সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনাদের মধ্যে খ্রিস্টের মনোভাব বজায় রাখুন

আপনাদের মধ্যে খ্রিস্টের মনোভাব বজায় রাখুন

আপনাদের মধ্যে খ্রিস্টের মনোভাব বজায় রাখুন

“তোমরা খ্রীষ্ট যীশুর অনুরূপে পরস্পর একমনা হও।”—রোমীয় ১৫:৫.

১. কেন আমাদের খ্রিস্টের মনোভাব রাখার চেষ্টা করা উচিত?

 “আমার নিকটে আইস,” যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন। “আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে” বা সতেজতা লাভ করবে। (মথি ১১:২৮, ২৯) এই উষ্ণ আমন্ত্রণ যিশুর প্রেমপূর্ণ মনোভাবকে খুব ভালোভাবে প্রকাশ করে। মানুষের মধ্যে অনুসরণ করার মতো তাঁর চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কেউ হতে পারে না। যদিও যিশু ঈশ্বরের শক্তিমান পুত্র ছিলেন কিন্তু তিনি সহমর্মিতা ও কোমলতা প্রদর্শন করেছিলেন, বিশেষ করে তাদের প্রতি, যাদের তা প্রয়োজন ছিল।

২. যিশুর মনোভাবের কোন দিকগুলো আমরা বিবেচনা করব?

এই প্রবন্ধে ও পরের দুটি প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব যে, কীভাবে আমরা যিশুর মতো একই মনোভাব গড়ে তুলতে ও তা বজায় রাখতে পারি এবং আমাদের জীবনে “খ্রীষ্টের মন” প্রতিফলিত করতে পারি। (১ করি. ২:১৬) আমরা মূলত পাঁচটা দিকের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করব: যিশুর মৃদুতা ও নম্রতা, তাঁর দয়া, ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বাধ্যতা, তাঁর সাহস এবং তাঁর অটুট প্রেম।

খ্রিস্টের মৃদুতা থেকে শিখুন

৩. (ক) নম্রতার বিষয়ে একটা শিক্ষা কী ছিল, যা যিশু তাঁর শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন? (খ) যিশুর শিষ্যরা যখন দুর্বলতা দেখিয়েছিল, তখন তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

ঈশ্বরের সিদ্ধ পুত্র যিশু, অসিদ্ধ ও পাপী মানুষদের মধ্যে সেবা করার জন্য স্বেচ্ছায় পৃথিবীতে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু লোক পরে তাঁকে হত্যা করেছিল। তা সত্ত্বেও, যিশু সবসময় তাঁর আনন্দ ও ইন্দ্রিয়দমন বজায় রেখেছিলেন। (১ পিতর ২:২১-২৩) যিশুর উদাহরণের প্রতি ‘দৃষ্টি রাখা’ আমাদেরও একই বিষয় বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে, যখন কিনা অন্যদের দোষত্রুটি ও অসিদ্ধতাগুলো আমাদের প্রভাবিত করে। (ইব্রীয় ১২:২) যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে তাঁর যোঁয়ালির নীচে আসতে ও তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। (মথি ১১:২৯) তারা কী শিক্ষা লাভ করতে পারত? একটা বিষয় হল, যিশু মৃদুশীল ছিলেন এবং তাঁর শিষ্যদের দোষত্রুটি থাকা সত্ত্বেও, তাদের প্রতি ধৈর্য বজায় রেখেছিলেন। মারা যাওয়ার আগের রাতে, যিশু তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন ও এর মাধ্যমে তাদেরকে “নম্রচিত্ত” হওয়ার বিষয়ে এক শিক্ষা দিয়েছিলেন, যা তারা কখনো ভুলে যাবে না। (পড়ুন, যোহন ১৩:১৪-১৭.) পরে যখন পিতর, যাকোব ও যোহন ‘জাগিয়া থাকিতে’ ব্যর্থ হয়েছিল, তখন যিশু সহানুভূতির সঙ্গে তাদের দুর্বলতাকে স্বীকার করেছিলেন। “শিমোন, তুমি কি ঘুমাইয়া পড়িয়াছ?” তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন। “তোমরা জাগিয়া থাক ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়; আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।”—মার্ক ১৪:৩২-৩৮.

