেওয়ার পরিবর্তে, তারা প্রতারণামূলক যুক্তি ব্যবহার করেছিল এবং “কষ্টজনক সান্ত্বনাকারী” বলে প্রমাণিত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, বিল্দদ বলেছিলেন যে, ইয়োবের সন্তানরা অন্যায় কাজে রত হয়েছিল আর তাই তারা সেই পরিণতি লাভ করার যোগ্য ছিল। ইলীফস পরোক্ষভাবে বলেছিলেন যে, ইয়োবের দুঃখকষ্ট অতীতের পাপগুলোর জন্য শাস্তি স্বরূপ ছিল। যারা নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখে, ঈশ্বরের কাছে তাদের আদৌ কোনো মূল্য আছে কি না, সেই বিষয়ে তিনি এমনকী সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন! (ইয়োব ২:৯, ১১; ৪:৮; ৮:৪; ১৬:২; ২২:২, ৩) এইরকম প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও ইয়োব তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন। এটা ঠিক যে, তিনি যখন “ঈশ্বর অপেক্ষা আপনাকে ধার্ম্মিক জ্ঞান করিয়াছিলেন,” তখন তিনি ভুল করেছিলেন। (ইয়োব ৩২:২) তা সত্ত্বেও, এই সমস্তকিছুর মধ্যেও ইয়োব বিশ্বস্ত ছিলেন।
৮. আজকে পরামর্শদাতাদের জন্য ইলীহূ কোন উত্তম উদাহরণ দেখিয়েছেন?
৮ এরপর, আমরা ইলীহূ সম্বন্ধে পড়ি, যে-ব্যক্তিও ইয়োবকে দেখতে এসেছিলেন। ইলীহূ প্রথমে ইয়োব ও তার তিন সঙ্গীর যুক্তিতর্ক শুনেছিলেন। অন্য চার জন ব্যক্তির চেয়ে বয়সে ছোটো হওয়া সত্ত্বেও, ইলীহূ আরও মহৎ প্রজ্ঞা দেখিয়েছিলেন। তিনি ইয়োবের প্রতি বিবেচনা দেখিয়ে সম্বোধন করেছিলেন। ইলীহূ ইয়োবের ন্যায়নিষ্ঠ কাজের জন্য তার প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু, তিনি এও বলেছিলেন যে, ইয়োব নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার ওপর অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়েছেন। এরপর ইলীহূ ইয়োবকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে সেবা করা সবসময়ই যথার্থ। (পড়ুন, ইয়োব ৩৬:১, .) আজকে যাদের পরামর্শ প্রদান করতে হয়, তাদের জন্য কত চমৎকার এক উদাহরণ! ইলীহূ ধৈর্য দেখিয়েছিলেন, মনোযোগ সহকারে শুনেছিলেন, যেখানে সম্ভব প্রশংসা করেছিলেন এবং গঠনমূলক পরামর্শ প্রদান করেছিলেন।— ১১ইয়োব ৩২:৬; ৩৩:৩২.
৯. কীভাবে যিহোবা ইয়োবকে সাহায্য করেছিলেন?
৯ অবশেষে, যিহোবা যখন ইয়োবের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন তার এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা হয়েছিল। বিবরণ বলে: ‘সদাপ্রভু ঘূর্ণবায়ুর মধ্য হইতে ইয়োবকে উত্তর দিলেন।’ ধারাবাহিকভাবে একাধিক প্রশ্ন ব্যবহার করে যিহোবা ইয়োবকে সদয়ভাবে অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে তার চিন্তাভাবনা সংশোধন করতে সাহায্য করেছিলেন। ইয়োব এই কথা স্বীকার করার দ্বারা স্বেচ্ছায় সেই অনুযোগ মেনে নিয়েছিলেন: “আমি অকিঞ্চন . . . আমি . . . ধূলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি।” যিহোবা ইয়োবের সঙ্গে কথা বলার পর, তিন সঙ্গীর বিরুদ্ধে তাঁর ক্রোধ প্রকাশ করেন কারণ তারা ‘যথার্থ কথা বলে নাই।’ ইয়োবকে তাদের জন্য প্রার্থনা করতে হয়েছিল। এরপর “ইয়োব আপন বন্ধুগণের নিমিত্ত প্রার্থনা করিলে সদাপ্রভু তাঁহার দুর্দ্দশার পরিবর্ত্তন করিলেন; বস্তুতঃ সদাপ্রভু ইয়োবকে পূর্ব্ব সম্পদের দ্বিগুণ সম্পদ দিলেন।”—ইয়োব ৩৮:১; ৪০:৪; ৪২:৬-১০.
