খ্রিস্টের প্রেম আমাদের অন্যদেরকে ভালোবাসতে প্রেরণা দেয়
খ্রিস্টের প্রেম আমাদের অন্যদেরকে ভালোবাসতে প্রেরণা দেয়
“যীশু, . . . জগতে অবস্থিত আপনার নিজস্ব যে লোকদিগকে প্রেম করিতেন, তাহাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিলেন।”—যোহন ১৩:১.
১, ২. (ক) যিশুর প্রেম কীভাবে উল্লেখযোগ্য? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা প্রেমের কোন দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করব?
যিশু প্রেমের নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তাঁর সবকিছু—তাঁর কথা, তাঁর আচরণ, তাঁর শিক্ষাদান ও তাঁর বলিদানমূলক মৃত্যু—তাঁর প্রেমকে প্রদর্শন করেছিল। পৃথিবীতে তাঁর জীবনের একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যিশু তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া সকলের প্রতি, বিশেষ করে তাঁর শিষ্যদের প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন।
২ যিশুর প্রেমের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, তাঁর অনুসারীদের জন্য অনুসরণ করার মতো এক উচ্চমান স্থাপন করে। এ ছাড়া, এটা আমাদেরকে আমাদের আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের ও সেইসঙ্গে সকলের প্রতি একইরকম প্রেম দেখাতে প্রেরণা দেয়। এই প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব যে, মণ্ডলীর প্রাচীনরা সেই ব্যক্তিদের প্রতি প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে যিশুর কাছ থেকে কী শিখতে পারে, যারা অন্যায় করেছে, বিশেষ করে গুরুতর অন্যায়গুলো করেছে। এ ছাড়া আমরা এও আলোচনা করব যে, কীভাবে যিশুর প্রেম খ্রিস্টানদেরকে কষ্ট, দুর্যোগ ও অসুস্থতার সময়গুলোতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রেরণা দেয়।
৩. পিতরের গুরুতর দুর্বলতা সত্ত্বেও, যিশু তার সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিলেন?
৩ যিশুর মৃত্যুর আগের রাতে, তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রেরিত পিতর তাঁকে তিন বার অস্বীকার করেছিলেন। (মার্ক ১৪:৬৬-৭২) তবে যিশুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, পিতর যখন তার ভুলের কারণে অনুতপ্ত হয়েছিলেন, তখন যিশু তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। যিশু পিতরের ওপর গুরু দায়িত্বের ভার দিয়েছিলেন। (লূক ২২:৩২; প্রেরিত ২:১৪; ৮:১৪-১৭; ১০:৪৪, ৪৫) যাদের গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে, সেই ব্যক্তিদের প্রতি যিশুর মনোভাব থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
অন্যায়কারীদের প্রতি খ্রিস্টের মনোভাব প্রদর্শন করুন
৪. বিশেষ করে কোন পরিস্থিতিতে খ্রিস্টের মনোভাব প্রদর্শন করা প্রয়োজন?
৪ খ্রিস্টের মনোভাব প্রদর্শন করা প্রয়োজন এমন অনেক পরিস্থিতির মধ্যে নির্দিষ্টভাবে দুঃখজনক পরিস্থিতি হচ্ছে, গুরুতর অন্যায়ের মোকাবিলা করা, তা সেটা পরিবারে বা মণ্ডলীতে যেখানেই হোক না কেন। দুঃখের বিষয় যে, শয়তানের বিধিব্যবস্থার শেষ দিনগুলো যতই এর চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, জগতের আত্মা নৈতিক অবস্থার আরও অধঃপতন ঘটাচ্ছে। জগতের মন্দ বা উদাসীন নৈতিক মনোভাব যুবক-বৃদ্ধ সকলের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং সংকীর্ণ পথে চলার বিষয়ে তাদের সংকল্পকে ক্রমান্বয়ে দুর্বল করে দিতে পারে। প্রথম শতাব্দীতে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে কাউকে কাউকে সমাজচ্যুত করতে হয়েছিল এবং অন্যদেরকে তিরস্কার করা হয়েছিল। বর্তমানেও একই বিষয় বলা যায়। (১ করি. ৫:১১-১৩; ১ তীম. ৫:২০) তা সত্ত্বেও, যে-প্রাচীনরা এই বিষয়গুলো পরিচালনা করে, তারা যখন খ্রিস্টতুল্য প্রেম প্রদর্শন করে, তখন তা অন্যায়কারীর ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. অন্যায়কারীদের প্রতি প্রাচীনদের কীভাবে খ্রিস্টের মনোভাব অনুকরণ করা উচিত?
