স্বামীরা, খ্রিস্টের প্রেমকে অনুকরণ করুন!
স্বামীরা, খ্রিস্টের প্রেমকে অনুকরণ করুন!
পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষরাতে, যিশু তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের বলেছিলেন: “এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর। তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) বস্তুতপক্ষে, সত্য খ্রিস্টানদের একে অন্যকে ভালোবাসতে হবে।
খ্রিস্টের অনুসারীদের মধ্যে, সরাসরি স্বামীদের উদ্দেশে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফি. ৫:২৫) কীভাবে একজন খ্রিস্টান স্বামী তার বিবাহিত জীবনে এই শাস্ত্রীয় পরামর্শকে প্রয়োগ করতে পারেন, বিশেষ করে যখন তার স্ত্রী যিহোবার একজন উৎসর্গীকৃত সেবক হন?
খ্রিস্ট মণ্ডলীকে লালনপালন করেছিলেন
“স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য,” বাইবেল বলে। “আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে। কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে; যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন।” (ইফি. ৫:২৮, ২৯) যিশুর তাঁর শিষ্যদের প্রতি স্নেহ ছিল আর তিনি তাদেরকে প্রিয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করেছিলেন এবং তিনি তাদের লালনপালন করেছিলেন। এমনকী যদিও তারা অসিদ্ধ ছিল, তবুও তিনি তাদের প্রতি মৃদু ও সদয় ছিলেন। ‘মণ্ডলীকে প্রতাপান্বিত অবস্থায় উপস্থিত করিবার’ ইচ্ছায় তিনি তাঁর শিষ্যদের উত্তম গুণাবলির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন।—ইফি. ৫:২৭.
ঠিক যেমন খ্রিস্ট তাঁর মণ্ডলীর প্রতি প্রেম প্রকাশ করেছিলেন, তেমনই একজন স্বামীকে তার কথায় ও কাজে তার সাথির প্রতি প্রেম দেখাতে হবে। যে-স্ত্রী নিয়মিতভাবে তার স্বামীর ভালোবাসাপূর্ণ অভিব্যক্তিগুলো শুনতে পান, তিনি নিজেকে মূল্যবান ও সুখী মনে করেন। অন্যদিকে, একজন নারী এক সুসজ্জিত বাড়ির সমস্ত আরাম-আয়েশ পাওয়া সত্ত্বেও, খুবই অসুখী হতে পারেন, যদি কিনা তিনি তার বিবাহসাথির দ্বারা অবহেলিত বা অবজ্ঞাত হয়ে থাকেন।
কীভাবে একজন স্বামী দেখান যে, তিনি তার স্ত্রীকে লালনপালন করেন? জনসাধারণ্যে তিনি তার স্ত্রীকে অত্যন্ত মর্যাদাজনকভাবে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তার সমর্থন পাওয়ার বিষয়টার প্রকাশ্যে প্রশংসা করেন। পরিবার যে-সাফল্য উপভোগ করেছে, তাতে স্ত্রী যদি এক মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন, তাহলে স্বামী সেটা অন্যদেরকে জানাতে ইতস্তত করেন না। শুধু তারা দু-জনে থাকার সময় স্ত্রী তার স্বামীর ভালোবাসা উপলব্ধি করেন। একটু স্পর্শ, একটু হাসি, জড়িয়ে ধরা এবং দুটো মিষ্টি কথা হয়তো ছোটো বিষয় হতে পারে, কিন্তু সেগুলো একজন নারীর মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে থাকে।
“তাহাদিগকে ভ্রাতা বলিতে লজ্জিত নহেন”
খ্রিস্ট যিশু “[তাঁহার অভিষিক্ত অনুসারীদের] ভ্রাতা বলিতে লজ্জিত” ছিলেন না। (ইব্রীয় ২:১১, ১২, ১৭) আপনি যদি একজন খ্রিস্টান স্বামী হয়ে থাকেন, তাহলে মনে রাখবেন যে, আপনার স্ত্রী আপনার একজন খ্রিস্টান বোনও। যিহোবার প্রতি তার উৎসর্গীকরণ তার বিবাহ অঙ্গীকারের চেয়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার বিষয়, তা তিনি আপনাকে বিয়ে করার আগে বা পরে যখনই বাপ্তাইজিত হোন না কেন। মণ্ডলীর কোনো সভা পরিচালনা করছেন এমন একজন ভাই তার স্ত্রীকে কোনো মন্তব্য করতে বলার সময়, উপযুক্তভাবেই “বোন”—হিসেবে সম্বোধন করে থাকেন। শুধুমাত্র কিংডম হলেই তিনি আপনার বোন নন, কিন্তু বাড়িতেও। তার প্রতি বাড়িতেও ঠিক ততখানি সদয় ও বিনীত আচরণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যেমনটা কিংডম হলে করা হয়ে থাকে।
আপনার যদি মণ্ডলীতে সেবার কিছু বাড়তি সুযোগ থাকে, তাহলে আপনি হয়তো মাঝে মাঝে মণ্ডলীর ও পরিবারের
দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাকে কঠিন বলে মনে করতে পারেন। প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের মধ্যে উত্তম সহযোগিতা ও সমস্ত দায়িত্ব কার্যকারীভাবে ভাগ করে দেওয়া আপনাকে সেই বোনের জন্য আরেকটু সময় করে দেবে, যার—আপনার স্ত্রীর—আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। মনে রাখবেন যে, আপনাকে দেওয়া মণ্ডলীর দায়িত্বগুলো অন্য যেকোনো ভাইও সম্পাদন করতে পারবেন, কিন্তু বিবাহিত জীবনে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে জড়িত দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য আপনিই হলেন একমাত্র ভাই।অধিকন্তু, আপনি হলেন আপনার স্ত্রীর মস্তক। বাইবেল বলে: “প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ।” (১ করি. ১১:৩) কীভাবে আপনার এই মস্তকপদের অনুশীলন করা উচিত? ওপরে উল্লেখিত পদের কথাগুলো বার বার উদ্ধৃতি করার ও সম্মান দাবি করার মাধ্যমে নয়, কিন্তু প্রেমপূর্ণ উপায়ে। সঠিকভাবে মস্তকপদ অনুশীলনের চাবিকাঠি হচ্ছে, আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আচরণ করার সময় যিশু খ্রিস্টকে অনুকরণ করা।—১ পিতর ২:২১.
“তোমরা আমার বন্ধু”
যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে তাঁর বন্ধু বলেছিলেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে আর দাস বলি না, কেননা প্রভু কি করেন, দাস তাহা জানে না; কিন্তু তোমাদিগকে আমি বন্ধু বলিয়াছি, কারণ আমার পিতার নিকটে যাহা যাহা শুনিয়াছি, সকলই তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছি।” (যোহন ১৫:১৪, ১৫) যিশু ও তাঁর শিষ্যদের মধ্যে উত্তম ভাববিনিময় ছিল। তারা বিভিন্ন কাজও একসঙ্গে করেছিল। কান্না নগরের বিবাহভোজে “যীশুর ও তাঁহার শিষ্যগণেরও” নিমন্ত্রণ ছিল। (যোহন ২:২) তাদের বিভিন্ন পছন্দের জায়গাও ছিল, যেমন গেৎশিমানী বাগান। বাইবেল বলে যে, “যীশু অনেক বার আপন শিষ্যগণের সঙ্গে সেই স্থানে একত্র হইতেন।”—যোহন ১৮:২.
একজন স্ত্রী যেন এইরকম অনুভব করেন যে, তিনিই হলেন তার স্বামীর সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এটা কতই না গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বামী ও স্ত্রীরা একসঙ্গে জীবন উপভোগ করে! একসঙ্গে ঈশ্বরকে সেবা করুন। একসঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে আনন্দ লাভ করুন। একসঙ্গে সময় কাটান—একসঙ্গে হাঁটতে যান, কথা বলুন, খাওয়াদাওয়া করুন। শুধু একজন বিবাহসঙ্গীই হবেন না, কিন্তু প্রিয় বন্ধুও হোন।
তিনি “তাহাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিলেন”
যিশু ‘তাঁহার শিষ্যদিগকে শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিলেন।’ (যোহন ১৩:১) কিছু কিছু স্বামী এই ক্ষেত্রে খ্রিস্টকে অনুকরণ করতে ব্যর্থ হয়। তারা এমনকী ‘তাহাদের যৌবনকালীন স্ত্রীকে’ ত্যাগ করে, হয়তো অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সি কারো জন্য।—মালাখি ২:১৪, ১৫.
কেউ কেউ, যেমন ভিলি নামের একজন স্বামী, খ্রিস্টকে অনুকরণ করেন। খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে ভিলির স্ত্রীর অনেক বছর ধরে অবিরত যত্নের প্রয়োজন ছিল। ভিলি এই বিষয়ে কেমন বোধ করেছিলেন? তিনি বলেছিলেন: “আমি আমার স্ত্রীকে সবসময়ই ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি উপহার হিসেবে বিবেচনা করেছি এবং তাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করেছি। তা ছাড়া ৬০ বছর আগে, সুসময় ও দুঃসময় উভয় সময়েই তার যত্ন নেব বলে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আমি সেই প্রতিজ্ঞা কখনোই ভুলে যাব না।”
খ্রিস্টান স্বামীরা, খ্রিস্টের প্রেমকে অনুকরণ করুন। আপনার ঈশ্বরভয়শীল স্ত্রীকে—আপনার বোন ও বন্ধুকে—লালনপালন করুন।
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনার স্ত্রী কি আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু?
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
‘স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর’