সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘ইহাঁর মধ্যে গুপ্ত’ ধন খুঁজে পাওয়া

‘ইহাঁর মধ্যে গুপ্ত’ ধন খুঁজে পাওয়া

‘ইহাঁর মধ্যে গুপ্ত’ ধন খুঁজে পাওয়া

“ইহাঁর মধ্যে জ্ঞানের ও বিদ্যার [“প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] সমস্ত নিধি গুপ্ত রহিয়াছে।”—কল. ২:৩.

১, ২. (ক) ১৯২২ সালে কোন নিদর্শনগুলো আবিষ্কার করা হয়েছিল আর সেগুলো এখন কোথায় রয়েছে? (খ) ঈশ্বরের বাক্য সকলকে কোন আমন্ত্রণ জানায়?

 গুপ্তধন আবিষ্কারের বিষয়টা প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে কয়েক দশক কঠোর পরিশ্রম করার পর ১৯২২ সালে, ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার এক রোমাঞ্চকর আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি ফরৌণ তুতাংখামেনের প্রায় অক্ষত রাজকীয় কবরটা খুঁজে পেয়েছিলেন, যেটার মধ্যে ৫,০০০-এর মতো বিভিন্ন জিনিসপত্র ছিল।

কার্টারের আবিষ্কার যত চমকপ্রদই হোক না কেন, তার দ্বারা আবিষ্কৃত বেশিরভাগ নিদর্শনই এখন জাদুঘর অথবা ব্যক্তিগত সংগ্রহশালাগুলোতে রয়েছে। সেগুলোর হয়তো কোনো ঐতিহাসিক অথবা শৈল্পিক মূল্য থাকতে পারে কিন্তু আমাদের রোজকার জীবনে সেগুলোর খুব সামান্যই প্রভাব রয়েছে বা বলতে গেলে কোনো প্রভাবই নেই। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের এমন ধন খোঁজার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, যা সত্যিই আমাদেরকে প্রভাবিত করে। সেই আমন্ত্রণ সকলের জন্য আর এর পুরস্কার যেকোনো বস্তুগত ধনের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান।—পড়ুন, হিতোপদেশ ২:১-৬.

৩. যিহোবা তাঁর উপাসকদের যে-ধন অন্বেষণ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেন, তা কোন কোন দিক দিয়ে উপকারজনক?

সেই সমস্ত ধনের মূল্য সম্বন্ধে বিবেচনা করুন, যেগুলো যিহোবা তাঁর উপাসকদের অন্বেষণ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেন। এইরকম ধনের মধ্যে রয়েছে “সদাপ্রভুর ভয়,” যা এই বিপদজনক সময়ে আমাদের জন্য এক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা হতে পারে। (গীত. ১৯:৯) “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” খুঁজে পাওয়া যেকোনো মানুষের জন্য সবচেয়ে বড়ো সম্মান নিয়ে আসতে পারে আর তা হল, পরাৎপরের সঙ্গে এক নিকট ব্যক্তিগত সম্পর্ক। আর ঈশ্বরদত্ত প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বিচক্ষণতার মতো ধন থাকলে আমরা আমাদের রোজকার জীবনের সমস্যা এবং উদ্‌বিগ্নতাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সমর্থ হব। (হিতো. ৯:১০, ১১) কীভাবে আমরা এই মূল্যবান ধন খুঁজে পেতে পারি?

আধ্যাত্মিক ধন খুঁজে পাওয়া

৪. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিজ্ঞাত ধন খুঁজে পেতে পারি?

