সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি যিহোবাকে আপনার পিতা হিসেবে দেখেন?

আপনি কি যিহোবাকে আপনার পিতা হিসেবে দেখেন?

আপনি কি যিহোবাকে আপনার পিতা হিসেবে দেখেন?

“প্রভু, আমাদিগকে প্রার্থনা করিতে শিক্ষা দিউন।” তাঁর শিষ্যদের মধ্যে একজন যখন এই অনুরোধ করেছিলেন, তখন যিশু উত্তর দিয়েছিলেন: “তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন বলিও, পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (লূক ১১:১, ২) যিশু যিহোবার বিষয়ে নির্দেশ করার জন্য ছাপ ফেলার মতো এই ধরনের উপাধিগুলো ব্যবহার করতে পারতেন যেমন, ‘সর্ব্বশক্তিমান,’ ‘শিক্ষক,’ “সৃষ্টিকর্ত্তা,” “অনেক দিনের বৃদ্ধ” এবং “যুগপর্য্যায়ের রাজা।” (আদি. ৪৯:২৫; যিশা. ৩০:২০; ৪০:২৮; দানি. ৭:৯; ১ তীম. ১:১৭) এর পরিবর্তে, যিশু “পিতঃ” শব্দটি ব্যবহার করা বেছে নিয়েছিলেন। কেন? সম্ভবত তিনি চান আমরা যেন ঠিক সেইভাবে নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নিকটবর্তী হই, যেভাবে এক নম্র সন্তান একজন প্রেমময় বাবার নিকটবর্তী হয়।

কিন্তু, কেউ কেউ ঈশ্বরকে তাদের পিতা হিসেবে চিন্তা করাকে কঠিন বলে মনে করে। প্রিয়াঙ্কা * নামে একজন খ্রিস্টান স্বীকার করেন, “আমার বাপ্তিস্মের অনেক বছর পরেও যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া এবং তাঁকে একজন পিতা হিসেবে ভেবে তাঁর কাছে প্রার্থনা করা আমার পক্ষে কঠিন ছিল।” তার সমস্যার একটা কারণ সম্বন্ধে উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার এমন কোনো সময়ের কথা মনে পড়ে না, যখন আমার নিজের বাবা আমার প্রতি স্নেহ দেখিয়েছিলেন।”

শেষকালের এই বিষম সময়ে, একজন সন্তান তার বাবার কাছ থেকে যে-‘স্নেহ’ লাভ করার আশা করে, সেটার খুবই অভাব রয়েছে। (২ তীম. ৩:১,) তাই, ব্যক্তি-বিশেষদের মধ্যে প্রিয়াঙ্কার মতো অনুভূতি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু, এটা জানা উৎসাহজনক যে, যিহোবাকে আমাদের প্রেমময় পিতা হিসেবে দেখার পিছনে আমাদের উত্তম কারণগুলো রয়েছে।

যিহোবা—একজন প্রেমময় জোগানদাতা

আমরা যদি যিহোবাকে আমাদের পিতা হিসেবে দেখতে চাই, তাহলে তাঁর সঙ্গে আমাদের ভালোভাবে পরিচিত হতে হবে। “পুত্ত্রকে কেহ জানে না, কেবল পিতা জানেন,” যিশু বলেছিলেন, “পিতাকে কেহ জানে না, কেবল পুত্ত্র জানেন, এবং পুত্ত্র যাহার নিকটে তাঁহাকে প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করেন, সে জানে।” (মথি ১১:২৭) একজন পিতা হিসেবে যিহোবা কেমন, তা জানার এক চমৎকার উপায় হল, সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে যিশু যা প্রকাশ করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করা। তাহলে, যিহোবা সম্বন্ধে যিশু কী প্রকাশ করেছিলেন?

যিহোবাকে তাঁর জীবনের উৎস হিসেবে স্বীকার করে যিশু বলেছিলেন: “পিতা হেতু আমি জীবিত আছি।” (যোহন ৬:৫৭) আমরাও আমাদের অস্তিত্বের জন্য পিতার কাছে ঋণী। (গীত. ৩৬:৯; প্রেরিত ১৭:২৮) অন্যদেরকে জীবন প্রদান করতে কী যিহোবাকে অনুপ্রাণিত করেছিল? প্রেমই কি নয়? এই ধরনের এক উপহারের জন্য প্রতিদানে আমাদেরও নিশ্চয়ই স্বর্গীয় পিতাকে প্রেম করা উচিত।

মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের প্রেমের সর্বমহৎ প্রদর্শন ছিল তাঁর দ্বারা যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ব্যবস্থা করা। প্রেমের সেই কাজ, পাপী মানবজাতির জন্য তাঁর প্রিয় পুত্রের মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভবপর করেছে। (রোমীয় ৫:১২; ১ যোহন ৪:৯, ১০) আর যেহেতু আমাদের স্বর্গীয় পিতা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করেন, তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যারা তাঁকে প্রেম করে এবং তাঁর বাধ্য হয়, তারা সকলে পরিশেষে “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” উপভোগ করবে।—রোমীয় ৮:২১.

