সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সৃষ্টির মধ্যে যিহোবার প্রজ্ঞা দেখা যায়

সৃষ্টির মধ্যে যিহোবার প্রজ্ঞা দেখা যায়

সৃষ্টির মধ্যে যিহোবার প্রজ্ঞা দেখা যায়

“তাঁহার অদৃশ্য গুণ . . . বিবিধ কার্য্যে বোধগম্য . . . হইতেছে।”—রোমীয় ১:২০.

১. বর্তমানে জগতের প্রজ্ঞা অনেকের ওপর কীরকম প্রভাব ফেলেছে?

 বর্তমানে “প্রজ্ঞা” শব্দটিকে হালকাভাবে নেওয়া হয়ে থাকে। কোনো ব্যক্তি অনেকখানি জ্ঞান সঞ্চয় করলেই কেউ কেউ সেই ব্যক্তিকে প্রজ্ঞাবান বলে থাকে। কিন্তু, জগতের তথাকথিত মেধাবী ব্যক্তিরা জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য কোনো নির্দেশনাই প্রদান করে না। অন্যদিকে, যারা নিজেদেরকে জগতের জ্ঞানের দ্বারা প্রভাবিত হতে দেয়, তারা “তরঙ্গাহত এবং যে সে শিক্ষাবায়ুতে ইতস্ততঃ পরিচালিত” হয়।—ইফি. ৪:১৪.

২, ৩. (ক) কেন যিহোবাই “একমাত্র প্রজ্ঞাবান্‌”? (খ) কীভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা প্রজ্ঞা জগতের প্রজ্ঞার চেয়ে ভিন্ন?

তাদের বেলায় এটা কতই না ভিন্ন, যারা প্রকৃত প্রজ্ঞা অর্জন করে, যে-প্রজ্ঞার উৎস হলেন যিহোবা ঈশ্বর! বাইবেল আমাদের জানায় যে, যিহোবাই হলেন “একমাত্র প্রজ্ঞাবান্‌।” (রোমীয় ১৬:২৭) নিখিলবিশ্ব সম্বন্ধে যা-কিছু জানা প্রয়োজন, যার অন্তর্ভুক্ত এর গঠন ও ইতিহাস, সমস্তই তিনি জানেন। প্রকৃতির বিভিন্ন ভৌত আইন—যেগুলোর ওপর মানুষ তাদের গবেষণার জন্য নির্ভর করে—সমস্তই যিহোবা তৈরি করেছেন। তাই, তিনি মনুষ্যনির্মিত আবিষ্কারগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হন না আর তিনি মানব দর্শনবিদ্যার তথাকথিত মহৎ চিন্তাভাবনার দ্বারা মুগ্ধ হন না। “এই জগতের যে জ্ঞান” বা প্রজ্ঞা “তাহা ঈশ্বরের নিকটে মূর্খতা।”—১ করি. ৩:১৯.

বাইবেল আমাদের বলে যে, যিহোবা তাঁর দাসদেরকে “প্রজ্ঞা দান করেন।” (হিতো. ২:৬) মানব দর্শনবিদ্যার বৈসাদৃশ্যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা প্রজ্ঞা অস্পষ্ট নয়। এর পরিবর্তে, এটা গভীর বিচারবুদ্ধির ওপর জোর দেয় এবং এর ভিত্তি হচ্ছে সঠিক জ্ঞান ও বোধগম্যতা। (পড়ুন, যাকোব ৩:১৭.) প্রেরিত পৌল যিহোবার প্রজ্ঞা দেখে চমৎকৃত হয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়!” (রোমীয় ১১:৩৩) যিহোবা সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান বলে আমরা নিশ্চিত যে, তাঁর আইনগুলো আমাদেরকে জীবনের সর্বোত্তম পথে পরিচালনা দেয়। সর্বোপরি, আমাদের সুখী হওয়ার জন্য যা-কিছু প্রয়োজন, তা অন্য যেকারো চেয়ে যিহোবা আরও ভালো জানেন।—হিতো. ৩:৫, ৬.

যিশু—‘দক্ষ কর্মী’

৪. একটা উপায় কী, যে-উপায়ে আমরা যিহোবার প্রজ্ঞা বুঝতে পারি?