৫ যিশুর মতো প্রাচীনদেরও সবসময় যিহোবার ধার্মিক মানগুলোকে সমর্থন করতে হবে। তা করে তারা যিহোবার মৃদুতা, দয়া ও প্রেমকে প্রতিফলিত করে। কেউ যখন তার ভুলের কারণে প্রকৃতই অনুতপ্ত, ‘ভগ্নচিত্ত’ এবং ‘চূর্ণমনা’ হয়, তখন প্রাচীনদের জন্য হয়তো ‘সেই প্রকার ব্যক্তিকে মৃদুতার আত্মায় সুস্থ [“পুনঃসমন্বয়,” NW] করা’ কঠিন হয় না। (গীত. ৩৪:১৮; গালা. ৬:১) কিন্তু, উদ্ধত ও সামান্য অনুতপ্ত কিংবা অনুতাপহীন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আচরণ করার বিষয়ে কী বলা যায়?
৬. অন্যায়কারীদের সঙ্গে আচরণ করার সময় প্রাচীনদের কী এড়িয়ে চলতে হবে এবং কেন?
৬ একজন অন্যায়কারী যখন শাস্ত্রীয় পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেন বা তার ভুলের জন্য অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখন প্রাচীনরা এবং অন্যেরা হয়তো ক্ষুব্ধ হতে পারে। সেই ব্যক্তি ইতিমধ্যেই যে-ক্ষতি করেছেন, তা জানায় তারা হয়তো ব্যক্তির কাজ ও মনোভাব সম্বন্ধে তাদের নিজস্ব অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে। কিন্তু, ক্রুদ্ধ হওয়া ক্ষতিকর এবং ‘খ্রীষ্টের মনকে’ প্রতিফলিত করে না। (১ করি. ২:১৬; পড়ুন, যাকোব ১:১৯, ২০.) যিশু তাঁর দিনের কিছু ব্যক্তিকে স্পষ্টভাবে সাবধান করেছিলেন কিন্তু তিনি একবারের জন্যও এমন কিছু বলেননি, যা বিদ্বেষপূর্ণ ছিল কিংবা অন্যদের কষ্ট দেওয়ার কারণ হয়েছিল। (১ পিতর ২:২৩) এর পরিবর্তে, তিনি অন্যায়কারীদের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার ও যিহোবার অনুগ্রহ ফিরে পাওয়ার সুযোগ খুলে দিয়েছিলেন। বস্তুতপক্ষে, যিশুর জগতে আসার পিছনে অনেক কারণের মধ্যে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে, ‘পাপীদের পরিত্রাণ করা।’—১ তীম. ১:১৫.
৭, ৮. বিচার সংক্রান্ত বিষয়গুলো মীমাংসা করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা প্রাচীনদেরকে পরিচালনা দেওয়া উচিত?
