সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পবয়সিরা—যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তোমাদের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করো

অল্পবয়সিরা—যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তোমাদের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করো

অল্পবয়সিরা—যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তোমাদের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করো

“তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর।”—উপ. ১২:১.

১. ইস্রায়েলে অল্পবয়সিদের প্রতি কোন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল?

 প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে, যিহোবার ভাববাদী মোশি ইস্রায়েলের যাজক ও প্রাচীনবর্গকে আদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি লোকদিগকে, পুরুষ, স্ত্রী, বালক-বালিকা . . . সকলকে একত্র করিবে, যেন তাহারা শুনিয়া শিক্ষা পায়, ও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করে, এবং এই ব্যবস্থার সমস্ত কথা যত্নপূর্ব্বক পালন করে।” (দ্বিতীয়. ৩১:১২) লক্ষ করো যে, উপাসনার জন্য সমাবেশগুলোতে যোগদান করতে কাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল: পুরুষ, স্ত্রী ও বালক-বালিকাদের। হ্যাঁ, এমনকী অল্পবয়সিরাও সেই ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল, যাদেরকে যিহোবার নির্দেশনা শুনতে, শিখতে ও মেনে চলতে বলা হয়েছিল।

২. কীভাবে যিহোবা প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে অল্পবয়সিদের প্রতি তাঁর চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন?

প্রথম শতাব্দীতে, ঈশ্বরভয়শীল অল্পবয়সিদের প্রতি যিহোবা ক্রমাগত তাঁর চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি প্রেরিত পৌলকে মণ্ডলীগুলোর উদ্দেশে পাঠানো তার চিঠিগুলোর কয়েকটাতে নির্দিষ্টভাবে অল্পবয়সিদের জন্য নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। (পড়ুন, ইফিষীয় ৬:১; কলসীয় ৩:২০.) যে-অল্পবয়সি খ্রিস্টানরা এই পরামর্শ কাজে লাগিয়েছিল, তারা তাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার প্রতি উপলব্ধি বৃদ্ধি করেছিল আর তাঁর আশীর্বাদ লাভ করেছিল।

৩. কীভাবে আজকেও অল্পবয়সিরা ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে তাদের আকাঙ্ক্ষা প্রদর্শন করে?

আজকেও কি অল্পবয়সিদের যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য একত্রিত হতে আমন্ত্রণ জানানো হয়? হ্যাঁ, হয়! তাই, ঈশ্বরের সমস্ত লোকের জন্য এটা দেখা আনন্দের এক উৎস যে, পৃথিবীব্যাপী ঈশ্বরের অল্পবয়সি অনেক দাস পৌলের এই পরামর্শে মনোযোগ দেয়: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।” (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এ ছাড়া, অনেক ছেলে-মেয়ে তাদের বাবা-মার সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচারে অংশ নেয়। (মথি ২৪:১৪) আর যিহোবার প্রতি তাদের আন্তরিক ভালোবাসার অভিব্যক্তি হিসেবে, হাজার হাজার অল্পবয়সি প্রতি বছর বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে এবং সেই আশীর্বাদগুলো উপভোগ করে, যেগুলো খ্রিস্টের একজন শিষ্য হওয়ার ফলে আসে।—মথি ১৬:২৪; মার্ক ১০:২৯, ৩০.

আমন্ত্রণ গ্রহণ করো—এখনই

৪. কখন অল্পবয়সিরা ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারে?

উপদেশক ১২:১ পদ বলে: “তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর।” তোমরা যারা অল্পবয়সি, যিহোবাকে উপাসনা ও সেবা করার বিষয়ে সেই উষ্ণ আমন্ত্রণ গ্রহণ করার জন্য তোমাদের বয়স কত হতে হবে? শাস্ত্রে কোনো নির্দিষ্ট বয়সের বিষয় উল্লেখ করা নেই। তাই, এইরকম ভেবে পিছিয়ে যেও না যে, যিহোবার কথা শোনার ও তাঁকে সেবা করার জন্য তোমরা এখনও খুব ছোটো। তোমাদের বয়স যা-ই হোক না কেন, তোমাদের অবিলম্বে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।

৫. কীভাবে বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে-মেয়েদের আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