যিহোবার প্রজ্ঞা ও সেইসঙ্গে তাঁর অন্যান্য অদ্বিতীয় গুণ, তিনি যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন, তাতে দেখা যেতে পারে। (পড়ুন, রোমীয় ১:২০.) যিহোবার সবচেয়ে বড়ো সৃষ্টিকর্ম থেকে শুরু করে অতি ক্ষুদ্র সৃষ্টিকর্মগুলো, তাঁর ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে প্রকাশ করে। আমরা যে-দিকেই তাকাই না কেন—তা সেটা স্বর্গে বা পৃথিবীতে—আমরা আমাদের সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান ও প্রেমময় সৃষ্টিকর্তার প্রচুর প্রমাণ খুঁজে পাই। তিনি যা-কিছু নির্মাণ করেছেন, সেগুলো বিবেচনা করার দ্বারা আমরা তাঁর সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পারি।—গীত. ১৯:১; যিশা. ৪০:২৬.

৫, ৬. (ক) যিহোবা ছাড়া সৃষ্টিতে আর কে জড়িত ছিলেন? (খ) আমরা কী বিবেচনা করব এবং কেন?

“আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি” করার সময় যিহোবা একা ছিলেন না। (আদি. ১:১) বাইবেল ইঙ্গিত করে যে, ভৌত সৃষ্টি শুরু হওয়ার বহু আগেই তিনি একজন আত্মিক ব্যক্তিকে সৃষ্টি করেছিলেন, যাঁর মাধ্যমে তিনি “যে কিছু আছে” সবই গঠন করেছিলেন। সেই আত্মিক প্রাণী ছিলেন ঈশ্বরের একজাত পুত্র—“সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত“—যিনি পরে মনুষ্য যিশু হিসেবে পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন। (কল. ১:১৫-১৭) যিহোবার মতো, যিশুও প্রজ্ঞার অধিকারী। বস্তুতপক্ষে, হিতোপদেশ ৮ অধ্যায়ে তাঁকে ব্যক্তিরূপে মূর্ত প্রজ্ঞা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। বাইবেলের সেই অধ্যায় যিশুকে ঈশ্বরের “কার্য্যকারী [‘দক্ষ কর্মী,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]” হিসেবেও উল্লেখ করে।—হিতো. ৮:১২, ২২-৩১.

তাই, ভৌত সৃষ্টি যিহোবা ও তাঁর দক্ষ কর্মী যিশু, উভয়ের প্রজ্ঞা সম্বন্ধে প্রকাশ করে। এতে আমাদের জন্য কিছু মূল্যবান শিক্ষা রয়েছে। আসুন আমরা সৃষ্ট বিষয়গুলো থেকে চারটে উদাহরণ বিবেচনা করি, যেগুলোকে হিতোপদেশ ৩০:২৪-২৮ পদে “বড় বুদ্ধি ধরে [“প্রবৃত্তিগতভাবে বুদ্ধিমান,” NW]” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। *

পরিশ্রমী হওয়ার বিষয়ে এক শিক্ষা

৭, ৮. পিঁপড়ে সম্বন্ধে কোন তথ্যগুলো আপনাকে মুগ্ধ করে?

এমনকী যেগুলোকে “পৃথিবীতে . . . অতি ক্ষুদ্র” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর নকশা ও কার্যকলাপ যখন আমরা পরীক্ষা করে দেখি, তখন সেগুলো আমাদের শিক্ষা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, পিঁপড়ের ‘প্রবৃত্তিগত বুদ্ধি’ সম্বন্ধে বিবেচনা করুন।—পড়ুন, হিতোপদেশ ৩০:২৪, ২৫.

কিছু গবেষক মনে করে যে, প্রত্যেক মানুষের জন্য মাথাপিছু কমপক্ষে ২,০০,০০০ পিঁপড়ে রয়েছে আর এরা সবাই মাটির ওপরে ও নীচে কঠোর পরিশ্রম করায় ব্যস্ত থাকে। পিঁপড়েরা কলোনির মধ্যে সংগঠিত থাকে এবং অধিকাংশ কলোনিতে তিন ধরনের পিঁপড়ে পাওয়া যেতে পারে: রানি, পুরুষ ও কর্মী পিঁপড়ে। প্রত্যেক দল নিজের মতো করে কলোনির প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিয়ে থাকে। দক্ষিণ আমেরিকার এক নির্দিষ্ট প্রজাতির পিঁপড়ে পাতা কাটে বলে তাদেরকে দক্ষ মালী বলা যেতে পারে। এই ক্ষুদ্র পতঙ্গ বাগানকে উর্বর করে, প্রতিস্থাপন করে এবং এর ছত্রাকগুলোকে ছেঁটে দেয়, যা উৎপাদনকে সর্বাধিক করে তোলে। গবেষকরা দেখেছে যে, এই দক্ষ “মালী” কলোনিতে যে-পরিমাণ খাবারের প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী নিজ প্রচেষ্টাকে সমন্বয় করে থাকে। *

৯, ১০. কীভাবে আমরা পিঁপড়েদের পরিশ্রম করার বিষয়টা অনুকরণ করতে পারি?

