সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নব্বই বছর আগে আমি ‘আমার সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ করিতে’ শুরু করেছিলাম

নব্বই বছর আগে আমি ‘আমার সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ করিতে’ শুরু করেছিলাম

নব্বই বছর আগে আমি ‘আমার সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ করিতে’ শুরু করেছিলাম

বলেছেন এডউইন রিজওয়েল

 উ নিশশো আঠারো সালের ১১ নভেম্বর সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তি দিবসে, আমার স্কুলের ছেলে-মেয়েরা সেই মহাযুদ্ধের সমাপ্তি উদ্‌যাপন করার উদ্দেশ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে একত্রিত হয়েছিল, যে-যুদ্ধকে পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বলা হয়েছিল। আমার বয়স তখন মাত্র পাঁচ বছর আর আমি পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারিনি যে, কী উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। তবুও, আমার বাবা-মা ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাকে যা শিখিয়েছিল, তা থেকে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা আমার জন্য ঠিক হবে না। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, কিন্তু তারপর আমি আমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি আর আমি কাঁদতে শুরু করেছিলাম। তা সত্ত্বেও, আমি সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করিনি। সেই সময়ই আমি ‘আমার সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ করিতে’ শুরু করেছিলাম।—উপ. ১২:১.

স্কুলের এই ঘটনার কয়েক মাস আগে, আমাদের পরিবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর কাছে বসবাস করার জন্য চলে এসেছিল। সেই সময়েই, বাবা “লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যারা এখন জীবিত আছে তারা কখনো মরবে না” শিরোনামের জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতাটিতে যোগ দিয়েছিলেন। এটি তার জীবনকে বদলে দিয়েছিল। বাবা ও মা বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিল এবং তারা দুজনে প্রায়ই ঈশ্বরের রাজ্য ও আসন্ন আশীর্বাদগুলো নিয়ে কথা বলত। আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই যে, সেই সময় থেকেই আমার বাবা-মা আমাকে ঈশ্বরকে ভালোবাসতে এবং তাঁর ওপর নির্ভর করতে শিখিয়েছিল।—হিতো. ২২:৬.

আমি পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করি

১৫ বছর বয়সে আমি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছিলাম, কিন্তু আসলে আমি একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে সেবা করতে চেয়েছিলাম। বাবা মনে করেছিলেন যে, আমার বয়স খুবই কম, তাই আমি কিছু সময়ের জন্য একটা অফিসে কাজ করেছিলাম। কিন্তু, যিহোবাকে পূর্ণসময় সেবা করার আকাঙ্ক্ষা এত তীব্র ছিল যে, একদিন আমি জে. এফ. রাদারফোর্ডকে একটা চিঠি লিখেছিলাম, যিনি সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজের তত্ত্বাবধান করছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, আমার পরিকল্পনা সম্বন্ধে তিনি কী মনে করেন। ভাই রাদারফোর্ড চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন: “তোমার যদি কাজ করার মতো যথেষ্ট বয়স হয়ে থাকে, তাহলে প্রভুর সেবায় রত হওয়ার জন্যও তোমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। . . . আমি বিশ্বাস করি যে, প্রভু তোমাকে আশীর্বাদ করবেন, যদি তুমি তাঁকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করার জন্য প্রচেষ্টা করো।” ১৯২৮ সালের ১০ মার্চ তারিখের সেই চিঠিটা আমাদের পরিবারকে অনুপ্রাণিত করেছিল। শীঘ্র বাবা, মা, আমার দিদি আর আমি পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিলাম।

১৯৩১ সালে লন্ডনে একটা সম্মেলনে, ভাই রাদারফোর্ড বিদেশের মাটিতে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের আহ্বান করেছিলেন। আমি স্বেচ্ছাসেবক হয়েছিলাম আর তাই আমাকে আ্যন্ড্রু জ্যাকের সঙ্গে কাউনাসে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, যেটা তখন লিথুয়েনিয়ার রাজধানী ছিল। তখন আমার বয়স ১৮ বছর।

