সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার বধির ভাইবোনদের মূল্যবান বলে গণ্য করুন!

আপনার বধির ভাইবোনদের মূল্যবান বলে গণ্য করুন!

আপনার বধির ভাইবোনদের মূল্যবান বলে গণ্য করুন!

 আজকে ঈশ্বরের লোকেরা আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের নিয়ে গঠিত এক বৃহৎ পরিবারের অংশ, যাদের উত্তরাধিকারের উৎস হতে পারে প্রাচীনকালের নারী-পুরুষরা। তাদের মধ্যে রয়েছে শমূয়েল, দায়ূদ, শিম্‌শোন, রাহব, মোশি, অব্রাহাম, সারা, নোহ এবং হেবল। যিহোবার অনুগত দাসদের মাঝে অনেক বধির ব্যক্তি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মঙ্গোলিয়াতে প্রথম যে-দুজন ব্যক্তি যিহোবার সাক্ষি হয়েছিল, তারা ছিল এক বধির দম্পতি। আর রাশিয়াতে আমাদের বধির সহবিশ্বাসীদের নীতিনিষ্ঠার ফল স্বরূপ, আমরা ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত-এ আইনগত বিজয় লাভ করেছি।

আধুনিক সময়ে, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” সাংকেতিক ভাষায় বিভিন্ন প্রকাশনা জুগিয়েছে এবং সাংকেতিক ভাষার মণ্ডলী ও সেইসঙ্গে সম্মেলনগুলো সংগঠিত করেছে। (মথি ২৪:৪৫) এগুলো বধির ব্যক্তিদের অনেক উপকৃত করেছে। * কিন্তু, আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, এই ব্যবস্থাদি ছাড়া সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে শেখা এবং সত্যে উন্নতি করা বধির ব্যক্তিদের জন্য কেমন ছিল? আপনি কি চিন্তা করেছেন যে, আপনার এলাকায় বসবাসকারী বধির ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

আধুনিক দিনের ব্যবস্থাদির পূর্বে

আপনি যদি কিছু বয়স্ক বধির ব্যক্তিকে ঈশ্বর সম্বন্ধে জানার ব্যাপারে তাদের অভিজ্ঞতার বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে কী? তারা হয়তো আপনাকে বলতে পারে যে, তাদের কেমন লেগেছিল, যখন তারা প্রথম শিখেছিল যে ঈশ্বরের একটি নাম আছে—কীভাবে সেই একটা সত্যই তাদের জীবনকে পালটে দিয়েছিল এবং আরও গভীর শাস্ত্রীয় সত্যগুলো শিখতে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সাংকেতিক ভাষায় ভিডিও কার্যক্রম অথবা ডিভিডিগুলো প্রাপ্তিসাধ্য হওয়ার আগে, বছরের পর বছর ধরে তাদেরকে টিকিয়ে রেখেছিল। তারা হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারে যে, সেই সময় তাদের কেমন লাগত, যখন খ্রিস্টীয় সভাগুলো সাংকেতিক ভাষায় পরিচালিত অথবা অনুবাদ করা হতো না। বরং, কেউ একজন তাদের পাশে বসতেন এবং কী বলা হচ্ছে, তা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করার জন্য একটা কাগজে নোট লিখতেন। একজন বধির ভাই সাত বছর ধরে এভাবেই বাইবেলের সত্যগুলো শিখেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না সাংকেতিক ভাষায় সভাগুলো অনুবাদ করার জন্য কোনো অনুবাদক এসেছিলেন।

