সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মণ্ডলীতে আপনার ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন

মণ্ডলীতে আপনার ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন

মণ্ডলীতে আপনার ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন

“ঈশ্বর অঙ্গ সকল এক এক করিয়া দেহের মধ্যে যেমন ইচ্ছা করিয়াছেন, সেইরূপ বসাইয়াছেন।”—১ করি. ১২:১৮.

১, ২. (ক) কী দেখায় যে, মণ্ডলীতে প্রত্যেকের মূল্যবান বলে গণ্য করার মতো এক ভূমিকা থাকতে পারে? (খ) এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে?

 প্রাচীন ইস্রায়েলের দিন থেকেই, মণ্ডলী যিহোবার লোকেদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে যত্ন নেওয়ার ও তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়ার এক মাধ্যম হয়ে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা অয় নগর অধিকার করার পর যিহোশূয় ‘ব্যবস্থাগ্রন্থে যাহা যাহা লিখিত আছে, তদনুসারে ব্যবস্থার সমস্ত কথা, আশীর্ব্বাদের ও শাপের কথা পাঠ করিলেন। ইস্রায়েলের সমস্ত সমাজের’ বা মণ্ডলীর “সম্মুখে সেই সমস্ত পাঠ করিলেন।”—যিহো. ৮:৩৪, ৩৫.

সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে, প্রেরিত পৌল খ্রিস্টান প্রাচীন তীমথিয়কে বলেছিলেন যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলী ছিল ‘ঈশ্বরের গৃহ’ এবং “সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত্তি।” (১ তীম. ৩:১৫) বর্তমানে, ঈশ্বরের ‘গৃহ’ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী সত্য খ্রিস্টানদের ভ্রাতৃসমাজ। পৌল করিন্থীয়দের উদ্দেশে তার প্রথম অনুপ্রাণিত চিঠির ১২ অধ্যায়ে মণ্ডলীকে এক মানবদেহের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন যে, যদিও প্রতিটা অঙ্গ ভিন্ন ভিন্ন কাজ সম্পাদন করে কিন্তু প্রতিটাই অপরিহার্য। পৌল লেখেন, “ঈশ্বর অঙ্গ সকল এক এক করিয়া দেহের মধ্যে যেমন ইচ্ছা করিয়াছেন, সেইরূপ বসাইয়াছেন।” তিনি এমনকী এও বলেন যে, “আমরা দেহের যে সকল অঙ্গকে অপেক্ষাকৃত অনাদরণীয় বলিয়া জ্ঞান করি, সেইগুলিকে অধিক আদরে ভূষিত করি।” (১ করি. ১২:১৮, ২৩) তাই, ঈশ্বরের গৃহে একজন ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির ভূমিকা অন্য আরেকজন বিশ্বস্ত খ্রিস্টানের চেয়ে ভালো কিংবা খারাপ কোনোটাই নয়। সহজ কথায় বললে, প্রত্যেকের ভূমিকা আলাদা। তাহলে, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমাদের ভূমিকা খুঁজে পেতে পারি এবং এটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করতে পারি? কোন বিষয়গুলো মণ্ডলীতে আমাদের ভূমিকার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে? আর কীভাবে আমরা ‘আমাদের উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ’ করতে পারি?—১ তীম. ৪:১৫.

আমাদের ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করা—কীভাবে?

৩. মণ্ডলীতে আমাদের ভূমিকা খুঁজে পাওয়ার ও আমরা যে এটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করি, সেটা দেখানোর একটা উপায় কী?

