সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রিস্টের একজন প্রকৃত অনুসারী হিসেবে প্রমাণিত হোন

খ্রিস্টের একজন প্রকৃত অনুসারী হিসেবে প্রমাণিত হোন

খ্রিস্টের একজন প্রকৃত অনুসারী হিসেবে প্রমাণিত হোন

“প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফল ধরে, কিন্তু মন্দ গাছে মন্দ ফল ধরে।”—মথি ৭:১৭.

১, ২. বিশেষ করে এই শেষ সময়ে কীভাবে খ্রিস্টের সত্য অনুসারীরা মিথ্যা অনুসারীদের থেকে পৃথক?

 যিশু বলেছিলেন যে, যারা তাঁকে সেবা করে বলে মিথ্যাভাবে দাবি করে তাদেরকে তাদের ফলের দ্বারা—তাদের শিক্ষা এবং আচরণের দ্বারা—তাঁর সত্য অনুসারীদের থেকে পৃথক করা যাবে। (মথি ৭:১৫-১৭, ২০) বস্তুতপক্ষে, লোকেরা মন ও হৃদয়ে যা গ্রহণ করে স্বাভাবিকভাবে সেটার দ্বারাই প্রভাবিত হয়। (মথি ১৫:১৮, ১৯) যাদেরকে মিথ্যা বিষয়গুলো শেখানো হয়, তারা “মন্দ ফল” উৎপন্ন করে, কিন্তু যাদেরকে আধ্যাত্মিক সত্যগুলো শেখানো হয় তারা “ভাল ফল” উৎপন্ন করে।

এই শেষ সময়ে দুই ধরনের ফলই স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। (পড়ুন, দানিয়েল ১২:৩, ১০.) মিথ্যা খ্রিস্টানদের ঈশ্বর ও ঈশ্বরীয় ভক্তি সম্বন্ধে প্রায়ই এক বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, কিন্তু যাদের আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে তারা ঈশ্বরকে “আত্মায় ও সত্যে” উপাসনা করে। (যোহন ৪:২৪; ২ তীম. ৩:১-৫) তারা খ্রিস্টতুল্য গুণগুলো প্রদর্শন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনি যখন নীচে দেওয়া সত্য খ্রিস্টধর্মকে শনাক্ত করার পাঁচটা চিহ্ন বিবেচনা করবেন, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার আচরণ এবং শিক্ষাগুলো কি স্পষ্টভাবে ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রাখে? আমার আচরণ এবং শিক্ষা কি যারা সত্যের অন্বেষণ করে তাদের কাছে সত্যকে আকর্ষণীয় করে তোলে?’

ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করুন

৩. কী যিহোবাকে সন্তুষ্ট করে এবং সত্য খ্রিস্টানদের জন্য এর সঙ্গে কী জড়িত?

যিশু বলেছিলেন, “যাহারা আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু বলে, তাহারা সকলেই যে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে, এমন নয়, কিন্তু যে ব্যক্তি আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই পাইবে।” (মথি ৭:২১) হ্যাঁ, নিজেকে খ্রিস্টান বলে দাবি করা যিহোবাকে সন্তুষ্ট করে না কিন্তু সেই অনুসারে কাজ করাই তাঁকে সন্তুষ্ট করে। খ্রিস্টের সত্য অনুসারীদের জন্য সেটার সঙ্গে টাকাপয়সা, চাকরি, বিনোদন, জাগতিক প্রথা ও উদ্‌যাপন এবং বিয়ে ও সহমানবদের সঙ্গে অন্যান্য সম্পর্কের প্রতি মনোভাবসহ তাদের সমগ্র জীবনধারা জড়িত। কিন্তু, মিথ্যা খ্রিস্টানরা জগতের চিন্তাভাবনা এবং পথগুলো গ্রহণ করে থাকে, যেগুলো এই শেষ সময়ে দিন দিন আরও বেশি ঈশ্বরভক্তিহীন হয়ে পড়ছে।—গীত. ৯২:৭.

৪, ৫. কীভাবে আমরা মালাখি ৩:১৮ পদে পাওয়া যিহোবার কথাগুলো আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি?

