সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবনের সর্বোত্তম পথে স্বাগতম!

জীবনের সর্বোত্তম পথে স্বাগতম!

জীবনের সর্বোত্তম পথে স্বাগতম!

“আমরা জীবিত থাকি বা মরি, আমরা প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW]।”—রোমীয় ১৪:৮.

১. জীবনের সর্বোত্তম পথ সম্বন্ধে যিশু কী শিক্ষা দিয়েছিলেন?

 যিহোবা চান যেন আমরা জীবনের সর্বোত্তম পথে চলি। লোকেরা বিভিন্ন পথে থাকতে পারে কিন্তু কেবল একটা পথই হচ্ছে সর্বোত্তম। আমাদের জীবনে ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে সংগতি রেখে চলা ও তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টের কাছ থেকে শেখাই হচ্ছে সর্বোত্তম পথ। যিশু তাঁর অনুসারীদের আত্মায় ও সত্যে ঈশ্বরকে উপাসনা করতে শিক্ষা দিয়েছিলেন আর তিনি তাদেরকে শিষ্য তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০; যোহন ৪:২৪) যিশুর নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার দ্বারা আমরা যিহোবাকে সন্তুষ্ট করি ও তাঁর আশীর্বাদ উপভোগ করি।

২. প্রথম শতাব্দীতে কীভাবে অনেকে রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দিয়েছিল আর “সেই পথাবলম্বী” হওয়া বলতে কী বুঝিয়েছিল?

“অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত [“সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন,” NW]” ব্যক্তিরা যখন বিশ্বাসী হয়ে ওঠে ও বাপ্তাইজিত হয়, তখন আমাদের তাদেরকে এই কথা বলার উপযুক্ত কারণ রয়েছে যে, “জীবনের সর্বোত্তম পথে স্বাগতম!” (প্রেরিত ১৩:৪৮) সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে, বিভিন্ন জাতি থেকে হাজার হাজার লোক সত্য গ্রহণ করেছিল এবং বাপ্তাইজিত হওয়ার দ্বারা জনসাধারণ্যে ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভক্তির প্রমাণ দিয়েছিল। (প্রেরিত ২:৪১) ওই প্রাথমিক শিষ্যরা “সেই পথাবলম্বী” হয়েছিল। (প্রেরিত ৯:২; ১৯:২৩) এই অভিব্যক্তিটি উপযুক্ত ছিল কারণ যারা খ্রিস্টের অনুসারী হয়ে উঠেছিল, তারা এমন এক জীবনের প্রতি আসক্ত ছিল, যা যিশু খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করার ওপর কেন্দ্রীভূত।—১ পিতর ২:২১.

৩. কেন যিহোবার লোকেরা বাপ্তাইজিত হয় আর বিগত দশ বছরে কত জন জলে নিমজ্জিত হয়েছে?

এই শেষকালে শিষ্য তৈরির কাজ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখন দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩০-টারও বেশি জায়গায় তা সম্পন্ন হচ্ছে। বিগত দশ বছরে, ২৭,০০,০০০-রও বেশি লোক যিহোবাকে সেবা করার এবং তাঁর প্রতি তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে বাপ্তাইজিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মানে, প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৫,০০০-রেরও বেশি লোক! বাপ্তাইজিত হওয়ার সিদ্ধান্তের ভিত্তি হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা, শাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান এবং শাস্ত্র যা শিক্ষা দেয়, তাতে বিশ্বাস। বাপ্তিস্ম হচ্ছে আমাদের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ কারণ এটা যিহোবার সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্কের শুরুকে চিহ্নিত করে। এ ছাড়া, এটা এই আস্থারও প্রকাশ যে, তিনি আমাদেরকে বিশ্বস্তভাবে তাঁকে সেবা করতে সাহায্য করবেন, ঠিক যেভাবে তিনি তাঁর প্রাচীনকালের দাসদের তাঁর পথে চলতে সাহায্য করেছিলেন।—যিশা. ৩০:২১.

কেন বাপ্তাইজিত হবেন?

