সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার উন্নতি প্রকাশ করুন

আপনার উন্নতি প্রকাশ করুন

আপনার উন্নতি প্রকাশ করুন

“এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।”—১ তীম. ৪:১৫.

১, ২. তীমথিয়ের ছেলেবেলা এবং তার বয়স যখন প্রায় ২০ বছর, তখন তার জীবনে যে-পরিবর্তন হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে আমরা কী জানি?

 তীমথিয় ছেলেবেলায় গালাতিয়ার রোমীয় প্রদেশে বাস করতেন, যে-জায়গা বর্তমানে তুরস্ক হিসেবে পরিচিত। সেখানে, যিশুর মৃত্যুর পর কয়েক দশকের মধ্যে বেশ কয়েকটা খ্রিস্টীয় মণ্ডলী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময়ের দিকে অল্পবয়সি তীমথিয়, তার মা ও তার দিদিমা খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং একটা মণ্ডলীর সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠেছিল। (২ তীম. ১:৫; ৩:১৪, ১৫) একজন অল্পবয়সি খ্রিস্টান হিসেবে তীমথিয় নিশ্চয়ই সেই পরিচিত পরিবেশের মধ্যে তার জীবন উপভোগ করেছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ পরিস্থিতি পালটে যেতে শুরু করে।

সেই এলাকায় প্রেরিত পৌলের দ্বিতীয় পরিদর্শনের সময়ে এই পরিবর্তন শুরু হয়। সেই সময়ে, তীমথিয়ের বয়স হয়তো সতেরো আঠারো বা ২০-র কোঠার প্রথম দিকে ছিল। সম্ভবত লুস্ত্রায় পরিদর্শন করার সময় পৌল লক্ষ করেছিলেন যে, স্থানীয় মণ্ডলীগুলোতে “ভ্রাতৃগণ” তীমথিয়ের ‘পক্ষে সাক্ষ্য দিয়াছিল [‘সুখ্যাতি করেছিল,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]।’ (প্রেরিত ১৬:২) অল্পবয়সি তীমথিয় নিশ্চয়ই তার বয়সের তুলনায় যথেষ্ট পরিপক্বতা প্রদর্শন করেছিলেন। তাই, পবিত্র আত্মার নির্দেশে পৌল ও স্থানীয় প্রাচীনগোষ্ঠী তীমথিয়ের ওপর হস্তার্পণ করেছিল, তাকে মণ্ডলীতে বিশেষ কাজের জন্য নিযুক্ত করেছিল।—১ তীম. ৪:১৪; ২ তীম. ১:৬.

৩. তীমথিয় সেবার কোন অসাধারণ সুযোগ লাভ করেছিলেন?

তীমথিয় এক অসাধারণ আমন্ত্রণ—প্রেরিত পৌলের ভ্রমণ সঙ্গী হওয়ার আমন্ত্রণ—লাভ করেছিলেন! (প্রেরিত ১৬:৩) একটু কল্পনা করুন যে, এই আমন্ত্রণে তীমথিয় নিশ্চয়ই কতই না অবাক ও রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন! আসন্ন বছরগুলোতে, তীমথিয় পৌলের সঙ্গে ও মাঝে মাঝে অন্যদের সঙ্গে ভ্রমণ করবেন, প্রেরিতদের ও প্রাচীনবর্গের পক্ষে বিভিন্ন দায়িত্ব সম্পাদন করবেন। পৌল ও তীমথিয় ভ্রমণ কাজে রত ছিল, যা ভাইদের আধ্যাত্মিকভাবে গেঁথে তোলায় বিরাট অবদান রেখেছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ১৬:৪, ৫.) তাই, তীমথিয় আধ্যাত্মিক উন্নতি করার কারণে অনেক খ্রিস্টানের কাছে সুপরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। তীমথিয়ের সঙ্গে প্রায় দশ বছর কাজ করার পর, প্রেরিত পৌল ফিলিপীয়দের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “আমার কাছে [তীমথিয়ের] সমপ্রাণ কেহই নাই যে, প্রকৃতরূপে তোমাদের বিষয় চিন্তা করিবে। . . . তোমরা ইহাঁর পক্ষে এই প্রমাণ জ্ঞাত আছ যে, পিতার সহিত সন্তান যেমন, আমার সহিত ইনি তেমনি সুসমাচারের নিমিত্ত দাস্যকর্ম্ম করিয়াছেন।”—ফিলি. ২:২০-২২.