মণ্ডলীতে আমাদের ভূমিকা খুঁজে পাওয়ার ও আমরা যে এটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করি, সেটা দেখানোর একটা উপায় হল, ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস’ এবং এর প্রতিনিধি পরিচালকগোষ্ঠীর সঙ্গে পূর্ণরূপে সহযোগিতা করা। (পড়ুন, মথি ২৪:৪৫-৪৭.) দাস শ্রেণীর কাছ থেকে আমরা যে-নির্দেশনা পাই, সেটার প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া কেমন, তা আমাদের পরীক্ষা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, বছরের পর বছর ধরে আমরা পোশাক-আশাক ও সাজগোজ, বিনোদন এবং ইন্টারনেটের অপব্যবহার সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা লাভ করেছি। আমরা কি সতর্কভাবে এই উত্তম পরামর্শে মনোযোগ দিই, যাতে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষিত থাকি? পারিবারিক উপাসনার নিয়মিত তালিকা তৈরি করার পরামর্শ সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা কি এই পরামর্শ মেনে নিয়েছি এবং সেই উদ্দেশ্যে একটা সন্ধ্যা আলাদা করে রেখেছি? আমরা যদি অবিবাহিত হয়ে থাকি, তাহলে আমরা কি ব্যক্তিগতভাবে শাস্ত্র অধ্যয়ন করার জন্য সময় করে নিচ্ছি? যিহোবা আমাদেরকে আলাদা আলাদাভাবে ও পরিবারগতভাবে আশীর্বাদ করবেন, যদি আমরা দাস শ্রেণীর নির্দেশনা অনুসরণ করি।

৪. ব্যক্তিগত বাছাইগুলো করার সময় আমাদের কী বিবেচনা করা উচিত?

কেউ কেউ হয়তো যুক্তি দেখাতে পারে যে, বিনোদন ও পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের মতো ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু, যে-উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান মণ্ডলীতে তার ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, তিনি যখন বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন, তখন ব্যক্তিগত পছন্দগুলোই এই ক্ষেত্রে একমাত্র নির্ধারক হওয়া উচিত নয়। তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে যিহোবার যে-দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়েছে, বিশেষ করে সেটা বিবেচনা করতে হবে। এটির বার্তা যেন ‘আমাদের চরণের প্রদীপ, আমাদের পথের আলোক’ হয়। (গীত. ১১৯:১০৫) এ ছাড়া, ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে আমরা যে-বাছাইগুলো করি, সেগুলো আমাদের পরিচর্যাকে এবং অন্য লোকেদের অর্থাৎ মণ্ডলীর ভিতরের ও বাইরের, উভয় লোকেদের কীভাবে প্রভাবিত করে, তা বিবেচনা করে আমরা বিজ্ঞ হই।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৬:৩, ৪.

৫. কেন আমাদের স্বাধীনচেতা মনোভাবের বিরুদ্ধে সাবধান হওয়া উচিত?

“যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে,” সেই আত্মা আমরা যে-‘আকাশে [‘বাতাসে,’ NW]’ নিঃশ্বাস নিই, সেই বাতাসের মতোই পরিব্যাপ্ত। (ইফি. ২:২) সেই আত্মা আমাদেরকে এইরকম মনে করার দিকে পরিচালিত করতে পারে যে, যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে আমাদের নির্দেশনার প্রয়োজন নেই। নিশ্চিতভাবেই আমরা দিয়ত্রিফির মতো হতে চাই না, যিনি ‘প্রেরিত যোহনকে গ্রাহ্য’ করতেন না। (৩ যোহন ৯, ১০) স্বাধীনচেতা মনোভাব গড়ে তোলার বিরুদ্ধে আমাদের সাবধান হতে হবে। আমাদের কথা বা কাজের মাধ্যমে আমরা যেন কখনোই যোগাযোগের সেই মাধ্যম সম্বন্ধে আপত্তি না করি, যে-মাধ্যমকে যিহোবা আজকে ব্যবহার করছেন। (গণনা. ১৬:১-৩) এর পরিবর্তে, দাস শ্রেণীর সঙ্গে সহযোগিতা করার বিশেষ সুযোগকে আমাদের মূল্যবান বলে গণ্য করা উচিত। আর আমাদের কি স্থানীয় মণ্ডলীতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের প্রতি বাধ্য ও বশীভূত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত নয়?—পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭.

৬. কেন আমাদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতিগুলো নিজেদের পরীক্ষা করে দেখা উচিত?