প্রত্নতত্ত্ববিদ ও অন্যান্য আবিষ্কারক, যাদেরকে প্রায়ই ধনের জন্য দূরদূরান্তে অনুসন্ধান করতে হয়, তাদের বিপরীতে আমরা জানি যে, ঠিক কোথায় আধ্যাত্মিক ধন খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। ঈশ্বরের বাক্য, ধনসম্পদের অবস্থান নির্দেশকারী একটা মানচিত্রের মতো, যেটি আমাদেরকে সেই সঠিক স্থানে নিয়ে যায়, যেখানে আমরা ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিজ্ঞাত নিধি বা ধন খুঁজে পেতে পারব। খ্রিস্টকে নির্দেশ করে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ইহাঁর মধ্যে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের সমস্ত নিধি গুপ্ত রহিয়াছে।” (কল. ২:৩) এই কথাগুলো পড়ার সময়, আমরা হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘কেন আমাদের সেই ধনের অন্বেষণ করা উচিত? কীভাবে তা খ্রিস্টের ‘মধ্যে গুপ্ত রহিয়াছে’? আর কীভাবে আমরা তা খুঁজে পেতে পারি?’ এই উত্তরগুলো পাওয়ার জন্য আসুন আমরা প্রেরিত পৌলের কথাগুলো আরও ভালোভাবে বিবেচনা করি।

৫. কেন পৌল আধ্যাত্মিক ধন সম্বন্ধে লিখছিলেন?

পৌল সেই কথাগুলো কলসীতে তার সহখ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন যে, তিনি তাদের জন্য প্রাণপণ করছিলেন যেন ‘তাহাদের হৃদয় আশ্বাস পায় এবং তাহারা প্রেমে পরস্পর সংসক্ত হয়।’ (পড়ুন, কলসীয় ২:১, ২.) কেন তিনি এতটা চিন্তিত ছিলেন? স্পষ্টতই, পৌল এই বিষয়ে অবগত ছিলেন যে, সেখানকার ভাইয়েরা হয়তো তাদের মধ্যে থাকা এমন কিছু ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, যারা নির্দিষ্ট গ্রিক দর্শনবিদ্যা তুলে ধরছিল অথবা পুনরায় মোশির ব্যবস্থা পালন করার কথা ছড়িয়ে দিচ্ছিল। তিনি ভাইদেরকে দৃঢ়রূপে সাবধান করেছিলেন: “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।”—কল. ২:৮.

৬. কেন পৌলের পরামর্শের প্রতি আমাদের আগ্রহী হওয়া উচিত?

আজকে, আমরা শয়তান ও তার দুষ্ট বিধিব্যবস্থার কাছ থেকে একই ধরনের প্রভাবের সম্মুখীন হই। জগতের দর্শনবিদ্যা ও সেইসঙ্গে অনাধ্যাত্মিক মানবতাবাদ এবং বিবর্তনবাদ লোকেদের চিন্তাভাবনা, নৈতিক মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও জীবনধারাকে গঠন করে। অনেক জনপ্রিয় ছুটির দিন উদ্‌যাপনের ক্ষেত্রে মিথ্যা ধর্ম এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিনোদনজগৎ পাপপূর্ণ মাংসের হীনপ্রবৃত্তিগুলোকে চরিতার্থ করায় সহায়তা করে এবং ইন্টারনেটের অধিকাংশ বিষয়বস্তুই যুবক-বৃদ্ধ সকলের জন্যই প্রকৃত বিপদ ডেকে আনে। ক্রমাগত এগুলো এবং অন্যান্য জাগতিক প্রবণতার সংস্পর্শে আসা, যিহোবার দ্বারা জোগানো নির্দেশনার প্রতি আমাদের অনুভূতি ও মনোভাবকে সহজেই প্রভাবিত করতে এবং আমাদের প্রকৃত জীবন ধরে রাখাকে শিথিল করে দিতে পারে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯.) স্পষ্টতই, আমরা যদি শয়তানের ধূর্ত পরিকল্পনাগুলোর কাছে নতিস্বীকার করতে না চাই, তাহলে কলসীয়দের উদ্দেশে লেখা পৌলের কথাগুলোর অর্থ আমাদের বুঝতে এবং তার পরামর্শে মনোযোগ দিতে হবে।

৭. কোন দুটো বিষয় কলসীয়দের সাহায্য করবে বলে পৌল বলেছিলেন?