৪. (ক) তীমথিয়কে কোন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল? (খ) ১ তীমথিয় ৪:১৫ পদে পাওয়া পৌলের কথাগুলো থেকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা যেতে পারে?

প্রেরিত পৌল যখন ফিলিপীয়দের উদ্দেশে চিঠি লিখেছিলেন, সেই সময়ের দিকে তিনি তীমথিয়ের ওপর এক গুরু দায়িত্ব—প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের নিয়োগ করার ভার—অর্পণ করেছিলেন। (১ তীম. ৩:১; ৫:২২) স্পষ্টতই, তীমথিয় সেই সময়ের মধ্যে একজন নির্ভরযোগ্য খ্রিস্টান অধ্যক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু, সেই একই চিঠিতে পৌল তীমথিয়কে ‘তাহার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ করিতে’ বা প্রকাশ করতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ তীম. ৪:১৫) তীমথিয় কি ইতিমধ্যেই তার উন্নতি যথেষ্ট মাত্রায় প্রকাশ করেননি? তাহলে, এই কথাগুলোর দ্বারা পৌল কী বুঝিয়েছিলেন আর তার পরামর্শ থেকে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?

আমরা যেভাবে আধ্যাত্মিক গুণাবলি প্রকাশ করি

৫, ৬. ইফিষ মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতা কীভাবে হুমকির মুখোমুখি হয়েছিল আর কীভাবে তীমথিয় সেই হুমকির মোকাবিলা করতে পারতেন?

আসুন আমরা ১ তীমথিয় ৪:১৫ পদের প্রসঙ্গ পরীক্ষা করে দেখি। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৪:১১-১৬.) এই কথাগুলো লেখার আগে, পৌল মাকিদনিয়াতে যাত্রা করেছিলেন কিন্তু তীমথিয়কে তিনি ইফিষেই থাকতে বলেছিলেন। কেন? কারণ সেই শহরের কেউ কেউ মিথ্যা শিক্ষা প্রবিষ্ট করার দ্বারা মণ্ডলীতে বিভেদ সৃষ্টি করছিল। মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতাকে তীমথিয়ের রক্ষা করার প্রয়োজন ছিল। তিনি তা কীভাবে সম্পাদন করবেন? একটা উপায় হল, অন্যদের জন্য অনুকরণযোগ্য উত্তম উদাহরণ স্থাপন করে।

তীমথিয়কে পৌল লিখেছিলেন: “বাক্যে, আচার ব্যবহারে, প্রেমে, বিশ্বাসে, ও শুদ্ধতায় বিশ্বাসিগণের আদর্শ হও।” পৌল আরও বলেছিলেন: “এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।” (১ তীম. ৪:১২, ১৫) তীমথিয়ের এই উন্নতির সঙ্গে কোনো কর্তৃত্বপূর্ণ পদ লাভ করা নয় কিন্তু তার আধ্যাত্মিক গুণাবলি জড়িত ছিল। প্রত্যেক খ্রিস্টানের এই ধরনের উন্নতি প্রকাশ করতে চাওয়া উচিত।

৭. মণ্ডলীর সকলের কাছ থেকে কী আশা করা হয়?