৪, ৫. কীভাবে যিশুর উদাহরণ আমাদেরকে অন্যদের দোষত্রুটির ব্যাপারে সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে সাহায্য করতে পারে?

একজন সহবিশ্বাসী যদি প্রতিযোগিতাপরায়ণ হন, সহজেই অসন্তুষ্ট হন কিংবা প্রাচীনদের বা ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ পরামর্শের প্রতি সাড়া দিতে ইতস্তত করেন, তখন আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? (মথি ২৪:৪৫-৪৭) যদিও আমরা হয়তো শয়তানের জগতে মাংসিক স্বভাবগুলো থাকাকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত থাকি, কিন্তু আমাদের ভাইয়েরা যখন এই ধরনের অসিদ্ধতা প্রদর্শন করে, তখন তা মেনে নেওয়া বিশেষভাবে কঠিন হতে পারে। যদি অন্যদের দোষত্রুটি সহজেই আমাদের বিরক্ত করে, তাহলে আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে, ‘কীভাবে আমি আরও ভালোভাবে “খ্রীষ্টের মনকে” প্রতিফলিত করতে পারি?’ মনে রাখবেন, যিশুর শিষ্যরা যখন কিছুটা আধ্যাত্মিক দুর্বলতা দেখিয়েছিল, এমনকী তখনও তিনি তাঁর শিষ্যদের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েননি।

প্রেরিত পিতরের বিষয়টা বিবেচনা করুন। যিশু যখন পিতরকে নৌকা থেকে নেমে জলের ওপর দিয়ে তাঁর দিকে হেঁটে আসতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন পিতর কিছুটা সময় জলের ওপর দিয়ে হেঁটেছিলেন। এরপর পিতর ঝোড়োবাতাস দেখে ডুবে যেতে শুরু করেছিলেন। তখন যিশু কি রেগে গিয়ে তাকে বলেছিলেন: “উচিত হয়েছে! তোমার জন্য এটা এক উপযুক্ত শিক্ষা”? না, তিনি তা বলেননি! “তখনই যীশু হাত বাড়াইয়া তাঁহাকে ধরিলেন, আর তাঁহাকে কহিলেন, হে অল্পবিশ্বাসি, কেন সন্দেহ করিলে?” (মথি ১৪:২৮-৩১) আমরা যদি কখনো এমন একজন ভাইকে দেখতে পাই, যার মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে, তখন কি আমরা রূপকভাবে আমাদের হাত বাড়িয়ে দিই ও তাকে আরও বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করি? পিতরের প্রতি যিশুর মৃদুতাপূর্ণ কাজের মধ্যে সেই শিক্ষাটাই স্পষ্ট দেখা যায়।

৬. যিশু তাঁর প্রেরিতদেরকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করা সম্বন্ধে কী শিক্ষা দিয়েছিলেন?

এ ছাড়া, পিতর প্রেরিতদের সেই বিতর্কের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন, যারা তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, তা নিয়ে তর্ক করছিল। যাকোব ও যোহনের মধ্যে একজন যিশুর রাজ্যে তাঁর ডান দিকে ও অন্য জন বাম দিকে বসতে চেয়েছিলেন। যখন পিতর ও অন্য প্রেরিতরা এই বিষয়টা শুনেছিল, তখন তারা রেগে গিয়েছিল। যিশু জানতেন যে, তারা এই মনোভাব সম্ভবত তারা যে-সমাজে বড়ো হয়ে উঠেছিল, সেখান থেকে পেয়েছিল। তাদেরকে ডেকে তিনি বলেছিলেন: “তোমরা জান, পরজাতীয়দের অধিপতিরা তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং যাহারা মহান্‌, তাহারা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে। তোমাদের মধ্যে সেরূপ হইবে না; কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্‌ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে; এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ প্রধান হইতে চায়, সে তোমাদের দাস হইবে।” এরপর, যিশু তাঁর নিজের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন: “যেমন মনুষ্যপুত্ত্র পরিচর্য্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে, এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।”—মথি ২০:২০-২৮.

৭. কীভাবে আমরা প্রত্যেকে মণ্ডলীর একতায় অবদান রাখতে পারি?

