সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঐশিক শিক্ষার শ্রেষ্ঠতা

ঐশিক শিক্ষার শ্রেষ্ঠতা

ঐশিক শিক্ষার শ্রেষ্ঠতা

“বাস্তবিক . . . খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি।”—ফিলি. ৩:৮.

১, ২. কিছু খ্রিস্টান কোন বিষয়টা বেছে নিয়েছে এবং কেন?

 একেবারে ছোটোবেলা থেকেই রবার্ট স্কুলে খুব ভালো ছাত্র ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র আট বছর, তখন তার একজন শিক্ষিকা তার বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন যে, তিনি যেকোনো কিছুই সম্পাদন করতে পারবেন। শিক্ষিকা এই আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, একদিন রবার্ট একজন ডাক্তার হতে পারবেন। হাইস্কুলের (দশ থেকে বারো বছরের মৌলিক শিক্ষা) একজন ছাত্র হিসেবে তার প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য তাকে নিজ দেশের সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্য করে তুলেছিল। কিন্তু, একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার লক্ষ্য অনুধাবন করার জন্য রবার্ট সেই সুযোগ ত্যাগ করা বেছে নিয়েছিলেন, যেটাকে অনেকে জীবনে-একবার-আসা সুযোগ বলে মনে করেছিল।

রবার্টের মতো অনেক খ্রিস্টানের—যুবক-বৃদ্ধ সকলের—বর্তমান বিধিব্যবস্থায় সাফল্য লাভ করার বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। কেউ কেউ সেই সুযোগগুলোকে পূর্ণরূপে কাজে না লাগানো বেছে নেয়, যাতে তারা আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করতে পারে। (১ করি. ৭:২৯-৩১) কোন বিষয়টা রবার্টের মতো খ্রিস্টানদের প্রচার কাজে নিজেদের বিলিয়ে দিতে অনুপ্রাণিত করে? সর্বপ্রধান কারণ যিহোবার প্রতি তাদের ভালোবাসা ছাড়াও, তারা ঐশিক শিক্ষার শ্রেষ্ঠতাকে মূল্যবান বলে গণ্য করে। আপনি কি সম্প্রতি চিন্তা করে দেখেছেন যে, আপনি যদি সত্যের জ্ঞান না জানতেন, তাহলে আপনার জীবন হয়তো কেমন হতো? যিহোবার দ্বারা শিক্ষা লাভ করার ফলে আমরা যেসমস্ত উল্লেখযোগ্য আশীর্বাদ উপভোগ করি, সেগুলোর কয়েকটা নিয়ে চিন্তা করা আমাদেরকে সুসমাচারের প্রতি উপলব্ধি বজায় রাখতে এবং অন্যদের কাছে তা জানানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হতে সাহায্য করবে।

ঈশ্বরের দ্বারা শিক্ষা লাভ করা এক বিশেষ সুযোগ

৩. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা অসিদ্ধ মানুষদের শিক্ষা দিতে ইচ্ছুক?

যিহোবা তাঁর মঙ্গলভাবের কারণে অসিদ্ধ মানুষদের শিক্ষা দিতে ইচ্ছুক। অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলকভাবে বলতে গিয়ে যিশাইয় ৫৪:১৩ পদ বলে: “তোমার সন্তানেরা সকলে সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে, আর তোমার সন্তানদের পরম শান্তি হইবে।” তবে, এই কথাগুলোর নীতি খ্রিস্টের ‘আরও মেষের’ বেলায়ও প্রযোজ্য। (যোহন ১০:১৬) এই বিষয়টা একটা ভাববাণী থেকে স্পষ্ট হয়, যেটা আমাদের দিনে পরিপূর্ণতা লাভ করছে। একটা দর্শনে যিশাইয় সমস্ত জাতির লোকেদের সত্য উপাসনার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হতে দেখেছিলেন। তিনি তাদেরকে এমনভাবে বর্ণনা করেন যে, তারা পরস্পরকে বলছে: “চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, যাকোবের ঈশ্বরের গৃহে গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব।” (যিশা. ২:১-৩) ঈশ্বরের দ্বারা শিক্ষা লাভ করা কী এক বিশেষ সুযোগ!