উপযুক্তভাবেই ভাববাদী মালাখি লিখেছিলেন: “তোমরা ফিরিয়া আসিবে, এবং ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ দেখিবে।” (মালাখি ৩:১৭) এই কথাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি জগতের সঙ্গে মিশে যাই, নাকি আলাদা থাকি? স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে যেখানেই হোক না কেন, আমি কি আমার জাগতিক সঙ্গীসাথিদের মতো হওয়ার চেষ্টা করি, নাকি আমি বাইবেলের নীতিগুলোর প্রতি দৃঢ় থাকি, এমনকী উপযুক্ত হলে সেগুলোর পক্ষে কথা বলি?’ (পড়ুন, ১ পিতর ৩:১৬.) অবশ্য, আমরা নিজেদেরকে আত্মধার্মিক হিসেবে দেখাতে চাই না, কিন্তু আমাদের সেই ব্যক্তিদের থেকে পৃথক থাকা উচিত, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে না ও সেবা করে না।

আপনি যদি উন্নতি করার কোনো সম্ভাবনা দেখতে পান, তাহলে বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনা করুন না কেন এবং নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন, প্রার্থনা এবং সভায় উপস্থিত থাকার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শক্তি চান না কেন? যতই আপনি ঈশ্বরের বাক্যকে প্রয়োগ করবেন, ততই আপনি “ভাল ফল” উৎপন্ন করতে পারবেন, যার অন্তর্ভুক্ত “[ঈশ্বরের] নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল।”—ইব্রীয় ১৩:১৫.

ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করুন

৬, ৭. রাজ্যের বার্তা সম্বন্ধে, সত্য এবং মিথ্যা খ্রিস্টানদের মধ্যে কোন বৈসাদৃশ্য দেখা যেতে পারে?

যিশু বলেছিলেন: “অন্য অন্য নগরে আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে হইবে; কেননা সেই জন্যই আমি প্রেরিত হইয়াছি।” (লূক ৪:৪৩) কেন যিশু ঈশ্বরের রাজ্যকে তাঁর পরিচর্যার প্রধান বিষয়বস্তু করেছিলেন? কারণ তিনি জানতেন যে, সেই রাজ্যের রাজা হিসেবে তিনি তাঁর পুনরুত্থিত আত্মায়জাত তাঁর ভাইদের সঙ্গে নিয়ে মানবজাতির দুর্দশাগুলোর মূল কারণকে—পাপ এবং দিয়াবলকে—শেষ করবেন। (রোমীয় ৫:১২; প্রকা. ২০:১০) তাই, তিনি তাঁর অনুসারীদের বর্তমান বিধিব্যবস্থার শেষ না আসা পর্যন্ত সেই রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করতে আদেশ দিয়েছিলেন। (মথি ২৪:১৪) যে-লোকেরা নিছকই খ্রিস্টের অনুসারী বলে দাবি করে, তারা এই কাজে রত হয় না—বস্তুতপক্ষে, তারা হতে পারে না। কেন? অন্ততপক্ষে তিনটে কারণে: প্রথমত, তারা যা বোঝে না, তা তারা প্রচার করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, তাদের প্রতিবেশীদের কাছে রাজ্যের বার্তা জানানোর সময় যে-উপহাস এবং বিরোধিতা আসতে পারে, সেটার মুখোমুখি হওয়ার জন্য যে-নম্রতা এবং সাহসের প্রয়োজন, তাদের অধিকাংশের মধ্যেই তা নেই। (মথি ২৪:৯; ১ পিতর ২:২৩) আর তৃতীয়ত, মিথ্যা খ্রিস্টানদের কাছে ঈশ্বরের আত্মা নেই।—যোহন ১৪:১৬, ১৭.

অন্যদিকে, খ্রিস্টের সত্য অনুসারীরা ঈশ্বরের রাজ্য কী এবং এটা কী সম্পাদন করবে, তা বোঝে। অধিকন্তু, যিহোবার আত্মার সাহায্যে রাজ্যের বিষয়গুলোকে বিশ্বব্যাপী ঘোষণা করার দ্বারা তারা এটাকে তাদের জীবনে অগ্রাধিকার দেয়। (সখ. ৪:৬) আপনি কি নিয়মিতভাবে এই কাজে অংশগ্রহণ করেন? সম্ভবত পরিচর্যায় আরও বেশি সময় ব্যয় করার অথবা এটাতে আরও বেশি কার্যকারী হওয়ার দ্বারা আপনি কি একজন রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে উন্নতি করার চেষ্টা করছেন? কেউ কেউ আরও ভালোভাবে বাইবেল ব্যবহার করার দ্বারা তাদের পরিচর্যাকে উন্নত করার চেষ্টা করেছে। “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, যিনি ‘শাস্ত্রের কথা লইয়া প্রসঙ্গ করাকে’ অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন।—ইব্রীয় ৪:১২; প্রেরিত ১৭:২, ৩.