বিদেশে রাজ্যের বার্তা প্রচার করা

সেই সময়ে, লিথুয়েনিয়া ছিল দরিদ্র কৃষিনির্ভর এক সমাজ আর গ্রামগুলোতে প্রচার করা সহজ ছিল না। বাড়ি খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল আর ভাড়া করা যে-জায়গাগুলোতে আমরা থেকেছিলাম, সেগুলোর কয়েকটার কথা আমরা কখনোই ভুলব না। উদাহরণস্বরূপ, একদিন রাতে অস্বস্তি বোধ করার কারণে আমি ও আ্যন্ড্রু জেগে উঠি। তেলের বাতি জ্বালানোর পর আমরা দেখি যে, বিছানা অসংখ্য ছারপোকায় ছেয়ে আছে। সেগুলো আমাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত কামড়েছিল! ব্যথা লাঘব করার জন্য এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সকালে আমি কাছেই একটা নদীর ঠাণ্ডা জলে গলা পর্যন্ত শরীর ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তবুও, আমাদের পরিচর্যাকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। এর অল্প সময় পরেই, থাকার সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছিল, যখন আমরা এক অল্পবয়সি দম্পতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম, যারা বাইবেলের সত্যকে গ্রহণ করেছিল। তারা আমাদেরকে তাদের ঘরে থাকতে দিয়েছিল, যেটা ছোটো কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল। আমরা আনন্দ সহকারে মেঝেতে ঘুমিয়েছিলাম আর তা আগের বিছানার চেয়ে কতই না স্বস্তিদায়ক ছিল!

সেই সময়ে, লিথুয়েনিয়াতে রোমান ক্যাথলিক এবং রাশিয়ান অর্থোডক্স পাদরি শ্রেণীর আধিপত্য ছিল। শুধুমাত্র ধনীরাই বাইবেল কিনতে পারত। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যত বেশি সম্ভব এলাকা শেষ করা আর আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছে যত বেশি সম্ভব সাহিত্যাদি ছেড়ে আসা। প্রথমে আমরা একটা শহরে থাকার জায়গা খুঁজে নিতাম। তারপর সতর্কতার সঙ্গে আমরা দূরবর্তী এলাকাগুলো শেষ করতাম এবং পরে দ্রুত সেই শহরে কাজ শেষ করতাম। এভাবে কাজ করার ফলে, স্থানীয় যাজকেরা আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করার আগেই, আমরা সাধারণত আমাদের কাজ শেষ করে ফেলতাম।

আলোড়ন সৃষ্টি করা এবং প্রচার লাভ করা

১৯৩৪ সালে আ্যন্ড্রুকে কাউনাসের শাখা অফিসে কাজ করার জন্য নিযুক্ত করা হয় আর তাই জন সেম্পে আমার সঙ্গী হয়। আমাদের কিছু স্মরণীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে। একদিন আমি একটা ছোটো শহরে একজন উকিলের অফিসে সাক্ষাৎ করি। সেই ব্যক্তি খুবই রেগে যান, ড্রয়ার থেকে একটা পিস্তল বের করেন এবং আমাকে চলে যেতে বলেন। আমি নীরবে প্রার্থনা করি এবং বাইবেলের এই পরামর্শ মনে করি: “কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে।” (হিতো. ১৫:১) তাই আমি বলি, “আমি একজন বন্ধু হিসেবে সুসমাচারের এক বার্তা নিয়ে এখানে এসেছিলাম আর আপনি যে নিজেকে সংযত করেছেন সেইজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।” সেই ব্যক্তি পিস্তলের ট্রিগার থেকে তার আঙুল সরিয়ে নেন আর আমি সতর্কতার সঙ্গে তার অফিস থেকে বের হয়ে আসি।

আমি যখন জনের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম, তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, তারও একটা খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কারণ তাকে একজন মহিলার কাছ থেকে বড়ো অঙ্কের টাকার একটা নোট চুরি করার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, যে-মহিলার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন। পুলিশ স্টেশনে তাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে তল্লাশি করা হয়েছিল। অবশ্য, তার কাছে টাকার নোটটা ছিল না। পরে তারা আসল চোরকে ধরেছিল।

দুটো ঘটনাই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল আর তার ফলে সেই শান্ত শহরে আমাদের কাজ ব্যাপক প্রচার লাভ করেছিল!