এ ছাড়া, আমাদের স্বর্গীয় পিতা প্রতিদিন আমাদের “উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন।” (মথি ৫:৪৫) তাই, সূর্য উদিত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করার প্রয়োজনীয়তা আমরা বিবেচনা করব এমন সম্ভাবনা খুবই কম। অথচ, সূর্যের উষ্ণ রশ্মি আমাদের কতই না প্রয়োজন এবং এটাকে আমরা কতই না উপভোগ করি! অধিকন্তু, আমাদের পিতা হলেন অদ্বিতীয় জোগানদাতা, যিনি আমাদের চাওয়ার আগেই আমাদের বস্তুগত চাহিদাগুলো সম্বন্ধে জানেন। তাই, আমাদের স্বর্গীয় পিতা যেভাবে তাঁর সৃষ্টির যত্ন নিয়ে থাকেন, তা লক্ষ করার এবং উপলব্ধি সহকারে সেই বিষয়ে চিন্তা করার জন্য আমাদের কি সময় করে নেওয়া উচিত নয়?—মথি ৬:৮, ২৬.

আমাদের পিতা—“কোমল রক্ষাকর্তা”

যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী ঈশ্বরের প্রাচীনকালের লোকেদের আশ্বস্ত করেছিল: “পর্বতগুলো সরে যাবে এবং পাহাড়গুলো টলতে থাকবে কিন্তু আমার বন্ধুত্ব কখনো তোমাদের কাছ থেকে সরে যাবে না ও আমার শান্তির চুক্তিও টলবে না, তোমাদের কোমল রক্ষাকর্তা যিহোবা বলেন।” (যিশা. ৫৪:১০, দ্যা বাইবেল ইন লিভিং ইংলিশ) এই বিষয়টার ওপর জোর দিয়ে, তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ রাতে করা যিশুর প্রার্থনা দেখায় যে, যিহোবা বাস্তবিকই একজন “কোমল রক্ষাকর্তা।” যিশু তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে প্রার্থনা করেছিলেন: “ইহারা জগতে রহিয়াছে, এবং আমি তোমার নিকটে আসিতেছি। পবিত্র পিতঃ, তোমার নামে তাহাদিগকে রক্ষা কর।” (যোহন ১৭:১১, ১৪) যিশুর অনুসারীদেরকে যিহোবা রক্ষা করেছেন বা তাদের প্রতি লক্ষ রেখেছেন এবং তাদের সুরক্ষা জুগিয়েছেন।

আজকে একটা যে-উপায়ে ঈশ্বর আমাদেরকে শয়তানের ফন্দিগুলো থেকে রক্ষা করেন তা হল, ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর দ্বারা। (মথি ২৪:৪৫) আমরা যদি ‘ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান করিতে’ চাই, তাহলে সেই শক্তিবর্ধক খাদ্য গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। উদাহরণস্বরূপ, ‘বিশ্বাসের ঢালের’ বিষয়টা বিবেচনা করুন, যেটার দ্বারা আমরা ‘পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ নির্ব্বাণ করিতে পারি।’ (ইফি. ৬:১১, ১৬) আমরা যে-বিশ্বাস অনুশীলন করি, তা আমাদের আধ্যাত্মিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের পিতার সুরক্ষামূলক শক্তির এক প্রমাণ।

পৃথিবীতে থাকাকালীন ঈশ্বরের পুত্র যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা গভীরভাবে বিবেচনা করার দ্বারা আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার কোমলতা সম্বন্ধে আরও অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারি। মার্ক ১০:১৩-১৬ পদে লিপিবদ্ধ বিবরণটি লক্ষ করুন। সেখানে যিশু তাঁর শিষ্যদের যা বলেছিলেন, সেটাকে এভাবে উদ্ধৃতি করা হয়: “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও।” যখন সেই শিশুরা তাঁর চারপাশে জড়ো হয়েছিল, তখন যিশু তাদেরকে কোমলভাবে আলিঙ্গন করে আশীর্বাদ করেছিলেন। তাদের মুখমণ্ডল নিশ্চয় আনন্দে কতই না উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল! আর যেহেতু যিশু বলেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে,” তাই আমরা জানি যে, সত্য ঈশ্বর চান আমরা যেন তাঁর কাছে আসি।—যোহন ১৪:৯.

যিহোবা ঈশ্বর হলেন প্রেমের অফুরন্ত উৎস। তিনি হলেন অদ্বিতীয় জোগানদাতা এবং অতুলনীয় রক্ষক, যিনি চান আমরা যেন তাঁর নিকটবর্তী হই। (যাকোব ৪:৮) তাই, নিঃসন্দেহে যিহোবা হলেন সর্বোত্তম পিতা!

আমরা কতই না উপকৃত হই!

