সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নারীরা, কেন আপনারা মস্তকপদের প্রতি বশীভূত হবেন?

নারীরা, কেন আপনারা মস্তকপদের প্রতি বশীভূত হবেন?

নারীরা, কেন আপনারা মস্তকপদের প্রতি বশীভূত হবেন?

“স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ।”—১ করি. ১১:৩.

১, ২. (ক) মস্তকপদ ও বশ্যতার বিষয়ে যিহোবার ব্যবস্থা সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল কী লিখেছিলেন? (খ) এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে?

 যিহোবা সুশৃঙ্খল ধারা স্থাপন করেছেন, যা প্রেরিত পৌল সেই সময় উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন যে, “প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট” এবং “খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” (১ করি. ১১:৩) আগের প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যিশু তাঁর মস্তক যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি বশীভূত থাকাকে এক বিশেষ সুযোগ ও আনন্দ বলে গণ্য করতেন আর খ্রিস্টান পুরুষরাও তাদের মস্তক খ্রিস্ট সম্বন্ধে একইরকম বোধ করে। লোকেদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে খ্রিস্ট ছিলেন সদয়, কোমল, সমবেদনাময় এবং নিঃস্বার্থ। মণ্ডলীর পুরুষদেরও অন্যদের প্রতি, বিশেষভাবে তাদের স্ত্রীদের প্রতি একইরকম হতে হবে।

কিন্তু, নারীদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাদের মস্তক কে? “স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ,” পৌল লিখেছিলেন। এই অনুপ্রাণিত উক্তিকে নারীদের কীভাবে দেখা উচিত? এই নীতি কি সেই সময়ও প্রযোজ্য, যখন স্বামী একজন অবিশ্বাসী হয়ে থাকেন? পুরুষের মস্তকপদের প্রতি বশীভূত হওয়ার জন্য বিবাহে স্ত্রীকে কি একজন নিষ্ক্রিয় সঙ্গী হয়ে থাকতে হবে অর্থাৎ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কোনো কথা না বলে চুপ থাকতে হবে? কীভাবে একজন নারী প্রশংসনীয়া হতে পারেন?

‘আমি তাহার জন্য সহকারিণী নির্ম্মাণ করি’

৩, ৪. কেন বিবাহে মস্তকপদের ব্যবস্থা উপকারজনক?

মস্তকপদের ব্যবস্থার উৎস হলেন ঈশ্বর। আদমকে সৃষ্টি করার পর, যিহোবা ঈশ্বর বলেছিলেন: “মনুষ্যের একাকী থাকা ভাল নয়, আমি তাহার জন্য তাহার অনুরূপ সহকারিণী নির্ম্মাণ করি।” হবাকে সৃষ্টি করার পর, একজন সঙ্গী ও সহকারিণী পেয়ে আদম এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে তিনি বলেছিলেন: “ইনি আমার অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস।” (আদি. ২:১৮-২৪) আদম ও হবার, সেই সিদ্ধ লোকেদের নিয়ে গঠিত সমস্ত মানবজাতির পিতা ও মাতা হওয়ার এক অপূর্ব প্রত্যাশা ছিল, যারা বিশ্বব্যাপী এক পরমদেশে চিরকাল সুখে বাস করতে পারত।

আমাদের প্রথম পিতামাতার বিদ্রোহের কারণে, এদন উদ্যানের নিখুঁত পরিস্থিতি হারিয়ে গিয়েছিল। (পড়ুন, রোমীয় ৫:১২.) কিন্তু, মস্তকপদের ব্যবস্থা বলবৎ ছিল। সঠিকভাবে অনুসরণ করা হলে, এটা বিবাহে উপকার ও সুখ নিয়ে আসে। এর ফলাফল ঠিক সেইরকমই হয়, যেমনটা যিশু তাঁর মস্তকের প্রতি বশীভূত থেকে অনুভব করেছিলেন। মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময় যিশু ‘সদাপ্রভুর সম্মুখে নিত্য আহ্লাদ করিতেন।’ (হিতো. ৮:৩০) অসিদ্ধতার কারণে, পুরুষরা আর সিদ্ধ মস্তক হতে সক্ষম নয় অথবা নারীরাও নিখুঁত বশ্যতা দেখাতে সমর্থ নয়। কিন্তু, স্বামী ও স্ত্রীরা যখন তাদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করে, তখন এই ব্যবস্থা এমনকী বর্তমানেও বিবাহে সম্ভাব্য প্রচুর পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে।

৫. কেন বিবাহ সাথিদের রোমীয় ১২:১০ পদে প্রাপ্ত পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া উচিত?