আমরা পিঁপড়েদের কাছ থেকে শিখতে পারি। সেগুলো আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যদি আমরা উত্তম ফল উৎপন্ন করতে চাই, তাহলে অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টার প্রয়োজন। বাইবেল আমাদের বলে: “হে অলস, তুমি পিপীলিকার কাছে যাও, তাহার ক্রিয়া সকল দেখিয়া জ্ঞানবান হও। তাহার বিচারকর্ত্তা কেহ নাই, শাসনকর্ত্তা কি অধ্যক্ষ কেহ নাই, তবু সে গ্রীষ্মকালে আপন খাদ্য প্রস্তুত করে, শস্য কাটিবার সময়ে ভক্ষ্য সঞ্চয় করে।” (হিতো. ৬:৬-৮) যিহোবা ও তাঁর দক্ষ কর্মী যিশু, উভয়েই পরিশ্রমী। “আমার পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন,” যিশু বলেছিলেন, “আমিও করিতেছি।”—যোহন ৫:১৭.

১০ ঈশ্বর ও খ্রিস্টের অনুকারী হিসেবে, আমাদেরও পরিশ্রমী হওয়া উচিত। ঈশ্বরের সংগঠনে আমাদের কার্যভার যা-ই হোক না কেন, আমাদের সকলের ‘প্রভুর কার্য্যে উপচিয়া পড়া’ উচিত। (১ করি. ১৫:৫৮) তাই, রোমের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে দেওয়া পৌলের এই উপদেশ আমাদের মেনে চলা উচিত: “যত্নে শিথিল হইও না, আত্মায় উত্তপ্ত হও, প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দাসত্ব কর।” (রোমীয় ১২:১১) যিহোবার ইচ্ছা পালন করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টাগুলো বৃথা নয় কারণ বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয়: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।”—ইব্রীয় ৬:১০.

আধ্যাত্মিক ক্ষতি থেকে সুরক্ষা

১১. ভোঁদড়-জাতীয় প্রাণীর কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করুন।

১১ শাফন বা ভোঁদড়-জাতীয় প্রাণী হল তুলনামূলকভাবে আরেকটা ক্ষুদ্র প্রাণী, যা আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিক্ষা দিতে পারে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩০:২৬.) এদেরকে দেখতে অনেকটা বড়ো খরগোশের মতো দেখায় কিন্তু এদের খাটো, গোল গোল কান ও ছোটো ছোটো পা রয়েছে। এই ক্ষুদ্র প্রাণীটা পাহাড়ি এলাকায় বাস করে। ভোঁদড়-জাতীয় প্রাণীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি এদের সুরক্ষা প্রদান করে এবং এর পর্বতসংকুল বাসস্থানের গর্ত ও ফাটলগুলো এদেরকে শিকারিদের হাত থেকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে। ভোঁদড়-জাতীয় প্রাণী ঐক্যবদ্ধ সমাজের মধ্যে বৃদ্ধি লাভ করার জন্য তৈরি, যা সুরক্ষা প্রদান করে এবং এদের শীতকালে উষ্ণ থাকতে সাহায্য করে। *

১২, ১৩. ভোঁদড়-জাতীয় প্রাণীর কাছ থেকে আমরা কী কী শিখতে পারি?

১২ ভোঁদড়-জাতীয় প্রাণীর কাছ থেকে আমরা কী শিখি? প্রথমত লক্ষ করুন যে, এই প্রাণী আক্রমণের মুখে নিজেকে অরক্ষিত রাখে না। এর পরিবর্তে, এরা বহু দূর থেকে শিকারিদের দেখার জন্য এদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তিকে ব্যবহার করে এবং গর্ত ও ফাটলগুলোর কাছাকাছি থাকে, যেগুলো জীবনরক্ষাকারী আশ্রয় প্রদান করতে পারে। অনুরূপভাবে, আমাদের তীক্ষ্ণ আধ্যাত্মিক দৃষ্টিশক্তি থাকা প্রয়োজন যাতে আমরা শয়তানের জগতে যে-বিপদগুলো ওত পেতে আছে, সেগুলোকে বুঝতে পারি। প্রেরিত পিতর খ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক; তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।” (১ পিতর ৫:৮) যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি জেগে বা সতর্ক ছিলেন, তাঁর নীতিনিষ্ঠা ভাঙার জন্য শয়তান যেসমস্ত প্রচেষ্টা করেছিল, সেগুলোর সমস্তকিছুর বিরুদ্ধে সাবধান ছিলেন। (মথি ৪:১-১১) যিশু তাঁর অনুসারীদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন!