৪. যিহোবা সেই ব্যক্তিদের কাছে কী চান, যাদেরকে তিনি শিক্ষা দেন?

কীভাবে আমরা ঐশিক শিক্ষা থেকে উপকার লাভ করার জন্য যোগ্য হতে পারি? একটা প্রধান চাহিদা হল যে, একজন ব্যক্তিকে নম্র ও শিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হতে হবে। গীতরচক দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু মঙ্গলময় ও সরল, . . . তিনি . . . নম্রদিগকে আপন পথ দেখাইয়া [“পথের বিষয় শিক্ষা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] দেন।” (গীত. ২৫:৮, ৯) আর যিশু বলেছিলেন: “হে পিতঃ, স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, আমি তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তুমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের হইতে এই সকল বিষয় গুপ্ত রাখিয়া শিশুদের নিকটে এই সকল প্রকাশ করিয়াছ।” (লূক ১০:২১) আপনি কি এমন একজন ঈশ্বরের প্রতি আকৃষ্ট হন না, যিনি “নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন”?—১ পিতর ৫:৫.

৫. একমাত্র কীভাবে আমাদের পক্ষে ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান লাভ করা সম্ভব হয়েছে?

যিহোবার দাস হিসেবে, সত্য খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে উত্তম বিচারবুদ্ধি থাকার জন্য আমরা কি নিজেদেরকে কৃতিত্ব দিতে পারি? না। বস্তুতপক্ষে, আমাদের নিজেদের চেষ্টায় আমরা কখনোই ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান লাভ করতে পারতাম না। যিশু বলেছিলেন: “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না।” (যোহন ৬:৪৪) প্রচার কাজ ও পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যিহোবা মেষতুল্য ব্যক্তি বিশেষকে অর্থাৎ ‘সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকলকে’ আকর্ষণ করছেন। (হগয় ২:৭) আপনি কি সেই ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হতে পেরে কৃতজ্ঞ নন, যাদেরকে যিহোবা তাঁর পুত্রের প্রতি আকর্ষণ করেছেন?—পড়ুন, যিরমিয় ৯:২৩, ২৪.

জীবনকে উন্নত করার ক্ষমতা

৬. ‘সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞান’ নেওয়া লোকেদের ওপর কোন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে?

এক চমৎকার শব্দচিত্র ব্যবহার করে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন সম্বন্ধে বর্ণনা করে, যা আমাদের সময়ে ঘটছে। আগে হিংস্র ছিল এমন লোকেরা শান্তিপ্রবণ হয়েছে। (পড়ুন, যিশাইয় ১১:৬-৯.) একসময় বর্ণ, জাতিয়তা, উপজাতি অথবা অন্যান্য সাংস্কৃতিক পটভূমির কারণে যাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ছিল, তারা একসঙ্গে ঐক্যে বাস করতে শিখেছে। রূপকভাবে বললে, তারা ‘আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িয়াছে।’ (যিশা. ২:৪) এই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর কারণ কী? লোকেরা ‘সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞান’ নিয়েছে এবং নিজেদের জীবনে তা কাজে লাগিয়েছে। যদিও ঈশ্বরের দাসেরা অসিদ্ধ, তবুও তারা এক প্রকৃত আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ গড়ে তুলেছে। সুসমাচার সম্বন্ধে সর্বজনীন আবেদন আর এটা যে-উত্তম ফল উৎপন্ন করে, তা ঐশিক শিক্ষার শ্রেষ্ঠতার প্রমাণ দেয়।—মথি ১১:১৯.