তোমাদের মধ্যে অনেককেই আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য বাবা অথবা মা কিংবা বাবা-মা দুজনেই সাহায্য করেছে। এই দিক দিয়ে, তোমরা বাইবেলের সময়ের তীমথিয়ের মতো। তিনি যখন একেবারে শিশু ছিলেন, তখন থেকেই তার মা উনীকী ও দিদিমা লোয়ী পবিত্র শাস্ত্রকলাপ সম্বন্ধে তাকে শিক্ষা দিয়েছিল। (২ তীম. ৩:১৪, ১৫) সম্ভবত, একইভাবে তোমাদের বাবা-মা তোমাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে, তোমাদের সঙ্গে প্রার্থনা করে, মণ্ডলীর সভাগুলোতে এবং ঈশ্বরের লোকেদের বড়ো বড়ো সম্মেলনে তোমাদেরকে নিয়ে গিয়ে এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় তোমাদের সঙ্গে অংশ নিয়ে তোমাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আসলে, ঈশ্বরের পথ সম্বন্ধে তোমাদের শিক্ষা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক দায়িত্ব, যা তোমাদের বাবা-মা স্বয়ং যিহোবার কাছ থেকে পেয়েছে। তোমরা কি তোমাদের প্রতি দেখানো তাদের প্রেম ও চিন্তাকে উপলব্ধি করো?—হিতো. ২৩:২২.

৬. (ক) গীতসংহিতা ১১০:৩ পদ অনুসারে, কোন ধরনের উপাসনা যিহোবাকে খুশি করে? (খ) এখন আমরা কী বিবেচনা করব?

তা সত্ত্বেও, তোমরা অল্পবয়সিরা যতই বড়ো হতে থাকো, যিহোবা চান যেন তীমথিয় যেমন করেছিলেন, তেমনই “তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।” (রোমীয় ১২:২) তোমরা যদি তা করো, তাহলে তোমরা তোমাদের বাবা-মা চায় বলে নয় বরং তোমরা নিজেরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চাও বলে মণ্ডলীর কাজকর্মে অংশ নেবে। তোমরা যদি স্বেচ্ছায় যিহোবাকে সেবা করো, তাহলে এটা তাঁকে খুশি করবে। (গীত. ১১০:৩) তাই, কীভাবে তোমরা দেখাতে পারো যে, যিহোবার কথা শোনার ও তাঁর নির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে তোমরা তোমাদের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করতে চাও? আমরা সেই তিনটে গুরুত্বপূর্ণ উপায় বিবেচনা করব, যেগুলোর মাধ্যমে তোমরা তা করতে পারো। সেগুলো হচ্ছে অধ্যয়ন, প্রার্থনা ও আচরণ। এসো আমরা একটা একটা করে এগুলো পরীক্ষা করে দেখি।

যিহোবাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে জানো

৭. কীভাবে যিশু শাস্ত্রের একজন ছাত্র হিসেবে, এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন এবং কী তাঁকে তা করতে সাহায্য করেছিল?

প্রথম যে-উপায়ে তোমরা দেখাতে পারো যে, তোমরা যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তোমাদের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করতে চাও, তা হল প্রতিদিন বাইবেল পড়ার মাধ্যমে। নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য পড়ার মাধ্যমে তোমরা আত্মাতে দীনহীন অবস্থা বা তোমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করতে এবং বাইবেলের অতি মূল্যবান জ্ঞান অর্জন করতে পারো। (মথি ৫:৩) এই ক্ষেত্রে যিশু উদাহরণ স্থাপন করেছেন। একবার, তাঁর বয়স যখন ১২ বছর, তখন তাঁর বাবা-মা তাঁকে মন্দিরে খুঁজে পেয়েছিল, যেখানে “তিনি গুরুদিগের মধ্যে বসিয়া তাঁহাদের কথা শুনিতেছিলেন ও তাঁহাদিগকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন।” (লূক ২:৪৪-৪৬) ছেলেবেলাতেই, যিশু ইতিমধ্যে শাস্ত্রের প্রতি আকুল আকাঙ্ক্ষা ও শাস্ত্র সম্বন্ধে এক বোধগম্যতা গড়ে তুলেছিলেন। কী তাঁকে তা করতে সাহায্য করেছিল? নিঃসন্দেহে, এই ক্ষেত্রে তাঁর মা মরিয়ম ও তাঁর পালক পিতা যোষেফ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তারা ঈশ্বরের দাস ছিল, যারা যিশুকে একেবারে শিশুকাল থেকেই ঐশিক নির্দেশনা প্রদান করেছিল।—মথি ১:১৮-২০; লূক ২:৪১, ৫১.

