সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সেই প্রেম গড়ে তুলুন, যা কখনো শেষ হয় না

সেই প্রেম গড়ে তুলুন, যা কখনো শেষ হয় না

সেই প্রেম গড়ে তুলুন, যা কখনো শেষ হয় না

‘প্রেম সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে। প্রেম কখনও শেষ হয় না।’—১ করি. ১৩:৭, ৮.

১. (ক) প্রেমকে প্রায়ই কীভাবে তুলে ধরা হয়? (খ) কার ওপর এবং কীসের ওপর অনেকে তাদের প্রেমকে কেন্দ্রীভূত করে?

 প্রেম বিষয়বস্তুটা নিয়ে অনেক প্রচারণা করা হয়েছে। এই গুণটা সম্বন্ধে উচ্চপ্রশংসা করা হয়েছে এবং গানের মধ্যে রোমান্টিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রেম হল মানুষের এক মৌলিক চাহিদা। কিন্তু, বইপুস্তিকা ও চলচ্চিত্রগুলো প্রায়ই এই গুণকে কাল্পনিক প্রেম কাহিনিতে তুলে ধরেছে এবং এই ধরনের বিষয়বস্তু দিয়ে বাজার ছেয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রকৃত প্রেমের অনেক অভাব দেখা যায়। আমরা সেই বিষয়টাই ঘটতে দেখছি, যা বাইবেল এই শেষকাল সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছে। মানুষেরা “আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, . . . ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয়।”—২ তীম. ৩:১-৫.

২. ভ্রান্ত প্রেম সম্বন্ধে বাইবেল কোন সাবধানবাণী দেয়?

মানুষের প্রেম দেখানোর সামর্থ্য রয়েছে, তা সত্ত্বেও ঈশ্বরের বাক্য আমাদের ভ্রান্ত প্রেম সম্বন্ধে সাবধান করে দেয়। আর এই ধরনের প্রেম যখন আমাদের হৃদয়ে শিকড় বিস্তার করে, তখন কী ঘটে, সেই সম্বন্ধে বাইবেল বর্ণনা করে। (১ তীম. ৬:৯, ১০) প্রেরিত পৌল দীমা সম্বন্ধে কী লিখেছিলেন, তা কি আপনি মনে করতে পারেন? যদিও দীমা পৌলের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, কিন্তু তিনি সেই বিষয়গুলোকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন, যেগুলো জগৎ দিতে চেয়েছিল। (২ তীম. ৪:১০) প্রেরিত যোহন খ্রিস্টানদেরকে এই ভয়ানক বিপদ সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন। (পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫, ১৬.) এই জগৎ এবং এর ক্ষণস্থায়ী বিভিন্ন বিষয় ও পথগুলোকে ভালোবাসা, ঈশ্বরকে এবং তাঁর কাছ থেকে আসা বিষয়গুলোকে ভালোবাসার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

৩. আমরা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হই আর তা কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপন করে?

আমরা এই জগতের অংশ নই, যদিও আমরা এখানে বাস করছি। তাই, প্রেম সম্বন্ধে জগতের বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি এড়ানোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাদের রয়েছে। তাই, ভ্রান্ত বা বিকৃত প্রেমের দ্বারা নিজেদেরকে ফাঁদে না ফেলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে, কাদের জন্য আমাদের নীতিগত প্রেম গড়ে তোলা ও তা প্রদর্শন করা উচিত? কোন ব্যবস্থাগুলো আমাদের সেই প্রেম গড়ে তুলতে সমর্থ করে, যা সকলই ধৈর্যপূর্বক সহ্য করে এবং কখনো শেষ হয় না? কীভাবে এই পথ আমাদেরকে এখনই উপকৃত করে এবং আমাদের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে? ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের উত্তর পাওয়া প্রয়োজন, যাতে আমরা সেই অনুযায়ী পরিচালিত হতে পারি।

যিহোবার প্রতি প্রেম গড়ে তোলা

৪. কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম বৃদ্ধি পায়?