যিহোবাকে আমরা কতটা গভীরভাবে প্রেম করি?
১০. কেন যিহোবা শয়তানকে উপেক্ষা অথবা ধ্বংস করেননি?
১০ যিহোবা হলেন নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, সমস্ত সৃষ্টির সার্বভৌম। কেন তিনি দিয়াবলের অভিযোগগুলোকে উপেক্ষা করেননি? ঈশ্বর জানতেন যে, শয়তানকে উপেক্ষা করা অথবা তাকে ধ্বংস করা সেই বিচার্য বিষয়টার মীমাংসা করবে না, যা উত্থাপিত হয়েছিল। দিয়াবল দাবি করেছিল যে, যিহোবার একজন উল্লেখযোগ্য দাস ইয়োব অনুগত থাকবে না, যদি কিনা তার সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়। পরীক্ষার মধ্যেও ইয়োবের আনুগত্য বজায় ছিল। এরপর, শয়তান দাবি করেছিল যে, দৈহিকভাবে কষ্টভোগ করলে যেকোনো মানুষই ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। ইয়োব কষ্টভোগ করেছিলেন কিন্তু তার নীতিনিষ্ঠা ভেঙে ফেলেননি। তাই, সেই বিশ্বস্ত কিন্তু অসিদ্ধ মানুষের ক্ষেত্রে শয়তান মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণিত হয়েছিল। ঈশ্বরের অন্যান্য উপাসকদের সম্বন্ধে কী বলা যায়?
১১. কীভাবে যিশু শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক সম্পূর্ণ উত্তর দিয়েছিলেন?
১১ বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বরের প্রত্যেক দাসের বিরুদ্ধে শয়তান যা-কিছুই নিয়ে আসুক না কেন, সেটা সত্ত্বেও যিনি তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখেন, তিনি দেখান যে, তার নিজের ক্ষেত্রে সেই নির্দয় শত্রুর দোষারোপগুলো মিথ্যা। যিশু পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্পূর্ণ উত্তর দিয়েছিলেন। যিশু আমাদের প্রথম পিতা আদমের মতো একজন সিদ্ধ মানুষ ছিলেন। মৃত্যু পর্যন্ত যিশুর বিশ্বস্ততা চূড়ান্তভাবে দেখিয়েছিল যে, শয়তান একজন মিথ্যাবাদী এবং তার অভিযোগগুলো মিথ্যা।—প্রকা. ১২:১০.
১২. যিহোবার প্রত্যেক দাসের কোন সুযোগ এবং দায়িত্ব রয়েছে?
১২ তা সত্ত্বেও, যিহোবার উপাসকদের শয়তান পরীক্ষা করেই যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকের নিজেদের ব্যক্তিগত নীতিনিষ্ঠার মাধ্যমে এটা দেখানোর সুযোগ ও দায়িত্ব রয়েছে যে, আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি বলে তাঁর সেবা করি—স্বার্থপর কারণগুলোর জন্য নয়। সেই দায়িত্বকে আমরা কীভাবে দেখে থাকি? যিহোবার প্রতি অনুগত থাকাকে আমরা একটা বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখে থাকি। এ ছাড়া, এটা জানা আমাদের সান্ত্বনা দেয় যে, যিহোবা আমাদেরকে সহ্য করার শক্তি দেন এবং ইয়োবের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল, তেমনই আমরা যে-পরীক্ষাগুলোর সম্মুখীন হই, সেগুলোর ক্ষেত্রে তিনি সীমা নির্ধারণ করে দেন।—১ করি. ১০:১৩.
শয়তান—এক উদ্ধত বিপক্ষ ও ধর্মভ্রষ্ট
১৩. ইয়োব বই শয়তান সম্বন্ধে কোন বিস্তারিত বিষয় প্রকাশ করে?