৭, ৮. (ক) “দুর্গসমূহ” বা দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা কিছু বিষয় কী, যেগুলো ভেঙে ফেলার জন্য ঐশিক শিক্ষা লোকেদেরকে সাহায্য করে? (খ) কী দেখায় যে, ঐশিক শিক্ষা যিহোবার প্রশংসা নিয়ে আসে?

প্রেরিত পৌল ঈশ্বরের দাসদের পরিচর্যাকে আধ্যাত্মিক যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “আমাদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র মাংসিক নহে, কিন্তু দুর্গসমূহ ভাঙ্গিয়া ফেলিবার জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে পরাক্রমী। আমরা বিতর্ক সকল এবং ঈশ্বর-জ্ঞানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত উচ্চ বস্তু ভাঙ্গিয়া ফেলিতেছি।” (২ করি. ১০:৪, ৫) “দুর্গসমূহ” বা দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা কিছু বিষয় কী, যেগুলো থেকে ঐশিক শিক্ষা লোকেদের মুক্ত করে? বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা, কুসংস্কার এবং মানব দর্শনবিদ্যার বোঝা হল মাত্র কয়েকটা উদাহরণ। (কল. ২:৮) ঐশিক শিক্ষা লোকেদেরকে মন্দ অভ্যাসগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে সাহায্য করে। (১ করি. ৬:৯-১১) এটি পারিবারিক জীবনকে উন্নত করে। আর এটি আশাহীন লোকেদেরকে জীবনে এক প্রকৃত উদ্দেশ্য প্রদান করে। আজকে এই ধরনের শিক্ষাই প্রয়োজন।

যিহোবা তাঁর লোকেদের একটা যে-গুণ গড়ে তুলতে সাহায্য করেন, সেটা হল সদাচরণ বা সততা, যেমনটা পরের অভিজ্ঞতাটি দেখায়। (ইব্রীয় ১৩:১৮) ভারতের একজন ভদ্রমহিলা বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী সময়ে একজন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে ওঠেন। একদিন একটা কিংডম হল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ থেকে বাড়িতে ফিরে আসার সময় তিনি একটা বাস স্টেশনের কাছে মাটিতে আট-শো (ইউ.এস.) ডলার সমমূল্যের একটা সোনার গয়না পান। যদিও তিনি দরিদ্র ছিলেন, তবুও তিনি মালিককে খুঁজে বের করার জন্য সেটা পুলিশের কাছে জমা দিয়ে আসেন। সেখানকার পুলিশ অফিসার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না! পরে, আরেকজন অফিসার তাকে জিজ্ঞেস করেন, “কেন আপনি গয়নাটা নিজের কাছে রেখে দেননি?” সেই ভদ্রমহিলা ব্যাখ্যা করেন: “বাইবেলের শিক্ষা আমাকে রূপান্তরিত করেছে, তাই আমি এখন একজন সৎ ব্যক্তি হয়েছি।” এই ঘটনা দেখে অভিভূত হয়ে, তিনি সেই ভদ্রমহিলার সঙ্গে আসা খ্রিস্টান প্রাচীনকে বলেছিলেন: “এই রাষ্ট্রে তিন কোটি আশি লক্ষেরও বেশি লোক রয়েছে। আপনারা যদি দশ জন লোককেও এই ভদ্রমহিলার মতো হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারেন, তাহলে সেটা এক বিরাট সাফল্য হবে।” আমরা যখন বিবেচনা করি যে, ঐশিক শিক্ষার কারণে লক্ষ লক্ষ লোকের জীবন উন্নত হয়েছে, তখন আমাদের কি যিহোবাকে প্রশংসা করার অনেক কারণ থাকে না?

৯. কীভাবে লোকেদের পক্ষে জীবনে বড়ো বড়ো পরিবর্তন করা সম্ভব?