যিশুর নম্র মনোভাব নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করাটা আমাদেরকে আমাদের ভাইদের মধ্যে ‘সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র হইতে’ সাহায্য করবে। (লূক ৯:৪৬-৪৮) তা করা আমাদের একতার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। একটা বড়ো পরিবারের পিতার মতো, যিহোবা চান যে তাঁর সন্তানরা ‘একসঙ্গে ঐক্যে বাস করুক,’ পরস্পর মানিয়ে চলুক। (গীত. ১৩৩:১) যিশু তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যাতে সমস্ত সত্য খ্রিস্টান ঐক্যবদ্ধ হয়, যেন “জগৎ জানিতে পায় যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ, এবং আমাকে যেমন প্রেম করিয়াছ, তেমনি তাহাদিগকেও প্রেম করিয়াছ।” (যোহন ১৭:২৩) তাই, আমাদের একতা আমাদেরকে খ্রিস্টের অনুসারী হিসেবে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এইরকম একতা উপভোগ করতে চাইলে অন্যদের অসিদ্ধতাগুলোকে আমাদের খ্রিস্টের মতো করে দেখতে হবে। যিশু ক্ষমাশীল ছিলেন আর তিনি শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, একমাত্র অন্যদের ক্ষমা করার ফলেই আমরা নিজেরা ক্ষমা লাভ করতে পারব।—পড়ুন, মথি ৬:১৪, ১৫.

৮. ঈশ্বরের দীর্ঘসময়ের দাসদের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

এ ছাড়া, আমরা সেই ব্যক্তিদের বিশ্বাসকে অনুকরণ করার দ্বারা অনেক কিছু শিখতে পারি, যারা দীর্ঘসময় ধরে খ্রিস্টকে অনুকরণ করে আসছে। এই ব্যক্তিরা সাধারণত যিশুর মতো অন্যদের অসিদ্ধতার প্রতি বোধগম্যতা প্রদর্শন করে। তারা শিখতে পেরেছে যে, খ্রিস্টতুল্য সমবেদনা দেখানো আমাদেরকে শুধু “দুর্ব্বলদিগের দুর্ব্বলতা বহন” করতেই সাহায্য করে না কিন্তু একতার ক্ষেত্রেও অবদান রাখে। অধিকন্তু, এটা সমগ্র মণ্ডলীকে খ্রিস্টের মনোভাব প্রতিফলিত করতে উৎসাহিত করে। তাদের ভাইয়েরা একই বিষয় করুক বলে তারা চায়, যেমনটা প্রেরিত পৌল রোমের খ্রিস্টানদের জন্য এভাবে চেয়েছিলেন: “ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বর এমন বর দিউন, যাহাতে তোমরা খ্রীষ্ট যীশুর অনুরূপে পরস্পর একমনা হও, যেন তোমরা একচিত্তে এক মুখে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বরের ও পিতার গৌরব কর।” (রোমীয় ১৫:১, ৫, ৬) হ্যাঁ, আমাদের ঐক্যবদ্ধ উপাসনা যিহোবার প্রশংসা নিয়ে আসে।

৯. যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য কেন আমাদের পবিত্র আত্মা প্রয়োজন?

যিশু “নম্রচিত্ত” হওয়াকে মৃদুতার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন, যেটা হচ্ছে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফলের একটা অংশ। তাই, যিশুর উদাহরণ অধ্যয়ন করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যিহোবার পবিত্র আত্মার প্রয়োজন, যাতে আমরা সেই উদাহরণ সঠিকভাবে অনুকরণ করতে পারি। আমাদের ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করা উচিত এবং এটার ফল—“প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য [‘দয়া,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন], মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন”—গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। (গালা. ৫:২২, ২৩) এভাবে, যিশু যে-নম্রতা ও মৃদুতার আদর্শ স্থাপন করেছেন, তা অনুসরণ করার দ্বারা আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবাকে খুশি করব।

যিশু অন্যদের সঙ্গে সদয় আচরণ করতেন

১০. কীভাবে যিশু সদয়ভাব প্রকাশ করেছিলেন?