গোপন কাজকর্ম

একটা ঝুঁকিপূর্ণ কার্যভার ছিল প্রতিবেশী দেশ লাটভিয়াতে বাইবেল সাহিত্যাদি নিয়ে যাওয়া, যেখানে আমাদের প্রচার কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। মাসে প্রায় একবার আমরা রাতের ট্রেনে করে লাটভিয়াতে যেতাম। কখনো কখনো, সেখানে সাহিত্যাদি পৌঁছে দিয়ে আমরা আরও সাহিত্যাদি নেওয়ার জন্য এস্টোনিয়াতে যেতাম আর ফেরার পথে সেগুলো লাটভিয়াতে ছেড়ে আসতাম।

একবার একজন শুল্ক কর্মকর্তাকে আমাদের কাজকর্ম সম্বন্ধে বলা হয়েছিল আর তিনি আমাদেরকে ট্রেন থেকে নেমে যেতে এবং সাহিত্যগুলো তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। আমি আর জন দুজনেই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, যাতে তিনি আমাদেরকে সাহায্য করেন। আশ্চর্যের বিষয় যে, সেই কর্মকর্তা তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বলেননি যে, আমরা কী নিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু শুধু বলেছিলেন, “এই লোকেরা কিছু ঘোষণা করতে চায়।” আমি সাহিত্যাদির বিষয়ে “ঘোষণা” করেছিলাম, বর্ণনা করেছিলাম যে, সেগুলো স্কুল এবং কলেজের ছাত্রছাত্রীদের আমাদের সমস্যাপূর্ণ জগতে যা ঘটছে, সেটার গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করবে। ঊর্ধ্বতন শুল্ক কর্মকর্তা আমাদের যেতে দিয়েছিলেন আর আমরা নিরাপদে সাহিত্যাদি পৌঁছে দিয়েছিলাম।

যখন বাল্টিক সাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল, তখন সাক্ষিদের প্রতি লোকেদের বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল আর লিথুয়েনিয়াতেও আমাদের প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। আ্যন্ড্রু ও জনকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এগিয়ে আসার সঙ্গেসঙ্গে সমস্ত ব্রিটিশ নাগরিককে দেশ ছাড়তে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তাই, আমিও দুঃখের সঙ্গে দেশ ছেড়েছিলাম।

উত্তর আয়ার্ল্যান্ডে বিশেষ সুযোগ এবং আশীর্বাদগুলো

সেই সময়ের মধ্যে, আমার বাবা-মা উত্তর আয়ার্ল্যান্ডে চলে গিয়েছিল আর ১৯৩৭ সালে আমি সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম। যুদ্ধকালীন উন্মাদনার কারণে উত্তর আয়ার্ল্যান্ডেও আমাদের সাহিত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিন্তু যুদ্ধের মধ্যেও আমরা প্রচার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, আইনগত বাধা ছাড়াই আমরা আবারও আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছিলাম। একজন অভিজ্ঞ অগ্রগামী হ্যারাল্ড কিং, যিনি পরে চিনে একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করেছিলেন, তিনি উন্মুক্ত স্থানে জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতাগুলো দেওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান এবং ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এই শনিবার উন্মুক্ত স্থানে আমি প্রথম বক্তৃতাটি দেব।” এরপর, তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “পরের শনিবার তুমি বক্তৃতা দেবে।” আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।