বিবাহে সফল হওয়ার অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, বিবাহ সাথিরা সমস্ত খ্রিস্টানের জন্য প্রযোজ্য এই শাস্ত্রীয় পরামর্শ প্রয়োগ করে: “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০) এ ছাড়া, ‘পরস্পর মধুরস্বভাব [“দয়ালু,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] ও করুণচিত্ত হইবার, পরস্পর ক্ষমা করিবার’ ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত।—ইফি. ৪:৩২.

একজন সাথি যখন বিশ্বাসী না হন

৬, ৭. একজন খ্রিস্টান স্ত্রী যদি তার অবিশ্বাসী স্বামীর প্রতি বশীভূত থাকেন, তাহলে এর ফল কী হতে পারে?

আপনার সাথি যদি যিহোবার একজন সেবক না হয়ে থাকেন, তাহলে? বেশিরভাগ সময়ই, সাধারণত স্বামীরা বিশ্বাসী হয় না। এই ক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর কেমন আচরণ করা উচিত? বাইবেল উত্তর দেয়: “হে ভার্য্যা সকল, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় [“সম্মানজনক,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।”—১ পিতর ৩:১, ২.

ঈশ্বরের বাক্য স্ত্রীকে বলে যেন তিনি অবিশ্বাসী স্বামীর প্রতি বশ্যতাপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখেন। তার উত্তম আচরণ স্বামীকে এই বিষয়টা বিবেচনা করে দেখার জন্য প্রভাবিত করতে পারে যে, কোন বিষয়টা স্ত্রীকে এইরকম উত্তম আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করে। এর ফলে, স্বামী হয়তো তার স্ত্রীর বিশ্বাস পরীক্ষা করে দেখতে এবং পরিশেষে সত্যকে নিজের করে নিতে পারেন।

৮, ৯. একজন খ্রিস্টান স্ত্রী কী করতে পারেন, যদি তার অবিশ্বাসী স্বামী তার উত্তম আচরণের প্রতি অনুকূলভাবে সাড়া না দেন?

কিন্তু, অবিশ্বাসী স্বামী যদি অনুকূলভাবে সাড়া না দেন, তাহলে? শাস্ত্র বিশ্বাসী স্ত্রীকে উৎসাহিত করে, যেন তিনি সবসময় খ্রিস্টীয় গুণাবলি প্রদর্শন করেন, যদিও তা করা কঠিন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ১ করিন্থীয় ১৩:৪ পদে আমরা পড়ি: “প্রেম চিরসহিষ্ণু।” তাই, খ্রিস্টান স্ত্রীর ক্রমাগত “সম্পূর্ণ নম্রতা ও মৃদুতা সহকারে, দীর্ঘসহিষ্ণুতা সহকারে” আচরণ করা এবং প্রেমের সঙ্গে ক্ষমাশীল হওয়া উচিত। (ইফি. ৪:২) ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তির—তাঁর পবিত্র আত্মার—সাহায্যে এমনকী কঠিন পরিস্থিতিগুলোতেও খ্রিস্টীয় গুণাবলি বজায় রাখা সম্ভব।

পৌল লিখেছিলেন, “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।” (ফিলি. ৪:১৩) ঈশ্বরের আত্মা খ্রিস্টান সাথিকে এমন অনেক কিছু করতে সমর্থ করে, যা হয়তো অন্য কোনোভাবে করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন সঙ্গীর রূঢ় আচরণের ফলে অন্য সঙ্গী হয়তো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারেন। কিন্তু, বাইবেল সমস্ত খ্রিস্টানকে বলে: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না; . . . কারণ লেখা আছে, ‘প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম্ম, আমিই প্রতিফল দিব, ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] বলেন।’” (রোমীয় ১২:১৭-১৯) একইভাবে, ১ থিষলনীকীয় ৫:১৫ পদ আমাদের পরামর্শ দেয়: “দেখিও, যেন অপকারের পরিশোধে কেহ কাহারও অপকার না কর, কিন্তু পরস্পরের এবং সকলের প্রতি সর্ব্বদা সদাচরণের অনুধাবন কর।” যিহোবার পবিত্র আত্মার সাহায্যে, আমাদের শক্তিতে যা অসম্ভব, তা সম্ভবপর হয়ে ওঠে। তাই, আমাদের যে-বিষয়টার অভাব রয়েছে, সেটার জন্য ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করা কতই না উপযুক্ত!