ঈশ্বরের বাক্যের রূপান্তরের ক্ষমতা ও সেইসঙ্গে যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যে-সাহায্য জোগান, তা লোকেদেরকে তাদের জীবনে বড়ো বড়ো পরিবর্তন করতে সমর্থ করে। (রোমীয় ১২:২; গালা. ৫:২২, ২৩) কলসীয় ৩:১০ পদ বলে: ‘সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করো, যে আপন সৃষ্টিকর্ত্তার প্রতিমূর্ত্তি অনুসারে তত্ত্বজ্ঞানের নিমিত্ত নূতনীকৃত হইতেছে।’ একজন ব্যক্তি ভিতরে আসলে কেমন, তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে প্রাপ্ত বার্তা কার্যসাধক বা এর ক্ষমতা রয়েছে আর এটা তার চিন্তাভাবনার ধরন ও বিভিন্ন বিষয়ে তার অনুভূতিকে পরিবর্তন করতে পারে। (পড়ুন, ইব্রীয় ৪:১২.) শাস্ত্র সম্বন্ধীয় তত্ত্বজ্ঞান বা সঠিক জ্ঞান জানার ও যিহোবার ধার্মিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা নিয়ে ঈশ্বরের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন।

ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি

১০. (ক) আমাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে কেন যিহোবা এক অদ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন? (খ) কোন নাটকীয় পরিবর্তনগুলো শীঘ্র সমগ্র পৃথিবীকে প্রভাবিত করবে?

১০ আমাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে যিহোবা এক অদ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন কারণ তিনি জানেন যে, সামনে কী রয়েছে। সাধারণ মানবজাতির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা তিনি স্থির করেন (বা জানেন)। (যিশা. ৪৬:৯, ১০) বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী প্রকাশ করে যে, “সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী।” (সফ. ১:১৪) সেই দিন সম্বন্ধে হিতোপদেশ ১১:৪ পদের এই কথাগুলো সত্য বলে প্রমাণিত হবে: “ক্রোধের দিনে ধন উপকার করে না; কিন্তু ধার্ম্মিকতা মৃত্যু হইতে রক্ষা করে।” শয়তানের জগতের ওপর যিহোবার বিচার নিয়ে আসার সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন ঈশ্বরের সামনে আমাদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। টাকাপয়সা মূল্যহীন হয়ে যাবে। বস্তুতপক্ষে, যিহিষ্কেল ৭:১৯ পদ বলে: “তাহারা আপন আপন রৌপ্য চকে ফেলিয়া দিবে, তাহাদের সুবর্ণ অশুচি বস্তু হইবে।” এই পূর্বজ্ঞান আমাদেরকে এখনই বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করার জন্য সাহায্য করতে পারে।

১১. কোন একটা উপায়ে ঐশিক শিক্ষা আমাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে?

১১ একটা যে-স্বতন্ত্র উপায়ে ঐশিক শিক্ষা আমাদেরকে আসন্ন যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত করে, তা হল সঠিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো স্থাপন করতে আমাদেরকে সাহায্য করার দ্বারা। প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে লিখেছিলেন: “যাহারা এই যুগে ধনবান্‌, তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দেও, যেন তাহারা গর্ব্বিতমনা না হয়, এবং ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু . . . ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখে।” এমনকী আমাদের যদি প্রচুর টাকাপয়সা না-ও থাকে, তবুও আমরা ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত এই পরামর্শ থেকে উপকার লাভ করতে পারি। এর সঙ্গে কী জড়িত? বস্তুগত ধনসম্পদ সঞ্চয় করার পরিবর্তে, আমাদের ‘পরের উপকার করিবার’ ও ‘সৎক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান্‌ হইবার’ প্রচেষ্টা করা উচিত। আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখার মাধ্যমে আমরা ‘আপনাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত করি।’ (১ তীম. ৬:১৭-১৯) আত্মত্যাগমূলক এইরকম জীবন ব্যবহারিক প্রজ্ঞাকে প্রতিফলিত করে কারণ যিশু বলেছিলেন, “মনুষ্য যদি সমুদয় জগৎ লাভ করিয়া আপন প্রাণ হারায়, তবে তাহার কি লাভ হইবে?” (মথি ১৬:২৬, ২৭) যিহোবার দিন যে নিকটবর্তী, সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের প্রত্যেকের এটা বিবেচনা করা উচিত: ‘আমি কোথায় ধন সঞ্চয় করছি? আমি কি ঈশ্বরের না ধনসম্পদের দাসত্ব করছি?’—মথি ৬:১৯, ২০, ২৪.