৪, ৫. বাপ্তাইজিত হওয়ার কিছু আশীর্বাদ ও উপকার সম্বন্ধে উল্লেখ করুন।

সম্ভবত আপনি ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান নিয়েছেন, আপনার জীবনে নানা পরিবর্তন করেছেন এবং এখন একজন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হিসেবে সেবা করছেন। এইরকম উন্নতি প্রশংসনীয়। কিন্তু, আপনি কি প্রার্থনায় ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন আর এখন বাপ্তাইজিত হওয়ার আশা করছেন? বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে খুব সম্ভবত আপনি এখন জানেন যে, আপনার জীবন যিহোবার প্রশংসা করার ওপর কেন্দ্রীভূত হওয়া উচিত, কেবলমাত্র নিজেকে সন্তুষ্ট করার বা বস্তুগত সম্পদ অর্জন করার ওপর নয়। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪৮:১১-১৩; লূক ১২:১৫.) তাই, বাপ্তাইজিত হওয়ার কিছু আশীর্বাদ ও উপকার কী?

একজন উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান হিসেবে, আপনার জীবনে সর্বোত্তম উদ্দেশ্য থাকবে। আপনি সুখী হবেন কারণ আপনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছেন। (রোমীয় ১২:১, ২) যিহোবার পবিত্র আত্মা আপনার মধ্যে শান্তি ও বিশ্বস্ততা বা বিশ্বাসের মতো ঈশ্বরীয় গুণাবলি উৎপন্ন করবে। (গালা. ৫:২২, ২৩) ঈশ্বর আপনার প্রার্থনার উত্তর দেবেন এবং আপনার জীবনকে তাঁর বাক্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ব্যাপারে আপনার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করবেন। আপনার পরিচর্যা আনন্দদায়ক হবে এবং ঈশ্বরের অনুমোদিত পথে জীবনযাপন করা অনন্তজীবনের বিষয়ে আপনার আশাকে শক্তিশালী করবে। অধিকন্তু, উৎসর্গীকরণ করা ও বাপ্তাইজিত হওয়া দেখাবে যে, আপনি সত্যিই একজন যিহোবার সাক্ষি হতে চান।—যিশা. ৪৩:১০-১২.

৬. আমাদের বাপ্তিস্ম জনসাধারণ্যে কী ঘোষণা করে?

ঈশ্বরের কাছে নিজেদের উৎসর্গ করে এবং বাপ্তাইজিত হয়ে আমরা জনসাধারণ্যে ঘোষণা করি যে, আমরা যিহোবারই। “কারণ আমাদের মধ্যে কেহ আপনার উদ্দেশে জীবিত থাকে না, এবং কেহ আপনার উদ্দেশে মরে না,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “কেননা যদি আমরা জীবিত থাকি, তবে প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW] উদ্দেশে জীবিত থাকি; এবং যদি মরি, তবে প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW] উদ্দেশে মরি। অতএব আমরা জীবিত থাকি বা মরি, আমরা যিহোবারই।” (রোমীয় ১৪:৭, ৮) ঈশ্বর আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে মর্যাদা দান করেছেন। আমরা যখন ঈশ্বরকে ভালোবাসি বলে জীবনের এই পথ অনুধাবন করার স্থির সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমরা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করি। (হিতো. ২৭:১১) আমাদের বাপ্তিস্ম হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীক এবং সেইসঙ্গে জনসাধারণ্যে এটা ঘোষণা করা যে, যিহোবা হলেন আমাদের শাসক। এটা দেখায় যে, সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিচার্য বিষয়ে আমরা তাঁর পক্ষ নিয়েছি। (প্রেরিত ৫:২৯, ৩২) ফল স্বরূপ, যিহোবা আমাদের পক্ষে থাকেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৮:৬.) এ ছাড়া, বাপ্তিস্ম আমাদের জন্য এখন ও ভবিষ্যতে আরও অনেক আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ লাভ করার পথ খুলে দেয়।

এক প্রেমময় ভ্রাতৃসমাজের দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত

৭-৯. (ক) যিশু সেই ব্যক্তিদের কোন আশ্বাস দিয়েছিলেন, যারা তাদের সমস্ত কিছু ত্যাগ করে তাঁকে অনুসরণ করেছিল? (খ) মার্ক ১০:২৯, ৩০ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর প্রতিজ্ঞা কীভাবে পরিপূর্ণ হচ্ছে?