১০. অন্যদের নির্দয় কথাবার্তা ও কাজের প্রতি যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

১০ সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে যিশু এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন, যারা এমন কিছু তাঁকে বলেছিল বা তাঁর প্রতি করেছিল, যা অপ্রীতিকর ছিল। “তিনি নিন্দিত হইলে,” ১ পিতর ২:২৩ পদ বলে, “প্রতিনিন্দা করিতেন না; দুঃখভোগ কালে তর্জ্জন করিতেন না, কিন্তু যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁহার উপর ভার রাখিতেন।” আমাদেরকে তাঁর উত্তম উদাহরণ অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্যদের মন্দ ব্যবহারের কারণে ক্রুদ্ধ হবেন না। সমস্ত খ্রিস্টানকে যেমন উপদেশ দেওয়া হয়েছে, “স্নেহবান্‌ ও নম্রমনা হও। মন্দের পরিশোধে মন্দ করিও না, এবং নিন্দার পরিশোধে নিন্দা করিও না।”—১ পিতর ৩:৮, ৯.

শুধুই কি নিষ্ক্রিয় সঙ্গী?

১১. কিছু খ্রিস্টান নারী কোন মহৎ সুযোগ লাভ করবে?

১১ একজন স্বামীর মস্তকপদের প্রতি বশীভূত হওয়ার অর্থ কি এই যে, বিবাহে একজন নারী নিষ্ক্রিয় সঙ্গী হবেন, পারিবারিক বিষয়গুলোতে বা অন্যান্য বিষয়ে কোনো কথা না বলে চুপ থাকবেন? কখনোই না। নারী ও সেইসঙ্গে পুরুষদেরকে যিহোবা অনেক বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন। যখন খ্রিস্ট এই পৃথিবীর ওপর শাসন করবেন, তখন ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তি-বিশেষের খ্রিস্টের অধীনে স্বর্গে রাজা ও যাজক হওয়ার যে-বিরাট সুযোগ রয়েছে, তা কেবল একটু চিন্তা করুন! সেই সংখ্যার মধ্যে নারীরাও রয়েছে। (গালা. ৩:২৬-২৯) স্পষ্টতই, যিহোবা বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ব্যবস্থার মধ্যে নারীদেরও এক সক্রিয় ভূমিকা প্রদান করেছেন।

১২, ১৩. নারীরা যে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল, তার একটা উদাহরণ দিন।

১২ উদাহরণস্বরূপ, বাইবেলের সময়ে কিছু নারী ভবিষ্যদ্‌বাণী করত। যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল: “আমি মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আমার আত্মা সেচন করিব, তাহাতে তোমাদের পুত্ত্রকন্যাগণ ভাববাণী বলিবে . . . আর তৎকালে আমি দাসদাসীদিগেরও উপরে আমার আত্মা সেচন করিব।”

১৩ যিশুর প্রায় ১২০ জন শিষ্য, যারা সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিরূশালেমের ওপরের কুঠরিতে একত্রিত হয়েছিল, তাদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়ই ছিল। ঈশ্বরের আত্মা এই সম্পূর্ণ দলের ওপরই বর্ষিত হয়েছিল। তাই, পিতর সেই কথাগুলো উদ্ধৃতি করতে পেরেছিলেন, যা ভাববাদী যোয়েল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন এবং তা নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতিই সমভাবে প্রয়োগ করেছিলেন। পিতর বলেছিলেন: “এটী সেই ঘটনা, যাহার কথা যোয়েল ভাববাদী দ্বারা উক্ত হইয়াছে, ‘শেষ কালে এইরূপ হইবে, ইহা ঈশ্বর বলিতেছেন, আমি মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আপন আত্মা সেচন করিব; তাহাতে তোমাদের পুত্ত্রগণ ও তোমাদের কন্যাগণ ভাববাণী বলিবে, . . . আবার আমার দাসদের উপরে এবং আমার দাসীদের উপরে সেই সময়ে আমি আমার আত্মা সেচন করিব, আর তাহারা ভাববাণী বলিবে।’”—প্রেরিত ২:১৬-১৮.