১৩ একটা যে-উপায়ে আমরা সতর্ক থাকতে পারি তা হল, সেই আধ্যাত্মিক সুরক্ষার সদ্‌ব্যবহার করে, যা যিহোবা আমাদের কাছে প্রাপ্তিসাধ্য করেছেন। ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করা ও খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত থাকাকে আমাদের উপেক্ষা করা উচিত নয়। (লূক ৪:৪; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) অধিকন্তু, ঠিক যেভাবে ভোঁদড়-জাতীয় প্রাণী ঐক্যবদ্ধ সমাজের মধ্যে বৃদ্ধি লাভ করে, তেমনই আমাদের সহখ্রিস্টানদের সান্নিধ্যে থাকতে হবে, যাতে আমরা তাদের সঙ্গে থেকে “উভয় পক্ষের . . . আশ্বাস” বা উৎসাহ লাভ করতে পারি। (রোমীয় ১:১২) যিহোবার সুরক্ষা লাভ করার জন্য আমাদের যা-কিছু করা প্রয়োজন, তা করার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা গীতরচক দায়ূদের সঙ্গে একমত, যিনি লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু মম শৈল, মম দুর্গ, ও মম রক্ষাকর্ত্তা, মম ঈশ্বর, মম দৃঢ় শৈল, আমি তাঁহার শরণাগত।”—গীত. ১৮:২.

বিরোধিতা সত্ত্বেও অধ্যবসায়ী হওয়া

১৪. যদিও শুধুমাত্র একটা পঙ্গপাল ছাপ না-ও ফেলতে পারে কিন্তু পঙ্গপালের ঝাঁক সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে?

১৪ এ ছাড়া, আমরা পঙ্গপালের কাছ থেকেও শিখতে পারি। একটা পঙ্গপাল, যেটার দৈর্ঘ্য মাত্র ৫ সেন্টিমিটার, সেটাকে দেখে হয়তো ভয় না-ও লাগতে পারে কিন্তু পঙ্গপালের ঝাঁক দেখে ভয় লাগার কথা। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩০:২৭.) অত্যন্ত ক্ষুধার্ত হিসেবে পরিচিত এই অদম্য পতঙ্গরা খুব দ্রুতগতিতে পাকা ফসলের খেতকে ধ্বংস করে দিতে পারে। বাইবেল পঙ্গপালসহ অগ্রসরমান পতঙ্গের ঝাঁকের আওয়াজকে রথের শব্দ এবং নাড়া দগ্ধকারী অগ্নিশিখার সঙ্গে তুলনা করে। (যোয়েল ২:৩, ৫) অগ্রসরমান পঙ্গপালের ঝাঁককে রোধ করার চেষ্টায় মানুষ আগুন ধরায় কিন্তু এগুলো সাধারণত নিষ্ফল হয়ে থাকে। কেন? মৃত পঙ্গপালের দেহ দ্বারা আগুনের শিখা নিভে যায় আর এরপর পরে বেঁচে যাওয়া পঙ্গপালের ঝাঁক নির্বিঘ্নে চলতে থাকে। এমনকী একজন রাজা বা একজন শাসক ছাড়াই, সামরিক দক্ষতার সঙ্গে পঙ্গপালের একটা ঝাঁক যেকোনো বাধাকে অতিক্রম করতে পারে। *যোয়েল ২:২৫.

১৫, ১৬. কীভাবে আধুনিক দিনের রাজ্য ঘোষণাকারীরা পঙ্গপালের ঝাঁকের মতো?

