ইত্তয়ের আনুগত্য অনুকরণ করুন
ইত্তয়ের আনুগত্য অনুকরণ করুন
“মহৎ ও আশ্চর্য্য তোমার ক্রিয়া সকল, হে প্রভু ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্; ন্যায্য ও সত্য তোমার মার্গ সকল, হে জাতিগণের রাজন! হে প্রভু, কে না ভীত হইবে? এবং তোমার নামের গৌরব কে না করিবে? কেননা একমাত্র তুমিই সাধু [“অনুগত,” NW]।” স্বর্গে গাওয়া এই গীত ঈশ্বরের আনুগত্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা সেই ব্যক্তিরা গেয়েছিল, ‘যাহারা সেই পশু ও তাহার প্রতিমার উপরে বিজয়ী হইয়াছে।’ (প্রকা. ১৫:২-৪) যিহোবা চান যেন তাঁর উপাসকরা এই কাঙ্ক্ষিত গুণটি প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে তাঁকে অনুকরণ করে।
অন্যদিকে, শয়তান দিয়াবল পৃথিবীতে ঈশ্বরের দাসদেরকে, তারা যাঁর উপাসনা করে, সেই ঈশ্বরের প্রেম থেকে পৃথক করার জন্য তার যথাসাধ্য করে। তা সত্ত্বেও, অনেকেই এমনকী অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতেও ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছে। যিহোবা এইরকম ভক্তিকে উচ্চমূল্য দিয়ে থাকেন বলে আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি! প্রকৃতপক্ষে, আমাদেরকে এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে: “সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন; তিনি আপন সাধুগণকে [“অনুগত ব্যক্তিদের,” NW] পরিত্যাগ করেন না।” (গীত. ৩৭:২৮) আমাদেরকে অনুগত থাকার জন্য সাহায্য করতে তিনি তাঁর বাক্যে অনেক অনুগত ব্যক্তির কার্যাবলির নথি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। গাতীয় ইত্তয়ের বিবরণ হল সেইরকমই এক বিবরণ।
একজন “বিদেশী ও নির্বাসিত লোক”
ইত্তয় খুব সম্ভবত বিখ্যাত পলেষ্টীয় নগর গাতের একজন অধিবাসী ছিলেন, যা দৈত্যাকৃতি গলিয়াৎ ও ইস্রায়েলের অন্যান্য ভয়ংকর শত্রুর জন্মভূমি। কোনো পরিচিতি ছাড়াই, রাজা দায়ূদের বিরুদ্ধে অবশালোমের বিদ্রোহের সময়ে বাইবেলের বিবরণে ইত্তয়ের নাম পাওয়া যায়। ইত্তয় এবং তার অনুসারী ৬০০ জন পলেষ্টীয় লোক সেই সময়ে যিরূশালেমের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নির্বাসিত অবস্থায় ছিল।
ইত্তয় ও তার অনুসারীদের পরিস্থিতি সম্ভবত দায়ূদকে একজন নির্বাসিত পলাতক হিসেবে তার নিজের দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল, যখন তিনি ও ৬০০ জন ইস্রায়েলীয় যোদ্ধা পলেষ্টীয়দের এলাকায় চলে গিয়েছিলেন এবং গাতের রাজা আখীশের এলাকায় প্রবেশ করেছিলেন। (১ শমূ. ২৭:২, ৩) দায়ূদ যখন তার ছেলে অবশালোমের বিদ্রোহের মুখোমুখি হন, তখন ইত্তয় ও তার লোকেরা কী করবে? তারা কি অবশালোমের পক্ষ নেবে, নিরপেক্ষ থাকবে নাকি দায়ূদ ও তার লোকেদের সঙ্গে যোগ দেবে?
দৃশ্যটা কল্পনা করুন, যেন দায়ূদ যিরূশালেম থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন, তারপর বৈৎমির্হক নামক এক স্থানে গিয়ে থামেন, যার অর্থ হল “দূরবর্তী গৃহ।” কিদ্রোণ উপত্যকা পার হওয়ার আগে জৈতুন পর্বতের দিকে সম্ভবত এটাই ছিল যিরূশালেমের শেষ ঘর। (২ শমূ. ১৫:১৭) এখানে দায়ূদ তার সৈন্যদল অগ্রসর হওয়ার সময় তাদের পুনরায় পর্যবেক্ষণ করেন। আর দেখুন! তার সঙ্গে শুধুমাত্র অনুগত ইস্রায়েলীয়রাই নয় কিন্তু সমস্ত করেথীয় ও পলেথীয় লোকও রয়েছে। অধিকন্তু, সেখানে সমস্ত গাতীয় লোক—ইত্তয় ও তার ৬০০ জন যোদ্ধা—রয়েছে।—২ শমূ. ১৫:১৮.
আন্তরিক সহমর্মিতার সঙ্গে দায়ূদ ইত্তয়কে বলেন: “আমাদের সঙ্গে তুমিও কেন যাইবে? তুমি ফিরিয়া গিয়া রাজার [স্পষ্টতই অবশালোমকে বুঝিয়েছিলেন] সহিত বাস কর, কেননা তুমি বিদেশী এবং নির্ব্বাসিত লোক, তুমি স্বস্থানে ফিরিয়া যাও। তুমি কল্যমাত্র আসিয়াছ, অদ্য আমি কি তোমাকে আমাদের সহিত ভ্রমণ করাইব? আমি যেখানে পারি, সেখানে যাইব; তুমি ফিরিয়া যাও; আপন ভ্রাতৃগণকেও লইয়া যাও; দয়া ও সত্য তোমার সহবর্ত্তী হউক।”—২ শমূ. ১৫:১৯, ২০.