৭ এই বিষয়ে যিশুর উদাহরণ কীভাবে সেই ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের মনোভাবকে প্রভাবিত করে, যারা মণ্ডলী থেকে শাসন লাভ করেছে? মনে রাখবেন যে, মণ্ডলীর মধ্যে বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার শাস্ত্রীয় ব্যবস্থা পালকে রক্ষা করে এবং শাসনপ্রাপ্ত একজন অন্যায়কারীকে অনুতপ্ত হতে পরিচালিত করতে পারে। (২ করি. ২:৬-৮) এটা দেখা দুঃখজনক যে, কিছু ব্যক্তি অনুতপ্ত হয় না বলে তাদেরকে সমাজচ্যুত করতে হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ব্যক্তিদের মধ্যে এক বিরাট সংখ্যক লোক পরে যিহোবার কাছে ও তাঁর মণ্ডলীতে ফিরে আসে। যখন প্রাচীনরা এক খ্রিস্টতুল্য মনোভাব প্রদর্শন করে, তখন তারা সেই ব্যক্তির হৃদয়কে পরিবর্তন করতে ও শেষপর্যন্ত ফিরে আসার পথকে সহজতর করতে সাহায্য করে। ভবিষ্যতে, এই সমাজচ্যুত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েক জন হয়তো প্রাচীনদের দেওয়া সমস্ত শাস্ত্রীয় পরামর্শ স্মরণ করতে পারবে না, কিন্তু যে-বিষয়টা তারা নিশ্চিতভাবে স্মরণে রাখবে তা হচ্ছে, প্রাচীনরা তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিল ও তাদের সঙ্গে প্রেমপূর্ণ আচরণ করেছিল আর সেই বিষয়টা তাদেরকে মণ্ডলীতে ফিরে আসতে প্রেরণা দেবে।
৮ তাই প্রাচীনদেরকে এমনকী কঠিন পরিস্থিতিগুলোর মধ্যেও “আত্মার ফল,” মূলত খ্রিস্টতুল্য প্রেম প্রদর্শন করতে হবে। (গালা. ৫:২২, ২৩) একজন অন্যায়কারীকে সমাজচ্যুত করার ব্যাপারে তাদের কখনোই তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। তাদের দেখাতে হবে যে, তারা চায় যেন ভুল করেছে এমন ব্যক্তিরা যিহোবার কাছে ফিরে আসে। তাই, একজন পাপী যখন পরে অনুতপ্ত হন, যেমনটা অনেকে হয়ে থাকে, তখন তিনি হয়তো যিহোবার কাছে এবং ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষদের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ হতে পারেন, যারা তার জন্য মণ্ডলীতে ফিরে আসাকে সহজতর করেছে।—ইফি. ৪:৮, ১১, ১২.
শেষকালে খ্রিস্টতুল্য প্রেম দেখানো
৯. যিশু যে তাঁর শিষ্যদের প্রতি এক ব্যবহারিক উপায়ে প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন, সেটার একটা উদাহরণ দিন।
৯ লূক এক উল্লেখযোগ্য বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন, যেটি যিশুর ব্যবহারিক প্রেমকে প্রদর্শন করে। একসময়, রোমীয় সৈন্যরা ধ্বংসের জন্য অবধারিত যিরূশালেম নগরকে অবরোধ করবে ও এর ফলে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হবে না জানায়, যিশু প্রেমের সঙ্গে তাঁর শিষ্যদের এই বলে সাবধান করে দিয়েছিলেন: “যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট।” তখন তাদের কী করা উচিত? যিশু আগে থেকে স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। “তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক। কেননা তখন প্রতিশোধের সময়, যে সমস্ত কথা লিখিত আছে, সেই সমস্ত পূর্ণ হইবার সময়।” (লূক ২১:২০-২২) রোমীয় সৈন্যরা সা.কা. ৬৬ সালে যিরূশালেমকে ঘিরে ফেলার পর, বাধ্য ব্যক্তিরা এই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছিল।
১০, ১১. প্রাথমিক খ্রিস্টানদের যিরূশালেম থেকে পলায়ন করার বিষয়টা বিবেচনা করা কীভাবে আমাদেরকে ‘মহাক্লেশের’ জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে পারে?
১০ যিরূশালেম থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময়, খ্রিস্টানদের একে অন্যের প্রতি খ্রিস্টতুল্য প্রেম দেখানোর প্রয়োজন ছিল, যেমনটা খ্রিস্ট তাদের প্রতি দেখিয়েছিলেন। তাদের যা-কিছু ছিল, তা-ই একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়েছিল। কিন্তু, যিশুর ভবিষ্যদ্বাণীর শুধুমাত্র সেই প্রাচীন নগরের ধ্বংস ছাড়াও এক বৃহত্তর পরিপূর্ণতা ছিল। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “তৎকালে এরূপ ‘মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না’।” (মথি ২৪:১৭, ১৮, ২১) সেই “মহাক্লেশ,” যা এখনও ভবিষ্যতের বিষয়, সেটার আগে ও তা চলাকালে আমরাও হয়তো বিভিন্ন কষ্ট ও বঞ্চনা ভোগ করতে পারি। খ্রিস্টের মনোভাব রাখা আমাদেরকে সেগুলো সহ্য করতে সাহায্য করবে।
১১ সেই সময় আমাদের যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে হবে, নিঃস্বার্থ প্রেম দেখাতে হবে। এই ক্ষেত্রে পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আমাদের প্রত্যেক জন যাহা উত্তম, তাহার জন্য, গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত, প্রতিবাসীকে তুষ্ট করুক। কারণ খ্রীষ্টও আপনাকে তুষ্ট করিলেন না, . . . ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বর এমন বর দিউন, যাহাতে তোমরা খ্রীষ্ট যীশুর অনুরূপে পরস্পর একমনা হও।”—রোমীয় ১৫:২, ৩, ৫.
