সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

কোন পরিস্থিতিগুলোতে পুনরায় বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিষয়টা বিবেচনা করা যেতে পারে?

নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে, একজন বাপ্তাইজিত ব্যক্তি হয়তো তার বাপ্তিস্মের বৈধতা নিয়ে চিন্তা করতে এবং পুনরায় বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিষয়টা বিবেচনা করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বাপ্তিস্মের সময় একজন ব্যক্তি হয়তো গোপনে এমন পরিস্থিতির মধ্যে জীবনযাপন করছিলেন বা এমন কোনো অভ্যাসে রত ছিলেন, যেটার জন্য তাকে সমাজচ্যুত করতে হতো, যদি তিনি সেই সময়ে ইতিমধ্যেই বৈধভাবে বাপ্তাইজিত হয়ে থাকতেন। এইরকম পরিস্থিতিগুলোতে তিনি কি ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারেন? এইরকম একজন ব্যক্তি একমাত্র তখনই যিহোবার কাছে বৈধ উৎসর্গীকরণ করার মতো অবস্থায় থাকতে পারেন, যদি তিনি সেই অশাস্ত্রীয় আচরণ ত্যাগ করে থাকেন। তাই, এই ধরনের গুরুতর প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, একজন ব্যক্তি বাপ্তাইজিত হয়ে থাকলে, উপযুক্তভাবেই তিনি হয়তো পুনরায় বাপ্তিস্ম নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা বিবেচনা করতে পারেন।

কিন্তু, এইরকম একজন ব্যক্তির বিষয়ে কী বলা যায়, যিনি যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, সেই সময় পাপ করে চলছিলেন না, কিন্তু বাপ্তিস্মের পর এমন কোনো অন্যায় করেছেন, যেটার জন্য বিচার সংক্রান্ত কমিটি গঠন করার প্রয়োজন হয়েছিল? ধরুন, তিনি তখন দাবি করলেন যে, তিনি যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, সেই সময়ে তিনি যা করছিলেন, তা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেননি এবং সেইসঙ্গে বললেন যে, তার বাপ্তিস্ম প্রকৃতপক্ষে বৈধ ছিল না। কোনো অন্যায়কারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময়, প্রাচীনদের তার বাপ্তিস্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয় এবং তার উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্মকে তিনি বৈধ বলে মনে করেন কি না, তা জিজ্ঞেস করা উচিত নয়। কারণ তিনি বাপ্তিস্মের তাৎপর্য সম্বন্ধে একটা শাস্ত্রভিত্তিক বক্তৃতা শুনেছিলেন। তিনি উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম বিষয়ক প্রশ্নগুলোর উত্তরে হ্যাঁ বলেছিলেন। এরপর তিনি স্বেচ্ছায় পোশাক পালটে জলে নিমজ্জিত হয়েছিলেন। তাই, এইরকম মনে করা যুক্তিসংগত যে, তিনি যা করছিলেন সেটার গুরুত্ব তিনি পুরোপুরি বুঝতে পেরেছেন। এইজন্য, প্রাচীনরা তার সঙ্গে একজন বাপ্তাইজিত ব্যক্তির মতোই ব্যবহার করবে।

সেই ব্যক্তি যদি তার বাপ্তিস্মের বৈধতার বিষয়টা উত্থাপন করেন, তাহলে প্রাচীনরা হয়তো ১৯৬০ সালের ১ মার্চ প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ১৫৯ ও ১৬০ পৃষ্ঠা এবং ১৯৬৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ১২৩ থেকে ১২৬ পৃষ্ঠার প্রতি তার মনোযোগ আকর্ষণ করাতে পারেন, যেখানে পুনরায় বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। পরিশেষে বলা যায় যে, কিছু পরিস্থিতিতে (যেমন, একজন ব্যক্তি যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, সেই সময় বাইবেল সম্বন্ধে যথেষ্ট বোধগম্যতার অভাব ছিল এমন পরিস্থিতিতে) পুনরায় বাপ্তিস্ম নেওয়া হল এক ব্যক্তিগত বিষয়।

অন্যদের সঙ্গে একই বাড়িতে বা ঘরে বাস করার বিষয়ে, খ্রিস্টানদের কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত?

প্রত্যেকের বাসস্থানের প্রয়োজন। কিন্তু, আজকে অনেক লোকের তাদের নিজস্ব ঘর নেই। একজন ব্যক্তির আর্থিক অবস্থা, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো অথবা আরও অন্যান্য বিষয় হয়তো বেশ কিছু আত্মীয়স্বজনসহ বড়ো পরিবারগুলোকে একসঙ্গে বাস করাকে প্রয়োজনীয় করে তুলতে পারে। পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গায়, আত্মীয়স্বজনরা হয়তো একটা ঘরেই গাদাগাদি করে বাস করে, যেখানে গোপনীয়তা বজায় রাখার কোনো উপায়ই থাকে না।

পৃথিবীব্যাপী মণ্ডলীর সকলের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান কীরকম হবে, সেই সম্বন্ধে নিয়ম-কানুনের এক দীর্ঘ তালিকা সরবরাহ করা যিহোবার সংগঠনের দায়িত্ব নয়। খ্রিস্টানরা যেভাবে বাস করে, সেই ব্যবস্থাদি ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য কি না, তা নির্ধারণ করার জন্য খ্রিস্টানদের শাস্ত্রীয় নীতিগুলোর দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এইরকম কয়েকটা নীতি কী?