১০ দয়াও পবিত্র আত্মার ফলের একটা অংশ। যিশু সবসময় অন্যদের সঙ্গে সদয় আচরণ করতেন। যারা আন্তরিকভাবে যিশুর অন্বেষণ করেছিল, এমন সকলকে তিনি ‘সদয় ভাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন।’ (পড়ুন, লূক ৯:১১.) যিশুর প্রদর্শিত সদয়ভাব থেকে আমরা কী শিখতে পারি? একজন সদয় ব্যক্তি হলেন বন্ধুত্বপরায়ণ, অমায়িক, সহানুভূতিশীল ও ক্ষমাশীল। যিশুও সেইরকম ছিলেন। তিনি লোকেদের প্রতি করুণাবিষ্ট হয়েছিলেন “কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল।”—মথি ৯:৩৫, ৩৬.

১১, ১২. (ক) একটা ঘটনা বর্ণনা করুন, যেখানে যিশু সমবেদনাকে কাজের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন। (খ) এখানে বিবেচিত উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?

১১ এ ছাড়া, যিশু করুণা ও সমবেদনা শুধু অনুভবই করেননি কিন্তু কাজেও প্রকাশ করেছিলেন। একটা ঘটনা বিবেচনা করুন। দীর্ঘ বারো বছর ধরে একজন স্ত্রীলোক অস্বাভাবিক প্রদর রোগে ভুগছিলেন। এই স্ত্রীলোক জানতেন যে, মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী তিনি অশুচি ছিলেন কিংবা যে-কেউ তাকে স্পর্শ করবে, সে রীতিগতভাবে অশুচি হয়ে পড়বে। (লেবীয়. ১৫:২৫-২৭) তা সত্ত্বেও, যিশুর খ্যাতি ও লোকেদের প্রতি তাঁর আচরণের বিষয়টা জানা, এই স্ত্রীলোককে নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিল যে, যিশু তাকে সুস্থ করে তুলতে পারেন এবং করবেন। তিনি বার বার বলেছিলেন: “আমি যদি কেবল উহাঁর বস্ত্র স্পর্শ করিতে পাই, তবেই সুস্থ হইব।” সাহস সঞ্চয় করে, তিনি যিশুকে স্পর্শ করেছিলেন এবং সঙ্গেসঙ্গে বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।

১২ যিশু টের পেয়েছিলেন যে, কেউ তাঁকে স্পর্শ করেছে আর তিনি তাঁর চারপাশে খুঁজতে থাকেন যে, কে তাঁকে স্পর্শ করেছে। সেই স্ত্রীলোক, ব্যবস্থা লঙ্ঘন করার কারণে তাকে ভর্ৎসনা করা হবে, সম্ভবত এই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে যিশুর পায়ের কাছে এসে পড়ে সমস্ত সত্য বৃত্তান্ত যিশুর কাছে বলেছিলেন। যিশু কি এই অসহায়, দুর্দশাগ্রস্ত স্ত্রীলোককে তিরস্কার করেছিলেন? একেবারেই না! “হে কন্যে,” তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, “তোমার বিশ্বাস তোমাকে রক্ষা করিল, শান্তিতে চলিয়া যাও।” (মার্ক ৫:২৫-৩৪) এইরকম সদয় কথাগুলো শুনে সেই স্ত্রীলোক নিশ্চয়ই কত সান্ত্বনা পেয়েছিলেন!

১৩. (ক) কীভাবে যিশুর মনোভাব ফরীশীদের থেকে আলাদা ছিল? (খ) ছোটো ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে যিশু কেমন ব্যবহার করেছিলেন?

১৩ নির্মম ফরীশীদের বৈসাদৃশ্যে, খ্রিস্ট কখনোই তাঁর কর্তৃত্বকে অন্যদের বোঝাকে আরও দুর্বহ করতে ব্যবহার করেননি। (মথি ২৩:৪) অন্যদিকে, তিনি সদয়ভাবে ও ধৈর্যপূর্বক অন্যদেরকে যিহোবার পথগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। যিশু তাঁর অনুসারীদের এক প্রেমময় সঙ্গী ছিলেন, সবসময় তাদের প্রতি প্রেমময় ও সদয় ছিলেন এবং তাদের এক প্রকৃত বন্ধু ছিলেন। (হিতো. ১৭:১৭; যোহন ১৫:১১-১৫) এমনকী ছোটো ছেলে-মেয়েরাও যিশুর কাছে স্বচ্ছন্দ বোধ করত এবং এটা স্পষ্ট যে, তিনিও তাদের সঙ্গে স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। তিনি এত ব্যস্ত ছিলেন না যে, তাঁর কাজ থামিয়ে ছোটো ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কাটানোর মতো সময় তাঁর ছিল না। একবার তাঁর শিষ্যরা, যারা কিনা তখনও তাদের চারপাশের ধর্মীয় নেতাদের মতো শ্রেষ্ঠত্বের মনোভাব মনের মধ্যে পুষে রেখেছিল, তারা লোকেদেরকে তাদের ছোটো ছেলে-মেয়েদের যিশুর কাছে নিয়ে এসে যিশুকে স্পর্শ করতে বাধা দিয়েছিল। যিশু তাঁর শিষ্যদের এই কাজে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন: “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই।” এরপর সেই ছোটো ছেলে-মেয়েদের ব্যবহার করে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, যে ব্যক্তি শিশুবৎ হইয়া ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, সে কোন মতে তাহাতে প্রবেশ করিতে পাইবে না।”—মার্ক ১০:১৩-১৫.