ইত্তয় তার অটল আনুগত্য সম্বন্ধে জানান। তিনি উত্তর দেন: “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য এবং আমার প্রভু মহারাজের প্রাণের দিব্য, জীবনের জন্য হউক, কিম্বা মরণের জন্য হউক, আমার প্রভু মহারাজ যে স্থানে থাকিবেন, আপনার দাসও সেই স্থানে অবশ্য থাকিবে।” (২ শমূ. ১৫:২১) এটা দায়ূদকে হয়তো তার প্রপিতামহী রূতের বলা একইরকম কথাগুলো মনে করিয়ে দিয়েছিল। (রূৎ. ১:১৬, ১৭) ইত্তয়ের কথাগুলো তার হৃদয়কে স্পর্শ করে আর তাই দায়ূদ তাকে বলেন: “তবে চল,” কিদ্রোণ উপত্যকার মধ্যে দিয়ে “অগ্রসর হও।” এর ফলে, “গাতীয় ইত্তয়, তাঁহার সমস্ত লোক ও সঙ্গী সমস্ত বালকবালিকা অগ্রসর হইয়া গেল।”—২ শমূ. ১৫:২২.
“আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে”
রোমীয় ১৫:৪ পদ বলে, “পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল।” তাই, আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত, ইত্তয়ের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? কোন বিষয়টা হয়তো তাকে দায়ূদের প্রতি অনুগত থাকতে অনুপ্রাণিত করেছিল, তা বিবেচনা করুন। যদিও তিনি পলেষ্টিয়া থেকে আসা একজন বিদেশি ও নির্বাসিত ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু ইত্তয় যিহোবাকে জীবন্ত ঈশ্বর এবং দায়ূদকে যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তি হিসেবে স্বীকার করেছিলেন। ইত্তয়, ইস্রায়েলীয় ও পলেষ্টীয়দের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতাকে ছাড়িয়ে দেখতে সমর্থ হয়েছিলেন। ইত্তয় দায়ূদকে কেবল পলেষ্টীয় বীর গলিয়াৎ এবং তার দেশের আরও অনেক লোকের হত্যাকারী হিসেবেই নয় বরং আরও বেশি কিছু হিসেবে দেখেছিলেন। (১ শমূ. ১৮:৬, ৭) ইত্তয় দায়ূদকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখেছিলেন, যিনি যিহোবাকে ভালোবাসতেন আর কোনো সন্দেহ নেই যে, তিনি দায়ূদের উল্লেখযোগ্য গুণগুলোকেও লক্ষ করেছিলেন। অন্যদিকে, ইত্তয়ের প্রতি দায়ূদের উচ্চসম্মান ছিল। তাই, অবশালোমের সৈন্যদলের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধে দায়ূদ এমনকী তার সৈন্যদলের এক-তৃতীয়াংশকে “ইত্তয়ের হস্তে” সমর্পণ করেছিলেন!—২ শমূ. ১৮:২.
আমাদেরও সংস্কৃতিগত, জাতিগত অথবা উপজাতিগত ভেদাভেদের—দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান যেকোনো কুসংস্কার এবং বিদ্বেষের—ঊর্ধ্বে দেখার প্রচেষ্টা করা এবং অন্যদের মধ্যে ভালো গুণগুলোকে শনাক্ত করা উচিত। দায়ূদ ও ইত্তয়ের মধ্যে যে-বন্ধন গড়ে উঠেছিল তা দেখায় যে, যিহোবাকে জানা ও তাঁকে ভালোবাসা আমাদেরকে এই ধরনের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে অতিক্রম করতে সাহায্য করতে পারে।
ইত্তয়ের উদাহরণ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সময় আমরা নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) ‘আমার আনুগত্য প্রমাণ করার জন্য আমি কতদূর পর্যন্ত কষ্ট সহ্য করতে ইচ্ছুক রয়েছি?’
মহান দায়ূদ খ্রিস্ট যিশুর প্রতি একইরকম আনুগত্য প্রদর্শন করি? আমি কি রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে উদ্যোগের সঙ্গে অংশ নেওয়ার দ্বারা আমার আনুগত্য দেখিয়ে থাকি?’ (ইত্তয়ের আনুগত্যের উদাহরণ নিয়ে ধ্যান করার দ্বারা পরিবারের মস্তকেরাও উপকৃত হয়। দায়ূদের প্রতি তার বশীভূত মনোভাব ও ঈশ্বরের অভিষিক্ত রাজার সঙ্গে যাওয়ার ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত, ইত্তয়ের লোকেদেরকে প্রভাবিত করেছিল। একইভাবে, সত্য উপাসনাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে পরিবারের মস্তকেরা যে-সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকে, তা তাদের পরিবারকে প্রভাবিত করে আর এমনকী হয়তো সাময়িকভাবে দুঃখকষ্টও নিয়ে আসে। তা সত্ত্বেও, আমাদেরকে এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে: “[সদাপ্রভু] দয়াবানের [“অনুগত ব্যক্তির,” NW] সহিত সদয় [“আনুগত্যের সঙ্গে,” NW] ব্যবহার করিবে।”—গীত. ১৮:২৫.
অবশালোমের সঙ্গে দায়ূদের যুদ্ধের পর, শাস্ত্র ইত্তয়ের বিষয়ে আর বেশি কিছু বলে না। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্যে তার সম্বন্ধে যে-সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে, তা দায়ূদের জীবনের সেই কঠিন সময়ে ইত্তয়ের চরিত্র সম্বন্ধে এক উল্লেখযোগ্য অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। অনুপ্রাণিত বিবরণে ইত্তয় সম্বন্ধে উল্লেখ করা প্রমাণ করে যে, যিহোবা এইরকম আনুগত্যকে উপলব্ধি ও পুরস্কৃত করেন।—ইব্রীয় ৬:১০.