বয়স্ক বধির সাক্ষিরা স্মরণ করে যে, মণ্ডলীর অন্য সদস্যদের সঙ্গে সেই লোকেদের কাছে প্রচার করতে কেমন লাগত, যারা শুনতে পায়। তাদের এক হাতে ঘরে ঘরে তুলে ধরার জন্য এক সহজসরল উপস্থাপনা লেখা একটা ছোটো কার্ড থাকত। আর অন্য হাতে তারা নতুন প্রহরীদুর্গসচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকাগুলো ধরে রাখত। অন্য আরেকজন বধির ব্যক্তির সঙ্গে কেবল ছাপানো প্রকাশনাগুলোর সাহায্যে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা কঠিন ছিল, যেগুলো তাদের কেউই ভালোভাবে বুঝতে পারত না। বয়স্ক বধির প্রকাশকরা সম্ভবত তাদের হতাশাজনক সেই অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে থাকে, যখন লোকেরা তাদের বুঝতে পারত না আর এর ফলে তারা আধ্যাত্মিক সত্যগুলো সম্বন্ধে বেশি কিছু বলতে পারত না। এ ছাড়া, তারা এও জানে যে, যিহোবার প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা থাকা থাকা সত্ত্বেও আস্থা সহকারে সেই অনুসারে কাজ করতে না পারার অনুভূতি কেমন। কেন? কারণ কোনো একটা বিষয় সম্বন্ধে তাদের বোধগম্যতা সঠিক ছিল কি না, সেই ব্যাপারে তারা নিশ্চিত ছিল না।

এইসমস্ত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, আমাদের বধির ভাইবোনেরা তাদের “সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW]” রক্ষা করেছে। (ইয়োব ২:৩) তারা যিহোবার অপেক্ষায় ছিল। (গীত. ৩৭:৭) আর এখন তিনি তাদেরকে, তাদের মধ্যে অনেকে যতটা আশা করতে পারত, তার চেয়েও অনেক বেশি করে আশীর্বাদ করছেন।

এমন একজন বধির ভাইয়ের করা প্রচেষ্টাগুলোর কথা বিবেচনা করুন, যিনি একজন স্বামী ও বাবা। সাংকেতিক ভাষায় ভিডিওগুলো প্রাপ্তিসাধ্য হওয়ার আগে, তিনি পারিবারিক অধ্যয়ন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে বিশ্বস্তভাবে নেতৃত্ব দিতেন। তার ছেলে স্মরণ করে বলেন: “আমার বাবার জন্য পারিবারিক অধ্যয়ন সবসময়ই কঠিন ছিল, কারণ আমাদেরকে যে-বিষয়গুলো তার শিক্ষা দিতে হতো, সেগুলোর সবই ছাপানো প্রকাশনাগুলো থেকে ছিল। প্রায়ই, তিনি লিখিত পাঠ্যাংশটি পুরোপুরি বুঝতে পারতেন না। আমরা ছোটোরাও তার জন্য অধ্যয়নকে কঠিন করে তুলতাম। তিনি যখন বিষয়গুলো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতেন না, তখন আমরা সঙ্গেসঙ্গে তাকে তা জানাতাম। এই সমস্ত কিছু সত্ত্বেও, তিনি সবসময়ই পারিবারিক অধ্যয়ন পরিচালনা করতেন। তিনি মনে করতেন যে, ইংরেজি বোঝার ক্ষেত্রে তার সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি যে মাঝে মাঝে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন, সেটার চেয়ে বরং আমাদের জন্য যিহোবা সম্বন্ধে কিছু শেখা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

এ ছাড়া, রিচার্ড নামে একজন ভাইয়ের উদাহরণ রয়েছে, যার বয়স ৭০-এর কোঠায় এবং যিনি একইসঙ্গে বধির ও অন্ধ আর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে বাস করেন। রিচার্ড খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে নিয়মিতভাবে যোগদান করার জন্য সুপরিচিত। সভাতে যোগদান করার জন্য তিনি একাই পাতাল রেলে চড়তেন, প্রতিটা স্টপেজ গুনতেন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন যে কখন নামতে হবে। একবার শীতের সময়, এমন প্রচণ্ড তুষার ঝড় হয়েছিল যে, সভা বাতিল করা হয়েছিল। মণ্ডলীর সকলকে তা জানানো হয়েছিল কিন্তু যেকোনো কারণে হোক রিচার্ডকে জানানো যায়নি। কী ঘটেছে তা বুঝতে পেরে ভাইয়েরা যখন তার খোঁজ করেছিল, তখন তারা রিচার্ডকে কিংডম হলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল, যিনি ধৈর্য সহকারে দরজা খোলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কেন তিনি এইরকম ঝড়ের মধ্যে বাইরে বেরিয়েছেন, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি যিহোবাকে ভালোবাসি।”

আপনি কী করতে পারেন?