৮, ৯. (ক) কোন অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের পরিচর্যায় বাইবেল ব্যবহার করার গুরুত্বকে তুলে ধরে? (খ) ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারি?

একবার ঘরে ঘরে প্রচার কাজ করার সময় একজন ভাই এক ক্যাথলিক লোকের কাছে দানিয়েল ২:৪৪ পদটি পড়েছিলেন এবং ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কীভাবে ঈশ্বরের রাজ্য প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে আসবে। সেই ব্যক্তি উত্তরে বলেছিলেন: “শুধু মুখে না বলে আপনি যে বাইবেল খুলেছেন এবং শাস্ত্র কী বলে তা আমাকে দেখিয়েছেন, এই বিষয়টা আমি সত্যিই উপলব্ধি করি।” একজন ভাই যখন এক গ্রিক অর্থোডক্স ভদ্রমহিলার কাছে একটি শাস্ত্রপদ পড়েছিলেন, তখন তিনি বেশ কয়েকটা যুক্তিসংগত প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। এই ক্ষেত্রেও, ভাই এবং তার স্ত্রী বাইবেল থেকে উত্তর দিয়েছিল। পরে সেই ভদ্রমহিলা বলেছিলেন: “আপনারা কি জানেন যে, কেন আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছুক হয়েছিলাম? কারণ আপনারা বাইবেল নিয়ে আমার দরজায় এসেছিলেন এবং সেখান থেকে পড়েছিলেন।”

অবশ্য, আমাদের সাহিত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষেত্রে এগুলো অর্পণ করা উচিত। কিন্তু, বাইবেলই হল আমাদের মূল হাতিয়ার। তাই, আপনার পরিচর্যায় নিয়মিতভাবে এটিকে ব্যবহার করা যদি আপনার অভ্যাস না হয়ে থাকে, তাহলে তা করাকে আপনার লক্ষ্য করে তুলুন না কেন? আপনি হয়তো কয়েকটি মূল শাস্ত্রপদ বেছে নিতে পারেন, যেগুলো ব্যাখ্যা করে যে, ঈশ্বরের রাজ্য কী এবং কীভাবে সেই রাজ্য আপনার এলাকায় লোকেরা নির্দিষ্টভাবে যে-সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তিত, সেগুলোকে সমাধান করবে। তারপর ঘরে ঘরে প্রচার করার সময় সেগুলো পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।

গর্বের সঙ্গে ঈশ্বরের নাম বহন করুন

১০, ১১. ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করা সম্বন্ধে, যিশু এবং তাঁকে অনুসরণ করে বলে দাবি করে এমন অনেকের মধ্যে কোন বৈসাদৃশ্য রয়েছে?

১০ “তোমরাই আমার সাক্ষী, ইহা সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] কহেন, আর আমিই ঈশ্বর।” (যিশা. ৪৩:১২) যিহোবার সর্বোৎকৃষ্ট সাক্ষি যিশু খ্রিস্ট, ঈশ্বরের নাম বহন করা এবং তা জানানোকে এক সম্মান হিসেবে দেখেছিলেন। (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ৩:১৫; যোহন ১৭:৬; ইব্রীয় ২:১২.) বস্তুতপক্ষে, যিশু তাঁর পিতার নাম ঘোষণা করেছিলেন বলে তাঁকে “বিশ্বস্ত সাক্ষী” বলা হয়েছিল।—প্রকা. ১:৫; মথি ৬:৯.