১২. এখন আমাদের কোন ধরনের প্রেম গড়ে তুলতে হবে আর কেন?
১২ যিশুর প্রেমের গ্রহীতা পিতরও অনুরূপভাবে খ্রিস্টানদেরকে নিষ্কপট বা ‘অকল্পিত ভ্রাতৃপ্রেম’ গড়ে তুলতে এবং ‘সত্যের আজ্ঞাবহ’ হতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাদেরকে “অন্তঃকরণে পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম” করতে হবে। (১ পিতর ১:২২) আজকে, আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি করে এই ধরনের খ্রিস্টতুল্য গুণাবলি গড়ে তোলা প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই, ঈশ্বরের সমস্ত লোকের ওপর চাপ তীব্রতর হচ্ছে। এই জগতের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা যা দেখায়, তা থেকে এটা স্পষ্ট যে, কারোরই এই পুরোনো জগতের কোনো বিষয়ের ওপর আস্থা রাখা উচিত নয়। (পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫-১৭.) এর পরিবর্তে, এই বিধিব্যবস্থার শেষ যতই এগিয়ে আসছে, আমাদের যিহোবার ও একে অন্যের আরও নিকটবর্তী হতে হবে, মণ্ডলীর মধ্যে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০) আর এই বিষয়ের ওপর পিতরও জোর দিয়ে বলেছিলেন: “সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম কর; কেননা ‘প্রেম পাপরাশি আচ্ছাদন করে।’”—১ পিতর ৪:৮.
১৩-১৫. প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরবর্তী সময়ে কিছু ভাইয়েরা কীভাবে খ্রিস্টতুল্য প্রেম প্রদর্শন করেছে?
১৩ পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সাক্ষিরা তাদের খ্রিস্টতুল্য প্রেম দেখানোর জন্য পরিচিত। ২০০৫ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের এক বিরাট এলাকায় বিভিন্ন ঝড় ও ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর সাহায্যের জন্য করা আবেদনের প্রতি সাক্ষিরা যেভাবে সাড়া দিয়েছিল, তা বিবেচনা করুন। যিশুর উদাহরণের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, ২০,০০০-রেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক তাদের নিজেদের আরামদায়ক বাড়ি ও নিরাপদ চাকরি ছেড়ে দিয়ে দুর্দশাগ্রস্ত ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে গিয়েছিল।
১৪ একটা এলাকায়, সমুদ্রের জল ভূখণ্ডের প্রায় ৮০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল, ঘূর্ণির আকারে জলের প্রাচীর ১০ মিটার উঁচু হয়ে গিয়েছিল। জল যখন কমে এসেছিল, তখন এর গতিপথে থাকা এক-তৃতীয়াংশ বাড়িঘর ও অন্যান্য দালানকোঠা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সাক্ষি স্বেচ্ছাসেবকরা, যাদের কারো কারো প্রয়োজনীয় দক্ষতা ছিল, তারা সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল এবং সেই এলাকায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম নিয়ে এসেছিল আর তারা প্রয়োজনীয় যেকোনো কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল। দুই আপন বোন, যারা দুজনেই বিধবা ছিল, তারা তাদের জিনিসপত্র একটা ছোট্ট ট্রাকে উঠিয়ে ৩,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ গাড়ি চালিয়ে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিল। সেই বোনদের মধ্যে একজন সেই এলাকাতেই রয়ে গিয়েছেন, স্থানীয় ত্রাণ কমিটিতে সাহায্য করছেন এবং নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছেন।
১৫ সেই এলাকার সাক্ষি ও অন্যান্যদের প্রায় ৫,৬০০-রও বেশি বাড়িঘর পুনরায় নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছিল। স্থানীয় সাক্ষিরা প্রেমের এই অপূর্ব প্রদর্শন দেখে কেমন অনুভব করেছিল? একজন বোনের বাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি থাকার জন্য এমন একটা ছোট্ট ট্রেইলারে চলে গিয়েছিলেন, যেটার ছাদে ফুটো ছিল এবং সেই ট্রেইলারে একটা ভাঙা চুলো ছিল। ভাইয়েরা তার জন্য একটা সাদামাটা কিন্তু আরামদায়ক বাড়ি বানিয়ে দিয়েছিল। তার ছিমছাম নতুন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যিহোবা ও তার ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কেঁদে ফেলেছিলেন। অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে, স্থানচ্যুত স্থানীয় সাক্ষিরা তাদের বাড়িঘর নির্মিত হয়ে যাওয়ার পরেও আরও এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে তাদের অস্থায়ী আবাসগুলোতে বাস করেছিল। কেন? তাদের নতুন বাড়িকে ত্রাণকর্মীদের থাকার জন্য প্রাপ্তিসাধ্য করে দিতে। খ্রিস্টের মনোভাব প্রদর্শন করার কী এক উদাহরণ!