প্রেরিত পিতর যিশুকে বলেছিলেন: “দেখুন, আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদ্গামী হইয়াছি; আমরা তবে কি পাইব?” (মথি ১৯:২৭) পিতর জানতে চেয়েছিলেন যে, তার নিজের ও যিশুর অন্য শিষ্যদের জন্য ভবিষ্যতে কী রয়েছে। রাজ্যের প্রচার কাজে নিজেদের পূর্ণরূপে নিয়োজিত করার জন্য তারা বড়ো বড়ো ত্যাগস্বীকার করেছিল। (মথি ৪:১৮-২২) যিশু তাদের কোন আশ্বাস দিয়েছিলেন?

মার্কের দ্বারা উল্লেখিত সেই একই বিবরণের বর্ণনা অনুসারে, যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর শিষ্যরা এক আধ্যাত্মিক ভ্রাতৃসমাজের অংশ হবে। তিনি বলেছিলেন: “এমন কেহ নাই, যে আমার নিমিত্ত ও সুসমাচারের নিমিত্ত বাটী কি ভ্রাতৃগণ কি ভগিনী কি মাতা কি পিতা কি সন্তানসন্ততি কি ক্ষেত্র ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু এখন ইহকালে তাহার শতগুণ না পাইবে; সে বাটী, ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা, সন্তান ও ক্ষেত্র, তাড়নার সহিত এই সকল পাইবে, এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাইবে।” (মার্ক ১০:২৯, ৩০) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা যেমন, লুদিয়া, আক্বিলা, প্রিষ্কিল্লা ও গায় সেই ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল, যারা তাদের “বাটী” খুলে দিয়েছিল এবং সহবিশ্বাসীদের “ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা” হয়ে উঠেছিল, যেমনটা যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।—প্রেরিত ১৬:১৪, ১৫; ১৮:২-৪; ৩ যোহন ১, ৫-৮.

যিশু যা বলেছিলেন, সেটা আজকে আরও বড়ো আকারে পরিপূর্ণ হচ্ছে। তাঁর অনুসারীরা যে-“ক্ষেত্র” পিছনে ফেলে আসে, সেটা জীবিকানির্বাহের উপায়কে বোঝায়, যা মিশনারি, বেথেল পরিবারের সদস্য, আন্তর্জাতিক দাস ও অন্যেরাসহ আরও অনেকে বিভিন্ন দেশে রাজ্যের কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় ত্যাগ করে। অনেক ভাইবোন তাদের জীবনকে সাদাসিধে করার জন্য তাদের ঘর ত্যাগ করেছে আর তাদের অভিজ্ঞতা শোনা আমাদের আনন্দিত করে ও দেখায় যে, কীভাবে যিহোবা তাদের যত্ন নিয়েছেন এবং তাঁর প্রতি তাদের সেবা কীভাবে তাদেরকে “ধন্য [“সুখী,” NW]” করেছে। (প্রেরিত ২০:৩৫) অধিকন্তু, যিহোবার সমস্ত বাপ্তাইজিত দাস বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের অংশ হিসেবে ‘প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করিবার’ আশীর্বাদ উপভোগ করতে পারে।—মথি ৬:৩৩.

“অন্তরালে” নিরাপদ থাকা

১০, ১১. “পরাৎপরের অন্তরাল” কী আর কীভাবে আমরা সেখানে প্রবেশাধিকার লাভ করতে পারি?

১০ উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্মের ফলে আরেকটা চমৎকার আশীর্বাদ লাভ করা যায় আর তা হল, “পরাৎপরের অন্তরালে” বাস করার বিশেষ সুযোগ। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯১:১.) সেটা হচ্ছে নিরাপত্তার এক রূপক স্থান—আধ্যাত্মিক ক্ষতি থেকে সুরক্ষার এক অবস্থা। এটা হল ‘অন্তরাল’ কারণ এটা সেই লোকেদের কাছে অজানা, যাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব রয়েছে এবং যারা ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে না। আমাদের উৎসর্গীকরণের সঙ্গে সংগতি রেখে জীবনযাপন করে এবং যিহোবার ওপর ক্রমাগত পূর্ণ আস্থা রেখে আমরা মূলত তাঁকে বলছি: “[তুমি] আমার আশ্রয়, আমার দুর্গ, আমার ঈশ্বর, আমি [যাঁহাতে] নির্ভর করিব।” (গীত. ৯১:২) যিহোবা ঈশ্বর আমাদের নিরাপদ বাসস্থান হয়ে ওঠেন। (গীত. ৯১:৯) এর চেয়ে নিরাপদ বাসস্থান আর কী-ই বা হতে পারে?