১৪. পূর্ণ মনোযোগ পাওয়ার দ্বারা ছোটো ছেলে-মেয়েরা কোন উপকারগুলো লাভ করে?

১৪ এক মুহূর্তের জন্য চিন্তা করুন যে, সেই ছোটো ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কেউ কেউ কয়েক বছর পর প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ হিসেবে যখন স্মরণ করেছিল যে, যিশু খ্রিস্ট ‘তাহাদিগকে কোলে করিয়াছিলেন, ও তাহাদের আশীর্ব্বাদ করিয়াছিলেন,’ তখন তাদের কেমন লেগেছিল। (মার্ক ১০:১৬) আজকের ছোটো ছেলে-মেয়েরাও আনন্দের সঙ্গে সেই প্রাচীনদের ও অন্য ব্যক্তিদের কথা চিন্তা করে, যারা তাদের প্রতি গঠনমূলক ও নিঃস্বার্থ আগ্রহ দেখিয়ে থাকে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, যেসব ছেলে-মেয়ে একেবারে ছোটোবেলা থেকেই দেখে যে, মণ্ডলী তাদের জন্য প্রকৃতই চিন্তা করে, তারা উপলব্ধি করে যে, যিহোবার আত্মা তাঁর লোকেদের ওপর রয়েছে।

এক নির্দয় জগতে দয়া দেখান

১৫. আজকে দয়ার অভাব রয়েছে দেখে কেন আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়?

১৫ আজকে অনেক লোক অনুভব করে যে, অন্যদের প্রতি দয়া দেখানোর মতো সময় তাদের হাতে নেই। তাই প্রতিদিন স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে, ভ্রমণ করার সময় এবং পরিচর্যায় যিহোবার লোকেদেরকে জগতের আত্মার মুখোমুখি হতে হবে। নির্দয় মনোভাব হয়তো আমাদের হতাশ করতে পারে কিন্তু সেগুলো আমাদের অবাক করে না। যিহোবা এই বিষয়ে আমাদেরকে আগে থেকে সাবধান করতে পৌলকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যে, এই সংকটপূর্ণ ‘শেষ কালের’ জীবন খ্রিস্টানদেরকে সেই ব্যক্তিদের সংস্পর্শে নিয়ে আসবে, যারা “আত্মপ্রিয়, . . . স্নেহরহিত।”—২ তীম. ৩:১-৩.

১৬. কীভাবে আমরা মণ্ডলীতে খ্রিস্টতুল্য সদয়ভাব বৃদ্ধি করতে পারি?

১৬ অন্যদিকে, সত্য খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর পরিবেশ নির্দয় জগতের পরিবেশ থেকে ভিন্ন এক সতেজতাদায়ক পরিবেশ প্রদান করে। যিশুকে অনুকরণ করার দ্বারা আমরা প্রত্যেকেই সেই গঠনমূলক পরিবেশে অবদান রাখতে পারি। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? প্রথমেই বলা যায় যে, মণ্ডলীর অনেকের আমাদের কাছ থেকে সাহায্য ও উৎসাহের প্রয়োজন কারণ তারা স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা অন্যান্য প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এই “শেষ কালে” এই ধরনের সমস্যা হয়তো বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে কিন্তু তা নতুন কিছু নয়। বাইবেলের সময়ে, খ্রিস্টানরা একইরকম সমস্যা ভোগ করত। তাই, উপকারজনক কাজগুলো এখনও ঠিক ততখানিই উপযুক্ত, যতখানি সেই সময়ে বসবাসরত খ্রিস্টানদের জন্য ছিল। উদাহরণস্বরূপ, পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, “ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা কর [“বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বল,” NW], দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর, সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হও।” (১ থিষল. ৫:১৪) এর সঙ্গে খ্রিস্টতুল্য সদয়ভাব কাজে প্রদর্শন করা জড়িত রয়েছে।

১৭, ১৮. কোন কোন উপায়ে আমরা যিশুর সদয়ভাব অনুকরণ করতে পারি?