৮. (ক) কখন বাবা-মাদের তাদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি ভালোবাসা গেঁথে দেওয়া শুরু করা উচিত? (খ) একটা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন, যা ছেলে-মেয়েদের একেবারে শিশুকাল থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

একইভাবে, আজকেও ঈশ্বরভয়শীল বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে-মেয়েদের হৃদয়ে একেবারে শিশুকাল থেকেই বাইবেলের সত্যের প্রতি এক আকুল আকাঙ্ক্ষা যত্নপূর্বক শিক্ষা বা গেঁথে দেওয়ার মূল্যকে উপলব্ধি করে থাকে। (দ্বিতীয়. ৬:৬-৯) রুবি নামে একজন খ্রিস্টান বোন, তার প্রথম ছেলে জোসেফের জন্মের পর পর তা-ই করেছিলেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রতিদিন আমার বাইবেলের গল্পের বই পড়তেন। জোসেফ যতই বড়ো হচ্ছিল, তার মা তাকে বিভিন্ন শাস্ত্রপদ মুখস্থ করতে সাহায্য করেছিলেন। জোসেফ কি এইরকম প্রশিক্ষণ থেকে উপকৃত হয়েছিল? কথা বলতে শেখার সঙ্গেসঙ্গে, সে বাইবেলের অনেক গল্প নিজের ভাষায় বর্ণনা করতে পারত। আর যখন তার বয়স পাঁচ বছর, তখন সে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ তার প্রথম বক্তৃতা দিয়েছিল।

৯. কেন বাইবেল পড়া ও যা পড়েছ, তা নিয়ে ধ্যান করা গুরুত্বপূর্ণ?

তোমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতিকে বৃদ্ধি করার জন্য তোমরা যারা অল্পবয়সি রয়েছো, প্রতিদিন বাইবেল পড়াকে তোমাদের এমন এক অভ্যাসে পরিণত করা উচিত, যা তোমরা কৈশোরের বছরগুলোতে ও প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও চালিয়ে যাবে। (গীত. ৭১:১৭) কেন বাইবেল পড়া তোমাদের উন্নতি করতে সাহায্য করবে? যিশু তাঁর পিতার কাছে এক প্রার্থনায় কী বলেছিলেন, তা লক্ষ করো: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, . . . জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) বস্তুতপক্ষে, যিহোবা সম্বন্ধে তোমরা যত বেশি জানবে বা জ্ঞান নেবে, তত বেশি স্পষ্টভাবে তোমরা তাঁকে একজন বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে দেখতে পাবে ও তাঁর প্রতি তোমাদের ভালোবাসাকে আরও গভীর করতে পারবে। (ইব্রীয় ১১:২৭) তাই, প্রতিবার যখনই তোমরা বাইবেলের কোনো অংশ পড়ো, তখন সেই সুযোগকে যিহোবা সম্বন্ধে আরও বেশি জানার জন্য কাজে লাগাও। নিজেকে জিজ্ঞেস করো: ‘যিহোবা যে একজন ব্যক্তি, সেই সম্বন্ধে এই বিবরণ আমাকে কী শিক্ষা দেয়? কীভাবে বাইবেলের এই বিবরণ দেখায় যে, আমার প্রতি ঈশ্বরের প্রেম ও চিন্তা রয়েছে?’ এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় করে নেওয়া তোমাকে এটা জানতে সাহায্য করবে যে, যিহোবা তোমার সম্বন্ধে কেমন চিন্তা করেন ও অনুভব করেন আর তিনি তোমার কাছ থেকে কী চান। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২:১-৫.) অল্পবয়সি তীমথিয়ের মতো, শাস্ত্র থেকে তোমরা যা যা শিখবে, সেগুলোর বিষয়ে “প্রমাণ জ্ঞাত” হবে আর তাই স্বেচ্ছায় যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য পরিচালিত হবে।—২ তীম. ৩:১৪.

