সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অসুস্থ কোনো আত্মীয়ের যত্ন নেওয়ার সময় আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকুন

অসুস্থ কোনো আত্মীয়ের যত্ন নেওয়ার সময় আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকুন

অসুস্থ কোনো আত্মীয়ের যত্ন নেওয়ার সময় আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকুন

কিম নামে একজন সাক্ষির মেরুদণ্ডের কাছে একটা টিউমার হয়েছিল এবং এরপর তার ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। * “অপারেশন করে সেই টিউমার বাদ দেওয়ার পর,” তার স্বামী স্টিভ বলেন, “কিমকে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। এই চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে সে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তার পক্ষে চলাফেরা করা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভবই হয়ে উঠেছিল।”

আপনি কি স্টিভের কষ্টের কথা কল্পনা করতে পারেন, যখন তিনি তার প্রিয় সঙ্গীকে এই মারাত্মক রোগের সঙ্গে লড়াই করতে দেখেছিলেন? সম্ভবত, আপনার পরিবারেও এমন কোনো ঘনিষ্ঠ সদস্য আছেন, যিনি ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যায় এমন রোগে অথবা বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলোতে ভুগছেন। (উপ. ১২:১-৭) যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে আপনি জানেন যে, কার্যকারীভাবে আপনার প্রিয়জনের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রথমে আপনার নিজের যত্ন নিতে হবে। আপনি যদি আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন, তাহলে আপনি আবেগগত ও শারীরিক দিক দিয়েও কষ্টভোগ করতে শুরু করতে পারেন এবং সেইসঙ্গে আপনি হয়তো আপনার পরিবারের সদস্যের যে-সমর্থনের প্রয়োজন, তা জোগাতে ব্যর্থ হয়ে পড়বেন। কোনো অসুস্থ বা বয়স্ক আত্মীয়ের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি কীভাবে আপনি আপনার আধ্যাত্মিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন? খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অন্য সদস্যরা এই ধরনের অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি বিবেচনা দেখানোর জন্য কি কিছু করতে পারে?

ভারসাম্য বজায় রাখুনকীভাবে?

একজন অসুস্থ আত্মীয়ের যত্ন নেওয়ার সময় আপনার আধ্যাত্মিক ভারসাম্য ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আপনাকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং কতটা সময় ও শক্তি আপনি ব্যয় করবেন, তা নির্ধারণ করতে হবে। “প্রজ্ঞাই নম্রদিগের [‘বিনয়ীদের,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] সহচরী,” হিতোপদেশ ১১:২ পদ বলে। এই প্রসঙ্গে, ‘বিনয়ী’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে, নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো সম্বন্ধে অবগত থাকা। আপনি যাতে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম না করেন, সেই বিষয়টার দিকে লক্ষ রাখার জন্য আপনাকে হয়তো আপনার তালিকা ও দায়িত্বগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

স্টিভ তার কাজের ভারকে পুনর্বিবেচনা করার দ্বারা প্রজ্ঞা ও বিনয়ী মনোভাব প্রদর্শন করেছিলেন। চাকরি করার পাশাপাশি তিনি আয়ার্ল্যান্ডের যিহোবার সাক্ষিদের এক স্থানীয় মণ্ডলীতে প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর এবং পরিচর্যা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করতেন। এ ছাড়া, তিনি তার এলাকার হসপিটাল লিয়েইজন কমিটি-র একজন সদস্যও ছিলেন। “কিম কখনোই এইরকম অভিযোগ করেনি যে, এই দায়িত্বগুলোর প্রতি খুব বেশি মনোযোগ দেওয়ার দ্বারা আমি তাকে অবহেলা করছিলাম,” স্টিভ বলেন। “কিন্তু, আমি জানতাম যে, আমি আমার সাধ্যের অতিরিক্ত পরিশ্রম করছিলাম।” কীভাবে স্টিভ সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিলেন? “প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করার পর,” তিনি বলেন, “আমি কোঅর্ডিনেটর হিসেবে আর সেবা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করে চলছি কিন্তু মণ্ডলীর কিছু দায়িত্ব অন্যদের কাছে হস্তান্তর করার দ্বারা আমি কিমের প্রতি সময় ও মনোযোগ দিতে পেরেছিলাম, যা তার প্রয়োজন ছিল।”