১৪. প্রথম শতাব্দীতে খ্রিস্ট ধর্ম ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে নারীরা কোন ভূমিকা পালন করেছিল?

১৪ প্রথম শতাব্দীতে, নারীরা খ্রিস্ট ধর্ম ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তারা অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করেছিল এবং প্রচার কাজের সঙ্গে যুক্ত কাজগুলো করেছিল। (লূক ৮:১-৩) উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত পৌল ফৈবীকে “কিংক্রিয়াস্থ মণ্ডলীর পরিচারিকা” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। আর সহকর্মীদের মঙ্গলবাদ পাঠানোর সময় পৌল বেশ কয়েক জন বিশ্বস্ত নারীর বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল, “ত্রুফেণা ও ত্রুফোষা, যাঁহারা প্রভুতে পরিশ্রম করেন।” এ ছাড়া, তিনি ‘প্রিয়া পর্ষীর’ বিষয়েও উল্লেখ করেছিলেন, “যিনি প্রভুতে অত্যন্ত পরিশ্রম করিয়াছেন।”—রোমীয় ১৬:১, ১২.

১৫. আমাদের সময়ে খ্রিস্ট ধর্ম ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে নারীরা কোন ভূমিকা পালন করে?

১৫ আমাদের সময়ে, বিশ্বব্যাপী ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছে এমন সত্তর লক্ষেরও বেশি লোকের এক বিরাট অংশ হল, সব বয়সের নারীরা। (মথি ২৪:১৪) তাদের মধ্যে অনেকে পূর্ণসময়ের পরিচারক, মিশনারি এবং বেথেল পরিবারের সদস্য। গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “প্রভু বাক্য দেন, শুভবার্ত্তার প্রচারিকাগণ মহাবাহিনী।” (গীত. ৬৮:১১) এই কথাগুলো কতই না সত্য! নারীরা সুসমাচার ঘোষণা করায় এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করায় যে-ভূমিকা পালন করে, সেটাকে যিহোবা মূল্যবান বলে গণ্য করেন। তাই, খ্রিস্টান নারীরা যে বশীভূত হোক বলে তিনি চান, সেটার অর্থ কোনোভাবেই নিষ্ক্রিয় বশ্যতা নয়।

যে-দুজন নারী সাহসের সঙ্গে কথা বলেছিল

১৬, ১৭. কীভাবে সারার উদাহরণ দেখায় যে, বিবাহে নারীরা নিষ্ক্রিয় সঙ্গী নন?

১৬ যিহোবা যদি নারীদের অনেক বিশেষ সুযোগ দিয়ে থাকেন, তাহলে স্বামীদেরও কি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার আগে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত নয়? তা করা তাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ হবে। শাস্ত্রে বেশ কয়েকটা ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে স্ত্রীরা কথা বলেছিল বা কাজ করেছিল, যদিও তাদের স্বামীরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চায়নি। দুটো ঘটনার কথা বিবেচনা করুন।

১৭ কুলপতি অব্রাহামের স্ত্রী সারা, বার বার অব্রাহামকে বলেছিলেন যেন তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার ছেলেকে তাড়িয়ে দেন কারণ তারা সম্মান দেখাত না। “এই কথায় অব্রাহাম . . . অতি অসন্তুষ্ট হইলেন”—কিন্তু ঈশ্বর অসন্তুষ্ট হননি। যিহোবা অব্রাহামকে বলেছিলেন: “ঐ বালকের বিষয়ে ও তোমার ঐ দাসীর বিষয়ে অসন্তুষ্ট হইও না; সারা তোমাকে যাহা বলিতেছে, তাহার সেই কথা শুন।” (আদি. ২১:৮-১২) অব্রাহাম যিহোবার বাধ্য হয়েছিলেন, সারার কথা শুনেছিলেন এবং সারার অনুরোধ রেখেছিলেন।