১৫ ভাববাদী যোয়েল যিহোবার দাসদের কার্যকলাপকে পঙ্গপালের কাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি লিখেছিলেন: “তাহারা বীরগণের ন্যায় দৌড়ে, যোদ্ধাদের ন্যায় প্রাচীরে উঠে, প্রত্যেক জন আপন আপন পথে অগ্রসর হয়, আপনাদের মার্গ জটিল করে না। তাহারা এক জন অন্যের উপরে চাপাচাপি করে না; সকলেই আপন আপন মার্গে অগ্রসর হয়, এবং শূলাগ্রের উপরে পড়িলেও ভগ্নপঙ্‌ক্তি হয় না।”—যোয়েল ২:৭, ৮.

১৬ এই ভবিষ্যদ্‌বাণী আধুনিক দিনের ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষকদের বিষয়ে কত উত্তমভাবেই না বর্ণনা করে! বিরোধিতার কোনো ‘প্রাচীর’ তাদের প্রচার কাজকে থামাতে সক্ষম হয়নি। এর পরিবর্তে, তারা যিশুকে অনুকরণ করে, যিনি অনেকের দ্বারা অবজ্ঞাত হওয়া সত্ত্বেও ক্রমাগত ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছিলেন। (যিশা. ৫৩:৩) এটা ঠিক যে, কিছু খ্রিস্টান তাদের বিশ্বাসের কারণে শহিদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করে ‘শূলাগ্রের উপরে পড়িয়াছে।’ তা সত্ত্বেও, প্রচার কাজ ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে আর রাজ্য ঘোষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বাস্তবিকপক্ষে, তাড়না প্রায়ই সেই লোকেদের কাছে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে, যারা এই উপায়ে না হলে অন্য আর কোনোভাবে রাজ্যের বার্তা শুনতে পারত না। (প্রেরিত ৮:১, ৪) আপনার ব্যক্তিগত পরিচর্যায়, আপনি কি পঙ্গপালের মতো অধ্যবসায়ী—এমনকী উদাসীনতা ও বিরোধিতার মুখেও?—ইব্রীয় ১০:৩৯.

“যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হও”

১৭. টিকটিকির পা কেন মসৃণ তলের সঙ্গে লেগে থাকে?

১৭ ক্ষুদ্র টিকটিকি মহাকর্ষ শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হয় না বলে মনে হয়। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩০:২৮.) বস্তুতপক্ষে, এই ক্ষুদ্র প্রাণী যেভাবে দেওয়ালের ওপর ও এমনকী পড়ে না গিয়ে মসৃণ ছাদের নীচের পিঠ দিয়ে দ্রুত ছুটে যায়, তা দেখে বিজ্ঞানীরা আশ্চর্য হয়ে গিয়েছে। টিকটিকি কীভাবে তা করে থাকে? এর রহস্যটি কোনো ভ্যাকুয়াম থলি অথবা কোনো ধরনের আঠার মধ্যে লুকিয়ে নেই। এর পরিবর্তে, টিকটিকির পায়ের প্রত্যেকটা আঙুলে খাঁজকাটা এক রকমের তুলতুলে অংশ রয়েছে, যেখানে অসংখ্য খাড়া খাড়া লোম রয়েছে। আবার এইরকম খাড়া খাড়া লোমের ডগায় শত শত পিরিচাকৃতি আঁশ রয়েছে। এই সমস্ত আঁশের মধ্যে বিদ্যমান আন্তঃআণবিক শক্তিই টিকটিকির শরীরের ওজনের চেয়ে বেশি ওজনকে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট—এমনকী যখন এটা কাচের মসৃণ তলের ওপর উলটোভাবে ঝুলে থাকে, তখনও! টিকটিকির ক্ষমতা দেখে কৌতূহলী হয়ে গবেষকরা বলে যে, টিকটিকির পা-কে নকল করে তৈরি সিনথেটিক বস্তুগুলোকে এক মজবুত আঠালো পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। *

১৮. কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমরা সবসময় ‘যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হই’?