গড়ে তোলা বলতে কোনো কিছুর বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত করা ও বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করাকে বোঝাতে পারে। এমন একজন কৃষকের কথা চিন্তা করুন, যিনি ভূমি প্রস্তুত এবং বীজ বপন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। তিনি আশা করেন যে, সেই বীজ বৃদ্ধি পাবে। (ইব্রীয় ৬:৭) একইভাবে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। এর জন্য কীসের প্রয়োজন? আমাদের হৃদয়ের উত্তম ভূমির জন্য আমাদের কাজ করতে হবে, যেখানে রাজ্য সম্বন্ধীয় সত্যের বীজ বপন করা হয়েছে। ঈশ্বরের বাক্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে অধ্যয়ন করার দ্বারা আমরা তা করতে পারি, যাতে তাঁর সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। (কল. ১:১০) এ ছাড়া, নিয়মিতভাবে মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগদান করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা আমাদের জ্ঞানকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করবে। গভীর জ্ঞান অর্জন করার জন্য আমরা প্রত্যেকে কি ক্রমাগত প্রচেষ্টা করছি?—হিতো. ২:১-৭.

৫. (ক) কীভাবে আমরা যিহোবার মৌলিক গুণগুলো সম্বন্ধে জানতে পারি? (খ) ঈশ্বরের ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা ও শক্তি সম্বন্ধে আপনি কী বলতে পারেন?

তাঁর বাক্যের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করেছেন। শাস্ত্র অধ্যয়ন করার ও যিহোবা সম্বন্ধে অগ্রগতিশীলভাবে জ্ঞান নেওয়ার দ্বারা আমরা তাঁর গুণগুলোর—তাঁর ন্যায়বিচার, শক্তি, প্রজ্ঞা এবং সর্বোপরি সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমের—প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে বাড়াতে পারি। যিহোবা তাঁর সমস্ত কাজে এবং তাঁর সিদ্ধ ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার প্রকাশ করেছেন। (দ্বিতীয়. ৩২:৪; গীত. ১৯:৭) যিহোবার সমস্ত সৃজনশীল কাজ নিয়ে আমরা ধ্যান করতে পারি এবং তাঁর শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞা দেখে বিস্মিত হতে পারি। (গীত. ১০৪:২৪) এ ছাড়া, নিখিলবিশ্ব প্রমাণ দেয় যে, যিহোবা হলেন প্রবল সামর্থ্য বা ক্ষমতা এবং অসীম শক্তির উৎস।—যিশা. ৪০:২৬.

৬. কীভাবে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের প্রেম প্রকাশিত হয়েছে এবং এটা কীভাবে আপনাকে প্রভাবিত করেছে?

ঈশ্বরের মুখ্য গুণ, তাঁর প্রেম সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে? এটা সুদূরপ্রসারী এবং আমাদের সকলকে প্রভাবিত করে। মানবজাতির মুক্তির জন্য বলিদান জুগিয়ে তিনি সেই প্রেম প্রকাশ করেছেন। (পড়ুন, রোমীয় ৫:৮.) এই ব্যবস্থা সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রাপ্তিসাধ্য কিন্তু একমাত্র যারা ঈশ্বরের প্রেমের প্রতি সাড়া দেয় এবং তাঁর পুত্রে বিশ্বাস করে, তারা এর থেকে উপকার লাভ করবে। (যোহন ৩:১৬, ৩৬) আমাদের পাপের জন্য পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে ঈশ্বর যে যিশুকে বলি দিয়েছেন, সেটার প্রতিদানে আমাদের প্রেম প্রকাশ করতে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত।

৭, ৮. (ক) ঈশ্বরের প্রতি প্রেম প্রকাশ করার জন্য আমাদের কী করা প্রয়োজন? (খ) কী সত্ত্বেও ঈশ্বরের লোকেরা তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করে?

আমাদের জন্য ঈশ্বর যা যা করেছেন, সেই সমস্তকিছুর প্রতিদানে কীভাবে আমরা তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করতে পারি? এই প্রশ্নের অনুপ্রাণিত উত্তরটা তাৎপর্যপূর্ণ: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” (১ যোহন ৫:৩) হ্যাঁ, যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আমাদেরকে তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করতে অনুপ্রাণিত করে। এটাই হল একটা কারণ যেজন্য আমরা তাঁর নাম ও রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য বহন করি, যা অন্যদের জন্য উপকার নিয়ে আসে। আমাদের হৃদয় থেকে তা করা প্রমাণ দেয় যে, আমরা শুদ্ধ মনোভাব নিয়ে ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো পালন করি।—মথি ১২:৩৪.