তীমথিয়ের দিনে যেমন ছিল, তেমনই আজকেও মণ্ডলীতে বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদ রয়েছে। কেউ কেউ প্রাচীন বা পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করে। অন্যেরা অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে। আবার কেউ কেউ ভ্রমণের কাজ, বেথেল সেবা বা মিশনারি ক্ষেত্রে সেবা করে। প্রাচীনরা বিভিন্ন শিক্ষাদান কার্যক্রমে, যেমন সম্মেলনগুলোতে শিক্ষা দেওয়ার কাজে অংশ নিয়ে থাকে। কিন্তু, সব খ্রিস্টানের—নারী-পুরুষ ও অল্পবয়সিদের—তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি প্রকাশ করার ক্ষমতা রয়েছে। (মথি ৫:১৬) বস্তুতপক্ষে, তীমথিয়ের বেলায় যেমন হয়েছিল, তেমনই যে-খ্রিস্টানদের দায়িত্বের বিশেষ পদগুলো রয়েছে, এমনকী তাদের কাছ থেকেও আশা করা হয় যে, তারা সকলের কাছে তাদের আধ্যাত্মিক গুণাবলি প্রকাশ করবে।

কথা বলার সময় উদাহরণযোগ্য হোন

৮. আমাদের কথাবার্তা আমাদের উপাসনার ওপর কীরকম প্রভাব ফেলে?

বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে একটা যে-ক্ষেত্রে তীমথিয়কে উদাহরণ স্থাপন করতে হয়েছিল, সেটা হচ্ছে কথা বলার সময়। কীভাবে আমরা এই ক্ষেত্রটাতে আমাদের উন্নতি প্রকাশ করতে পারি? আমাদের কথাবার্তা আমাদের সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রকাশ করে। যিশু সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন: “হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে, মুখ তাহাই বলে।” (মথি ১২:৩৪) যিশুর সৎভাই যাকোবও স্বীকার করেছিলেন যে, আমাদের কথাবার্তা আমাদের উপাসনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি লিখেছিলেন: “যে ব্যক্তি আপনাকে ধর্ম্মশীল বলিয়া মনে করে, আর আপন জিহ্বাকে বল্‌গা দ্বারা বশে না রাখে, কিন্তু নিজ হৃদয়কে ভুলায়, তাহার ধর্ম্ম” বা উপাসনা “অলীক।”—যাকোব ১:২৬.

৯. কোন কোন দিক দিয়ে আমাদের কথাবার্তা উদাহরণযোগ্য হওয়া উচিত?

আমাদের কথাবার্তা মণ্ডলীর অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে পারে যে, আমরা আধ্যাত্মিকভাবে কতখানি উন্নতি করেছি। তাই, মর্যাদাহানিকর, নেতিবাচক, সমালোচনামূলক বা আঘাতদায়ক কথাবার্তা বলার পরিবর্তে, পরিপক্ব খ্রিস্টানরা গেঁথে তোলার, সান্ত্বনা দেওয়ার ও উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা করে। (হিতো. ১২:১৮; ইফি. ৪:২৯; ১ তীম. ৬:৩-৫, ২০) অন্যদের সঙ্গে আমাদের নৈতিক মান সম্বন্ধীয় বিশ্বাস নিয়ে কথা বলার ব্যাপারে আমাদের তৎপরতা এবং নির্দ্বিধায় ঈশ্বরের অতি উচ্চ মানগুলোর পক্ষসমর্থন করা, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তি প্রকাশ করতে পারে। (রোমীয় ১:১৫, ১৬) সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা নিশ্চিতভাবেই লক্ষ করবে যে, কীভাবে আমরা আমাদের কথা বলার দানকে ব্যবহার করি আর তারা হয়তো আমাদের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে।—ফিলি. ৪:৮, ৯.