আমি যে-প্রথম বক্তৃতাটি দিয়েছিলাম, সেটির কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। শত শত লোক উপস্থিত ছিল। একটা বাক্সের ওপর দাঁড়িয়ে আমি বক্তৃতাটি দিয়েছিলাম আর কোনো লাউড স্পিকারের সাহায্য ছাড়াই কথা বলেছিলাম। বক্তৃতার পরে একজন লোক আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজেকে বিল স্মিথ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তিনি লোকেদের ভিড় লক্ষ করে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য থেমেছিলেন। পরে জানা গিয়েছিল যে, বিলের সঙ্গে আমার বাবার আগে যোগাযোগ হয়েছিল, কিন্তু আমার বাবা ও সৎমা যখন অগ্রগামীর কাজ করার জন্য ডাবলিনে চলে গিয়েছিল, তখন তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আমরা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে, বিলের পরিবারের নয় জন সদস্য যিহোবার দাস হয়েছিল।

পরে আমি বেলফাস্টের সীমান্তে বড়ো বড়ো বাসভবনে প্রচার করেছিলাম, যেখানে আমি একজন রাশিয়ান ভদ্রমহিলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম, যিনি লিথুয়েনিয়াতে বাস করতেন। আমি যখন তাকে কয়েকটা সাহিত্য দেখিয়েছিলাম, তখন তিনি একটি বইয়ের দিকে দেখিয়ে বলেছিলেন: “এই বইটি আমার কাছে রয়েছে। আমার জ্যাঠামশাই, যিনি কাউনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, তিনি এটি আমাকে দিয়েছিলেন।” তিনি পোলিশ ভাষায় সৃষ্টি (ইংরেজি) বইটি দেখিয়েছিলেন। বইটির মার্জিনগুলোতে অনেক নোট লেখা ছিল। তিনি এটা জেনে কতই না অবাক হয়েছিলেন যে, আমিই তার জ্যাঠামশাইকে প্রথমে এই বইটি দিয়েছিলাম, যখন আমি কাউনাসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম!—উপ. ১১:১.

জন সেম্পে যখন শুনেছিলেন যে, আমি উত্তর আয়ার্ল্যান্ডে যাচ্ছি, তখন তিনি আমাকে তার ছোটো বোন নেলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেছিলেন কারণ তিনি বাইবেলের সত্যের প্রতি কিছুটা আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। আমার বোন কনি আর আমি তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেছিলাম। নেলি দ্রুত অগ্রগতি করে যিহোবার কাছে তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, আমরা বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা করি এবং বিয়ে করি।

নেলি ও আমি যিহোবার সেবায় একসঙ্গে ৫৬ বছর কাটিয়েছিলাম এবং এক-শো জনেরও বেশি লোককে বাইবেলের সত্যের জ্ঞান নিতে সাহায্য করার বিশেষ সুযোগ লাভ করেছিলাম। আমরা আরমাগিদোন পেরিয়ে যিহোবার নতুন জগতে একসঙ্গে বসবাস করার আশা করেছিলাম কিন্তু নিষ্ঠুর শত্রু মৃত্যু ১৯৯৮ সালে তাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। সেটা ছিল এক প্রচণ্ড আঘাত—আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটা।

বাল্টিক সাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ফিরে যাওয়া

নেলির মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর, আমি এক চমৎকার আশীর্বাদ লাভ করি। আমাকে এস্টোনিয়ার তালিনের শাখা অফিস পরিদর্শন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এস্টোনিয়ার ভাইদের কাছ থেকে পাওয়া একটা চিঠি এভাবে বর্ণনা করে: “১৯২০-র দশকের শেষদিকে ও ১৯৩০-এর দশকের শুরুর দিকে বাল্টিক সাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে যে-দশ জন ভাইকে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র আপনিই এখনও বেঁচে আছেন।” এটা আরও বলে যে, শাখা অফিস এস্টোনিয়া, লাটভিয়া, এবং লিথুয়েনিয়াতে কাজের ইতিহাস তৈরি করছে আর তারপর এটাতে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “আপনি কি আসতে পারবেন?”