বিশ্বব্যাপী আমাদের ভাইবোনেরা উদাসীনতার এবং রাজ্যের বার্তা সরাসরি প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো অধ্যবসায়ের সঙ্গে পালন করে চলে। তাদের পরিচর্যাকে পুরোপুরি সম্পন্ন করার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে তারা হাল ছেড়ে দেয় না। (২ তীম. ৪:৫) একইভাবে, আমরা অন্যদের কাছে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় জ্ঞান জানানোর ও সেইসঙ্গে তাঁর অন্যান্য সমস্ত আজ্ঞা পালন করার জন্য অনুপ্রাণিত হই।

যে-কারণে আমরা আমাদের প্রভু যিশু খ্রিস্টকে প্রেম করি

৯. খ্রিস্ট কী সহ্য করেছিলেন এবং কী তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল?

ঈশ্বরকে প্রেম করা ছাড়াও, তাঁর পুত্রের প্রতি প্রেম গড়ে তোলার অনেক কারণ আমাদের রয়েছে। যদিও আমরা কখনো যিশুকে দেখিনি, তবুও যতই আমরা তাঁর সম্বন্ধে জানব, তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম ততই গভীর হবে। (১ পিতর ১:৮) কিছু বিষয় কী, যেগুলো যিশু সহ্য করেছিলেন? যদিও তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করছিলেন, তবুও অকারণে তাঁকে ঘৃণা করা হয়েছিল, তাড়না করা হয়েছিল, মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং নিন্দা করা হয়েছিল। এ ছাড়া, তিনি অন্যান্য অপমানও সহ্য করেছিলেন। (পড়ুন, যোহন ১৫:২৫.) তাঁর স্বর্গীয় পিতার প্রতি যিশুর প্রেম তাঁকে সেই পরীক্ষাগুলো সহ্য করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। আর প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর বলিদানমূলক মৃত্যু অনেকের জন্য মুক্তির মূল্য প্রদান করেছে।—মথি ২০:২৮.

১০, ১১. খ্রিস্ট আমাদের জন্য যা করেছেন, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের লক্ষ্য কী?

১০ যিশু যা করেছেন, তা আমাদের মধ্যে এক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। খ্রিস্ট আমাদের জন্য যা করেছেন, সেটা নিয়ে যখন আমরা চিন্তা করি, তখন তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম গভীর হয়। তাঁর অনুসারী হওয়ায় আমাদের খ্রিস্টতুল্য প্রেম গড়ে তোলার ও দেখিয়ে চলার লক্ষ্য রাখা উচিত, যাতে আমরা রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার এবং শিষ্য তৈরি করার বিষয়ে তাঁর আজ্ঞা পালন করার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে পারি।—মথি ২৮:১৯, ২০.

১১ সমস্ত মানবজাতির প্রতি খ্রিস্টের ভালোবাসার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমরা শেষ আসার আগে আমাদের কার্যভার সম্পন্ন করার তাগিদ অনুভব করি। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫.) খ্রিস্ট যে-প্রেম দেখিয়েছেন, তা মানবজাতির জন্য তাঁর দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্পাদনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করার মতো যে-আদর্শ যিশু আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন, তা আমাদের প্রত্যেককে সেই ঐশিক উদ্দেশ্যে অবদান রাখতে সমর্থ করে। এর জন্য যতটা সম্ভব পূর্ণমাত্রায় সফলভাবে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম গড়ে তোলা প্রয়োজন। (মথি ২২:৩৭) যিশু যা যা শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করার দ্বারা আমরা দেখাই যে, আমরা তাঁকে ভালোবাসি এবং যেকোনো মূল্যে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে তুলে ধরার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।—যোহন ১৪:২৩, ২৪; ১৫:১০.

প্রেমের উৎকৃষ্ট পথ অনুধাবন করা

১২. “উৎকৃষ্ট এক পথ” অভিব্যক্তিটির দ্বারা পৌল কী বুঝিয়েছিলেন?