কলসীয়দের উদেশে লেখা পৌলের কথাগুলো পুনরায় দেখলে আমরা লক্ষ করি যে, তার চিন্তা সম্বন্ধে উল্লেখ করার পর তিনি দুটো বিষয় নির্দেশ করেছিলেন, যেগুলো তাদেরকে আশ্বাস লাভ করতে এবং প্রেমে একতাবদ্ধ হতে সাহায্য করবে। প্রথমত, তিনি বোধগম্যতা বা ‘জ্ঞানের নিশ্চয়তা’ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। তাদেরকে পুরোপুরি প্রত্যয়ী হতে হয়েছিল যে, শাস্ত্র সম্বন্ধে তাদের বোধগম্যতা সঠিক ছিল, তাই তাদের বিশ্বাস নিশ্চিত ভিত্তির ওপর ছিল। (ইব্রীয় ১১:১) এরপর তিনি ‘ঈশ্বরের নিগূঢ়তত্ত্ব জানিতে পারিবার’ বা সেই সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। তাদের সত্য সম্বন্ধে মৌলিক জ্ঞান থাকার চেয়ে আরও বেশি কিছুর এবং ঈশ্বরের গভীর বিষয়গুলো সম্বন্ধে স্পষ্ট বোধগম্যতার প্রয়োজন ছিল। (ইব্রীয় ৫:১৩, ১৪) সত্যিই, কলসীয়দের ও আজকে আমাদের জন্য কতই না উপযুক্ত পরামর্শ! কিন্তু, কীভাবে আমরা এইরকম নিশ্চয়তা ও সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারি? যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে তার এই জোরালো বিবৃতিতে পৌল একটা চাবিকাঠি জুগিয়েছেন: “ইহাঁর মধ্যে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের সমস্ত নিধি গুপ্ত রহিয়াছে।”

খ্রিস্টের “মধ্যে গুপ্ত” ধন

৮. খ্রিস্টের ‘মধ্যে গুপ্ত’ অভিব্যক্তিটির অর্থ ব্যাখ্যা করুন।

প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের সমস্ত ধন খ্রিস্টের ‘মধ্যে গুপ্ত’ রয়েছে বলার অর্থ এই নয় যে, সেগুলো তালাবদ্ধ বা এবং কারো নাগালের বাইরে রয়েছে। বরং, সাধারণভাবে এর অর্থ হল ধন খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং আমাদের মনোযোগ যিশু খ্রিস্টের প্রতি নিবিষ্ট করতে হবে। এটা যিশু নিজের সম্বন্ধে যা বলেছিলেন, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: “আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না।” (যোহন ১৪:৬) হ্যাঁ, ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের যিশুর দ্বারা জোগানো সাহায্য ও নির্দেশনার প্রয়োজন।

৯. যিশুকে কোন ভূমিকাগুলো দেওয়া হয়েছে?

“পথ” হওয়া ছাড়াও যিশু বলেছিলেন যে, তিনি হলেন “সত্য ও জীবন।” এটা ইঙ্গিত দেয় যে, তাঁর ভূমিকা কেবল পিতার নিকটবর্তী হওয়ার এক মাধ্যম হওয়ার চেয়েও আরও বেশি কিছু। এ ছাড়া, যিশুর সেই ভূমিকাগুলোও রয়েছে, যেগুলো বাইবেলের সত্য বোঝার ও অনন্তজীবন লাভ করার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সত্যিই, যিশুর মধ্যে নানা অমূল্য আধ্যাত্মিক রত্ন গুপ্ত রয়েছে, যেগুলো মনোযোগী বাইবেল ছাত্রদের আবিষ্কারের জন্য অপেক্ষা করে আছে। আসুন আমরা কিছু রত্ন সম্বন্ধে পরীক্ষা করি, যেগুলো আমাদের ভাবী প্রত্যাশা ও ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

১০. কলসীয় ১:১৯ ও ২:৯ পদ থেকে আমরা যিশু সম্বন্ধে কী শিখতে পারি?