১১ এর বিপরীতে, ঈশ্বর এবং তাঁর পুত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে বলে দাবি করে এমন অনেকে এই ঐশিক নামটির প্রতি এক অসম্মানজনক মনোভাব প্রদর্শন করেছে, এমনকী তাদের বাইবেল সংস্করণগুলো থেকে নামটি বাদ দিয়ে দিয়েছে। একইরকম মনোভাব প্রদর্শন করে ক্যাথলিক বিশপদের উদ্দেশে সাম্প্রতিক একটা নির্দেশপত্র বলেছিল যে, “টেট্রাগ্র্যামাটোন YHWH-এর আকারে ঈশ্বরের নাম” উপাসনার সময় “ব্যবহার করার বা উচ্চারণের জন্য নয়।” * এই ধরনের চিন্তাভাবনা কতই না নিন্দনীয়!

১২. কীভাবে ১৯৩১ সালে যিহোবার দাসেরা যিহোবার সঙ্গে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল?

১২ খ্রিস্ট এবং তাঁর পূর্বের বৃহৎ ‘সাক্ষিমেঘ’ উভয়কে অনুকরণ করে সত্য খ্রিস্টানরা গর্বের সঙ্গে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করে থাকে। (ইব্রীয় ১২:১) বস্তুতপক্ষে, ১৯৩১ সালে ঈশ্বরের দাসেরা যিহোবার সাক্ষি নামটি গ্রহণ করার দ্বারা যিহোবার সঙ্গে এমনকী আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। (পড়ুন, যিশাইয় ৪৩:১০-১২.) তাই, খুব বিশেষ এক অর্থে, খ্রিস্টের সত্য অনুসারীরা এমন এক ‘জাতি’ হয়ে উঠেছে, যারা ‘ঈশ্বরের নামে কীর্ত্তিত হইয়াছে।’—প্রেরিত ১৫:১৪, ১৭.

১৩. কীভাবে আমরা আমাদের ঈশ্বরদত্ত নামের যোগ্যরূপে জীবনযাপন করতে পারি?

১৩ কীভাবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের অদ্বিতীয় নামের যোগ্যরূপে জীবনযাপন করতে পারি? একটা বিষয় হল যে, আমাদের অবশ্যই বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের বিষয়ে সাক্ষ্য বহন করতে হবে। “যে কেহ প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে,” পৌল লিখেছিলেন। “তবে তাহারা যাঁহাতে বিশ্বাস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে? আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে? আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে? আর প্রেরিত না হইলে কেমন করিয়া প্রচার করিবে?” (রোমীয় ১০:১৩-১৫) এ ছাড়া, আমাদের কৌশলে সেই ধর্মীয় মিথ্যাচারগুলোকে উন্মোচন করে দেওয়া উচিত, যেগুলো আমাদের সৃষ্টিকর্তার ওপর অপবাদ নিয়ে আসে, যেমন নরকাগ্নির মতবাদ, যে-মতবাদ আসলে প্রেমের ঈশ্বরের ওপর দিয়াবলের নিষ্ঠুর বৈশিষ্ট্যগুলোকে আরোপ করে।—যির. ৭:৩১; ১ যোহন ৪:৮; মার্ক ৯:১৭-২৭.

১৪. ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম সম্বন্ধে জেনে কেউ কেউ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে?

১৪ আপনি কি আপনার স্বর্গীয় পিতার নাম বহন করার জন্য গর্বিত? আপনি কি অন্যদেরকে এই পবিত্র নাম সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করেন? ফ্রান্সের প্যারিস শহরের একজন ভদ্রমহিলা শুনেছিলেন যে, যিহোবার সাক্ষিরা ঈশ্বরের নাম জানে, তাই এরপর প্রথমেই যে-সাক্ষির সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল তিনি তাকে তার বাইবেল থেকে সেই নাম দেখাতে বলেছিলেন। সেই ভদ্রমহিলা যখন গীতসংহিতা ৮৩:১৮ পদটি পড়েন, তখন সেটা তার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল। তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন এবং এখন তিনি একজন বিশ্বস্ত বোন, যিনি অন্য দেশে সেবা করছেন। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী একজন ক্যাথলিক ভদ্রমহিলা যখন বাইবেলে প্রথমবার ঈশ্বরের নামটি দেখেছিলেন, তখন তিনি আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন। এখন অনেক বছর ধরে তিনি একজন নিয়মিত অগ্রগামী। অতি সম্প্রতি, জামাইকার সাক্ষিরা যখন একজন ভদ্রমহিলাকে তার বাইবেল থেকে ঈশ্বরের নামটি দেখিয়েছিলেন, তখন তিনিও আনন্দে চোখের জল ফেলেছিলেন। তাই, ঈশ্বরের নাম বহন করতে পেরে এবং যিশুকে অনুকরণ করে সেই অতি মূল্যবান নামটি অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে পেরে গর্বিত হোন।

“তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না”

১৫, ১৬. সত্য খ্রিস্টানরা জগৎকে কোন দৃষ্টিতে দেখে আর আমাদের নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

১৫ “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই।” (১ যোহন ২:১৫) জগৎ ও এর মাংসিক মনোভাব হল যিহোবা ও তাঁর পবিত্র আত্মার বিপরীত। তাই, খ্রিস্টের সত্য অনুসারীরা শুধুমাত্র জগতের অংশ না হওয়া থেকেই বিরত থাকে না। শিষ্য যাকোব যেমন লিখেছিলেন, “জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা,” তা জেনে তারা জগৎকে প্রেম করা প্রত্যাখ্যান করে।—যাকোব ৪:৪.

১৬ এমন এক জগৎ, যা অসংখ্য প্রলোভন নিয়ে আসে, সেখানে যাকোবের কথায় মনোযোগ দেওয়া এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। (২ তীম. ৪:১০) তাই, যিশু তাঁর অনুসারীদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর। তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৫, ১৬) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি জগতের অংশ না হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি? অন্যেরা কি অশাস্ত্রীয় বিভিন্ন উদ্‌যাপন এবং প্রথা ও সেইসঙ্গে এমন বিষয়গুলো যেগুলো কোনো পৌত্তলিক উৎস থেকে আসেনি অথচ স্পষ্টভাবে জগতের মনোভাবকে প্রতিফলিত করে, সেগুলোর বিষয়ে আমার অবস্থান সম্বন্ধে জানে?’—২ করি. ৬:১৭; ১ পিতর ৪:৩, ৪.

১৭. কী সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদেরকে যিহোবার পক্ষ নিতে পরিচালিত করতে পারে?

১৭ এটা ঠিক যে, আমাদের বাইবেলভিত্তিক অবস্থান আমাদেরকে জগতের অনুমোদন এনে দেবে না কিন্তু তা হয়তো সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের কৌতূহলকে জাগিয়ে তুলতে পারে। বস্তুতপক্ষে, এই ধরনের ব্যক্তিরা যখন লক্ষ করে যে, আমাদের বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে শাস্ত্রের ওপর বদ্ধমূল এবং আমাদের সমগ্র জীবনধারা এর সঙ্গে জড়িত, তখন তারা হয়তো বস্তুতপক্ষে অভিষিক্তদের উদ্দেশে এই কথাগুলো বলার দ্বারা সাড়া দিতে পারে: “আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।”—সখ. ৮:২৩.

প্রকৃত খ্রিস্টীয় প্রেম দেখান

১৮. যিহোবা এবং আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি প্রেম দেখানোর সঙ্গে কী জড়িত?

১৮ যিশু বলেছিলেন: “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে,” আর “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৭, ৩৯) এই প্রেম (গ্রিক ভাষায় আগাপে) হল নীতিগত প্রেম, যা কর্তব্য, নীতি এবং যথার্থতাকে বিবেচনা করে কিন্তু প্রায়ই এর সঙ্গে প্রবল আবেগ জড়িত থাকে। এটা আন্তরিক এবং প্রগাঢ় হতে পারে। (১ পিতর ১:২২) এটা স্বার্থপরতার একেবারে বিপরীত কারণ তা নিঃস্বার্থ কথাবার্তায় এবং কাজকর্মে প্রতিফলিত হয়।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৩:৪-৭.