আমাদের আচরণে ও শুদ্ধতায় উদাহরণযোগ্য হওয়া

১০. কেন নিষ্কপট বিশ্বাস আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

১০ একজন খ্রিস্টানের পক্ষে এক উত্তম উদাহরণ হওয়ার জন্য শুধু গঠনমূলক কথাবার্তার চেয়েও আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন। নিজে সঠিক বিষয়টা না করে কেবল অন্যদের তা করতে বলা একজনকে কপট ব্যক্তি করে তুলবে। পৌল ফরীশীদের কপটতার সঙ্গে ও তাদের কাজের ক্ষতিকর ফলাফল সম্বন্ধে ভালোভাবেই অবগত ছিলেন। একাধিক বার তিনি তীমথিয়কে এইরকম কৃত্রিমতা ও ভান করার বিরুদ্ধে সাবধান করেছিলেন। (১ তীম. ১:৫; ৪:১, ২) কিন্তু, তীমথিয় কপট ব্যক্তি ছিলেন না। তীমথিয়ের উদ্দেশে তার দ্বিতীয় চিঠিতে পৌল লিখেছিলেন: “তোমার অন্তরস্থ অকল্পিত [“নিষ্কপট,” NW] বিশ্বাসের কথা স্মরণ করিতেছি।” (২ তীম. ১:৫) তা সত্ত্বেও, তীমথিয়কে অন্যদের কাছে এই বিষয়টা প্রকাশ করতে হয়েছিল যে, তিনি হলেন একজন অকৃত্রিম খ্রিস্টান। আচরণের দিক দিয়ে তার উদাহরণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন ছিল।

১১. ধন সম্বন্ধে পৌল তীমথিয়কে কী লিখেছিলেন?

১১ তীমথিয়ের উদ্দেশে তার দুটি চিঠিতে পৌল আচরণের বেশ কয়েকটা ক্ষেত্রের ওপর পরামর্শ জুগিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তীমথিয়ের ধনের পিছনে ছোটাকে এড়িয়ে চলতে হতো। পৌল লিখেছিলেন: “ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।” (১ তীম. ৬:১০) ধনাসক্তি হচ্ছে আধ্যাত্মিকতার ঘাটতির এক লক্ষণ। এর বিপরীতে, যে-খ্রিস্টানরা ‘গ্রাসাচ্ছাদন পাইয়া’ অর্থাৎ এক সরল জীবনযাপন করে সন্তুষ্টি লাভ করে, তারা তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি প্রকাশ করে।—১ তীম. ৬:৬-৮; ফিলি. ৪:১১-১৩.

১২. আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে কীভাবে আমরা আমাদের উন্নতি প্রকাশ করতে পারি?

১২ তীমথিয়ের কাছে পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, খ্রিস্টান নারীদের জন্য “সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা” করা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। (১ তীম. ২:৯) যে-নারীরা তাদের পোশাক-আশাক ও সাজগোজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবং তাদের ব্যক্তিগত জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে সলজ্জতা বা শালীনতা ও সুবুদ্ধি প্রকাশ করে, তারা চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করে। (১ তীম. ৩:১১) এই নীতি খ্রিস্টান পুরুষদের বেলায়ও প্রযোজ্য। পৌল অধ্যক্ষদের “মিতাচারী, আত্মসংযমী, পরিপাটী” হতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ তীম. ৩:২) আমাদের রোজকার কাজকর্মে যখন আমরা এই গুণগুলো প্রদর্শন করব, তখন আমাদের উন্নতি সকলের কাছে প্রকাশ পাবে।

১৩. তীমথিয়ের মতো, কীভাবে আমরা শুদ্ধতার ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারি?