১০ “তাঁহাতেই ঈশ্বরত্বের সমস্ত পূর্ণতা দৈহিকরূপে বাস করে।” (কল. ১:১৯; ২:৯) অগণিত বছর ধরে তাঁর স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে থাকার দরুণ যিশু ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব ও ইচ্ছা সম্বন্ধে যেকারো চেয়ে আরও ভালো জানেন। তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়কালজুড়ে, যিশু অন্যদেরকে সেই বিষয়গুলোই শিক্ষা দিয়েছিলেন, যেগুলো তাঁর পিতা তাঁকে শিখিয়েছিলেন এবং তাঁর কাজে সেই গুণাবলি প্রতিফলিত করেছিলেন, যেগুলোর অধিকারী হওয়ার জন্য তাঁর পিতা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। এই কারণে যিশু বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৯) ঈশ্বর বিষয়ক সমস্ত প্রজ্ঞা ও জ্ঞান খ্রিস্টের মধ্যে গুপ্ত বা বাস করছে আর তাই যিশু সম্বন্ধে আমরা যা-কিছু শিখতে পারি, সেগুলো মনোযোগপূর্বক শেখার চেয়ে যিহোবা সম্বন্ধে জানার আর কোনো ভালো উপায় নেই।

১১. যিশু ও বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর মধ্যে কোন সংযোগ রয়েছে?

১১ “তাঁহার পক্ষে ভাববাদীরা সকলে এই সাক্ষ্য দেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে তাঁহার নামের গুণে পাপমোচন প্রাপ্ত হয়।” (প্রেরিত ১০:৪৩) এই কথাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, বাইবেলের অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে যিশুই হলেন প্রধান ব্যক্তি। আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে লিপিবদ্ধ যিহোবার প্রথম ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রকাশিত বাক্য বইয়ের গৌরবান্বিত দর্শন পর্যন্ত বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো একমাত্র তখনই সঠিকভাবে বোঝা যেতে পারে, যখন মশীহ রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে যিশুর ভূমিকাকে বিবেচনা করা হয়। এটি ব্যাখ্যা করে যে, কেন ইব্রীয় শাস্ত্র-এর অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী সেই ব্যক্তিদের কাছে দুর্বোধ্য, যারা যিশুকে প্রতিজ্ঞাত মশীহ হিসেবে মেনে নেয় না। এটি এও ব্যাখ্যা করে যে, কেন যিশু সেই ব্যক্তিদের কাছে এক মহান পুরুষের চেয়ে আরও বেশি কিছু হিসেবে আবির্ভূত হননি, যারা সেই ইব্রীয় শাস্ত্র-কে মূল্য দেয় না, যেটির মধ্যে মশীহ সংক্রান্ত অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী রয়েছে। যিশু সম্বন্ধীয় জ্ঞান ঈশ্বরের লোকেদেরকে বাইবেলের সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো বুঝতে সাহায্য করেছে, যেগুলো এখনও পরিপূর্ণ হওয়া বাকি আছে।—২ করি. ১:২০.

১২, ১৩. (ক) কীভাবে যিশু “জগতের জ্যোতি”? (খ) ধর্মীয় অন্ধকার থেকে মুক্ত হওয়ায় খ্রিস্টের অনুসারীরা কী করতে বাধ্য?

১২ “আমি জগতের জ্যোতি।” (পড়ুন, যোহন ৮:১২; ৯:৫.) পৃথিবীতে যিশুর জন্মের অনেক আগে, ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “যে জাতি অন্ধকারে ভ্রমণ করিত, তাহারা মহা-আলোক দেখিতে পাইয়াছে; যাহারা মৃত্যুচ্ছায়ার দেশে বাস করিত, তাহাদের উপরে আলোক উদিত হইয়াছে।” (যিশা. ৯:২) প্রেরিত মথি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, যিশু সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করেছিলেন, যখন তিনি প্রচার কাজ আরম্ভ করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল।” (মথি ৪:১৬, ১৭) যিশুর পরিচর্যা লোকেদের জন্য আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোক এবং মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষাগুলোর দাসত্ব থেকে মুক্তি নিয়ে এসেছিল। “আমি জ্যোতিঃস্বরূপ হইয়া এই জগতে আসিয়াছি,” যিশু বলেছিলেন, “যেন, যে কেহ আমাতে বিশ্বাস করে, সে অন্ধকারে না থাকে।”—যোহন ১:৩-৫; ১২:৪৬.