১২ প্রেরিত পৌল খ্রিস্টের একজন অনুকারী ছিলেন। খ্রিস্টের পদচিহ্ন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুকরণ করার কারণে পৌল নির্দ্বিধায় তার ভাইদের তার অনুকারী হওয়ার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ করি. ১০:৩৪) যদিও তিনি করিন্থের খ্রিস্টানদেরকে প্রথম শতাব্দীতে প্রকাশিত নির্দিষ্ট কিছু আত্মিক দান, যেমন আরোগ্যসাধন করা ও বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার দান প্রাপ্ত হওয়ার জন্য যত্নবান হতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, তবুও পৌল তাদেরকে দেখিয়েছিলেন যে, অনুধাবন করার মতো আরও উত্তম কিছু রয়েছে। ১ করিন্থীয় ১২:৩১ পদে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে আরও উৎকৃষ্ট এক পথ দেখাইতেছি।” এর পরের পদগুলোর প্রসঙ্গ দেখায় যে, এটা হল প্রেমের উৎকৃষ্ট পথ। কোন অর্থে এটা উৎকৃষ্ট? এর অর্থ কী, তা পৌল উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৩:১-৩.) তার যদি নির্দিষ্ট কিছু উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা থেকে থাকে এবং তিনি যদি বড়ো বড়ো কাজ করে থাকেন কিন্তু তার প্রেম না থাকে, তাহলে তার কোন মূল্য রয়েছে? কোনো মূল্যই নেই! ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়ে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা তুলে ধরেছেন। আমাদের বোধগম্যতার জন্য তিনি কী এক জোরালো অভিব্যক্তিই না ব্যবহার করেছেন!

১৩. (ক) ২০১০ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ কী? (খ) কোন অর্থে প্রেম কখনো শেষ হয় না?

১৩ এরপর পৌল আমাদের জন্য ব্যাখ্যা করেছেন যে, প্রেম কী এবং কী নয়। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮.) এখন, এই বিষয়টা পরীক্ষা করার জন্য একটু সময় করে নিন যে, প্রেমের জন্য কীসের প্রয়োজন, তা আপনি কীভাবে নির্ধারণ করবেন। বিশেষভাবে ৭ পদের শেষ অভিব্যক্তিটি এবং ৮ পদের প্রথম বাক্যটি লক্ষ করুন: ‘প্রেম সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে। প্রেম কখনও শেষ হয় না,’ যা ২০১০ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে। লক্ষ করুন, ৮ পদে পৌল বলেছেন যে, আত্মিক দান ও সেইসঙ্গে ভবিষ্যদ্‌বাণী বলা এবং বিশেষ বিশেষ ভাষায় কথা বলা—যেগুলো খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর জন্মলগ্ন থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে—লোপ পাবে। সেগুলো শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু, প্রেম সবসময়ই থাকবে। যিহোবা হলেন প্রেমের সত্তা আর তিনি অনন্ত। তাই, প্রেম কখনো শেষ হবে না। এটা আমাদের অনন্ত ঈশ্বরের একটা গুণ হিসেবে চিরকাল থাকবে।—১ যোহন ৪:৮.

প্রেম সকলই ধৈর্যপূর্বক সহ্য করে

১৪, ১৫. (ক) কীভাবে প্রেম আমাদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? (খ) কেন একজন অল্পবয়সি ভাই আপোশ করা প্রত্যাখ্যান করেছিল?

১৪ কোন বিষয়টা খ্রিস্টানদের পরীক্ষা, কঠিন পরিস্থিতি ও তারা ভোগ করে থাকে এমন যেকোনো সমস্যা সহ্য করতে সমর্থ করে? সেটা হল মূলত নীতিগত প্রেম। এই প্রেম বস্তুগত কোনো বিষয় ত্যাগ করার চেয়ে আরও বেশি কিছু। এটা আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে এবং এমনকী খ্রিস্টের জন্য আমাদের জীবন হারাতে ইচ্ছুক থাকা পর্যন্ত প্রসারিত। (লূক ৯:২৪, ২৫) যে-সাক্ষিরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ও পরে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, শ্রমশিবির ও জেলে কষ্টভোগ করেছিল, তাদের বিশ্বস্ত পথ সম্বন্ধে চিন্তা করুন।