১৩ শুদ্ধতার ক্ষেত্রেও তীমথিয়ের উদাহরণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন ছিল। এই শব্দ ব্যবহার করে পৌল পরোক্ষভাবে আচরণের খুবই সুনির্দিষ্ট এক ক্ষেত্র, যৌন নৈতিকতার বিষয়ে উল্লেখ করছিলেন। বিশেষ করে, নারীদের সঙ্গে তীমথিয়ের আচরণ অনিন্দনীয় হওয়া প্রয়োজন ছিল। তার “প্রাচীনাদিগকে মাতার ন্যায়, যুবতীদিগকে সম্পূর্ণ শুদ্ধ ভাবে ভগিনীর ন্যায় জানিয়া” আচরণ করা প্রয়োজন ছিল। (১ তীম. ৪:১২; ৫:২) এমনকী যে-অনৈতিক কাজগুলো গোপন রয়েছে বলে মনে হয়, সেগুলো সম্বন্ধেও ঈশ্বর জানেন আর নিশ্চিতভাবে সহমানবদের কাছেও তা একসময় প্রকাশ হয়ে পড়বে। তবে এটাও ঠিক যে, একজন খ্রিস্টানের উত্তম কাজকে গুপ্ত রাখা যেতে পারে না। (১ তীম. ৫:২৪, ২৫) মণ্ডলীতে সকলেরই আচরণ ও শুদ্ধতার ক্ষেত্রে তাদের উন্নতি প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে।

প্রেম ও বিশ্বাস অপরিহার্য

১৪. শাস্ত্র কীভাবে পরস্পরের মধ্যে প্রেম রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়?

১৪ সত্য খ্রিস্ট ধর্মের এক প্রধান দিক হচ্ছে প্রেম। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) কীভাবে আমরা এইরকম প্রেম প্রকাশ করি? ঈশ্বরের বাক্য আমাদের “প্রেমে পরস্পর” ক্ষমাশীল হতে, ‘পরস্পর মধুরস্বভাব [“দয়ালু,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] ও করুণচিত্ত হইতে, পরস্পর ক্ষমা করিতে’ এবং অতিথিসেবা করতে অনুরোধ করে। (ইফি. ৪:২, ৩২; ইব্রীয় ১৩:১, ২) “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন।—রোমীয় ১২:১০.

১৫. কেন প্রেম সকলের জন্য, বিশেষ করে খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

১৫ তীমথিয় যদি তার সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে রূঢ় বা নির্দয় আচরণ করতেন, তাহলে একজন শিক্ষক ও অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি যে-ভালো কাজগুলো সম্পাদন করছিলেন, তা নষ্ট হয়ে যেত। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৩:১-৩.) অন্যদিকে, তার ভাইদের প্রতি তীমথিয়ের অকৃত্রিম স্নেহের অভিব্যক্তি ও সেইসঙ্গে তাদের প্রতি আতিথেয়তা ও উত্তম কাজ নিশ্চিতভাবেই তার আধ্যাত্মিক উন্নতিকে তুলে ধরেছিল। তাই এটা উপযুক্ত যে, তীমথিয়ের উদ্দেশে লেখা তার চিঠিতে প্রেরিত পৌল প্রেমকে নির্দিষ্টভাবে একটা গুণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, যে-গুণের ক্ষেত্রে তীমথিয়ের উদাহরণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন ছিল।

১৬. কেন তীমথিয়ের দৃঢ় বিশ্বাস প্রদর্শন করা প্রয়োজন ছিল?

১৬ ইফিষে থাকার সময়, তীমথিয়ের বিশ্বাস পরীক্ষিত হয়েছিল। সেখানে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি, সেই মতবাদগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছিল, যেগুলো খ্রিস্টীয় সত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অন্যেরা “গল্প” বা গবেষণাকৃত এমন ধারণাগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছিল, যেগুলো মণ্ডলীর আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে একটুও অবদান রাখেনি। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ১:৩, ৪.) পৌল এইরকম ব্যক্তিদের এভাবে বর্ণনা করেছিলেন যে, তারা “গর্ব্বান্ধ, কিছুই জানে না, কিন্তু বিতণ্ডা ও বাগ্‌যুদ্ধের বিষয়ে রোগগ্রস্ত হইয়াছে।” (১ তীম. ৬:৩, ৪) এইরকম ক্ষতিকর ধারণাগুলো, যেগুলো মণ্ডলীতে অলক্ষিতে প্রবেশ করেছিল, তীমথিয় কি সেগুলো এমনকী বিবেচনা করে দেখার ঝুঁকি নিতে পারতেন? না, কারণ পৌল তীমথিয়কে ‘বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিতে’ এবং “যাহা অযথারূপে বিদ্যা নামে আখ্যাত, তাহার ধর্ম্মবিরূপক নিঃসার শব্দাড়ম্বর ও বিরোধবাণী হইতে” সরে আসতে জোরালোভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ তীম. ৬:১২, ২০, ২১) এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না যে, তীমথিয় পৌলের বিজ্ঞ পরামর্শ মেনে চলেছিলেন।—১ করি. ১০:১২.