১৩ এর অনেক বছর পর, প্রেরিত পৌল তার সহখ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “তোমরা এক সময়ে অন্ধকার ছিলে, কিন্তু এখন প্রভুতে দীপ্তি হইয়াছ; দীপ্তির সন্তানদের ন্যায় চল।” (ইফি. ৫:৮, ৯) আধ্যাত্মিক অন্ধকারের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ায় খ্রিস্টানরা দীপ্তির সন্তানদের ন্যায় চলতে বাধ্য। এটা পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু তাঁর অনুসারীদের যা বলেছিলেন, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: “তোমাদের দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হউক, যেন তাহারা তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিয়া তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার গৌরব করে।” (মথি ৫:১৬) আপনি কি যিশুর মধ্যে খুঁজে পাওয়া আধ্যাত্মিক ধনকে এতটাই মূল্যবান বলে গণ্য করেন যে, আপনার কথার ও উত্তম খ্রিস্টীয় আচরণের মাধ্যমে আপনি তা অন্যদের কাছে তুলে ধরবেন?

১৪, ১৫. (ক) কীভাবে মেষ ও অন্যান্য পশু বাইবেলের সময়ের সত্য উপাসনার অংশ ছিল? (খ) কেন যিশু “ঈশ্বরের মেষশাবক” হিসেবে তাঁর ভূমিকায় এক অতুলনীয় ধন?

১৪ যিশু হলেন “ঈশ্বরের মেষশাবক।” (যোহন ১:২৯, ৩৬) সমগ্র বাইবেলে, পাপের ক্ষমা লাভ করার ও ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার ক্ষেত্রে মেষ এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, অব্রাহাম যে তার ছেলে ইস্‌হাককে বলি হিসেবে উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক, তা দেখানোর পর তাকে বলা হয়েছিল যেন তিনি ইস্‌হাকের কোনো ক্ষতি না করেন আর এর পরিবর্তে তার জন্য একটা পুং-মেষ জোগানো হয়েছিল। (আদি. ২২:১২, ১৩) ইস্রায়েলীয়দের যখন মিশর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল, তখন মেষ আবারও এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল আর সেই সময় ‘সদাপ্রভুর নিস্তারপর্ব্বের’ অংশ হিসেবে। (যাত্রা. ১২:১-১৩) অধিকন্তু, মোশির ব্যবস্থায় বিভিন্ন পশু বলি দেওয়ার সুযোগের মধ্যে মেষ এবং ছাগও ছিল।—যাত্রা. ২৯:৩৮-৪২; লেবীয়. ৫:৬, ৭.

১৫ সেই বলিগুলোর কোনোটাই—বস্তুতপক্ষে, মানুষের উৎসর্গীকৃত কোনো বলিই—পাপ ও মৃত্যু থেকে স্থায়ী মুক্তি নিয়ে আসতে পারত না। (ইব্রীয় ১০:১-৪) অন্যদিকে, যিশু হলেন “ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।” “ঈশ্বরের মেষশাবক” হিসেবে যিশুর ভূমিকা, এ যাবৎ প্রাপ্ত যেকোনো বস্তুগত ধনের চেয়ে অধিক মূল্যবান। তাই, মুক্তির মূল্যের বিষয়টা মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করার জন্য আমাদের সময় করে নেওয়া এবং সেই অপূর্ব ব্যবস্থায় বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত। তা করলে আমাদের মহৎ আশীর্বাদ ও পুরস্কার—‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ জন্য স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে গৌরব ও সম্মান এবং ‘আরও মেষের’ জন্য পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন—লাভ করার আশা থাকবে।—লূক ১২:৩২; যোহন ৬:৪০, ৪৭; ১০:১৬.

১৬, ১৭. “বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা” হিসেবে যিশুর ভূমিকা সম্বন্ধে বোঝা আমাদের জন্য কেন অপরিহার্য?