আপনার এলাকায় কি বধির লোকেরা বাস করে? তাদের সঙ্গে ভাববিনিময় করার জন্য আপনি কি কিছুটা সাংকেতিক ভাষা শিখতে পারেন? অন্যদেরকে তাদের ভাষা শেখানোর সময় বধির লোকেরা সাধারণত খুবই সদয় ও ধৈর্যশীল হয়ে থাকে। যেকোনো জায়গায় অথবা পরিচর্যায় হয়তো কোনো বধির ব্যক্তির সঙ্গে আপনার দেখা হতে পারে। আপনি কী করতে পারেন? ভাববিনিময় করার চেষ্টা করুন। নানা অঙ্গভঙ্গি করুন, নোট ব্যবহার করুন, ছবি এঁকে দেখান, বিভিন্ন ছবি ব্যবহার করুন অথবা এগুলোর সবগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করুন। এমনকী একজন ব্যক্তি যদি ইঙ্গিত দেন যে, তিনি সত্যের প্রতি আগ্রহী নন, তবুও আপনার সাক্ষাতের বিষয়টা এমন একজন সাক্ষিকে বলুন, যিনি বধির অথবা সাংকেতিক ভাষা জানেন। যখন সাংকেতিক ভাষায় উপস্থাপন করা হয়, তখন একজন বধির ব্যক্তির কাছে বার্তাটি হয়তো আরও বেশি আগ্রহজনক হতে পারে।

হতে পারে, আপনি সাংকেতিক ভাষা শিখছেন এবং সাংকেতিক ভাষার কোনো মণ্ডলীতে যোগদান করছেন। কীভাবে আপনি সাংকেতিক ভাষায় কথা বলার ও সেই ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে আরও বেশি দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন? যদিও আপনার মণ্ডলীতে হয়তো অন্য প্রকাশকরা থাকতে পারে, যারা শুনতে পায় কিন্তু তাদের সঙ্গেও সাংকেতিক ভাষায় কথা বলুন না কেন? এটা আপনাকে সাংকেতিক ভাষায় চিন্তা করতে সাহায্য করবে। কখনো কখনো, আপনি হয়তো সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করার পরিবর্তে, কথা বলার জন্য প্রলোভিত হতে পারেন, যেহেতু সেটা হয়তো আপনার জন্য আরও সহজ। কিন্তু, কোনো ভাষা শেখার সময়, সাবলীল হওয়ার জন্য আপনাকে অধ্যবসায়ী হতে হবে।

সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা আমাদের বধির ভাইবোনদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করে। কর্মক্ষেত্রে বা স্কুলে লোকেদের কথা বুঝতে সমর্থ না হওয়ার কারণে বধির ব্যক্তিরা প্রতিদিন যে-হতাশা বোধ করে করে, তা একবার কল্পনা করুন। “প্রতিদিন, আমার চারপাশের লোকেরা কথা বলে,” একজন বধির ভাই বলেছিলেন। “প্রায়ই মনের মধ্যে একাকিত্বের ও নিজেকে পরিত্যক্ত মনে করার অনুভূতি গড়ে ওঠে আর আমি বিরক্ত হই, এমনকী রেগে যাই। কখনো কখনো আমি কেমন অনুভব করি, তা পুরোপুরি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।” আমাদের সভাগুলো আনন্দের এক উপলক্ষ্য হওয়া উচিত যেখানে আমাদের বধির ভাইবোনেরা আধ্যাত্মিক খাবার পেয়ে থাকে এবং উষ্ণ ভাববিনিময় ও সাহচর্য উপভোগ করে থাকে।—যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.