একটা প্রধান বিবেচ্য বিষয় হল, অন্য লোকেদের সঙ্গে বাস করা আমাদের এবং আমাদের আধ্যাত্মিকতার ওপর কীরকম প্রভাব ফেলবে, সেটা চিন্তা করা। এরা কী ধরনের লোক? তারা কি যিহোবার উপাসক? তারা কি বাইবেলের মানগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করে? “ভ্রান্ত হইও না,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।”—১ করি. ১৫:৩৩.

শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে যে, যিহোবা ব্যভিচার এবং বেশ্যাগমন বা পারদারিকতাকে নিন্দা করেন। (ইব্রীয় ১৩:৪) তাই, শোয়ার এইরকম যেকোনো ব্যবস্থা, যা অবিবাহিত বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদেরকে স্বামী-স্ত্রীর মতো একসঙ্গে থাকার সুযোগ করে দিতে পারে, তা স্পষ্টতই ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। একজন খ্রিস্টান এমন কোনো স্থানে থাকতে চাইবেন না, যেখানে অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়।

অধিকন্তু, যারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে চায়, বাইবেল তাদের সকলকে “ব্যভিচার হইতে পলায়ন” করতে জোরালো পরামর্শ দেয়। (১ করি. ৬:১৮) তাই, খ্রিস্টানদের জন্য এমন যেকোনো থাকার ব্যবস্থাকে এড়িয়ে চলা বিজ্ঞতার কাজ হবে, যেখানে তারা অনৈতিক আচরণে জড়িত হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এমন একটা পরিস্থিতির কথা ধরুন, যেখানে কয়েকজন খ্রিস্টান একই ঘরে ঘুমায়। এই ধরনের এক ব্যবস্থা কি আপোশ করার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে? কী হবে, যদি স্বামী-স্ত্রী নয় এমন দুজন ব্যক্তি হঠাৎ দেখতে পায় যে, সেই ঘরে শুধু তারা দুজনই রয়েছে কারণ অন্য যারা সাধারণত সেখানে থাকে, তারা সাময়িকভাবে অনুপস্থিত? একইভাবে, পরস্পরের প্রতি রোমান্টিক আগ্রহ রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের একই ঘরে বাস করা নৈতিকতার ক্ষেত্রে বিপদজনক হবে। এই ধরনের পরিস্থিতিগুলো এড়িয়ে চলা বিজ্ঞতার কাজ।

অনুরূপভাবে, পরস্পরের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে, এমন ব্যক্তিদের একই বাড়িতে ক্রমাগত থাকা অনুপযুক্ত হবে। একে অপরের সঙ্গে একসময় যে তাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল, এই বিষয়টা সহজেই তাদেরকে অনৈতিক আচরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে।—হিতো. ২২:৩.

আরেকটা যে-গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে তা হল, একজনের পছন্দগুলোকে সমাজ কোন দৃষ্টিতে দেখে। একজন খ্রিস্টানের কাছে বাসস্থানের যে-ব্যবস্থাকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় কিন্তু সমাজে তা সমালোচনামূলক কথাবার্তার সৃষ্টি করে, তখন সেটা ভেবে দেখার মতো এক বিষয়। আমরা কখনোই আমাদের আচরণের দ্বারা যিহোবার নামের দুর্নাম নিয়ে আসতে চাইব না। পৌল এটাকে এভাবে বর্ণনা করেন: “কি যিহূদী, কি গ্রীক, কি ঈশ্বরের মণ্ডলী, কাহারও বিঘ্ন জন্মাইও না; যেমন আমিও সকল বিষয়ে সকলের প্রীতিকর হই, আপনার হিত চেষ্টা করি না, কিন্তু অনেকের হিত চেষ্টা করি, যেন তাহারা পরিত্রাণ পায়।”—১ করি. ১০:৩২, ৩৩.

যারা যিহোবার ধার্মিক মানগুলোকে সমর্থন করতে চায়, তাদের জন্য উপযুক্ত বাড়ি বা ঘর এবং ব্যবস্থাদি পাওয়া হয়তো প্রকৃতই এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। কিন্তু, খ্রিস্টানদের অবশ্যই ‘প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা করিয়া’ চলতে হবে। তাদেরকে নিশ্চিত হতে হবে যে, ঘরের মধ্যে অসংগত কিছু ঘটছে না। (ইফি. ৫:৫, ১০) এর জন্য খ্রিস্টানদের ঐশিক নির্দেশনা চেয়ে প্রার্থনা করা প্রয়োজন এবং একে অপরের শারীরিক ও নৈতিক মঙ্গল ও সেইসঙ্গে যিহোবার সুনাম রক্ষা করার জন্য তাদের যথাসাধ্য করা প্রয়োজন।