১২. কিছু লোক যদি আমাদের পরিচর্যাকে অবজ্ঞা করে, তাহলে কেন আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়?

১২ খ্রিস্টানদের জন্য ঈশ্বরের বাক্যে উল্লেখিত ‘সৎক্রিয়াগুলোর’ মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার জীবনরক্ষাকারী কাজ। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) প্রথম শতাব্দীর মতো বর্তমানেও, কেউ কেউ আমাদের পরিচর্যাকে অবজ্ঞা করতে পারে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১:১৮-২১.) কিন্তু, এটা আমাদের বার্তার মূল্যকে বদলে দেয় না এবং এটা সময় থাকতে থাকতে প্রত্যেককে বিশ্বাস স্থাপন করার সুযোগ করে দেওয়ার গুরুত্বকেও কমিয়ে দেয় না। (রোমীয় ১০:১৩, ১৪) আমরা যখন অন্যদেরকে ঐশিক শিক্ষা থেকে উপকার লাভ করার জন্য সাহায্য করি, তখন আমরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করি।

ত্যাগস্বীকার করার ফলে আশীর্বাদপ্রাপ্ত

১৩. সুসমাচারের জন্য পৌল কোন ত্যাগস্বীকারগুলো করেছিলেন?

১৩ একজন খ্রিস্টান হওয়ার আগে, প্রেরিত পৌল যিহুদি সমাজব্যবস্থায় সাফল্য লাভের জন্য প্রশিক্ষিত হয়েছিলেন। তার বয়স যখন সম্ভবত ১৩ বছর ছিল, তখন তিনি গণ্যমান্য ব্যবস্থাগুরু গমলীয়েলের কাছে অধ্যয়ন করার জন্য তার নিজ নগর তার্ষ থেকে যিরূশালেমে গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২২:৩) পরে, পৌল তার সমসাময়িক ব্যক্তিদের মধ্যে বিশিষ্ট হতে শুরু করেছিলেন আর তিনি যদি সেই অধ্যয়ন চালিয়ে যেতেন, তাহলে তিনি হয়তো যিহুদিধর্মে বিখ্যাত ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারতেন। (গালা. ১:১৩, ১৪) তিনি যখন সুসমাচার গ্রহণ এবং প্রচার কাজ শুরু করেছিলেন, তখন তিনি সেইসমস্ত বিষয় পরিত্যাগ করেছিলেন। পৌল যে-বিষয় বাছাই করেছিলেন, সেটার জন্য কি তিনি আপশোস করেছিলেন? না। বস্তুতপক্ষে, তিনি লিখেছিলেন: “আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি।”—ফিলি. ৩:৮.

১৪, ১৫. “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী” হিসেবে আমরা কোন আশীর্বাদগুলো উপভোগ করি?

১৪ আজকে খ্রিস্টানরা পৌলের মতো সুসমাচারের জন্য বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করে। (মার্ক ১০:২৯, ৩০) তা করার কারণে আমাদের কি কোনো কিছুর অভাব বোধ হয়? শুরুতে উল্লেখিত রবার্ট অনেকের মতো একই অনুভূতি প্রকাশ করেন, যখন তিনি বলেন: “কোনো কিছুর জন্যই আমার আপশোস হয় না। পূর্ণসময়ের পরিচর্যা আমাকে আনন্দ ও পরিতৃপ্তি প্রদান করেছে আর এটা আমাকে ‘সদাপ্রভু যে মঙ্গলময়, তাহা আস্বাদন করিয়া দেখিবার’ সুযোগ করে দিয়েছে। আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করার জন্য যখনই আমি বিভিন্ন বস্তুগত ত্যাগস্বীকার করেছি, তখনই যিহোবা সর্বদা আমাকে আমি যা ত্যাগ করেছি, তার চেয়ে আরও বেশি কিছু দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন। বিষয়টা এমন যেন আমি আসলে কোনো ত্যাগস্বীকারই করিনি। আমি কেবল পেয়েছি!”—গীত. ৩৪:৮; হিতো. ১০:২২.