প্রার্থনা যেভাবে যিহোবার প্রতি তোমাদের ভালোবাসাকে আরও গভীর করে

১০, ১১. কীভাবে প্রার্থনা ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে তোমাদের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করে?

১০ দ্বিতীয় যে-উপায়ে তোমরা যিহোবাকে সর্বান্তঃকরণে সেবা করার বিষয়ে তোমার আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করতে পারো, তা হল তোমাদের প্রার্থনার মাধ্যমে। গীতসংহিতা ৬৫:২ পদে আমরা পড়ি: “হে প্রার্থনা-শ্রবণকারী, তোমারই কাছে মর্ত্ত্যমাত্র আসিবে।” ইস্রায়েল যে-সময়ে ঈশ্বরের চুক্তিবদ্ধ লোক ছিল, এমনকী সেই সময়েও যে-বিদেশিরা যিহোবার মন্দিরে আসত, তারা প্রার্থনায় তাঁর নিকটবর্তী হতে পারত। (১ রাজা. ৮:৪১, ৪২) ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না। যারা তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করে, তাদের এই আশ্বাস রয়েছে যে, তিনি তাদের কথা শুনবেন। (হিতো. ১৫:৮) নিশ্চিতভাবেই, ‘মর্ত্ত্যমাত্রের’ মধ্যে তোমরা অল্পবয়সিরাও রয়েছ।

১১ তোমরা জানো যে, যেকোনো প্রকৃত বন্ধুত্বের ভিত্তি হচ্ছে উত্তম ভাববিনিময়। সম্ভবত, তোমরা তোমাদের চিন্তাভাবনা, উদ্‌বেগ ও অনুভূতি সম্বন্ধে তোমাদের কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করো। একইভাবে, আন্তরিক প্রার্থনা করার দ্বারা তোমরা তোমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে ভাববিনিময় করো। (ফিলি. ৪:৬, ৭) যিহোবার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলো, যেন একজন প্রেমময় বাবা অথবা মা কিংবা একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে তোমরা তোমাদের হৃদয় উজাড় করে দিচ্ছ। বস্তুতপক্ষে, তোমরা কীভাবে প্রার্থনা করো ও যিহোবা সম্বন্ধে কেমন অনুভব করো, সেই বিষয়ের মধ্যে এক অটুট সংযোগ রয়েছে। তোমরা দেখতে পাবে যে, যিহোবার সঙ্গে তোমাদের বন্ধুত্ব যত দৃঢ় হয়ে উঠবে, তোমাদের প্রার্থনাও তত অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে।

১২. (ক) কেন অর্থপূর্ণ প্রার্থনার সঙ্গে শুধুমাত্র কথার চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত? (খ) কী তোমাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে যে, যিহোবা তোমাদের নিকটবর্তী?

১২ কিন্তু মনে রাখবে যে, অর্থপূর্ণ প্রার্থনার সঙ্গে শুধুমাত্র কথার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। এর সঙ্গে তোমাদের অন্তরের অনুভূতি জড়িত। তোমরা প্রার্থনা করার সময়, তোমাদের আন্তরিক ভালোবাসা ও গভীর সম্মান প্রকাশ করো এবং যিহোবার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখো। যিহোবা কীভাবে তোমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন, তোমরা যখন তা বুঝতে পারবে, তখন তোমরা ব্যক্তিগতভাবে আগে যা কখনো করোনি, তার চেয়ে আরও বেশি উপলব্ধি করতে পারবে যে, “সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে।” (গীত. ১৪৫:১৮) হ্যাঁ, যিহোবা তোমাদের নিকটবর্তী হবেন, দিয়াবলের প্রতিরোধ করতে এবং জীবনে সঠিক বিষয়গুলো বাছাই করতে তোমাদের শক্তিশালী করবেন।—পড়ুন, যাকোব ৪:৭, ৮.

১৩. (ক) কীভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব একজন বোনকে সাহায্য করেছিল? (খ) কীভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব তোমাদের সঙ্গীসাথিদের চাপকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে?