আমাদের প্রেমময় এবং কোমল স্বর্গীয় পিতা হিসেবে যিহোবার ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করার দ্বারা আমরা প্রচুররূপে উপকৃত হই। (হিতো. ৩:৫, ৬) যিশু, পুরোপুরিভাবে তাঁর পিতার ওপর নির্ভর করার দ্বারা উপকৃত হয়েছিলেন। “আমি একা নহি,” খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “কিন্তু আমি আছি, এবং পিতা আছেন, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন।” (যোহন ৮:১৬) যিশু সবসময় যিহোবার সমর্থনের বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর বাপ্তিস্মের সময়ে তিনি পিতার কাছ থেকে এই প্রেমময় আশ্বাস লাভ করেছিলেন, যিনি ঘোষণা করেছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।” (মথি ৩:১৫-১৭) আর তাঁর মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে যিশু চিৎকার করে বলেছিলেন: “পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি।” (লূক ২৩:৪৬) অন্যান্য সময়ের মতো, তখনও তাঁর পিতার প্রতি যিশুর নির্ভরতা দৃঢ় ছিল।

আমাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় হতে পারে। যিহোবা যখন আমাদের সপক্ষে, তখন আমাদের কীসের ভয়? (গীত. ১১৮:৬) শুরুর দিকে উল্লেখিত প্রিয়াঙ্কা যখন বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তখন তিনি তার নিজের শক্তিতে নির্ভর করায় অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু, এরপর তিনি যিশুর জীবন এবং পরিচর্যা সম্বন্ধে, বিশেষ করে তাঁর স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে অধ্যয়ন করেছিলেন। এর ফলাফল কী হয়েছিল? “আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, একজন বাবা থাকার মানে কী এবং তার ওপর নির্ভর করার অর্থ কী,” প্রিয়াঙ্কা বলেন। তিনি আরও বলেন: “আমি প্রকৃত শান্তি ও সুখ লাভ করেছিলাম। আসলে, কোনো ব্যাপারে উদ্‌বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণই আমাদের নেই।”

যিহোবাকে আমাদের পিতা হিসেবে দেখার দ্বারা কীভাবে আমরা আরও উপকৃত হই? সন্তানরা সাধারণত তাদের বাবা-মাকে ভালোবাসে এবং তাদেরকে খুশি করতে চায়। প্রেমের দ্বারা পরিচালিত হয়ে, ঈশ্বরের পুত্র ‘সর্ব্বদা তাঁহার পিতার সন্তোষজনক কার্য্য করিয়াছিলেন।’ (যোহন ৮:২৯) একইভাবে, আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি প্রেম আমাদেরকে বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতে এবং তাঁর “ধন্যবাদ” বা প্রশংসা ‘করিতে’ পরিচালিত করতে পারে।—মথি ১১:২৫; যোহন ৫:১৯.

আমাদের পিতা ‘আমাদের দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিয়া আছেন’

এ ছাড়া, আমাদের স্বর্গীয় পিতা এক “সহায়”—তাঁর পবিত্র আত্মা—জুগিয়েছেন। এটা “পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন,” যিশু বলেছিলেন। (যোহন ১৪:১৫-১৭; ১৬:১২, ১৩) ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা আমাদের পিতাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে আমাদেরকে পরিচালিত করতে পারে। এটা আমাদেরকে “দুর্গসমূহ” অর্থাৎ পূর্বকল্পিত বিশ্বাস, ভুল ধারণা বা বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ভেঙে ফেলতে আর এভাবে “সমুদয় চিন্তাকে বন্দি করিয়া খ্রীষ্টের আজ্ঞাবহ” হতে সাহায্য করতে পারে। (২ করি. ১০:৪, ৫) তাই, আসুন আমরা এই আস্থা রেখে যিহোবার কাছে সেই প্রতিজ্ঞাত “সহায়” চেয়ে প্রার্থনা করি যে, “স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:১৩) এই বিষয়েও প্রার্থনা করা উপযুক্ত যে, পবিত্র আত্মা আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে সাহায্য করবে।

একটা বাচ্চা যখন তার বাবার হাত ধরে হাঁটে, তখন সে সুরক্ষিত, নিরাপদ বোধ করে এবং ভয় পায় না। আপনি যদি সত্যিই যিহোবাকে আপনার পিতা হিসেবে দেখেন, তাহলে আপনি সান্ত্বনাদায়ক এই কথাগুলোতে আস্থা রাখতে পারবেন: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর তোমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিব; তোমাকে বলিব, ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব।” (যিশা. ৪১:১৩) ঈশ্বরের সঙ্গে অনন্তকাল ধরে “গমনাগমন” করার অপূর্ব সুযোগ আপনার হতে পারে। (মীখা ৬:৮) তাঁর ইচ্ছা পালন করে চলুন আর এর ফলে আপনি সেই প্রেম, আনন্দ এবং নিরাপত্তা লাভ করবেন, যা যিহোবাকে আপনার পিতা হিসেবে দেখার মাধ্যমে আসে।

[পাদটীকা]

^ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।