১৯, ২০. কয়েকটা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন, যেগুলো খ্রিস্টীয় প্রেমের ক্ষমতাকে তুলে ধরে।

১৯ যেহেতু প্রেম হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফলের একটা গুণ, তাই এটা সত্য খ্রিস্টানদের এমন কিছু করতে যেমন, জাতিগত, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সমর্থ করে, যা অন্যেরা কাটিয়ে উঠতে পারে না। (পড়ুন, যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; গালা. ৫:২২) মেষতুল্য ব্যক্তিরা যখন এই ধরনের প্রেম দেখে, তখন তারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইজরায়েলের একজন যিহুদি যুবক ব্যক্তি যখন প্রথমবার খ্রিস্টীয় সভাতে যোগদান করেছিলেন, তখন তিনি এটা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে, যিহুদি এবং আরব দেশীয় ভাইয়েরা একসঙ্গে যিহোবার উপাসনা করছে। এর ফলে, তিনি নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে যোগদান করতে শুরু করেছিলেন এবং বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিলেন। আপনি কি আপনার ভাইবোনদের প্রতি এই ধরনের আন্তরিক প্রেম দেখান? আর আপনি কি আপনার কিংডম হলে নতুন ব্যক্তিদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানোর জন্য চেষ্টা করেন, তা তাদের জাতীয়তা, বর্ণ এবং সামাজিক পদমর্যাদা যা-ই হোক না কেন?

২০ সত্য খ্রিস্টান হিসেবে, আমরা সকলের প্রতি প্রেম দেখানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। এল সালভাদরে একজন অল্পবয়সি প্রকাশক বোন ৮৭ বছর বয়সি এমন একজন ক্যাথলিক ভদ্রমহিলাকে বাইবেল অধ্যয়ন করাতেন, যিনি তার গির্জার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। একদিন সেই ভদ্রমহিলা গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। যখন তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন, তখন সাক্ষিরা তাকে দেখতে গিয়েছিল এবং তার জন্য খাবারদাবার নিয়ে এসেছিল। প্রায় একমাস এইরকমই চলেছিল। সেই ভদ্রমহিলার গির্জার কেউই তাকে দেখতে আসেনি। এর ফল কী হয়েছিল? তিনি তার মূর্তিগুলোকে নষ্ট করে দিয়েছিলেন, গির্জা থেকে তার নাম কাটিয়ে নিয়েছিলেন এবং আবারও বাইবেল অধ্যয়ন করা শুরু করেছিলেন। হ্যাঁ, খ্রিস্টীয় প্রেমের ক্ষমতা রয়েছে! এটা এমনভাবে হৃদয়ে পৌঁছাতে পারে, যা হয়তো মুখের কথা করতে পারে না।

২১. কীভাবে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে পারি?

২১ যারা তাঁকে সেবা করে বলে মিথ্যাভাবে দাবি করে, এমন সকলকে শীঘ্র যিশু বলবেন: “আমি কখনও তোমাদিগকে জানি নাই; হে অধর্ম্মাচারীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও।” (মথি ৭:২৩) তাই, আসুন আমরা সেই ফল উৎপন্ন করি, যা পিতা এবং পুত্র উভয়কেই সম্মানিত করে। যিশু বলেছিলেন, “যে কেহ আমার এই সকল বাক্য শুনিয়া পালন করে, তাহাকে এমন এক জন বুদ্ধিমান লোকের তুল্য বলিতে হইবে, যে পাষাণের উপরে আপন গৃহ নির্ম্মাণ করিল।” (মথি ৭:২৪) হ্যাঁ, আমরা যদি খ্রিস্টের প্রকৃত অনুসারী বলে প্রমাণিত হই, তাহলে আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করব আর আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে, ঠিক যেন পাষাণের উপরে স্থাপিত!

[পাদটীকা]

^ দ্যা যিরূশালেম বাইবেল ও সেইসঙ্গে ইংরেজি ভাষার কিছু আধুনিক ক্যাথলিক প্রকাশনায় টেট্রাগ্র্যামাটোনকে “ইয়াওয়ে” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।

আপনার কি মনে আছে?

• কীভাবে খ্রিস্টের সত্য অনুসারীরা মিথ্যা অনুসারীদের থেকে পৃথক?

• কিছু ‘ফলের’ বিষয়ে উল্লেখ করুন, যেগুলো সত্য খ্রিস্টানদের শনাক্ত করে।

• খ্রিস্টীয় ফল উৎপন্ন করার সময় আপনি কোন লক্ষ্যগুলো স্থাপন করতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরিচর্যায় নিয়মিতভাবে বাইবেল ব্যবহার করা কি আপনার অভ্যাস?

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

অন্যেরা কি অশাস্ত্রীয় উদ্‌যাপনগুলোর বিষয়ে তোমার অবস্থান সম্বন্ধে জানে?