১৫ আপনি যদি কিছু সময় ধরে প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন, তাহলে নিঃসন্দেহে আপনারও এটা আস্বাদন করে দেখার সুযোগ হয়েছে যে, যিহোবা মঙ্গলময়। এমন সময় কি এসেছে, যখন আপনি সুসমাচার উপস্থাপন করার সময় তাঁর আত্মার সাহায্য অনুভব করেছেন? আপনি কি কখনো সেই ব্যক্তিদের আনন্দিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ করেছেন, যখন যিহোবা বার্তার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য তাদের হৃদয় খুলে দিয়েছেন? (প্রেরিত ১৬:১৪) যিহোবা কি আপনাকে বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন, হতে পারে আপনার পরিচর্যাকে বাড়ানোর পথ খুলে দিয়েছেন? তিনি কি আপনাকে কঠিন সময়গুলোতে সমর্থন করেছেন, এমন সময়ে তাঁকে সেবা করে চলার জন্য সাহায্য করেছেন, যখন আপনার শক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়েছিল? (ফিলি. ৪:১৩) আমাদের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার সময় আমরা যখন ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার সাহায্য সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করি, তখন তিনি আমাদের কাছে আরও বাস্তব হয়ে ওঠেন এবং আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী বোধ করি। (যিশা. ৪১:১০) ঐশিক শিক্ষার মহৎ কাজে ‘ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারীদের’ মধ্যে একজন হওয়া কি এক আশীর্বাদ নয়?—১ করি. ৩:৯.

১৬. ঐশিক শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত বিষয়গুলোতে আপনি যে-প্রচেষ্টা ও ত্যাগস্বীকারগুলো করেন, সেগুলো সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?

১৬ অনেক লোক নিজেদের জীবনকালে স্থায়ী তাৎপর্যপূর্ণ কিছু সম্পাদন করার আশা করে থাকে। আমরা দেখেছি যে, আজকের জগতে এমনকী উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলোকেও প্রায়ই ভুলে যাওয়া হয়। কিন্তু, যিহোবার নামের পবিত্রীকরণের সঙ্গে সংযুক্ত আধুনিক দিনের যে-কাজগুলো তিনি সম্পাদন করছেন, সেগুলো নিঃসন্দেহে ঈশতান্ত্রিক ইতিহাসের অংশ হিসেবে স্থায়ী বিবরণে সংরক্ষিত থাকবে। চিরকাল ধরে সেগুলো স্মরণ করা হবে। (হিতো. ১০:৭; ইব্রীয় ৬:১০) আমরা যেন ঐশিক শিক্ষার ইতিহাস সৃষ্টিকারী কাজে অংশ নেওয়ার বিশেষ সুযোগকে খুবই মূল্যবান বলে গণ্য করি।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• যিহোবা যাদেরকে শিক্ষা দেন, তাদের কাছ থেকে তিনি কী চান?

• কীভাবে ঐশিক শিক্ষা লোকেদের জীবনকে উন্নত করে?

• ঐশিক শিক্ষা থেকে উপকার লাভ করতে অন্যদেরকে সাহায্য করার জন্য কোন কোন উপায়ে আমরা আশীর্বাদ লাভ করি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যারা যিহোবার দ্বারা শিক্ষা লাভ করে, তারা এক প্রকৃত আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ গড়ে তোলে

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

‘ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারীদের’ মধ্যে একজন হওয়া কি এক আশীর্বাদ নয়?