১৮ টিকটিকির কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? বাইবেল আমাদের জোরালো উপদেশ দেয়: “যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা কর; যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হও।” (রোমীয় ১২:৯) শয়তানের জগতে বিদ্যমান ক্ষতিকর প্রভাবগুলো, ঈশ্বরীয় নীতিগুলোকে আমাদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের নিয়মগুলো মেনে চলে না এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করা—তা সেটা স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে বা কোনো ধরনের অশাস্ত্রীয় আমোদপ্রমোদ, যেটার মাধ্যমেই হোক না কেন—যা সঠিক, তা করার ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সেটা যেন আপনার প্রতি না ঘটে! ঈশ্বরের বাক্য সাবধান করে: “আপনার দৃষ্টিতে জ্ঞানবান হইও না।” (হিতো. ৩:৭) এর পরিবর্তে, প্রাচীনকালে ঈশ্বরের লোকেদেরকে মোশির দেওয়া এই বিজ্ঞ পরামর্শ মেনে চলুন: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিবে; তাঁহারই সেবা করিবে, তাঁহাতেই আসক্ত থাকিবে।” (দ্বিতীয়. ১০:২০) যিহোবার প্রতি আসক্ত থেকে আমরা যিশুকে অনুকরণ করব, যাঁর সম্বন্ধে এই কথা বলা হয়েছিল: “তুমি ধার্ম্মিকতাকে প্রেম, ও দুষ্টতাকে ঘৃণা করিয়াছ।”—ইব্রীয় ১:৯.

সৃষ্টি থেকে শিক্ষাগুলো

১৯. (ক) সৃষ্টির মধ্যে আপনি যিহোবার কোন গুণাবলি দেখতে পান? (খ) ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা আমাদের কীভাবে উপকৃত করতে পারে?

১৯ আমরা যেমন দেখেছি, যিহোবার গুণাবলি তিনি যা-কিছু নির্মাণ করেছেন, সেগুলোতে স্পষ্ট বোধগম্য হয় আর তাঁর সৃষ্টিও আমাদের জন্য মূল্যবান শিক্ষাগুলো প্রদান করে। যিহোবার কাজগুলো আমরা যত বেশি পরীক্ষা করি, তাঁর প্রজ্ঞা দেখে আমরা তত বেশি চমৎকৃত হই। ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞার প্রতি মনোযোগ দেওয়া এখন আমাদের সুখকে গভীর করবে এবং ভবিষ্যতে সুরক্ষা দেবে। (উপ. ৭:১২) হ্যাঁ, আমরা ব্যক্তিগতভাবে হিতোপদেশ ৩:১৩, ১৮ পদে প্রাপ্ত আশ্বাসের সত্যতা উপভোগ করব, যা বলে: “ধন্য [“সুখী,” NW] সেই ব্যক্তি যে প্রজ্ঞা পায়, সেই ব্যক্তি যে বুদ্ধি লাভ করে; যাহারা তাহাকে ধরিয়া রাখে, তাহাদের কাছে তাহা জীবনবৃক্ষ; যে কেহ তাহা গ্রহণ করে, সে ধন্য [“সুখী,” NW]।”

[পাদটীকাগুলো]

^ বিশেষ করে, অল্পবয়সিরা হয়তো পাদটীকায় উল্লেখিত রেফারেন্সগুলো খুঁজে দেখা উপভোগ করতে পারে আর এরপর মণ্ডলীতে প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন-এ যখন এই প্রবন্ধ আলোচিত হয়, তখন তাদের গবেষণাকৃত তথ্যের ওপর মন্তব্য করতে পারে।

^ যে-পিঁপড়েরা পাতা কাটে, সেগুলোর বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য ১৯৯৭ সালের ২২ মার্চ এবং ২০০২ সালের ২২ মে সংখ্যার সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকাগুলোর ৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ভোঁদড়-জাতীয় প্রাণী সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য ১৯৯০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সংখ্যার সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১৫-১৬ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ পঙ্গপালের বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য ১৯৭৬ সালের ২২ অক্টোবর সংখ্যার সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১১ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ টিকটিকির ওপর আরও তথ্যের জন্য ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ২৬ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

কোন ব্যবহারিক শিক্ষা আমরা লাভ করতে পারি . . .

• পিঁপড়ের কাছ থেকে?

• ভোঁদড়-জাতীয় প্রাণীর কাছ থেকে?

• পঙ্গপালের কাছ থেকে?

• টিকটিকির কাছ থেকে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি সেই পিঁপড়েদের মতো পরিশ্রমী, যেগুলো পাতা কাটে?

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ভোঁদড়-জাতীয় প্রাণী ঐক্যবদ্ধ সমাজের মধ্যে সুরক্ষা খোঁজে। আপনিও কি তা-ই করেন?

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পঙ্গপালদের মতো, খ্রিস্টান পরিচারকরা অধ্যবসায় প্রদর্শন করে

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঠিক যেমন টিকটিকি তলের সঙ্গে আসক্ত বা লেগে থাকে, তেমনই খ্রিস্টানরা যা ভালো, তাতে আসক্ত থাকে

[সৌজন্যে]

Stockbyte/Getty Images