১৭ খ্রিস্টানদের ‘তাহাদের ভ্রাতৃগণকে সদয় ভাবে গ্রহণ করিবার,’ যিশুর মতো তাদের সঙ্গে আচরণ করার, যাদেরকে আমরা অনেক বছর ধরে চিনি, তাদের প্রতি ও যাদের সঙ্গে আমাদের আগে কখনো দেখা হয়নি, তাদের প্রতি প্রকৃত চিন্তা দেখানোর দায়িত্ব রয়েছে। (৩ যোহন ৫-৮) যিশু যেমন অন্যদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তেমনই আমাদেরও তা করা উচিত, সবসময় অন্যদের প্রতি বিশ্রামদায়ক বা সতেজতাদায়ক হওয়া উচিত।—যিশা. ৩২:২; মথি ১১:২৮-৩০.

১৮ আমরা প্রত্যেকেই অন্যদের মঙ্গলের ব্যাপারে সক্রিয় আগ্রহ দেখানোর দ্বারা দয়া দেখাতে পারি। তা দেখানোর জন্য উপায় ও সুযোগ খুঁজুন। তারপর কাজ করুন। “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও,” পৌল এই জোরালো পরামর্শ দিয়ে আরও বলেছিলেন: “সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০) এর অর্থ হচ্ছে, খ্রিস্টের উদাহরণ অনুসরণ করা, ‘অকপট প্রেম’ দেখাতে শেখার দ্বারা অন্যদের প্রতি আন্তরিক ও সদয় ব্যবহার করা। (২ করি. ৬:৭) পৌল এই ধরনের খ্রিস্টতুল্য প্রেমকে এভাবে প্রকাশ করেছেন: “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর [“দয়া করে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন], ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না।” (১ করি. ১৩:৪, ৫) আমাদের ভাইবোনদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুষে রাখার পরিবর্তে, আমরা যেন এই পরামর্শে মনোযোগ দিই: “তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব [“দয়ালু,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।”—ইফি. ৪:৩২.

১৯. খ্রিস্টতুল্য দয়া দেখানোর ফলে কোন উত্তম ফলাফল লাভ করা যায়?

১৯ সবসময়ে ও প্রতিটা পরিস্থিতিতে খ্রিস্টতুল্য দয়া গড়ে তোলার ও দেখানোর চেষ্টা করা প্রচুর পুরস্কার নিয়ে আসে। এর ফলে, যিহোবার আত্মা স্বচ্ছন্দে মণ্ডলীতে কার্যকর হবে, আত্মার উত্তম ফল উৎপন্ন করতে সাহায্য করবে। অধিকন্তু, যখন আমরা যিশুর দেখানো আদর্শকে অনুসরণ করি এবং অন্যদেরকেও একই বিষয় করতে সাহায্য করি, তখন আমাদের সুখী, ঐক্যবদ্ধ উপাসনা স্বয়ং ঈশ্বরকে আনন্দ দিতে পারে। তাই, আসুন আমরা অন্যদের প্রতি আচরণ করার সময় সর্বদা যিশুর মৃদুতা ও দয়াকে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করি।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কীভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে তিনি ছিলেন “মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত”?

• কীভাবে যিশু দয়া দেখিয়েছিলেন?

• কোন কোন উপায়ে আমরা এই অসিদ্ধ জগতে খ্রিস্টতুল্য মৃদুতা ও দয়া দেখাতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন ভাইয়ের বিশ্বাস যখন দুর্বল হয়ে যায়, যেমনটা পিতরের ক্ষেত্রে হয়েছিল, তখন আমরা কি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে আপনি মণ্ডলীকে দয়ার এক আশ্রয়স্থল করে তোলায় সাহায্য করতে পারেন?