১৩ শেরি নামে একজন বোন কীভাবে যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে শক্তি লাভ করেছিলেন, তা বিবেচনা করো। হাইস্কুলে পড়ার সময় তিনি পড়াশোনায় ও খেলাধুলায় খুব ভালো ছিলেন বলে বিভিন্ন পদক পেয়েছিলেন। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর তাকে স্কলারশিপ প্রদান করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যা তাকে উচ্চশিক্ষা অনুধাবন করতে সক্ষম করবে। “সেই প্রস্তাবটা বেশ লোভনীয় ছিল,” শেরি বলেন, “আর কোচরা ও সহপাঠীরা সেটা গ্রহণ করার জন্য আমাকে অনেক চাপ দিয়েছিল।” কিন্তু, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার জন্য তাকে পড়াশোনার ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নেওয়ার পিছনে তার অধিকাংশ সময় দিতে হবে আর এর ফলে যিহোবাকে সেবা করার জন্য তার হাতে সামান্য সময় থাকবে। শেরি কী করেছিলেন? তিনি বলেন, “যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার পর, আমি সেই স্কলারশিপ গ্রহণ করিনি আর একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিলাম।” তখন থেকে, পাঁচ বছর ধরে তিনি অগ্রগামীর কাজ করে যাচ্ছেন। “এইজন্য আমার কোনো আপশোস নেই,” তিনি বলেন। “আমার সিদ্ধান্তে যিহোবা খুশি হয়েছেন, তা জানা আমাকে আনন্দিত করে। সত্যিই, ঈশ্বরের রাজ্যকে যদি তোমরা প্রথম স্থানে রাখো, তাহলে অন্য সব দ্রব্যও তিনি তোমাদের দেবেন।”—মথি ৬:৩৩.

উত্তম আচরণ প্রকাশ করে যে তোমাদের “অন্তঃকরণ বিমল”

১৪. কেন তোমাদের উত্তম আচরণ যিহোবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ?

১৪ তৃতীয় যে-উপায়ে তোমরা দেখাতে পারো যে, তোমরা স্বেচ্ছায় যিহোবাকে সেবা করছ, তা হল তোমার আচরণের মাধ্যমে। যিহোবা সেই অল্পবয়সিদের আশীর্বাদ করেন, যারা নৈতিকভাবে বিমল বা শুচি থাকে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ২৪:৩-৫.) অল্পবয়সি শমূয়েল মহাযাজক এলির পুত্রদের অনৈতিক আচরণ অনুকরণ করা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। শমূয়েলের উত্তম আচরণ অলক্ষিত ছিল না। বাইবেলের বিবরণ বলে: “কিন্তু বালক শমূয়েল উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাইয়া সদাপ্রভুর কাছে ও মনুষ্যদের কাছে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইতেন।”—১ শমূ. ২:২৬.

১৫. তোমাদের উত্তম আচরণ বজায় রাখার পিছনে কয়েকটা কারণ কী?

১৫ আমরা এমন লোকেদের দ্বারা পূর্ণ এক জগতে বাস করছি, যারা আত্মপ্রিয়, অভিমানী, পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, প্রচণ্ড, গর্বান্ধ, ঈশ্বরপ্রিয় নয় বরং বিলাসপ্রিয়—এগুলো হচ্ছে মাত্র কয়েকটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যেগুলো পৌল তালিকাবদ্ধ করেছিলেন। (২ তীম. ৩:১-৫) তাই, এই দুষ্ট পরিবেশের দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়ায় উদাহরণযোগ্য আচরণ বজায় রাখা তোমাদের জন্য খুবই কঠিন হতে পারে। কিন্তু, প্রতিবার তোমরা যখন যা সঠিক তা-ই করো এবং খারাপ আচরণকে পরিহার করো, তখন তোমরা প্রমাণ করো যে, সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিচার্য বিষয়ে তোমরা যিহোবার পক্ষে রয়েছ। (ইয়োব ২:৩, ৪) এ ছাড়া, তোমাদের এটা জানারও সেই পরিতৃপ্তি রয়েছে যে, তোমরা যিহোবার এই উষ্ণ আবেদনে সাড়া দিচ্ছ: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” (হিতো. ২৭:১১) অধিকন্তু, তোমাদের প্রতি যিহোবার অনুমোদন রয়েছে, এটা জানা তাঁকে সেবা করার বিষয়ে তোমাদের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করবে।

১৬. কীভাবে একজন বোন যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিলেন?