আরেকটা যে-উপায়ে আমরা দেখাই যে, মণ্ডলীতে আমাদের ভূমিকাকে আমরা মূল্যবান বলে গণ্য করি, তা হচ্ছে আমাদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতিগুলোকে গভীরভাবে পরীক্ষা করে এবং ‘আমাদের পরিচর্য্যা-পদের গৌরব করিবার’ ও যিহোবার সম্মান নিয়ে আসার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করে। (রোমীয় ১১:১৩) কেউ কেউ নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে সমর্থ। অন্যেরা মিশনারি, ভ্রমণ অধ্যক্ষ এবং সারা পৃথিবীর বেথেল পরিবারগুলোর সদস্য হিসেবে বিশেষ ধরনের পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় রত রয়েছে। অনেক ভাইবোন কিংডম হল নির্মাণের কাজে সহযোগিতা করে থাকে। যিহোবার লোকেদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তি তাদের পরিবারের আধ্যাত্মিক চাহিদার যত্ন নেওয়ার এবং প্রতি সপ্তাহে পরিচর্যায় পূর্ণরূপে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করছে। (পড়ুন, কলসীয় ৩:২৩-২৫.) আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারি যে, যখন আমরা ঈশ্বরের সেবায় স্বেচ্ছায় নিজেদের বিলিয়ে দিই এবং তাঁকে সর্বান্তঃকরণে সেবা করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করি, তখন তাঁর ব্যবস্থায় সবসময় আমাদের জন্য একটা ভূমিকা থাকে।

যে-বিষয়গুলো আমাদের ভূমিকাকে প্রভাবিত করে

৭. ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে আমাদের পরিস্থিতিগুলো মণ্ডলীতে আমাদের যে-ভূমিকা রয়েছে, সেটার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

আমাদের পরিস্থিতিগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখা গুরুত্বপূর্ণ কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে মণ্ডলীতে আমাদের ভূমিকা, আমরা কী করতে সমর্থ বা আমরা কী করার মতো অবস্থানে রয়েছি, সেই বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, মণ্ডলীতে একজন ভাইয়ের ভূমিকা কিছু কিছু দিক দিয়ে একজন বোনের চেয়ে আলাদা। এ ছাড়া, বয়স, স্বাস্থ্য ও অন্য বিষয়গুলোও যিহোবার সেবায় আমরা যা করতে সমর্থ, সেটাকে প্রভাবিত করতে পারে। “যুবকদের বলই তাহাদের শোভা,” হিতোপদেশ ২০:২৯ পদ বলে, “আর পক্ককেশ বৃদ্ধ লোকদের শ্রী।” মণ্ডলীর অপেক্ষাকৃত যুবক সদস্যরা হয়তো তাদের যৌবনের শক্তির কারণে শারীরিকভাবে বেশি করতে সমর্থ কিন্তু বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মণ্ডলীকে প্রচুররূপে উপকৃত করে। আমাদের এও মনে রাখতে হবে যে, যিহোবার সংগঠনে আমরা যা-কিছুই করতে সমর্থ হই না কেন, তা ঈশ্বরের অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়ার ওপর নির্ভর করে।—প্রেরিত ১৪:২৬; রোমীয় ১২:৬-৮.

৮. মণ্ডলীতে আমরা যা করি, তাতে আকাঙ্ক্ষা কতখানি প্রভাব ফেলে?

দুজন অল্পবয়সি আপন বোনের উদাহরণ আরেকটা বিষয়কে তুলে ধরে, যা মণ্ডলীতে আমরা কোন ভূমিকা রাখব, সেটাকে প্রভাবিত করতে পারে। দু-বোনই হাইস্কুল (দশ থেকে বারো বছরের মৌলিক শিক্ষা) থেকে পাশ করে। তাদের দুজনের পরিস্থিতি একই। তাদের বাবা-মা তাদের দুজনকেই পাশ করার পর নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার লক্ষ্যে পৌঁছাতে উৎসাহিত করতে তাদের যথাসাধ্য করেছে। হাইস্কুল থেকে পাশ করার পর, তাদের মধ্যে একজন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করা শুরু করে অথচ অন্য জন পূর্ণসময় চাকরি করতে শুরু করে। এইরকম পার্থক্যের কারণ কী? এর কারণ ছিল আকাঙ্ক্ষা। শেষে এসে, তারা দুজনে ঠিক তা-ই করেছিল, যা তারা ব্যক্তিগতভাবে করতে চেয়েছিল। আমাদের মধ্যে অধিকাংশের বেলায়ও কি একই বিষয় সত্য নয়? ঈশ্বরের সেবায় আমরা কী করতে চাই, সেই বিষয়ে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে হবে। আমরা কি এই সেবায় আরেকটু বেশি অংশ নিতে পারি, এমনকী যদি সেইজন্য আমাদের পরিস্থিতিকে রদবদলও করতে হয়?—২ করি. ৯:৭.