১১ এ ছাড়া, যিহোবার “অন্তরালে” প্রবেশাধিকার লাভ করা বলতে আরও বোঝায় যে, আমরা তাঁর সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার বিশেষ সুযোগের দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছি। এটা উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্মের মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর, আমরা বাইবেল অধ্যয়ন, আন্তরিক প্রার্থনা ও সম্পূর্ণ বাধ্যতার মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করি। (যাকোব ৪:৮) যিহোবার সঙ্গে যিশুর চেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আর কারো ছিল না, যাঁর সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস কখনো বিচলিত হয়নি। (যোহন ৮:২৯) তাই, আসুন আমরা যেন যিহোবা সম্বন্ধে অথবা আমাদের উৎসর্গীকরণের মানত বা অঙ্গীকার পরিপূর্ণ করতে আমাদেরকে সাহায্য করার বিষয়ে তাঁর আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমতা সম্বন্ধে কখনো সন্দেহ না করি। (উপ. ৫:৪) ঈশ্বর তাঁর লোকেদের জন্য যে-আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো জুগিয়েছেন, সেগুলো হচ্ছে অকাট্য প্রমাণ যে, তিনি সত্যিই আমাদের ভালোবাসেন এবং চান যেন আমরা তাঁকে সেবা করায় সফল হই।

আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশকে মূল্যবান বলে গণ্য করুন

১২, ১৩. (ক) আধ্যাত্মিক পরমদেশ কী? (খ) কীভাবে আমরা নতুন ব্যক্তিদের সাহায্য করতে সমর্থ হতে পারি?

১২ এ ছাড়া, উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম আমাদের জন্য আশীর্বাদপ্রাপ্ত আধ্যাত্মিক পরমদেশে বাস করার পথ খুলে দেয়। এটা হচ্ছে এক অদ্বিতীয় আধ্যাত্মিক পরিবেশ, যেখানে এমন সহবিশ্বাসীরা রয়েছে, যারা যিহোবা ঈশ্বরের ও একে অন্যের সঙ্গে শান্তিতে থাকে। (গীত. ২৯:১১; যিশা. ৫৪:১৩) এই জগতে এমন কিছু নেই, যেটাকে উপযুক্তভাবে আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এটা বিশেষভাবে আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে স্পষ্ট দেখা যায়, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ভাষা ও সাম্প্রদায়িক দলগুলো থেকে আসা আমাদের ভাইবোনেরা শান্তি, একতা ও ভ্রাতৃপ্রেমের এক পরিবেশে একত্রিত হয়।

১৩ আমরা যে-আধ্যাত্মিক পরমদেশ উপভোগ করি, সেটা বর্তমান জগতে বিদ্যমান শোচনীয় অবস্থার একেবারে বিপরীত। (পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪.) রাজ্যের বার্তা ঘোষণা করার দ্বারা অন্যদেরকে আধ্যাত্মিক পরমদেশে প্রবেশ করার আমন্ত্রণ জানানোর বিশেষ সুযোগ আমাদের রয়েছে। এ ছাড়া, সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করাও এক আশীর্বাদ, যারা সম্প্রতি মণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং পরিচর্যায় প্রশিক্ষণ থেকে উপকৃত হবে। প্রাচীনদের নির্দেশনাধীনে আমরা হয়তো নির্দিষ্ট নতুন ব্যক্তিদের সাহায্য করার বিশেষ সুযোগের দ্বারা আশীর্বাদ লাভ করতে পারি, যেমনটা আক্বিল্লা ও প্রিষ্কিল্লা, আপল্লোকে ‘ঈশ্বরের পথ আরও সূক্ষ্মরূপে বুঝাইয়া দিয়াছিলেন।’—প্রেরিত ১৮:২৪-২৬.

যিশুর কাছ থেকে শিক্ষালাভ করে চলুন

১৪, ১৫. যিশুর কাছ থেকে শিক্ষালাভ করে চলার কোন উপযুক্ত কারণগুলো রয়েছে?