১৫ ভিল্‌হেল্ম নামে একজন অল্পবয়সি জার্মান সাক্ষি এই বিষয়টা ভালোভাবে তুলে ধরেছে। আপোশ করার পরিবর্তে সে নাতসি ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েও অনুগত ছিল। তার পরিবারের প্রতি বিদায়ি চিঠিতে সে লিখেছিল: “সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের ঈশ্বরকে ভালোবাসতে হবে, যেমনটা আমাদের নেতা যিশু খ্রিস্ট আজ্ঞা দিয়েছিলেন। আমরা যদি তাঁর পক্ষ নিই, তাহলে তিনি আমাদের পুরস্কৃত করবেন।” পরে, প্রহরীদুর্গ পত্রিকার একটি প্রবন্ধে তার পরিবারের একজন সদস্য লিখেছিলেন: “কঠিন সময়গুলোতে, পরিবারগতভাবে আমরা লক্ষ রেখেছি যে, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালোবাসা যেন সবসময় প্রথমে থাকে।” বর্তমানে অনেক ভাইদের এইরকম মনোভাবই রয়েছে, যারা আর্মেনিয়া, এরিট্রিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য দেশে কারাবরণ ভোগ করছে। এই ভাইয়েরা যিহোবার প্রতি তাদের প্রেমে দৃঢ় থেকেছে।

১৬. আমাদের মালাউইর ভাইয়েরা কী সহ্য করেছিল?

১৬ অনেক স্থানে বিভিন্ন ধরনের চাপ আমাদের ভাইবোনদের বিশ্বাস ও ধৈর্যকে পরীক্ষায় ফেলে। মালাউইতে যিহোবার সাক্ষিরা ২৬ বছর ধরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা, চরম বিরোধিতা ও অনেক নৃশংসতা সহ্য করেছে। তাদের ধৈর্য পুরস্কৃত হয়েছিল। যখন তাড়না শুরু হয়েছিল, তখন সেই দেশে প্রায় ১৮,০০০ জন সাক্ষি ছিল। ৩০ বছর পর তাদের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়ে ৩৮,৩৯৩ জন হয়েছিল। অন্যান্য দেশেও একই ফলাফল দেখা গিয়েছে।

১৭. বিভক্ত পরিবারের কেউ কেউ কীসের সম্মুখীন হয় আর কেন তারা দুর্ব্যবহার সহ্য করতে পারে?

১৭ ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ সাধারণত কঠিন হতে পারে। যখন পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন খ্রিস্টানের ওপর বিরোধিতা আসে, তখন তা আরও কঠিন। পরিবারের সদস্য বা ঘনিষ্ঠ আত্মিয়স্বজনের কাছ থেকে চাপ আসতে পারে। যিশু কি বলেননি যে, এইরকমটা ঘটবে? হ্যাঁ বলেছিলেন আর অনেকে তাঁর কথাগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। (মথি ১০:৩৫, ৩৬) কিশোর-কিশোরীরা অবিশ্বাসী বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিরোধিতা সহ্য করেছে। কাউকে কাউকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু সদয় সাক্ষিরা তাদেরকে গ্রহণ করে নিয়েছে। অন্যদেরকে ত্যাজ্য করা হয়েছে। কী এই ব্যক্তিদেরকে দুর্ব্যবহার সহ্য করতে সমর্থ করেছে? কেবলমাত্র ভ্রাতৃসমাজের প্রতি তাদের প্রেমই নয় কিন্তু সর্বোপরি যিহোবা ও তাঁর পুত্রের জন্য তাদের অকপট প্রেম।—১ পিতর ১:২২; ১ যোহন ৪:২১.

১৮. যে-প্রেম সকলই ধৈর্যপূর্বক সহ্য করে, তা কীভাবে বিবাহিত খ্রিস্টানদের জন্য এক সহায়ক?