১৭. আজকে আমাদের বিশ্বাস হয়তো কীভাবে পরীক্ষিত হতে পারে?

১৭ আগ্রহজনক বিষয় হল, তীমথিয়কে বলা হয়েছিল যে, “উত্তরকালে কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে।” (১ তীম. ৪:১) মণ্ডলীর সকলের, যার মধ্যে দায়িত্বপূর্ণ পদে সেবারত ব্যক্তিরাও রয়েছে, তাদের দৃঢ়, অটল বিশ্বাস দেখানোর ক্ষেত্রে তীমথিয়ের মতো হতে হবে। ধর্মভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে এক দৃঢ় ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দ্বারা আমরা আমাদের উন্নতি প্রকাশ করতে পারি ও বিশ্বাসের এক উদাহরণ হতে পারি।

আপনার উন্নতি প্রকাশ করার জন্য প্রাণপণ করুন

১৮, ১৯. (ক) কীভাবে আপনি আপনার উন্নতি সকলের কাছে প্রকাশ করতে পারেন? (খ) পরের প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

১৮ স্পষ্টতই, একজন সত্য খ্রিস্টানের আধ্যাত্মিক উন্নতি তার ব্যক্তিগত বেশভূষা, স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা বা খ্যাতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। আর স্বাভাবিকভাবেই এটা মণ্ডলীতে তিনি কত বছর ধরে সেবা করছেন, সেটার দ্বারা প্রতিফলিত হয় না। এর পরিবর্তে, প্রকৃত আধ্যাত্মিক উন্নতি আমাদের চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা ও আচরণে যিহোবার বাধ্য হওয়ার দ্বারা প্রকাশ পায়। (রোমীয় ১৬:১৯) আমাদের পরস্পরকে ভালোবাসার ও দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তোলার বিষয়ে দেওয়া আদেশের প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত। হ্যাঁ, আসুন আমরা তীমথিয়কে বলা পৌলের কথাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি এবং সেগুলোতে স্থিতি করি, যাতে আমাদের উন্নতি সকলের কাছে প্রকাশ পায়।

১৯ আরেকটা গুণ, যা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ও খ্রিস্টীয় পরিপক্বতার মধ্যে প্রতিফলিত হয়, সেটা হচ্ছে আনন্দ, যেটা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফলের একটা গুণ। (গালা. ৫:২২, ২৩) পরের প্রবন্ধ আলোচনা করবে যে, কীভাবে আমরা সংকটপূর্ণ সময়েও আমাদের আনন্দ গড়ে তুলতে ও তা বজায় রাখতে পারি।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• আমাদের কথাবার্তা থেকে অন্যেরা আমাদের সম্বন্ধে কী শিখতে পারে?

• কীভাবে আমাদের উন্নতি আমাদের আচরণে ও শুদ্ধতায় প্রকাশ পায়?

• কেন খ্রিস্টানদের প্রেমে ও বিশ্বাসে উদাহরণযোগ্য হতে হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

অল্পবয়সি তীমথিয় তার বয়সের তুলনায় যথেষ্ট পরিপক্বতা দেখিয়েছিলেন

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনার উন্নতি কি অন্যদের কাছে প্রকাশ পায়?