শুরুর সেই বছরগুলোতে আমার সঙ্গীরা এবং আমি যে-অভিজ্ঞতাগুলো লাভ করেছিলাম, সেগুলোর বিষয়ে আবারও বলার কী এক বিরাট সুযোগ! লাটভিয়াতে আমি ভাইদেরকে সেই প্রথম আ্যপার্টমেন্টটা দেখাতে পেরেছিলাম, যেটা শাখা অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতো আর ছাদের সেই জায়গাটা দেখাতে পেরেছিলাম, যেখানে আমরা আমাদের সাহিত্যাদি লুকিয়ে রাখতাম যেগুলোকে পুলিশরা কখনোই খুঁজে পায়নি। লিথুয়েনিয়াতে আমাকে শাওলায় নামে একটা ছোটো শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে আমি অগ্রগামীর কাজ করেছিলাম। সেখানে একটা সমাবেশে একজন ভাই আমাকে বলেছিলেন: “অনেক বছর আগে আমার মা ও আমি শহরে একটা বাড়ি কিনেছিলাম। আমরা চিলেকোঠা থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করছিলাম আর তখন হঠাৎ আমি বিভিন্ন যুগ সম্বন্ধে ঐশিক পরিকল্পনা (ইংরেজি) এবং ঈশ্বরের বীণা (ইংরেজি) নামক বইগুলো খুঁজে পেয়েছিলাম। আমি যখন সেগুলো পড়েছিলাম, তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমি সত্য খুঁজে পেয়েছি। নিশ্চয় আপনিই এত বছর আগে ওই বইগুলো সেই বাড়িতে দিয়ে এসেছিলেন!”

এ ছাড়া, আমি একটা শহরে এক সীমা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম, যেখানে আমি অগ্রগামীর কাজ করেছিলাম। ৬৫ বছর আগে আমি সেখানে একটা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম। সেই সময় সেখানে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল ৩৫ জন। কিন্তু এখন ১,৫০০ জনেরও বেশি শ্রোতাকে দেখা কতই না আনন্দদায়ক ছিল! যিহোবা কাজকে কতই না আশীর্বাদ করেছেন!

‘সদাপ্রভু আমাকে পরিত্যাগ করেননি’

সম্প্রতি আমি পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত এক আশীর্বাদ লাভ করি, যখন বি নামে একজন চমৎকার খ্রিস্টান বোন আমার স্ত্রী হতে রাজি হন। ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে আমরা বিয়ে করি।

নিজের জীবনকে নিয়ে কী করবে তা নিয়ে ভেবে থাকে এইরকম যেকোনো অল্পবয়সিকে আমি আশ্বাস দিতে পারি যে, এই অনুপ্রাণিত কথাগুলোতে মনোযোগ দেওয়ায় অনেক প্রজ্ঞা রয়েছে: “তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর।” বাইবেলের গীতরচকের মতো আমিও এখন আনন্দ করতে পারি: “ঈশ্বর, তুমি বাল্যকালাবধি আমাকে শিক্ষা দিয়া আসিতেছ; আর এ পর্য্যন্ত আমি তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল প্রচার করিতেছি। হে ঈশ্বর, বৃদ্ধ বয়স ও পক্বকেশের কাল পর্য্যন্তও আমাকে পরিত্যাগ করিও না, যাবৎ আমি এই বর্ত্তমান লোকদিগকে তোমার বাহুবল, ভাবী লোক সকলকে তোমার পরাক্রম, জ্ঞাত না করি।”—গীত. ৭১:১৭, ১৮.

[২৫ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

একটা ঝুঁকিপূর্ণ কার্যভার ছিল লাটভিয়াতে সাহিত্যাদি নিয়ে যাওয়া

এস্টোনিয়া

তালিন

রিগা উপসাগর

লাটভিয়া

রিগা

লিথুয়েনিয়া

ভিলনিয়াস

কাউনাস

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৫ বছর বয়সে আমি স্কটল্যান্ডে একজন কলপোর্টার (অগ্রগামী) হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিলাম

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৪২ সালে নেলির সঙ্গে আমাদের বিয়ের দিন