১৮ জীবনে অন্য অনেক ধরনের পরিস্থিতি রয়েছে, যার জন্য এমন প্রেম প্রয়োজন, যা সকলই ধৈর্যপূর্বক সহ্য করে। বিবাহবন্ধনের মধ্যে প্রেম দম্পতিদেরকে যিশুর এই কথাগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে সমর্থ করে: “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” (মথি ১৯:৬) “দৈহিক ক্লেশ” ভোগ করার সময় বিবাহিত খ্রিস্টানদের নিজেদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে, তাদের বিয়েতে যিহোবা হলেন এক প্রধান সহযোগী। (১ করি. ৭:২৮) তাঁর বাক্য বলে যে, ‘প্রেম সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে’ এবং যে-স্বামী ও স্ত্রী এই গুণ পরিধান করে, তারা পরস্পরের প্রতি আসক্ত থাকার জন্য শক্তিশালী হয় এবং তাদের বিয়েকে অটুট রাখে।—কল. ৩:১৪.

১৯. বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে কী ঘটেছে?

১৯ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রেম আমাদেরকে সকলই ধৈর্যপূর্বক সহ্য করতে সাহায্য করে। এমনটাই ঘটেছিল, যখন একটা ভূমিকম্প পেরুর দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হেনেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় এলাকার কিছু অংশ হারিকেন ক্যাটরিনার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই বিপর্যয়গুলোর কারণে অনেক ভাইবোন বাড়িঘর অথবা বস্তুগত সম্পদ হারিয়েছিল। প্রেম বিশ্বব্যাপী মণ্ডলীকে ত্রাণসামগ্রী জোগাতে পরিচালিত করেছিল আর স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়িঘর পুর্ননির্মাণ করতে ও কিংডম হল সংস্কার করতে সাহায্য করেছিল। এই ধরনের কাজগুলো প্রমাণ দেয় যে, আমাদের ভাইবোনেরা সবসময়ে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখায় ও যত্ন নেয়।—যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; ১ পিতর ২:১৭.

প্রেম কখনো শেষ হয় না

২০, ২১. (ক) কেন প্রেমের শ্রেষ্ঠ মূল্য রয়েছে? (খ) কেন আপনি প্রেমের পথ অনুধাবন করার জন্য সংকল্পবদ্ধ?

২০ আজকে যিহোবার লোকেদের মধ্যে আমরা প্রেমের উৎকৃষ্ট পথ অনুধাবন করার প্রজ্ঞা দেখতে পাই। সত্যিই, এটা সমস্তকিছুর ঊর্ধ্বে। লক্ষ করুন যে, পৌল কীভাবে সেই সত্যটার ওপর জোর দিয়েছেন। প্রথমে তিনি উল্লেখ করেন যে, আত্মার দান লোপ পাবে এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলী এর জন্মলগ্ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে পরিপক্বতার দিকে পৌঁছাবে। এরপর তিনি উপসংহার করেন: “আর এখন বিশ্বাস, প্রত্যাশা, প্রেম এই তিনটী আছে, আর ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ।”—১ করি. ১৩:১৩.

২১ পরিশেষে, যে-বিষয়গুলোর ওপর আমাদের বিশ্বাস রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হবে আর তাই সেগুলোর প্রতি বিশ্বাসের প্রয়োজন শেষ হয়ে যাবে। যে-প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি, সমস্তকিছু নতুন হয়ে যাওয়ার পর সেগুলো আর হৃদয়ে পোষণ করার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু, প্রেম সম্বন্ধে কী বলা যায়? তা কখনো শেষ হবে না। এটা অনন্তকালস্থায়ী। অনন্তজীবনের কথা মাথায় রেখে, আমরা নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বরের প্রেমের আরও দিক দেখতে ও বুঝতে পারব। যে-প্রেম কখনো শেষ হয় না, সেই প্রেমের উৎকৃষ্ট পথ অনুধাবন করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার মাধ্যমে আপনি অনন্তকালস্থায়ী হতে পারেন।—১ যোহন ২:১৭.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ভ্রান্ত প্রেম সম্বন্ধে কেন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে?

• প্রেম আমাদেরকে কী সহ্য করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

• কোন অর্থে প্রেম কখনো শেষ হয় না?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৭ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

২০১০ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে: ‘প্রেম সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে। প্রেম কখনও শেষ হয় না।’ —১ করি. ১৩:৭, ৮.

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আমাদেরকে সাক্ষ্য দিতে অনুপ্রাণিত করে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

শেষ হয় না এমন প্রেম আমাদের মালাউইর ভাই ও বোনদের পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করেছে