১৪ যিশুর কাছ থেকে আমাদের শিক্ষালাভ করে চলার উপযুক্ত কারণগুলো রয়েছে। যিশু তাঁর মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময়, তাঁর পিতার সঙ্গে অগণিত বছর কাজ করে কাটিয়েছিলেন। (হিতো. ৮:২২, ৩০) তিনি জানতেন যে, জীবনের সর্বোত্তম পথ যিহোবাকে সেবা করার ও সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার ওপর কেন্দ্রীভূত। (যোহন ১৮:৩৭) যিশুর কাছে এটা স্পষ্ট ছিল যে, এটা ছাড়া জীবনের অন্য যেকোনো পথ স্বার্থপর এবং অদূরদর্শী হবে। তিনি জানতেন যে, তিনি চরমভাবে পরীক্ষিত হবেন ও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। (মথি ২০:১৮, ১৯; ইব্রীয় ৪:১৫) আমাদের উদাহরণ হিসেবে, তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, কীভাবে নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে হয়।

১৫ যিশু বাপ্তাইজিত হওয়ার অল্প কিছুসময় পরই শয়তান তাঁকে জীবনের সর্বোত্তম পথ পরিত্যাগ করতে প্রলুব্ধ করেছিল—কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। (মথি ৪:১-১১) এটা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, শয়তান যা-ই করুক না কেন, আমরা আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারি। শয়তান সম্ভবত সেই ব্যক্তিদের ওপর তার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছে, যারা বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিষয় চিন্তা করছে ও সেইসঙ্গে যারা নতুন বাপ্তিস্ম নিয়েছে। (১ পিতর ৫:৮) আমাদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো আমাদের বিরোধিতা করতে পারে কারণ যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে তাদের ভুল তথ্য জানানো হয়েছে ও তারা মনে করে যে, তারা আমাদের রক্ষা করছে। তা সত্ত্বেও, এইরকম পরীক্ষাগুলো আমাদেরকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে “ভয় [‘শ্রদ্ধা,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]” ও কৌশলতার মতো উত্তম খ্রিস্টীয় গুণাবলি প্রদর্শন করার সুযোগ প্রদান করে। (১ পিতর ৩:১৫) তাই, এই অভিজ্ঞতাগুলো সেই ব্যক্তিদের ওপর এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যারা আমাদের কথা শোনে।—১ তীম. ৪:১৬.

জীবনের সর্বোত্তম পথে আসক্ত থাকুন!

১৬, ১৭. (ক) দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০ পদে জীবনের কোন তিনটে অপরিহার্য চাহিদা সম্বন্ধে পাওয়া যায়? (খ) মোশি যা লিখেছিলেন, সেটাকে যিশু, যোহন ও পৌল কীভাবে সমর্থন করেছিল?

১৬ যিশু পৃথিবীতে আসার প্রায় ১,৫০০ বছর আগে মোশি সেই সময়ে জীবনের সর্বোত্তম পথ বেছে নেওয়ার জন্য ইস্রায়েলীয়দের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি অদ্য তোমাদের বিরুদ্ধে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি যে, আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্ব্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর, তাঁহার রবে অবধান কর, ও তাঁহাতে আসক্ত হও।” (দ্বিতীয়. ৩০:১৯, ২০) ইস্রায়েল ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়েছিল কিন্তু মোশির দ্বারা উল্লেখিত জীবনের তিনটে অপরিহার্য চাহিদা পরিবর্তিত হয়নি। সেগুলো যিশু এবং অন্যেরা পুনর্ব্যক্ত করেছিল।

১৭ প্রথমত, ‘আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিতে হইবে।’ আমরা ঈশ্বরের ধার্মিক পথের সঙ্গে মিল রেখে চলার দ্বারা দেখাই যে, আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি। (মথি ২২:৩৭) দ্বিতীয়ত, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও তাঁর আজ্ঞার বাধ্য হওয়ার দ্বারা ‘আমাদের সদাপ্রভুর রবে অবধান করিতে হইবে।’ (১ যোহন ৫:৩) এর জন্য আমাদের খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে হবে, যেখানে বাইবেল আলোচনা করা হয়। (ইব্রীয় ১০:২৩-২৫) তৃতীয়ত, ‘আমাদের সদাপ্রভুতে আসক্ত হইতে হইবে।’ আমরা যা-কিছুর মুখোমুখি হই না কেন, আসুন আমরা সবসময় ঈশ্বরে বিশ্বাস অনুশীলন করি ও তাঁর পুত্রকে অনুসরণ করি।—২ করি. ৪:১৬-১৮.