৯, ১০. যিহোবার সেবায় আরও বেশি করার বিষয়ে যদি আমাদের প্রেরণার ঘাটতি হয়, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?

যিহোবার সেবায় আরও বেশি করার জন্য যদি আমাদের প্রেরণার অভাব হয় ও যদি আমরা মণ্ডলীতে শুধু সেটুকুই করতে ইচ্ছুক হই, যেটুকু করা আমাদের কর্তব্য, তাহলে কী বলা যায়? ফিলিপীয়দের উদ্দেশে তার চিঠিতে পৌল বলেন: “ঈশ্বরই আপন হিতসঙ্কল্পের নিমিত্ত তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা ও কার্য্য উভয়ের সাধনকারী।” হ্যাঁ, যিহোবা আমাদের অন্তরে কাজ করতে পারেন এবং আমাদের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষাকে প্রভাবিত করতে পারেন।—ফিলি. ২:১৩; ৪:১৩.

১০ তাই, আমাদের মধ্যে যেন যিহোবার ইচ্ছা পালন করার আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে, সেইজন্য কি আমাদের যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করা উচিত নয়? প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ ঠিক তা-ই করেছিলেন। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর; তোমার পন্থা সকল আমাকে বুঝাইয়া দেও। তোমার সত্যে আমাকে চালাও, আমাকে শিক্ষা দেও, কেননা তুমিই আমার ত্রাণেশ্বর; আমি সমস্ত দিন তোমার অপেক্ষায় থাকি।” (গীত. ২৫:৪, ৫) যিহোবা যেন আমাদেরকে তাঁর ইচ্ছামতো কাজ করতে দেন, এই সম্বন্ধে প্রার্থনা করার দ্বারা আমরা একই বিষয় করতে পারি। যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের সেবা করার জন্য আমরা যা করি, সেই সম্বন্ধে তারা কেমন অনুভব করে, তা নিয়ে যখন আমরা চিন্তা করি, তখন আমাদের হৃদয় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। (মথি ২৬:৬-১০; লূক ২১:১-৪) কৃতজ্ঞতাপূর্ণ এই অনুভূতি আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করার জন্য যিহোবার কাছে অনুরোধ জানাতে প্রেরণা দিতে পারে। ভাববাদী যিশাইয় এমন এক মনোভাবের উদাহরণ জুগিয়েছেন, যেটা আমাদের সকলের গড়ে তোলা উচিত। যখন তিনি শুনেছিলেন যে, যিহোবার রব জিজ্ঞেস করছে: “আমি কাহাকে পাঠাইব? আমাদের পক্ষে কে যাইবে?” তখন সেই ভাববাদী উত্তর দিয়েছিলেন: “এই আমি, আমাকে পাঠাও।”—যিশা. ৬:৮.

উন্নতি করুন—কীভাবে?

১১. (ক) সংগঠনের দায়িত্বগুলোর জন্য ভাইদের আকাঙ্ক্ষী হওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? (খ) কীভাবে একজন ভাই সেবার বিশেষ সুযোগগুলোর জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে পারেন?

১১ দু-হাজার আট সালের পরিচর্যা বছরে বিশ্বব্যাপী ২,৮৯,৬৭৮ জন ব্যক্তি বাপ্তাইজিত হয়েছিল, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আরও বেশি ভাইদের প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রয়োজনের প্রতি একজন ভাইয়ের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত? সহজ কথায় বললে, পরিচারক দাস ও প্রাচীনদের জন্য শাস্ত্রে যে-যোগ্যতাবলি লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো পূরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। (১ তীম. ৩:১-১০, ১২, ১৩; তীত ১:৫-৯) কীভাবে একজন ভাই এই শাস্ত্রীয় চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে পারেন? পরিচর্যায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে, অধ্যবসায়ের সঙ্গে মণ্ডলীর কার্যভারগুলো সম্পাদন করে, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে তার মন্তব্যের গুণগত মানকে উন্নত করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে এবং সহবিশ্বাসীদের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখিয়ে। এগুলো করে তিনি দেখান যে, তিনি মণ্ডলীতে তার ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন।

১২. কীভাবে অল্পবয়সিরা সত্যের জন্য তাদের উদ্যোগ প্রদর্শন করতে পারে?