১৬ যিশু হলেন “বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা।” (পড়ুন, ইব্রীয় ১২:১, ২.) ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে, আমরা বিশ্বাস সম্বন্ধে পৌলের জোরালো আলোচনা দেখতে পাই, যার মধ্যে নোহ, অব্রাহাম, সারা এবং রাহবের মতো উদাহরণযোগ্য বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও একটা তালিকা রয়েছে। এই সকলের কথা মাথায় রেখে পৌল তার সহখ্রিস্টানদের “বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা যীশুর প্রতি দৃষ্টি” নিবদ্ধ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। কেন?

১৭ ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে তালিকাবদ্ধ সেই বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের যদিও ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞায় দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, কিন্তু তারা এই বিষয়ে বিস্তারিত সমস্তকিছু জানত না যে, ঈশ্বর কীভাবে মশীহ ও রাজ্যের মাধ্যমে তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন। এই অর্থে, তাদের বিশ্বাস অপূর্ণ ছিল। বস্তুতপক্ষে, যাদেরকে যিহোবা মশীহ সংক্রান্ত অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী লেখার জন্য ব্যবহার করেছিলেন, এমনকী তারাও নিজেরা যা লিখেছিল, সেটার অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পারেনি। (১ পিতর ১:১০-১২) একমাত্র যিশুর মাধ্যমেই সেই বিশ্বাস সিদ্ধ অথবা পূর্ণ হতে পারে। তাই, আমাদের জন্য “বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা” হিসেবে যিশুর ভূমিকাকে স্পষ্টভাবে বোঝা ও স্বীকার করা কতই না অপরিহার্য!

অন্বেষণ করে চলুন

১৮, ১৯. (ক) খ্রিস্টের মধ্যে গুপ্ত অন্যান্য আধ্যাত্মিক রত্ন সম্বন্ধে উল্লেখ করুন। (খ) আধ্যাত্মিক ধনের জন্য কেন আমাদের ক্রমাগত যিশুর দিকে তাকানো উচিত?

১৮ আমরা মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশুর মূল্যবান ভূমিকাগুলো থেকে মাত্র কয়েকটা বিবেচনা করেছি। আরও অন্যান্য আধ্যাত্মিক রত্ন যিশুর মধ্যে গুপ্ত রয়েছে। সেগুলো খুঁজে বের করা আমাদের জন্য আনন্দ ও নানা উপকার নিয়ে আসবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত পিতর যিশুকে ‘জীবনের আদিকর্ত্তা’ এবং সেই “প্রভাতীয় তারা” হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা উদিত হয়। (প্রেরিত ৩:১৫; ৫:৩১; ২ পিতর ১:১৯) আর বাইবেল “আমেন” শব্দটি যিশুর প্রতি প্রয়োগ করেছে। (প্রকা. ৩:১৪) আপনি কি এই ভূমিকাগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য জানেন? যিশু যেমন বলেছিলেন, “অন্বেষণ কর, পাইবে।”—মথি ৭:৭.

১৯ সমগ্র ইতিহাসে যিশু ছাড়া এমন আর একজনও নেই, যার জীবন এতটা অর্থপূর্ণ এবং আমাদের অনন্ত মঙ্গলের সঙ্গে এতখানি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর মধ্যেই আধ্যাত্মিক ধন রয়েছে, যা যারা মনেপ্রাণে অন্বেষণ করে, তাদের মধ্যে যে-কেউ অনায়াসে পেতে পারে। ‘ইহাঁর মধ্যে গুপ্ত’ ধন খুঁজে পাওয়া যেন আপনার আনন্দ ও আশীর্বাদ হয়।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• খ্রিস্টানদেরকে কোন ধন অন্বেষণ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?

• কেন কলসীয়দের প্রতি পৌলের পরামর্শ আজকে এখনও আমাদের জন্য উপযুক্ত?

• খ্রিস্টের মধ্যে “গুপ্ত” কিছু আধ্যাত্মিক ধনের নাম বলুন ও ব্যাখ্যা করুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বাইবেল হল ধনসম্পদের অবস্থান নির্দেশকারী একটি মানচিত্রের মতো, যেটি আমাদেরকে খ্রিস্টের “মধ্যে গুপ্ত” সম্পদের দিকে পরিচালিত করে