১৩ ইব্রীয় শাস্ত্র, যিহোবাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করার এবং মানবজাতিকে বিপথগামী করার ক্ষেত্রে শয়তানের লজ্জাজনক ভূমিকা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানায়। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রে, আমরা যিহোবার প্রতি শয়তানের বিরোধিতা সম্বন্ধে আরও তথ্য পাই আর প্রকাশিত বাক্য বইয়ে আমরা যিহোবার সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদন ও শয়তানের চূড়ান্ত ধ্বংস সম্বন্ধে জানতে পারি। ইয়োব বইটি শয়তানের বিদ্রোহমূলক পথ সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানকে আরও বৃদ্ধি করে। শয়তান যখন স্বর্গের সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিল, তখন সে যিহোবাকে প্রশংসা করার উদ্দেশ্য নিয়ে সেখানে যোগ দেয়নি। শয়তানের এক বিদ্বেষপরায়ণ মনোভাব ও অনিষ্টকর উদ্দেশ্য ছিল। ইয়োবের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসার এবং তাকে পরীক্ষা করার অনুমতি লাভ করার পর, “শয়তান সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে বাহিরে গেল।”—ইয়োব ১:১২; ২:৭.
১৪. ইয়োবের প্রতি শয়তান কোন মনোভাব দেখিয়েছিল?
১৪ তাই, ইয়োব বইটি শয়তানকে মানবজাতির এক নির্দয় শত্রু হিসেবে শনাক্ত করে। ইয়োব ১:৬ পদ এবং ইয়োব ২:১ পদে উল্লেখিত স্বর্গীয় সমাবেশের মধ্যে এক অনির্দিষ্ট সময়কাল অতিবাহিত হয়েছে, যে-সময়কালে ইয়োবকে নিষ্ঠুরভাবে পরীক্ষায় নিয়ে আসা হয়েছিল। ইয়োবের বিশ্বস্ততার কারণে যিহোবা শয়তানকে এই বলতে সমর্থ হয়েছিলেন: “[ইয়োব] এখনও আপন সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] রক্ষা করিতেছে, যদিও তুমি অকারণে তাহাকে বিনষ্ট করিতে আমাকে প্রবৃত্ত করিয়াছ।” কিন্তু, শয়তান স্বীকার করেনি যে, তার দাবিগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এর বিপরীতে, সে ইয়োবকে আরেকটা চরম পরীক্ষায় ফেলার দাবি জানিয়েছিল। এভাবে দিয়াবল ইয়োবকে সমৃদ্ধশালী ও নিঃস্ব উভয় অবস্থাতেই পরীক্ষা করেছিল। স্পষ্টতই, অভাবী অথবা দুর্দশাগ্রস্ত কারো প্রতিই শয়তানের কোনো সমবেদনা নেই। সে নীতিনিষ্ঠা বজায়কারী ব্যক্তিদের ঘৃণা করে। (ইয়োব ২:৩-৫) তা সত্ত্বেও, ইয়োবের বিশ্বস্ততা দেখিয়েছিল যে, শয়তান একজন মিথ্যাবাদী।
১৫. শয়তানের সঙ্গে আধুনিক দিনের ধর্মভ্রষ্টদের কোন সাদৃশ্য রয়েছে?
১৫ শয়তানই হল প্রথম সৃষ্ট প্রাণী, যে-ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আধুনিক দিনের ধর্মভ্রষ্টরা দিয়াবলের মতো একই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। তাদের মন হয়তো মণ্ডলীর বিভিন্ন ব্যক্তি, খ্রিস্টান প্রাচীন অথবা পরিচালকগোষ্ঠীর প্রতি সমালোচনামূলক মনোভাবের দ্বারা বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে। কিছু ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তি ঐশিক নাম যিহোবা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিরোধিতা করে। তারা যিহোবা সম্বন্ধে জানতে অথবা তাঁকে সেবা করতে আগ্রহী নয়। তাদের পিতা শয়তানের মতোই ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিরা নীতিনিষ্ঠা বজায়কারী ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। (যোহন ৮:৪৪) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, যিহোবার দাসেরা তাদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ এড়িয়ে চলে!—২ যোহন ১০, ১১.