১৬ ক্যারল নামে একজন খ্রিস্টান বোন কিশোরী বয়সে স্কুলে পড়ার সময় বাইবেলের নীতিগুলো মেনে চলতেন আর তার উত্তম আচরণ অন্যেরা লক্ষ করেছিল। কী ঘটেছিল? ক্যারল তার সহপাঠীদের কাছ থেকে উপহাসের শিকার হতেন কারণ তার বাইবেল শিক্ষিত বিবেক তাকে ছুটির দিনগুলো উদ্‌যাপনে এবং দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিতে অনুমোদন করত না। সেই উপলক্ষ্যগুলোতে, তার মাঝে মাঝে অন্যদের কাছে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার সুযোগ হতো। অনেক বছর পর, ক্যারল তারই এক প্রাক্তন সহপাঠিনীর কাছ থেকে একটা কার্ড পেয়েছিলেন, যিনি লিখেছিলেন: “আমি সবসময় তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ও তোমাকে ধন্যবাদ দিতে চেয়েছি। একজন অল্পবয়সি খ্রিস্টান হিসেবে তোমার উত্তম আচরণ ও উদাহরণ আর সেইসঙ্গে ছুটির দিনগুলো সম্বন্ধে তুমি যে-সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলে, তা অলক্ষিত ছিল না। তোমার মাধ্যমেই যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল।” ক্যারলের উদাহরণ তার সেই সহপাঠিনীর ওপর এতটাই গভীর ছাপ ফেলেছিল যে, তিনি পরে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন। ক্যারলের উদ্দেশে পাঠানো তার কার্ডে তিনি লিখেছিলেন যে, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি একজন বাপ্তাইজিত সাক্ষি! ক্যারলের মতো, আজকে তোমরা অল্পবয়সিরাও যখন সাহসের সঙ্গে বাইবেলের নীতিগুলো মেনে চলো, তখন তা হয়তো সৎহৃদয়ের লোকেদের যিহোবাকে জানতে পরিচালিত করতে পারে।

অল্পবয়সিরা যিহোবার প্রশংসা করছে

১৭, ১৮. (ক) আপনার মণ্ডলীর অল্পবয়সিদের দেখে আপনি কেমন অনুভব করেন? (খ) ঈশ্বরভয়শীল অল্পবয়সিদের জন্য কোন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?

১৭ পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সংগঠনে আমরা সবাই এটা দেখে রোমাঞ্চিত হই যে, হাজার হাজার উদ্যোগী অল্পবয়সি সত্য উপাসনায় অংশ নিচ্ছে! এই অল্পবয়সিরা প্রতিদিন বাইবেল পড়ে, প্রার্থনা করে ও ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে আচরণ করে যিহোবাকে উপাসনা করার বিষয়ে তাদের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করে। এইরকম উদাহরণযোগ্য অল্পবয়সিরা তাদের বাবা-মাদের ও যিহোবার সমস্ত লোকের কাছে সতেজতার এক উৎস হয়।—হিতো. ২৩:২৪, ২৫.

১৮ ভবিষ্যতে, বিশ্বস্ত অল্পবয়সিরা সেই লোকদের মধ্যে গণিত হবে, যারা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে রক্ষা পাবে। (প্রকা. ৭:৯, ১৪) সেখানে যিহোবার প্রতি তাদের উপলব্ধিবোধ যত বৃদ্ধি পাবে, তারা তত অপরিমেয় আশীর্বাদ উপভোগ করবে এবং চিরকাল তাঁর প্রশংসা করতে সক্ষম হবে।—গীত. ১৪৮:১২, ১৩.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কীভাবে অল্পবয়সিরা আজকে সত্য উপাসনায় অংশ নিতে পারে?

• বাইবেল পড়া থেকে উপকার লাভ করার জন্য কেন ধ্যান করা অপরিহার্য?

• কীভাবে প্রার্থনা তোমাদের যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে?

• একজন খ্রিস্টানের উত্তম আচরণের দ্বারা কী সম্পাদিত হয়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রতিদিন বাইবেল পড়া কি তোমার অভ্যাস?