১৮. অবীগল কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

১৮ নাবলের স্ত্রী অবীগলের কথাও চিন্তা করুন। দায়ূদ যখন ঈর্ষাপরায়ণ রাজা শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তখন তিনি নাবলের পশুপালের নিকটে শিবির স্থাপন করে সেখানে ছিলেন। এই ধনী ব্যক্তির অনেক সহায়সম্পদ থেকে কোনো কিছু না নিয়ে বরং দায়ূদ ও তার লোকেরা নাবলের সম্পত্তি সুরক্ষা করেছিল। কিন্তু, নাবল “কঠিন ও দুর্বৃত্ত ছিল” এবং তিনি দায়ূদের লোকেদেরকে ‘লাঞ্ছনা করিয়াছিলেন।’ নাবল ছিলেন একজন ‘পাষণ্ড’ এবং তার ‘অন্তরে মূর্খতা ছিল।’ দায়ূদের লোকেরা যখন সম্মানপূর্বক কিছু খাদ্য চেয়েছিল, তখন নাবল তা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। এই ঘটনা শুনে অবীগল কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? নাবলকে না বলেই তিনি “শীঘ্র দুই শত রুটী, দুই কুপা দ্রাক্ষারস, পাঁচটা প্রস্তুত মেষ, পাঁচ কাঠা ভাজা শস্য, এক শত গুচ্ছ শুষ্ক দ্রাক্ষাফল ও দুই শত ডুমুর-চাক লইয়া” দায়ূদ ও তার লোকেদের দিয়েছিলেন। অবীগল যা করেছিলেন, তা কি সঠিক ছিল? হ্যাঁ, পরবর্তী সময়ে ঘটা কয়েকটা ঘটনা দেখায় যে, তিনি সঠিক কাজ করেছিলেন। বাইবেল বলে, “সদাপ্রভু নাবলকে আঘাত করাতে সে মরিয়া গেল।” পরে, দায়ূদ অবীগলকে বিয়ে করেছিলেন।—১ শমূ. ২৫:৩, ১৪-১৯, ২৩-২৫, ৩৮-৪২.

‘যে স্ত্রী প্রশংসনীয়া’

১৯, ২০. কোন বিষয়টা একজন নারীকে সত্যিই প্রশংসনীয়া করে তোলে?

১৯ শাস্ত্র সেই স্ত্রীর প্রশংসা করে, যিনি যিহোবার পথানুযায়ী কাজ করেন। বাইবেলের হিতোপদেশ বই এই বলে একজন ‘গুণবতী স্ত্রীর’ প্রশংসা করে: “মুক্তা হইতেও তাঁহার মূল্য অনেক অধিক। তাঁহার স্বামীর হৃদয় তাঁহাতে নির্ভর করে, স্বামীর লাভের অভাব হয় না। তিনি জীবনের সমস্ত দিন তাঁহার উপকার করেন, অপকার করেন না।” অধিকন্তু, “তিনি প্রজ্ঞার সহিত মুখ খোলেন, তাঁহার জিহ্বাগ্রে দয়ার ব্যবস্থা থাকে। তিনি আপন পরিবারের আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখেন, তিনি আলস্যের খাদ্য খান না। তাঁহার সন্তানগণ উঠিয়া তাঁহাকে ধন্য বলে; তাঁহার স্বামীও বলেন, আর তাঁহার এইরূপ প্রশংসা করেন।”—হিতো. ৩১:১০-১২, ২৬-২৮.

২০ কোন বিষয়টা একজন নারীকে সত্যিই প্রশংসনীয়া করে তোলে? “লাবণ্য মিথ্যা, সৌন্দর্য্য অসার” হিতোপদেশ ৩১:৩০ পদ বলে, “কিন্তু যে স্ত্রী সদাপ্রভুকে ভয় করেন, তিনিই প্রশংসনীয়া।” যিহোবাকে ভয় করার অন্তর্ভুক্ত হল, মস্তকপদ সম্বন্ধীয় ঐশিক ব্যবস্থার প্রতি স্বেচ্ছায় বশীভূত হওয়া। “স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ,” ঠিক যেমন “প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট” এবং “খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।”—১ করি. ১১:৩.