ইয়োব যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করেছিলেন
১৬. যিহোবার প্রতি ইয়োব কোন মনোভাব দেখিয়েছিলেন?
১৬ ইয়োব যিহোবার নাম ব্যবহার করেছিলেন এবং সেই নামের প্রশংসা করেছিলেন। এমনকী তিনি যখন তার সন্তানদের মৃত্যুর সংবাদ শুনে ভেঙে পড়েছিলেন, তখনও ইয়োব ঈশ্বরের প্রতি অবিবেচনামূলক দোষারোপ করেননি। যদিও ইয়োব তার ক্ষতির জন্য ভুলভাবে ঈশ্বরকে দায়ী করেছিলেন, তবুও তিনি যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার একটা প্রবাদে ইয়োব ঘোষণা করেছিলেন: “দেখ, প্রভুর [“যিহোবার,” NW] ভয়ই প্রজ্ঞা, দুষ্ক্রিয়া হইতে সরিয়া যাওয়াই সুবিবেচনা।”—ইয়োব ২৮:২৮.
১৭. কী ইয়োবকে তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল?
১৭ কী ইয়োবকে তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল? স্পষ্টতই বিপর্যয়গুলো আঘাত হানার আগে, তিনি ইতিমধ্যেই যিহোবার সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। যদিও আমাদের কাছে এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, শয়তান যে যিহোবাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করেছিল, সেই সম্বন্ধে তিনি জানতেন, তবুও ইয়োব অনুগত থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] ত্যাগ করিব না।” (ইয়োব ২৭:৫) কীভাবে ইয়োব এই নিকট সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন? কোনো সন্দেহ নেই যে, তার দূরসর্ম্পকের আত্মীয় অব্রাহাম, ইস্হাক এবং যাকোবের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ সম্বন্ধে তিনি যা শুনেছিলেন, সেটাকে তিনি মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন। আর সৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে ইয়োব যিহোবার অনেক গুণ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।—পড়ুন, ইয়োব ১২:৭-৯, ১৩, ১৬.
১৮. (ক) কীভাবে ইয়োব যিহোবার প্রতি তার ভক্তি দেখিয়েছিলেন? (খ) কোন কোন উপায়ে আমরা ইয়োবের উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?
১৮ ইয়োব যা জেনেছিলেন, তা তার মধ্যে যিহোবাকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিল। তার পরিবারের সদস্যরা যদি ঈশ্বরের অসন্তোষজনক কিছু করে থাকে অথবা “মনে মনে ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দিয়াছে,” এইরকম ভেবে তিনি নিয়মিতভাবে বলি উৎসর্গ করতেন। (ইয়োব ১:৫) এমনকী চরমভাবে পরীক্ষিত হয়েও ইয়োব যিহোবা সম্বন্ধে ইতিবাচক কথা বলেছিলেন। (ইয়োব ১০:১২) কতই না উত্তম এক উদাহরণ! আমাদেরও যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে নিয়মিতভাবে সঠিক জ্ঞান নিতে হবে। অধ্যয়ন, সভায় উপস্থিতি, প্রার্থনা এবং সুসমাচার প্রচার করার মতো আধ্যাত্মিক কার্যক্রমগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের এক গঠনমূলক তালিকা রয়েছে। অধিকন্তু, যিহোবার নামকে জানানোর জন্য আমরা আমাদের যথাসাধ্য করে থাকি। আর ইয়োবের নীতিনিষ্ঠা যেমন যিহোবাকে খুশি করেছিল, তেমনই আজকে ঈশ্বরের দাসদের নীতিনিষ্ঠা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে। এই বিষয়টা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কেন ইয়োব শয়তান দিয়াবলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন?
• ইয়োব কোন পরীক্ষাগুলো সহ্য করেছিলেন এবং তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
• কী আমাদেরকে ইয়োবের মতো নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে সাহায্য করবে?
• ইয়োব বই থেকে আমরা শয়তান সম্বন্ধে কী শিখি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইয়োবের বিবরণ আমাদেরকে ঈশ্বরের সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত সর্বোচ্চ বিচার্য বিষয় সম্বন্ধে সতর্ক করে দেয়
[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
কোন পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে আপনার নীতিনিষ্ঠা পরীক্ষিত হতে পারে?