অসুস্থদের প্রতি খ্রিস্টের মতো মনোভাব দেখানো
১৬, ১৭. কোন কোন উপায়ে আমরা অসুস্থদের প্রতি খ্রিস্টের মনোভাব প্রতিফলিত করতে পারি?
১৬ আমাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে অল্প কিছু ব্যক্তিকে বড়ো বড়ো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু, বলতে গেলে প্রায় প্রত্যেককেই স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, সেটা হতে পারে তার নিজের বা পরিবারের সদস্যদের। অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি যিশুর মতো মনোভাব আমাদের জন্য এক উদাহরণ হিসেবে কাজ করে। তাঁর প্রেম তাঁকে অন্যদের প্রতি করুণাবিষ্ট হতে পরিচালিত করেছিল। জনতা যখন তাদের অসুস্থ ব্যক্তিদের তাঁর কাছে নিয়ে এসেছিল, তখন তিনি “সকল পীড়িত লোককে সুস্থ করিলেন।”—মথি ৮:১৬; ১৪:১৪.
১৭ আজকে, খ্রিস্টানদের যিশুর মতো অলৌকিকভাবে সুস্থ করার শক্তি নেই কিন্তু তারা অসুস্থদের প্রতি যিশুর মতো সমবেদনাপূর্ণ মনোভাব দেখিয়ে থাকে। সেটা কীভাবে প্রদর্শিত হয়? একটা প্রমাণ হিসেবে, প্রাচীনরা মণ্ডলীর অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করার ব্যাপারে ব্যবস্থাদি করে ও সেইসঙ্গে মথি ২৫:৩৯, ৪০ পদের নীতি অনুসরণ করে তারা দেখায় যে, তাদের খ্রিস্টের মতো মনোভাব রয়েছে। * (পড়ুন।)
১৮. কীভাবে দুজন বোন অন্য আরেকজন বোনের প্রতি অকৃত্রিম প্রেম প্রদর্শন করেছিল আর এর ফল কী হয়েছিল?