এক সময় কিমের স্বাস্থ্য কিছুটা ভালো হয়েছিল। স্টিভ ও কিম তাদের পরিস্থিতিকে পুনর্বিবেচনা করেছিল এবং তার স্ত্রীর সাহায্যে স্টিভ মণ্ডলীতে তার পূর্বের দায়িত্বগুলো পুনরায় গ্রহণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। “অসুস্থতার কারণে আসা সীমাবদ্ধতাগুলোর মধ্যে দিয়েই আমরা উভয়ে কাজ করতে শিখেছিলাম,” স্টিভ ব্যাখ্যা করেন। “যিহোবার সাহায্যের জন্য তাঁর কাছে ও সেইসঙ্গে খারাপ স্বাস্থ্য সত্ত্বেও, কোনোরকম অভিযোগ না করে আমাকে সমর্থন করে চলার জন্য আমার স্ত্রীর কাছেও আমি খুবই কৃতজ্ঞ।”

এ ছাড়া, একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ জেরি এবং তার স্ত্রী মারিয়ার অভিজ্ঞতার কথাও বিবেচনা করুন। বয়স্ক বাবা-মার যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের লক্ষ্যগুলোর ক্ষেত্রে তাদেরকে রদবদল করতে হয়েছিল। “আমার স্বামী ও আমার, উভয়েরই বিদেশে গিয়ে মিশনারি হিসেবে সেবা করার লক্ষ্য ছিল,” মারিয়া বলেন। “কিন্তু, জেরিই ছিল একমাত্র সন্তান আর তার বাবা-মার যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। তাই, তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা আয়ার্ল্যান্ডেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এর ফলে, জেরির বাবা মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত হাসপাতালে থাকাকালীন আমরা সবসময় তার দেখাশোনা করতে পেরেছিলাম। এখন আমরা প্রতিদিন জেরির মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তার প্রয়োজনের সময় সহজেই তাকে সাহায্য করতে পারি। জেরির মা যে-মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করেন, সেই মণ্ডলীর ভাইবোনেরা খুবই সাহায্য ও সমর্থন করে থাকে আর এর ফলে আমরা ভ্রমণের কাজ করে চলতে পারছি।”

যেভাবে অন্যেরা সাহায্য করতে পারে

মণ্ডলীতে বয়স্ক বিধবাদের জন্য বস্তুগত কোন ব্যবস্থাগুলো করা উচিত, সেই বিষয়ে আলোচনা করার সময় প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।” পৌল সহখ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, যদি তাদের কাজ “ঈশ্বরের সাক্ষাতে গ্রাহ্য” হতে হয়, তাহলে তাদেরকে তাদের বয়স্ক বাবা-মাকে এবং সেইসঙ্গে দাদু-দিদিমা অথবা ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হবে। (১ তীম. ৫:৪, ৮) তবে, মণ্ডলীর অন্যেরা ব্যবহারিক সাহায্য প্রদান করতে পারে এবং তাদের তা করা উচিত।

সুইডেনে বসবাসকারী এক বয়স্ক দম্পতি হকেন ও ইঙারের কথা বিবেচনা করুন। “আমার স্ত্রীর যখন ক্যান্সার ধরা পড়েছিল,” হকেন বলেন, “তখন আমরা দুজনেই প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলাম। ইঙার সবসময়ই সুস্থ-সবল ছিল। সেই সময়ে আমাদেরকে প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হতো এবং তার চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাকে দুর্বল করে দিচ্ছিল। তখন ইঙার বাড়িতেই থাকত আর তার যত্ন নেওয়ার জন্য আমাকে তার সঙ্গে থাকতে হতো।” স্থানীয় মণ্ডলীর ভাইবোনেরা হকেন ও ইঙারকে কীভাবে সাহায্য করেছিল?