১৮. (ক) ১৯১৪ সালে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা কীভাবে সত্য সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিল? (খ) বর্তমানে সত্যের দীপ্তি সম্বন্ধে আমাদের কেমন বোধ করা উচিত?

১৮ বাইবেলের সত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন করা কী এক আশীর্বাদ! ১৯১৪ সালে, প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় এই উল্লেখযোগ্য বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল: “আমরা কি আশীর্বাদপ্রাপ্ত, সুখী লোক নই? আমাদের ঈশ্বর কি বিশ্বস্ত নন? কেউ যদি এর চেয়েও ভালো কিছু জেনে থাকেন, তাহলে তাকে সেটা গ্রহণ করতে দিন। আপনাদের মধ্যে কেউ যদি কখনো এর চেয়ে ভালো কিছু পেয়ে থাকেন, তাহলে আমরা আশা করব যে, আপনারা আমাদের তা জানাবেন। ঈশ্বরের বাক্যে আমরা যা পেয়েছি, এর চেয়ে ভালো আর কোনো কিছুই আমরা জানি না। . . . সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে স্পষ্ট জ্ঞান আমাদের হৃদয়ে ও জীবনে যে-শান্তি, আনন্দ এবং আশীর্বাদ এনে দিয়েছে, তা বর্ণনা করা অসম্ভব। ঈশ্বরের প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার, শক্তি ও প্রেম সম্বন্ধে জ্ঞান পূর্ণরূপে আমাদের মেধাগত ও আবেগগত চাহিদাগুলোকে পূরণ করে। আমরা আর বেশি কিছুর চেষ্টা করছি না। আমরা এই চমৎকার জ্ঞান আরও স্পষ্টভাবে লাভ করার চেয়ে আর বেশি কিছুই চাই না।” (প্রহরীদুর্গ, ডিসেম্বর ১৫, ১৯১৪, পৃষ্ঠা ৩৭৭-৩৭৮) আধ্যাত্মিক দীপ্তি ও সত্যের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতা পরিবর্তিত হয়নি। বস্তুতপক্ষে, আমাদের এখন আনন্দ করার এমনকী আরও বড়ো কারণ রয়েছে, যেহেতু আমরা “সদাপ্রভুর দীপ্তিতে গমন করি।”—যিশা. ২:৫; গীত. ৪৩:৩; হিতো. ৪:১৮.

১৯. যারা বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য, তাদের কেন অবিলম্বে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত?

১৯ যদি আপনি “সদাপ্রভুর দীপ্তিতে গমন” করতে চান কিন্তু এখনও উৎসর্গীকৃত, বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান না হয়ে থাকেন, তাহলে দেরি করবেন না। বাপ্তিস্মের জন্য বাইবেলের চাহিদাগুলোকে পূরণ করতে যা-কিছু করা প্রয়োজন, তা করুন কারণ বাপ্তিস্ম হচ্ছে ঈশ্বর ও খ্রিস্ট আমাদের জন্য যা করেছেন, সেটার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর এক অদ্বিতীয় উপায়। যিহোবাকে আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ—আপনার জীবন— প্রদান করুন। তাঁর পুত্রকে অনুসরণ করার দ্বারা আপনি যে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চান, তা দেখান। (২ করি. ৫:১৪, ১৫) কোনো সন্দেহ নেই যে, সেটাই হচ্ছে জীবনের সর্বোত্তম পথ!

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• আমাদের বাপ্তিস্ম কী চিত্রিত করে?

• ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম কোন আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসে?

• যিশুর কাছ থেকে শিক্ষালাভ করা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

• কী আমাদেরকে জীবনের সর্বোত্তম পথে আসক্ত থাকতে সাহায্য করবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার বাপ্তিস্ম দেখায় যে, আপনি জীবনের সর্বোত্তম পথ বেছে নিয়েছেন

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি “অন্তরালে” নিরাপদ আছেন?