১৮ অবশ্য, অন্যদের প্রতি সৎকর্ম করার জন্য একজনকে যে প্রাচীনই হতে হবে, তা নয়। ৪৪ বছর বয়স্কা শারলিনের কথা বিবেচনা করুন, যার ক্যান্সার হয়েছিল এবং তাকে বলা হয়েছিল যে, তিনি আর মাত্র দশ দিন বেঁচে থাকবেন। বোন শারলিনের প্রয়োজনীয়তা লক্ষ করে এবং তার একনিষ্ঠ স্বামী তার যত্ন নিতে গিয়ে যে-কষ্ট করছিলেন, তা দেখে শ্যারন ও নিকোলেট নামে দুজন আত্মিক বোন শারলিনের অন্তিম দিনগুলোতে তাকে পূর্ণসময় সাহায্য করার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিল। সেই দুই বোন শারলিনের জীবনের শেষ পর্যন্ত তার প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখিয়েছিল, তবে মাত্র দশ দিন নয় কিন্তু ছয় সপ্তাহ ধরে তার যত্ন নিয়েছিল। “আপনি যখন জানতে পারেন যে, অসুস্থ ব্যক্তি আর সুস্থ হবে না, তখন তার যত্ন নেওয়া খুব কঠিন হয়,” শ্যারন বলেন। “তা সত্ত্বেও, যিহোবা আমাদের বলবান করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা আমাদেরকে যিহোবার এবং একে অন্যের আরও নিকটবর্তী করেছে।” শারলিনের স্বামী বলেন: “এই দুই প্রিয় বোনের সদয় ও ব্যবহারিক সমর্থনের কথা আমি সবসময় মনে রাখব। তাদের শুদ্ধ উদ্দেশ্য ও ইতিবাচক মনোভাব আমার বিশ্বস্ত শারলিনের জন্য এই শেষ পরীক্ষাটা সহ্য করাকে সহজতর করেছিল এবং আমাকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শারীরিক ও মানসিক স্বস্তি এনে দিয়েছিল। আমি তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। তাদের আত্মত্যাগ যিহোবার প্রতি আমার বিশ্বাসকে এবং আমাদের পুরো ভ্রাতৃসমাজের প্রতি আমার প্রেমকে শক্তিশালী করেছে।”
১৯, ২০. (ক) খ্রিস্টের মনোভাবের কোন পাঁচটা দিক আমরা বিবেচনা করেছি? (খ) আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
১৯ এই তিনটে ধারাবাহিক প্রবন্ধে আমরা যিশুর মনোভাবের পাঁচটা দিক এবং কীভাবে আমরা তাঁর চিন্তাভাবনা ও কাজের ধারার আদর্শ গ্রহণ করতে পারি, তা বিবেচনা করেছি। আসুন আমরা যিশুর মতো “মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত” হই। (মথি ১১:২৯) আমরাও যেন অন্যদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করার আপ্রাণ চেষ্টা করি, এমনকী যখন তাদের অসিদ্ধতা ও দুর্বলতাগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায়, তখনও। আসুন আমরা যিহোবা যা যা চান, সাহসের সঙ্গে সমস্তকিছুর বাধ্য হই, এমনকী পরীক্ষাগুলোর মুখেও।
২০ শেষে, আসুন আমরা আমাদের সমস্ত ভাইবোনের প্রতি খ্রিস্টতুল্য প্রেম দেখাই, যেমনটা স্বয়ং খ্রিস্ট “শেষ পর্য্যন্ত” দেখিয়েছিলেন। এই ধরনের প্রেম আমাদেরকে যিশুর প্রকৃত অনুসারী হিসেবে শনাক্ত করে। (যোহন ১৩:১, ৩৪, ৩৫) হ্যাঁ, আপনাদের “ভ্রাতৃপ্রেম স্থির থাকুক।” (ইব্রীয় ১৩:১) পিছিয়ে পড়বেন না! যিহোবার প্রশংসায় এবং অন্যদের সাহায্য করার জন্য আপনার জীবনকে ব্যবহার করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন! যিহোবা আপনার আন্তরিক প্রচেষ্টাগুলোকে আশীর্বাদ করবেন।
[পাদটীকা]
^ ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই সংখ্যার প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “‘উষ্ণ ও তৃপ্ত হও’: এই কথা বলার চাইতেও আরও অতিরিক্ত কিছু করুন” শিরোনামের প্রবন্ধটি দেখুন।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
• প্রাচীনরা কীভাবে অন্যায়কারীদের প্রতি খ্রিস্টের মনোভাব প্রদর্শন করতে পারে?
• এই শেষকালে খ্রিস্টের প্রেম অনুকরণ করা কেন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
• কীভাবে আমরা অসুস্থদের প্রতি খ্রিস্টের মনোভাব প্রতিফলিত করতে পারি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনরা চায়, ভুল করেছে এমন ব্যক্তিরা যেন যিহোবার কাছে ফিরে আসে
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিরূশালেম ত্যাগ করে আসা খ্রিস্টানরা কীভাবে খ্রিস্টের মনোভাব প্রতিফলিত করেছিল?
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার সাক্ষিরা খ্রিস্টতুল্য প্রেমকে কাজে প্রকাশ করার জন্য পরিচিত