বধির ব্যক্তিদের সেই ছোটো ছোটো অনেক দলকে উপেক্ষা করা যায় না, যারা এমন মণ্ডলীগুলোর সঙ্গে মিলিত হয়ে থাকে, যেগুলোর সদস্যরা শুনতে পায়। তাদের জন্য সভাগুলো সাংকেতিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়ে থাকে। যে-বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়, তা পুরোপুরিভাবে বোঝার জন্য, মণ্ডলীর বধির সদস্যরা কিংডম হলে সামনের দিকে বসে। এটা তাদেরকে কোনোরকম বাধা ছাড়াই, একইসঙ্গে অনুবাদক ও বক্তা উভয়কেই দেখতে সাহায্য করে। অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে, মণ্ডলীর বাকি সদস্যরা দ্রুত এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে আর এটা কোনো বিক্ষেপ নয়। এই ব্যবস্থাদি সেই সম্মেলনগুলোর প্রতিও প্রযোজ্য, যেখানে সাংকেতিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়ে থাকে। একজন বধির ব্যক্তি যেভাবে—অর্থপূর্ণ ও স্বাভাবিকভাবে—তথ্যকে প্রকাশ করতে পারেন, ঠিক সেভাবে অনুবাদ করার জন্য মণ্ডলীর কঠোর পরিশ্রমী সদস্যরা উষ্ণ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

হতে পারে, আপনি এমন একটা মণ্ডলীর সদস্য, যেখানে সাংকেতিক ভাষার একটা দল অথবা অল্পসংখ্যক বধির ব্যক্তি রয়েছে, যাদের জন্য সভাগুলো সাংকেতিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়ে থাকে। এই বধির ভাইবোনদের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখানোর জন্য আপনি কী করতে পারেন? তাদেরকে আপনার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। সম্ভব হলে, কিছু সংকেত শিখে নিন। ভাববিনিময় করার প্রতিবন্ধকতার কারণে ভয় পাবেন না। ভাববিনিময় করার কোনো না কোনো উপায় আপনি খুঁজে পাবেন আর এই ধরনের ভালোবাসা দেখানোর ফলে আপনি বিভিন্ন উপভোগ্য স্মৃতি লাভ করতে পারবেন। (১ যোহন ৪:৮) বধির সহসাক্ষিদের আমাদেরকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে। তারা আলোচনা করতে ভালোবাসে, তারা খুবই অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন আর তারা বেশ রসিক হয়। একজন ভাই, যার বাবা-মা দুজনেই বধির, তিনি বলেন: “সারাজীবন আমি বধির ব্যক্তিদের মাঝেই থেকেছি আর তারা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, যা আমি কখনো পরিশোধ করতে পারব না। আমাদের বধির ভাইবোনদের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।”

যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের ভালোবাসেন, যাদের মধ্যে বধির ব্যক্তিরা রয়েছে। তাদের বিশ্বাস ও ধৈর্যের উদাহরণ নিশ্চিতভাবে যিহোবার সংগঠনের ধনকে বৃদ্ধি করে। তাই আমরা যেন আমাদের বধির ভাইবোনদের মূল্যবান বলে গণ্য করি!

[পাদটীকা]

^ ২০০৯ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ‘সদাপ্রভু তাহাদের প্রতি আপন মুখ উজ্জ্বল করিয়াছেন’ শিরোনামের প্রবন্ধটি দেখুন।

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

যখন সাংকেতিক ভাষায় উপস্থাপন করা হয়, তখন একজন বধির ব্যক্তির কাছে রাজ্যের বার্তা হয়তো আরও বেশি আগ্রহজনক হতে পারে

[৩২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমাদের সভাগুলো আনন্দের এক উপলক্ষ্য হওয়া উচিত যেখানে আমাদের বধির ভাইবোনেরা আধ্যাত্মিক উৎসাহ লাভ করে থাকে