এই দম্পতি যাতে টেলিফোনের মাধ্যমে খ্রিস্টীয় সভাগুলো শুনতে পারে, সেইজন্য মণ্ডলীর প্রাচীনরা ব্যবস্থা করেছিল। অধিকন্তু, ভাইবোনেরা ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার এবং টেলিফোন করার দ্বারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। এ ছাড়া, তারা চিঠি ও কার্ডও পাঠিয়েছিল। “আমরা সমস্ত ভাইবোনের সমর্থন ও সেইসঙ্গে যিহোবার সাহায্য অনুভব করেছিলাম,” হকেন বলেন। “আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকার জন্য আমাদের এই মনোযোগের প্রয়োজন ছিল। আনন্দের বিষয় যে, ইঙার এখন সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং আবারও আমরা কিংডম হলের খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে পারছি।” মণ্ডলীর সদস্যরা যখন তাদের মাঝে থাকা অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করে, তখন তারা নিজেদেরকে এমন “বন্ধু” হিসেবে প্রমাণ করে, যারা “সব সময়েই ভালবাসে” ও সেইসঙ্গে এমন “ভাই” হিসেবে প্রমাণ করে, যারা ‘দুর্দশার সময়ে সাহায্য করে।’—হিতো. ১৭:১৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।

যিহোবা আপনার প্রচেষ্টাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন

কোনো অসুস্থ আত্মীয়ের যত্ন নেওয়া নিঃসন্দেহে ক্লান্তিকর হতে পারে। তবে, রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন: “ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] সেই জন, যে দীনহীনের পক্ষে” অর্থাৎ অসুস্থতার কারণে সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তির প্রতি “চিন্তাশীল।”—গীত. [সামসঙ্গীত-মালা] ৪১:১.

অসুস্থ বা কষ্ট পাচ্ছে এমন ব্যক্তিদের যারা যত্ন নেয়, তারা কেন সুখী হতে পারে? “যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়,” হিতোপদেশ ১৯:১৭ পদ বলে আর “তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন।” সত্য ঈশ্বর তাঁর সেই অনুগত দাসদের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখান, যারা অসুস্থতার কারণে কষ্ট পাচ্ছে আর তিনি তাদেরকেও আশীর্বাদ করেন, যারা সেই অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি কৃপা করেন বা অনুগ্রহ দেখান। গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “ব্যাধিশয্যাগত হইলে সদাপ্রভু [এই ধরনের এক ব্যক্তিকে] ধরিয়া রাখিবেন; তাহার পীড়ার সময়ে তুমি তাহার সমস্ত শয্যা পরিবর্ত্তন [করিবে]।” (গীত. ৪১:৩) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যে-ব্যক্তি প্রেমময় যত্ন নিচ্ছেন, তিনি যদি নিজে কোনো কষ্ট বা দুর্দশা ভোগ করেন, তাহলে যিহোবা তাকে সাহায্য করবেন।

এটা জানা কতই না উত্তম যে, একজন অসুস্থ আত্মীয়ের যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা যা করি, সেটা যিহোবা ঈশ্বর লক্ষ করেন ও অনুমোদন করেন! যদিও এই ধরনের সাহায্য প্রদান করার জন্য আমাদের দিক থেকে হয়তো প্রচেষ্টার প্রয়োজন কিন্তু শাস্ত্র আমাদের আশ্বাস দেয় যে, “সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন।”—ইব্রীয় ১৩:১৬.

[পাদটীকা]

^ নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আধ্যাত্মিক ভারসাম্য বজায় রাখুন এবং অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করুন