১২ অল্পবয়সি ভাইয়েরা, বিশেষ করে কিশোরবয়সি ভাইয়েরা মণ্ডলীতে উন্নতি করার জন্য কী করতে পারে? তারা শাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার দ্বারা “আত্মিক জ্ঞানে” বা প্রজ্ঞায় “ও বুদ্ধিতে” বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করতে পারে। (কল. ১:৯) ঈশ্বরের বাক্যের অধ্যবসায়ী ছাত্র হওয়া এবং মণ্ডলীর সভাগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া নিশ্চিতভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। এ ছাড়া, যুবকরা পূর্ণসময়ের সেবার বিভিন্ন দিকের ‘বৃহৎ ও কার্য্যসাধক দ্বারে’ প্রবেশ করার যোগ্য হওয়ার জন্য কাজ করে আকাঙ্ক্ষী হতে পারে। (১ করি. ১৬:৯) যিহোবার সেবায় এক কেরিয়ার অনুধাবন করা সত্যিই এক সন্তোষজনক জীবন এবং এমন এক পথ, যেটা প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসে।—পড়ুন, উপদেশক ১২:১.

১৩, ১৪. কোন কোন উপায়ে বোনেরা দেখায় যে, তারা মণ্ডলীতে তাদের ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করে?

১৩ বোনেরাও প্রদর্শন করতে পারে যে, তারা গীতসংহিতা ৬৮:১১ পদের কথাগুলোর পরিপূর্ণতায় ব্যক্তিগতভাবে অংশ নেওয়ার বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান বলে গণ্য করে। সেখানে আমরা পড়ি: “প্রভু বাক্য দেন, শুভবার্ত্তার প্রচারিকাগণ মহাবাহিনী।” সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে-উপায়ে বোনেরা মণ্ডলীতে তাদের ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারে, সেটা হচ্ছে শিষ্য তৈরির কাজে অংশ নিয়ে। (মথি ২৮:১৯, ২০) তাই, পরিচর্যায় পূর্ণরূপে অংশ নিয়ে এবং সেই কাজের জন্য স্বেচ্ছায় ত্যাগস্বীকার করে বোনেরা প্রমাণ করে যে, তারা মণ্ডলীতে তাদের ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করে।

১৪ তীতকে লেখার সময় পৌল বলেছিলেন: “প্রাচীনাদিগকে বল, যেন তাঁহারা আচার ব্যবহারে ভয়শীলা [“শ্রদ্ধাশীল,” NW] হন, . . . সুশিক্ষাদায়িনী হন; তাঁহারা যেন যুবতীদিগকে সংযত করিয়া তুলেন, যেন ইহারা পতিপ্রিয়া, সন্তানপ্রিয়া, সংযতা, সতী, গৃহকার্য্যে ব্যাপৃতা, সুশীলা, ও আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হয়, এইরূপে যেন ঈশ্বরের বাক্য নিন্দিত না হয়।” (তীত ২:৩-৫) পরিপক্ব বোনেরা মণ্ডলীতে কত ভালো প্রভাবই না ফেলতে পারে! যারা নেতৃত্ব দেয়, সেই ভাইদের সম্মান করে এবং পোশাক-আশাক ও সাজগোজ এবং বিনোদনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা অন্যদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করে এবং মণ্ডলীতে তাদের নিজস্ব ভূমিকাকে উচ্চমূল্য দেয়।

১৫. কী একজন অবিবাহিত বোনকে একাকিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করায় সাহায্য করতে পারে?