ঈশ্বরদত্ত দানের জন্য কৃতজ্ঞ হোন

২১, ২২. (ক) ঈশ্বরদত্ত বিবাহের দানের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার কোন কারণগুলো বিবাহিত খ্রিস্টানদের রয়েছে? (খ) কেন কর্তৃপক্ষ ও মস্তকপদের ব্যবস্থার জন্য আমাদের যিহোবাকে সম্মান করা উচিত? (১৭ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)

২১ যে-খ্রিস্টানরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাদের ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অনেক কারণ রয়েছে! তারা সুখী বিবাহিত দম্পতি হিসেবে একত্রে চলতে পারে। বিশেষভাবে ঈশ্বরের পবিত্র দান, বিয়ের জন্য তারা কৃতজ্ঞ হতে পারে কারণ এর ফলে তারা একত্রে জীবনযাপন করার ও যিহোবার সঙ্গে গমনাগমন করার সুযোগ পাচ্ছে। (রূৎ. ১:৯; মীখা ৬:৮) তিনি—বিবাহের উদ্যোক্তা—একেবারে সঠিকভাবে জানেন যে, বৈবাহিক সুখের জন্য কীসের প্রয়োজন। সবসময় তাঁর পথানুযায়ী কাজ করুন এবং ‘সদাপ্রভুতে যে আনন্দ, তাহাই আপনাদের শক্তি হইবে’ আর তা এমনকী এই সমস্যাপূর্ণ জগতের মধ্যেও।—নহি. ৮:১০.

২২ যে-খ্রিস্টান স্বামী তার স্ত্রীকে নিজের মতো করে ভালোবাসেন, তিনি কোমল ও বিবেচনা সহকারে মস্তকপদকে ব্যবহার করবেন। তার ঈশ্বরভয়শীল স্ত্রী সত্যিই ভালোবাসার যোগ্য হবেন কারণ তিনি সমর্থনকারী হবেন এবং স্বামীর প্রতি গভীর সম্মান দেখাবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, তাদের উদাহরণযোগ্য বিয়ে আমাদের প্রশংসার যোগ্য ঈশ্বর, যিহোবার প্রতি সম্মান নিয়ে আসবে।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• মস্তকপদ ও বশ্যতা সম্বন্ধে যিহোবার ব্যবস্থা কী?

• কেন বিবাহ সাথিদের পরস্পরকে সমাদর করা উচিত?

• কীভাবে একজন বিশ্বাসী স্ত্রীর তার অবিশ্বাসী সাথির সঙ্গে আচরণ করা উচিত?

• কেন স্বামীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার আগে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

কেন কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান দেখাবেন?

যিহোবা বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের মধ্যে কর্তৃত্ব ও মস্তকপদের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটা আত্মিক প্রাণী ও মানুষ উভয়ের মঙ্গলের জন্যই করা হয়েছে। এটা তাদেরকে তাদের স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করতে এবং ঈশ্বরকে একতাবদ্ধভাবে ও সংগতিপূর্ণ উপায়ে সেবা করার মাধ্যমে তাকে সম্মান করতে সমর্থ করে।—গীত. ১৩৩:১.

অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মণ্ডলী যিশু খ্রিস্টের কর্তৃত্ব ও মস্তকপদকে স্বীকার করে। (ইফি. ১:২২, ২৩) যিহোবার কর্তৃত্বকে স্বীকার করে অবশেষে “পুত্ত্র আপনিও তাঁহার বশীভূত হইবেন, যিনি সকলই তাঁহার বশে রাখিয়াছিলেন; যেন ঈশ্বরই সর্ব্বেসর্ব্বা হন।” (১ করি. ১৫:২৭, ২৮) তাই, এটা কতই না উপযুক্ত যে, যে-মানুষরা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেছে, তারা মণ্ডলীর ও পরিবারের মধ্যে মস্তকপদের ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে! (১ করি. ১১:৩; ইব্রীয় ১৩:১৭) তা করার মাধ্যমে, আমরা যিহোবার অনুমোদন ও আশীর্বাদ লাভ করে নিজেদের মঙ্গল করি।—যিশা. ৪৮:১৭.

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রার্থনা একজন খ্রিস্টান স্ত্রীকে ঈশ্বরীয় গুণাবলি প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

রাজ্যের বিষয়গুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নারীরা যে-ভূমিকা পালন করে, সেটাকে যিহোবা মূল্যবান বলে গণ্য করেন