১৫ মাঝে মাঝে, একজন অবিবাহিত বোনের পক্ষে মণ্ডলীতে তার ভূমিকা খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। একজন বোনের এইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল আর তিনি লিখেছিলেন: “অবিবাহিত জীবন মাঝে মাঝে একাকিত্ব নিয়ে আসতে পারে।” তিনি কীভাবে সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করেন, সেই ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন: “প্রার্থনা ও অধ্যয়ন আমাকে পুনরায় আমার ভূমিকা খুঁজে পেতে সাহায্য করে। যিহোবা আমাকে কীভাবে দেখেন, সেই বিষয় নিয়ে আমি অধ্যয়ন করি। এরপর আমি মণ্ডলীর অন্যদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যেতে চেষ্টা করি। এটা আমার মনকে কেবল নিজের প্রতি কেন্দ্রীভূত না করতে সাহায্য করে।” গীতসংহিতা ৩২:৮ পদ অনুসারে, যিহোবা দায়ূদকে বলেছিলেন: “আমি . . . তোমার উপরে দৃষ্টি রাখিয়া তোমাকে পরামর্শ দিব।” হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর সব দাসের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখান, যাদের মধ্যে অবিবাহিত বোনেরাও রয়েছে আর তিনি প্রত্যেককে মণ্ডলীতে তাদের ভূমিকা খুঁজে পেতে সাহায্য করবেন।

আপনার ভূমিকা বজায় রাখুন!

১৬, ১৭. (ক) যিহোবার সংগঠনের অংশ হওয়ার ব্যাপারে তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণ করাকে কেন আমাদের গৃহীত সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত বলা যায়? (খ) যিহোবার সংগঠনে আমরা কীভাবে আমাদের ভূমিকাকে বজায় রাখতে পারি?

১৬ যিহোবা তাঁর প্রত্যেক দাসকে তাঁর সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রেমের সঙ্গে আকর্ষণ করেছেন। যিশু বলেছিলেন: “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না।” (যোহন ৬:৪৪) পৃথিবীতে কোটি কোটি লোকের মধ্যে থেকে যিহোবা আজকে তাঁর মণ্ডলীর অংশ হওয়ার জন্য আমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে এক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করা ছিল এ যাবৎ আমাদের গৃহীত সমস্ত সিদ্ধান্তের মধ্যে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত। এটা আমাদের জীবনকে উদ্দেশ্যপূর্ণ ও অর্থপূর্ণ করে তুলেছে। আর মণ্ডলীতে আমাদের ভূমিকা রয়েছে বলে আমরা কত আনন্দ ও সন্তুষ্টিই না উপভোগ করি!

১৭ “সদাপ্রভু, আমি ভালবাসি তোমার নিবাসগৃহ,” গীতরচক বলেছিলেন। তিনি আরও গেয়েছিলেন: “আমার চরণ সমভূমিতে দাঁড়াইয়া আছে; আমি মণ্ডলীগণের মধ্যে সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব।” (গীত. ২৬:৮, ১২) সত্য ঈশ্বর তাঁর সংগঠনে আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটা ভূমিকা রেখেছেন। ক্রমাগতভাবে ঈশতান্ত্রিক নির্দেশনা অনুসরণ করার দ্বারা এবং ঈশ্বরের সেবায় ব্যস্ত থাকার দ্বারা আমরা যিহোবার ব্যবস্থায় আমাদের মূল্যবান ভূমিকাকে বজায় রাখতে পারি।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• সব খ্রিস্টানেরই মণ্ডলীতে একটা ভূমিকা রয়েছে, এই উপসংহারে আসা কেন যুক্তিযুক্ত?

• কীভাবে আমরা দেখাই যে, ঈশ্বরের সংগঠনে আমরা আমাদের ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করি?

• কোন বিষয়গুলো মণ্ডলীতে আমাদের ভূমিকার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?

• কীভাবে অল্পবয়সি খ্রিস্টানরা ও প্রাপ্তবয়স্করা দেখাতে পারে যে, তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থায় তাদের ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কীভাবে ভাইয়েরা মণ্ডলীতে বিশেষ সুযোগগুলোর জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে পারে?

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে বোনেরা দেখাতে পারে যে, তারা মণ্ডলীতে তাদের ভূমিকাকে মূল্যবান বলে গণ্য করে?